জাতিসংঘের হাইকমিশনারকে মানবাধিকার নিয়ে অপপ্রচার সম্পর্কে অবহিত করলেন বিশিষ্টজনেরা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
জাতিসংঘের হাইকমিশনারকে মানবাধিকার নিয়ে অপপ্রচার সম্পর্কে অবহিত করলেন বিশিষ্টজনেরা

জাতিসংঘের হাইকমিশনারকে মানবাধিকার নিয়ে অপপ্রচার সম্পর্কে অবহিত করলেন বিশিষ্টজনেরা

  • Font increase
  • Font Decrease

সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ও চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল বাচেলেটকে বাংলাদেশের মানবধিকার নিয়ে নানা অপপ্রচার সম্পর্কে অবহিত করেছেন সরকার, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ বিশিষ্ট জনেরা ।

ফরেন সার্ভিস একাডেমীতে সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার  মিশেল বাচেলেট এর সম্মানে এক টাউন হল মিটিং ও নৈশভোজে জাতিসংঘের হাই কমিশনার বিশিষ্টজনদের সাথে মতবিনিময় করেন ।

বাংলাদেশের নানা ক্ষেত্রে অগ্রগতির চিত্র ফুটে উঠে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীর বক্তৃতায়। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরকার বিরোধী কিছু চিহ্নিত ব্যক্তির তথ্যের উপর ভিত্তি করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু মানবাধিকার সংগঠন তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করছে- জাতিসংঘের হাই কমিশনারকে এমন তথ্য দেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড۔ সেলিম মাহমুদ । 

পররাষ্ট্র সচিব ড۔ মাসুদ বিন মোমেনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় পর্বে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ নানা ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়ে উন্নয়নশীল বিশ্বে একটা মর্যাদার স্থানে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সার্বিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে । দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, বাংলাদেশ মোটামুটি একই রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই যাচ্ছে।

নৈশভোজ পর্বে জাতিসংঘের হাইকমিশনারকে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে নানা  অপপ্রচার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড۔ সেলিম মাহমুদ । ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে জামিন দেয়া না দেয়া, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার, সাংবাদিকদের এই আইনের বাইরে রাখা, এই আইনে প্রকৃত সাংবাদিকরা গ্রেফতার হচ্ছে কিনা- এই সকল বিষয়ের সাংবিধানিক ও আইনি ব্যাখ্যা দেন তিনি । ড۔ সেলিম জানান, বাংলদেশে প্রচলিত বেশ কয়েকটি আইনে যৌক্তিক কারণেই বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতারের বিধান রয়েছে, অনেক আইনেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতে জামিন না দেয়ার বিধান রয়েছে । তবে উচ্চতর আদালত জামিন দিয়ে থাকে । সাংবাদিক সহ কোন কমিউনিটিকে নির্দিষ্ট কোন ফৌজদারি আইনের আওতার বাইরে রাখা সংবিধানিক মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী । তিনি জানান, বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি আইনে বহু বছর ধরেই এই ধরণের বিধান রয়েছে । যৌক্তিক কারণেই এই ধরণের বিধান রাখা হয় । ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সনদ, আমাদের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের বিধানাবলী এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

