নবী করিম (সা.) যেখানে প্রথম জুমা আদায় করেন



মাওলানা রহিমুল্লাহ শরীফ, অতিথি লেখক, ইসলাম
ঐতিহাসিক ‘মসজিদে কুবা’। ছবি: বার্তা২৪.কম

ঐতিহাসিক ‘মসজিদে কুবা’। ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঐতিহাসিক মসজিদে জুমা। যেখানে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদায় করেছিলেন সর্বপ্রথম জুমার নামাজ। মসজিদটি মদিনায় অবস্থিত।

হজরত রাসুলে কারিম (সা.) হিজরত করে মদিনায় যাওয়ার পথে কুবা নামক স্থানে চৌদ্দ দিন অবস্থান করেন। সেখানে তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। ইসলামের সর্বপ্রথম এটাই সর্ব প্রধম মসজিদ।

ঐতিহাসিক এই মসজিদের নাম ‘মসজিদে কুবা।’ মসজিদটি মদিনা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত। মসজিদের নববি থেকে এর দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটারের মতো।

নবী করিম (সা.) কুবা থেকে যেদিন মদিনার উদ্দেশে রওয়ানা হন, সেদিন ছিলো- জুমাবার। নবী করিম (সা.) মদিনার পথে কিছুদূর যাওয়ার পর বনি সালেম বিন আউফ মহল্লায় পৌঁছলে জোহরের ওয়াক্ত হয়, তখন তিনি সেখানে সাহাবাদের সঙ্গে নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেন। যাতে ১০০ জন মুসল্লি শরিক হন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ।

barta24

পরবর্তীতে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় এবং তার নাম রাখা হয় মসজিদে জুমা। নবী করিম (সা.)-এর স্মৃতিধন্য এই মসজিদের আরেক নাম হলো- ‘মসজিদে আতিকা।’ মসজিদটি কুবা মসজি থেকে ৯০০ মিটার উত্তরে এবং মসজিদে নববীর ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।

হিজরতের সময় মদিনার পথে বনি সালেম গোত্রে আদায় করা জুমাই ইসলামের ইতিহাসে প্রথম জুমা। এই জুমায় নবী করিম (সা.) বেশ লম্বা খুৎবা দেন। এটাই ছিল ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম জুমা ও সর্বপ্রথম জুমার খুৎবা।

অবশ্য ‘মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাকে’ সহিহ সনদে আল্লামা ইবনে সিরিন থেকে বর্ণিত আছে, দ্বিতীয় বাইয়াতে আকাবার পর যখন মদিনায় ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে, তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আগমনের পূর্বে একবার আনসারগণ পরামর্শক্রমে একত্রিত হয়ে হজরত আসআদ বিন যুরারাহ (রা.)-এর কাছে গেলে তিনি জুমার দিন সবাইকে নিয়ে একত্রে জুমার নামাজ আদায় করেন।

মসজিদটি সর্বপ্রথম পাথুরে শিলা দ্বারা নির্মাণ করা হয়। পরে বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়। সংস্কারের পূর্বে মসজিদটির দৈর্ঘ্য ছিল ৮ মিটার, প্রস্থে সাড়ে চার মিটার এবং লম্বায় ৫.৫ মিটার। এবং একমাত্র গম্বুজটি ছিল লাল ইট দ্বারা নির্মিত। পূর্ব অংশের সাথে ৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৬ মিটার প্রস্থসহ একটি উঠান ছিল।

মসজিদের দ্বিতীয় সংস্কার উমাইয়া খলিফা দ্বিতীয় উমর। তৃতীয়বার সংস্কার করা হয় আব্বাসীয় খিলাফতের সময়ে ৭৩৪ থেকে ৭৪৮ সালের মধ্যে। চতুর্থ সংস্কার করেন চৌদ্দ শতকের সময় সায়ামসুদ্দিন কাওয়ান।

উসমানীয় সাম্রাজ্যের সময়ও একবার মসজিদটি সংস্কার করা হয়। এর নেতৃত্ব দেন সুলতান বায়েজিদ। আর ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সংস্কার করেন সাইয়্যেদ হাসান আসি সিয়ারবাটলি।

সর্বশেষ ১৯৮৮ সালে বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজের নেতৃত্বে সৌদি সরকারের আওকাফ মন্ত্রণালয়ের পুরাতন মসজিদ ভেঙে নতুন নকশায় মসজিদটি নির্মাণ করেন।

নতুন নির্মাণে ইমাম এবং মোয়াজ্জিনের থাকার বাসভবন, একটি গ্রন্থাগার, একটি হিফজুল কোরআন মাদরাসা, নারীদের আলাদা নামাজের জায়গা এবং প্রয়োজনীয় বাথরুম ও অজুর ব্যবস্থা করা হয়।

মসজিদটিতে একসঙ্গে ৬৫০ জন মুসল্লি নামাজ আদায়া করতে পারেন। একটি উঁচু মিনার ও একটি প্রধান গম্বুজ এবং চারটি ছোট গম্বুজ নিয়ে নির্মিত মসজিদটি ১৯৯১ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

   

ছয় মুসলিম দেশ ভ্রমণ করা যাবে এক ভিসায়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছয় মুসলিম দেশের পতাকা, ছবি : সংগৃহীত

ছয় মুসলিম দেশের পতাকা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী দুই বছরের মধ্যে সমন্বিত পর্যটক ভিসা পদ্ধতি চালু করবে উপসাগরীয় ছয় মুসলিম দেশ। দেশগুলোর পর্যটন খাতের উন্নয়নে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। সম্প্রতি গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) সদস্য দেশগুলোর পর্যটনমন্ত্রীদের নিয়ে ওমানের রাজধানী মাস্কাটে অনুষ্ঠিত সভায় এ কথা জানানো হয়।

আমিরাতের অর্থমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন তোক আল-মারি বলেন, সমন্বিত ভিসাধারীরা উপসাগরীয় ছয়টি দেশেই ভ্রমণের সুযোগ পাবে। দেশগুলো হলো- বাহরাইন, ওমান, কুয়েত, সৌদি আরব, কাতার ও আমিরাত।

উপসাগরীয় দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনে এ বিষয়ে চূড়ান্তভাবে জানানো হবে। ভিসাবিষয়ক নির্ধারিত প্রবিধান ও আইন তৈরির পর ২০২৪ বা পরের বছর তা চালু হতে পারে।

জিসিসির মহাসচিব জসিম আলবুদাই বলেন, ইউনিফাইড ট্যুরিস্ট ভিসা স্কিম বা সমন্বিত পর্যটন ভিসা পদ্ধতি নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়িত হবে।

এর মাধ্যমে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা আগের চেয়ে বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আগমনে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।

তিনি আরও জানান, ২০২৩ থেকে ২০৩০ সালের উপসাগরীয় দেশগুলোর যৌথ পর্যটন কৌশল অনুসারে, এসব দেশে অন্তর্মুখী ভ্রমণ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। গত বছর দেশগুলোতে দর্শনার্থীর সংখ্যা ৩৯.৮ মিলিয়নে পৌঁছে। এতে ২০২১ সালের তুলনায় ১৩৬.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে দর্শনার্থীর এই সংখ্যা ১২৮.৭ মিলিয়নে পৌঁছানো এখন লক্ষ্য।

তিনি আরও বলেন, জিসিসি দেশগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা বছরে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সেই অনুসারে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ এই খাতে ৯৬.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০৩০ সালে ১৮৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জিডিপিতে এসব দেশের ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের অবদান ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং ২০২৩ সালে এর মূল্য সংযোজন ১৮৫.৯ বিলিয়নে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।

;

জিকিরের মজলিসের অবাক করা ফজিলত



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
অর্থ : অতএব, তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব

অর্থ : অতএব, তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব

  • Font increase
  • Font Decrease

সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহর দয়ার কি সীমা-পরিসীমা আছে! বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য সদা প্রসারিত থাকে তার ক্ষমার হাত। প্রয়োজন শুধু সুযোগটাকে কাজে লাগানো এবং তার কাছে মাফ চাওয়া। বান্দা ইস্তেগফার করলে তিনি মাফ করেন। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম, কিন্তু তিনি এমন মহা ক্ষমাকারী যে, বান্দা মাফ না চাইলেও তিনি ক্ষমা করেন। বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য বাহানা তালাশ করেন।

