দুই কোটি রোগীর সুস্থ জীবনের জন্য ফিজিওথেরাপি, বেহাল সরকারি সেবা!



ডা. দলিলুর রহমান
দুই কোটি রোগীর সুস্থ জীবনের জন্য ফিজিওথেরাপি, বেহাল সরকারি সেবা!

দুই কোটি রোগীর সুস্থ জীবনের জন্য ফিজিওথেরাপি, বেহাল সরকারি সেবা!

  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (NITOR/RIHD) অপারেশন তো হল, কিন্তু এই রোগীরা কিভাবে সুস্থ হবে, কিভাবে পায়ের শক্তি ফিরে পাবে, কিভাবে দাঁড়াবে, কিভাবে হাঁটবে, কিভাবে পূর্বের কাজে ফিরে যাবে? –জানি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দায়িত্বশীলরা দিবেন না, কারণ ১৭ কোটি মানুষের জন্য একমাত্র এই পঙ্গু পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতার পর থেকে পঙ্গুদের পুনর্বাসনে প্রধান স্বাস্থ্য পেশাজীবী শত শত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক তৈরি করলেও ১৯৮৩ সালের পর থেকে আজ অবধি  একজনকেও নিয়োগ দিতে পারে নাই ? কি বিস্ময়! তাই না। 

বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ শারীরিক নানা ধরনের ব্যথা, ব্যথাজনিত উপসর্গ, প্রতিবন্ধিতা ও পঙ্গুত্বের শিকার। এদেরকে সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম জীবনে ফিরিয়ে আনতে ফিজিওথেরাপি অন্যতম চিকিৎসাসেবা। আর এই  ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পাওয়া তাদের অধিকার।


শারীরিক নানা ব্যথা, দুর্বলতা, প্যারালাইসিসের কারণে মানুষের প্রাত্যহিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। মানুষের কর্মক্ষমতা ও  উৎপাদনশীলতা কমে যায়। ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের বাইরে এটা জাতীয় উন্নয়নের জন্যও অন্তরায়। এসব কারণে যিনি হাঁটাচলা করতে পারেন না, উঠতে পারেন না, বসতে পারেন না; তিনি তো নিজের জন্যই বোঝা হয়ে দাঁড়ান। এ কারণে শারীরিক কষ্ট শেষ পর্যন্ত ভীষণ মানসিক পীড়ার কারণ হয়। এসব সমস্যার জন্য ফিজিওথেরাপিই অন্যতম চিকিৎসা, যা এসব মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে, টিকে থাকতে সহায়তা করে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫১ বছরেও দৃশ্যমান হয় নাই কোন সরকারী উদ্যোগ । পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে দেশে প্রতিদিন অন্তত পাঁচ লক্ষাধিক রোগী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিয়ে থাকেন বলে অনুমেয়।

ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব তুলে ধরতে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস পালিত হয়। ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস–প্রতিকার ও প্রতিরোধ– উভয় টিতেই ফিজিওথেরাপি সমান কার্যকরী। হাঁটুসহ বিভিন্ন জয়েন্টের  অস্টিওআর্থ্রাইটিসে আক্রান্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।বিশ্বব্যপি  অস্টিওআর্থ্রাইটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে ফিজিওথেরাপি একটা বড় জায়গা করে নিয়েছে। অস্টিওআর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন বাত, শারিরিক ব্যথা, দুর্বলতা, প্যারালাইসিস, প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিরাপদ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকেরা এখন বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

ফিজিওথেরাপি ছাড়া আধুনিক চিকিৎসা অসম্পূর্ণ

ব্যথা, প্রবীণ জনগোষ্ঠীর বার্ধক্যজনিত সমস্যা, স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, সেরিব্রাল পালসি, অটিজম, মেরুদণ্ডে আঘাত, সড়ক দুর্ঘটনা, ক্যানসার, অবেসিটি, হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিসসহ নানাবিধ অসংক্রামক রোগের কারণে বাংলাদেশে মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেক বড় একটি অংশ আংশিক বা পুরোপুরি প্রতিবন্ধিতায় ভুগছে। এই ব্যথা ও প্রতিবন্ধিতার প্রধান চিকিৎসাব্যবস্থা ফিজিওথেরাপি। সড়ক দুর্ঘটনা, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, বিকলাঙ্গতা, পক্ষাঘাত এবং বড় কোনো অস্ত্রোপচারের পর রোগীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি ভালো ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি রোগ, বাত-ব্যথা ও পক্ষাঘাতের রোগীরা ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি নিয়ে ভালো ফল পান। সচেতনতার অভাবে রোগীরা অনেক সময় বুঝতে পারেন না, তাঁদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রয়োজন। সব বয়সের মানুষের রোগ বা সমস্যায় ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন সমস্যার জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দরকার হয় ।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে ফিজিওথেরাপি কেন প্রয়োজন?


