গত শতকের সবচেয়ে নৃশংসতম গণ-আত্মহত্যার কাহিনী



ওসমান জাফর, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
জিম জোনসের অনুসারীদের একাংশ

জিম জোনসের অনুসারীদের একাংশ

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্ম মানুষের কল্যাণের জন্য। কিন্তু বহুকাল ধরে কিছু ব্যক্তি ধর্মকে পুঁজি করে চালিয়েছে জঘন্য নৃশংস কর্মকাণ্ড। এমনকি গত শতকের গণআত্মহত্যা-খুনের ঘটনাটিও ঘটেছে জিম জোনস্ নামে এক ধর্মগুরুর প্ররোচনায় ও নির্দেশে, গায়ানায়।

স্বঘোষিত ধর্মগুরু জিম জোনস্

১৮ নভেম্বর, ১৯৭৮। গায়নার জঙ্গল বেষ্টিত এক প্রত্যন্ত এলাকা। নাম জোনস্ টাউন। আশেপাশে কোনো জনপদ নাই। একটা স্টেজের সামনে বসে আছেন কালো চশমা পরিহিত একজন ধর্মগুরু নাম জিম জোনস্। গায়ে কোর্ট টাই, প্যান্ট। একটা পাটাতনের ওপর সিরিয়াল ধরে আসছে ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা, তাদের চোখ মুখে আতঙ্ক। প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষরাও আসছে। তাদের চোখ-মুখে আতঙ্ক, বিষণ্নতার ছাপ। এদেরকে জোর করে স্টেজের মঞ্চের সামনের দিকে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। চারদিক ঘিরে রেখেছে ধর্মগুরুর একদল পোষা বাহিনী। তাদের হাতে রাইফেল, তাক করা। মঞ্চের সামনে দু-তিনটা বালতিতে ফ্লেভারমিশ্রিত বেভারেজের সাথে সায়ানাইড মিশ্রণ করা হচ্ছে। একটার পর একটা ইনজেকশনের প্যাকেট ছিঁড়ে সেগুলোতে ভরা হচ্ছে ফ্লেভারমিশ্রিত বেভারেজের সাথে সায়ানাইড। শিশুরা কাঁদো কাঁদো মুখে এগিয়ে যাচ্ছে আর তাদের শরীরে পুশ করা হচ্ছে সায়ানাইড। একজনের পর একজন কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।

গণ-আত্মহত্যায় ব্যবহৃত সায়ানাইড মিশ্রণ ও ইনজেকশন

নারী আর শিশুরাই বেশি। শিশুরা শেষ হওয়ার পর প্রাপ্তবয়স্ক নারী, পুরুষ, বুড়া-বুড়ি সকলের গায়ে ইনজেকশন পুশ করা হচ্ছে। মাইকে উত্তেজিত অবস্থায় জোরে জোরে মটিভেশনাল স্পেরেচুয়াল আত্নহত্যামূলক বক্তৃতা দিচ্ছেন ধর্মগুরু জিম জোনস্। ওদিকে জোনস্ টাউন থেকে কয়েক কিলো দূরে একটা হেলিকাপ্টারের পাশে পড়ে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান লিও রায়ানের লাশ। তার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরো কয়েকজন সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার, মানবাধিকার কর্মী, জোনস্ টাউন থেকে নিজের মেয়েকে নিয়ে যেতে আসা বাবার লাশ পড়ে আছে। তাদেরকে গুলি করেছে জিম জোনসের অনুসারী একদল পোষা বাহিনী। আস্তে আস্তে জোনস্ টাউন একটা বিশাল লাশের স্তূপে পরিণত হচ্ছে। অবশেষে ধর্মগুরু জিম জোনস্ সায়ানাইডের মরার দৃশ্য দেখে নিজেও আতঙ্কিত। যে ডাক্তার এতক্ষণ অন্যদের শরীরে ইনজেকশন পুশ করেছে সে এবার নিজের গায়ে পুশ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। অতঃপর জিম জোনস্ নিজের মাথায় গুলি করে আত্নহত্যা করেন। এদিকে গায়নার রাজধানী জর্জটাউনে পিপল’স টেপলের শাখায় জিম জোনসের অডিও টেপের মাধ্যমে প্রেরিত নির্দেশে সুইসাইড করেছে তার অনুসারীরা। মোট লাশের সংখ্যা দাঁড়াল ৯১৮ জন। ৭০ জন ধর্মগুরু জিম জোনসের নির্দেশে স্বেচ্ছায় আত্নহত্যা করেন।

মোট লাশের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯১৮

পেছনের ইতিহাস
জিম জোনস্ ১৯৩১ সালের ১৩ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানায় জন্মগ্রহণ করেন। কৈশোর বয়সে কার্ল মাক্স, স্টেলিন, মাও, গান্ধী ও হিটলার সম্পর্কে গভীরভাবে পড়াশোনা করেন। তাদের দুর্বল ও সবল দিক সম্পর্কে অবগত হন। জিম জোনসের জন্ম হয়েছিল আমেরিকার ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের একটি দরিদ্র পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন বেশ বুদ্ধিমান এবং কিছুটা অদ্ভুত স্বভাবের। কিশোর বয়স থেকেই ধর্মের প্রতি তার টান ছিল প্রবল। সংস্কারবাদী খ্রিস্টান ধর্মীয় মতবাদগুলোর প্রতি ছিল তার বিশেষ আকর্ষণ। তরুণ বয়স থেকেই তিনি রাস্তায় রাস্তায় ধর্ম প্রচার শুরু করেন। বর্ণবাদ প্রথার বিরুদ্ধে তখন থেকেই তার ছিল বলিষ্ঠ আন্দোলন।

একসময় খ্রিস্টান ধর্মের সাথে কম্যুনিজম এবং সোশ্যালিজম জুড়ে দিয়ে তিনি এক নতুন ধরনের ধর্ম প্রচার শুরু করেন। জিম জোনসের স্বকীয় ধর্ম প্রচার কৌশল, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে তার সোচ্চার কণ্ঠ, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি এবং সর্বোপরি তার তারুণ্যের উদ্যম খুব দ্রুতই তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। বেশ কিছু ভক্ত জুটে যায় তার। তিনি তার নতুন প্রচারিত মতবাদের নাম দেন পিপল’স টেম্পল।

পিপল’স টেম্পল-এর লোগো

১৯৬৫ সালে জিম জোন্স তার অনুসারীদের ইন্ডিয়ানা থেকে ক্যালিফোর্নিয়াতে গিয়ে বসবাস করার নির্দেশ দেন। সেসময় তার বয়স ছিল ৩৫ বছরের কাছাকাছি। তিনি ধীরে ধীরে সনাতন খ্রিস্টান বিশ্বাস থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন এবং নিজেকে একজন মসিহা বা নবী বলে দাবি করা শুরু করেন। তিনি নিজেকে গৌতম বুদ্ধ ও যিশু খ্রিস্টের মতো মহাপুরুষ হিসেবে জোর প্রচারণা চালাতে থাকেন। ইতোমধ্যে জোনস্ ও তার অনুসারীরা ক্যালিফোর্নিয়াতে পিপল’স টেম্পলের একটি চার্চ প্রতিষ্ঠা করে ফেলে। জিম জোনস্ তার অনুসারীদেরকে নিপীড়িত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে আহ্বান জানান। অভাবগ্রস্ত মানুষদেরকে সাহায্য করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি। কিভাবে সমাজের বঞ্চিত গোষ্ঠীদেরকে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনা যায় এবং সমাজের সার্বিক উন্নয়নে তাদের কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে কাজ করা শুরু করেন এই টেম্পলের অনুসারীরা। অবশ্য আরো বেশি সংখ্যক মানুষকে নিজের দর্শনের প্রতি আকর্ষিত করাও এসব জনহিতৈষী কর্মকাণ্ডের আরেকটি বড় কারণ হিসেবে কাজ করেছিল।

পিপল’স টেম্পলের একটি চার্চ

ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকা সময়েই জোনস্ একবার দাবি করে বসেন, তিনি নাকি বিভিন্ন ধরনের মোজেজা দেখাতে পারেন। তার মধ্যে একটি ছিল ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে সারিয়ে তোলা। যদিও আদতেই তিনি কাউকে কখনো সারিয়ে তুলতে পেরেছিলেন কিনা, তার প্রমাণ মেলেনি। তবে তার ভক্তকূল এই প্রচারণাটি বেশ আনন্দের সাথেই গ্রহণ করেছিল।

১৯৭০ সালের দিকে এসে পিপল’স টেম্পল রাজনৈতিক দলগুলোর সহানুভূতি অর্জনে সক্ষম হয়। এসময় জোনসের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সখ্য গড়ে ওঠে। নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর পক্ষে সবসময় সোচ্চার থাকার কারণে জিম জোনস্ ও তার পিপল’স টেম্পল অ্যাঞ্জেলা ডেভিস এবং হার্ভি মিল্ক-এর মতো বামপন্থী নেতার এবং ব্ল্যাক প্যান্থারের মতো বিপ্লবী কৃষ্ণাঙ্গ গেরিলা সংগঠনের সুদৃষ্টি লাভ করে। ব্ল্যাক প্যান্থারের সুদৃষ্টি থাকায় বিপুল সংখ্যক আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক পিপল’স টেম্পলের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে।

গণ-আত্মহত্যার পরে উদ্ধারকৃত মৃতদের পাসপোর্ট

জীবনের বেশিরভাগ সময় আমেরিকায় কাটানো জিম জোনস্ কোনো এক কারণে আমেরিকার নিরাপত্তা নিয়ে সব সময় শঙ্কিত থাকতেন। তার ধারণা ছিল, খুব শীঘ্রই আমেরিকার ওপর নিউক্লিয়ার হামলা হবে। কিন্তু কেন হবে বা কারা তা করবে, সে সম্পর্কে তিনি কখনোই সুস্পষ্ট করে কিছু বলেননি। বরং এই নিউক্লিয়ার হামলার ধারণা তিনি তার অনুসারীদের মধ্যে সজোরে প্রচার করতে থাকেন। নিজের মতাদর্শ এবং অনুসারীদের রক্ষা করার জন্য তিনি সবাইকে নিয়ে আমেরিকা ত্যাগ করার পরিকল্পনা করেন। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে সবার থাকার মতো ভূখণ্ডের খোঁজ চলতে থাকে।

অবশেষে গায়ানার এক গহীন জঙ্গলের পরিত্যক্ত বিশাল একটি এলাকা পছন্দ হয় জোনসের। ১৯৭৭ সালে তিনি ও তার অনুসারীরা ক্যালিফোর্নিয়া থেকে দল বেঁধে রওনা হন গায়ানার উদ্দেশে। সেখানে তারা পিপল’স টেম্পলের নতুন চার্চ স্থপন করেন।

গায়ানার ওই জঙ্গলে এক নতুন শ্রেণিহীন সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন জোনস্। তবে সরকার এবং গণমাধ্যমবিহীন ওই সমাজের প্রধান সমস্যা ছিল বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ। অবশ্য সময়ের সাথে সাথে জোনসের অনুসারীরা সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। তারা আশেপাশের বনজঙ্গল কেটে সেগুলোকে কৃষি জমিতে রূপান্তরিত করেন। শুরু হয় কৃষিভিত্তিক এক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা, যা পরবর্তীতে জোনস্ টাউন নামে খ্যাতি লাভ করে।

জোনস্ টাউনে পিপল’স টেম্বলের চার্চ

জোনস্ টাউনের সদস্যদের দিনের বেলায় বাধ্যতামূলক ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। সন্ধ্যার পর থাকত জিম জোনসের বক্তৃতা শোনার পর্ব। সপ্তাহের কিছু কিছু রাতে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হতো। অবশ্য চলচ্চিত্রের পরিবর্তে বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে ভীতিমূলক বিভিন্ন তথ্যচিত্রই বেশি প্রদর্শিত হতো। বাইরের সমাজের সাথে যোগাযোগ না থাকায় জোনস্ টাউনে খাদ্যের অভাব ছিল প্রবল। তার ওপর যে কোনো ভুল কাজের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা তো ছিলই।

জোনস্ টাউনে থাকা অস্থায় জোনসের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। তিনি ধীরে ধীরে বাস্তব জগত এবং কাল্পনিক জগতের মধ্যে পার্থক্য হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন। অবশ্য এসবের পেছনে উচ্চমাত্রার ড্রাগ গ্রহণ ছিল অন্যতম কারণ। একসময় তিনি তার অনুসারীদেরকে বাইরের শত্রুর আক্রমণের ভয় দেখাতে শুরু করেন।

জোনস্ টাউন গণহত্যা থেকে বেঁচে ফেরা একজন বলেন, জিম জোনস্ বাহিরের পৃথিবী সম্পর্কে তাদের ভূয়া ও মিথ্যা তথ্য দিতেন। যেমন : নিগ্রোদের আমেরিকাতে ক্যাম্পে রেখে অত্যাচার করা হচ্ছে।

