ফজলে রাব্বী মিয়ার আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছন্দা রাব্বী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
লুদমিলা পারভীন ছন্দা রাব্বী

লুদমিলা পারভীন ছন্দা রাব্বী

  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুর পর তার আসনটি (গাইবান্ধা-৫, সাঘাটা-ফুলছড়ি) শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরেই মধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণা জমে উঠেছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গণসংযোগও চালাচ্ছেন।

ফজলে রাব্বীর আসনে নৌকার মাঝি হওয়ার দৌড়ে আছেন তারই ছোটভাইয়ের স্ত্রী লুদমিলা পারভীন ছন্দা রাব্বী। শনিবার (১৩ অগাস্ট) ছন্দা রাব্বী  গণমাধ্যমেকে তার প্রার্থিতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে ফজলে রাব্বী মিয়ার ছোটমেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলীও বাবার আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়াও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান ওরফে রিপন এবং ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ এই আসনে মনোনয়ন চান।

এদিকে নিজের প্রার্থিতার বিষযে নিশ্চিত করে ছন্দা রাব্বী বলেন, নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) যদি আমাকে মনোনীত করেন আমি নির্বাচন করবো। নির্বাচনের মনোনয়ন ফর্মও তুলব।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২২ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন ফজলে রাব্বী মিয়া। এরপর ২৪ জুলাই জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কোনো সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষিত হলে ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচনের কথা সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। যদিও এখনো উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। তবে নির্বাচনের মাধ্যম ইতিমধ্যে সরগরম হয়ে উঠেছে।


আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী  ফজলে রাব্বী মিয়ার মেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলী কয়েক মাস আগে স্থানীয় ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে রাজনীতিতে পা রেখেছেন। অন্যদিকে তার চাচী ছন্দা রাব্বী জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি। রাজনীতিতে অভিজ্ঞতায় বুবলীর থেকে বেশ এগিয়ে।

একই পরিবার থেকে দুজনের প্রার্থিতার বিষয়ে জানতে চাইলে ছন্দা রাব্বী বলেন, আমরা দুজনেই নমিনেশন ফর্ম নেব। সেক্ষেত্রে নেত্রী আমাদের যাকে ভালো মনে করবেন, তাকেই দেবেন।

বুবলীর বিষয়ে তিনি বলেন, ওর পদচারণা শুরু হয় সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে। খুব বেশিদিন আগের কথা না। চার-পাঁচমাস হলো আমরা ওকে পেয়েছি রাজনীতির অঙ্গনে। ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছিল সেটা আমাদের পারিবারিক সিদ্ধান্ত ছিল। আমরা রাখতে চেয়েছি এই কারণে যে নির্বাচনী প্রচারণায় আমাদের (ফুলছড়িতে) একটা অংশ থাকা দরকার। এজন্য আমরা ওকে এখানে এনেছি।

তাছাড়া ও তো (বুবলী) এখন অন্য পরিবারের বউ, বলেন ছন্দা রাব্বী।

গাইবান্ধা-৫ আসনে এক সময় জাতীয় পার্টির প্রভাব ছিল। ফজলে রাব্বী মিয়া নিজেও জাতীয় থেকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগে চলে আসেন। তার হাত ধরেই আওয়ামী লীগের প্রভাব শুরু হয এই আসনে।


এদিকে এই আসনে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাহমুদ হাসান রিপন। তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর এই অঞ্চলের তরুণদের ভেতর একটা প্রভাব সৃষ্টি করেন। ফজলে রাব্বী মিয়া সংসদ সদস্য থাকার সময়ই সেখানে কাজ করছেন তিনি। গত কয়েকটি নির্বাচনে মনোনয়ন নেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন।