বিশ্বজুড়ে পঞ্চাশ কোটিরও অধিক মানুষ  অস্টিওআর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত, বাংলাদেশেও এই সমস্যা ঘরে ঘরে  ।  এ রোগ ৬০% ক্ষেত্রে হাঁটুতে হয়ে থাকে । হাড়ের ক্ষয় পেশীর দুর্বলতা অতিরিক্ত মেদ, বয়স্ক জনগোষ্ঠী এ সমস্যার অন্যতম কারণ । এ সমস্যা জটিল হওয়ার আগেই দক্ষ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তিনি আপনার সব সমস্যা শুনে কিছূ শারীরিক পরীক্ষা করে সুনির্দিষ্ট কিছু ফিজিওথেরাপি ও থেরাপিউটিক  এক্সারসাইজের মাধ্যমে আপনার কষ্ট লাঘব করে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দেরী করলে জটিলতা বাড়ে এবং সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় , এমনকি অপারেশন করেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়না। তাই এ ধরণের সমস্যা প্রতিকার ও প্রতিরোধে দ্রুত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

লং কোভিডে ফিজিওথেরাপি কেন প্রয়োজন?


আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বাস্থ্য নির্দেশিকায় লং কোভিডের জন্য ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পানি পান, ইতিবাচক চিন্তা ও পর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি পরামর্শ মেনে চলতে বলা হয়।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলেছে, কোভিড–পরবর্তী শারীরিক সক্ষমতা ও কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনা এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক দুর্বলতা, ব্যথাজনিত উপসর্গ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকলে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের দেশের কোভিডের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কাটানোর চিকিৎসার জন্য কোনো প্রটোকল এখনো তৈরি হয়নি। যদিও কোভিড পরবর্তী শারীরিক দুর্বলতা, ব্যথা নিয়ে আমাদের কাছে আসা রোগীদেরকে  ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় দ্রুত সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারছি  ।

অর্থপেডিক সমস্যা ও ব্যথার রোগীদের ফিজিওথেরাপি ছাড়া বিকল্প কি? 


নানা ধরনের বাত যেমন স্পন্ডিলাইটিস, স্পন্ডাইলোসিস, স্পন্ডিলিসথেসিস; অর্থাৎ ঘাড়, কোমর ও মেরুদণ্ডের ব্যথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বেশ কাজে দেয়। পাশাপাশি অস্থিসন্ধির বাত, হাঁটুর ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার বা কাঁধে ব্যথা এবং পায়ের গোড়ালির সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অপরিহার্য । এছাড়া মাংসপেশি, জোড় ও হাড়ের সমস্যা। অনেক সময় দেখা যায়, ভেঙে যাওয়া হাড় জোড়া লাগার পর আঘাতপ্রাপ্ত অংশের মাংসপেশি ও হাড়-জোড় ঠিকমতো কাজ করে না। এ ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন পড়ে। হাড়ের রোগ অস্টিওপোরোসিস, মাংসপেশির রোগ সারকোপেনিয়াতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বিকল্পহীন।

শারীরিক ব্যথা ও সব ধরণের অর্থপেডিক সমস্যাগুলো যথাযথভাবে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অর্থোপেডিক কিংবা মাস্কুলোস্কেলিটাল ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ।

মেরুদণ্ড ও স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যায় ফিজিওথেরাপি


স্ট্রোক , স্পাইনাল কর্ড ও নার্ভ ইনজুরির কারণে সৃষ্ট প্যারালাইসিস ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বিকল্পহীন এবং  এ ধরণের সমস্যায় নিউরোলজীকেল ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের  ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম । আঘাত অথবা শল্যচিকিৎসায় স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতায় ভুগে পঙ্গুত্ব বরণ করে অনেকে। এ ধরনের রোগীর শরীর অবশ হয়ে যায় বা মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। এসব রোগীর শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ানো এবং অস্থিসন্ধি সচল রাখা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষম করে তুলতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।

