একটানা কাজ করতে করতে একঘেয়েমি কাটাতে কফির বিকল্প নেই। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অতিরিক্ত কফি বা ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় খেলে ডিহাইড্রেশন দেখা দিতে পারে। যার ফলে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়াও কফি অনেক সময়েই উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে। ‘কর্টিজল’-এর মতো হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গেলে ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয়ে যায়। ফলে মুখে ব্রণের সমস্যা বেড়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
কফি খেলে ত্বকের আর কী কী ক্ষতি হতে পারে?
১. কফিতে থাকা অ্যাসিডের প্রভাবে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। যা ত্বকের সেবাম উৎপাদনেও হেরফের ঘটায়।
বিজ্ঞাপন
২. দুধ এবং চিনি দেওয়া ফিল্টার কফি খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভ্যাসের ফলে কিন্তু ত্বক ব্রণতে ভরে যেতে পারে।
৩. তৈলাক্ত ত্বকেও নাক এবং মুখের নির্দিষ্ট কিছু অংশ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
৪. ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় খেলে ত্বকে প্রদাহও দেখা দিতে পারে।
৫. অতিরিক্ত কফি খেলে ঘুমের যে স্বাভাবিক চক্র, তাতেও প্রভাব পড়ে। ঘুম কম হলে ত্বকও জেল্লাহীন হয়ে পড়বে।
ত্বকের ক্ষতি এড়াতে দিনে কতটা কফি খাওয়া যেতে পারে?
পুষ্টিবিদদের মতে, কফি বা ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় থেকে কোনও রকম ক্ষতি এড়াতে ৪০০ মিলিগ্রামের বেশি কফি গুঁড়ো ব্যবহার করা উচিত নয়। পানীয় হিসাবে বলতে গেলে সারা দিনে ২ থেকে ৩ কাপ পর্যন্ত কফি খাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান এবং ত্বকের ধরন অনুযায়ী নিয়মিত ত্বকচর্চা করারও পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদেরা।
মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এসব আমাদের নিত্যসঙ্গী। বিনোদন হোক বা প্রয়োজন, এসব ইলেকট্রনিক ডিভাইস ছাড়া একদিনও কাটানো প্রায় অসম্ভব। ছোট থেকে বড় সব মানুষই দিনের বেশ কয়েক ঘণ্টা এসব ডিভাইসের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাটায়।
মূলত যখন পরিবারের বড়রা কাজে বা অলস সময় কাটাতে মোবাইল ও টিভি ব্যবহার করে, তখন ছোট শিশুরাও তাদের দেখাদেখি এই অভ্যাস গড়ে তোলে। তবে শিশুদের জন্য বেশিক্ষণ স্ক্রিনের এই নীল আলোর দিকে তাকিয়ে থাকা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
শিশুরা বেশিক্ষণ ইলেকট্রনিক ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে থাকলে তাদের চোখের ক্ষতি হয়। এছাড়াও শিশুদের বিকাশের ক্ষেত্রেও এই অভ্যাস অনেক বেশি ক্ষতি সাধন করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে অতিরিক্ত সময় কাটানোর অভ্যাস শিশুদের ভাষাগত বৃদ্ধিতে কঠোরভাবে বাধা প্রদান করতে পারে।
শিশুদের মস্তিষ্কের কগনিটিক অর্থাৎ, জ্ঞানীয় কার্যক্রমে বাঁধা প্রদান করে। এই কারণে শিশুরা যখন প্রাথমিকভাবে ভাষা শেখা শুরু করে তখন সেই শিক্ষাক্রমে বাঁধা তৈরি হয়। এস্তোনিয়ার বিশেষজ্ঞদের একটি দলের প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, স্ক্রিনে বেশি সময় ব্যয় করার এই অভ্যাস শিশুরা তাদের পিতা-মাতার অনুসরণেই পেয়ে থাকে।
তারতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লেখক ডাক্তার টিয়া তুলভিস্তে নবজাতকদের ভাষার দক্ষতা অর্জনের প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে বলেছেন। তিনি বলেন, ছোটবেলায় যখন শিশুদের বিকাশ ঘটতে শুরু করে, তখন বাবা-মাসহ পরিবারের অন্যরা শিশুর সাথে খেলার ছলে নানান কথোপকথন করে। সেই অনুযায়ী প্রতিদিন বড়দের মাধ্যমে শিশুদের ভাষাগত বিকাশ হতে থাকে।
