আশুরার ইতিহাস ও করণীয়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইসলামের ইতিহাসে মহররম অত্যন্ত ফজিলতময় মাস, ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের ইতিহাসে মহররম অত্যন্ত ফজিলতময় মাস, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মহররম চান্দ্রবছরের প্রথম মাস, সম্মানিত চার মাসের তৃতীয়। ইসলামের ইতিহাসে মহররম অত্যন্ত ফজিলতময় মাস। এ মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। মহররমের দশ তারিখে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার কথা বলা হলেও বিশুদ্ধ বর্ণনায় মাত্র দু’টি ঘটনার কথা জানা যায়।

এক. হজরত মূসা আলাইহিস সালাম এবং তার সাথীদের ফেরাউন ও তার সৈন্যদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘটনা। যেখানে দরিয়ায় রাস্তা বানিয়ে আল্লাহতায়ালা তাদেরকে নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছেন।

দুই. এই রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করার সময় ফেরাউন ও তার সৈন্যদের দরিয়ায় ডুবিয়ে ধ্বংস করার ঘটনা।

এই দুই ঘটনা বিভিন্ন সহিহ হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত। সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিমসহ হাদিসের অনেক কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।

ইতিহাসে পাওয়া যায়, আশুরার দশ তারিখে অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের হাত থেকে আল্লাহতায়ালা বনী ইসরাঈলকে রক্ষা করেন। ফেরাউনের ওপর বিজয় দান করেন। এ জন্য দিনটিকে মুসলিম মিল্লাতের বিজয়ের দিন বলা হয়। এ ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আর বনী ইসরাঈলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী। তারপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফেরাউন ও সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশ্যে। এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, কোনো মাবুদ নেই তাকে ছাড়া যার ওপর ঈমান এনেছে বনী ইসরাঈলরা। বস্তুত আমি তারই অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। এখন একথা বলছ। অথচ তুমি ইতোপূর্বে নাফরমানি করেছিলে এবং পথভ্রষ্টদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলে। অতএব আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।’ -সূরা ইউনুস: ৯০-৯২

এ বিজয়ের শোকরিয়াস্বরূপ হজরত মুসা (আ.) ও তার অনুসারীরা আশুরার দিনে রোজা রাখতেন। হজরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী করিম (সা.) যখন মদিনায় আগমন করলেন, দেখলেন এদিনে ইহুদিরা রোজা রাখে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন দিন যে, তোমরা রোজা রাখছ? তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিন, যেদিন আল্লাহ হজরত মুসা (আ.) ও তার সম্প্রদায়কে মুক্তি দিয়েছিলেন ও ফেরাউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

অনেক কিতাবে লেখা আছে, আশুরার দিনে কিয়ামত সংগঠিত হবে। কিন্তু এ কথার কোনো ভিত্তি নেই, নির্ভরযোগ্য কোনো বর্ণনায় এ কথার কোনো আলোচনা আসেনি। আবার কোনো কোনো রেওয়ায়েতে বলা হয়, আশুরার দিনে হজরত আদম আলাইহিস সালামের তওবা কবুল হয়েছে। এমনকি একথা আবুল কাসেম ইস্পাহানি (রহ.) কর্তৃক সংকলিত আত তারগিব ওয়াত তারহিবের ১৮৬৮ নম্বর রেওয়ায়েতে এসেছে। কিন্তু এই রেওয়ায়েতের সনদ খুবই দুর্বল। এ ছাড়া আরও কিছু রেওয়ায়েতে এই কথা এসেছে, সেগুলো মওযু তথা দুর্বল।

অবশ্য কোনো কোনো তাবেয়ি থেকে এ কথা বর্ণিত হয়েছে যে, তারা হজরত আদম আলাইহিস সালামের তওবা কবুল হওয়া সম্পর্কে আশুরার দিনের কথাই বলতেন।

হজরত নূহ আলাইহিস সালামের কিশতি যেদিন জুদি পাহাড়ে থেমেছিল সেই দিনটি ছিল আশুরার দিন। এই রেওয়ায়েতও দুর্বল। তবে এটা ঠিক যে, একথা মুসনাদে আহমাদের একটি রেওয়ায়েতে এসেছে। কিন্তু তার সনদ দুর্বল।

আর হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম আশুরার দিন হয়নি। একথা প্রমাণিত নয়। আবুল কাসেম ইস্পাহানি (রহ.)-এর কিতাব আত তারগিব ওয়াত তারহিবের পূর্বোক্ত রেওয়ায়েতেই একথা এসেছে। আগেই বলা হয়েছে, এর সনদ খুবই দুর্বল।

আরেকটি বিষয়। আমাদের দেশের সংবাদপত্র থেকে শুরু করে আশুরাকেন্দ্রিক যাবতীয় আলোচনায় শুধু কারবালার ঘটনা উল্লেখ করা হয়। মনে হয়, আশুরায় শুধু কারবালার ঘটনাই ঘটেছে। আশুরা তাৎপর্যময় হয়েছে কারবালার কারণে। বিষয়টি কিন্তু তা নয়।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের প্রায় ৫০ বছর পর ৬১ হিজরির ১০ মহররমে কারবালায় হজরত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা আশুরার দিনের সঙ্গে মিলে যাওয়া একটি ঘটনাবিশেষ। আশুরার আমলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো বিষয় নয়।

কারণ হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের আগেই আমাদের শরিয়ত পূর্ণ হয়ে গেছে। কিয়ামত পর্যন্ত এই শরিয়ত পূর্ণাঙ্গরূপে সংরক্ষিত থাকবে। আল্লাহতায়ালা নিজে এই শরিয়ত, শরিয়তের দলিল ও দলিলের উৎসসমূহ হেফাজত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই শরিয়ত যেভাবে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে আজ পর্যন্ত সেভাবেই সংরক্ষিত আছে। সে অনুযায়ী সবার আমল করা জরুরি। তাতে কোনো ধরনের সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ নেই।

অতএব হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পরে সংঘটিত কোনো বিপদ বা আনন্দের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো দিন বা কোনো মাসের নতুন কোনো ফজিলত বা নতুন কোনো বিধান আবিষ্কার করা যাবে না। এগুলো ইসলাম সমর্থন করে না।

দুঃখ ও আনন্দ উভয়টির বিধান শরিয়তে আছে এবং তা নির্ধারিত। উম্মতের ওপর ওয়াজিব হলো সেই হুকুম অনুযায়ী আমল করা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- বিপদ-আপদের সময় একজন বান্দার কী করণীয়, কী বর্জনীয় তার বর্ণনা আছে কোরআন-হাদিসে।

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত বলো না। প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা (তাদের জীবিত থাকার বিষয়টা) উপলব্ধি করতে পারো না। আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব (কখনও) কিছুটা ভয়-ভীতি দ্বারা, (কখনও) জানমাল ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতির দ্বারা। সুসংবাদ শোনাও তাদেরকে, যারা (এরূপ অবস্থায়) সবরের পরিচয় দেয়। যারা কোনো মসিবত দেখা দিলে বলে ওঠে, আমরা সকলে আল্লাহরই এবং আমাদেরকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে বিশেষ করুণা ও দয়া রয়েছে এবং এরাই আছে হেদায়েতের ওপর। -সূরা বাকারা: ১৫৪-১৫৭

এ আয়াতের আলোকে বুঝা গেল, কারবালায় হজরত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনা আমাদের জন্য বিপদ ও মসিবতের বিসয়। এক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়তের হুকুম হলো, বিপদগ্রস্ত লোকেরা সবর করবে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়বে এবং আল্লাহতায়ালার কাছে সওয়াবের আশা করবে।

কারও ইন্তেকালে শরিয়তের হুকুম হলো সবর করা অর্থাৎ ধৈর্যধারণ করা। অধৈর্য হয়ে অভিযোগপূর্ণ কোনো কথা বলা, বিলাপ করা, হাত পা ও বুক চাপড়ানো, চেহারা খামচানো, শোকের পোশাক পরা ইত্যাদি হারাম। ইসলামি শরিয়তে খুব কঠোরভাবে তা থেকে বারণ করা হয়েছে।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি মুখে আঘাত করে, জামার বুক ছিঁড়ে, জাহিলি যুগের (মতো) বিলাপ করে; সে আমাদের দলভুক্ত নয়। -সহিহ বোখারি: ১/১৭২

অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি ওই ব্যক্তি থেকে মুক্ত, যে শোকে মাথা মুণ্ডায়, বুক চাপড়ায় ও কাপড় ছিঁড়ে। -সহিহ মুসলিম: ১৬৭

