ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস আজ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস আজ

ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস আজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও পাকিস্তানী হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঠাকুরগাঁও পাক হানাদার মুক্ত হয়। ঠাকুরগাঁও তখন মহকুমা ছিল। ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় জেলার ১০টি থানা মিলে ওই মহকুমা ছিল। এ অঞ্চলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই পিছু হটতে শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। চূড়ান্ত বিজয় আসে আজকের এই দিনটিতে।

আজ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করেছে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের কার্যালয় চত্বর হতে একটি আনন্দ র‌্যালি বের হয়ে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে জেলা পরিষদ অডিটরিয়াম বিডি হলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাতে পাক হানাদাররা ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সহজ সরল মানুষের ওপর। এ সময় হানাদাররা গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠণ ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এরপর ১৫ই এপ্রিল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকবাহিনীর দখলে চলে যায় ঠাকুরগাঁও। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত ঠাকুরগাঁওয়ের ইসলামনগর থেকে ছাত্রনেতা আহাম্মদ আলী, ইয়াকুব আলী, মাজারুল, দবিরুল ইসলাম, নুরুজ্জামান ও সিরাজউদ্দীনকে ধরে এনে পাক হানাদার বাহিনী ঠাকুরগাঁও ক্যাম্পে আটক করে রাখে। পরে তাদের হত্যা করে টাঙ্গন নদীর পারে ফেলে রাখা হয়। যেখানে বর্তমানে বধ্যভুমি গড়ে তোলা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও তখন ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার এম খাদেমুল বাশার। এ সেক্টরে প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল। ২৯ নভেম্বর এ মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শক্রমুক্ত হয়। পঞ্চগড় হাত ছাড়া হওয়ার পর পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। এরপর তারা প্রবেশ করে ঠাকুরগাঁওয়ে। ২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রচুর গোলাগুলি শুরু হয়। ওই রাতেই শক্রবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে ২৫ মাইল নামক স্থানে অবস্থান নেয়। ৩ ডিসেম্বর ভোররাতে ঠাকুরগাঁও শহর শক্রমুক্ত হয়।

সদর উপজেলার ফাড়াবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধার পিতা শেখ শহর আলী ও তার ভাই শেখ বহর আলীসহ ১৯ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে হত্যা করে তাদের মরদেহ আব্দুর রশিদ ডিগ্রি কলেজের পাশের একটি কূপে ফেলে দেয়। হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা গণহত্যা চালায় সদর উপজেলার জাঠিভাঙ্গা গ্রামে। সেখানে স্থানীয় কিছু লোকের সহায়তায় আশ-পাশের অনেক গ্রামের প্রায় তিন হাজার নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে পাকবাহিনী গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। পরে তাদের মরদেহ মাটি চাপা দেয়া হয়।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক স্থানে গণহত্যা চালায় পাকবাহিনী ও তার দোসররা। এরই মধ্যে সুসংগঠিত হতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামি মানুষ। তারা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে তুলে দুর্বার প্রতিরোধ।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর পতনের পর এ এলাকার সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। আনন্দ উদ্বেলিত কন্ঠে ‘জয়বাংলা’ ধ্বনি আর হাতে প্রিয় স্বদেশের পতাকা নিয়ে ছুটাছুটি করতে থাকে তরুণ-যুবক সবাই। এদিন সকাল থেকেই ঠাকুরগাঁও শহরসহ জনপদ ও লোকালয়ে মানুষ জড়ো হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বের হয় আনন্দের মিছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ঠাকুরগাঁও শহর।

মুক্তিযোদ্ধা ও প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল মজিদ বলেন, এই বধ্যভূমি ১৯৭১ সালে ২৩ এপ্রিল ১৮নং শুকানপুরী ইউনিয়নে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার লোককে পাকিস্তানি সৈন্যরা হত্যা করে। আমাদের এই শুকানপুকুরী বধ্যভূমি সংরক্ষণ করার দাবি জানাচ্ছি।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুব রহমান বলেন, জেলার বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া আমরা ঠাকুরগাঁওবাসী ৩ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত যথাযথ মর্যাদায় পালন করেছি।

