ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন গত ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ পরিদর্শক আরাফাত হোসেনকে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক আবু তাহের মিয়া আসামিকে আদালতে হাজির করে ৭ দিন রিমান্ডের আবেদন করেন।
শুনানি শেষে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগমের আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামিরপক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন চাইলে আদালত তা নাকচ করে দেন।
গত ১১ সেপ্টেম্বর হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ভুক্তভোগী মো. রবিউল সানি বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলার ১০ নং আসামি হলেন আরাফাত।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে রাজধানীর আফতাবনগর থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩ এর একটি দল।
রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, গত ৪ আগস্ট সকাল ১০টায় ডেইরিগেটের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শান্তিপূর্ণভাবে যোগদান করেন। বেলা তিনটায় আন্দোলনরতরা ডেইরিগেট হতে বাইপাইলের দিকে গেলে সন্ত্রাসী বাহিনী বাইপাইলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিতভাবে গুলি ছোড়ে। আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনে অবস্থান করার কারণে বাইপাইল জামে মসজিদের ছাদের ওপর থেকে বাদীর পেটে স্নাইপার দিয়ে পুলিশ ও সন্ত্রাসী বাহিনী গুলি করে।
বাদী সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তার পায়ে গুলি করে, তখন বাদী সাথে সাথে মাটিতে পড়ে যান। তখন বাদীর সাথে থাকা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বাদীকে ক্লিনিক নিয়ে যাওয়া হলে তারা বাদীকে গুলিবৃদ্ধ অবস্থায় দেখে ক্লিনিক ও গেইট লাগিয়ে দেয়। এরপর সেখান থেকে রিকশা করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে হাসপাতালে ডাক্তার নেই বলে তাড়িয়ে দেয়।
পরবর্তীতে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী সিহাব একটি বাসে করে রেসাডারল্যাবজোন হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন সেখানেও বাদীকে রাখে না। তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সিহাব বাদীর মাকে ফোন মারফত জানান তিনি গুলিবৃদ্ধ হয়েছে। তখন তাহার মা ৯৯৯ কল দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স
দিয়ে বাদীকে ঢাকার কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারা বাদীকে ৩০ মিনিট ওটিতে রেখে বলে বাদীকে বাঁচানো যাবে না।
এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে বাদীকে এক্স-রে একটি প্রেস ক্রিপশন হাতে দিয়ে তাহাকে চিকিৎসা না করে বাসায় চলে যেতে বলে এবং ডাক্তার বলেন এখানে নিরাপত্তা না। এখানে থাকলে পুলিশ নিয়ে মেরে ফেলবে।
তখন বাদীর মা ডাক্তারদের সাথে তর্ক করে হাসপাতালে ভর্তি করান। এরপর তাকে অবজারভেশন রুমে নেওয়া হয়৷ বাদীর পেটে স্নাইপারের একটি গুলি ডান পাশ দিয়ে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। বাদীর শরীরে পেটে ১টি ও উরুতে ২টি সহ মোট ৩টি গুলি লাগে।
গত ৫ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত চিকিৎসা নেন। গত ১৩ তারিখে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতাল থেকে রিলিজ করা হলে বাদী দ্রুত সুস্থ হবার জন্য আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে ভর্তি হন।
গত ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আরাফাত হোসেন। পরে আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ভ্যানে ওপর কয়েকটি মরদেহ তোলা হচ্ছে। রাস্তায় পড়ে থাকা মরদেগগুলো পুলিশ ভ্যানের ওপর তুলছে। ভিডিওতে থাকা দেয়াল, পোস্টার ও ঘটনাস্থল দেখে অনেকে জানান, এটি আশুলিয়া থানার সামনের ভিডিও। সেখানে এক পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়। পরে জানা যায়, তিনি হলেন ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালে। প্রায় দুই বছর আগে ঢাকা জেলার গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেন তিনি।