যেখানে মেটে সমুদ্র সৈকতের ক্ষুধা

ছবি: সংগৃহীত
সূর্যাস্ত বিকেলবেলা। ঘড়ির কাটায় সোয়া পাঁচটা। তখন মিষ্টি তাপ ছড়িয়েছে। সেই আলোয় পদ্মাপাড়ের বালিতে পেতে রাখা চেয়ারে সবে চোখ বুঝে অচিন দেশে হারিয়ে গেছে শ্রাবন আর লাবনী। তারা দুজনের একজন রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্র শাহ্ শখদুম রুপোশ (র.) এর মাজারের পাশে অবস্থিত রাজশাহী কলেজের ইতিহাস বিভাগের অন্যজন (শ্রাবন) একই কলেজের বাংলা বিভাগের। পড়ার ফাঁকে নিজেদের একটু মনের ভেতরে প্রানের নিশ্বাস নিতে প্রায়দিনই তারা এখানে আসেন।
কথা হয় তাদের সাথে। তারা জানান, সারাদিন পড়াশোনার পর এখানে এসে প্রশান্তির হওয়া ক্ষেতে আসেন। কিছুটা মিষ্টি রোদ আর হালকা শীতল বাতাস মিলে এক মজার অনুভূতি হয়। এখান থেকে সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে তারা বাড়িতে চলে যান। এখানে আসলেই সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় বলেন জানান তারা।
লাবনী আক্তার বলেন, ছোটবেলা থেকে বাবা-মা, বড় ভাই-বোনদের মুখে সমুদ্র সৈকতের অপরুপ সৌন্দর্যের বর্ণনা শুনেছি। বড় আপুর সমুদ্র সৈকতে তোলা ছবি দেখে অভিভূত হয়েছি। তখন থেকেই সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য নিয়ে আমার কল্পনায় এ এক আবেশ সৃষ্টি হয়। যখন স্কুলে পড়ি তখন বই-পত্র পড়ে, বন্ধু-বান্ধব ও শিক্ষকদের কাছ থেকে সমুদ্র সৈকতের বর্ণনা শুনে আমার কল্পনার সৈকতে আরও নতুন মাত্রা যোগ হয়। আমার কল্পনার সমুদ্র সৈকত ছিল বিশাল। যেখানে ছিল পানি আর ঢেউয়ের এক অদ্ভুত সুন্দর তরঙ্গ। ছিল বিস্তীর্ণ বালুচর, তীরে আছড়ে পড়া রাশি রাশি ঢেউ। আমার কল্পনার সমুদ্র সৈকত আমাকে ভাবুক করে তুলত। তবে এখানে আসার পর সেই অনুভবটা করতে পারছি। এখানে আসলেই মনে হয় যেন সমুদ্রপাড়ে আছি।
কনক্রিটের শহরে যান্ত্রিক জীবনে একটু শান্তির পরশ পেতে আমাদের চাহিদার মধ্যে ক্রমেই যুক্ত হচ্ছে ভ্রমণ। ভ্রমণ মানুষকে সমৃদ্ধ করে। খুলে দেয় মনের জানালা, উন্মোচিত করে স্বপ্নের দরজা। নতুনত্বের নান্দনিক দৃষ্টি বিনির্মাণ ও সুস্থ মানসিকতা গঠনে ভ্রমণের তুলনা নেই। এমনটাই বলছিলেন নাঈম ইসলাম শ্রাবণ।
তিনি বলেন, রাজশাহীর মানুষের ঘুরে বেড়ানোর জায়গা বলতেই পদ্মার পাড়। আগে পদ্মার পাড়ে তেমন মজা হতো না। এখন বসলেই একটু মজা করে গল্প করা যায়। কলেজ-প্রাইভেট শেষে প্রায়দিনই এখনে এসে বসি। সমুদ্র তো অনেক দূর। কাজের চাপে যাওয়া হয় না। এখানে এসেই সেই ক্ষুধা মেটাই।
সাগরের তীব্র গর্জনের অগণিত আওয়াজ না পাওয়া গেলেও ফুলে ফেঁপে ওঠা পদ্মার ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ে হারিয়ে যেতে পারেন আপনি। বর্ষাকালই সে আবহ উপলব্ধির উত্তম সময়। তবে শীতের পড়ন্ত রোদেলা বিকেল ভিন্ন এক মহিমায় হাজির হবে। পদ্মাপাড়ের বালুচরে হেঁটে সে স্বাদ আস্বাদন করবার চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে। নদীর বুকে ঘুরতে ঘুরতে পশ্চিম আকশে হেলে পড়া সূর্যের মিঠে রোদ নদীর ঢেউয়ে আলতো পরশ বুলিয়ে কমলা রঙের যে চিকিমিকি আবহ তৈরি করবে, তা-ই দেখা যাবে মনের কুঠুরিতে আনন্দের ভিন্ন ঢেউ বইয়ে দিচ্ছে।
অববাহিকা ধরে যেতে যেতে মনে হবে শেষ বিকেলের মিহি ঢেউ নদীতে বইছে না, বইছে যেন আপন অন্তরজুড়ে। ঢেউয়ের লুকোচুরির এই মায়াবী রূপও অবলোকন করা যাবে এই সুযোগে। মানবজীবন যেমন উত্থান-পতনে ভরপুর; ঢেউও বুঝি জীবনের মতো কোথাও উথিত, কোথাও নীরব-মসৃণ, আবার কোথাও ঘূর্ণিতে প্যাঁচানো।
পদ্মার পানির কাছাকাছি সারি সারি ছাতার নিচে পাতা রয়েছে এ ধরনের বিচ চেয়ার। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদ্মাপাড়ের দর্শনার্থীদের বিনোদনের নতুন সংযোজন হিসেবে এই ছাতা-চেয়ারের পাশাপাশি বিচ বাইকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
বদলে যাওয়া পদ্মাপাড়ে এখন মিলছে সমুদ্রের স্বাদ। এই স্বাদ নিতে অবশ্য গুনতে হবে ২০ টাকা। এ টাকায় সমুদ্রের মতো স্বাদ নেওয়া যাবে এক ঘণ্টা।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কর্মচারী মনিরুল ইসলাম এসব বেঞ্চের টিকিট বিক্রি করেন। তিনি বলেন, চালুর পর প্রথমদিকে সব সময়ই ভর্তি থাকতো। এখন একটু কম থাকছে। তবে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবগুলো চেয়ার বুক থাকে।