৪ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে পশ্চিমাঞ্চল ক জোনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আজিজুর রহমােনর মৃত্যুবার্ষিকী



লেখক: মুজতবা আহমেদ মুরশেদ
বাম থেকে পেছনে তাজউদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, এ্যাডভোকেট মোঃ আজিজুর রহমান। সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মানিক মিয়া। এ ছবিটি দৈনিক ইত্তেফাক অফিসে ১৯৬৯ সালের ৩ মার্চ মাসে

বাম থেকে পেছনে তাজউদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, এ্যাডভোকেট মোঃ আজিজুর রহমান। সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মানিক মিয়া। এ ছবিটি দৈনিক ইত্তেফাক অফিসে ১৯৬৯ সালের ৩ মার্চ মাসে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে পশ্চিমাঞ্চল ক জোনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আজিজুর রহমােনর মৃত্যুবার্ষিকী

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অগ্রসৈনিক বৃহত্তর দিনাজপুরের বিপ্লবী জননেতা এ্যাডভোকেট মোহম্মদ আজিজুর রহমান ছিলেন ১৯৭০ সালে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) এবং মুক্তিযুদ্ধে পশ্চিমাঞ্চল ক জোনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। আজ ৪ ডিসেম্বর তাঁর ৩১তম মৃত্যুবাষির্কী। তিনি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজে তাঁরা একইসাথে পড়াশোনা করতেন এবং বেকার হোস্টেলে থাকতেন। দুজনেই ছিলেন গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারি ।

১৯৭১ সালে প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু হলে এ্যাডভোকেট মোহম্মদ আজিজুর রহমান, এম,এন,এ দিনাজপুর শহরের পাহাড়পুর মহল্লাায় তাঁর বাসায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন । ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক নির্দেশনায় বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার গঠিত সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নির্বাচিত আহ্বায়ক হিসাবে জেলায় নেতাকর্মী ও তরুণদের সংগঠিত করেন। ১৩ এপ্রিল পাকিস্তানী সৈন্যরা দিনাজপুর দখল করলে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আঙ্গিক বদলে তাঁকে সভাপতি করে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা মুক্তিসংগ্রাম সমন্বয় পরিষদ গঠিত হয়। একাত্তরে জুলাই মাসে যুদ্ধ সেক্টরগুলো পূর্ণতা পাবার আগ পযন্ত এ পদাধিকারবলেই তিনি দিনাজপুর কেন্দ্রীয় মুক্তি-সংগ্রাম কমিটির সভাপতি হিসাবে মুক্তিযুদ্ধকালীন তাঁর লেটারহেড প্যাডে অসংখ্য নির্দেশনা জারি করেছেন।

 এ্যাডভোকেট মোঃ আজিজুর রহমান

মুজিবনগর সরকার ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরগুলো সম্পন্ন করলে, এ্যাডভোকেট মোহম্মদ আজিজুর রহমান, এমএনএ, মুক্তিযুদ্ধের ৭ নং এবং ৬ নং সেক্টর (অর্ধেক) অঞ্চলের ল্যাফটানেন্ট জেনারেল পদমর্যাদায় সিভিল এ্যফেয়ার্স এ্যডভাইজার, ফ্রিডমফাইটার্স রিক্রুটিং ও লিয়াঁজো অফিসার পদে দায়িত্ব প্রদান করে। জেনারেল ওসমানী স্বাক্ষরিত মুজিবনগর সরকার কর্তৃক ৩০ আগষ্ট জারি করা গোপন পরিপত্র নং: ০০০৯জি/২ অনুযায়ী মোঃ আজিজুর রহমানের সদর দফ্তর ছিল ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ থানার অন্তর্ভূক্ত তরঙ্গপুরে। মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত সেই গোপন পরিপত্র অনুয়ায়ী কার্যত তিনি ৭ নং এবং ৬ নং সেক্টর (অর্ধেক) সেক্টরের সকল মুক্তিযোদ্ধার রিক্রুটিং ও অস্ত্র প্রশিক্ষণ ক্যাম্প পরিচালনায় সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ ছিলেন। উক্ত সেক্টরের সামরিক কমান্ডার এবং অধিনস্ত সকলের জন্যে বেসামরিক বিষয়ে তাঁর নির্দেশ মানাটা ছিল বাধ্যতামুলক। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য বিষয়েও পরামর্শ দেবার এখতিয়ার তাঁর ছিল। সকল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র্রে তাঁর সামরিক বিষয়ে প্রদত্ত পরামর্শ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে তাৎক্ষণিকভাবে সেক্টর কমান্ডারকে জানানোর নির্দেশ ছিল।

উল্লেখ্য, পশ্চিমাঞ্চল প্রশাসনিক ক জোনের প্রশাসনিক কর্মকর্তার হিসাবেও দায়িত্বপ্রাপ্ত হন তিনি । মুক্তিযোদ্ধাদের অবিকৃত তালিকার লাল বই খ্যাত দলিলে মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতৃত্ব কাঠামোয় ’স্বাধীনতার বীর সেনানী, স্বরণীয় যারা বরণীয় যারা’ শিরোনাম অধিভূক্ত ক্রম অনুযায়ি এ্যাডভোকেট মোঃ আজিজুর রহমান এর কোড ০৭০০০০০০২১ এবং পরে দিনাজপুর -২ আসনের এম,এন,এ হিসাবে ০৭০০০০০০৩৯। সে দলিল অনুযায়ি প্রথমেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম রাষ্ট্রপতি হিসেবে।

মূলতঃ এ্যাডভোকেট মোহম্মদ আজিজুর রহমান, এমএনএ এর নেতৃত্বের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক শাসক মুুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সামরিক শাসক দেশদ্রোহীতা ও তিন হাজার লোককে গণহত্যার অভিযোগ এনে অক্টোবর মাসে সামরিক আদালতে তাঁকে হাজির হতে সমন জারি করে এবং পরে মৃত্যুদন্ড দেয়। এসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান (এপিপি) রিপোর্টে বলা হয়, ১৭ আগস্ট ১৯৭১ দুই দফায় ৩০ এমএনএ, কে সামরিক আদালতে তলব। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে ঠাকুরগাঁয়ের মোঃ আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ সহযোগিতা ও ৩০০০ লোকের হত্যাকা-ে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে আছে এক গর্ভস্থ মহিলাকে হত্যার পর টুকরা টুকরা করা। এর পর গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দলিলপত্র: পঞ্চদশ খন্ড। পৃষ্ঠা ২২৭। এখানে এ্যাডভোকেট মোহম্মদ আজিজুর রহমান, এমএনএ এর প্রদত্ত বিবৃতির কিছু অংশ উল্লেখ করা অতি প্রাসঙ্গিক। তিনি লিখেছেন, “২৭ মার্চ দু ঘন্টার জন্যে কার্ফু তুলে নেয়া হয়। এ সুযোগে আমি বেড়িয়ে পড়ি এবং ইপিআর বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্থির হয় দিনাজপুর ইপিআর ৮ম বাহিনীর বাঙালীদের দায়িত্বে থাকবেন ক্যাপেটর নজরুল হক এবং ৯ম বাহিনীর দায়িত্বে থাকবেন সুবেদার মেজর আবদুর রউফ। আর আমি বেসামরিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করবো।”

তিনি আরোও উল্লেখ করেন, “২৪ শে মার্চে আমি ঠাকুরগাঁও এবং দিনাজপুরের ইপিআর বাহিনীর কয়েকজন সুবেদার ও হাবিলদারের সঙ্গে গোপনে আলাপ করি এবং তাদের উপদেশ দেই পাক অফিসাররা তাদের অস্ত্র জমা দিতে বললে তারা যেন তা না করেন। তাদের আরও উপদেশ দেই, এরকম পরিস্থিতি দেখা দিলে তারা যেন অস্ত্রাগার দখল করে নেন। তারা এতে রাজি হন। দিনাজপুর ইপিআর বাহিনীর একজন সুবেদার যুদ্ধ ঘোষণার পূর্বেই অস্ত্রাাগার লুন্ঠন এবং পাক সৈন্যদের হত্যার জন্য আমার এবং জেলা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি অধ্যাপক ইউসুফ আলীর কাছে অনুমতি চান। কিন্তু আমরা তাঁর এ প্রস্তাবে রাজি হইনি।

২৭ মার্চ পাক বাহিনী আমাকে অনেক খোঁজাখুজি করে। ২৮ শে মার্চ আমি এখান থেকে ঠাকুরগাঁয়ের ইপিআর বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য রওয়ানা হই। ২৯ শে মার্চ ঠাকুরগাঁ পৌঁছি। এখানে সুবেদার মেজর কাজিমউদ্দিন এবং ঠাকুরগাও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে একত্রে কাজ চালিয়ে যাই। সুগার মিলের জীপ নিয়ে দিনাজপুর ৯ নং ইপিআর বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ২৯ তারিখে রওয়ানা হই। ৩০ শে মার্চ দিনাজপুরের কাঞ্চনঘাটে আমাদের মু্িক্তবাহিনীর ঘাঁটিতে পৌঁছি। ঐ দিনই দিনাজপুরের ইপিআর ঘাঁটির সব অস্ত্র আমরা লাভ করি। এখানে রফিক সাহেব, ফয়েজ সাহেব, নাজিম ভুঁইয়া, জজ, আব্দুল হান্নান চৌধুরী এবং ক্যাপ্টেন নজরুল হকের সঙ্গে দেখা হয়। ভারতীয় বন্ধুগণ এখনে আমাদের রসদ সরবরাহ করতো।

৩১ মার্চ ঠাকুরগাঁ ঘাঁটি আমাদের দখলে আসে। রাত দশটায় আমরা অস্ত্রাগারের অস্ত্র নিজেদেরে অধিকারে আনি। এ সময়ে স্থানীয় গ্রামবাসী আমাদের সর্বাত্বক সহায়তা করে। এ সময়ে ভারতীয় সীমান্ত থেকে কিছু অস্ত্র ও অয়ারলেস সংগ্রহ করি। আমি ঠাকুরগাঁ ও পঞ্চগড়ের রেল লাইন অচল করে দেই এবং প্রাক্তন উইং কমান্ডার জনাব মির্জার সঙ্গে পরামর্শ করে শিবগঞ্জ বিমানঘাঁটি নষ্ট করে দেই। ক্যাপ্টেন নজরুলের দেয়া অস্ত্রসহ আমরা এলাকাব্যাপী মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ ও সংগঠনে তৎপর হই।

২রা এপ্রিল সীমান্ত পার হয়ে অস্ত্রের জন্য ভারতে যাই। সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য সুবেদার কাজিম উদ্দিনকে পাঠিয়ে আমি ঐ তারিখে গভীর রাতে দেশে ফিরে আসি। ৩রা মার্চ আমাদের দিনাজপুরে যুদ্ধঘাঁটি পরিদর্শন করি। ঐ দিনই দিনাজপুরের ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন আরাফকে ঠাকুরগাঁয়ে ডেকে পাঠাই এবং মিটিং করে সৈয়দপুর ক্যান্টেনমেন্ট আক্রমনের পরিকল্পনা নেই। ৫ এপ্রিল আমি সেতাবগঞ্জ ও পীরগঞ্জ ঘাঁটি অভিমুখে রওয়ানা হই । ৬ এপ্রিল রাতে ভারতে যাই এবং কংগ্রেস নেতা বাবু আর দত্ত, এমএলএ, এর সাথে আলাপ করি। অধ্যাপক ইউসুফ আলী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, মিজানুর রহমান, মনসুর আলী প্রমূখ নেতৃবর্গের সঙ্গেও সেখানে সাক্ষাৎ হয়।

