পার্বত্য চট্টগ্রামের কোটা সুবিধা অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ মানুষের প্রাপ্য



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পার্বত্য চট্টগ্রামের কোটা সুবিধা অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ মানুষের প্রাপ্য

পার্বত্য চট্টগ্রামের কোটা সুবিধা অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ মানুষের প্রাপ্য

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণের মতোই পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলো উচ্চশিক্ষা এবং চাকরি ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার সুবিধা পেয়ে জীবনমান ও আর্থ-সামাজিক সূচকে অভূতপূর্ব অগ্রগতি করেছে। তবে সব নৃগোষ্ঠী সমভাবে কোটার সুবিধা পেয়ে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারছে না এবং কিছু সম্প্রদায়ের দ্বারা একচ্ছত্রভাবে কোটা সুবিধা ব্যবহার করার মতো পরিস্থিতি চলছে। এতে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বৈষম্য ও ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে বঞ্চিত উপজাতি গোষ্ঠীগুলো ও পার্বত্য বাঙালিদের মধ্যে ক্ষোভ, অসাম্য ও বঞ্চনা।

কয়েকটি গবেষণায় প্রাপ্ত্য তথ্যে জানা যায়, প্রধান কিছু উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আরও শক্তিশালী হয়ে অপরাপর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে পশ্চাৎপদ ও প্রান্তিক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিচ্ছে, যা সুষম উন্নয়ন ও সব নাগরিকের সম-অধিকারের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সামাজিক ও গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব ও বিভেদের অন্যতম মূল কারণ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সংবিধানের ২৯-এর ৩ (ক) অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলোকে অনগ্রসর শ্রেণি হিসেবে বিবেচনা করে ১৯৮৫ সালে সরকারি চাকরিতে তাদের জন্য শতকরা পাঁচ ভাগ কোটা সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়। এ ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে উপজাতি কোটা রাখা হয়। ২০১৫ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বিধি-১ শাখা কর্তৃক সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সার্কুলারে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসে নিয়োগের ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত কোটার ক্ষেত্রে ‘উপজাতীয়’ শব্দ ব্যবহারের পরিবর্তে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ হিসেবে প্রতিস্থাপন করা হয়। উপরন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি চাকরি এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা বিদ্যমান থাকার পাশাপাশি ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সদস্যগণ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়ে থাকেন।

কিন্তু তথ্য-পরিসংখ্যানগত বাস্তবতা এই যে, উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য চাকরি ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত কোটা সুবিধার দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামের সব নৃগোষ্ঠী সমভাবে উপকৃত হচ্ছে না। কোটার সিংহভাগ সুবিধা এককভাবে চাকমা ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মারমা ও ত্রিপুরা উপজাতিরা পেয়ে থাকে আর বাকি ১০-১১টি উপজাতি বলতে গেলে বঞ্চিত হচ্ছে। সবচেয়ে বৈষম্যমূলক চিত্র এটাই যে, একই পাহাড়ের দুর্গম ও বিরূপ পরিস্থিতিতে বসবাস করলেও পার্বত্য বাঙালি জনগোষ্ঠী কোটা সুবিধাবঞ্চিত হয়ে শিক্ষা, চাকরি, আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদায় চরমভাবে পিছিয়ে পড়ছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে জনসংখ্যার অর্ধেক হয়েও পরিসংখ্যানগত বাস্তবতায় তারাই অবহেলিত, প্রান্তিক ও দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে।

২০১৬ সালে খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট কর্তৃক পরিচালিত গবেষক সুগত চাকমার গবেষণায় বলা হয়, খাগড়াছড়ি জেলায় বসবাসকারী চাকমা জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা, শিক্ষার হার ও পেশাগত ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কোনো কোনো চাকমা গ্রামের সর্বোচ্চ শতকরা ৮০ থেকে সর্বনিম্ন শতকরা ৪০ ভাগ লোক শিক্ষিত। শিক্ষিত চাকমাদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে চাকরি করছেন। উদাহরণস্বরূপ, খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি কলেজে চাকমা জনগোষ্ঠীর ৭০ জন শিক্ষকতায় নিয়োজিত। জেলায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চাকমা নৃগোষ্ঠীর ৩০ চিকিৎসক কর্মরত। ৯টি ব্যাংকের শাখায় ৬৮ চাকমা কর্মরত, যার মধ্যে ৪৬ জন পুরুষ এবং ২২ জন নারী। স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন আর্থিক সেক্টরেও চাকমারা নেতৃস্থানীয় অবস্থানের অধিকারী। চাকমাদের উল্লেখযোগ্য উন্নতি চাকরি ও উচ্চশিক্ষায় কোটাব্যবস্থার সুফল।

