বাংলাদেশের প্রান্ত হতে সালাম জানাই হে রাসূল (সা.)



আবুল খায়ের মোহাম্মদ, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বাংলাদেশের প্রান্ত হতে সালাম জানাই হে রাসূল (সা.)

বাংলাদেশের প্রান্ত হতে সালাম জানাই হে রাসূল (সা.)

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ থেকে ১৪৪৫ বছর আগে শান্তির দূত মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কল্যাণময় আবির্ভাব হয়েছিল এই পৃথিবীতে। তাঁর জন্ম ও ওফাতের স্মৃতি বিজড়িত রবিউল আউয়াল মাস। এই মাসের ১২ তারিখ তিনি জন্মগ্রহণ করেন, আবার তাঁর মোবারক জীবনের অবসানও হয় ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে। তিনি আল্লাহতায়ালার প্রেরিত সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল।

প্রথম মানব হজরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে শুরু হওয়া নবুওয়তের সিলসিলা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে দিয়ে পূর্ণতা পেয়েছে, পূর্ণতা পেয়েছে দ্বীন ইসলামও। পরিপূর্ণ হয়েছে আল্লাহতায়ালার হুকুম-আহকাম মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার দাওয়াতি মিশন।

এখন সে মিশনকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য মানুষের সামনে রয়েছে দু’টি উপকরণ। একটি আল্লাহর কিতাব কোরআন অন্যটি রাসূল (সা.)-এর হাদিস তথা সুন্নাহ।

মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক নাজাতের মাধ্যম হলো- কোরআন ও সুন্নাহ।
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন ও তার শিক্ষার বদৌলতে বদলে যায় তৎকালীন পৃথিবীর নানাবিধ অনাচার ও কুপ্রথা।

মানুষ সন্ধান পায় এক আল্লাহর। ফলে আইয়ামে জাহেলিয়াতের ঘুমন্ত হৃদয়গুলো জেগে উঠে ঈমানের উষ্ণতায়।
তৎপর ও উদ্যমী মানবকূল দলে দলে বেরিয়ে পরে সিরাতুল মুস্তাকিমের অন্বেষণে।
তারপর বিরান ও অনাবাদ হৃদয়গুলোকে তিনি আবাদ করলেন আল্লাহতায়ালার প্রেমের মশাল জ্বেলে। বইয়ে দিলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও হিকমত-মারেফতের হাজারও সালসাবিল। নির্যাতিত মানুষের হৃদয়ে স্থাপন করলেন জুলুম-নিপীড়ন, অন্যায়-অবিচার এবং দুশমনি ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদদীপ্ত এক প্রচণ্ড বিদ্রোহ ও আন্দোলন। নির্যাতিত, অবমানিত ও লাঞ্ছিত মানবতাকে শিক্ষা দিলেন সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব এবং উপেক্ষিত, বিতাড়িত ও অসহায় মানবগোষ্ঠীকে টেনে নিলেন সেই বুকে, যে বুকে স্থান হয় কেবল প্রেম-মায়া-মমতা-ভালোবাসা-ত্যাগ-সৌহার্দ্য ও কল্যাণের।

এক সুমহান বৈপ্লবিক পরিবর্তন সমাজে ও মানুষের মননে সম্ভবপর করেছিলেন শান্তির দূত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি সূচনা করেছিলেন গৌরবদীপ্ত মানবিকতার এক নতুন যুগের। আল্লাহতায়ালার অসীম রহমতে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নতুন যুগের আহ্বান স্থান-কাল-পাত্রের সীমাবদ্ধ গণ্ডিকে অতিক্রম করে বিশ্বজনীন হয়ে উঠেছিল।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন, ‘আমি তো তোমাকে জগতসমূহের জন্য কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি। ’-সূরা আম্বিয়া: ১০৭

বস্তুত আল্লাহতায়ালার অপার রহমতের নিদর্শন নিয়ে আগমন ঘটে শান্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর। তিনি সর্বযুগের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী এবং রাসূল। তিনি অসাধারণ গুণাবলীর অধিকারী। তিনি শুধু একজন ধর্ম প্রবর্তকই নন, মানব সমাজের জরাজীর্ণ ও ঘুণেধরা কাঠামোর সফল সংস্কার ও বৈপ্লবিক পরিবর্তনকারী। গোটা বিশ্বে বর্তমানে বিরাজমান অশান্তি, নৈরাজ্য, হানাহানি, সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলার অবসানে শান্তির দূত নবী মুহাম্মদ (সা.) প্রবর্তিত আদর্শ ও শিক্ষা প্রকৃতভাবে পালন ও গ্রহণই মুক্তির একমাত্র উপায়। মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি, কল্যাণ আর নাজাতও নিহিত রয়েছে নবী করিম (সা.)-এর সীরাত ও সুরতের মধ্যে, তাঁর সুন্নাহ ও আহলে বাইতের মাঝে।