১৩ এপ্রিল পশ্চিম দিনাজপুরের রায়গঞ্জে ফিরি এবং সেখান থেকে এসে দিনাজপুর শহরের উপকন্ঠে প্রবেশের চেষ্টা করি। কিন্তু সে সময়ে পাক বাহিনী দিনাজপুরে প্রবেশ করে প্রবল গুলিবর্ষণ করে। রাতে ক্যাপ্টেন নজরুল হক, সুবেদার মেজর রউফ, সুবেদার ওসমান গনী সাহেবের সঙ্গে ভারত সীমান্তে সাক্ষাৎ হয়। এ সময়ে রাধিকাপুর ষ্টেশনে ভারতগামী হাজার হাজার শরনার্থী দেখতে পাই। এখান থেকে বিএসএফ ক্যাম্পে চলে যাই এবং সেখানে অবস্থান করি। ১৯ এপ্রিল মুক্তিবাহিনীসহ পাকবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমন করি। যুদ্ধে আমরা জয়ী হই এবং প্রচুর খাদ্যদ্রব্য উদ্ধার করি। শরনার্থী ক্যাম্পের যুবকদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করি। আমার সঙ্গে এ সময় দিনাজপুরের জজ, ডাঃ নইম উদ্দিন, ছাত্রনেতা আজিজুল ইসলামও ছিলেন। মুজিবনগর সরকার এবং ভারতীয় বাহিনী আমাদের এ ব্যাপারে সহায়তা করে।”

দিনাজপুরে বাঙালী জাতীয়তাবাদের রাজনীতি এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতার ইতিহাসে দেখা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিনাজপুর শহরে ১৯৫৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রথম দিনাজপুর জেলা কমিটি গঠিত করে দলের প্রতিষ্ঠাকালিন সদস্য এবং তাঁর ঘনিষ্ট রাজনৈতিক সহচর এ্যাডভোকেট মোঃ আজিজুর রহমানকে প্রথম সহ-সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করেন। এরপর তিনি ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের দু দফায় নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের ফলে বঙ্গবন্ধুর কারামুক্ত হয়ে অক্টোবরের ১০ তারিখে দিনাজপুর সফরে আসেন। সফরের সম্বর্ধনা কমিটির সভাপতি ছিলেন এ্যাডভোকেট মোহম্মদ আজিজুর রহমান এবং সম্পাদক অধ্যাপক ইউসুফ আলী।

জননেতা এ্যাডভোকেট মোহম্মদ আজিজুর রহমান অসাধারণ মেধাবী ছিলেন । ১৯৪৫ সালে ডিস্টিংশন (৮৫% প্রতি বিষয়ে) সহ তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে তৃতীয় স্থান অধিকার করে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। অনেক ভাষায় প-িত এ্যাডভোকেট মোহম্মদ আজিজুর রহমান, এমএনএ, ছিলেন সর্বস্বত্যাগী। এ মহান জননেতা সম্পর্কে দিনাজপুর তথা বাংলাদেশের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ মেহরাব আলী সম্পাদিত দিনাজপুরের ইতিহাস সমগ্র- ৫ম খন্ডে (পৃষ্ঠা নং ৫৮২) লিখেছেন, ”দিনাজপুর বারের লব্ধ প্রতিষ্ঠিত আইনজীবি, সুলেখক, সম্পাদক, সংসদ সদস্য ও রাজনীতি ক্ষেত্রে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের উত্তেজিত যুগে। যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন যুদ্ধের সংগঠক ও সংস্থানের ব্যবস্থপনায় প্রাণান্তকর পরিশ্রম করেন তিনি। ঐ সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে অনেকগুলি জ্বালাময়ী বক্তৃতা করেন, যা দেশবাসীর মনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে অপূর্ব সারা জাগায়। দিনাজপুর বড়মাঠে আয়োজিত ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর বিজয় উৎসবে তাঁর প্রদত্ত ভাষণটিও ছিলো উন্মাদনাময়ী, আবেগময়ী ও জ্বালাময়ী। তিনি রাজনীতির চর্চা করে গেছেন রাজনীতির জন্যে, অন্য কোনো মতলবে নয়। তিনি ভোগীর চেয়ে ত্যাগী ছিলেন বেশী। তবৎ কাজে নিজস্ব সহায় সম্পত্তি উজাড় করে দিতে অকুণ্ঠচিত্ত ।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এই স্বর্ণসন্তান ৪ ডিসেম্বর ১৯৯১ সালে দিনাজপুর শহরে ঘাসিপাড়া মহল্লায় ভাড়াবাড়িতে ইন্তেকাল করেন।