তিনি জানান, এই বিষয়টি পরিষ্কার করার প্রয়োজন রয়েছে, যে মামলা গুলো ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের আওতায় বলে প্রচার করা হচ্ছে, এর প্রায় ৮০% মামলা বিএনপির আমলে প্রণীত আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার অধীন মামলা । শেখ হাসিনার সরকার এই ৫৭ ধারা বাতিল করেছে। আর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে মামলার কথা বলা হচ্ছে, তার প্রায় ৯০ শতাংশ মামলাই হচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক কিছু ভুঁইফোড় বেআইনি নিউজ পোর্টালের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে, যারা মূলত নানা শ্রেণী পেশার মানুষকে ব্ল্যাকমেইলিং এর মাধ্যমে হয়রানি করে থাকে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুম বা ফোর্সড ডিসএপিয়ারেন্স সম্পর্কে যে অপপ্রচার চলছে, সেই বিষয়টি ড۔ সেলিম মাহমুদ জাতিসংঘ হাইকমিশনারের দৃষ্টিতে আনেন। তিনি জানান, মানবাধিকার রিপোর্ট গুলোতে গুম সম্পর্কিত যে তথ্য দেয়া হয়ে থাকে, একটু পর্যবেক্ষণ করলেই বুঝা যায় যে, এগুলো স্ববিরোধী ও বাস্তবতা বিবর্জিত। এই সব রিপোর্টে বলা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিরোধী দলের নেতা- কর্মী ও সমর্থকরা এই ফোর্সড ডিসএপিয়ারেন্স এর মূল ভিক্টিম। কিন্তু সেই রিপোর্টে ভিক্টিমদের যে সংখ্যা দেয়া হয়, তাতে বুঝা যায় এই বক্তব্য স্ববিরোধী ও বাস্তবতা বিবর্জিত। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী ভিকটিম রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী সমর্থক হয়ে থাকলে এই সংখ্যা অনেক বেশী হওয়ার কথা। পক্ষান্তরে ভিক্টিমদের যে তালিকা দেয়া হয়, সেখানে কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য কিংবা সমর্থক থাকেনা। তাতে বুঝা যায়, এই রিপোর্ট গুলোতে যে তথ্য দেয়া হয়, সেগুলো অসত্য ও স্ববিরোধী। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশে নানা কারণে কিছু ব্যক্তি প্রতিবছর নিখোঁজ হয়ে যায়। দেশের মোট জনসংখ্যার আকার বিবেচনা করলে নিখোঁজ হওয়া এই মানুষের সংখ্যাও কম হওয়ার কথা নয়। মূলত এই হারিয়ে যাওয়া লোকগুলোকেই এই তালিকায় আনা হয়ে থাকে।

আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জাতি সংঘের হাই কমিশনারকে জানান, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কিছু মানবাধিকার সংগঠন সাম্প্রতিক সময়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করছে, তাতে দেখা যায় এই সংগঠনগুলো যে তথ্যের উপর ভিত্তি করছে, সেগুলো সরকার বিরোধী কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছ থেকে নেয়া। কোন নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পক্ষপাত দোষে দুষ্ট কোন সোর্স থেকে তথ্য নেয়া সমীচীন নয়। এই সকল সংগঠনের রিপোর্টে যে ফুটনোট ব্যবহার করা হয়, তাতে দেখা যায় তারা কেবলমাত্র সরকার বিরোধী সোর্স থেকে তথ্য নিচ্ছে। এই ধরণের পক্ষপাত দুষ্ট ও একপেশে রিপোর্ট সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরণের রিপোর্টের কোন ক্রেডিবিলিটি থাকে না। এই ধরণের কর্মকান্ড বিশ্বের দেশে দেশে মানবাধিকার সংরক্ষণে কী ভূমিকা রাখে, এটি সেই সকল সংগঠনই ভালো বলতে পারবে।

জাতিসংঘের হাই কমিশনের সাথে নৈশভোজ আলোচনায় অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন এমপি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড۔ সেলিম মাহমুদ, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকী এমপি, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রমুখ।

জাতিসংঘের হাইকমিশনারের সম্মানে দেয়া নৈশভোজের পূর্বে মতবিনিনয় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার রবার্ট ডিকসন, সাবেক রাষ্ট্রদূত সমসের মবিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড۔ সাদেক হালিম, নারী নেত্রী আরোমা দত্ত, রোকেয়া কবির, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মফিদুল হক, অ্যাম্বাসেডর আব্দুল হান্নান, অ্যাম্বাসেডর শামীম আহসান, শিফা হাফিজা, প্রফেসর সাহাব আনাম খান প্রমুখ ।

