শরিয়া ব্যাংকিং বিভাগ প্রতিষ্ঠার দাবিতে আইনি নোটিশ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন

বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন

  • Font increase
  • Font Decrease

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে শরিয়া ব্যাংকিং বিভাগ প্রতিষ্ঠার দাবিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশে শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।

নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ‘দ্য বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২’ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ওই আইনের ধারা ৭এ (এফ) অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ হলো- সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করা। বাংলাদেশে দুই ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। এর একটি হলো- সুদভিত্তিক কনভেনশনাল ব্যাংকিং, আর অপরটি ইসলামি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং। বাংলাদেশে ১০টি পূর্ণাঙ্গ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক রয়েছে। এ ছাড়া ১১টি প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২৩টি ইসলামি ব্যাংকিং শাখা এবং ১৩টি প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৫১১টি ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো শরিয়াভিত্তিক আর্থিক পরিষেবা দিয়ে থাকে।

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ ও ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞদের বিস্তর অভিযোগ আছে, বাংলাদেশে প্রচলিত ইসলামি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে শরিয়া অনুসরণ করছে না। তারা মূলত বাংলাদেশের আপামর মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে ব্যবসা করছে। এগুলোর তদারকির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো শরিয়া ব্যাংকিং বিভাগ নেই। এ ছাড়া শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রোডাক্টগুলো যাচাই-বাছাই করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো শরিয়া বোর্ডও নেই। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক এদেশের শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও তদারকিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক তার আইনি কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছে।

নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে পৃথক শরিয়া ব্যাংকিং বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নিজস্ব শরিয়া বোর্ড গঠন করতে হবে। অন্যথায় এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে বাংলাদেশ সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করা হবে।

   

ইসলামের দৃষ্টিকোণে ট্রান্সজেন্ডার



মীযান মুহাম্মদ হাসান, অতিথি লেখক, ইসলাম
তারা কখনো কখনো নিজেদের ট্রান্স হিসেবেও পরিচয় করান, ছবি : সংগৃহীত

তারা কখনো কখনো নিজেদের ট্রান্স হিসেবেও পরিচয় করান, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সহজে বলা যায়, ট্রান্সজেন্ডার মানে হলো- পুরুষ থেকে নারী হয়ে ওঠা। কিংবা কোনো পুরুষ নিজেকে অপারেশনের মাধ্যমে নারী হিসেবে দাবি করা। তারা কখনো কখনো নিজেদের ট্রান্স হিসেবেও পরিচয় করান।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মতবাদ, চেতনা ও ফেতনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। যেসবের লক্ষ থাকে- কখনো গোটা মানবজাতিকে গ্রাস করা, কখনো সামগ্রিকভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতিগ্রস্ত করা। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। নানাবিধ ফেতনা ও বিপর্যয় উস্কে দেওয়া। সামাজিক স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করা। ঠিক এমনই এক ফেতনা হচ্ছে, নিজের লিঙ্গ পরিচয়কে অস্বীকার করা। কিংবা নিজেকে না নারী, না পুরুষ- এই পরিচয় দিয়ে স্বস্তিবোধ করা; নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা।

বর্তমানে এ জাতীয় মানসিকতা ও ফেতনার প্রধান টার্গেট হচ্ছে- উঠতি তরুণ-যুব প্রজন্ম। বিশেষ করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এর ভয়াবহ বিস্তারের সংবাদ পাওয়া গেছে। অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, সেদিন খুব দূরে নয়; যেদিন এ আগ্রাসন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতেও ঢুকে যাবে। গ্রাস করবে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের। অবাধ অপসংস্কৃতির বিস্তার ও কতিপয় মিডিয়ার নগ্ন প্রচারণা এমন কাজকে সহজ করে তুলছে। নির্লজ্জতাকে দূর করছে বিভিন্ন কৌশলে। কখনো মানবতার নামে, নয়ত অধিকার প্রতিষ্ঠার নাম দিয়ে। একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী এসব বাস্তবায়নে কৌশলে তরুণ প্রজন্মের পেছনে কাজ করছে। নানাভাবে এই ভয়াবহ মানসিক বিকারগস্ত মানসিকতা জাগিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রকাশ পেয়েছে। অনেকের আচার-আচরণেও বিরূপ প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। তারা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও নেমেছে।

একজন নারীর পুরুষে রূপান্তরিত হওয়া। কিংবা পুরুষ নিজেকে নারী হিসেবে দাবি করা- সুস্থ মানসিকতা নয়। এটা কীভাবে, কী করে সম্ভব?

হাদিসের আলোকে আমরা জানব, কোনো নারী নিজেকে পুরুষ হিসাবে দাবি করা। অথবা কোনো পুরুষ নিজেকে নারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার বিধান কী? হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে কী বলেছেন?

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) ওইসব পুরুষকে অভিশাপ করেছেন, যারা নারীর বেশ ধারণ করে। আর ওই সব নারীকেও অভিশাপ করেছেন, যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে। –সহিহ বোখারি : ৫৮৮৫

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদেরই দলভুক্ত গণ্য হবে। -সুনানে আবু দাউদ : ৪০৩১

বর্ণিত হাদিসদ্বয় থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, কোনো পুরুষ নিজেকে নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে প্রকাশ করলে, সে নারী জাতিরই অন্তর্ভুক্ত হবে। ঠিক একই কথা বিপরীতমুখী আচরণের ক্ষেত্রেও।

কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো জাহান্নামের আগুন থেকে। যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছেন নির্মম-হৃদয়, কঠোর-স্বভাবের ফেরেশতাগণ। যারা আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন, তা অমান্য করেন না এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হন, তাই করেন।’ -সুরা তাহরিম : ০৬

এই আয়াতে মুমিনদের জন্য পালনীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তা হলো- নিজেদেরকে সংস্কার ও সংশোধন করার সঙ্গে সঙ্গে নিজ নিজ পরিবারের লোকদেরকে সংস্কার ও সংশোধন। তাদেরকে ইসলামি শিক্ষা-দীক্ষা প্রদানের প্রতি যত্নবান হওয়া। যাতে তারা জাহান্নামের জ্বালানী হওয়া থেকে বেঁচে যায়। আর এই কারণেই হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শিশুরা যখন সাত বছর বয়সে পৌঁছে যাবে, তখন তাদেরকে নামাজ পড়ার আদেশ দাও। আর দশ বছর বয়সে পৌঁছে যাওয়ার পর (তারা নামাজের ব্যাপারে উদাসীন হলে) তাদেরকে (শিক্ষামূলক) প্রহার করো।’ -সুনানে আবু দাউদ

ঠিক একইভাবে তাদেরকে রোজা পালনেরও আদেশ দিতে হবে এবং অন্যান্য বিধি-বিধানের অনুসরণ করার শিক্ষা তাদেরকে দিতে হবে। যাতে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে সত্য দ্বীন মানার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। -তাফসিরে ইবনে কাসির

আমাদের সবারই উচিত ছেলে-মেয়েকে এ জাতীয় আগ্রাসন ও ফেতনা বিষয়ে সচেতন করা। তাদেরকে সঠিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করা। তাদেরকে ইসলামের সঠিক শিক্ষা প্রদান করলে, আশা করা যায়- তারা মানব সভ্যতাবিরোধী সংস্কৃতি ও ইসলাম বিদ্বেষী যাবতীয় ফেতনা থেকে বাঁচতে পারে।

লেখক : খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর।

;

আল্লাহর ভয় ও নৈতিকতার অনুশীলনই পারে দুর্নীতি কমাতে



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
ইসলাম মনে করে, অসৎ ও হারাম উপায়ে উপার্জনের প্রবণতা থেকেই মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, ছবি : সংগৃহীত

ইসলাম মনে করে, অসৎ ও হারাম উপায়ে উপার্জনের প্রবণতা থেকেই মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলাম নৈতিকতার ধর্ম। এখানে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই। দুর্নীতি দমনে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব বাণী উচ্চারণ করেছেন, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে তা বাস্তবায়ন করতে পারলে বিদ্যমান দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ সম্ভব। ইসলামের দৃষ্টিতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, সুদ, ঘুষ, জুয়া তথা যেকোনো হারাম পন্থা অবলম্বন, ক্ষমতা ও পেশিশক্তির অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা, প্রতারণা, আইনের অসৎ ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিল এবং দেশ, জাতি ও সাধারণ নাগরিকের অধিকার ও স্বার্থ হরণের নাম দুর্নীতি।

