হাসপাতালে পুলিশের সঙ্গে বিরোধ, চিকিৎসা রেখে পালালেন গুলিবিদ্ধসহ আহতরা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চিকিৎসা রেখে পালালেন গুলিবিদ্ধসহ আহতরা

চিকিৎসা রেখে পালালেন গুলিবিদ্ধসহ আহতরা

চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ৯ আন্দোলনকারী ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আহতরা হাসপাতালে ভর্তি হলেও সেখানে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদকে কেন্দ্র করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের বিরোধ হয়। পরে পুলিশি অ্যাকশনে হাসপাতাল ছেড়ে যান আহতরা। এর মধ্যে তিনজন ছিলেন গুলিবিদ্ধ। পুলিশ বলছে, আন্দোলনকারীরা তাদের এক পুলিশের ওয়াকিটকি ও তিনটি ফোন নিয়ে পালিয়ে গেছে।

শনিবার (৩ আগস্ট) রাত নয়টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে এসব ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালে দায়িত্ব থাকা পুলিশ জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীরা যখন জরুরি বিভাগে আসে তখন সেখানে থাকা পুলিশদের তারা ভারতের দালাল বলে গালি দিতে থাকে। পরে পুলিশের কয়েকজন সদস্য তাদের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আন্দোলনকারীরা উত্তেজিত হন। পরে পুলিশ তাদের নাম পরিচয় জানতে ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে গেলে সেখান থেকে এক পুলিশ কর্মকর্তার কোমরে থাকা ওয়াকিটকি ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এসময় তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে চেষ্টা করে। পরে তারা সেখান থেকে পালিয়ে চলে যায়। এসময় কয়েকজন পুলিশ আহত হয়।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত শিক্ষার্থীদের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়ার সময় বাহির থেকে পুলিশ এসে তাদেরকে লাঠিচার্জ করার চেষ্টা করে। এসময় আহত ও তাদের নিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

রাতে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে ডা. ডাক্তার তুহিন সুভ্র দাশ ডা. বার্তা২৪.কমকে জানান, চলমান আন্দোলন-সহিংসতার ঘটনায় আজ সন্ধ্যা থেকে গুলিবিদ্ধসহ হয়ে ৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে তিনজন গুলিবিদ্ধ। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়। এছাড়া তিনজন পুলিশ আহত হয়ে চিকিৎসা নেন।

রাত ১০টার দিকে হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে গিয়ে গুলিবিদ্ধ মো. রায়হান (৩৭) নামের এক যুবককে পাওয়া যায়। এসময় তার বাম হাতের উপরের অংশে এবং ডান হাতের তালুলে ব্যান্ডেজ পেঁচানো দেখা যায়।

রায়হান নিজেকে পোশাক কারখানার শ্রমিক পরিচয় দিয়ে বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি অক্সিজেন থেকে পটিয়ার দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম। গাড়ি না পাওয়ায় আমি মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট হেটে আসি। রাত সাড়ে আটটার দিকে আমি বহদ্দারহাট দিয়ে হেটে নতুন ব্রিজের দিকে যাচ্ছিলাম। ওই সময় দেখলাম আন্দোলনকারীরা মিছিল দিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশ বিপরীত দিক থেকে তাদেরকে আক্রমণ করে। তখন ওই এলাকায় পুরো লাইট অফ ছিল। কাঁদানে গ্যাস, টিয়ারশেল ও পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে। এসময় আমার গায়ে এসে লাগে পরে আমি হুশ হারিয়ে ফেলি।

এসব বলার এক পর্যন্ত ওই যুবকও নিরাপত্তার কথা জানিয়ে হাসপাতালে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাত রাতে সাড়ে দশটায় চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন বলেন, কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা আহত আন্দোলনকারীদের তথ্য নিতে গেলে ভুলবোঝাবুঝি হয়। এসময় কোটা আন্দোলনকারীরা উত্তেজিত হয়ে যায়। এসময় পুলিশও একশ্যান নিলে আহতরা হাসপাতাল ছেড়ে যান।

তিনি বলেন, পুলিশ অভিযোগ করেছে আন্দোলনকারীরা তাদের ওয়াকিটকি ও মোবাইল নিয়ে নেয়। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। আমি নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স আহবান করেছি।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের বিশেষ শাখার উপ কমিশনার ডা. মন্জুর মোর্শেদ বলেন, চমেক হাসপাতালে বিক্ষোভকারীরা হামলা করে পুলিশের একজন কনস্টেবলকে থেকে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশের ওয়াকিটকি এবং মোবাইল লটু করে। পরে অবশ্যই কনস্টেবলকে ছেড়ে দেয়, মোবাইল ও ওয়াকিটকি উদ্ধার হয়।

এর আগে শনিবার সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রামে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নেতাদের বাসা বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।

এরমধ্যে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসায়, সাতটার দিকে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর দুই নম্বর গেট থেকে বহদ্দারহাট মোড় পর্য়ন্ত গুলাগুলির ঘটনা ঘটে।

রাত আটটা থেকে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ডা. শাহাদাৎ হোসেন, মীর নাছির উদ্দিন চৌধুরী ও এরশাদ উল্লাহার বাসায় ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, সন্ধ্যা থেকে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাসা বাড়িতে হামলা হয়েছে। ঘটনাস্থলে প্রশাসন কাজ করছে।