বয়সের সঙ্গে তাদের উচ্চারণ এবং ব্যাকরণগত শিক্ষার ভিত্তি মজবুত হতে থাকে চর্চার মাধ্যমে। সেই বয়সে এর বদলে যদি তাদের মোবাইল বা ল্যাপটপের প্রতি ঝোঁক বাড়ে তাহলে তাদের স্বাভাবিক বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় বাধা পড়ে। শিশুদের এই অভ্যাস তৈরির পেছনে অবশ্য প্রতিপালকদের দায় থাকে। শিশুদের সাথে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে কথোপকথন করতে হবে।
গবেষকেরা কিছু শিশুদের উপর পরীক্ষাজনক ভাবে নজর রাখেন। এই শিশু এবং এদের বাবা মায়েরা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে সময় কাটান। সময়ের দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে শিশুদের তিনটি ভাগে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
প্রথমভাগে সেসব শিশুরা অনেক বেশি ডিভাইসে সময় কাটায় তাদের ভাষাগত দক্ষতা যাচাই করা হয়। এই শিশুদের কথায় পরিপক্কতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। দ্বিতীয়ভাগে একই বয়সের তুলনামূলক কম ডিভাইসে আসক্ত শিশুদের ভাষাগত দক্ষতা প্রথম ভাগের তুলনায় উন্নত ছিল। সবশেষে যেসব শিশুদের একদম ডিভাইস থেকে দূরে রাখা হয় তারা ব্যাকরণ এবং উচ্চারণে সবচেয়ে বেশি দক্ষতার পরিচয় দেয়।
শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সমগ্র জীবনের ভিত্তি শৈশবেই তৈরি হয়। শিশুদের প্রথম ৫ বছর চঞ্চলতা অনেক বেশি থাকে। এইসময়কালে বই পড়া আর শিক্ষামূলক খেলাধুলার মাধ্যমে তাদের মানসিক ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটে। তাই এইসময়ে শিশুদের অনেক বেশি সময় দেওয়া প্রয়োজন। খেলা, বই পড়া, শিশুদের সাথে কথোপকথনের পাশাপাশি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের থেকে তাদের দূরত্ব রক্ষা করাও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ হবে এবং সুন্দর শৈশব উপহার পাবে।
শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প হয় না। ছোট থেকেই তাই শিশুদের পারিবারিক এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খেলাধুলা ও ব্যায়ামে উৎসাহী করে তোলা হয়। তবে সময়ের সাথে সাথে সবকিছুর সাথে জীবনযাত্রার ধরনেও পরিবর্তন আসে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ থাকার জন্য জিম করেন। কারো কারো মধ্যে কঠোর ব্যায়ামের প্রতি ঝোঁকও দেখা যায়।
তবে কথায় বলে, ‘অতি ভালো, ভালো নয়।’ যার মানে, কোনো ভালো জিনিসও অতিরিক্ত ভালো নয়। কঠোর ব্যায়ামও সুস্থতার বদলে নিয়ে আসতে পারে কোনো ভয়াবহ পরিণতি। বর্তমানে কঠোর ব্যায়ামকারীদের মধ্যে অল্পবয়সেই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
ভারতীয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বিভুধ প্রতাপ সিংহের একটি প্রতিবেদনে এই নিয়ে বিস্তর বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কঠোর ব্যায়াম এবং জীবনযাপনের নানা অসঙ্গতিপূর্ণ অভ্যাসের কারণে যুব সমাজে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।’ ডা. বিভুধের মতে এর কারণসমূহ হলো:
১. অনেকেই উপকার হবে ভেবে শুধু একটানা ব্যায়াম করে যান। তবে ব্যায়ামের আগে করণীয়, খাদ্যতালিকার পরিবর্তন, কতটা ব্যায়াম শরীরের জন্য সহনীয় হবে –এইসব ব্যাপারগুলোকে গুরুত্ব দেয় না। এছাড়া, উচ্চমাত্রায় মানসিক চাপে যারা ভুগছেন বা শরীরের প্রতি যথাযথ যত্ন নেন না, নানারকম বদ অভ্যাসে ডুবে থাকেন তাদের জন্যও হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
২. স্টেরয়েডের ব্যবহারও হৃদরোগ ঝুঁকি বাড়ানোর একটি বিশেষ কারণ। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর যুব ব্যক্তিদের মধ্যে এইসব কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তি থাকে।
৩. শরীরচর্চার সময় হৃদপিণ্ডের উপর চাপ পরে। ডায়বেটিস, উচ্চরক্তচাপ, ধূমপায়ী বা যাদের বংশানুক্রমে জীন স্থানান্তরের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে এমন ব্যক্তিদের জন্য হৃদপিণ্ডের প্রতি বেশি চাপ পড়া ভালো নয়। তাই ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে এইসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কঠোর ব্যায়ামের কারণে হিতে বিপরীত হতে পারে।
৪. শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করার জন্য যেমন ব্যায়াম অনেক গুরুত্বপূর্ণ একই্ ভাবে কোষক্ষয় এড়াতে বিশ্রামও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ৪৫ বছরের উপরে যাদের বয়সের ঊর্ধ্বে যারা তাদের জন্য বিশ্রামহীন কঠোর ব্যায়াম করা একেবারেই উচিত নয়। কারণ এর ফলে তাদের মাথা ঘোরা, চরম ক্লান্তি, বুকে ব্যথা এমনকি হৃদস্পন্দন ওঠা-নামা করার মতো সমস্যা দেখা যেতে পারে।
৫. যেকোনো বয়সেই স্বাস্থ্যের উপর জীবনযাপনের ধরনের একটি বিশেষ প্রভাব থাকেই। সঠিক সময়ে ঘুম, সুষম খাদ্য গ্রহণ, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও অশান্তিতে ভোগা যুব সমাজের মধ্যেও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। কারণ এসব অভ্যাসের কারণে হাইপার টেনশন, উচ্চ কোলেস্টেরল, প্রদাহের মতো সমস্যা বেড়ে যায়। এসবের পরে কঠোর পরিশ্রম হৃদপিণ্ডের উপর চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়, ফলস্বরূপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
ক্যান্সার খুব জটিল এক অসুখ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সূত্রপাতের কারণ অজানা হওয়ার কারণে এটি একটি দুরারোগ্য ব্যাধি। ক্যান্সারের কোনো ঔষধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তাই ক্যান্সারকে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। অনেক সময় জীবনধারার কিছু অভ্যাসের কারণে মানুষ অজান্তেই ক্যান্সারের বীজ বপন করে বসে। তবে সেই সংখ্যা খুবই সামান্য। বিশ্বে যত ক্যান্সার রোগী আছে; বিশেষ করে শিশুরা, তাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ অজানা।
শিশুদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কোন কারণে আদরের শিশুটির জীবনে ক্যান্সারের মতো রোগের কালো ছায়া ঘনিয়ে আসবে, তা বলা মুশকিল। তবে নিজের শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা দূর করার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে চিকিৎসক উষ্মা সিং এই ব্যাপারে আলোচনা করেন। শিশুর সুস্থ এবং সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চতকরণে বাবা-মায়েরা এইসব সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন:
১.ভালো অভ্যাস: শিশুদের খুব ছোট থেকেই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস করলে অন্যান্য রোগের মতো ক্যান্সারেরও ঝুঁকি কমানো সম্ভব। শিশু শরীরে সরাসরি ক্যান্সারকোষ সৃষ্টি হওয়া থামিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়, তবে প্রাপ্তবয়সে শরীরে ম্যালিগন্যান্সি তৈরি হওয়া রোধ করা যেতে পারে।
যেমন ধূমপান করার ফলে যা যা ক্ষতি হতে পারে, তা শিশুদের জানাতে হবে। রোদে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন মাখার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হবে। এছাড়া ফল, সবজি, শস্যজাতীয় খাদ্যাভ্যাস যেভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, আবার চিনি ও বাইরের খাবার যেভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে সেসব শিশুদের ছোট থেকেই জানাতে হবে।