হজরত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের পর থেকে তিন শ’ বছর পর্যন্ত ১০ মহররমে কান্নাকাটি, আহাজারি, চিৎকার ও বুক চাপড়ানো প্রথার কোনো অস্তিত্ব ছিলো না। সর্বপ্রথম ৩৫২ হিজরিতে মুঈযযুদ দাওলা দাইলামি (একজন শিয়া) দশ মহররমে শুধু বাগদাদে হজরত হুসাইন (রা.)-এর জন্য মাতম করার হুকুম জারি করে। এরপর ৩৬৩ হিজরিতে মিসরেও এই হুকুম জারি করা হয়। সেই থেকে এই প্রথা চলে আসছে কোনো কোনো সম্প্রদায়ের মাঝে।

   

রোজার প্রথম সপ্তাহে মসজিদে নববিতে ৫২ লাখ মুসল্লি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ আদায়ের দৃশ্য, ছবি : সংগৃহীত

মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ আদায়ের দৃশ্য, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। এ সময়ে মদিনার মসজিদে নববিতে ৫২ লাখের বেশি মুসল্লি উপস্থিত হয়েছে। তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগিতে অংশ নিয়েছেন।

মসজিদে নববি তত্ত্বাবধানকারী জেনারেল অথরিটি বিভাগ রমজান মাসে মুসল্লিদের পরিষেবাবিষয়ক এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, রমজানের প্রথম সপ্তাহে ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৮ জন পবিত্র রওজা শরিফে নবী কারিম (সা.)-কে সালাম নিবেদন করেছে। একই সময়ে রওজা শরিফে নামাজ পড়েছেন ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৭ জন পুরুষ ও ১০ লাখ সাত হাজার ৬৯৭ জন নারী। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানে শৃঙ্খলাপূর্ণ ব্যবস্থাপনা নারী-পুরুষ সব মুসল্লির যাতায়াত সুনিশ্চিত করা হয়।

তাতে আরও বলা হয়, গত সপ্তাহে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ১০ হাজার ৪৮২ জন বিশেষ পরিষেবা পেয়েছেন।

তা ছাড়া বিভিন্ন দেশের ১০ লাখ ১০ হাজার ৪১২ জনকে একাধিক ভাষায় যোগাযোগ সেবা দেওয়া হয়। আর মসজিদের লাইব্রেরিতে শিক্ষামূলক পরিষেবা থেকে উপকৃত হয়েছেন ১২ হাজার ২৭৯ জন এবং মিউজিয়ামে চার হাজার ৫৬৭ জন পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে মসজিদে আসা এক লাখ ৪৯ হাজার ১৪৯ জন দর্শনার্থীকে নানা রকম উপহারসামগ্রী দেওয়া হয় এবং মসজিদের সমন্বিত পরিষেবার মাধ্যমে ছয় লাখ ৪৮ হাজার ৪১১ জনকে সেবা দেওয়া হয়। তা ছাড়া এক লাখ ৪৪ হাজার জমজম পানির বোতল বিতরণ করা হয় এবং রোজাদারদের মধ্যে ১৫ হাজার ২৪৩টি ইফতারির খাবার বিতরণ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ২৮ কোটির বেশি মুসল্লি পবিত্র মসজিদে নববিতে আগমন করে। একই বছর এক কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মুসলিম ওমরাহ পালন করে, যা ছিল সৌদি আরবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যা। আগামী হজ মৌসুম শুরুর আগেই দুই কোটির বেশি মুসল্লি ওমরাহ পালন করবে বলে আশা করছে সৌদি আরব।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয়ে যায়



মুফতি মো. আবদুল্লাহ
রোজার মাসয়ালা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, ছবি : সংগৃহীত

রোজার মাসয়ালা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র মাহে রমজানের ফরজ রোজা আদায় করছেন। কিন্তু কি কারণে রোজার পবিত্রতা নষ্ট হয়, কি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং কি কারণে ভঙ্গ হয় না, তা অনেকের কাছে অজানা। আজকে এ জাতীয় মাসয়ালা নিয়ে আলোচনা করা হলো-