জোনস্ টাউনে আমেরিকানদের এই কাল্পনিক আক্রমণের একটি সমাধানও বের করে ফেলেন জোনস্। আর তা হলো গণ-আত্মহত্যা! অবশ্য জোনস্ এর নামকরণ করেছিলেন ‘বিপ্লবী মৃত্যু’। তিনি তার অনুসারীদের বলেন, যদি কখনো শত্রুপক্ষ জোনস্ টাউন আক্রমণ করে, তবে সবাই যেন এই বিপ্লবী মৃত্যু স্বেচ্ছায় বরণ করে নেয়।

ভীতিমূলক বিভিন্ন তথ্যচিত্রের রিল

১৯৭৮ সালের দিকে যখন বর্ণবাদ এবং দারিদ্র্যমুক্ত জোনস্ টাউনের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন একজন আমেরিকান কংগ্রেসম্যান-লিও রায়ান, জোনস্ টাউন প্রকল্প পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ১৮ জন সদস্যের একটি পরিদর্শক দল নিয়ে গায়ানার উদ্দেশে রওনা হন এবং ১৭ নভেম্বর, ১৯৭৮ তারিখে জোনস্ টাউনে জিম জোনস্ এবং তার অনুসারীদের সাথে সাক্ষাত করেন।

জোনস্ টাউনের পরিস্থিতি কংগ্রেসম্যান রায়ানের কাছে বেশ স্বাভাবিকই মনে হয়েছিল। জোনসের অনুসারীরা যে স্বেচ্ছায় নিজেদের ঘরবাড়ি ত্যাগ করে গায়ানায় এসেছেন, তা-ও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। ফলে গায়ানা ত্যাগের আগে জোনসের কাছে নিজের সন্তুষ্টির কথা অকপটে প্রকাশ করেন তিনি।

কিন্তু এরপরও কংগ্রেসম্যানের এই সফর নিয়ে জোনসের উৎকণ্ঠা কাটল না। তার ভয় হচ্ছিল, যদি রায়ান আমেরিকায় গিয়ে জোনস্ টাউনের নামে কোনো বৈরি মন্তব্য করেন, তাহলে সরকার হয়তো তার গোটা জোনস্ টাউন প্রজেক্টই বন্ধ করে দিতে পারে।

কংগ্রেসম্যান-লিও রায়ান

তা যাতে না হয়, সেজন্য জোনস্ তার সিকিউরিটি ফোর্সকে পরিদর্শক দলের ওপর হামলা করার জন্য পাঠান। পরিদর্শক দল যখন গায়ানার বিমানবন্দরে পৌঁছে, তখন তাদের ওপর হামলে পড়ে জোনসের বাহিনী। তাদের হামলায় চারজন পরিদর্শক নিহত হন। নিহতদের মধ্যে কংগ্রেসম্যান লিও রায়ানও ছিলেন। তিনি মোট ২০টি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।

আমেরিকান কংগ্রেসম্যান নিহত হয়েছেন। এখন তো জোনস্ ও তার পিপল’স টেম্পলের বাঁচার কোনো রাস্তা নেই। আমেরিকান সরকার অবশ্যই তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য সেনাবাহিনী পাঠাবে। তাই এই গ্রেফতার এবং গ্রেফতার-পরবর্তী নির্যাতন এড়াতে জোনস্ তার অনুসারীদেরকে গণ-আত্মহত্যার নির্দেশ দেন।

তবে একজন নারী অনুসারী এর আংশিক বিরোধিতা করে বলেন, “মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না। মরতে আমি রাজি আছি। কিন্তু আমাদের বাচ্চাদেরকে বাঁচার সুযোগ দেওয়া হোক।” উত্তরে জোনস্ বলেন, “বাচ্চাদের শান্তি প্রয়োজন। আমেরিকান বাহিনী আমাদের সাথে যা করতে যাচ্ছে, তা দেখার চেয়ে তাদের মৃত্যুবরণ করাটাই শ্রেয়।”

বিমানবন্দরে জোনসের অনুসারীদের হামলার পর

জোনসের নির্দেশে সায়ানাইড মিশ্রিত একধরনের পানীয়ভর্তি ড্রাম নিয়ে আসা হয় চার্চ প্রাঙ্গণে। একে একে সবাই সেই পানীয় পান করে এবং ইনজেকশনে শরীরে প্রবেশ করিয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। শিশুরাও বাদ যায়নি। তাদের শরীরেও ইনজেকট্ করা হয় সায়ানাইড। এসময় জোনস্ সবাইকে দ্রুত এই আত্মহত্যা কার্যক্রম শেষ করার তাগাদা দিয়ে যাচ্ছিলেন।