নবজাতক শিশুদের অবশ্যই মাতৃদুগ্ধ পান করাতে হবে। এর বাইরে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত কোনো খাবার খাওয়ানো যাবে না। প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে রান্না করা বা খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। অনেক সময় এসব পাত্র তৈরিতে ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহৃত হয়।
ছোট থেকেই প্রতিদিন শরীরচর্চা বা যোগাসন আর ধ্যান করার অভ্যাস করতে হবে। এসব অভ্যাস রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, এতে ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।
২.প্রতিকার ও চিকিৎসা: যেসব শিশুরা এইচআইভি, ম্যালেরিয়া, এপসটাইন-বারের মতো রোগ আছে তাদের ক্যান্সারেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই ধরনের ক্রোনিক রোগের চিকিৎসা ও টিকাদান সঠিক ও পরিচ্ছন্নভাবে করতে হবে, যেন প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকর হয়। ‘হেপাটাইটিস বি’, ‘এইচপিভি’র মতো রোগের টিকা আগে থেকেই নিয়ে রাখতে হবে। এতে ভবিষ্যতে লিভার, সার্ভিকাল ও ওরাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে। শিশুদের ক্ষেত্রে সিটিস্ক্যান, এক্স-রে জাতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া রাসায়নিক পদার্থসম্পন্ন পণ্য ব্যবহার একেবারেই না করার চেষ্টা করতে হবে।
৩.পরিবেশগত সাবধানতা: ক্যান্সারকোষ সৃষ্টিরোধে গুরুত্বপূর্ণ হলো কার্সিনোজেনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর এক্স-রে রশ্মি, সেকেন্ডহ্যান্ড ধোঁয়া, সীসা, অ্যাসবেস্টসের মতো ক্ষতিকর পদার্থ থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখতে হবে। অবশ্যই ঘর-বাড়ি পর্যাপ্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করতে হবে।
৪. জীন ও রোগ সনাক্তকরণ: শতকরা ১০ ভাগ শিশু রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের রোগসৃষ্টিতে বংশগত জীনের প্রভাব ছিল। পারিবারিকভাবে যাদের ক্যান্সারের ঘটনা দেখা যায়, তাদের শিশুদের নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে সুস্থতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো উপসর্গ সন্দেহজনক মনে হলেই চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে হবে।
সুস্থ দাঁতের সুন্দর হাসি সকলেই পছন্দ করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজই হলো ব্রাশ এবং পেস্ট নিয়ে দাঁত মাজা। দাঁত মুখগহ্বরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। খাবার চিবিয়ে খাওয়া ছাড়াও, বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকে দাঁত। তাই, প্রতিদিন ব্রাশ করা ছাড়াও দাঁতের যত্নে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ দাঁতে আটকে থাকা খাবার ভালোভাবে পরিষ্কার না হলে, যেমন দাঁতের বিভিন্ন রোগ এবং সমস্যা হতে পারে; তেমন দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাসের কারণে জনসম্মুখে অস্বতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে।
দাঁতের যত্ন মূলত রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে থেকেই শুরু করা উচিত। সারাদিনে খাওয়া খাবার দাঁতের কোণায় আটকে থাকতে পারে। এতে রাতে সেসব খাবার বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। তাই মুখের স্বাস্থ্য এবং শ্বাস দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে প্রতিদিন রাতে দাঁতের যত্ন নিতে হবে। ভারতীয় দন্ত চিকিৎসক রবনীত কর দাঁতের যত্নের কিছু টিপস জানিয়েছেন-
১. সকালে ঘুম থেকে উঠেই সবার আগে পানি দিয়ে মুখের ভেতরে পরিষ্কার করতে হবে। কুলকুচি করে রাতের বাসি ভাব দূর করতে হবে।