মোঃ আজিজুর রহমান। সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মানিক মিয়া। এ ছবিটি দৈনিক ইত্তেফাক অফিসে ১৯৬৯ সালের ৩ মার্চ মাসে স্টাফ ফটোগ্রাফার আফতাবুর রহমান তুলেছেন।

লেখক: মুজতবা আহমেদ মুরশেদ

   

চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা: অবরুদ্ধ এতিম ৩ ভাই-বোনের পরিবার



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লক্ষ্মীপুরে ইট ও ত্রিপলের প্রতিবন্ধকতা দিয়ে একটি বাড়ির চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে তিন এতিম ভাইবোনের একটি পরিবার।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের পদ্ম পুকুরপাড় বাড়িতে গিয়ে রাস্তায় ইট ও ত্রিপল দিয়ে প্রতিবন্ধকতার ঘটনার সত্যতা দেখা যায়।

বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, প্রায় ৩৫ বছর ধরে বাড়ির সকলে প্রায় সাড়ে ৪ ফুটের একটি পথ ব্যবহার করে আসছে। প্রায় এক বছর আগে প্রবাস ফেরত হারুনুর রশিদ ও তার ভাই আমির হোসেন বাচ্চু ওই পথটি বন্ধ করে দেয়। পথ বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে দুই ভাই অন্যদেরকে মামলা-হামলার হুমকি দেয়।

জানা গেছে, পদ্ম পুকুরপাড় বাড়ির মৃত মোখলেছুর রহমানের ৬ ছেলে। পর্যায়ক্রমে সকলেই পৃথক বসতঘর নির্মাণ করেন। তারাসহ ওই বাড়ির অন্যান্য পরিবারগুলোর জন্য পূর্বপুরুষের সময়কাল থেকে একটি পথ ছিল। এটি যৌথ পথ হিসেবে সবাই ব্যবহার করতো। মোখলেছুর রহমানের দ্বিতীয় ছেলে নাছির উদ্দিন মারা যান। নাছিরের সংসারে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। সম্প্রতি তার ছেলে রবিন বিদেশ যায়। রবিন ও তার বোন ফারজানা আক্তারের স্বামী যৌথভাবে বাড়িতে একটি পাকা ভবন নির্মাণ করেন। ওই ভবনটি নির্মাণ নিয়ে রবিনের চাচা হারুন ও বাচ্চু বাধা দেয়। এরপরও রবিনদের বসতঘরের ভবনটি নির্মাণ কাজ শেষ করেন। এরমধ্যেই জমি পাওনা দাবি করে হারুন ও বাচ্চু প্রতিহিংসা বসত তাদের সদর দরজার সামনের পথে ইট ও ত্রিপল দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এনিয়ে রবিন আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আদালত সদর উপজেলা সহকারী কমিশানারকে (ভূমি) তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। সহকারী কমিশনার ঘটনাটি তদন্তের জন্য দত্তপাড়া ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেন।