অধিকাংশ বক্তা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল বাচেলেট তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিশ্বের সকল দেশের মানবাধিকার নিয়েই সমস্যা রয়েছে । আমি অনেক শক্তিশালী ও ধনী রাষ্ট্র দেখেছি, যাদের মানবাধিকার নিয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে । এক একটি দেশের পরিস্থিতি একেক রকমের । মানবাধিকার নিয়ে প্রতিটি দেশের অনেক কাজ করার আছে।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, মালয়েশিয়ার হাই কমিশনার, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত প্রমুখ।

   

তিন ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে চালকল, হুমকিতে পরিবেশ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম সিরাজগঞ্জ
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের চান্দাইকোনায় ৬৭ শতক তিন ফসলি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে বিস্মিল্লাহ চালকল (অটো রাইস মিল) স্থাপনের কাজ চলছে।

চালকলটি চালু হলে মিলের বর্জ্যে ফসলি জমিসহ এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে। চালকলের ধোঁয়া ও ছাইয়ে বয়স্ক ও শিশুরা শ্বাসকষ্টসহ কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে মিলটি বন্ধের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এস.এম সোহাগ নামের এক স্থানীয় কৃষক।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চান্দাইকোনা বাজারের পাশে জনবসতি এলাকায় পরিবেশ আইন ও নিয়মনীতি না মেনে তিন ফসলি জমিতে রিয়া নামে অটো মিল গড়ে তোলা হয়েছে। এই অটো মিলের অন্তরালে আনোরুল ইসলাম গংরা বিস্মিল্লাহ নামে (অটো রাইস মিল) আরেকটি মিল স্থাপন করছে। এ মিলটি চালু হলে এর বর্জ্য মিশ্রিত দুর্গন্ধযুক্ত পানি, কালো ধোঁয়া ও ছাই বাতাসের সাথে মিশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, ইউনিয়ন পরিষদ ও পল্লী বিদ্যুৎ সাব-অফিসসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হবে। একই সঙ্গে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় জনসাধারণের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে। সেই সাথে নষ্ট হবে তিন ফসলি জমি। এ কারণে অপিরিকল্পিত ভাবে দুটি অটো রাইস মিল বন্ধসহ আইনগত ব্যবস্থার জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জমির মালিক এস. এম সাগর, আব্দুর রাজ্জাক শেখ, নিজাম উদ্দিন আকন্দ, জহুরুল ইসলাম আকন্দ, মামুন আকন্দ, আবু ওয়াহেদ সোহেল সরকার, আবু হাসেম, দুলাল শেখসহ বেশ কয়েকজন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার রায়গঞ্জ উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ১৫০টি চালকল রয়েছে। এরমধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র দুটির। বাকি চালকলগুলো অবাধে চলছে। এতে ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক অঞ্চলে স্থাপনের কারণে পরিবেশের ছাড়পত্র পায়নি অধিকাংশ চালকল। পরিবেশের ছাড়পত্র ও অনুমোদন ছাড়াই দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করে চলছে এসব চালকল মালিকরা।

জানা যায়, উপজেলার চান্দাইকোলা ইউনিয়নের মৃত কায়ছার আলী সরকারের ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম সরকারসহ প্রভাবশালী ১৫ জন একত্র হয়ে অনুমতি ছাড়াই বিস্মিল্লাহ অটো রাইস মিল নামে একটি বড় মিল তৈরি করেছে।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে চোখে পড়ে রিয়া অটোরাইস মিলটি। চালকলটির চারপাশ কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল, শ্রমিকেরা কাজ করছেন। শ্রমিকদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার বালাই নেই। তাঁদের মুখমন্ডলে কালো ছাইয়ের আস্তর পড়ে আছে। চালকলটিতে নেই বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থাও। চালকলের সব বর্জ্য ফেলা হচ্ছে পাশের জমিগুলোতে। চুল্লি দিয়ে ধোঁয়ার সঙ্গে তুষের ছাই চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে।

চান্দাইকোনা গ্রামের বাসিন্দা হাসান সরকার (৫০) বলেন, মিলের কাছাকাছি ১০ মিনিট দাঁড়ানো যায় না। ছাই উড়তে থাকে পুরো এলাকায়। গাছপালার পাতা কালো হয়ে গেছে। গাছে নতুন করে কোনো ফল ধরে না। এলাকায় শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছে। মিলের ছাই উড়ে আমাদের খাবারের ভিতরে পড়ে সেই খাবার নষ্ট হয়। কিন্তু একই এলাকায় আরেকটি বিস্মিল্লাহ নামে বড় অটো রাইস মিল তৈরী হচ্ছে। এই মিলটি চালু হলে এলাকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

একই গ্রামের মৃত কামাল সেখের ছেলে রাজ্জাক শেখ (৫৫) বলেন, রিয়া রাইস মিলের কারণে বর্তমানে বাড়িতে বসবাস করা খুব কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে। মিলের উড়ন্ত ছাই, তুষ ও কুড়া ঘরের হাঁড়ি-পাতিলে গিয়ে পড়ে। বাড়ি ঘর, গাছপালা ও ফসলি জমি ছাইয়ের আবরণে কালো বর্ণের হয়ে গেছে। মিলের কারণে এ এলাকার অধিকাংশ মানুষ চোখের বিভিন্ন রোগসহ শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

মিলের পাশে মুদি দোকানদার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, মিলের উড়ন্ত ছাই, তুষ ও কুড়া রাস্তায় চলাচলকারী পথচারী ও বিভিন্ন গাড়ি চালকদের চোখে পড়ে নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। এতে অনেক সময় রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটছে।

জানতে চাইলে রিয়া অটো রাইস মিলের মালিক আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘অটো রাইস মিল চালালে কিছু ক্ষতি হবে, আবার উপকারও হবে। এখানে সব নিয়ম মেনেই মিলটি করা হয়েছে। সবকিছুর অনুমোদন আছে আমাদের। তবে মিলের কিছু সমস্যা আছে। সেগুলো দ্রুত নিরসন করবেন বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে অনুমোদনহীন তৈরী হওয়া বিস্মিল্লাহ চালকল (অটো রাইস মিল) পাটর্নার বাবু সরকার বলেন, আমাদের কোন কাগজপত্র নেই। নির্মাণ কাজ শেষ হলে কাগজপত্র তৈরী করে সকল দপ্তরে আবেদন জমা দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে চান্দাইকোনা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুজ্জামান সরকার অভিযোগ করে বলেন, স্কুল খোলার সাথে সাথে কালো ধোঁয়ায় স্কুলের আশপাশে অন্ধকার হয়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য কারণে চরম দুর্গন্ধ হয়।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভুঁইয়াগাঁতী জোনাল অফিসের (ডিজিএম) ছোলাইমান হোসেন জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ওই মিলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যাবে না। তবে এক মিলের লাইন কৌশলে মালিক পক্ষ যদি অন্য মিলে নিতে চায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৃপ্তি কণা মন্ডল জানান, ওই রাইস মিলের ব্যাপারে স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ করেছে। এ সমস্যা দূর করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত মিলটি চালু করা যাবে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, অটো রাইস মিল ও ইটভাটার ধোঁয়া ও ছাই পরিবেশ ও ফসলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। রায়গঞ্জ উপজেলায় এর প্রভাব বেশি পড়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ ও খাদ্য অধিদপ্তরকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

জেলা খাদ্র নিয়ন্ত্রক এস.এম সাইফুল ইসলাম বলেন, রায়গঞ্জ উপজেলা ছোট-বড় প্রায় ১৫০টি চাল কল আছে। তাদের মধ্যে ২টি চাল কলের অনুমোদন রয়েছে। বাকিগুলো অবৈধ।