ক্যান্সার ও ফিজিওথেরাপি


ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী অসুস্থতার প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি। চিকিৎসাধীন অনেক ক্যান্সার রোগী দুর্বল এবং ক্লান্ত বোধ করে। আপনি বা আপনার যত্নশীল কেউ যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন বা বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন, তাহলে ক্যান্সার পুনর্বাসন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফিজিওথেরাপি অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব এবং মূল্য আপনার জানা উচিত। ফিজিওথেরাপি ক্যান্সার রোগীকে সামগ্রিক পেইন ম্যানেজমেন্ট করতে পারে, দীর্ঘস্থায়ী নিষ্ক্রিয়তা কমাতে পারে,  ক্যান্সার এর  ওষুধ এবং কেমোথেরাপির কারনে স্নায়ুর ক্ষতিসমূহ কমিয়ে আনতে পারে এবং এর জন্য রোগীর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে ডি-কন্ডিশনের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। ক্যান্সার রোগীদের বিশেষ প্রয়োজনীয়তাগুলি বোঝে এমন একটি উন্নত স্বাস্থ্যসম্মত  পুনর্বাসন ক্লিনিক খোঁজা এবং রিহ্যাবিলিটেশনের জন্য ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা দিয়ে অভিজ্ঞ  ফিজিওথেরাপিস্ট খুঁজে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। 

শিশুরোগ ও ফিজিওথেরাপি


আমাদের কিছু শিশু জন্মগতভাবে প্যারালাইসিস বা সেরিব্রাল পালসি, ডাঊন সিন্ড্রোম,  অটিজম ও মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে জন্মায়। ফলে তাদের স্বাভাবিক বেড়ে উঠা বাঁধাগ্রস্ত হয়। আবার দেখা যায়, অনেক শিশুর হাত, পা বেঁকে যায় কিংবা বিকলাঙ্গতা দেখা দেয়। এসব শিশুর ফিজিওথেরাপি অত্যাবশ্যক এবং তা অবশ্যই পেডিয়াট্রিক/শিশু ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে হওয়া বাঞ্ছনীয়।

স্পোর্টস ইনজুরি ও ফিজিওথেরাপি


খেলা ও ফিজিওথেরাপি যেন অবিচ্ছেদ্য। একে অন্যের পরিপূরক। খেলাধুলা করলে ইনজুরি হতেই পারে। তাই স্পোর্টস ইঞ্জুরি প্রতিরোধ এবং ইনজুরি গ্রস্ত খেলোয়াড়কে বিভিন্ন ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে  খেলার উপযোগী করতে স্পোর্টস ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞরা সবচেয়ে বেশি অবদান রেখে চলেছেন।

হৃদ্‌রোগ, শল্যচিকিৎসার পর ফিজিওথেরাপি

বুকে কফ জমা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদেরও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন পড়ে। হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে রোগীর অক্সিজেন ধারণক্ষমতা ঠিক রাখতে ফিজিওথেরাপি দিতে হয়। রোগীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় এক্ষেত্রে এরবিক এক্সারসাইজ এর প্রেসক্রিপশন মেনে ফিজিওথেরাপি করতে হয় এবং ভুল হলে রোগীর জীবন হুমকির মুখে পড়ে। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) রোগীদেরও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়। কার্ডিও-রেসপিরেটরি কিংবা আইসিইউ ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞরা এই থেরাপি দেন-যদিও আমাদের দেশে এ ধরণের বিশেষজ্ঞের অনেক সংকট। 

অন্যান্য শল্য চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধির স্বাভাবিক ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে রোগীদের স্বাভাবিক চলাফেরা বাঁধাগ্রস্ত হয়। তাদেরকে সুস্থ ও  স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ফিজিওথেরাপি ভালো কাজ দেয়। এর জন্য শল্যচিকিৎসার ওপর ভিত্তি করে বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

পোড়া রোগীদের ফিজিওথেরাপি

আমাদের দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। পোড়া রোগীর সংখ্যা নেহাত ছোট নয়। পোড়া রোগীর দীর্ঘদিন ধরে মাংসপেশি সংকুচিত হয়ে থাকে, অস্থিসন্ধির স্বাভাবিক ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়।  এই অবস্থায় অনেকে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণের আশঙ্কায় থাকেন। যদি নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নেওয়া হয়, তাহলে এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যায়। মাস্কুলোস্কেলিটাল ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞরা এই সেবা দিয়ে থাকেন।

পঙ্গু পুনর্বাসন ও বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ফিজিওথেরাপি

দেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রবীণ, যারা হার-জোর- মাংস পেশীর ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতাসহ  বিভিন্ন রকম বার্ধক্যজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ।  বার্ধক্যে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা হয়। মাংসপেশি ক্ষয় হয়। এ কারণে অনেকে চলাফেরার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এসব মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের ক্ষমতা বজায় রাখতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণে হাত-পা হারানো ব্যক্তির কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজনের প্রয়োজন হয়। কিংবা গাছ কিংবা উপর থেকে পড়ে গিয়ে কিংবা কোন দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডের স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি জনিত কারণে অনেকেই পঙ্গুত্বের শিকার হয়। এসব মানুষের চলাফেরা স্বাভাবিক করতে ফিজিওথেরাপি একমাত্র পদ্ধতি। অর্থোপেডিক ও নিউরোলজি ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেওয়া বেশি কার্যকর।

ওমেন্স হেলথে ফিজিওথেরাপি –

দেশের প্রায় ৫০% জনগোষ্ঠী নারী। হরমোন, স্ট্রাকচারাল মেকআপ, গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের কারণে সৃষ্ট  নারীদের শরীরে ব্যথা ও নানাবিধ সমস্যায়  ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। নারীদের  স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন জেনিটাল অঙ্গে ব্যথা ও দুর্বলতা, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হওয়া, প্রসবপূর্ব এবং প্রসবোত্তর পেশীর ব্যথা,  স্তন ক্যান্সারে অস্ত্রোপচারের পরে পুনর্বাসন, লিম্ফেডেমা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কার্যকরী। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে পেলভিক ফ্লোরকে শক্তিশালী করলে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের সময় ও পেলভিক ফ্লোর সম্পর্কিত সমস্যা প্রতিকার ও প্রতিরোধে  নারীদের জন্য অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে ।  বিশেষ করে মেনোপজের সময় স্বাভাবিকভাবেই হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। এক্ষেত্রে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে আপনার হাড়কে শক্তিশালী করতে এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারেন।

কর্পোরেট হেলথে ফিজিওথেরাপি

দ্য ওয়ার্ক ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে কর্পোরেট কর্মীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পেশীর ব্যধি, বাত, পিঠে ব্যথা এবং জয়েন্ট, পেশী এবং টেন্ডনের নানা সমস্যায় ভুগছে।ফলে তাদের কাজের কর্মক্ষমতা হ্রাস করে, স্ট্যামিনা কমিয়ে দেয়, কাজ করার ঈচ্ছা ও একাগ্রতাকে বাঁধা গ্রস্ত করে এবং তাদের মেজাজের পাশাপাশি কাজের গতিশীলতা এবং কর্ম তৎপরতাকে  প্রভাবিত করে। কাজ সংক্রান্ত অসুস্থতার সবচেয়ে প্রচলিত কারণ যা দ্বিগুণ প্রভাবিত করে। শুধু যুক্তরাজ্যেই এর জন্য ৯.৫  মিলিয়ন কর্মদিবস নষ্ট হয় এবং প্রায় ৭.৪ বিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয়। বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ মোতাবেক এ সমস্যা গুলোর জন্য শুরুতেই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার সুবিধা থাকলে কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি খরচ কমাতে, কাজের ছুটি কমাতে এবং তাদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে  সাহায্য করে।

বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি অবকাঠামো, বাধা

বিশ্ব উন্নয়নের ধারাবাহিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। ১৯৮০ দশকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও গবেষণারও অনেক উন্নতি হয়। বর্তমানে বিশ্বমানের সব বিশ্ববিদ্যালয় ফিজিওথেরাপি বিষয়ে ডক্টর অফ ফিজিওথেরাপি, পিএইচডি, মাস্টার্স, ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রদান করছে।

স্বাস্থ্য মানেই শুধু চিকিৎসাই নয়, আর চিকিৎসা মানেই শুধু ঔষধ নয়। স্বাস্থ্যের মুল ভিত্তি প্রতিকার (চিকিৎসা)-প্রতিরোধ-পুনর্বাসন-প্রমোশন– ৪টিতেই ফিজিওথেরাপির ভূমিকা অপরিসীম। ফিজিওথেরাপির এরকম অপরিহার্য গুরুত্ব বিবেচনায় স্বাধীনতা উত্তর আমেরিকান অর্থপেডিক  সার্জন ডাঃ আর জে গাস্টের পরিচালনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের   মেডিসিন ফ্যাকাল্টির অধীনে পঙ্গু হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে ( RIHD/NITOR) ফিজিওথেরাপি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি কোর্স চালু হয়। বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি পেশার সঙ্গে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে। তা সত্ত্বেও স্বাধীনতার ৫১ বছরে ফিজিওথেরাপি শিক্ষার জন্য একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিওথেরাপি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কোন উদ্যোগ নেই কিন্তু জনমানুষের চিকিৎসার অধিকারের স্বার্থে দেশে ফিজিওথেরাপি শিক্ষা ও চিকিৎসার নিয়ন্ত্রিত প্রসার দরকার।