   

কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল



নিউজ ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্প্রতি কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে একটি বিশেষ পেশেন্ট ফোরামের আয়োজন করেছে বাংলাদেশের প্রথম জেসিআই-স্বীকৃত হাসপাতাল এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো এই কোলোরেক্টাল ক্যান্সার। আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, হাসপাতালটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যগণ এবং ক্যান্সারের সাথে লড়াকু সাহসী রোগীরা তাদের নিজেদের অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলো সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। এছাড়াও, বিশেষজ্ঞরা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকির কারণ, স্ক্রীনিং নির্দেশিকা এবং চিকিৎসা পদ্ধতির উপর বিশেষ জোর প্রদান করেন।

গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি এবং হেপাটোলজি বিভাগের কোঅর্ডিনেটর এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ লুৎফুল এল. চৌধুরী নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল বজায় রাখার বিষয়ে জোর দেন। তিনি বলেন, “একজন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট হিসেবে আমরা কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করি। নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ক্যান্সার ভয়াবহ আকার ধারণের আগেই তা সনাক্ত ও প্রতিরোধ করা সম্ভব। আমি মনে করি, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইতে সচেতনতা সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আমাদের উচিৎ ক্যান্সার নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে সচেতন হওয়া এবং নিয়মিত স্ক্রিনিং ও স্বাস্থ্যসম্মত লাইফস্টাইল বজায় রাখা। আমাদের মনে রাখা উচিত যে উপযুক্ত জ্ঞান হলো প্রতিরোধের অন্যতম ভিত্তি।”

মেডিকেল অনকোলজির কোঅর্ডিনেটর ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ ফেরদৌস শাহরিয়ার সাইদ বলেন, “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার মোকাবেলায় রোগীদের সার্বিক সহযোগীতার পাশাপাশি যথাযোগ্য চিকিৎসার ধাপগুলো নিশ্চিত করতে আমরা স্বচেষ্ট। তবে সাধারণ মানুষকেও নিজ নিজ অবস্থান থেকে রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।”

জেনারেল অ্যান্ড ল্যাপ সার্জারির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, “কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রোগীর জীবন বাঁচাতে সময়মত পদক্ষেপ ও উন্নত অস্ত্রোপচারের কৌশলগুলো গ্রহণ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ।”

এভারকেয়ার হসপিটাল, বাংলাদেশের সিইও ও এমডি ডাঃ রত্নদীপ চাষ্কার বলেন, “এভারকেয়ার হসপিটালের মূল লক্ষ্য স্বাস্থ্যজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে সমাজের কল্যাণে ভূমিকা রাখা। আমাদের দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকমন্ডলী গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো চিহ্নিতকরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে ।”

এভারকেয়ার হসপিটাল, বাংলাদেশের মেডিকেল সার্ভিসেসের পরিচালক ডাঃ আরিফ মাহমুদ বলেন, “কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উন্নত স্বাস্থ্যসেবার প্রচার এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি রোগীকে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও সহায়তায় এভারকেয়ার হসপিটাল সর্বদা স্বচেষ্ট।”

আয়োজিত এই পেশেন্ট ফোরামে বিশেষজ্ঞরা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাথে প্রতিরোধ ও প্রতিকারের পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে মতবিনিময় করেন। দেশের প্রথম জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) স্বীকৃতি পাওয়া এভারকেয়ার হসপিটালের জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে অঙ্গীকারগুলোসহ ক্যান্সার মোকাবেলায় দক্ষতা ও রোগীদের স্বাস্থ্য উন্নতি প্রদর্শনে এই ফোরামটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