তিনি আরও বলেন, বিস্সিল্লাহ ও রিয়া অটো রাইস মিলের কোন অনুমোদন নেই। ফসলী ফমিতে যদি কেউ চাল কল স্থাপন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

;

জোড়া খুনের মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা ২৪.কম চট্টগ্রাম 
জোড়া খুনের মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার

জোড়া খুনের মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার

  • Font increase
  • Font Decrease

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় চাঞ্চ্যলকর জোড়া খুনের মামলায় আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি ইব্রাহিম খলিলকে (৪৬) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭ এর সদস্যরা। 

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৭ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) তাপস কর্মকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানাধীন তকিরহাট এলাকায় থেকে আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ইব্রাহিম খলিল লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার আবুল কাশেমের ছেলে।

র‌্যাব-৭ জানায়, ইব্রাহিম খলিল ফেনীর একটি ইটভাটায় মাঝি হিসেবে কাজ করতেন। ইটভাটায় একই গ্রামের বেলাল মাঝির ছেলে ইউসুফ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। কাজের সুবাধে বিভিন্ন প্রয়োজনে ইউসুফ প্রায়শই ইব্রাহিমের বাড়িতে যাতায়ত করতো। যাতায়তের এক পর্যায়ে ইব্রাহিমের স্ত্রী ভিকটিম রিনা বেগমের সাথে ইউসুফের অবৈধ সর্ম্পক গড়ে উঠে। 

২০১৭ সালে মে মাসের শেষের দিকে ইউসুফ ইটের ভাটার কাজ ছেড়ে দিয়ে এলাকায় এসে দিন মজুর হিসেবে কাজ করতে থাকেন। একই বছরের ৩ জুন সন্ধ্যায় ইব্রাহিম খলিল ফেনী থেকে বাড়িতে আসেন। এসে তার স্ত্রী ভিকটিম রিনা বেগম ও ভিকটিম ইউসুফকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ইব্রাহিম ঘরে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে দু’জনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। 

পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে ৬ জুন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভিকটিম ইউসুফ এবং রিনা বেগম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যবরণ করেন।

এ ঘটনায় নিহত ইউসুফের স্ত্রী বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর আসামি ইব্রাহিক খলিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ প্রতিবদেনের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে আসামীর অনুপস্থিতিতে আমৃত্যু সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

র‌্যাব-৭ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) তাপস কর্মকার বলেন, ‘আমৃত্যু সশ্রম কারাদন্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইব্রাহিম খলিলকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে র‌্যাব। একপর্যায়ে ফটিকছড়ি তকিরহাট থেকে আত্নগোপন থাকা ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করা হয়। ইব্রাহিম স্বীকার করেন তিনি জোড়া খুন মামলায় আমৃত্যু সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে অতিরিক্ত ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।

গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।

;

কটিয়াদীতে ভুতুড়ে রহস্যময় রাস্তা ঘিরে আতঙ্ক



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট বার্তা ২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

গভীর রাতে অটোরিকশা নিয়ে যাচ্ছে এক চালক। হঠাৎ রিকশার চাকা আটকে যায়। সামনে পিছনে কোন দিকেই এগাচ্ছে না। অদ্ভুত আওয়াজ ছিলো। এমন সময় আরেকটি মোটরসাইকেল আসলে কোন রকম চালিয়ে রাস্তা ত্যাগ করেন ওই চালক। এমনই রহস্যময় এক ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলাধীন লোহাজুরি ইউনিয়নের দশপাখি এলাকায়।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সপ্তাহ খানেক আগে কটিয়াদী টু লোহাজুরি রোডে চলাচলকৃত জালালপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চরপুক্ষিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম (১৬) নামে এক অটো রিকশা চালক লোহাজুরি থেকে রাতে বাড়ি ফেরার পথে দশপাখি (আবতাব মুন্সি মোড়) নামক স্থানে জঙ্গলের কাছে আসতেই সাদা কাপড়ে জড়ানো কেউ তার গাড়ির সামনে ধরে রেখেছিলো। সেখান থেকে ভয় পেয়ে দুদিন তীব্র জ্বরে ভোগে সে মারা যায়।

