জলবায়ু পরিবর্তনে অস্তিত্বের সংকটে বরিশাল

জলবায়ু পরিবর্তনে অস্তিত্বের সংকটে বরিশাল
জলবায়ু পরিবর্তনশীল, পৃথিবীতে শুরু থেকে তাই হয়ে আসছে। জলবায়ুর এই পরিবর্তন অধিক প্রভাব পড়ছে উপকূলীয় জেলা ও এর আশপাশের মানুষের উপর। যথাযথ স্থানীয় পরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত বরাদ্দের সংস্থান হলে মোট ক্ষতির ৬০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব, বলছেন জলবায়ু কর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
সম্প্রতি সময়ে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বন্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন প্রান্তজন, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট-ক্লিন ও এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এপিএমডিডি যৌথভাবে বরিশালে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে।
এসব সমাবেশে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরিশাল শহরের বছরে (জীবন, জীবিকা ও সম্পদের) ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮০ কোটি টাকা। যা মোট মূল্য সংযোজন উৎপাদনের ৭ শতাংশ। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে আপদ মৌসুমী বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়। এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বছরে গড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৩০ মিলিয়ন ডলার।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্রমাগত মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া উন্নত দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর প্রভাবের কারণে বিশ্ব এখন একটি সংকটপূর্ণ সময় পার করছে। উন্নত দেশগুলোকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি মেনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। পাশাপাশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে এখনই উদ্যোগী হতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সৃষ্ট সমস্যা সমূহ হচ্ছে-কীর্তনখোলা নদীতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি, নদী ভাঙণের কারণে দারিদ্রতা ও বাস্তুচ্যুতি, সুপেয় পানির সংকট, অত্যাধিক গরম, অসময়ে অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি, জলবায়ু উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি, উপকূলীয় অঞ্চলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, দারিদ্রতা, বেকারত্ব, বাল্যবিবাহ, অপুষ্টি ও পানিবাহিত রোগের বৃদ্ধি প্রভৃতি।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বরিশালের সহকারী পরিচালক প্রিন্স বাহাউদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘উন্নত দেশে বিলাসী জীবনের দায় আমাদের নিতে হচ্ছে, কারণ পৃথিবী একটাই। আমরা সবাই মানুষ একই আলো-বাতাসে লালিত হই। তাই এ বায়ুকে যারা দূষিত করে তাদের এর দায় নিতে হবে। অদূর ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে এখনই সচেতন পদক্ষেপ না নিলে পৃথিবী হতে পারে জীবনের অস্তিত্ব শূন্য।
এপিএমডিডির সমন্বয়কারী লিডি ন্যাকপিল বলেন, ‘২০টি দেশ ও কয়েকটি ব্যাংক ২০২২ সাল নাগাদ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেও ২০৩০ সালের মধ্যে যদি জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ না করে তাহলে পৃথিবীর উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না।’
এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাতের মতো দুর্যোগের শিকার হয়ে মানুষ অভিবাসনে ধাবিত হচ্ছে। কৃষিতে লবণাক্ততা এবং বজ্রপাত এ অঞ্চলের এখন বড় ধরনের সমস্যা। অভিবাসনের কথা মাথায় রেখে প্রকল্পে পরিবর্তন এনেছে সরকার। অভিবাসনে পড়া গৃহহীনরা ঘর পাচ্ছেন। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টির জন্য যে মৌসুমী বন্যা, ঘূর্নিঝড় ও নদী ভাঙন হচ্ছে এতে বরিশালের মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। আগামী দিনগুলোর জন্য আমাদের সচেতনতা জরুরী। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব পরছে তা মোকাবিলায় আমাদের উদ্যোগী হতে হবে।’