অবশ্য জোনস্ নিজে সায়ানাইডের মাধ্যমে আত্মহত্যা করেননি। সায়ানাইড গ্রহণের পর তার অনুসারীদের যে প্রচণ্ড যন্ত্রণার মাধ্যমে মৃত্যু হচ্ছিল, তা দেখে তিনি ওই রাস্তা বাদ দেন। তার বদলে তিনি মাথায় গুলি করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

পরবর্তীতে গায়ানার সেনাবাহিনী যখন কংগ্রেসম্যানের হত্যাকারীদের ধরতে জোনস্ টাউনে যান, তারা ভেবেছিলেন হয়তো জিম জোনসের অনুসারীরা তাদের ওপর আক্রমণ করে বসবে। কিন্তু কিসের কী! জোনস্ টাউনে পৌঁছার পর তাদের সবার চোখ কোটর থেকে বের হয়ে যাবার অবস্থা হয়। যত দূর চোখ যায়, শুধু লাশ আর লাশ। একজন আরেকজনের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে। যুবক, বৃদ্ধ, নারী, শিশু—কেউ বাদ যায়নি।

যত দূর চোখ যায়, শুধু লাশ আর লাশ

সেদিনের সেই লাশের মিছিলের মধ্যে শিশু ছিল ৩০০ জন, যাদেরকে তাদের পিতামাতা হত্যা করেছিল। বৃদ্ধ নাগরিকের সংখ্যাও ছিল ৩০০ জনের মতো। জোনস্ টাউনের নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় তাদের শরীরে সায়ানাইড প্রবেশ করানো হয়। বাকিরা স্বেচ্ছায় বরণ করে নিয়েছিল মৃত্যুকে।

জোনস্ টাউনের ঘটনাকে গণহত্যা বা গণ-আত্মহত্যা যাই বলা হোক না কেন তা আমেরিকার ইতিহাসের এক করুণ অধ্যায় এটি। ওইদিন যারা মৃত্যুবরণ করেছিল, এমন নয় যে তারা সবাই নিরক্ষর বা চলমান নাগরিক জীবনযাত্রা সম্পর্কে অজ্ঞ। বরং জিম জোনসের অনেক অনুসারীই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তাহলে কেনইবা এত বিপুল সংখ্যক মানুষ শুধুমাত্র একজনের কথায় স্বেচ্ছায় মৃত্যুর পথে পা বাড়িয়ে নিজেকে ধ্বংস করে দিলেন, তা আজও রহস্যময়।

   

রাতেও সূর্য অস্ত যায় না যেখানে!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
রাতেও সূর্য অস্ত যায় না যেখানে

রাতেও সূর্য অস্ত যায় না যেখানে

  • Font increase
  • Font Decrease

২৪ ঘণ্টায় দিন রাত সেতো আমরা সকলেই জানি। সারা দিনের ক্লান্তি কাটিয়ে রাতে ঘুমাই আমরা, প্রত্যাশায় থাকি নতুন এক ভোরের। কিন্তু একবার ভাবুন তো, যেখানে সূর্যই অস্ত যায় না সেখানে নতুন ভোর আসবে কীভাবে? কিংবা যেখানে রাত হয় না, সেখানকার মানুষ দিনের ক্লান্তি দূর করতে ঘুমাবে কখন? ভাবছেন এমনও জায়গা আছে নাকি! অবাস্তব নয়, পৃথিবীর বুকেই আছে এমন কিছু স্থান যেখানে কখনো সূর্য অস্ত যায় না। দীর্ঘ ঘুমের পর যেখানকার মানুষ কাকডাকা ভোরের দেখা পায় না। 

আজকের আলোচনায় আমরা জানব পৃথিবীর এমন কিছু স্থান, যেখানে সূর্য অস্ত যায় না রাতেও!

নিশীথ সূর্যের দেশ নরওয়ে, টানা আড়াই মাস রাত হয় না যেখানে!

নরওয়ে: নরওয়েকে বলা হয় নিশীথ সূর্যের দেশ। দেশটি ভৌগলিক অবস্থান এটিকে দিয়েছে পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে ভিন্নরূপ। মে থেকে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত নরওয়ের আকাশ হতে সূর্য অস্ত যায় না। ফলে টানা এই আড়াই মাস নরওয়ের মানুষ রাতের দেখা পায় না! দেশটির আরেকটি বিশেষত্ব হলো আর্কটিক অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর থেকে রাতেও দিগন্ত রেখায় সূর্যের দেখা মেলে। 

যেখানে বছরে দুই মাস সূর্য ডোবে না। নুনাভুত, কানাডা

নুনাভুত, কানাডা: কানাডার নুনাভুট অঞ্চল আর্কটিক সার্কেলের ২ ডিগ্রি উপরে অবস্থিত। এখানে বছরের প্রায় দুই মাস সূর্য ডোবে না। শুধু তাই নয়, শীতকালে এই স্থানে টানা ৩০ দিন দেখা মেলে না সূর্যের। অর্থাৎ এখানকার মানুষ একদিকে যেমন দুই মাসের টানা সূর্যের ছায়াতলে থাকে, একইভাবে যাপন করতে হয় দীর্ঘ এক মাসের রাত।

জুন মাসে রাতের বেলায়ও সূর্য দেখা যায় আইসল্যান্ডে

আইসল্যান্ড: আইসল্যান্ড বিখ্যাত সে দেশে সাপ ও মশার অনুপস্থিতির কারণে। গ্রেট ব্রিটেনের পর আইসল্যান্ড ইউরোপের সবথেকে বড় দ্বীপ। জুন মাসে রাতের বেলায়ও সূর্য দেখা যায় এ দ্বীপে। 

পোলার নাইটস নামে পরিচিত, গ্রীষ্মকালে রাতের আকাশেও সূর্য থাকে যেখানে!

ব্যারো, আলাস্কা: আলাস্কার এ অঞ্চলে মে মাসের শেষ থেকে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত (গ্রীষ্মকালে) রাতের আকাশেও সূর্যের দেখা মেলে। রয়েছে মুদ্রার উল্টোপিঠও! শুধু সূর্য অস্ত যায় না তাই নয়, নভেম্বরের শুরু থেকে ডিসেম্বর শুরু পর্যন্ত টানা রাত থাকে এখানে। যেকারণে ‘পোলার নাইটস’ নামেও পরিচিত এই স্থানটি।

 হাজার হ্রদের দেশ ফিনল্যান্ডে টানা ৭৩ দিন সূর্য ডোবে না!

ফিনল্যান্ড: ফিনল্যান্ডকে বলা হয় হাজার হ্রদ এবং দ্বীপের দেশ। ইউরোপের এই দেশে গরমকালে একটানা ৭৩ দিন সূর্য ডোবে না। আবার একইভাবে শীতকালে টানা ৩২ দিন সূর্যের দেখা মেলে না এখানে। এই অদ্ভুত প্রাকৃতিক বৈষম্যতার কারণে সে দেশের অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে যে, মানুষ শীতকালে বেশি ঘুমায় এবং গরমকালে কম ঘুমায়।

 সুইডেনে বছরের অর্ধেক সময় থাকে দিন, বাকি অর্ধেক রাত!

সুইডেন: ৩৬৫ দিনে এক বছর তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু সুইডেনের বছর শেষ হয় একদিনে! কারণ বছরের অর্ধেক সময় এখানে থাকে দিন, বাকি অর্ধেক থাকে রাত। তাও আবার টানা! তাই দিন-রাতকে সূর্যের হিসবে ধরে, বলায় যায় যে সুইডেনে বছর কাটে এক দিনেই! আর এখানকার মানুষ বছরের অর্ধেক সময় থাকে অন্ধকারে বাকি অর্ধেক থাকে আলোতে।

;

উড়োজাহাজকেই বাড়ি বানিয়েছেন এই নারী !



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
উড়োজাহাজে বানানো বাসায় জো অ্যান ইউসারি। ছবি: সংগৃহীত

উড়োজাহাজে বানানো বাসায় জো অ্যান ইউসারি। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি দেখে বুঝার উপায় নেই এটি উড়োজাহাজের ভিতরে তৈরি করা সুন্দর, পরিপাটি একটি রুম। বলতে গেলে উড়োজাহজটিকে তিনি একটি সম্পূর্ণ বাড়িতেই রূপ দিয়েছেন। কি নেই এর মধ্যে? ১৫০০ বর্গফুটের এই বাসায় আছে তিনটি শয়নকক্ষ, দুটি গোসলখানা এমনকি একটি উষ্ণ পানির বাথটব। 

এতক্ষণ যেসব বিবরণ দেয়া হয়েছে তার মালিক যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের বেনোইট শহরের বাসিন্দা জো অ্যান ইউসারি। পেশায় তিনি একজন রূপচর্চাবিশেষজ্ঞ। খবর সিএনএন।

এ ঘটনাটির সময়কাল নব্বই দশকের দিকে। তখন এই পুরো কাজটিতে অ্যানকে ব্যয় করতে হয়েছে ৩০ হাজার ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় বর্তমান হিসাবে প্রায় ৩৩ লাখ টাকা। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের বেনোইট শহরের বাসিন্দা জো অ্যান ইউসারির বাড়িঘর আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর তিনি নতুন করে বাড়ি বানানোর চিন্তা বাদ দিয়ে পরিত্যক্ত বোয়িং ৭২৭  উড়োজাহাজকেই বানিয়ে ফেলেছেন নিজের বসবাসের জায়গা।

১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ওই উড়োজাহাজে বসবাস করেন তিনি। বাড়ি বানানোর এই কাজটির বেশিরভাগ অংশই তিনি নিজে করেছেন।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, বেসামরিক বিমান পরিবহনের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগসূত্র ছিল না। উড়োজাহাজে থাকার এই উদ্ভট পরামর্শ দেন তার দুলাভাই। তিনি পেশায় একজন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার।  

যদিও অ্যানই উড়োজাহাজকে বাসাবাড়ি বানানো একমাত্র ব্যক্তি নন। তাঁর এই নিখুঁত প্রকল্পে অন্যরাও উৎসাহিত হয়েছেন। ৯০’র দশকের শেষ দিকে ব্রুস ক্যাম্পবেল নামক এক ব্যক্তিও উড়োজাহাজে বসবাস শুরু করেন। তিনি পেশায় তড়িৎ প্রকৌশলী ছিলেন। তবে ক্যাম্পবেলের বেসরকারি বৈমানিক লাইসেন্স রয়েছে।

ক্যাম্পবেল বলেন, একদিন আমি গাড়ি চালিয়ে রেডিও শুনতে শুনতে বাসায় ফিরছিলাম। ওই সময় অ্যানের উড়োজাহাজে বসবাসের গল্পটি শুনে খুবই বিস্ময়কর আর মজার লাগছিল। তখন থেকে আমিও এরকম বাড়ি বানানোর চিন্তা করি। 

ক্যাম্পেবল পরিত্যক্ত বোয়িং ৭২৭ উড়োজাহাজকেই নিজের বাড়ি বানিয়ে ফেলছেন। ২০ বছর ধরে তিনি দেশটির অরেগন অঙ্গরাজ্যের হিলসবোরোতে গাছগাছালিঘেরা একটি এলাকায় বসবাস করছেন। এমন একটি অগ্রসর ধারণা দেওয়ার জন্য অ্যানার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এত বছর উড়োজাহাজে বসবাস নিয়ে কোনো আফসোস নেই ক্যাম্পবেলের। তিনি এটি উপভোগ করেন এবং এই বাসাবাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি। 

;

চীনা শিশুর রান্নার দক্ষতায় অবাক হবেন আপনিও?



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
রাধুঁনীর ভূমিকায় ভাইরাল শিশুটি। ছবি: সংগৃহীত

রাধুঁনীর ভূমিকায় ভাইরাল শিশুটি। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা প্রায়ই প্রাপ্তবয়স্কদের ক্রিয়াকলাপ অনুকরণ করে থাকে। অনেক সময় তাদের প্রিয় খেলনা হয়ে উঠে বাসার বিভিন্ন আসবাবপত্র যেমন, থালা, বাটি, খুন্তিসহ আরও অনেক কিছু। এসব নিয়ে খেলা করা পর্যন্ত ঠিকাছে। কিন্তু, কয়েক বছরের এক শিশুর রান্নার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তাও আবার সেই রান্নার কৌশল অবিশ্বাস্য! চীনের সিচুয়ান প্রদেশের নেইজিয়াং প্রদেশের এক শিশু ইন্টারনেট থেকে বিখ্যাত এক শেফের রান্নার কৌশল অনুসরণ করে ইন্টারনেটে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) শিশুটির রান্নার ভিডিওটি গত ফেব্রুয়ারিতে পোস্ট করা হয়। এতে শিশুটি অগণিত নেটিজেনদের হৃদয় জয় করে নেয়। ভিডিওটি দেখলে আপনি অবাক হবেন নিশ্চিত! শিশুটি যেভাবে কড়াই আর খুন্তি-হাতা যেভাবে নাড়াচাড়া করছিল, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ বছর ফেব্রুয়ারিতে চীনের একটি শিশুর রান্নার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (আগের নাম টুইটার) ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে অভিনব কৌশলে রান্না করতে দেখা যায় শিশুটিকে। ওই শিশুটি ইন্টারনেট থেকে রান্না শিখেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। 