রোজা নষ্ট হওয়ার কারণসমূহ
১. কানে ও নাকে ঔষধ ঢেলে দেওয়া।
২. ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করা।
৩. কুলি করার সময় গলার ভেতরে পানি চলে যাওয়া।
৪. কোনো নারীর সঙ্গে আলিঙ্গন বা মাখামাখিতে বীর্যপাত হয়ে যাওয়া।
৫. এমন কোনো বস্তু গিলে ফেলা যা সাধারণত খাওয়া হয় না। যেমন কাঠ, লোহা, কাঁচা গম ইত্যাদি।
৬. লোবান বা উদ কাষ্ঠ ইত্যাদির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নাক দিয়ে বা কণ্ঠনালীর ভেতরে টেনে নেওয়া; বিড়ি, সিগারেট ও হোক্কা পান করারও একই বিধান।
৭. ভুলে পানাহার করার পর এমনটি ধারণা করে যে, আমার রোজা নষ্ট হয়ে গেছে; অতপর পানাহার করা।
৮. রাত বাকী আছে মনে করে সুবহে সাদেকের পর পানাহার করা।
৯. সূর্য ডুবে গেছে মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করা। উল্লেখ্য, এসব ক্ষেত্রে রোজা ভেঙে যায় এবং শুধু রোজা কাজা করতে হয়; কাফফারা আবশ্যক হয় না।
১০. ভুলে নয়, জেনে-বুঝে সুস্থ-সবল অবস্থায়, কোনো ওজর-সমস্যা ব্যতীত দিনের বেলায় পানাহার করলে অথবা স্ত্রী-সঙ্গম করলে, সেই রোজার কাজাও করতে হয় এবং কাফফারাও প্রদান করতে হয়। ‘কাফফারা’ হলো, একটি ক্রীতদাস মুক্তকরণ; অথবা একাধারে ৬০টি রোজা পালন করা। আর যদি রোজা রাখার শক্তি না থাকে, সেক্ষেত্রে ৬০জন মিসকিনকে দু’বেলা পেটপুরে খাবার খাওয়াতে হবে। এ যুগে যেহেতু শরিয়তসম্মত ক্রীতদাস বাস্তবে নেই, সে কারণে কাফফারার ক্ষেত্রে শেষোক্ত দু’টির যেকোনো একটি পালন করতে হবে।

যেসব কারণে রোজা মাকরূহ হয়
১. রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় অপ্রয়োজনে কোনো বস্তু চিবানো অথবা লবণ ইত্যাদি জিহবায় দিয়ে থু থু ফেলে দেওয়া; টুথপেস্ট বা মাজন বা কয়লা দ্বারা দাঁত মাজা বা পরিস্কার করা।
২. সারাদিন গোসল ফরজ অবস্থায় অপবিত্র কাটিয়ে দেওয়া।
৩. একান্ত প্রয়োজন ছাড়া শিঙ্গা লাগানো এবং দূর্বল হয়ে পড়ার ভয় থাকলে নিজ শরীর থেকে অন্যের জন্য রক্তদান করা মাকরূহ; কিন্তু তাতে রোজা নষ্ট হয় না।
৪. রোজা অবস্থায় গীবত করা তথা কারও অবর্তমানে তার দোষ বর্ণনা করা রোজার ক্ষেত্রে মাকরূহ বটে; কিন্তু এ গীবত কর্মটি অন্যতম একটি হারাম কাজ ও কবিরা গোনাহ বটে। মাহে রমজানে এর পাপ আরও অনেক গুণ বেড়ে যায়।
৫. রোজা অবস্থায় ঝগড়া-বিবাদ, গালি-গালাজ করা; হোক তা কোনো মানুষের সঙ্গে বা কোনো জীবজন্তুকে বা কোনো প্রাণহীন জড় বস্তুকে; এসব কারণেও রোজা মাকরূহ হয়ে যায়।

যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয় না, মাকরূহও হয় না
১. মিসওয়া করা।
২. মাথায় বা মোচ-দাড়িতে তেল ব্যবহার করা।
৩. চোখে ঔষধ বা সুরমা দেওয়া।
৪. আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৫. গরম ও পিপাসার কারণে গোসল করা।
৬. যেকোনো রকম ইনজেকশন বা টিকা দেওয়া।
৭. ভুলবশত পানাহার করা।
৮. অনিচ্ছাবশত গলায় ধোঁয়া বা ধুলোবালি বা মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করা।
৯. কানে পানি দেওয়া (২/১ ফোটা) অথবা অনিচ্ছাকৃত প্রবেশ করা।
১০. অনিচ্ছাকৃত বমি হওয়া।
১১. শোয়া অবস্থায় স্বপ্নদোষ হয়ে যাওয়া।
১২. দাঁত হতে রক্ত বের হওয়া এবং তা গলা অতিক্রম না করা।
১৩. ঘুমের মধ্যে বা সহবাসের কারণে রাতে গোসল ফরজ হয়েছিল, অথচ সুবহে সাদেকের পূর্বে গোসল করা হয়নি; আর এমতাবস্থায় রোজার নিয়ত করে নেওয়া হয়েছে; তাতেও রোজার কোনো ক্ষতি নেই।