মৃত নাছির উদ্দিনের বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন, শহীদ উদ্দিন ও ছোট ভাই সালাহউদ্দিন মানিক জানায়, নাছিরের মৃত্যুতে তার ছেলে-মেয়ে এতিম হয়ে গেছে। এতে ভাতিজা-ভাতিজিদের দেখভাল করা তাদের দায়িত্ব। সাড়ে ৪ ফুটে পথটি প্রায় ৩০ বছর ধরে বাড়ির সবাই ব্যবহার করে আসছে। এরমধ্যে তাদের দুই ভাই বাচ্চু ও হারুন পথটি বন্ধ করে দিয়ে অমানবিক কাণ্ড ঘটিয়েছেন। বাড়ি থেকে সবার বের হওয়ার পথ রয়েছে। এখন শুধু রবিনরাই পথ পাচ্ছে না। তারা অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে। পথটি নিয়ে আদালতে মিস মামলা দায়ের করলে সেটি স্থানীয় ইউপি ভূমি অফিস তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনের রেকর্ডিং পথ নয় বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বাড়ির ভেতরে যৌথ চলাচলের পথ সাধারণত রেকর্ড হয় না।

ভুক্তভোগী রবিনের বোন ফারজানা আক্তার বলেন, আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। বাসা থেকে বের হওয়ার কোনো পথ নেই। পেছনের দরজা ব্যবহার করে অন্যের জমি দিয়ে কোনোভাবে চলাচল করতে হচ্ছে। পথটি সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। হারুন ও বাচ্চু চাচা জোরপূর্বক পথটি বন্ধ করে দিয়েছে। পথটি উন্মুক্ত করে আমাদের চলাচল স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ চাই।

অভিযুক্ত হারুনুর রশিদ বলেন, আমি পথ বন্ধ করিনি। জমিটি আমার। নাছিরের ছেলে রবিন পথের ওপরই ভবন নির্মাণ করেছে। পারিবারিকভাবে জমি বণ্টন করতে বললে রবিনসহ আমার অন্য ৩ ভাই রাজি হচ্ছে না। এজন্য রবিনদের ভবন নির্মাণে আমি বাধা দিই। তারা বাধা উপেক্ষা করে ভবন নির্মাণ করেছে।

ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আনোয়ারা আক্তার (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, ‘উপজেলা ভূমি অফিস থেকে আমার কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে- চলাচলের পথটি রেকর্ডভুক্ত কি না। আমি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছি। সেখানে তালিকাভুক্ত পথ নেই। তবে বাড়ির মানুষ দীর্ঘদিন ধরে পথটি ব্যবহার করেছে। এটি সমঝোতার বিষয়। পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমঝোতা করে পথটি উন্মুক্ত করা সম্ভব’।

;

রাঙামাটিতে ট্রাক খাদে পড়ে ৬ শ্রমিক নিহত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাঙামাটি
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাঙামাটির সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কে ড্রাম ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ৬ শ্রমিক নিহত হয়েছেন।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শ্রমিকরা সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ছিল বলে জানা গেছে।

তাৎক্ষণিকভাবে নিহত ও আহতদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ আহাম্মেদ দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ৫ থেকে ৮ জন নিহতের খবর পাওয়া গেলেও আমরা এখনো পর্যন্ত নিহতের প্রকৃত তথ্য নিশ্চিত হতে পারিনি। সাজেক থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে রওনা দিয়েছে। তারা সেখানে পৌঁছলে ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।

;

ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে অপহরণ, কলেজছাত্রীসহ গ্রেফতার ৫



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রংপুর নগরীতে ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে একটি কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজারকে অপহরণের পর মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতের মামলায় কলেজছাত্রীসহ তার চার সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলা ও প্রাথমিক তদন্তের উদ্ধৃতি দিয়ে রংপুর জেলা কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বজলুর রশীদ জানান, দুই মাস আগে রংপুর সদর উপজেলার ইশ্বরপুর শালমাপা এলাকার আক্তারুল ইসলামের মেয়ে রোকেয়া কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী মারিয়া চৌধুরী সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয় সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের রংপুর বিভাগীয় এরিয়া ম্যানেজার শামস আল আরেফিন হাদীর।