স্থানীয়রা জানান, এলাকার অনেকের সাথে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিনই কোন না কোন ব্যক্তির সামনে পড়ছে অদ্ভুত কিছু এবং চলার পথে শুনতে পায় ভয়ংকর আওয়াজ।

এ ঘটনার পর রাত হলেই বাড়ে মানুষের ভয়। জরুরি কাজ ছাড়া কেউ তেমন চালাচল করেন না এ রাস্তায়। ভয়ে সন্ধ্যা হবার আগেই মানুষ যার যার বাড়ি ফিরছে। এর প্রভাব পড়ছে এই সড়কের যানবাহনের ওপর। ফলে ভোগান্তির শেষ নেই লোহাজুরি থেকে কটিয়াদী বাজারে আসা যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের। রাত হলেই দশপাখি, ইটখলা ও জালালপুর ইউনিয়নাধীন দক্ষিণ চরপুক্ষিয়া এলাকায় আতঙ্কিত থাকেন সকলে।


সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) রাত ১১ টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অফতাব মুন্সি মোড়ের দোকানপাট সব বন্ধ রয়েছে। এ সময় রাস্তায় কোন গাড়ি ছিলো না। কয়েকজনকে আড্ডা দিতে দেখা যায়। তাদের সাথে কথা বলে উল্লিখিত ঘটনার বিষয়ে জানা যায়৷ এলাকার অনেকেই ভয় পেয়েছে বলেও স্বীকার করেন তারা৷ এই স্থানটি অনেক আগে থেকেই রহস্যময় প্রকৃতির বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেন। মধ্যে দীর্ঘ বিরতি থাকলেও ইদানীং এখানে আবার রহস্যময় ঘটনা ঘটছে। এর সমাধান হিসাবে স্থানীয়রা বলছেন, রাস্তার দুই পাশে ঝোপঝাড় এবং জঙ্গলটি পরিস্কার করা হলে কমতে পারে এসব ঘটনা।

;

‘অভিভাবকরা সচেতন হলে শিশুদের চোখের রোগ থেকে রক্ষা করা সম্ভব’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চোখের রোগের বিষয়ে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন করতে পারলে প্রাথমিক অবস্থায় শিশুদের অন্ধত্বসহ চোখের রোগ থেকে রক্ষা করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহম্মেদ পলক।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর নূর মক্কা চক্ষু হাসপাতালে আল-বাসার ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে “স্কুল স্বাস্থ্য কার্যক্রম” উপলক্ষ্যে স্কুল শিক্ষকদের নিয়ে কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহম্মেদ পলক বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেকেই জানে না তাদের চোখের সমস্যা আছে। শিশুদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি এ ৪টি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, স্মার্ট সিটিজেন তৈরির জন্য শারীরিক ও মানুসিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের মাধ্যমে শিশুদের উপযুক্ত করে তুলতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে জনগণের সেবা করাই আমার মূল কাজ। কিং সালমান হিউম্যানিটেরিয়াম এইড অ্যান্ড রিলিফ সেন্টার বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বন্ধন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন বাংলাদেশের চক্ষুসহ স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাদশাহ সালমান মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ কেন্দ্রের অবদান আমাদের দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে নিরন্তর শক্তিশালী সম্পর্কের প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

আল-বাসার ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডঃ আহমেদ তাহের হামিদ আলী এর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বাদশাহ সালমান মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ কেন্দ্রের সহকারী সুপারভাইজার জেনারেল ডক্টর আকিল আল-গামাদি, আল-বাসার ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, ডঃ আদেল আল রুশহুদ, নূর মক্কা চক্ষু হাসপাতাল সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ একেএম মামুনুর রশীদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

;