এ কারণেই ইসলাম অপরাধী, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শাস্তি দিতে স্বচ্ছআইন এবং তা দ্রুত কার্যকরের বিধান প্রণয়ন করেছে। এ ছাড়া ইসলামে অপরাধ ও দণ্ডবিধি মওকুফ করার অধিকার রাষ্ট্রপ্রধানকে দেওয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে নবী কারিম (সা.)-এর হাদিস উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘আমার মেয়ে ফাতেমা চুরি করলেও আমি তার হাত কেটে দেওয়ার নির্দেশ দেব।’-সহিহ বোখারি

ইসলাম মনে করে, অসৎ ও হারাম উপায়ে উপার্জনের প্রবণতা থেকেই মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়। দুর্নীতি দমনের মূলনীতি হিসেবে ইসলাম হালাল-হারামের পার্থক্য স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। সেই সঙ্গে হালালের উপকারিতা এবং হারামের অপকারিতা স্পষ্ট করে দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ! পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করো। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’-সুরা বাকারা : ১৬৮

আমরা জানি, দুনিয়ায় অপরাধের শাস্তি হোক বা না হোক, আখেরাতে সব অপরাধের বিচার হবে। দুনিয়ায় মানুষের চোখ ফাঁকি দেওয়া গেলেও আখেরাতে আল্লাহর দরবারে ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না; বরং সব কর্মকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে। সেখানে কোনো বিষয়ে দুর্নীতি, ব্যক্তি বা জাতির হক আত্মসাৎ প্রমাণিত হলে তার জবাবদিহি করতে হবে এবং পরিণামে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। তা থেকে বাঁচার কোনো উপায় থাকবে না। সেদিন হাত, পা ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অপরাধীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব, তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।’-সুরা ইয়াসিন: ৬৫

আল্লাহর সামনে হিসাব দিতেই হবে- এই মানসিকতা জনসাধারণের মধ্যে সৃষ্টি হলে দুর্নীতি ও অপরাধ কমে আসবে। দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই প্রত্যেক মা-বাবার উচিত- সন্তানকে সৎ, আল্লাহভীরু ও ইসলামি অনুশাসনের পূর্ণ অনুসারী হিসেবে গড়ে তোলার সুব্যবস্থা করা।

এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সৎ, যোগ্য ও দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরির জন্য ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। দুর্নীতিমুক্ত জাতি গঠনের লক্ষ্যে ইসলামি মূল্যবোধ ও তাকওয়ার ব্যাপক অনুশীলন হওয়া প্রয়োজন। ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে দুর্নীতির ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে।

পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকা। কোথাও দুর্নীতি হতে দেখলে সাধ্যমতো প্রতিবাদ করা। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো অন্যায় হতে দেখে, সে যেন সম্ভব হলে তা হাত দিয়ে রুখে দেয়। আর তা সম্ভব না হলে প্রতিবাদী ভাষা দিয়ে যেন তা প্রতিহত করে। আর তাও না পারলে সে যেন ওই অপকর্মকে হৃদয় দিয়ে বন্ধ করার পরিকল্পনা করে (মনে মনে ঘৃণা করে), এটি দুর্বল ইমানের পরিচায়ক।’-সুনানে তিরমিজি