লেখক : মুফতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, গবেষণা বিভাগ।

;

অশ্লীলতামুক্ত সাইবার গঠনে ১৯ বছর বয়সী আবদুল রহমানের স্বপ্ন



ফাতেমা বিনতে আশরাফ
রাইডার্স ক্রিয়েশন ও রাইডার্স মার্টের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল রহমান, ছবি : সংগৃহীত

রাইডার্স ক্রিয়েশন ও রাইডার্স মার্টের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল রহমান, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমাদের জীবন এখন অনলাইননির্ভর। ছোট থেকে বড় সবধরনের কাজ এখন অনলাইনে করা যায়। এ জন্য আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতিনিয়ত নানা সেবা নিচ্ছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বিব্রতকর বিষয় হলো- অনলাইনের বিস্তৃত অঙ্গনজুড়ে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। তাই মাদরাসাশিক্ষার্থী আবদুল রহমান (Abdul Rahman) স্বপ্ন দেখেন এ অঙ্গনকে অশ্লীলতামুক্ত করে গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে তিনি কাজও শুরু করেছেন।

আবদুল রহমান (Abdul Rahman) রাইডার ভাউ অফিসিয়াল, রাইডার্স ক্রিয়েশন এবং রাইডার্স মার্টের প্রতিষ্ঠাতা। এটি বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত আইটি সলিউশন কোম্পানি। তার তীক্ষ্ণ ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং উচ্চমানের পরিষেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, তিনি সফলভাবে কোম্পানিটিকে আইটি সমাধান এবং পরিষেবা প্রদানকারী একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলেছেন।

পাশাপাশি তিনি আরও একটি নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। নাম রাইডার্স ফাউন্ডেশন। খুব শিগগির-ই এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আবদুল রহমান। তার উদ্দেশ্য, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের অসহায় ও দুস্থ মানুষের সেবা করা। অভাবে কেউ কষ্ট না পাক এবং সবার মুখে হাসি থাকুন- এই প্রত্যাশা থেকেই তিনি এটি গড়ে তুলেছেন।

আবদুল রহমান (Abdul Rahman) বেশ কয়েকটি অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন, ছবি : সংগৃহীত

উদ্যোক্তা প্রচেষ্টার পাশাপাশি, আবদুল রহমান (Abdul Rahman) সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষতার জন্যও স্বীকৃত। তিনি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সেক্টরে কাজ করছেন এবং তার অশ্লীলতামুক্ত অনলাইন গড়ার বিষয়টিসহ তার এসব কাজকর্ম নিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে আবদুল রহমানের সুগভীর জ্ঞান তাকে বিশ্বব্যাপী সাইবার অঙ্গনে কাঙ্ক্ষিত স্পিকার হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে।

ব্যবসায়িক উদ্যোগের পাশাপাশি আবদুল রহমান তার এ অঙ্গনের মানুষদের সহযোগিতার জন্যও নিবেদিত। তিনি বেশ কয়েকটি অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন এবং অন্যদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে তার দক্ষতা এবং জ্ঞান ব্যবহার করে প্রশংসিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

আবদুল রহমান একজন বাংলাদেশী উদ্যোক্তা, সোশ্যাল মিডিয়া সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ। পিরোজপুরে তার জন্ম। তিনি তার কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্ভাবনের প্রতি আবেগের মাধ্যমে আইটি এবং সোশ্যাল মিডিয়া শিল্পে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

আবদুল রহমানের কে.এম. লতীফ ইনস্টিটিউশন থেকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট রয়েছে। একই স্কুল থেকে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট, যেখানে তিনি বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত করেছেন। বর্তমানে তিনি মাদারীপুর ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার থেকে কোরআন-হাদিসে স্নাতকোত্তর করছেন।

সামগ্রিকভাবে আবদুল রহমান তার বুদ্ধিমত্তা, দৃঢ়তা এবং উদ্ভাবনের প্রতি তার যে আবেগ, তা দিয়ে সমাজে অবদান রাখতে চান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি; অশ্লীলতামুক্ত অনলাইন গড়ে আগামী দিনগুলোতে সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার স্বপ্ন দেখেন।

;