এরপর ম্যাসেঞ্জারে দুইজনের সখ্যতা গড়ে উঠে। মাসখানেক আগে পায়রা চত্বরে তার সাথে প্রথম দেখা হয় হাদির। এ সময় থেকে হাদিকে বড় ভাই হিসেবে সম্বোধন করে মারিয়া।

ওসি আরও জানান, সখ্যতার সূত্রে মারিয়া মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বেলা ১১টায় হাদীকে রংপুর মহানগরীর কেরানীপাড়া চৌরাস্তা আইডিয়াল নার্সিং ইন্সটিটিউটের সামনে দেখা করার কথা বলে। ওই সময়ে হাদি তার সাথে দেখা করার জন্য অফিসিয়ার টয়োটা করোলা গাড়ি নিয়ে যায়। সেখানে পৌঁছানো মাত্রই মারিয়া তার সহযোগী জাহাঙ্গীর আলম, মাসুদ রানা, শিহাব শাহরিয়ার, তুষার ইসলামকে নিয়ে জোরপূর্বক গাড়িতে উঠে। চিৎকার করার চেষ্টা করলে মারিয়া তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে দাবি করে তা বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ করার হুমকি দেয়।

এসময় গাড়ি উঠেই হাদিকে ড্রাইভিং সিট থেকে অন্য সিটে দিয়ে তুষার গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বদরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যায়। এ সময় হাদির কাছ থেকে মারিয়া ও তার সহযোগীরা পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। না দিলে মারিয়ার সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে বলে প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ সময় তারা হাদির সাথে থাকা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, এনআইডি, পরিচয়পত্র ও ব্যক্তিগত ছবিসহ বিভিন্ন তথ্য মোবাইলের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের অন্য জায়গায় প্রেরণ করে। হাদির ফোনের পাসওয়ার্ড জোরপূর্বক নিয়ে তার ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এবং অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করে।

শুধু তাই নয়, হাদির ব্যবহৃত মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড নম্বর অ্যাপস থেকে ৫০ হাজার টাকা হাদির বিকাশ অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে। পথিমধ্যে টাকা বের করার জন্য সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের লাহিড়ীর হাট এলাকায় গাড়ির গতি কমালে হাদি সেখান থেকে কৌশলে নেমে টহল পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে মারিয়া ও তার চার সহযোগী তরুণকে গ্রেফতার করে।

এঘটনায় হাদি মামলা করলে বুধবার দুপুরে মারিয়াসহ পাঁচজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

;

থানচিতে ট্রাক লক্ষ্য করে গুলি



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বান্দরবান
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বান্দরবানের থানচি উপজেলার সীমান্ত সড়কের কাজে ব্যবহৃত একটি ট্রাক লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে সন্ত্রাসীরা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে থানচি সীমান্ত সড়কের ৮ কিলো নামকস্থানে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরে চারটি ট্রাক থানচি সীমান্ত সড়কের ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় নির্মাণ কাজের জন্য ইট রেখে দুর্গম পথ অতিক্রম করে থানচি বাজারে আসছিল। পথে সীমান্ত সড়কের ৮ কিলোমিটার নামক স্থানে পৌঁছালে জঙ্গলের ভেতর থেকে সাতজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ট্রাক লক্ষ্য করে ৬-৭ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।

গুলিতে একটি ট্রাকের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও চালকেরা দ্রুত গাড়ি চালিয়ে থানচি বাজারে চলে আসে। এসময় সন্ত্রাসীদের মাথায় লাল কাপড় বাঁধা ছিল। এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও ট্রাকের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে। তবে কে বা কারা গুলি করেছে তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না কেউ।

থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন জানান, ট্রাকে গুলি লাগার খবর পেয়েছি। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

;