আমাদের দেশে সনদপ্রাপ্ত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের সরকারি চাকরির সুযোগ নেই। ফলে ফিজিওথেরাপি পেশা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব থেকে যাচ্ছে। এই অবস্থা দেশের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ইতিমধ্যে কাজের সুযোগ বা অনুশীলনের সুযোগ না পেয়ে অনেকে পেশা পরিবর্তন করেছেন। অনেকে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। কারণ, স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর ফিজিওথেরাপিস্টদের পেশা চর্চার কোনো সনদ দেওয়া হয় না। ২০০৫ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিছু ফিজিওথেরাপিস্টকে সাময়িক সনদ দিতে শুরু করলেও পরে বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রায় অকার্যকর বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন ২০১৮। যদিও এই আইনে বলা হয়েছে, ফিজিওথেরাপিস্ট হতে হলে সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেশাগত ফিজিওথেরাপি বিষয়ে চার বছর একাডেমিক শিক্ষা ও ১ বছরের ইন্টার্ন সম্পন্ন করে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি নিতে হবে।

ফিজিওথেরাপিস্টদের জন্য দুটি সরকারি হাসপাতালে পদ রয়েছে মাত্র ১৯টি। এগুলোর মধ্যে পঙ্গু হাসপাতালে ১৪টি, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২টি, জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালে ১টি, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১টি। যুগের পর যুগ প্রায় সব পদই শূন্য পড়ে আছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে সরকার উক্ত শূন্য পদে অস্থায়ী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। কিন্তু ১২ বছরেও সে নিয়োগ হয়নি। আবার নতুন পদ তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) চেষ্টায় ২০১২ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগ সাড়ে চার শতাধিক পদের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করে তা আটকে দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন সোসাইটি অব বাংলাদেশ।

ফিজিওথেরাপি শিক্ষার জন্য বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি নামে একটি স্বতন্ত্র কলেজের জন্য মহাখালীতে ৫ দশমিক ২৮ একর জমি দেয় সরকার। ২০০৯ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক এর ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন। গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে অনেক উন্নয়ন, অবকাঠামো হয়েছে। কিন্তু এই কলেজটি আর হয়নি। রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা, হাইকোর্টের নির্দেশ—সব ফাইল চাপা পড়ে আছে। ফিজিওথেরাপি সংশ্লিষ্টদের ২৮ বছরের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্তাদের সুদৃষ্টি আজও পায় নাই । আর এর ভুক্তভোগী হচ্ছে ব্যথা ও প্রতিবন্ধিতার কোটি রোগী।

নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দেশে কয়েক হাজার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক বেসরকারি পর্যায়ে খুব সুনামের সাথে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ রোগীদেরকে দেশব্যপি  ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রদান করে চলেছেন । প্রতিদিনই ফিজিওথেরাপি কেন্দ্রগুলোতে রোগী বেড়েই চলেছে। যদিও সরকারী সুযোগ সুবিধার অভাবে দেশে আধুনিক ও যুগোপযোগী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার সুযোগ এখনো অনেক সংকুচিত। ফিজিওথেরাপি বিষয়ে এখনই আমাদের নজর দেওয়া উচিত। তা না হলে একটা বড় জনগোষ্ঠীকে আমরা দীর্ঘ রোগভোগের মধ্যে রেখে তিলে তিলে কষ্ট দেব। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে তাদের অবহেলিত রাখব। অথচ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের সুস্থ ও কর্মক্ষম করে জাতীয়  উন্নয়নে তাদের অবদান রাখার সুযোগ আছে । তাই ফিজিওথেরাপি শিক্ষা ও সেবার আমাদের উদাসীনতা দেখানোর কোন সুযোগ নেই  । 

ডা. দলিলুর রহমান, আইপি প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) 

   

রমজানে অপচয় করার অভ্যাস ত্যাগ করুন



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
টাকার অপচয়

টাকার অপচয়

  • Font increase
  • Font Decrease

রমজান মাস ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র মাস। হযরত মোহম্মদ (সা.) এর নির্দেশনায় মুসল্লীগণ রোজা রাখার মাধ্যমে সংযম করেন। এই এক মাস সর্বাঙ্গে আরও ভালো একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার চর্চা করে তারা। অনেকে মনে করেন, রোজার অর্থ শুধু না খেয়ে থাকা। তবে রোজা মূলত সংযম শেখানোর উদ্দেশ্যে রাখা হয়। এই সংযম শুধু খাদ্যের নয়, মনুষ্যের সকল ধরনের নেতিবাচক দিকের।   