শিশুটির মা জানান, আমার ছেলের যখন মাত্র কয়েক মাস তখন থেকেই তার রান্নার প্রতি আগ্রহ শুরু হয়। টেলিভিশনে রান্নার অনুষ্ঠান দেখে এমন শেফদের নকল করে সেসব কৌশল শিখতো এবং সেগুলো বাসায় বানানোর চেষ্টা করতো।

ভিডিওতে, ছোট্ট শিশুটিকে একটি মইয়ের সাহায্যে দক্ষতার সাথে কড়াইয়ে চামচ দিয়ে সবজি নাড়তে দেখা যায়। এর সঙ্গে নিজেও তালে তালে একটু নাচছে। একপর্যায়ে কড়াইয়ের হাতলে বিশেষ কৌশলে চামচটি আটকে নেয়। এরপর কড়াইটিকে নিয়ে ঘাড়ের ওপর দিয়ে শরীরের চারপাশে ঘুরাতে থাকে। আবার কড়াইটি চুলার ওপর রেখে সবজি নাড়তে নাড়তে গান গাইতে থাকে। আর পুরো রান্নাটি হয় তিন পায়া বিশিষ্ট একটি বানানো চুলায়।

এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। 

ভিডিওটির নিচে অলিভিয়া ওয়াং নামে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করে লিখেছেন, এই ছোট্ট ছেলেটি কীভাবে এত দ্রুত এই রান্নার প্যানটি (কড়াই) পরিচালনা করতে পারে এবং তার রান্নার দক্ষতা এতো আশ্চর্যজনক?

;

এই বয়সেও বৃদ্ধার বিশ্ব রেকর্ড!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বয়স কেবলই একটা সংখ্যা’ বাংলায় এমন একটি কথা প্রচলিত রয়েছে। এই কথাটি সম্পূর্ণ সত্য বলে প্রমাণ করেছেন মার্কিন এক নারী। স্বাভাবিকভাবে দেখলে যে বয়সে মানুষ যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করে যান, সে বয়সের এক বৃদ্ধা কিনা নিঞ্জা প্রতিযোগিতায় (রিং দোলানো ও দড়ি আরোহণ) করেছেন বিশ্ব রেকর্ড। তাও আবার বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নারী হিসেব। ল্যানোর ম্যাককল (৭১) নামে ওই নারী যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে বসবাস করেন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের বরাত দিয়ে এমন খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৭১ বছর বয়সী মার্কিন নারী ল্যানোর ম্যাককল নিঞ্জা প্রতিযোগিতার রাউন্ডআপে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নারী হিসেবে বিশ্ব রেকর্ড করেছেন। তার এমন সাফল্যের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে এবং অভিনন্দন জানানো হয়েছে। 

রেকর্ড সংরক্ষণকারী সংস্থাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (আগের নাম টুইটার) একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে ম্যাককলকে নিঞ্জা প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জে ভরা রিং দোলানো, দড়ি আরোহণ এবং একটি বার থেকে অন্য বারে লাফ দিতে দেখা যায়। এ কাজগুলো তিনি খুব সহজেই করেছেন। 

ল্যানোর জানান, আমার মেয়ে (জেসি গ্রাফ) আমেরিকান নিঞ্জা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এই প্রতিযোগিতায় যখন তার সাফল্য দেখি তখন নিজের মধ্যেও এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার ইচ্ছে তৈরি হয়। আমার বয়স যখন ৬৬ তখন আমি এই প্রতিযোগিতার যাত্রা শুরু করি। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আমার মেয়ে (জেসি গ্রাফ) আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

তার ব্যায়ামের রুটিন সম্পর্কে তিনি জানান, আমার প্রাথমিক খাদ্যতালিকা হল মাছ, শাকসবজি এবং কিছু টার্কি মুরগি। আমি দুগ্ধজাত দ্রব্য এবং চিনি এড়িয়ে চলি।

এতোদূর আসার পিছনে তার সবচেয়ে বড় সমর্থক এবং উৎসাহদাতা ছিল তার স্বামী এমনটাও জানিয়েছেন তিনি।  

এতো সাফল্যের পরও থামতে নারাজ ৭১ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা। বরং তিনি এখন আরো বেশি প্রতিজ্ঞ। পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চান বয়সের বাঁধা কোনো বাঁধাই নয়।

;