ছন্দা রাব্বীও রিপনের প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের নৌকার মাঝি যদি বলেন, সে হলো রিপন। রাব্বিভাই যখন রাজনীতি করতেন তিনি তখন ছাত্রলীগের সেন্ট্রালের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তখন থেকেই ভাইয়ের সঙ্গে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন। এখন নৌকার মাঝিরা ছাড়াও আমাদের অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী। নৌকার মাঝি শুধু রিপনকে বলছি না। সে দীর্ঘদিন রাজনীতিতে সংযুক্ত ছিল, আমিও সংযুক্ত আছি। এখন নিউকামার (একদম নতুন) হিসেবে যোগ হয়েছে বুবলী।

ছন্দা রাব্বী নমিনেশন চাইলেও না পেলে বিদ্রোহী হবেন না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘না পেলে নির্বাচন করবো না। নৌকার কাজ করবো। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন ক্ষুদ্র সৈনিক। নৌকা যে-ই আনুক আমি তার পক্ষে কাজ করবো।’

একই পরিবার থেকে দুজন প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। পারিবারিকভাবে কার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে ছন্দা রাব্বী বলেন, ‘পারিবারিকভাবে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। আমি ফজলে রাব্বী ভাইয়ের সঙ্গে অনেক দিন রাজনীতি করেছি। তার অনুপ্রেরণায়ই মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছি। এরআগে গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ছিলাম।’

এই সিদ্ধান্তে পরিবার দুইভাগ হবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরিবারটাকে আমি দুভাগ হতে দেব না। কারণ আমি সেই ৯০ সালে এই পরিবারে বধূ সেজে এসেছি। তখন থেকেই পরিবারটাকে একটা গাছের নিচে ধরে রেখেছি। আমার শাশুড়ি বেঁচে নেই। রান্নাঘর থেকে রাজনৈতিক মঞ্চ- সব জায়গায় সহযোগিতা করেছি। রাব্বী ভাইয়ের যেকোনো কর্মকাণ্ডে আমি জড়িত ছিলাম। তার অসমাপ্ত কাজটা যাতে আমি সমাপ্ত করতে পারি সেদিকেই এগোচ্ছি।’

শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখার কথা জানিয়ে ছন্দা রাব্বী বলেন, আমরা যারা দীর্ঘদিন গাইবান্ধায় রাজনীতি করছি, তাদেরই তিনি মনোনয়ন দেবেন। এটা আমার বিশ্বাস। যারা নতুন এসেছে, তাদের দেওয়ার মতো কোনো ভুল তিনি করবেন না।

   

সাজেকে সড়কে নিহত ৬ জনের বাড়ি ময়মনসিংহে, এলাকায় শোকের মাতম



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাঙামাটির সাজেকের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯ জনের মধ্যে ৬ জনের বাড়িই ময়মনসিংহে। এদের মাঝে ৫ জন ঈশ্বরগঞ্জের ও একজন গৌরীপুর উপজেলার। নিহতরা হওয়া সবাই নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন বলে জানা গেছে।

এর আগে বুধবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সাজেকের নব্বই ডিগ্রি এলাকায় সাজেক-উদয়পুর সীমান্ত সড়কে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

ঘটনার সময় শ্রমিকবাহী মিনি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ১০০ ফুট খাদে পড়ে ৯ জন নিহত হন। আহত হন আরো ৮ জন। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের খবর পরিবারে এসে পৌঁছালে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

নিহতরা হলেন, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের রিয়াছত আলী ভূইয়ার ছেলে এরশাদুল (৪২), তারুন্দিয়া ইউনিয়নের গিরিধরপুর গ্রামের শহীদুল্লাহ'র ছেলে শাহ আলম (২৮), একই ইউনিয়নের শ্রীফুরজিথর গ্রামের মো. চাঁন মিয়ার ছেলে তোফাজ্জল হোসেন (২১), মো. হেলাল উদ্দিনের ছেলে নয়ন মিয়া (২০), মো. নজরুল ইসলামের ছেলে মোহন মিয়া (১৭)। গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা এলাকার আব্দুল জব্বারের ছেলে তপু হাসান (১৭)।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মরদেহ বাড়িতে না পৌঁছালেও পরিবারে শোকের মাতম চলছে। শুধু তা-ই নয়, এমন মর্মান্তিক খবরে এলাকাতেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহতের খবর শুনে গত রাত থেকেই আশেপাশের লোকজনসহ দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষজন।