প্রকৃতপক্ষে বর্তমান সময় ও আগামী যুগ সম্পূর্ণরূপে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাব, তাঁর ব্যাপকভিত্তিক, সার্বজনীন ও চিরন্তন দাওয়াত, তাঁর মানবতাবাদী কল্যাণকামী চেষ্টা-সাধনা-ত্যাগ-তিতিক্ষার কাছে ভীষণভাবে ঋণী। তিনি নাঙা তলোয়ারের নিচ থেকে বিপন্ন মানবতাকে উদ্ধার করেছেন। অতঃপর মানবতার হাতে তুলে দিয়েছেন এক নতুন উপহার। যা মানবতাকে দান করেছে এক নতুন জীবন, নতুন জীবনবোধ, নতুন উদ্যম, নতুন শক্তি, নতুন প্রতীতী, নতুন সম্মান এবং নতুন করে পথচলার পাথেয়। আর সেই উপহারের বদৌলতে মানবতা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-সভ্যতা-কৃষ্টি-জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিক্ষা-প্রযুক্তি সর্বোপরি ন্যায়নিষ্ঠা, আধ্যাত্মিকতা এবং চরিত্র ও সমাজ দর্শনের মাপকাঠিতে নতুন করে মানুষ গড়ার; সমাজ গড়ার কত হাজার মনজিল অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে।

শান্তির দূত নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর দিক-নির্দেশনা, সংশোধন ও সংস্কার প্রচেষ্টা, প্রণোদনা এবং পদক্ষেপের সফল পরিসমাপ্তিতে পৃথিবী ভরে উঠেছিল সোনালী মানুষে। পৃথিবীতে শুরু হয়েছিল স্বর্ণযুগ। আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে তাঁর মর্যাদা ও মাহাত্ম্য ঘোষণা করে বলেন, ‘আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে; যারা আল্লাহর সাক্ষাৎ ও কিয়ামত দিবসের আশা রাখে এবং যারা আল্লাহকে অনেক স্মরণ করে। ’

আল্লাহতায়ালা নবী মুহাম্মদ (সা.)কে রিসালতের সম্পদ দ্বারা ধন্য করেছেন। তাঁকে আপন মাহবুব বানিয়েছেন এবং উত্তম আদর্শ ও মনোনয়নে মনোনীত করেছেন। তিনি বিলাসী ও আরাম-আয়েশের জীবন কেবল নিজের জন্যই অপছন্দ করতেন না, বরং তাঁর পরিবারের জন্যও এর পক্ষপাতী ছিলেন না। তিনি দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! মুহাম্মদের পরিবারবর্গের যতটুকু প্রয়োজন কেবল ততটুকু রিজিক দিও। ’

হাদিস থেকে জানা যায়, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘শপথ সেই সত্তার, যার হাতে আবু হুরায়রার জীবন। আল্লাহর নবী ও তাঁর পরিবারবর্গ কখনও উপর্যুপরি তিন দিন গমের রুটি পেট ভরে খেতে পারেননি আর এ অবস্থায় তাঁরা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে গেছেন। ’

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মক্কা বিজয় করেন এবং শেষ হজ আদায় করেন, তখন তার সামনে ছিল মুসলমানদের জনসমুদ্র, সমগ্র আরব ভূখণ্ড ছিল তাঁর পদানত, অথচ তাঁর নিজের অবস্থা ছিল একজন দরিদ্রের ন্যায়; তাঁর গায়ে ছিল একটি মাত্র চাদর; যার মূল্য মাত্র চার দিরহামের বেশি ছিল না। তথাপি উজ্জ্বলতম অনুসরণীয় আদর্শের মাধ্যমে শান্তির দূত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ব মানবতার মুক্তির জন্য এক অনন্য আলোকবর্তিকা। সকল ধরনের শোষণ-নিপীড়ন, জুলুম-অত্যাচার, অজ্ঞানতা-অন্ধকার বিরুদ্ধে জ্ঞান-শান্তি-আলোর অনিঃশেষ ঝর্ণাধারা তিনি। তিনি মানবতার মুক্তির মহান দূত, মহান শিক্ষক; বিশ্ব জাহানের জন্য রহমতস্বরূপ। তাঁর মিশন, তাঁর কথা, তাঁর কর্ম- যা কোরআন- হাদিসের মাধ্যমে আমরা আজও অনুপ্রেরণার উৎসরূপে বুকে জড়িয়ে ধরে পেতে পারি দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ ও মুক্তি। সমগ্র বিশ্বকে করতে পারি সকল অনাচার-হানাহানি থেকে মুক্ত এক শান্তির বাগান। তাঁর প্রতি আমাদের অগণন দরুদ ও সালাম:

"হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সা.) এবং তাঁর বংশধরদের ওপর এই রূপ রহমত নাজিল করো, যেমনটি করেছিলে ইব্রাহিম ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সা.) এবং তার বংশধরদের ওপর বরকত নাজিল করো, যেমন বরকত নাজিল করেছিলে ইব্রাহিম ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়।"

   

গাজা বিষয়ে আমেরিকান মুসলিমদের নতুন কর্মসূচি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
গাজা বিষয়ে আমেরিকান মুসলিমদের নতুন কর্মসূচি, ছবি : সংগৃহীত

গাজা বিষয়ে আমেরিকান মুসলিমদের নতুন কর্মসূচি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ফিলিস্তিনের গাজা ইস্যুতে বদলে যাচ্ছে মার্কিন রাজনীতির গতিপথ। ১৬ হাজারের মতো ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পরও ইসরায়েলকে অকুণ্ঠ সমর্থন করায় আমেরিকান মুসলিমদের ভোট হারাতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক দল। ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের ৯ রাজ্যের মুসলিম নেতারা।

শনিবার (২ ডিসেম্বর) মিশিগানের ডিয়ারবোর্নে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সদ্য গঠিত জাতীয় জোট এব্যান্ডন বাইডেনের প্রধান জয়লানি হুসাইন।

নতুন এই জোটে রয়েছে মিশিগান, মিনেসোটা, অ্যারিজোনা, উইসকনসিন, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা ও পেনসিলভানিয়া রাজ্যের মুসলিম নেতারা। এখানে সবচেয়ে বেশি আরব আমেরিকান মুসলিমদের বসবাস রয়েছে এবং ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই রাজ্যগুলোর ভোটের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস মিনেসোটার নির্বাহী পরিচালক ও সদ্য গঠিত জাতীয় জোট এব্যান্ডন বাইডেনের প্রধান জয়লানি হুসাইন বলেন, ‘আমরা আজ ঘোষণা করছি, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ২০২৪ সালের নির্বাচনে হেরে গেছেন। হ্যাশট্যাগ এব্যান্ডন বাইডেন ২০২৪ প্রচারাভিযান আসন্ন নির্বাচনে বাইডেনের পরাজয় নিশ্চিত করবে। কারণ তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে এবং নিরপরাধ ব্যক্তিদের রক্ষা করতে অনাগ্রহী।’

আরব আমেরিকান ইনস্টিটিউটের (এএআই) তথ্য অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক ৩.৪৫ মিলিয়ন আমেরিকান মুসলিম ঐতিহ্যগতভাবে জাতীয় নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন করে আসছে। তবে গত অক্টোবরে এএআই পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, আরব আমেরিকান ভোটারদের মধ্যে বাইডেনের প্রতি সমর্থন ৪২ শতাংশ কমেছে। মূলত গাজায় ইসরায়েলের হামলা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাইডেনের প্রতি মুসলিম সমর্থন কমতে শুরু করে।

জরিপে আরব আমেরিকানদের মাত্র ১৭ শতাংশ নির্বাচনে বাইডেনের পক্ষে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানায়। অথচ ২০২০ সালে বাইডেনের পক্ষে তাদের ৫৯ শতাংশ সমর্থনের কথা জানিয়েছিল। আরব আমেরিকান ইনস্টিটিউটের ২৬ বছরের সমীক্ষার ইতিহাসে এবারই প্রথম আরব আমেরিকান ভোটাররা ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে এত কম সমর্থন দিয়েছে।

;

ভূমিকম্প থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি



হেদায়াতুল্লাহ বিন হাবিব, অতিথি লেখক, ইসলাম
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত একটি এলাকা, ছবি : সংগৃহীত

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত একটি এলাকা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মানুষ যখন সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহতায়ালাকে ভুলে ইবাদত-বন্দেগি থেকে দূরে সরে যায় এবং বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হয়- তখন আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে কোনো বিপর্যয় বা বালা-মসিবত সৃষ্টি করেন। এর মাধ্যমে তিনি বান্দাদের সতর্ক করেন, যাতে তারা অন্যায়-অনাচার থেকে ফিরে আসে, তওবা করে; ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করে। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণেই জলেস্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। আর তা এ কারণে যে, আল্লাহতায়ালা বান্দাকে তার কিছু কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করান, যাতে তারা (তওবা করে) ফিরে আসে।’ -সুরা আর রূম : ৪১