অনেকে না জেনেই এমন কিছু কাজ করেন যা রমজান মাসে একদমই করা উচিত নয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো অকারণে টাকা নষ্ট করা। রমজান মাসে পরিপূর্ণভাবে ঈমান রক্ষাকারী কাজই করা উচিত। অপচয় করার অভ্যাস একদমই ভালো নয়। রমজান মাসে অপচয় করা একেবারে কমিয়ে ফেলতে হবে।  

অনেককেই দেখা যায় ইফতারে অনেক বেশি পদের খাবার আয়োজন করার চেষ্টা করেন। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে এখন অনেকেই ইফতারে দামি খাবারের ব্যবস্থা করেন। রমজান মাসে নিজের প্রয়োজনকে সংযত করা আবশ্যক। অপ্রয়োজনে খাবারের পেছনে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা এবং অতিরিক্ত খাবারের আয়োজন করে তা না খেয়ে নষ্ট করা- দুটোই অপচয় ঘটায়। তাছাড়া, বেশি খাবারের চাহিদার কারণে রান্নার কাজে যা ব্যয় থাকেন তাদের অতিরিক্ত পরিশ্রম হয়। এতে তাদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

এছাড়া সবাই ঈদে সকলেই নতুন পোশাক কেনে। তবে কারো মধ্যে সাধ্যের বাইরে গিয়ে পোশাক কেনা প্রবণতাও দেখা যায়। অনেকে কেনাকাটা করার জন্য শপিংমলে অতিরিক্ত সময় কাটান। রমজান মাস ইবাদত করার মাস। এই সময় যত বেশি সম্ভব ধর্মীয় কাজে এবং মসজিদে সময় কাটানো উচিত।

অনেক মানুষ আছে যারা প্রয়োজনীয় জিনিসও কিনতে পারে না। সম্ভব হলে তাদের সাহায্য করুন। এতে তাদের জীবনও ‍কিছুটা সহজ হবে, আপনারও মানসিক শান্তি মিলবে। 

তথ্যসূত্র: গ্রিণটেক

;

ঈদের ফ্যাশনে দেশীয় পোশাকের সমাহার নিয়ে এলো 'মিরা'



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলছে মুসলিম ধর্মাবলম্বী অন্যতম ইবাদতের মাস পবিত্র রমজান। এরই মধ্যে চলে এসেছে ঈদ উৎসবের আমেজ। প্রস্তুত হচ্ছে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজগুলো হাল ফ্যাশনের পণ্য সম্ভার নিয়ে। প্রতি বছর ঈদকে কেন্দ্র করে বাজার ছেয়ে যায় নানারকম বিদেশী পোশাকে। এর ভিড়েও দেশীয় পোশাককে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ও জনপ্রিয় করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান। তেমনি একটি দেশীয় লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড 'মিরা'।

দেশজ ও পরিবেশবান্ধব সব পণ্য নিয়ে ফ্যাশন হাউজ মিরা ইতোমধ্যেই নজরকাড়তে শুরু করেছে রুচিশীল ও ফ্যাশন সচেতন মানুষের। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে পান্থপথের মোড় কিংবা সাইন্স ল্যাবরেটরির মোড় যে কোন একদিক থেকে গেলেই গ্রিন রোডে কমফোর্ট হাসপাতালের পাশেই ১৬৭/এ নম্বর ভবনের তৃতীয় ফ্লোরে কাজ চলছে মিরা-র প্রথম নিজস্ব আউটলেট এর। সেখানেই কথা হয় মিরা ব্র্যান্ড এর কর্ণধারদের অন্যতম শুভ্রা কর এর সাথে।