তারুন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রানা বলেন, সাজেকের দুর্ঘটনায় নিহত ৯ জনের মধ্যে ৪ জনের বাড়ি আমার ইউনিয়নে। এই ঘটনায় আমি নিজেও খুবই মর্মাহত।

বড়হিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজিজুল হক ভুইয়া মিলন বলেন, আমার ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের রিয়াছত আলী ভূইয়ার ছেলে এরশাদুল সাজেক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। শুনেছি মরদেহ নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরছে।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, নিহতদের দাফন-কাফনের জন্য উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে থেকে প্রতি পরিবারে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড় পরবর্তীতে বিধি মোতাবেক নিহতদের পরিবারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে'।

গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন চন্দ্র রায় বলেন, ওই সড়ক দুর্ঘটনায় মইলাকান্দা ইউনিয়নের একজন মারা গেছেন। আরেকজন আহত হয়েছেন। তাদের মরদেহ নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন।

;

বন বিভাগের গেটের দেওয়ালে চাপা পড়ে শিশুর মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুষ্টিয়ায় বন বিভাগের গেটের দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে জুরাইন আহমেদ (৪) নামে শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে খোকসা উপজেলা বন বিভাগের গেটের দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে এ ঘটনা ঘটে।

জুরাইন আহমেদ খোকসা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মাঠপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী উজ্জলের ছেলে।

নিহত শিশুর চাচা আজিজুল ইসলাম জানান, শিশুরা খেলছিলো আবার কেউ ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলো। এসময় অসাবধানতাবশত গেটের গেটের দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে নিহত হয়।

বন কর্মকর্তার অফিসটি সব সময় অরক্ষিত থাকে। কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনায় জুবায়েরের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তাঁর।

উপজেলা বন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, এক বছর আগে কুষ্টিয়ার এক ঠিকাদার গেট নির্মাণ করেছে।

খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, এটি একটি দুর্ঘটনা। গেট নির্মাণে ত্রুটি থাকতে পারে। ঠিকাদার গেটের পিলার এমনভাবে তৈরি করেছেন, মনে হচ্ছে পিলার দুটি মাটির ওপরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। নাড়া দিলেই নড়ছে। বন কর্মকর্তার গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

;

বাঘা শরীফের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে দুই গুরুর ত্যাগ!



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাবা-মায়ের দেওয়া নাম মোহাম্মদ শরীফ। কিন্তু বলীখেলার রিংয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপের কারণে সেই আসল নামটিই এখন বলতে গেলে হাওয়া। সবার মুখে মুখে রটে তাঁর নামটাই হয়ে গেছে ‘বাঘা শরীফ’। কুমিল্লার হোমনার এই ডানপিটে হৃষ্টপুষ্ট শরীরের তরুণ এবার প্রথমবার অংশ নিয়েছিলেন ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলায়। পরেরটাতো ইতিহাস। একে একে চ্যালেঞ্জ রাউন্ড, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল জিতে ইতিহাসের পাতায় যেন নিজের নামটা খুঁদাই করে গেলেন কুমিল্লার মানুষের ‘প্রিয় বলী’ বাঘা শরীফ। গল্পটা যেন সেই পুরনো প্রবাদের মতো-আসিলাম, দেখিলাম, জয় করিলাম!