অন্য এক আয়াতে তিনি বলেন, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই নিদর্শনসমূহ পাঠাই।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ৫৯

তেমনি একটি বিপর্যয় হলো- ভূমিকম্প। এটি আল্লাহতায়ালার অসীম শক্তিমত্তার একটি প্রমাণ। অতীত যুগে এর মাধ্যমে তিনি অনেক অবাধ্য সম্প্রদায়কে সমূলে বিনাশ করেছেন। কেয়ামত দিবসেও প্রচণ্ড এক ভূমিকম্পের মাধ্যমেই তিনি দুনিয়াকে ধ্বংস করবেন। এ সম্পর্কে কোরআন মাজিদে ‘যিলযাল’ (কম্পন) নামে স্বতন্ত্র একটি সুরাও নাজিল করেছেন।

অন্য এক আয়াতে আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের ওপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম।’ -সুরা আনআম : ৬৫

আরেক আয়াতে আল্লাহতায়ালা নাফরমান বান্দাদের ভয় দেখিয়ে বলেন, ‘তোমরা কি তোমাদেরকে নিরাপদ মনে করে নিয়েছ যে, যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদেরকে জমিনে বিধ্বস্ত করে দেবেন না, যখন তা হঠাৎ থর থর করে কাঁপতে থাকবে?’ -সুরা মুলক : ১৬

ভূমিকম্প সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এ উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের মুখোমুখি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, কখন হবে সেটা হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, যখন গায়িকা এবং বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে এবং মদপানের সয়লাব হবে।’ -জামে তিরমিজি : ২২১২

অন্য এক হাদিস থেকে জানা যায়, ভূমিকম্প হলো- কেয়ামতের একটি আলামত। কেয়ামতের পূর্বে অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে। -সহিহ বোখারি : ১০৩৬

এ প্রসঙ্গে সতর্ক করে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে, কিন্তু তা আত্মসাৎ করা হবে, জাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে, মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল হবে, সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তি সমাজের শাসকরূপে আবির্ভূত হবে- সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো রক্তিম বর্ণের ঝড়ের, ভূকম্পনের, ভূমিধ্বসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন), পাথর বৃষ্টির এবং সুতো ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনের জন্য।’ -জামে তিরমিজি : ১৪৪৭

ভূমিকম্প যেহেতু আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সতর্কবার্তা, তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে। তওবা করে সব ধরনের গোনাহের কাজ ছেড়ে দিতে হবে। বেশি বেশি দোয়া-ইস্তেগফারের (ক্ষমাপ্রার্থনার) পাশাপাশি ইবাদত-বন্দেগিতে বিশেষ মনোনিবেশ করতে হবে।

ইসলামি স্কলাররা বলেন, ভূমিকম্পের সময় বেশি বেশি ‘লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন’ পড়া। এতে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই দোয়ার বরকতেই আল্লাহতায়ালা হজরত ইউনুস (আ.) কে মাছের পেট থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন।

এছাড়া ভূমিকম্পের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে বাঁচতে বেশি বেশি দান-সদকা করা। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘সদকা বিপদ-আপদ দূর করে।’

ভূমিকম্প হলে হজরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) তার গভর্নরদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে দান-সদকা করার প্রতি জোর তাকিদ দিতেন।

ভূমিকম্প যেহেতু একটি আজাব, তাই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছেই আমাদের ফিরে যেতে। তিনি ছাড়া কেউ আমাদের রক্ষা করতে পারবেন না। আল্লাহতায়ালা সবাইকে আমল করার তওফিক দান করুন। ভূমিকম্পসহ সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

;

মুচকি হাসিও ইবাদত



সাকী মাহবুব, অতিথি লেখক, ইসলাম
অর্থ : তোমার ভাইয়ের (সাক্ষাতে) মুচকি হাসাও একটি সদকা