শুভ্রা কর বলেন, এবার ঈদ এবং বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ প্রায় একই সময়ে। ঈদ এবং বর্ষবরণ দুটোই খুব বড় উৎসব। তাই এই উৎসবের সময়কে সামনে রেখে মিরা তার সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে। কিন্তু এই উৎসবে আয়োজনে দেখা যায় আমাদের বাজার ছেয়ে যায় সব ভিনদেশী পণ্যে। নিজের দেশের তৈরি সুন্দর সব পোশাক, গহনা বা অন্যান্য পণ্য ছেড়ে আমরা বিদেশি পণ্য খুঁজি। অথচ তার চেয়ে মানসম্মত ও সুন্দর কিছু দেশেই পাওয়া যায়, আমরা জানিই না! বিদেশী পণ্যের ভিড়ে মিরা তাই নিয়ে এসেছে দেশীয় সব পণ্য ও ডিজাইনের সমাহার। আমাদের কাছে পাচ্ছেন সঠিক কাউন্টের অথেটিক জামদানি শাড়ি, আমাদের নিজস্ব হ্যান্ডব্লক ডিজাইনে করা কাপল সেট বা ফ্যামিলি কম্বো। থাকছে হ্যান্ডপেইন্ট এর পাঞ্জাবি, পরিবেশ বান্ধব বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তৈরী নিজস্ব ডিজাইনের গহনা, অলঙ্কার। এছাড়া ছোট বড় সবার জন্য টিশার্টও পাচ্ছেন।

'মিরা'র নিজস্ব হ্যান্ডব্লক ডিজাইনের দেশীয় শাড়ি

তিনি বলেন, আমাদের অনেক পণ্য দেখে অনেকে অবাক হন এবং প্রশ্ন করেন যে এগুলো দেশে তৈরি কিনা, কারণ দেশে এত সুন্দর বা ভালো পণ্য তৈরি হয় তাদের ধারণা ছিল না। মিরা-র মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের এই নিজস্ব ঐতিহ্য ও শিল্পকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া ও জনপ্রিয় করে তোলা। একইসাথে ফ্যাশনকে যথাসম্ভব পরিবেশবান্ধব রাখা। আমাদের সব পণ্য আমাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধায়নে কারিগর দ্বারা প্রস্তুত করা এবং সেখান থেকেই সংগ্রহ করা এবং মানের দিক থেকে আমরা কোন আপোষ করি না। আমি আশা করবো এদেশের মানুষ আরো বেশি দেশীয় পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী হবে এবং উৎসবে আয়োজনে আমাদের নিজস্ব শিল্পকে গর্ব করে সবার কাছে তুলে ধরবে।

মিরা-র যেকোনো পোশাক কিনতে ভিজিট করতে পারেন তাদের ফেসবুক পেজ www.facebook.com/mirabrandbd অথবা ইন্সটাগ্রাম আইডি www.instagram.com/mirabrandbd/-এ। অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনে শীঘ্রই মিরা-র প্রথম আউটলেট শুরু হতে যাচ্ছে ঢাকার গ্রিন রোডে।

;

ইস্টার উৎসব ডিম দিয়ে কেন পালিত হয়?



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খ্রিস্টানদের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ইস্টার। এই উৎসব মৃত্যুপুরীর মধ্য থেকে যিশু খ্রিস্টের পুনরুত্থান উদযাপন করে। গুড ফ্রাইডের পরে তৃতীয় রোববার পালিত হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে যিশু খ্রিস্টের পুনর্জন্ম হয়েছিল এবং তিনি আবার তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে বসবাস শুরু করেছিলেন, কিন্তু মাত্র ৪০ দিনের জন্য, তারপরে তিনি চিরতরে স্বর্গে চলে গিয়েছিলেন। এ কারণেই ইস্টারকে পুনরুত্থান দিবস বা পুনরুত্থান রোববারও বলা হয়।

ইস্টার উদযাপন

খ্রিস্টান সম্প্রদায় জুড়ে ইস্টারের ঐতিহ্য ব্যাপক। কেউ কেউ এই দিনে যিশুকে অভিনন্দন জানাতে ইস্টারের দিনে ডিম সাজিয়ে থাকেন। কেউ কেউ আবার ইস্টার প্যারেডগুলিতেও অংশগ্রহণ করে থাকেন। আসলে ইস্টারের বেশিরভাগই ছুটি থাকে। কিন্তু যেখানে ছুটি নেই সেখানে তিন ঘণ্টা কাজ বন্ধ থাকে কারণ যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল ৩টার সময়। এছাড়াও ইস্টার সানডে উদযাপনের জন্য খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষের রাতে গির্জায় জড়ো হয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে রাতভর যিশু খ্রিস্টের নাম এবং তাঁর দেওয়া বাণীকে স্মরণ করেন।

