শসার দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কুষ্টিয়ার শসা চাষীরা। রমজান মাস এলেই শসার কদর বাড়ে। স্বল্প সময়ে আবাদ করা এই শসা চাষে বেশ লাভবান হওয়ায় কৃষকরা শসা চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তবে রমজান মাস শেষ হওয়ার পর সেই শসার কদর অনেকটাই কমে গেছে। বাজারেও নেই আর আগের মতো শসার দাম। বর্তমানে খুচরা বাজারে ১০-১৫ টাকা কেজিতে শসা বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারি বাজারে দাম আরও কম।
কথা হয় কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের বলিদাপাড়া গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল হোসেন এর সাথে। তিনি বলেন, অল্প সময়ে কম খরচে অধিক মুনাফা অর্জনের কৃষিপণ্য শসা। আর এই শসা চাষ করে এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় বেশ ভালো লাগছিলো। রমজানের শুরুতেই ক্ষেত থেকেই এক মণ শসা বিক্রি করেছেন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়।
ঈদের পর এখন ৪থেকে ৫শ টাকা মণ হিসেবে শসা বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রচণ্ড তাপদাহে পানির অভাবে শসা গাছগুলো সব মরে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সদর উপজেলা বিত্তিপাড়া এলাকার কৃষক আবু সালেক বলেন, ঈদের পর শসার দাম কমে যাওয়ায় আমার অনেক ক্ষতি হলো। সোয়া এক বিঘা জমিতে লাগানো শসা ক্ষেতে আসার খরচ হয়েছে আশি হাজার টাকা। তবে লাগাতে একটু দেরি হওয়ায় আমি রমজানের প্রথম দিকের ভালো দাম থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ঈদের পর শসার দাম কমে যাওয়ার ফলে আমার আরও লোকসান বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, গত বছর ২০ শতক জমিতে শসার আবাদ করে সব খরচ বাদ দিয়ে ত্রিশ হাজার টাকা লাভ হয়েছিলোে বলেই এবার আরও বেশি জমিতে শসার আবাদ করেছি। কিন্তু এবার লোকসানের পাল্লাটাই ভারি হলো। চলতি মৌসুমে শসার ফলন ভালো হলেও হঠাৎ দাম কমাতে হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। যেই শসা কিছু দিন আগেও পাইকাররা ক্ষেত থেকে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন এখন তারা ১০-১৫ টাকা কেজি দরেও কিনতে রাজি হচ্ছেন না।
কুষ্টিয়া পৌর বাজারের প্রত্যাশা আড়তের পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, বাজারে শসার ব্যাপক সরবরাহ রয়েছে। রমজানে যে শসা ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হতো সেই শসা এখন ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রমজানে মানুষের শসার উপর বেশি চাহিদা থাকে। তাছাড়া এখন আর সেই চাহিদা তেমন একটা নেই বলেই শসার দাম কমে গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) মিরপুর উপজেলার নওপাড়া সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে কম বেশি শসার সরবরাহ থাকলেও বেচা-বিক্রি তেমন হচ্ছেনা।
সদর উপজেলার আলামপুর গ্রামের শসা চাষি ইসলাম বলেন, এ বছর তিনি এক বিঘা জমিতে শসার আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। তবে রমজানের শুরুতেই ভালো দাম পাওয়ায় লোকসান কাটিয়ে উঠেছি। অবশ্য ঈদের পর দাম কমতে শুরু করেছে। এখন যে দাম পাচ্ছি তাতে করে শসা তোলার খরচই উঠছে না।
বাজারে সবজি কিনতে আসা রহমান আলী বলেন, শসার মত যদি সব সবজির দাম কমতো তাহলে বেশ ভালোই হতো। বাজারে পটল ৬০ টাকা কেজি, ঢেঁড়শ ৪০ টাকা কেজি, করলা ৬০ টাকা কেজি, বেগুন ৭০ টাকা কেজি, ঝিঙা ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, রমজান মাস উপলক্ষে বর্তমানে বাজারে শসার দাম অনেক কম। এখন সকল অনুষ্ঠানে শসা নিত্য প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরাপদ সবজি চাষের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদেরকে শসা চাষে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। তবে রমজানের শুরুতেই ভালো দাম পেলেও ঈদের পর শসার চাহিদা কমে যাওয়ায় চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। এছাড়াও প্রচণ্ড গরমে শসার গাছ মারা যাওয়াতেও কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে।