কমলার বাক্যবাণে খেই হারিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ ট্রাম্পের

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বিতর্কে অংশগ্রহণ করলেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম বিতর্কে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলার বাক্যবাণে খেই হারিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ শুরু করেন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ট্রাম্প।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় এবিসি নিউজের আয়োজনে এই বিতর্ক হয়। বিতর্কের সঞ্চালক ছিলেন ডেভিড মুইর ও লিনসে ডেভিস।

বিজ্ঞাপন

বিতর্কের শুরুতে একে অপরের সঙ্গে হাত মেলান কমলা-ট্রাম্প। বিতর্কে গর্ভপাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থনীতি থেকে আবাসন সংকট— বাদ যায়নি কিছুই।

অর্থনীতির প্রসঙ্গ উঠতেই মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠার নিজের গল্প বলেন কমলা। তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট হলে পারিবারিক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোকে সাহায্য করবেন। এর পর ট্রাম্পকে কটাক্ষ করে বলেন, আর উনি প্রেসিডেন্ট হলে কোটিপতিদের এবং বড় বড় করপোরেশনগুলোকে কর ছাড় দেওয়া হবে!

বেকার সমস্যা, কোভিডকালীন অচল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অর্থনীতির বেহাল দশার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেই দায়ী করেন কমলা। দাবি করেন, ট্রাম্পের তৈরি করে যাওয়া ‘আবর্জনার স্তুপ’ সাফ করতে বাইডেন সরকারকে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতেই ব্যক্তিগত আক্রমণের দিকে ঝোঁকেন ট্রাম্প। কমলাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, উনি মার্ক্সবাদী। ওর বাবাও মার্ক্সবাদী ছিলেন। ডেমোক্র্যাটরা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর!

পাশাপাশি, প্রেসি়ডেন্ট হলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী। ব্যক্তিগত আক্রমণে অবশ্য বিচলিত হননি কমলা। হাসিমুখেই শুনেছেন সব ‘অভিযোগ’। রাশিয়া নিয়ে ট্রাম্পকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর হুঁশিয়ারি, পুতিন আপনাকে খেয়ে ফেলবে।

কমলা বলেন, ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন চীনের কাছে আমেরিকার চিপ বিক্রি করেছিলেন। যাতে নিজেদের সামরিক বাহিনীকে আরও মজবুত এবং আধুনিক করে তুলতে পারে চীন। চীনকে নিয়ে এমন নীতি হওয়া উচিত, যাতে একবিশং শতাব্দীর প্রতিযোগিতায় জিতে যায় আমেরিকা। সেইসঙ্গে কমলা অভিযোগ করেন, ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন তিনি বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন।

বিতর্কের সঞ্চালক গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান সুস্পষ্ট করার আহ্বান জানান। ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেন, ডেমোক্রেটরা ৯ মাসের গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের অধিকার দিতে চান। কমলার রানিং মেট টিম ওয়ালজ ৯ মাসের গর্ভাবস্থায়ও গর্ভপাতের অধিকার দেওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন।

ট্রাম্প চান, গর্ভপাতের বিষয়টি অঙ্গরাজ্যগুলো ঠিক করুক। তারা আইন করুক। নারীদের গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়টি নিষ্পত্তির অধিকার অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবেন তিনি।

ট্রাম্প বলেন, কিছু কিছু অঙ্গরাজ্য জন্মের পর নবজাতককে মেরে ফেলার অনুমতি দেয়। ট্রাম্পের এ কথার পর সঞ্চালক বলেন, দেশে এমন কোনো অঙ্গরাজ্য নেই, যেখানে জন্মের পর কোনো শিশুকে হত্যা করা বৈধ।

কমলা স্মরণ করিয়ে দেন, ট্রাম্পের আমলে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ পাওয়া বিচারপতিরাই বছর দুয়েক আগে গর্ভপাতের ফেডারেল অধিকার বাতিল করেন।

ট্রাম্পের উদ্দেশে কমলা বলেন, আপনি বলেন, মানুষ এটাই চেয়েছিল? কিন্তু এমনও ঘটনা ঘটেছে যে পার্কিং লটে গাড়িতে সন্তানসম্ভবা নারীর রক্তপাত হয়েছে। কারণ, তারা গর্ভপাত করার অনুমতি পাননি।

নারীদের কথা উল্লেখ করে আবেগপ্রবণ হয়ে কমলা বলেন, তারা এটা চান না।

যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের আর আট সপ্তাহ বাকি। ট্রাম্প না কমলা— কে হবেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? সে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। শুরু হয়ে গিয়েছে তোড়জোড়ও। কিন্তু দীর্ঘ নির্বাচনী প্রচারের পর এই প্রথম মুখোমুখি বিতর্কসভায় অংশ নিলেন তারা। সভার শুরুতে হেসে করমর্দনও করলেন! এর সঙ্গে সঙ্গেই অবসান হল প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক সভায় একে অপরকে হাত মিলিয়ে সম্ভাষণ না করার দীর্ঘ আট বছরের ধারার।

এর আগে গত জুন মাসে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রথম রাউন্ডের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট’ হয়েছিল। সভার শুরুতে নিয়ম মতোই কেউ কারো সঙ্গে হাত মেলাননি। বিতর্ক শুরুর পরেও প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করে ছাড়েন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফলস্বরূপ জনমত সমীক্ষাগুলোতেও এগিয়ে যান ট্রাম্প। এর পরেই ডেমোক্র্যাট জাতীয় সম্মেলনে বাইডেনের স্থানে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয় কমলা হ্যারিসকে।