হলিউড-বলিউডে এমন অনেক তারকা আছে যাদের বিবাহবিচ্ছেদ, প্রেমের বিচ্ছেদ ঘটেছে। তারপরও তারা একসঙ্গে সিনেমা বানাচ্ছেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হচ্ছেন এমনকি পারিবারিক বিশেষ প্রয়োজনে একসঙ্গে ঘুরতেও যাচ্ছেন। শুধু হলিউড-বলিউডে এমন না, বাংলাদেশেও ঘটনার উদাহরণ রয়েছে।
ভেবে অবাক হচ্ছেন, বিবাহবিচ্ছেদের পরও এভাবে বন্ধুত্ব রাখা যায়! আমাদের সমাজে এমন ঘটনা অহরহ দেখা না গেলেও মাঝে মধ্যে এমন বিষয় সামনে আসে।
বিবাহবিচ্ছেদ কিংবা দীর্ঘদিনের প্রেমের বিচ্ছেদই হোক। সেক্ষেত্রে বন্ধুত্বটা কি আগের মত হবে? ঠিকঠাক জমবে বন্ধুত্বটা? কিছুদিন আগে হয়তো আপনাদের বিচ্ছেদ হয়েছে, তারপরও উভয়েই যোগাযোগটা রাখতে চাইছেন। তখন কী করবেন? পরিস্থিতি এমন হলে আগে নিজের মনকে প্রশ্ন করুন, সময় নিয়ে ভেবে দেখুন সত্যিই আপনি বন্ধুত্বটা রাখতে পারবেন কি না!
কী করে বুঝবেন প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত হবে কি না!
মনোরোগ চিকিৎসক জোয়ির মতে যেকোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে নিজে কী চাইছেন, কেন চাইছেন সেটা বোঝা জরুরি। নিজের চাহিদা সম্পর্কে সচেতন হয়ে তার পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া ভাল। তাই প্রথমেই নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করুন।
১। কেন বন্ধুত্ব করবেন?
মিয়ামির মনোবিদ ইদিত শারোনি দাম্পত্যের সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তিনি বলছেন, যদি বিষয়টি এমন হয় যে, আপনারা প্রথমে বন্ধু ছিলেন, তার পরে প্রেম এসেছে এবং এখন মনে হচ্ছে বন্ধুত্বই ভাল ছিল, তবে সেটা একটা কারণ হতে পারে। অথবা যদি আপনাদের সন্তান থাকে এবং তাদের একসঙ্গে মানুষ করেন, তা হলেও বন্ধুত্ব হওয়া বা সুসম্পর্ক রাখার একটি কারণ থাকতে পারে। যদি ভাল বন্ধু হওয়াটাই একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তবে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু যদি দেখেন আপনার বন্ধুত্বের কারণ মানসিক নির্ভরতা বা প্রাক্তনকে ফিরে পাওয়ার আশা, তবে তা আপনার মানসিক অবস্থার জন্য মোটেও ভালো নয়।
২। বিচ্ছেদের পরে যথেষ্ট সময় নিয়েছেন কি?
জোয়ি এবং শারোনি দু’জনেই বলছেন, প্রাক্তনের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার পর সেই আবেগ থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক সময় লাগতে পারে। মাসের পর মাস কেটে গেলেও অনেকে তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে পুরনো ব্যথা তাজা হতে সময় লাগবে না বেশি। বন্ধুত্ব করতে গিয়ে নিজের ক্ষতিই করে বসবেন আপনি। তাই নিজেকে সময় দিন। আগে দেখুন আপনি মানতে পেরেছেন কি না যে, দু’জনের মধ্যে যে রোম্যান্টিক সম্পর্ক ছিল, তা শেষ হয়েছে। কারণ অতীতের খারাপ লাগা এবং উত্তর না পাওয়া প্রশ্ন মাথায় নিয়ে বন্ধুত্ব হবে না।
৩। বন্ধুত্বের সিদ্ধান্ত কি দু’তরফেরই?
বন্ধুত্ব এমন একটা বিষয় যে একজনের পক্ষে তা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আর তা যদি প্রাক্তনের সঙ্গে হয় তাহলে সেদিকে রাখতে হবে বিশেষ খেয়াল। দেখতে হবে দু পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত আসে কিনা!
এ বিষয়ে জ়োয়ি বলছেন, ‘হয়তো আপনি চাইছেন বন্ধু হতে। কিন্তু আপনার প্রাক্তন চাইছেন অস্বস্তি এড়াতে। দু’পক্ষেরই আগ্রহ না থাকলে বন্ধুত্ব জমবে না।’ জোয়ির পরামর্শ, এ ব্যাপারে দু’জনে খোলাখুলি কথা বলে নেওয়াই ভাল।
৪। বন্ধু হওয়ার মতো মিল আছে কি?
প্রেম আর বন্ধুত্বের মধ্যে অনেক তফাৎ। প্রেমে অনেক সময় না বলা কথাও অনেক কিছু বলে যায়। কিন্তু েবন্ধুত্বে ক্সেত্রে সেটা ভিন্ন। দুই বন্ধুর মধ্যে কিন্তু কথা বলার মতো বিষয় থাকা দরকার। যদি না থাকে, তবে হয়তো দেখলেন, আপনারা নিজেদের পুরনো সম্পর্কের প্রসঙ্গেই ফিরে যাচ্ছেন। বা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। তাই আগে ভেবে দেখতে হবে দুজন বন্ধুর মধ্যে সাধারণ যে বিষয়গুলোর মিল থাকা জরুরি, এমনটা আপনাদের মধ্যে আছে কিনা
৫। বর্তমান সঙ্গী বন্ধুত্বকে কীভাবে দেখবে?
আপনি নতুন কোনও সম্পর্কে জড়ালে তিনি আপনাদের বন্ধুত্বকে কী ভাবে দেখবেন, সেটাও ভেবে দেখা জরুরি। আপনার বর্তমান প্রেমিক আপনাদের কথোপকথনের সঙ্গী হলে তাতে আপনার কোনও অসুবিধা হবে কি? সেটাও বোঝা জরুরি। পরে দেখা যাবে প্রক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্বের ফলে আপনি হয়ে যাবেন সঙ্গীহীন।
৬। সম্পর্ক আগের মতো হবে না, মানতে পারবেন তো?
প্রাক্তনের সঙ্গে সুস্থ বন্ধুত্ব বজায় রাখতে হলে প্রথমে সম্পর্কের বদলে যাওয়াটা মেনে নিতে হবে। একা দেখা করা বা রাতে ভিডিয়ো কলে কথা বলার থেকে বন্ধুদের দল এক সঙ্গে থাকাটা অনেক বেশি উপযুক্ত হবে এক্ষেত্রে। জোয়ি বলছেন প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব অসম্ভব নয়। শুধু আগে নিজেকে বুঝে নিন। তার পরেই এগোন।
৭। কোথায় থামতে হবে!
কিছু বিষয় সব সময়েই মাথায় রাখতে হবে। তারমধ্যে এই বন্ধুত্বে আপনাকে কোথায় থামতে হবে জানতে হবে। যাতে কোনও রকম ভুল বোঝাবুঝি তৈরি না হয়। কারণ ভুললে চলবে না যে, সম্পর্ক আর আগের মতো নেই। নিজেকে প্রশ্ন করুন সেই সীমারেখাটা টানতে পারবেন তো? হয়তো ঠিক করলেন, আপনারা কখনও একা দেখা করবেন না। সেক্ষেত্রে একা যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে সেখান থেকে নিজেকে সরাতে পারবেন তো।