দুর্নীতি দমনে প্রথম পর্যায়ে ইসলামি কর্মধারার লক্ষ্য হলো, প্রত্যেক মুসলমানের হৃদয়কে দুর্নীতিবিরোধী প্রেরণায় উজ্জীবিত করে তোলা এবং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সুদৃঢ় অবস্থান গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা। সে লক্ষ্যে সম্পদ ও ঐশ্বর্যের কুফল, হারাম উপার্জনের ভয়াবহ পরিণতির কথা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে ইসলাম দিয়েছে অত্যন্ত কঠোর দণ্ডের বিধান এবং তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির ধরণ, প্রকৃতি ও গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে ইসলামি আইনে দণ্ড নির্ধারিত হয়ে থাকে। হজরত ওমর (রা.)-এর খেলাফতকাল ছিল দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে ইসলামি ব্যবস্থাপনার বাস্তব উদাহরণ। তিনি যোগ্যতর ব্যক্তিদের প্রজাতন্ত্রের পদগুলোতে নিয়োগ দান করতেন। তাদের জন্য উপযুক্ত বেতন নির্ধারণ করে দিতেন, তাদের সম্পদের তালিকা সংরক্ষণ করতেন এবং চৌকস গোয়েন্দা বাহিনী নিয়োগ করেছিলেন, যাতে কোনো সরকারি কর্মচারী দুর্নীতিপরায়ণ হতে না পারে। তার পরও যদি কারো দুর্নীতি প্রমাণিত হতো, তাহলে তার ওপর কঠিন শাস্তি কার্যকর করা হতো।

দুর্নীতি মানবচরিত্রের সহজাত প্রবৃত্তি, তাই পৃথিবীতে মানুষ যত দিন থাকবে, দুর্নীতিও তত দিন থাকবে। সমাজকে সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতিমুক্ত করা আদৌ সম্ভব না হলেও তা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে সেটি একমাত্র ইসলামি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই সম্ভব। যেমন হয়েছিল রাসুলে কারিম (সা.)-এর যুগে ও খোলাফায়ে রাশেদার যুগে। পরকালে জবাবদিহির ভয় মানুষের মনে যত বেশি কাজ করবে, সমাজের দুর্নীতি তত কমে আসবে। তাই অনিয়ম দুর্নীতি যেই করুক, প্রশ্ন তুলতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে পারিবারিক শিক্ষা এবং মূল্যবোধের চর্চাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদর্শের চর্চার মাধ্যমেই দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

;

‘মুহাম্মদ’ নাম জনপ্রিয় যে কারণে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মুহাম্মদ সা., ছবি : সংগৃহীত

মুহাম্মদ সা., ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘মুহাম্মদ’ নাম জনপ্রিয় নামগুলোর শীর্ষে রয়েছে। সম্প্রতি কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, স্পেনে মুহাম্মদ নাম দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বর্তমানে দেশটির ৬৬ হাজার ৩৪০ জন এই নাম রেখেছে। পুরুষদের জনপ্রিয় নামের তালিকায় মুহাম্মদ নামটি ৬০ থেকে ৬৫তম অবস্থানে রয়েছে। তবে এবার স্পেনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর বার্সেলোনায় মুহাম্মদ নামটি জনপ্রিয়তায় শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। সেখানকার ১৩ হাজার ৩২৬ জনের নাম মুহাম্মদ।

স্পেনের জাতীয় পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, স্পেনে অন্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় মুসলিমদের জন্মহার বেশি, বিশেষত আলমেরিয়া প্রদেশে আদিবাসীর তুলনায় বিদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে স্থানীয়দের জন্মহার ৩.৩ শতাংশের বিপরীতে বিদেশিদের জন্মহার ১৯.৩ শতাংশ।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে এখানে দুই হাজার ৪০টি শিশু জন্মগ্রহণ করে, যার মধ্যে স্থানীয় রয়েছে মাত্র ২৯৮টি এবং বিদেশি এক হাজার ৭৪২টি।

স্প্যানিশ সংবাদপত্র দি অবজেক্টিভ জানিয়েছে, স্পেনে মুহাম্মদ নামটি একমাত্র বিদেশি শব্দ, যা বিভিন্ন শহরে প্রসিদ্ধ নামের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এবং বার্সেলোনায় শীর্ষস্থান লাভ করেছে। এর আগে এখানে জনপ্রিয় নাম ছিল আরনাউ, যা বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। বর্তমানে নামটি রেখেছে ১৩ হাজার ২৪৪ জন।

