ঠাকুরগাঁওয়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলন ও দামে খুশি কৃষকরা

  • রবিউল এহ্সান রিপন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঠাকুরগাঁও
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ঠাকুরগাঁওয়ে শুরু হয়েছে মাঠ থেকে বোরো ধান সংগ্রহের কাজ। জেলার দিগন্তজোরা মাঠগুলো কাঁচা ও পাকা ধানের সবুজ ও সোনালী রঙে ভরে উঠেছে। গত বছরের তুলনায় এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো এবং গত মৌসুমের তুলনায় এই মৌসুমে বেশি দামে ধান বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষকরা। এছাড়াও আধুনিক যন্ত্রাংশের ফলে দিন দিন কৃষিতে অগ্রগতি হচ্ছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, দক্ষিণা বাতাসে বিস্তৃর্ণ মাঠগুলোর কাঁচা ও পাকা ধানের শীষ দোল খাচ্ছে। আর কৃষাণ কৃষাণীরা পরিপক্ক ধান সনাতন পদ্ধতি কাস্তি কাচি ও হারভেস্টার দিয়ে কাটতে ও মাড়াই এবং খরকুটা শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগে যেখানে সমস্ত কৃষক হাত দিয়ে ধান কাটা মাড়াই করত এখন অধিকাংশ কৃষকই আধুনিক কৃষি যন্ত্রাংশের মাধ্যমে ধান কাটা মাড়াই করছেন। এতে তাদের শ্রম ও সময় দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

কৃষকরা বলছেন, তেমন বড় কোন ঝড় বৃষ্টি ও দুর্যোগ না হওয়ায় ধানের ফলনের গতবছরের তুলনায় এবার একর প্রতি ৫-১০ মন করে ফলন বেশি হয়েছে। কারও কারও বিঘায় ৬০-৬৫ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। আর বর্তমানে ৮০ কেজির এক বস্তা কাঁচা ধান ১৮’শ থেকে প্রায় ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করছেন। এতে এক বিঘা জমিতে ধান করতে তাদের খরচ হয়েছে ২০-২২ হাজার টাকা আর বিক্রয় করছেন ৪৫ থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তাই এবার তারা ফলন ও দামে সন্তুষ্ট।

মাঠেই ধান মাড়াই করে আবার মাঠেই ধান বিক্রয় করছিলেন সদর উপজেলার রহিমানপুর দাসপাড়া গ্রামের ধান চাষি জহিরুল ইসলাম। এসময় তিনি বলেন, ‘এবার আমাদের ৫০ শতকের এক বিঘা জমিতে ধান হয়েছে ৫০ মণ করে। আর প্রতি মণ ধান বিক্রয় করলাম ৯২৫ টাকা করে। তাতে এক বিঘা জমির ধানের মূল্য পেয়েছি ৪৬ হাজার টাকার উপরে। ধান চাষ করতে এক বিঘা জমিতে সর্বমোট খরচ হয়েছে প্রায় ২০-২২ হাজার টাকা। এতে লাভ থাকতেছে প্রায় ২৪-২৫ হাজার টাকা।,

ধান চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানের দাম ও ফলন দু’টোই ভালো পেয়েছি। গত বারে ধান বিক্রয় করেছিলাম ১৬’শ টাকা বস্তা। এবার প্রমথ দিকে ২১’শ-২২’শ টাকা ধানের বস্তার দাম ছিলো এখন একটু কমে গেছে। ২৯ জাতের ধান আমার একবিঘা জমিতে ৪৮ মণ করে ফলন হয়েছে। তাই ফলনে ও দামে আমরা খুশি ও সন্তুষ্ট।,

মাঠে ধানের খড় শুকানোর কাজ করছিলেন কৃষক খায়রুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি সরিষা কেটে সবার পরে ধান লাগিয়েছিলাম আবার সবার আগে ধান কেটে বিক্রয় করেছি। আল্লাহর রহমতে এবার ধানের ফলন ও দাম ভালো পেয়েছি। আগামীতে আবার দেড় একর জমিতে সরিষা করে বোরো ধান চাষ করবো।,

বর্তমানে কৃষি খাতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে তারা দ্রুত ফসল রোপণ ও কর্তন করতে পারছেন। এতে তাদের কষ্টও কম হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা।

চাষি মকবুল হোসেন বলেন, ‘আগে আমরা ধান রোপণ করেছিলাম হাত দিয়ে ও কাটতাম করিচা-কাস্তে দিয়ে। কেটে আবার ধানগুলো মাথায় করে নিয়ে যেতে হতো। আর এখন ধান রোপণসহ কাটা মাড়াই করছি আধুনিক প্রযুক্তির মেশিন দিয়ে। এই যে আজকে আমি হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই করলাম। এতে করে একসাথে ধান কাটা মাড়াই ও বস্তা হয়ে যাচ্ছে। তাতে এখন আগের থেকে আমাদের কাজ করতে পরিশ্রম ও কষ্ট কমে গেছে।’

সিলেটের হবিগঞ্জ থেকে এসেছেন হারভেস্টার চালক হৃদয় ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখনো মাঠে সব কৃষকের ধান না পাকাই দিনে ১০-১৫ বিঘা জমির ধান হারভেস্টার দিয়ে মাড়াই করছি। সব ধান পেকে গেলে দিনে হয়তো ২৫-৩০ বিঘা জমির ধান মাড়াই করতে পারবো। আমরা বর্তমানে দূরত্ব ও স্থান ভেদে এক বিঘা জমির ধান মাড়াই করতে ৪-৫ হাজার টাকা নিচ্ছি ও কৃষকদের ধান গুলো রাস্তায় নিয়ে গিয়ে আমরা বস্তা করে দেই।,

জেলা কৃষি কর্মকর্তার মতে, জেলায় এবার বোরো মৌসুমে ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হলেও এর বিপরীতে ৬১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪৫% জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। কর্তনকৃত পার হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৬ টন করে ফলন হয়েছে। গতবছরের চেয়ে এবার প্রায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।

২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে বর্তমান বাজার মাত্র ৯’শ টাকা মণ দর অনুযায়ী এ জেলা থেকে এবার ৬০২ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার (৬’০২৮’৬৫০’০০০) টাকার ধান উৎপাদন হবে শুধু বোরো মৌসুমেই।

ব্যবসায়ী আক্তারুল ইসলাম বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার ধানের বস্তা প্রতি ২’শ-৪’শ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে কাঁচা ধানের বস্তা ১৮’শ থেকে ২ হাজার টাকা দরে ক্রয় করছি। তবে এর থেকে দাম আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি প্রণোদনার আওতায় জেলার কৃষকদের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এবার বোরো মৌসুমে হাইব্রীড ধানে ১৫ হাজার কৃষককে ও উপশী জাতের ধানে ১০ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ধান চাষে সকল কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছি। এছাড়াও কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকিমূল্যে কম্বাইন্ড হারভেস্টার বিতরণ করা হয়েছে। এর ফলে কৃষকরা দ্রুত সময়ে ফসল রোপণ ও কর্তন করতে পারছেন এবং খরচের দিক থেকেও তারা লাভবান হচ্ছে। যত বেশি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বৃদ্ধি হবে তত বেশি কৃষক লাভবান হবেন। তাই কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অব্যাহত রেখেছে সরকার।

তিনি আরও বলেন, এবার কর্তনকৃত বোরো ধান পার হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৬ টন করে ফলন হয়েছে। তাই আশা করছি ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে।