ছেলের খুনিকে ক্ষমা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সৌদি শায়েখ
ইসলাম
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার একটু আগে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে নিজ ছেলের হত্যাকারীকে ক্ষমা করলেন সৌদি আরবের এক বাবা।
ইসলামের বিধানে ‘দিয়ত’ (নিহত ব্যক্তির রক্তের বিনিময়স্বরূপ যে অর্থ তার (নিহতের) উত্তরাধিকারীদের দেওয়া হয়, তাকে ‘দিয়ত’ (রক্তপণ) বলা হয়।) নিয়ে হত্যাকারীকে ক্ষমার বিধান থাকলেও এই বাবা এ ধরনের কোনো অর্থ গ্রহণ করেননি। তিনি দয়াময় আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের আশায় ছেলের ঘাতককে এমনিই ক্ষমা করে দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
গালফ নিউজের খবরে বলা হয়েছে, মহানুভবতার পরিচয় দেওয়া এই বাবার নাম মোহাম্মদ বিন সাগাহ। তিনি সৌদি আরবের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চল আসিরের বেসার এলাকার বাসিন্দা।
সৌদি আরবে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। দণ্ড কার্যকরের সময় অনেক মানুষ উপস্থিত থাকেন। ছেলের হত্যাকারীর দণ্ড কার্যকরের দিন তিনি উপস্থিত মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, শুধুমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের আশায় আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রক্তের অর্থ হিসেবে এক রিয়ালও গ্রহণ করবো না।
বিজ্ঞাপন
তবে তার ছেলে কবে এবং কীভাবে হত্যার শিকার হয়েছিল সে ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। যেহেতু হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে, তাই সংবাদমাধ্যমে তার পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়নি।
ক্ষমা ঘোষণার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কালো বিশত পরিহিত মোহাম্মদ বিন সাগাহ স্থানীয় গণ্যমান্যদের উপস্থিতিতে ছেলের হত্যাকারীকে ক্ষমার কথা ঘোষণা করছেন। এ সময় উপস্থিত জনতা আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে এবং তার কল্যাণের জন্য সমস্বরে দোয়া করছে। গোত্রের নেতারা তার হাতে চুমো খাচ্ছে।
সৌদি আরবে সাম্প্রতিক সময়ে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেওয়ার অনেক ঘটনা শোনা গেছে। এ বছরই এক বাবা তার ছেলের হত্যাকারীকে দণ্ড কার্যকর করার একটু আগে ক্ষমা করে দেন। যদি তিনি ক্ষমা না করতেন তাহলে ওই ঘাতকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে যেত।
ইসলামে ক্ষমাকে একটি মহৎ গুণ হিসেবে ধরা হয়। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সব মুসলিমকে ক্ষমা প্রদর্শনের কথা বলেছেন। এমনকি যারা অমুসলিম তাদেরও ক্ষমা করে দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।
কারও দাঁত পড়ে গেলে সেখানে নতুনভাবে আর দাঁত না উঠা সম্ভাবনা থাকলে, নতুন দাঁত লাগানো যাবে। এমনকি সোনা বা রূপার দাঁতও স্থায়ীভাবে লাগানো জায়েজ।
হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে কোনো যুদ্ধে গিয়ে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই (রা.)-এর সামনের দাঁত পড়ে যায়। তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে সোনার দাঁত লাগানোর নির্দেশ দেন।’ -মুসনাদে বাযযার : ৩০১১
তিরমিজি শরিফের এক রেওয়ায়েত হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আরফাজা ইবনে আসআদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, জাহেলি যুগে কিলাবের যুদ্ধের দিন আমার নাক আক্রান্ত হয়েছিল। ফলে আমি রূপা দ্বারা বানানো নাক লাগাই। কিছুদিন পর তা দূর্গন্ধ ছড়াতে লাগলো। তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে সোনার নাক ব্যবহারের নির্দেশ দিলেন। -জামে তিরমিজি
এ হাদিসের ওপর ভিত্তি করে ফুকাহায়ে কেরাম সোনার তৈরি দাঁত ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এ বিধান নারী-পুরুষ সবার জন্যই। বর্তমানে যেসব পাথরের দাত ব্যবহার করা হয় শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনোটিই নাজায়েজ নয়।
দাঁতের সঙ্গে সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাসয়ালা হচ্ছে, অজু-গোসলের সময় কৃত্রিম দাঁত খুলে চামড়ায় পানি পৌঁছাতে হবে কিনা? এ ব্যাপারে ইসলামি স্কলাররা বলেন, কৃত্রিম দাঁত যদি ফিক্সড হয়, যা স্বাভাবিকভাবে খোলা যায় না, তা মূল দাঁতের হুকুমে। অর্থাৎ ফরজ, সুন্নত বা মোস্তাহাব কোনো প্রকারের অজু বা গোসলে সেই কৃত্রিম দাঁতে শুধু পানি দিয়ে ধৌত করলেই হবে।
উল্লেখ্য, স্থায়ীভাবে সোনা বা রুপার দাঁত লাগানো হলে মৃত্যুর পর তা খুলতে হবে না।
মসজিদের মিনারকে মুসলিম স্থাপত্য ও সংস্কৃতির বিশেষ অংশ মনে করা হয়। সে হিসেবে মসজিদের মিনারগুলো পৃথিবীজুড়ে বিস্ময়ের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ইসলামের আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে স্থাপত্যশিল্পের মেলবন্ধন ঘিরে তৈরি হয় এসব মিনার।
সৌন্দর্যের নিদর্শন হয়ে বিশ্বকে মুগ্ধ করে এগুলো। এ বিস্ময়কর নির্মাণকর্মগুলোর মধ্যে এক অন্যতম মসজিদের মিনার, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ স্থান পেয়েছে, তা হলো- ‘দ্য গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স’-এর মিনার।
আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অবস্থিত গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স। বিশ্বের সর্বোচ্চ মসজিদের মিনার নিয়ে গর্বিত আলজেরিয়া। ২০২০ সালে নির্মিত এই মসজিদের মিনারের উচ্চতা প্রায় ২৬৫ মিটার বা ৮৭০ ফুট। এটি আফ্রিকার বৃহত্তম মসজিদ ও একইসঙ্গে উচ্চতায় সারা বিশ্বের সব মসজিদের মিনারকে ছাড়িয়ে গেছে। এর উচ্চতা এতটাই বেশি যে এর চূড়া থেকে সরাসরি ভূমধ্যসাগরের দৃশ্য দেখা যায়।
গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্সের মিনারটি আধুনিক প্রযুক্তি এবং ইসলামিক ঐতিহ্যের মিশ্রণে নির্মিত। এর নির্মাণশৈলী এবং স্থাপত্যে আধুনিক আরব স্থাপত্যের ছোঁয়া থাকলেও এতে ঐতিহ্যবাহী ইসলামিক নকশার গভীরতা প্রতিফলিত হয়েছে। মিনারটি ৩৭তলা বিশিষ্ট এবং এর ওপরের তলায় একটি পর্যবেক্ষণ ডেক রয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। সেই সঙ্গে এই মসজিদের মিনারে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার এবং একটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে, যা এটিকে অন্যান্য মসজিদের মিনারের থেকে আলাদা করে তোলে।
গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় তা ১২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সমান। প্রকল্পটি চীনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (CSCEC) দ্বারা পরিচালিত হয়। ২০১২ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০১৯ সালে শেষ হয় এবং ২০২০ সালে মসজিদটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এই বিশাল মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি বিশাল লাইব্রেরি, ইসলামিক আর্টস মিউজিয়াম, গবেষণাকেন্দ্র এবং সম্মেলন হলও রয়েছে।
গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স মসজিদটি এক সঙ্গে প্রায় ১ লাখা ২০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। ধারণ ক্ষমতা হিসেবে এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। মসজিদ কমপ্লেক্সটি শুধুমাত্র ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, এটি একটি সামাজিক, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। মুসলিম বিশ্বজুড়ে এটি ঐক্য ও সম্প্রীতির একটি প্রতীক হিসেবে কাজ করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এই বিশাল মিনার দেখতে আসেন। পর্যটকরা মিনারের পর্যবেক্ষণ ডেক থেকে আলজিয়ার্স শহর ও আশেপাশের দৃশ্য উপভোগ করে থাকেন। বিশেষ করে রাতে আলোকসজ্জিত এই মিনার পর্যটকদের মনে আলাদা দাগ কাটে।
বিশ্বের সর্বোচ্চ মসজিদের মিনার হিসেবে আলজিয়ার্সের এই মিনারটি শুধু স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শনই নয়, এটি মুসলিম ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার এক অপূর্ব মিলন। আলজিয়ার্স মসজিদের এই মিনার বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য গর্বের প্রতীক।
২০২১ সালে নান্দনিক স্থাপনা হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল আর্কিটেকচার অ্যাওয়ার্ড খেতাব পায় মসজিদটি। ‘শিকাগো এথেনিয়াম মিউজিয়াম অব আর্কিটেকচার অ্যান্ড ডিজাইন এবং ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর আর্কিটেকচার ডিজাইন’ নামে দু’টি প্রতিষ্ঠান মসজিদটিকে ২০২১ সালের জন্য সবচেয়ে সুন্দর স্থাপনার স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ও মর্যাদাপূর্ণ স্থাপত্য পুরস্কার।
ফিলিস্তিন ও লেবাননে ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের বিষয়ে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) শীর্ষ সম্মেলন আহবান করেছে সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট নিরসন এবং আঞ্চলিক সংকট দূর করার লক্ষ্যে এই সম্মেলন আহবান করা হয়েছে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) রিয়াদে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হবে। সম্মেলনের অংশ নিতে জর্ডান, মিশর, কাতার, তুর্কিয়ে, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, লেবানন ও ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিরা সৌদি আরব পৌঁছেছেন।
সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উদদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন রিয়াদ পৌঁছেছেন।
শীর্ষ এই সম্মেলন উপলক্ষে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য হারুন নাসের আল দিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘ইসরায়েলি দখলদার সরকারের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ আর হত্যাকাণ্ড বন্ধে মুসলিম দেশগুলোর দায়িত্ব পালনের সময় এসেছে।’
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করার পর ১১ নভেম্বর ২০২৩ অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনেরই একটি ফলোআপ অনুষ্ঠান এটি।
সৌদি আরবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ধারাবাহিক ‘অপরাধ ও সহিংসতার’ নিন্দা করেন। একইভাবে লেবাননে হামলা করারও নিন্দা করে বলা হয় এতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এর ফলে আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।
যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু। অন্যদিকে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে দুই হাজার সাত শর বেশি মানুষ নিহত এবং সাড়ে ১২ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের অবিরাম হামলা মধ্যপ্রাচ্যকে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে- এমন আশঙ্কা তৈরি হওয়ার পর ইসরায়েল যুদ্ধ ক্রমেই প্রসারিত করে চলেছে।
নিজে অসুস্থ, তার পরও পথচলা থেমে নেই। অসুস্থ ভাইসহ সংসারে রয়েছে বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তান। পরিচালনা করেন একটি মাদরাসা। উপার্জনের জন্য ব্যবসা করেন, কিন্তু সেটা এখন অনিয়মিত। কারণ, বছরের প্রায় সময়ই তাকে ছুটে বেড়াতে হয় দেশের নানাপ্রান্তে। কয়েক ধাপের বন্যা শেষ হতে না হতেই শীত আসছে, শুরু করেছেন শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি। শুধু মৌসুমি দুর্যোগ নয় অগ্নিকাণ্ড ও নৌকাডুবিসহ নানাবিধ দুর্যোগেও ছুটে চলেন মমতার পরশ নিয়ে, পাশে দাঁড়ান অসহায়ের। এরই ফাঁকে চলে নিজের চিকিৎসা, তাও অনিয়মিত। তিনি মাওলানা গাজী ইয়াকুব।
মানবতার বন্ধু, মানবতার ফেরিওয়ালা গাজী ইয়াকুব প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘তাকওয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।’ প্রতিষ্ঠানের স্লোগানটিও বেশ চমৎকার, ‘মানবতার কল্যাণে আমরা।’ আসলেই তিনি, তার প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। যার প্রমাণ বিভিন্ন দুর্যোগে আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি।
এই তো কয়েকদিন আগে, নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে গরিব, নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্রয়মূল্যে সবজি বিক্রি করলেন। মানবসেবায় মাওলানা গাজী ইয়াকুব ও তার সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকওয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের এমন উদ্ভাবনী চিন্তা দেশজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে। অনেক স্থানে তার অনুকরণে ক্রয়মূল্যে সবজি বিক্রি শুরু হয়।
তাকওয়া ফাউন্ডেশন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়। করোনায় সাড়ে চার হাজার লাশ দাফন করেছে তাকওয়া ফাউন্ডেশন। ২০২৪ সালের বন্যায় ৪০ হাজার মানুষকে সহায়তা দিয়েছে। দেশের নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে তারা।
তিনি প্রচারবিমুখ একজন সাদা মনের মানুষ, সমাজসেবক পরোপকারী, গরিবের বন্ধু ও উদারমনা। গাজী ইয়াকুব বন্ধু হিসেবেও বেশ চমৎকার। আমরা আড্ডায় যখন রাজনীতি কিংবা সম-সাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলি, তখন তিনি বিভোর থাকেন অন্য চিন্তায়। তার চিন্তার জগৎজুড়ে থাকে গরিব দুঃখী অসহায় মানুষের কথা, কাউকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার চিন্তা, কোনো প্রতিবন্ধীকে হুইল চেয়ার কিনে দেওয়ার চেষ্টা, অভাবীর বাড়িতে খাদ্য পৌঁছাতে দৌড়ঝাঁপসহ কাপড় কিনে দেওয়া, নগদ অর্থ সহযোগিতা অথবা গরিব কোনো মেয়ের বিয়েতে সাহায্য করা।
সত্যি কথা বলতে কী, পৃথিবীতে মানবসেবায় নিজেকে পুরোপুরি বিলিয়ে দেওয়া মানুষের সংখ্যা এখন বলা যায় হাতেগোনা। অথচ পৃথিবীর সব ধর্মেই মানবসেবার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। সে অনুভূতিকে ধারণ ও লালন করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান গাজী ইয়াকুব। যেখানেই হতদরিদ্র, বঞ্চিত ও অসহায় মানুষ, সেখানেই কাজ করছে গাজী ইয়াকুব ও প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে দুর্যোগে অসহায় মানুষের সেবায় সেচ্ছাসেবী এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
কখনও ছুটে যাচ্ছে বন্যাকবলিত অসহায় মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে, কখনও পরিচালনা করছে শীতবস্ত্র বিতরণ, কখনো ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে তুলে দিচ্ছে একমুঠো খাবার, আবার কখনও নগদ অর্থ দিয়েও বাড়িয়ে দিচ্ছে সাহায্যের হাত।
প্রতিষ্ঠানটির অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, নিজস্ব কোনো অফিস, পরিবহন কিংবা উল্লেখযোগ্য লোকবল কিংবা আসবাবপত্র নেই। এখানে যারা কাজ করেন, সবাই স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে কাজ করেন। তারা বেতনভুক্ত নন, তারা প্রতিদান প্রত্যাশা করেন একমাত্র আল্লাহতায়ালার কাছে। তবে কাজের সুবিধার্থে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনগুলোর পূরণ হওয়া দরকার বলে মনে করি। যেন গাজী ইয়াকুব ও তার টিম আরও নিরলসভাবে মানবসেবা করতে পারে।
ছাত্র জীবন থেকে গাজী ইয়াকুব গরিব, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মানুষের জন্য কাজ করার এ মানসিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতাই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে তাকওয়া ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার।
একদিন জানতে চেয়েছিলাম তার মানবসেবার অভিযাত্রা প্রসঙ্গে, তখন গাজী ইয়াকুব বলেছিলেন, ‘শুরুর কথা বলতে গেলে আমার ছাত্র জীবনের কথা বলতে হবে। এর পর যখন রাজনীতি করতাম, তখন থেকেই মানুষের জন্য নিজের ভেতর ভালোবাসা কাজ করতো। একটি বিষয় আমি সবসময় লক্ষ্য করেছি, আমরা নিজেদের জন্য সবকিছু করছি। অথচ আমাদের প্রতিবেশী ঠিকমতো তিনবেলা খেতেও পায় না। মানুষের এ ধরনের মনমানসিকতায় আমি কষ্ট পাই। মানুষের প্রতি মানুষের যে সামাজিক দায়বদ্ধতা। ছোটবেলা থেকেই আমার ভেতরে তা কাজ করতো। আর সেই চিন্তা থেকেই এ কাজে জড়িয়ে যাই।
বিভিন্ন দুর্যোগে, বিপদে গাজী ইয়াকুবের ছুটে চলা, পাশে দাঁড়ানোর দৃশ্য নানা কারণে আমাদের আশাবাদী করে তোলে। একজন আলেম তীব্র গরমের সময় রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে পথচারীদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি কিংবা শরবতের ব্যবস্থা করছেন, বুক সমান পানি পেরিয়ে ত্রাণের প্যাকেট নিয়ে ছুটছেন- এসব দৃশ্য শান্তিদায়কও বটে। এমন কাজ করতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ ভালো কাজ করা সবার ভাগ্যে জোটে না।
অনেকের কোটি কোটি টাকা আছে কিন্তু মানবসেবায় এগিয়ে আসার মন-মানসিকতা ও সুযোগ থাকে না। যারা এমন কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের ভাগ্যবান বলাই যায়। সে অর্থে গাজী ইয়াকুব একজন ভাগ্যবান মানুষ। দোয়া করি, তার কাজ আরও বিস্তৃত হোক; তার স্বপ্নগুলোর আলোর মুখ দেখুক। আমাদের পাষাণ সমাজ গাজী ইয়াকুবের দরদ ও কর্মতৎপরতা দেখে শিখুক।