তেমনই একটি ‘বাহানা’ হলো- জিকিরের মজলিস। জিকিরের মজলিসে যে উপস্থিত হয়, শুধু মজলিসে উপস্থিতির ভিত্তিতে আল্লাহ ক্ষমা করেন- হোক তার এই মজলিসের উপস্থিতি ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে। তারপরও আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করবেন- কেবল এই মজলিসের শরিক হওয়ার কারণে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে একদল ফেরেশতা নিয়োজিত রয়েছে, যারা ঘুরে ঘুরে জিকিরকারীদের তালাশ (খুঁজতে থাকে) করে। যখন কিছু মানুষকে আল্লাহর জিকিরে মশগুল দেখে তারা একে অপরকে আহ্বান করে- এসো, তোমাদের লক্ষ্যের দিকে এসো। (তোমরা যা খুঁজছ তা মিলে গেছে।) নবীজী (সা.) বলেন, এরপর তারা নিজেদের ডানা দ্বারা মজলিসটিকে ঘিরে নেয়। এভাবে নিকটবর্তী আসমান পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

নবীজী (সা.) বলেন, তখন তাদের রব তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, (অথচ তিনি তাদের চেয়ে অধিক জ্ঞাত) আমার বান্দাগণ কী বলছে? ফেরেশতারা বলে, তারা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, আপনার বড়ত্ব ঘোষণা করছে, আপনার প্রশংসা করছে এবং আপনার মর্যাদা ঘোষণা করছে। নবীজী (সা.) বলেন, তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? উত্তরে ফেরেশতারা বলে, না; আল্লাহর কসম, তারা আপনাকে দেখেনি।

নবীজী (সা.) বলেন, অতঃপর আল্লাহতায়ালা বলেন, যদি তারা আমাকে দেখত তাহলে তাদের কী অবস্থা হত? ফেরেশতারা বলে, যদি তারা আপনাকে দেখত তাহলে আরও একনিষ্ঠভাবে আপনার ইবাদত-বন্দেগি করত, অপনার মর্যাদা ঘোষণায় এবং আপনার প্রশংসা প্রকাশে আরও সক্রিয় হত এবং আরও অধিক পরিমাণে আপনার তাসবিহ পাঠ করত!

নবীজী (সা.) বলেন, তখন মহান আল্লাহ বলেন, তারা আমার নিকট কী চায়? ফেরেশতারা বলে, তারা আপনার নিকট জান্নাত চায়! আল্লাহ বলেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফেরেশতারা বলে, না, হে রব! তারা জান্নাত দেখেনি। তখন আল্লাহ বলেন, যদি তারা জান্নাত দেখত তাহলে কী করত? ফেরেশতারা বলেন, যদি তারা জান্নাত দেখত তাহলে তার প্রতি আরও লালায়িত হত, তার অন্বেষণে আরও মনোযোগী হত এবং তা লাভের জন্য আরও ব্যাকুল হত।

নবীজী (সা.) বলেন, আল্লাহ বলেন, তারা কী থেকে পানাহ চাচ্ছে? ফেলেশতারা বলে, জাহান্নাম থেকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? ফেরেশতারা বলে, না, আল্লাহর কসম হে রব! তারা জাহান্নাম দেখেনি। তখন আল্লাহ বলেন, যদি তারা জাহান্নাম দেখত তাহলে কী করত? ফেরেশতারা বলে, যদি তারা জাহান্নাম দেখত তাহলে আরও বেশি ভয় করত এবং তা থেকে বাঁচতে আরও অধিক চেষ্টা করত।

নবীজী (সা.) বলেন, তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমাদের সাক্ষী রাখছি, আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম।

নবীজী (সা.) বলেন, তখন একজন ফেরেশতা বলে ওঠে, তাদের মধ্যে তো অমুক রয়েছে; যে তাদের দলের নয়, সে অন্য কাজে এসেছে (সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, তাদের মাঝে তো এক পাপী রয়েছে), একথা শুনে আল্লাহতায়ালা বলেন, তারা এমন জামাত, (এটি এমন মজলিস, যার) যাদের কোনো অংশগ্রহণকারীই মাহরূম (বঞ্চিত) হয় না। -সহিহ বোখারি : ৬৪০৮; সহিহ মুসলিম : ২৬৮৯

;

ছারছীনা দরবারের ১৩৩তম ঈছালে ছওয়াব মাহফিল শুরু



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছারছীনা দরবারের ১৩৩তম ঈছালে ছওয়াব মাহফিল শুরু, ছবি : সংগৃহীত