অর্থ : তোমার ভাইয়ের (সাক্ষাতে) মুচকি হাসাও একটি সদকা

  • Font increase
  • Font Decrease

হাসি সৌন্দর্যের প্রতীক। হাসিমুখে কথা বললে শত্রুও বরফের মতো গলে যায়। একে অপরের থেকে দূর হয়ে যায় হিংসা ও বিভেদের চওড়া দেয়াল। হৃদয় থেকে দূর হয় অহংকার ও আত্নগরিমা। হাসির মাধ্যমে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। একটুখানি মুচকি হাসি দুজনের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে দিতে যোগ করতে পারে নতুন মাত্রা। তাছাড়া এভাবে কথা বলা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। তাই পরিচিত-অপরিচিত সবার সঙ্গে সদা হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা উত্তম।

একজন মুসলিম হিসেবে অন্য ভাইয়ের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ কেমন হওয়া উচিৎ, তা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিখিয়ে গেছেন। পাশাপাশি অপর ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।

এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজ সদকা। আর গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হলো- অন্য ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা।’ -জামে তিরমিজি

আরেক হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, তোমার ভাইয়ের মুখে (সাক্ষাতে) মুচকি হাসি নিয়ে আসাও একটি সদকা। হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমার হাসোজ্জ্বল মুখ তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সদকাস্বরুপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরুপ। স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরুপ। পথ থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সদকাস্বরুপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরুপ। -জামে তিরমিজি

কারও সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করলে সে খুশি হয়। মুখ গোমড়া করে রাখালে মনে সন্দেহের দানা বাঁধে। তাই সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বলা ও আনন্দ দেওয়ার বিষয়টি আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেন। নবী কারিম (সা.) সবসময় মুচকি হাসতেন। মুচকি হাসি ছিল তার চিরাচরিত ভূষণ। সুতরাং আমরা কথা ও কাজে সবসময় মুচকি হেসে কথা বলব। তাহলে আমাদের পরস্পরে সৃষ্টি হবে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির অমোঘ বন্ধন। সেই সঙ্গে পালন করা হবে রাসুলের সুন্নত। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।

;

৮ সপ্তাহ ধরে মসজিদে আকসায় প্রবেশে বিধি-নিষেধ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আল আকসা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় করছেন অল্প কয়েকজন মুসল্লি

আল আকসা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় করছেন অল্প কয়েকজন মুসল্লি

  • Font increase
  • Font Decrease

ফিলিস্তিনের পবিত্র মসজিদুল আকসায় জুমার নামাজ পড়তে মুসল্লিদের প্রবেশে বিধি-নিষেধ অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েলি পুলিশ। গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর পবিত্র এ মসজিদে প্রবেশে আগের চেয়ে কঠোরতা বাড়িয়েছে দখলদার ইসরায়েল। এ নিয়ে গত আট জুমার নামাজে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ ও এর প্রাঙ্গণ প্রায় মুসল্লিশূন্য ছিল।

সর্বশেষ গত ১ ডিসেম্বর এ মসজিদে মাত্র সাড়ে তিন হাজার মুসল্লি জুমার নামাজ পড়েছেন। তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি এ তথ্য জানিয়েছে।

জেরুজালেমের ইসলামিক ওয়াকফ বিভাগ জানিয়েছে, ‘সাধারণত পবিত্র মসজিদুল আকসায় ৫০ হাজারের বেশি মুসল্লি জুমার নামাজ পড়তে আসেন। কিন্তু আজ মাত্র সাড়ে তিন হাজার লোক এখানে জুমার নামাজ পড়েছেন। গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মসজিদে প্রবেশে শক্ত অবস্থানে রয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। আর জুমার দিন তাদের বিধি-নিষেধ আরো কঠোরভাবে পালন করা হয়।’

ওয়াকফ বিভাগ আরো জানায়, ‘পবিত্র আকসা মসজিদ ও আশপাশের চত্বর প্রায় মুসল্লিশূন্য থাকলেও সেখানে মুসল্লিদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আকসা প্রাঙ্গণে শুধু ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মুসল্লিদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গত আট জুমায় ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বেশির ভাগ মুসল্লিদের মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয়।’

মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে না পেরে বিভিন্ন রাস্তায় নামাজ পড়তে বাধ্য হন বেশির ভাগ মুসল্লি। জেরুজালেমের অলিগলিতে মোতায়েন করা ইসরায়েলি পুলিশ কম বয়সীদের মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয় এবং অনেককে গ্রেপ্তার করে। এমনকি ওয়াদি আল-জোজ এলাকায় মুসল্লিদের ওপর ইসরায়েলি পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে হামলা চালায়।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকে ৪৮ দিন ধরে গাজা উপত্যকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে প্রায় ১৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়; যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু ও নারী।

এরপর গত ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি গত শুক্রবার শেষ হয়। এ সময়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বন্দি ও জিম্মি বিনিময় হয়।

;