লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা ও গুলি চালিয়ে ছাত্র-জনতাকে আহত করার ঘটনায় ৪৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ মিজনুর রহিম ও মান্দারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন রুবেল পাটওয়ারীসহ ১৮৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাত ২৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাদীর আইনজীবী মো. হাসান বান্নাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে দুপুরে হাবিবুর রহমান ফাহিম নামে আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত এক ব্যক্তি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি অঞ্চল চন্দ্রগঞ্জ আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।
বাদীর আইনজীবী মো. হাসান বান্নাহ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ফাহিম বাদী হয়ে আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালতের বিচারক আবু ইউছুফ মামলাটি আমলে নিয়েছেন। তিনি মামলাটি এফআইআর দাখিলের জন্য চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী ফাহিম সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের গোপিয়ারখিল গ্রামের আবদুল হাকিমের ছেলে। ৪ আগস্ট সকালে সদরের মান্দারী বাজারে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এক অভিযুক্তের করা গুলি বাদীর বুকের বাম পাশে লাগে। পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার শরীর থেকে পিতলের তৈরি বুলেটটি বের করা হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে রয়েছেন চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু তালেব, দিঘলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন চৌধুরী জাবেদ, দিঘলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ মজিবুর রহমান, মান্দারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অহিদুজ্জামান বেগ বাবলু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সামছুদ্দিন সাজু, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য বদরুল আলম শ্যামল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন মুন্না, কমলনগর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আহছান উল্যাহ হিরণ, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উল্যাহসহ ১৮৫ জন। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয় ২০০-২৫০ জনকে।
এজাহার সূত্র জানায়, ৪ আগস্ট সকালে মান্দারী বাজার এলাকায় ছাত্রজনতা তাদের দাবির পক্ষে আন্দোলনে নামে। এসময় অভিযুক্ত মিজানুর রহমানের নির্দেশে ইউপি চেয়ারম্যান রুবেল পাটওয়ারী ও ছাত্রলীগ নেতা তালেবের নেতৃত্বে আন্দোলনকারী ছাত্রজনতার ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা সবাই আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল। মামলায় ২ নং আসামি রুবেল পাটওয়ারী রাইফেল দিয়ে বাদী ফাহিমের বুকের বাম পাশে গুলি করে। গুলিটি বুক দিয়ে প্রবেশ করে পিঠে গিয়ে বিদ্ধ হয়। পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পিতলের তৈরি গুলিটি বের করা হয়। ৩নং আসামি ছাত্রলীগ নেতা তালেব রাইফেল দিয়ে মামলার সাক্ষী মো. ইয়ামিনের পেটের ডান পাশে গুলি করে। এতে তার পেটে রক্তাক্ত জখম হয়। ৪ নং আসামি গিয়াস উদ্দিন পাটওয়ারী পেছন থেকে ইয়মিনের পিঠের বাম পাশে গুলি করে। ৫ নং আসামি ইয়াছিনের গুলিতে ৪ নং সাক্ষী মাহাদি হাসান অভির ডান চোখে লেগে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে। মামলায় অভিযুক্তদের ছোঁড়া ছররা গুলিতে ২ নং সাক্ষীর শিহাবুল ইসলামের পিঠে বিদ্ধ হয়। এছাড়া আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ৪০-৫০ জন ছাত্রজনতা অভিযুক্তদের গুলিতে ও হামলায় আহত হয়। পরে আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।