ছারছীনা দরবারের ১৩৩তম ঈছালে ছওয়াব মাহফিল শুরু, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দরবার পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার অন্তর্গত ছারছীনা দরবার শরীফে শুরু হয়েছে ১৩৩তম বার্ষিক ঈছালে ছওয়াব ও বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহ সম্মেলন।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বাদ মাগরিব পীর সাহেব হজরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মাদ মোহেব্বুল্লাহর উদ্বোধনী ভাষণের মধ্য দিয়ে মাহফিলের সূচনা হয়। যথারীতি সুরা ফাতেহা, সুরা ইয়াসিন, সুরা আর রাহমান এবং কোরআন মাজিদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তেলাওয়াতের পর মিলাদ পাঠ করা হয়। এরপর হজরত পীর সাহেব উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন। আগামী শুক্রবার বাদ জুমা দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সার্বিক কল্যাণ কামনা করে হজরত পীর সাহেব তিন দিনব্যাপী মাহফিলের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন।

উদ্বোধনী বয়ানে হজরত পীর সাহেব কেবলা বলেন, ‘১৩৩ বছর আগে ছারছীনা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা পীর শাহ্সূফী হজরত মাওলানা নেছার উদ্দীন আহমদ (রহ.)-এ মাহফিলের গোড়াপত্তন করেছিলেন। তিনি ফুরফুরা শরীফের পীর মুজাদ্দেদে জামান শাহ্সূফী হজরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দীকী আল্ কুরাইশী (রহ.)-এর হাতে বায়াত গ্রহণ করে তরিকা মশক করেন। এক পর্যায়ে তিনি প্রিয় মুরিদ শাহ্ নেছারকে খেলাফত প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশে হেদায়েত ও তাবলিগের কাজ আঞ্জাম দেওয়ার নির্দেশ দেন। তখন থেকে তিনি ছারছীনা দরবার শরীফে এ বার্ষিক মাহফিল এবং হক্কানি আলেম তৈরির লক্ষ্যে ছারছীনা দারুস সুন্নাত কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।’

তিন দিনব্যাপী মাহফিলে বাদ ফজর ও মাগরিব হজরত পীর সাহেব কেবলা গুরুত্বপূর্ণ তালিম ও নসিহত প্রদান করেন। এছাড়া দরবার শরীফের বিশিষ্ট আলেমরা ইসলামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলীর ওপর আলোচনা করেন। ইতোমধ্যে মাহফিল ময়দানে বিভিন্ন স্থান থেকে পীর-ভাই, মুহিব্বীনসহ হাজার হাজার মুসুল্লি ও ভক্তবৃন্দ উপস্থিত হয়েছেন।

মাহফিলের সফলতার জন্য সকল পীর ভাই, মুহিব্বীনসহ সর্বস্তরের মুসল্লিদের কাছে বিশেষভাবে দোয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মাহফিল এন্তেজামিয়া কমিটির পক্ষে অধ্যক্ষ ড. সৈয়দ মো. শরাফত আলী।

;

আল-আকসা প্রাঙ্গণের সোনালী গম্বুজের রহস্য



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ডোম অব দ্য রক, ছবি : সংগৃহীত

ডোম অব দ্য রক, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ডোম অব দ্য রকের আরবি নাম ‘কুব্বাতুস সাখরা’ বা পাথরের ওপর নির্মিত গম্বুজ। অনিন্দ্যসুন্দর মুসলিম স্থাপত্যটির নির্মাতা উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান। ডোম অব দ্য রকে নামাজ আদায়ের সুযোগ থাকলেও মূলত এটি কোনো মসজিদ নয়। এটি আল-আকসা কম্পাউন্ডেই অবস্থিত একটি স্থাপনা।

ধারণা করা হয়, পবিত্র মিরাজের রাতে নবী কারিম (সা.) যে পাথরের ওপর অবতরণ করেছিলেন তার ওপরই নির্মিত হয়েছে গম্বুজটি এবং সে অনুসারেই তার নাম ‘কুব্বাতুস সাখরা’ রাখা হয়েছে।

ঐতিহাসিক আল-আকসা মসজিদ থেকে এর দূরত্ব ২০০ মিটার। ইহুদি ধর্মবিশ্বাস অনুসারে ডোম অব দ্য রক নির্মিত হয়েছিল ‘সেকেন্ড টেম্বল’ (দ্বিতীয় হাইকালে সোলায়মানি)-এর স্থানে, যা ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা ধ্বংস করেছিল এবং সেখানে জুপিটারের মন্দির স্থাপন করেছিল।