অথচ বাঘা শরীফের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কথাও ছিল না। বলীখেলায় অংশ নিতে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে এলেও চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে তাঁকে রাখেনি আয়োজক কমিটি। তাতে মন খারাপ হয়ে যায় শরীফের। সেটি দেখে বাঘা শরীফকে সুযোগ দিতে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন জীবন বলী নিজের নামও প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু তাতেও আয়োজকদের মন গলেনি। শেষ পর্যন্ত গত আসরের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলীও বাঘা শরীফকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রত্যাহার করে নেন নিজের নাম। অবশেষে এক প্রকার বাধ্য হয়ে শাহজালালের অনুরোধ রাখে আয়োজক কমিটি। আর এতেই ভাগ্য খুলে যায় বাঘা শরীফের। চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে খেলতে নেমেই কক্সবাজারের নুর মোহাম্মদ বলীকে হারিয়ে বাঘা শরীফ উঠে যান সেমিফাইনালে। আর সেমিফাইনালে একইভাবে হারান সীতাকুণ্ডের রাসেল বলীকে।

ফাইনাল শুরু হতেই রিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বাঘা শরীফকে নানা দিক নির্দেশনা দিতে থাকেন শাহজালাল বলী। অদূরে দাঁড়িয়ে জীবন বলীও সমর্থন জানান শরীফকে। আর এতেই কিনা দ্বিগুণ উৎসাহে রাশেদকে চাপে রাখেন শরীফ। অবশ্য রাশেদও কয়েকবার চেষ্টা করেন ‘মরণকামড়’ দেওয়ার। কিন্তু শরীফের বলের কাছে পরাস্থ হন বারবার। এভাবে ১১ মিনিট ধরে চলতে থাকে ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’। কিন্তু থামতে যে হবেই! শেষ পর্যন্ত রাশেদ পারলেন না আর, মেনে নেন হার। এর মধ্যে দিয়ে ঐতিহাসিক এই বলীখেলা পেল নতুন চ্যাম্পিয়ন।

শরীফ বলী জিততেই আনন্দে ফেটে পড়েন শাহজালাল ও জীবন বলী। জানতে চাইলে জীবন বলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাড়ি থেকে আসার আগে শরীফ আমাকে ফোন করেছিলেন। তার খেলার খুব আগ্রহ ছিল, সেটি জানিয়ে সহযোগিতা চেয়েছিল। আর সে খুব ভালো বলীও। কুমিল্লায় তাঁকে এক নামে চেনেন সবাই। কিন্তু তাঁকে সুযোগ দিচ্ছিল না আয়োজক কমিটি। মূলত তাঁকে সুযোগ করে দিতে আমি নিজের নাম প্রত্যাহার করি নিই। কিন্তু এরপরও সুযোগ না দেওয়ায় শাহজালাল বলীও তাঁর জন্য নাম প্রত্যাহার করে নেন। শেষ পর্যন্ত আমাদের মুখ উজ্জ্বল করল শরীফ। আর আয়োজক কমিটিকেও দেখিয়ে দিল সে কত বড় বলী।’

ছবি: জীবন বলী ও শাহজালাল বলী

প্রায় একই কথা বললেন শাহাজালাল বলীও। তিনি বলেন, ‘বাঘা শরীফ আমার ছোট ভাইয়ের মতো। সে খুব আশা নিয়ে খেলতে এসেছিল। কিন্তু আয়োজক কমিটি সুযোগ দিচ্ছিল না। সেজন্য আমি নিজে না খেলে তাঁকে খেলাতে অনুরোধ জানাই। ভাগ্যিস কমিটি সেই অনুরোধ মেনে নিয়েছিল।’

দুই সিনিয়র বলীর কাছে শ্রদ্ধায় যেন নুইয়ে পড়লেন বাঘা শরীফ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শাহজালাল ভাই আমার কাছে বড় ভাইয়ের মতো। বলীখেলায় তিনি আমার গুরুতুল্য। জীবন ভাইও তেমন। তাঁদের দুইজনের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’

বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাঘা শরীফ ট্রফির সঙ্গে পেয়েছেন ৩০ হাজার টাকার সম্মানীও। এই টাকায় কি করবেন এমন প্রশ্নে বাঘা শরীফ বললেন, ‘স্মৃতি হিসেবে রেখে দেবে বেশিরভাগ টাকা। আর কিছু টাকায় আমার দুই বছরের মেয়ে মিমের জন্য কাপড় কিনে নিয়ে যাব। মেয়েকে বলে এসেছিলাম চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফিরব। সে বুঝতে না পারলেও হেসেছিল। এখন নিশ্চয় আরও বেশি খুশি হবে।’

এবারের বলীখেলাটি হয়তো স্মরণীয় হয়ে থাকবে দুই বলীর ‘ত্যাগের’ জন্যও। খেলায় অংশ নিলে শাহজালাল আর জীবন বলীর মধ্যেই হয়তো হতো ফাইনালের লড়াই, যেটা হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। কিন্তু একজন জুনিয়রকে সুযোগ করে দিতে দুজন যেভাবে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিলেন, সেটি ছুঁয়ে গেছে সবাইকে। দর্শকেরা তাই বললেন, এমন ত্যাগও হয়!

আর বাঘা শরীফ তো বলেই দিলেন, ‘এই ট্রফি, এই সম্মানি আমার একার নয়, এই অর্জনের পেছনে পুরো কৃতীত্ব শাহাজালাল ভাই আর জীবন ভাই। তাদের ত্যাগই আমাকে এনে দিল চ্যাম্পিয়নের সম্মান।’

নাম প্রত্যাহার করে শুধু বাঘা শরীফকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগটাই করে দিলেন না জীবন আর শাহজালাল। জানিয়ে গেলেন-লড়াই না করেও জেতা যায়!

;

গরমে জানটা শ্যাষ হয়া গেইল!



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের সাহেব আলী। এই অইদের (রোদ) ঠ্যালায় জানটা ব্যার হয়া যাবার নাগছে বাহে! গরীম মানুষ বাঁচে কেমন করি। জারের (শীত) সমায় (সময়) কনকনা ঠান্ডা আর গরমের সমায় গরম। হামরা ঘর থাকি ব্যার হওয়া যায় না। জানটা শ্যাষ (শেষ) হয়া গেইল।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রবাহে সৃষ্ট দাবদাহে অতিষ্ট লালমনিরহাটের জনজীবন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ ক্রমশ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আগুন ঝরা বাতাসে নারী-শিশুসহ কর্মজীবী মানুষ দিন দিন অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কে যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যা কম, জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাহিরে বের হচ্ছেন না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা হয় হাতীবান্ধা উপজেলার ভ্যানচালক নুরআলম সাথে, তিনি বলেন, বৈশাখের চনচনা অইদোত রোদে মাল নিয়া ভ্যান চালাইতে কষ্ট হয়। গরমের ঠ্যালায় কইলজা ফাটি যায়। ওই জন্যে ঠান্ডাত (গাছের ছায়া) একনা দম নিবার নাগছি।

তিনি আরো বলেন, কোথাও ঠান্ডার আভাস নাই। এভাবে চলতে থাকলে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়বো। পরিবার পরিজনের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেয়া দুরুহ ব্যাপার হয়ে পড়বে। রিকশাচালক হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত চার-পাঁচ দিন ধরে আয় রোজগার কমে গেছে। বেলা সাড়ে ১০-১১টার পর রাস্তায় আর কোনো যাত্রী থাকে না।

বাসচালক আকবর আলী বার্তা২৪.কমকে জানান, গরমের কারণে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচ (বিটুমিন) উঠে গাড়ির চাকার সাথে লেগে যায়। এতে খুব সতর্ক অবস্থায় গাড়ী চালাতে হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রমজান আলী বার্তা২৪.কমকে জানান, প্রচন্ড গরমে শিশু ও বয়স্করা ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দৈনিক শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। জেলার প্রতিটি হাসপাতালে শিশু রোগী ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ, যথাসম্ভব বাহিরে বের না হওয়া, সাথে খাবার পানি রাখা, ছাতা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।

কুড়িগ্রাম আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র বার্তা২৪.কমকে বলেন, দুপুর ১২টায় লালমনিরহাটে তাপমাত্রা ৩৮.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

লালমনিরহাট জেলা তথ্য অফিসার শাহজাহান আলী (অতিরিক্ত দায়ত্বি) বার্তা২৪.কমকে জানান, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে জেলার সর্বত্র সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।

;