রমজানে দশ কাজ থেকে বিরত থাকা



আহমদ যাকারিয়া, অতিথি লেখক, ইসলাম
রোজা একটি ফরজ ইবাদত, ছবি : সংগৃহীত

রোজা একটি ফরজ ইবাদত, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের মুসলমানরা পবিত্র রমজান মাস পালন করছেন। রোজা একটি ফরজ ইবাদত। এই ইবাদতটি যেনো সুন্দরভাবে আদায় করা যায়, এ জন্য সবার সর্বাত্মক চেষ্টা করা দরকার। ইসলামি স্কলারদের মতে, রমজানের ১০টি কাজ থেকে বিরত থাকা দরকার; তাহলে রোজা হবে পরিপূর্ণ। ওই দশ কাজ হলো-

সেহরি না খাওয়া : অনেকে সেহরি খান না, অনেকে আবার আগ রাতে খেয়েই শুয়ে পড়েন। এটা সুন্নতের পরিপন্থী। ইসলামে সেহরি খাওয়ার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে, কারণ ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সেহরি খায় না। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাদের ও আহলে কিতাবিদের (ইহুদি ও খ্রিস্টান) রোজার মাঝে পার্থক্য হলো- সেহরি গ্রহণ।’ -সহিহ মুসলিম : ২৬০৪

বিলম্বে ইফতার করা : রোজার পূর্ণ সওয়াব পাওয়ার জন্য বিলম্বে ইফতার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সাহাবি হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, হরজত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দীন বিজয়ী হবে, যে যাবৎ মানুষ দ্রুত ইফতার করবে। কারণ, ইহুদি-নাসারারা তা বিলম্বে করে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২৩৫৫

লাইলাতুল কদর তালাশ না করা : পবিত্র রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ -সুরা কদর : ৪

হরজত রাসুলুল্লাহ (সা.) (রমজানের) শেষ দশদিন লাইলাতুল কদর তালাশ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ।’ -সহিহ বোখারি : ২০২০

মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা : একজন রোজাদার মিথ্যা কথা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না, তার রোজা রেখে শুধু পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ -সহিহ বোখারি : ৬০৫৭

সুন্নত ত্যাগ করা : আমাদের প্রত্যেকটি আমল হবে সুন্নত মোতাবেক। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন অনেক রোজাদার আছে, যার রোজা থেকে প্রাপ্তি হচ্ছে শুধু ক্ষুধা ও তৃষ্ণা। তেমনি কিছু নামাজি আছে যাদের নামাজ কোনো নামাজই হচ্ছে না। শুধু যেন রাত জাগছে।’ -মুসনাদে আহমাদ : ৮৮৪৩

দান-সদকা না করা : পুণ্য অর্জনের মাস রমজান। এ মাসে রোজা-নামাজ ইত্যাদির পাশাপাশি দান-সদকার মাধ্যমেও ফজিলত অর্জন করতে হবে। বেশি বেশি দান-সদকা করার চেষ্টা করতে হবে। এতিম, বিধবা ও গরীব-মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তাদের জন্য হিসাব করে এ মাসে জাকাত দেওয়া উত্তম। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল, আর রমজানে তার এ দানশীলতা আরও বেড়ে যেত।’ -সহিহ বোখারি : ১৯০২

অপচয় ও অপব্যয় করা : প্রয়োজনের অতিরিক্ত অপচয় করা থেকে বিরত থাকা। অনেকে রমজান মাসে ইফতার ও সেহরিতে এমন খরচ করেন- যার প্রয়োজন নেই। কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘হে বনী আদম! তোমরা প্রতি নামাজে তোমাদের সাজসজ্জা পরিধান করো এবং খাও, পান করো ও অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ -সুরা আরাফ : ৩১

তাড়াহুড়ো করে কোরআন খতম করা : শুধু খতম দেওয়া বা পড়া শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন মাজিদ তেলাওয়াতা করলে কোরআনের হক আদায় হয় না। বিশেষ করে খতম তারাবিতে খতম শেষ করা বা ২০ রাকাত তারাবি শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন পড়া। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোরআন সুন্দর উচ্চারণে পড়ে না, সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নয়।’ -সহিহ বোখারি : ৭৫২৭

ফরজ নামাজ আদায়ে অলসতা করা : রোজা পালনের সঙ্গে সঙ্গে ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। অনেকে ফরজ নামাজ আদায়ে উদাসীন থাকেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

দুনিয়ার ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা: ইবাদত-বন্দেগি মাস রমজানে বেশি বেশি আমলের কথা রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই ব্যস্ত থাকি দুনিয়ার নানা কাজে। এটা কাম্য নয়। এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া-দরুদ ও তওবা-ইস্তেগফার করা উচিত।

;