নির্মাণশৈলী
অষ্টভুজাকার ডোম অব দ্য রক মূলত ইসলামি ও বাইজান্টাইন স্থাপত্যরীতিতে নির্মাণ করা হয়, যা একটি কেন্দ্রীয় গম্বুজ দ্বারা আবৃত। এর ব্যাসার্ধ ২০ মিটার এবং উন্নত ড্রামের ওপর স্থাপিত। গম্বুজের সমর্থনে আছে চারটি স্তর ও ১২টি কলাম। চারপাশে ২৪টি পিয়ার ও কলামের একটি অষ্টাভুজাকার তোরণ আছে। বাইরের দেয়ালগুলো অষ্টভুজাকৃতির, প্রতিটির পরিমাপ প্রায় ১৮ মিটার প্রশস্ত এবং ১১ মিটার উঁচু।

নির্মাণের ইতিহাস
রোমান সম্রাট প্রথম কনস্টেটিন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের পর খ্রিস্ট ধর্মবিশ্বাস অনুসারে ‘চার্চ অব দ্য হলি সেপুলচার’ নির্মিত হয় এবং ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে যখন খলিফা হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) জেরুজালেম জয় করেন, তখন শহরটি খ্রিস্টানদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। তার জেরুজালেম আগমন উপলক্ষে পবিত্র আল-আকসা প্রাঙ্গণ ঐতিহাসিক মসজিদুল আকসা নির্মাণ করেন। এর কয়েক দশক পর পঞ্চম উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান ডোম অব দ্য রক নির্মাণ করেন। নির্মাণকাজ ৭২ হিজরি মোতাবেক ৬৯২ খ্রিস্টাব্দে শেষ হয়। এরপর বিভিন্ন শাসনামলে এর একাধিক সংস্কার হয়।

ধারণা করা হয় মেরাজের রাতে নবী কারিম (সা.) এই পাথরের ওপর অবতরণ করেছিলেন

 

সংস্কারের ইতিহাস
আব্বাসীয় আমলে ডোম অব দ্য রক একাধিকবার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তা সংস্কার করা হয়। ৮০৮ ও ৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে দুইবার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্থাপত্যটি। ১০১৫ খ্রিস্টাব্দে ভূমিকম্পে মূল গম্বুজ ধসে গেলে ১০২২-২৩ খ্রিস্টাব্দে তা পুনর্নির্মাণ করা হয়। ১০২৭-২৮ খ্রিস্টাব্দে স্মৃতিস্তম্ভটিতে মোজাইক লাগানো হয়। ১০৯৯ সালে ক্রুসেডাররা জেরুজালেম জয় করার পর তারা কুব্বাতুস সাখরাকে গির্জায় রূপান্তর করে।

২ অক্টোবর ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবি (রহ.) জেরুজালেম উদ্ধার করলে তা আবারও নামাজের স্থানে পরিণত হয়। তিনি গম্বুজের ওপর থেকে ক্রুশ সরিয়ে চাঁদ স্থাপন করেন এবং পাথরের চারপাশে কাঠের আবরণ দেন। জেরুজালেম শহরটি ১২৫০ থেকে ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মামলুক শাসকদের অধীনে ছিল। তারা ডোম অব দ্য রককে রাজকীয় স্থাপনার মর্যাদা দান করে।

আধুনিকায়ন
কুব্বাতুস সাখরার আধুনিকায়নে উসমানীয়দের অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়। সুলতান প্রথম সোলায়মানের সময় প্রায় সাত বছর ব্যয় করে স্থাপত্যটির বহির্ভাগ টাইলসে আচ্ছাদিত করা হয়। এ ছাড়া উসমানীয়রা অভ্যন্তরভাগ মোজাইক, ফাইয়েন্স ও মার্বেল দ্বারা সৌন্দর্য বর্ধন করে। ডোম অব দ্য রকের কারুকাজে সুরা ইয়াসিন, বনি ইসরাইল ও মারিয়ামের আয়াতের ক্যালিগ্রাফি ব্যবহার করা হয়।

১৮১৭ সালে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ স্থাপত্যটিতে বড় ধরনের সংস্কার করেন। ১৯২৭ সালে ভূমিকম্পে তা আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৫৫ সালে আরব রাষ্ট্রগুলো এবং তুরস্কের অর্থ সহায়তায় জর্দান সরকার ডোম অব দ্য রকের সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে। ১৯৬৫ সালে গম্বুজের ওপর অ্যালুমিনিয়িাম ও ব্রোঞ্জের মিশ্রণের প্রলেপ দেওয়া হয়। ১৯৯৩ সালে গম্বুজের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য জর্দানের রাজা হুসাইন তার লন্ডনের বাড়ি বিক্রি করে ৮০ কেজি স্বর্ণ ব্যবহার করে প্রলেপ দেন।

;