ইস্টারে ডিমের ব্যাপক ভূমিকা

ইস্টার উদযাপনের প্রধান প্রতীক হল ডিম। ইস্টার নবায়ন, উদযাপন, পুনরুজ্জীবন, পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের জন্য অগ্রগতির প্রতীক। এই দিনে ডিম সজ্জিত করে একে অপরকে উপহার দেওয়া হয় যা একটি শুভ চিহ্নর ইঙ্গিত দেয়। তাই রঙিন ডিম ছাড়া ইস্টারের মজা নেই। ঐতিহ্যগতভাবে এই ডিম বাবা-মায়েরা লুকিয়ে রাখেন এবং বাচ্চাদের খুঁজে বের করতে হয়। খ্রিস্টধর্মে, ডিম পুনরুত্থানের প্রতীক। এটি বসন্তের সঙ্গে জড়িত।

ইস্টারে ডিমের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে কারণ পাখি প্রথম যেভাবে তার নীড়ে ডিম দেয়। এর পরে, এটি থেকে ছানা বেরিয়ে আসে। এই কারণেই, ডিমকে একটি শুভ স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং ইস্টারের সময় এটি বিশেষ সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়। কোথাও পেইন্টিং করে, কোথাও অন্যভাবে সাজিয়ে একে অপরকে উপহার হিসেবেও তাই ডিম দেওয়া হয়। রাশিয়া এবং পোল্যান্ডের মতো দেশে, ইস্টার ডিম একটি নতুন জীবনের প্রতীক।

ইস্টারের তারিখ প্রতি বছর পরিবর্তিত হয়। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে ৩১ মার্চ পালিত হবে ইস্টার।

;

যেসব খাবার খেয়ে রোজা ভাঙাবেন



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
স্বাস্থ্যকর ইফতার

স্বাস্থ্যকর ইফতার

  • Font increase
  • Font Decrease

রমজান মাস মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র সময়। সংযমের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ।

টানা একমাস রোজা রাখার কারণে, শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করে। তাই সারাদিন রোজা থাকার পর এমন খাবার খাওয়া উচিত, যা সারাদিনের ক্লান্তি নিমেষেই দূর করে দিতে পারে। জেনে নিন, রোজা ভাঙার সময় যেসব খাবার বেশি উপকারী হতে পারে-

ফল: রোজা ভাঙার সময় এমন খাবার খাওয়া উচিত যা সহজেই হজম করা যাবে। এজন্য ফল একটি ভালো উপকরণ হতে পারে। সারাদিন নির্জলা উপবাসের কারণে শরীরে পানির ঘাটতিও হয়। তাই তরমুজ, আঙ্গুর, আপেল, নাশপাতির মতো ফল খেতে পারেন। এসব ফলে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। তবে টকজাতীয় ফল এড়িয়ে চলাই ভালো।  

ডিম: রোজা রাখার কারণে যে পেশিক্ষয় হয়, সেই ক্ষতিপূরণ করার জন্য ডিম খেতে পারেন। ডিম যেমন প্রোটিনের একটি উত্তম মাধ্য, তেমন খাওয়ার জন্য রান্না করতেও সময় কম লাগে। ডিম অমলেট, মামলেট বা সিদ্ধ যেভাবেই খেতে চান, প্রস্তুত করতে মাত্র কয়েক মিনিট ব্যয় করলেই হয়।

মাছ: মাছে প্রোটিন ছাড়া আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘ভিটামিন ডি’ থাকে। তাছাড়া বেশিরভাগ মাছেই পর্যাপ্ত চর্বি থাকে। খাবার তেলের থেকে মাছের থেকে পাওয়া তেল অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর হয়। সারাদিন রোজা রাখার পর প্রোটিনের উৎস হিসেবে, মাংসের চেয়ে মাছ উত্তম। বিশেষ করে রেডমিট (গরু, খাসি) খেয়ে একদমই রোজা ভাঙা উচিত নয়। কারণ, এসব হজম করা বেশ কঠিন।

প্রোবায়োটিকস: সারাদিন রোজা রাখার কারণে খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম হয়। তাই অন্ত্রে অস্বাভাবিকা দেখা দিতে পারে। হজমে সমস্যা ছাড়াও অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ইফতারে প্রোবায়োটিকস সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন। যেমন- দই, কম্বুচা ইত্যাদি।  

অ্যাভোকাডো: অ্যাভোকাডো একপ্রকার বিদেশী ফল। এটি অনেক নরম হয়, তাই সহজেই হজমযোগ্য। একটু খাওয়ার নারকেল তেল বা জলপাই তেলের সাথে এই ফল খাওয়া যেতে পারে।

সবজি: রোজা রেখে ফল এবং সবজি খাওয়া অত্যন্ত ভালো। বিশেষ করে ফুলকপি, ব্রকলির মতো ফল রোজার পর অধিক কার্যকরী হতে পারে।   

তথ্যসূত্র: ফেয়ারপ্রাইস

;