এর পর রয়েছে জেরার্ড ও সেরগি, যা যথাক্রমে ১৩ হাজার ১৮৪ ও ১৩ হাজার ১৪৬ জন রেখেছে। আর স্পেনের অন্য শহরগুলোর মধ্যে মাদ্রিদে সাত হাজার জন, মুরসিয়াতে তিন হাজার ৪৪৭ জন, গিরোনায় তিন হাজার ৬৮৮ জন এবং আলমেরিয়াতে তিন হাজার ৬০০ জন মুহাম্মদ নাম রেখেছে।

মুহাম্মদ নামটি এশিয়া অঞ্চলে খুবই পরিচিত নাম। গত এক দশক ধরে নামটি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় নামের শীর্ষে রয়েছে। ব্রিটেনের জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের (ওএনএস) তথ্য মতে, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে মুহাম্মদ নামটি যুক্তরাজ্যে জনপ্রিয় নামের তালিকায় রয়েছে।

তা ছাড়া গত বছর আয়ারল্যান্ডের একটি শহরে মুহাম্মদ নামটি জনপ্রিয় নামের শীর্ষে ছিল। ফ্রান্সে প্রতি পাঁচ নবজাতকের মধ্যে একজনের নাম মুহাম্মদ। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসেও নামটি খুবই জনপ্রিয়।

ইসলাম ধর্মের শেষ নবীর নাম মুহাম্মদ (সা.)। তার ওপর অবতীর্ণ পবিত্র কোরআনে নামটির উল্লেখ আছে। তার নামানুসারে অনেক ছেলেশিশুর নাম মুহাম্মদ রাখা হয়। আরবি ভাষায় মুহাম্মদ শব্দের অর্থ প্রশংসিত। এ ছাড়া হাদিসে সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নাম ও তোমাদের পিতাদের নামে ডাকা হবে। অতএব তোমরা সুন্দর নাম নির্বাচন করো। -সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৪৮

;

মসজিদে নববিতে মুসল্লিদের জন্য বিশেষ সেবা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ পরিষেবা উদ্বোধন করছেন শায়খ সুদাইস, ছবি : সংগৃহীত

দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ পরিষেবা উদ্বোধন করছেন শায়খ সুদাইস, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মদিনা নবীর শহর। ইসলামের দ্বিতীয় ধর্মীয় মর্যাদাপূর্ণ স্থান পবিত্র মসজিদে নববি মদিনায় অবস্থিত। এ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন স্বয়ং নবী কারিম (সা.)। এই মসজিদে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের অসংখ্য মুসল্লি নামাজ পড়তে আসেন। তারা পবিত্র রওজা শরিফ জিয়ারত করেন, রওজা মোবারকে সালাম পেশ করেন। মনের আকুতি মিশিয়ে নবী কারিম (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত মদিনায় প্রাণভরে দোয়া-মোনাজাত করেন।

এবার মদিনায় আগত দেশ-বিদেশের মুসল্লি ও দর্শনার্থীদের ধর্মীয় অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মসজিদে নববির এজেন্সি ফর দ্য প্রেসিডেন্সি অব রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স। এরই অংশ হিসেবে গত শুক্রবার ‘দর্শনার্থীদের পরিষেবা আমাদের জন্য গর্বের’ শীর্ষক একটি নতুন উদ্যোগ চালু করা হয়।

এই পরিষেবাটি উদ্বোধন করেন মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের ধর্মবিষয়ক পরিচালনা পর্ষদের প্রধান শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস। তিনি বলেন, ‘পবিত্র মসজিদে নববিতে আসা দর্শনার্থীদের সেবা করা আমাদের সবার মহান দায়িত্ব। তা সংশ্লিষ্ট সব কর্মচারীর জন্য খুবই গর্বের বিষয়। মসজিদে আসা সবার ধর্মবিষয়ক অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করতে আমরা এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এর মাধ্যমে মুসল্লিদের অন্তরে ইতিবাচক ধর্মীয় আবেগ ও অনুভূতি তৈরি হবে।’

শায়খ আস সুদাইস এজেন্সির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মসজিদে আসা মুসল্লি ও দর্শনার্থীদের জন্য নিজেদের সেবা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের মাঝে বিভিন্ন উপহারসামগ্রী বিতরণ করেন।

;