বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগের বিষফোঁড়া আব্দুল মান্নান!

বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগের বিষফোঁড়া আব্দুল মান্নান!
বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হওয়া প্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দ। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকেই আব্দুল মান্নান আকন্দের পক্ষে গোপনে কাজ করায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডাঃ মকবুল হোসেনের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আশংকা প্রকাশ করছেন দলের নেতাদের অনেকেই। তবে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেন না।
আগামী ১৭ অক্টোবর বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৯ জন নেতা দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল মান্নান আকন্দও দলীয় ফরম সংগ্রহ করেন। দল থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান ডাঃ মকবুল হোসেনকে আবারো চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। আব্দুল মান্নান আকন্দ দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হন। বিএনপি জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় বগুড়ায় চেয়ারম্যান পদে দুইজনই প্রার্থী লড়ছেন। এদের একজন আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনীত প্রার্থী অপরজন দলের বহিষ্কৃত নেতা।
বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলা, ১২টি পৌরসভা ও ১০৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গঠিত বগুড়া জেলা পরিষদ। উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যগণের ভোটে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানও সদস্য নির্বাচিত হবেন।
বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৬২৫ জন ভোটারের মধ্যে ২ জন মৃত্যুবরণ করায় ১৬২৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত বগুড়া জেলায় বিএনপি জামায়াতের ভোট রয়েছে ৬০ শতাংশ। উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগের বেশী থাকলেও পৌরসভার কাউন্সিল ও ইউপি সদস্য বেশী রয়েছে বিএনপি জামায়াতের।
এছাড়াও ১০৯ টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৩৯টি বিএনপির, ৪০টি আওয়ামী লীগের, ৪টি জামায়াতের চেয়ারম্যান রয়েছেন। এছাড়াও ২৬ জন চেয়ারম্যান যারা আওয়ামী লীগ হলেও নৌকা প্রতীক না পেয়ে দলের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
বগুড়ায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন গুলোতে তৃণমূল থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত রয়েছে গ্রুপিং এবং আভ্যন্তরীণ কোন্দল। এই কোন্দল এবং গ্রুপিং এর কারণেই জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর ভরাডুবির আশংকা করছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাদের অনেকেই।
নাম প্রকাশে অনাগ্রহী আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডাঃ মকবুল হোসেন ৮৭ বছর বয়সে নির্বাচন করছেন। তিনি বয়সের কারণে নির্বাচনে ভোটারদের কাছে তেমন যেতে পারছেন না।
আবার ভোটারও বলছেন প্রার্থীকে দেখলে ভোট আরো কমে যাবে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, ডা. মকবুল হোসেন মানুষ হিসেবে ভাল, সারাজীবন তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন, তার নামে কোন বদনাম নাই। কিন্তু বয়স জনিত কারণে তিনি একা চলা ফেরা করতে পারেন না। আবার যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তাদের অনেকেই মনোনয়ন না পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। আবার অনেকে নেতা নিজেই সদস্য পদে নির্বাচন করছেন। ফলে চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকা দৃশ্যমান হচ্ছে না।
গত বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠক থেকে ডা. মকবুল হোসেনকে জযলাভ করানোর জন্য কাজ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আব্দুল মান্নান আকন্দ নামের যিনি নির্বাচন করছেন তিনি এক সময় বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি বিভিন্ন কারণে আলোচিত, সমালোচিত এবং বিতর্কিত ব্যক্তি। ২০২১ সালে বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করে ৫৬ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। আব্দুল মান্নান আকন্দ নির্বাচন করায় বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা মার্কার বিপক্ষে নির্বাচন করায় আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে আব্দুল মান্নানকে অব্যাহতি দেয়া হয়। সেই আব্দুল মান্নন এবারও জেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। নির্বাচন অফিসে আব্দুল মান্নানের দাখিল করা হলফ নামা অনুযায়ী তার নামে ৬টি মামলা ছিল। জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের পর আব্দুল মান্নানের নামে চাঁদাবাজী এবং লুটপাটের অভিযোগ আরো একটি মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় আদালতে জামিন নিতে গেলে জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানো হয়। জেল হাজাতে থাকা অবস্থায় গত -২২ সেপ্টেম্বর আব্দুর মান্নানের নামে আরো একটি চাঁদাবাজী ও অর্থ আত্মসাতের মামলা করা হয়। বর্তমানে আব্দুল মান্নান জেল হাজতে রয়েছেন।
এদিকে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল জেলখানায় আব্দুল মান্নানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তারা দীর্ঘ সময় আব্দুল মান্নানের সাথে বৈঠক করে তাকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। কিন্তু আব্দুল মান্নান মনোনয়ন প্রত্যাহারে রাজী হননি। অপরদিকে আব্দুল মান্নানের হলফ নামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ মনোনয়ন বাতিলের জন্য অপর প্রার্থী আপিল করেন। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে শুনানি শেষে আব্দুল মান্নানের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের ৬০ শতাংশ ভোটের উপর নির্ভর করছে প্রার্থীদের জয় পরাজয়। বিএনপির মাঠ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, তাদের উপর এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা আসেনি নির্বাচন বিষয়ে। বগুড়া সদরের নিশিন্দারা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সরকার বলেছেন, আমাদের ভোট দিতে কোন বাঁধা নেই। ভোট দেয়ার প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। দল থেকে এখন পর্যন্ত ভোট দিতে নিষেধ করা হয়নি।
বগুড়া জেলা বিএনপি আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেল বলেন, দল যেহেতু নির্বাচন বর্জন করেছে সেহেতু ভোট দিতেও যাবেন না কেউ।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি টি জামান নিকেতা বলেছেন, দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। এখানে কোন গ্রুপিং চলবে না। বগুড়ায় বিএনপির ভোটার বেশী হলেও উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে তারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে আমার বিশ্বাস।