বিশ্বসেরা নর্তকী ও ভয়ঙ্কর নারী খুনির গল্প



জাভেদ পীরজাদা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
রিটা হেওয়ার্থ [অক্টোবর ১৭, ১৯১৮ - মে ১৪, ১৯৮৭]

রিটা হেওয়ার্থ [অক্টোবর ১৭, ১৯১৮ - মে ১৪, ১৯৮৭]

  • Font increase
  • Font Decrease

“আমি ঘাম ঝরিয়ে খাই। ছিনিয়ে খাই না” - রিটা হেওয়ার্থ

নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের একটি নাইট ক্লাব। ১৯৪২ সালের ১২ মার্চ। সেই ক্লাবে নাচছিলেন রিটা হেওয়ার্থ। হঠাৎ গুলি। দর্শকদের ভয়ে ছোটাছুটি। হোটেল কর্তৃপক্ষের চেহারায় আতঙ্ক। সাত নিগ্রো তরুণ গুলি করতে করতে এগিয়ে গেল ক্যাশ কাউন্টারের দিকে। তখনও নাচছিলেন রিটা হেওয়ার্থ। এক নিগ্রো তরুণ শুধু বলল, স্টপ। রিটা জবাবে বললেন, “তোর গুলি আমি ভয় পাই না। একঘণ্টার জন্য নাচতে এসেছি। শেষ হতে বাকি চার মিনিট। চুক্তির শর্ত শেষ করেই নাচ থামাব। আমি ঘাম ঝরিয়ে খাই। ছিনিয়ে খাই না।”

তার এ কথায় সাত নিগ্রো চাঁদাবাজি তো করলই না। উল্টো রিটাকে ৩০০ ডলার দিয়ে চলে গেল। মজার ব্যাপার এ ঘটনার পরদিন তার কাছে ফিল্ম প্রডিউসার রবার্তো প্রিডের ফোনকল আসে। দেখা করেন। নাচের পাশাপাশি শুরু হয় অভিনয়। ইনফার্নো নামের মুভিতে কৈশোরে অভিনয় করলেও বড় সুযোগ পান গিল্ডা ও লেডি ফ্রম সাংহাই মুভিতে অভিনয় করে।

রিটা বিশ্বখ্যাত মার্কিন অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী ছিলেন। ১৯৪০ সাল থেকে লাইফ সাময়িকীতে পাঁচবার প্রচ্ছদচিত্রে স্থান পান রিটা। অসংখ্য মুভিতে অভিনয় করেন। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট কর্তৃক সর্বকালের সেরা ১০০ তারকাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন।

জন্ম ১৯১৮ সালে। তার বাবা মা ছিলেন স্প্যানিশ ও আইরিশ। বাবা চাইতেন নৃত্যশিল্পী হোক, তার মা চাইতেন অভিনয় করুক। এনিয়ে মতবিরোধে তাদের ডির্ভোসও হয়। কিন্তু তিনি বাবা ও মায়ের উভয়ের ইচ্ছাই পূরণ করেছিলেন।

বিয়ে করেছিলেন একাধিক। শেষটিই টিকেছিল। ১৯৬৭ সালে অবকাশ যাপনে যান ফ্রান্সে। এক দুপুরে পানশালায় বসে বিয়ার খাচ্ছিলেন। বিয়ার খাওয়া শেষে বিল মিটিয়ে ওয়েটারকে বকশিশ দেওয়ার সময় জানলেন তার নাম আর্থার ফিলিপ। একজন নিগ্রো। উগান্ডা থেকে আমেরিকা আসা অভিবাসী। যৌবনে চাঁদাবাজি করত। ড্রাগ নিত। ১৯৪২ সালের ১২ মার্চ নাইটক্লাবে হামলার সময় রিটা হেওয়ার্থের কথা শুনে তার জীবন পাল্টে যায়। ওই যে বলেছিলেন, “ঘাম ঝরিয়ে খাই, ছিনিয়ে খাই না।” এরপর থেকে রেল শ্রমিক ও পরে ওয়েটার। নাটকীয়তার শুরু এখানেই। রিটা বিয়ে করেন অখ্যাত আর্থার ফিলিপকে।

আরো পড়ুন ➥ স্ট্যালিন ও হিটলার, নন্দিত ও নিন্দিত দুই মুখ

ফিরে আসেন ভার্জিনিয়া। মারা যান ১৯৮৭ সালে, আর্থার ফিলিপের কোলে মাথা রেখেই। বিড়বিড় করে শেষ কথা ছিল তার, “তোমার আমার দেখা হয় যেন আবার।”

“৬০০ খুনের পেছনে একটি আপেলই যথেষ্ট” - এলিজাবেথ বাথোরি

এখন পর্যন্ত তার খুনের রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি। ৫৪ বছরের জীবনে ৬০০ জনকে খুন করেছেন। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম আছে তার। তিনি এত খুন করেছেন কিন্তু প্রতিটি খুন করার কৌশল ছিল আলাদা। জন্ম হাঙ্গেরিতে ১৫৬০ সালে। মৃত্যু ১৬১৪ সালে। নাম, এলিজাবেথ বাথোরি। নোবেল বিজয়ী হাঙ্গেরিয়ান লেখক ইমরে কার্তেজ তাকে নিয়ে ফিকশন লিখেছেন। বাথোরি এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, “৬০০টি খুন করার পেছনে একটি আপেলই যথেষ্ট ছিল।”

◤ এলিজাবেথ বাথোরি [আগস্ট ৭, ১৫৬০ - আগস্ট ২১, ১৬১৪] ◢


তিনি খুনের নেশায় মত্ত হন তাঁর স্বামী ফ্র্যাংক নাডাসডি ১৬০৪ সালে মারা যাওয়ার পর। তবে আগেও খুন করেছিলেন ৪৮টি। কিন্তু বাকিগুলো এরপর। তিনি ভার্জিন নারীদের বাসার কাজে নিযুক্ত করতেন খুন করার জন্য। সবগুলো খুন করেন ১৫৮৫ থেকে ১৬০৯ সালের মধ্যে। নারীদের খুন করার ক্ষেত্রে কখনো তিনি ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতেন। কখনো ঘুমের মধ্যে গলায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করতেন। কখনো বাথটাবে গোসল করার নামে ‘টিনসা’ নামের একধরনের পানির পাম্প দিয়ে অতিরিক্ত পানি খাইয়ে মারতেন। ফলে কোনো খুনেই প্রমাণিত করা যেত না যে বাথোরি খুন করেছেন। প্রথম খুন করেন বুদাপেস্টে এক মাতালকে গাড়ি চাপা দিয়ে, ১৫৮৫ সালের ডিসেম্বরের বড়দিনে।

আরো পড়ুন ➥ প্রেম করে বিশ্বখ্যাত খুনের দুই আসামি

তিনি ১৬১০ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে বলেছিলেন, “একটি আপেল কেটে আমি শৈশবে খেয়েছিলাম। তখন মনে হয়েছিল আপেলটি কান্না করছে। এরপর টানা ছয়দিন আমি ঘুমাতে পারিনি। ডাক্তার সিডেটিভ অষুধ দিয়েছিলেন। পরে বুদাপেস্টের রাস্তায় বড়দিনে চার্চ থেকে যখন ফিরছিলাম তখন গাড়ির সামনে এক মাতাল বারবার বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করছিল। হর্ন দিলেও সরছিল না। হঠাৎ চোখের সামনে ভাসতে থাকল অসংখ্য আপেল। এরপর আর দেরি না করে লোকটিকে গাড়িচাপা দিই। আফসোস করি না এই ভেবে যে আপেলকে খুন করা গেলে মানুষ খুন করলে অপরাধ কোথায়?” 
(সূত্র, দ্য থট, লেখক আব্রাহাম স্মিথ)

ভার্জিন নারীদের কেন খুন করতেন এর জবাবে তিনি বলেন, “একধরনের যৌন ঈর্ষা কাজ করত। আমার মনে হতো তারা পুরুষের স্পর্শের বাইরেই থাকুক। আমি যেমন আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর যৌনকর্ম থেকে দূরে থেকেছি। আগেও থেকেছি। অনেক সময়ই আমি খুন করার পর সুযোগ পেলে লাশ খুঁড়ে রক্ত খেতাম।”

   

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;