২. ভালো করে দাঁত ব্রাশ করার বিকল্প কিছু হতে পারে না। ব্যবহারের জন্য নরম ব্রাশ সবচেয়ে ভালো। ব্রাশ যত বেশি নরম বা সফট হবে তত বেশি ভালো। ব্রাশের ব্রিস্টল শক্ত হলে মাড়ির ক্ষতি হতে পারে। চেষ্টা করবেন ফ্লোরাইড টুথপেস্ট বা টুথ পাউডার ব্যবহার করার।
৩. ব্রাশ করার পদ্ধতির উপরও মুখের সুস্বাস্থ্য অনেকাংশ নির্ভর করে। মাড়ির একপাশ থেকে ব্রাশ করা শুরু করে ধীরে ধীরে অন্যপাশে এগোতে হবে। ব্রাশের মাঝের অংশটিকে কেন্দ্র করে ভালোভাবে একসঙ্গে ২ থেকে ৩ টি দাঁত ঘষতে থাকতে হবে। প্রতিটি পাটির দাঁতের উপরে,সামনে, পেছনেসহ চারপাশ সময় নিয়ে এভাবে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। মাড়ির থেকে আনুমানিক ৪৫ ডিগ্রি কোণে বাকিয়ে ব্রাশ করার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিবেলা ব্রাশ করার সময় অন্তত ২ মিনিট করে সময় নিন।
৪. অনেক সময় ব্রাশ দাঁতের সব কোণায় পৌঁছে পরিষ্কার করতে পারে না। বিশেষ করে দুই দাঁতের মধ্যবর্তী স্থান পরিষ্কার করার জন্য ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা হয়। এর বিকল্প হিসেবে ইন্টারডেন্টাল ব্রাশও ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. অনেকের একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, ওরাল স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শুধু দাঁত পরিষ্কার করাই যথেষ্ট। জিভ, মাড়ি এসব পরিষ্কার না করলেও চলে। জিভে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া বা খাবারের টুকরা থেকে যেতে পারে। ব্রাশ দিয়ে জিভের উপর আলতো করে কিছু সময় ঘষুন, যেন এসব ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়। চাইলে আলাদা করে জিভের জন্য টাং স্ক্রেপারও ব্যবহার করতে পারেন।
৬. ব্রাশ করার কারণে মূলত দাঁতে আটকে থাকা খাবারের টুকরাগুলো পরিষ্কার হয়। তবে এর মাধ্যমে খাবারের কারণে মুখে সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয়না। তাই ব্রাশ করার পর মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা উচিত। এতে জিনজিভাইটির মতো ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবজনিত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমানো যায়।
৭. কথায় বলে, ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝে না।’ দাঁতে সামান্যতম পরিবর্তন দেখা দিলেও কখনো অবহেলা করা উচিত নয়। মাড়ি বা দাঁতে কোনো অসুবিধা অনুভব করলে অবশ্যই মুখগহ্বরের পরিক্ষা করানো উচিত।
৮. পানিশূন্যতার কারণে শরীরের সঙ্গে মুখের মধ্যেও নানারকম রোগের সৃষ্টি হতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করার সুঅভ্যাস গড়ে তোলা বাঞ্ছনীয়।
৯. দাঁতের জন্য যাবতীয় করণীয় কেবল ঘুম থেকে উঠেই করার নিয়ম নয়। বরং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও দাঁতের সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সকালে যেমন ব্রাশ করে ফ্লস এবং মাউথওয়াশ ব্যবহার করে পরিষ্কার করা উচিত, একইভাবে রাতেও পরিষ্কার করে ঘুমাতে যাওয়া প্রয়োজন। এর ফলে দাঁতসম্পর্কিত রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
১০. এছাড়া কিছু ছোটখাটো টিপস মেনে চলার চেষ্টা করা উচিত। যেমন: যতটা সম্ভব মিষ্টিজাতীয় বা চিনি আছে এমন খাবার কম খেতে হবে, প্রতিবেলায় খাবার খাওয়ার পর কুলকুচি করতে হবে, আঠালো বা দাঁতে লেগে থাকতে পারে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়াও চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁতের চ্যেকআপ করাতে হবে।
মনে রাখবেন মুখ হলো আপনার অভ্যন্তরীণ শরীরের একমাত্র প্রবেশপথ। মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে খাবার গ্রহণের মাধ্যমে সরাসরি শরীরের ভেতরেও প্রভাব ফেলতে পারে। সর্বোপরি, হাসতে ভুলবেন না। হাসির মাধ্যমে নিজের আনন্দ প্রকাশ করুন। সুস্থ হাসিতে সুন্দর মন।