অনুষ্ঠানটিতে আরও উপস্থিত ছিলেন এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকার গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও হেপাটোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ ইকবাল মুর্শেদ কবির ও সিনিয়র কনসালটেন্ট প্রফেসর ডাঃ শায়লা পারভীন, এভারকেয়ার হসপিটাল, বাংলাদেশের সিইও ও এমডি ডাঃ রত্নদীপ চাষ্কার, মেডিকেল সার্ভিসেস বিভাগের ডিরেক্টর ডাঃ আরিফ মাহমুদ, চিফ মার্কেটিং অফিসার ভিনয় কাউল- সহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন ক্যান্সার-সারভাইভার, যারা তাদের অভিজ্ঞতা ও অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলো সবার সাথে শেয়ার করেন।

;

মরিশাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আরাফাতের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মরিশাসের পররাষ্ট্র, আঞ্চলিক সংহতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী মনিশ গোবিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) মরিশাসের স্থানীয় সময় সকালে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে মরিশাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী। এ সময় বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য মরিশাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে উল্লেখ করে দুই দেশের সম্পর্ককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন মর্মে মরিশাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

বৈঠকে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে মরিশাসে আরও বেশি শ্রমিক ও পেশাজীবীদের নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন। এছাড়া মরিশাসে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা যাতে দ্রুত দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে পারে সে ব্যাপারে মরিশাস সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন প্রতিমন্ত্রী।

যেহেতু মরিশাস আফ্রিকা মহাদেশের প্রবেশদ্বার তাই মরিশাসে বাংলাদেশের বিনিয়োগের মাধ্যমে আফ্রিকা মহাদেশে বাংলাদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা বৈঠকে তুলে ধরেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

বৈঠক শেষে মরিশাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনিশ গোবিনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, পশ্চিম ভারত মহাসাগর অঞ্চলে মাদক পাচার এবং মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার নিয়ে প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য বর্তমানে মরিশাস অবস্থান করছেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

;

ঈদযাত্রার ৬ বছরে সড়কে ১৬৭৪ প্রাণহানি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

গত ৬ বছরে ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৬৭৪ ও আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৭৬৫ জন।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সংস্থাটি রাজধানীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য তুলে ধরেন।

২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৬ বছরে ঈদযাত্রায় মোট ৮৩ দিনের তথ্য তুলে ধরে মাহবুব উদ্দিন আহমেদ জানান, ২০১৯ সালে ঈদযাত্রার ১৪ দিনে ১৪৬টি দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১৯৪ জন ও আহত হয় ৪০২ জন। ২০২০ সালে ১২ দিনে ১২৮টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৪৭ জন ও আহত ৩১৮ জন। ২০২১ সালে ১৪ দিনে ২৩৯টি দুর্ঘটনায় নিহত ৩১৪ জন ও আহত ২৯১ জন। ২০২২ সালে ১৪ দিনে ২৮৩টি দুর্ঘটনায় নিহত ৩৭৬ জন ও আহত ১৮০০ জন। ২০২৩ সালে ১৪ দিনে ২৪০টি দুর্ঘটনায় নিহত ২৮৫ জন ও আহত ৪৫৪ জন। ২০২৪ সালে ১৫ দিনের ঈদযাত্রায় ৩৫৮টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৬২ জন ও আহত হয়েছেন ১৫০০ জনের বেশি।

চলতি বছরের তথ্য তুলে ধরে মাহবুব উদ্দিন আহমেদ জানান, এ বছর ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৫ দিনে (৪ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল) দেশে ৩৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬৭ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ১৫০০ জনের বেশি। যদিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংখ্যা ৪৯৩ জন। শুধু ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালেই (পঙ্গু হাসপাতালে) ঈদের তিনদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪৫৪ জন, যার অধিকাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এই বাস্তবতায় ১৫ দিনে সারা দেশের হাসপাতালে আহত মানুষের সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি হবে।

তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬৭ জন নিহতের মধ্যে নারী ৬৩ জন, শিশু ৭৪ জন।এসব দুর্ঘটনার মধ্যে ১৮৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৫৬ জন, যা মোট নিহতের ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৫১ দশমিক ১১ শতাংশ। দুর্ঘটনায় পথচারী নিহত হয়েছেন ৬৮ জন, যা মোট নিহতের ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪১ জন, অর্থাৎ ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ।

একই সময়ে ৩টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ৮ আহত হয়েছেন। ১৪টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১০৪টি দুর্ঘটনায় ১১৩ জন নিহত এবং সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২৩টি দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত।

এবার ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি উভয়ই বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত বছরে ঈদুল ফিতরে ২৪০টি দুর্ঘটনায় ২৮৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। প্রতিদিন গড়ে ১৭ দশমিক ১৪টি দুর্ঘটনায় ২০ দশমিক ৩৫ জন নিহত হয়েছিল। এ বছরে ঈদযাত্রায় প্রতিদিন গড়ে ২৩ দশমিক ৮৬টি দুর্ঘটনায় ২৪ দশমিক ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। এই হিসেবে এবছর দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩৯ দশমিক ২০ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ২০ দশমিক ১৯ শতাংশ।

৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানায় রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

;

সমিতির লোকদের টাকা দিতে কাটা হবে ৩ হাজার গাছ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁধবাজার থেকে মাদুলিয়া পর্যন্ত রাস্তার পাশের তিন হাজার গাছ কাটার পরিকল্পনা করেছে বন বিভাগ। গাছ কাটার জন্য গাছের গাঁয়ে নাম্বারিং করে দরপত্রও সম্পন্ন করেছে তারা। তবে, গাছ না কাটার দাবি তুলেছে স্থানীয় জনগণ ও পরিবেশবীদরা।

জানা যায়, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনীপাড়া থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত পাউবোর জিকে খাল ঘেঁষে প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। সড়কে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সমিতির মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর পূর্বে কয়েক হাজার ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করেছিল উপজেলা বনবিভাগ।

দরপত্রের মাধ্যমে ২০২৩ সালে যদুবয়রা থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। চলতি বছরেও ওই সড়কের লাহিনীপাড়া থেকে বাঁধবাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটা হয়েছে।

সম্প্রতি বাঁধবাজার থেকে মাদুলিয়া পর্যন্ত আরও তিন কিলোমিটার সড়কের কয়েক হাজার গাছ কাটার জন্য গাছের গাঁয়ে নাম্বারিং করে দরপত্র সম্পন্ন করেছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য গাছগুলো না কেটে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ, পরিবেশবীদ ও পথচারীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, জিকে খালের লাহিনীপাড়া এলাকায় সড়কের ধারে আর সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্য আর নেই। কাটা গাছগুলোর গোঁড়া ও কিছু অংশবিশেষ পড়ে আছে। চাঁপড়া বোর্ড অফিস এলাকার খালের পাকা ও কাঁচা সড়কের দুপাশে মেহগনি, বাবলা, কড়ইসহ নানান জাতের কয়েক হাজার বড় বড় গাছ রয়েছে। সেগুলোর গাঁয়ে নাম্বারিং করা।

ভ্যানচালক আব্দুল হাকিম জানান, তিনি নিয়মিত ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। ক্লান্ত হয়ে পড়লে তিনি প্রায়ই সড়কে বসে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেন। গাছ গুলো কাটা হলে আর বসা হবেনা তার। তার ভাষ্য, গাছের কারণে মানুষ স্বস্তিতে সড়কে চলাচল করতে পারে। অনেকেই বিশ্রাম নেন।

কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের ছাত্র মোস্তাক শাহরিয়ার বলেন, তিন মাস আগেও সড়কের ধারে গাছগুলো ছিল চোখের সৌন্দর্য। বড় পুকুরের ওখানে ছায়াতলে মানুষ বিশ্রাম নিত। আরামে চলাচল করত পথচারীরা। এখন সেখানে ধূধূ মরুভূমি, তীব্র দাবদাহ। অল্প কিছু টাকার জন্য সরকার যেন আর গাছ না কাটে।

আলিমুজ্জামান রাজিব নামের আরেক ছাত্র বলেন, যেহেতু গাছগুলো আমাদের ছায়া দিচ্ছে। সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করছে। সেহেতু গাছ গুলো না কাটায় ভালো। তর ভাষ্য, গাছপালা কমে যাওয়ার কারণেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে না, তীব্র তাপদাহ চলছে। তিনি গাছ না কাটার দাবি জানান।

কুমারখালী উপজেলা বনবিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আর্থ-সামাজিক ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০৪ সাল থেকে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বনবিভাগ। তারা প্রথমে স্থানীয়দের নিয়ে এলাকাভিত্তিক সমিতি গঠন করে। পরে বিভিন্ন সড়কের ধারে জ্বালানি কাঠের গাছের চারা রোপণ করেন। গাছ দেখাশোনা করে সমিতির সদস্যরা। গাছের বয়স যখন ১০ বছর পূর্ণ হয়। তখন গাছ কাটা ও বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে বনবিভাগ। গাছ বিক্রির ৫৫ ভাগ টাকা পায় সমিতির সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ পায় ৫ ভাগ। আর বনবিভাগ ও সড়ক সংশ্লিষ্ট বিভাগ পায় ২০ ভাগ করে টাকা।

জনগণের গাছ রক্ষার দাবির সাথে একমত পোষণ করেছেন চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক মঞ্জু।

সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, ছায়া ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে গাছগুলো থাকা দরকার। তিনি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন। তবে কিছু গাছ ঝড়ে ভেঙে পড়লে মানুষের ঘর-বাড়ি ও দোকানপাটের ক্ষতি হবে। সেগুলো কাটার কথাও জানান তিনি।

পরিবেশ নিয়ে প্রায় ৪১ বছর ধরে গবেষণা করছেন গবেষক গৌতম কুমার রায়। তিনি জানান, ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী দেশে ২৫ ভাগ বনভূমি বা গাছপালা থাকা দরকার। কিন্তু সেই তুলনায় গাছ আছে মাত্র ৯ ভাগের কম। তবুও প্রতিদিনই গাছ উজাড় হচ্ছে। যে মুহূর্তে প্রচণ্ড তাপদাহ চলছে। পানির মহা সংকট চলছে। মানুষ গরমে নাভিশ্বাস করছে। পাখিকুল আশ্রয় পাচ্ছেনা। সেই মুহূর্তে গাছগুলো কাটার ঘটনা সত্যি অদ্ভুত ও দুঃখজনক বটেই। তার ভাষ্য, আমরা উন্মাদ মৃত্যুর জাতি। যে উন্মাদ মৃত্যুর মাধ্যমে আমরা শুধু ধ্বংসকেই আনন্দের সাথে গ্রহণ করি। সৃষ্টিকে না।

উপজেলা বনবিভাগ কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান জানান, ১০ বছর পূর্ণ হলেই সমিতির নিয়ম অনুসারে গাছ কেটে পুনরায় নতুন চারা রোপণ করা হয়। ইতিমধ্যে ওই সড়কের ১৩ কিলোমিটার এলাকার গাছ কাটা হয়েছে। অন্যান্য গাছগুলো দরপত্রের মাধ্যমে কাটা হবে। তার ভাষ্য, গাছ রক্ষার কোনো সুযোগ নাই।

যেহেতু তাপদাহ চলছে, সেহেতু এই মুহূর্তে গাছগুলো থাকাই ভালো বলে মনে করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি জানান, বনবিভাগের সঙ্গে আলাপ করে বিধিমতে কার্যকারী পদক্ষেপ নেয়া হবে

;