তবে শহরে বসবাসকারী চাকমারা এসব ক্ষেত্রে যত সুবিধা পাচ্ছে, গ্রামের চাকমা সম্প্রদায় তা পাচ্ছে না। অনুরূপভাবে চাকমাদের উন্নতির নিরিখে পার্বত্য বাঙালি সম্প্রদায় এবং বাকি ১২-১৩টি উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অনেক পেছনে। এ কারণে বাঙালিরা কোটা ও চাকরিসহ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সম-অধিকারের দাবি করছে। অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সম্প্রদায়, যেমন, বম, খুমি, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, মং, চাক প্রভৃতি কোটা ও চাকরির সুবিধার ক্ষেত্রে একচ্ছত্র অগ্রাধিকার ও সুবিধার মাধ্যমে অতি অগ্রসর চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গা নৃগোষ্ঠীর সমপর্যায়ে আসার প্রয়োজনে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার ও তাদের অনুকূলে সমন্বয়সাধনের দাবি করেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে বিগত ১০ বছরের (২০১১-২০২১) সময়কালে উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যানে চাকমাসহ কয়েকটি সম্প্রদায়ের একচ্ছত্র প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়, যা থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ‘অভ্যন্তরীণ বঞ্চনা ও আধিপত্য’র বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়।

বিগত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত মোট ৩১০৮টি আসনের অর্ধেকের চেয়ে বেশি (শতকরা ৫৬ ভাগ) এককভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা শিক্ষার্থীরা অধিকার করে। অথচ চাকমারা বাংলাদেশের মোট ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনসংখ্যার শতকরা ২৮ ভাগ। অনুরূপভাবে, মারমা সম্প্রদায় মোট ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শতকরা ১৫ ভাগ এবং তারা মোট সংরক্ষিত কোটা আসনের শতকরা ১৪ ভাগ, ত্রিপুরা সম্প্রদায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনসংখ্যার শতকরা ৮ ভাগ এবং কোটা আসনের শতকরা ৭ ভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ গ্রহণ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে কোটা সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য লক্ষ করা যায়। সাঁওতাল সম্প্রদায় মোট উপজাতি জনসংখ্যার শতকরা ৯ ভাগ হলেও শতকরা ৩ ভাগ এবং মনিপুরী সম্প্রদায় শতকরা ৭ ভাগ হয়েও কোটার শতকরা ২ ভাগ সুবিধা লাভ করতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে আরও অর্ধশত নৃগোষ্ঠী মিলিতভাবে কোটার মাত্র শতকরা ১৮ ভাগ সুবিধা নিতে পেরেছে, যদিও তাদের মিলিত জনসংখ্যা মোট উপজাতি জনসংখ্যার শতকরা ৩৩ ভাগ।

মূলত রাজনৈতিক প্রভাব, যোগাযোগ, নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাত ও আঞ্চলিকতার মাধ্যমে চাকমা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা কোটার সিংহভাগ সুযোগ গ্রহণ করছে। তাদের মধ্যে শিক্ষার হার বেশি হওয়ায় উচ্চশিক্ষায় বা চাকরিতে চাকমা আবেদনকারীর সংখ্যাও অধিক হয়। দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগে থেকেই বহু চাকমা শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, যারা চাকমা সম্প্রদায়ের ভর্তিচ্ছুদের দিকনির্দেশনা ছাড়াও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে। বিভিন্ন তথ্যও তারা দ্রুত নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে পাঠিয়ে দিতে পারে। কিন্তু অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা এমন সুযোগ না পেয়ে কোটার সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছে। অনেক সময় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা উপজাতিসংক্রান্ত সনদ ও কাগজপত্র পেতে বিপত্তির সম্মুখীন হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন অফিসের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রাধান্য থাকায় তারা নিজ নিজ সম্প্রদায়কে সহযোগিতা ও অন্যান্য সম্প্রদায়কে অসহযোগিতা করে। কখনো কখনো অন্য নৃগোষ্ঠীর সম্ভাবনাময় ভর্তিচ্ছুদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়। ফলে অন্য নৃগোষ্ঠী সদস্য পাওয়া যায় না। তখন তদবিরের মাধ্যমে শূন্য কোটা আসনে চাকমা শিক্ষার্থীরা নিজেদের ভর্তি নিশ্চিত করে।

একটি-দুটি নৃগোষ্ঠীর অতিরিক্ত সুবিধাপ্রাপ্তির কারণে অন্য নৃগোষ্ঠীগুলো পিছিয়ে পড়ছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে বলে গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীগুলো শিক্ষা ও পেশার ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় সরকারের উন্নয়ন নীতি ও পরিকল্পনার সুফল সবার জন্য সমভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলেও তারা মনে করেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের গড় শিক্ষার হার শতকরা ৭২.৯ ভাগ হলেও প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদে বঞ্চিত থাকার অভিযোগ উত্থাপনকারী চাকমাদের শিক্ষার হার শতকরা ৭৩ ভাগ। এই অগ্রগতি বঞ্চনা ও পশ্চাৎপদতার পরিচায়ক নয়। শিক্ষার কারণে পেশা ও কর্মক্ষেত্রে একচ্ছত্রভাবে চাকমা নৃগোষ্ঠীর প্রাধান্য বিরাজমান।

অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্য নৃগোষ্ঠীগুলোর শিক্ষার হার মাত্র শতকরা ৪৫ ভাগ, যা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সুযোগের তারতম্য, ভারসাম্যহীনতা ও অভ্যন্তরীণ বৈষম্যের প্রমাণবহ। যার আরেকটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী পার্বত্য বাঙালি সম্প্রদায়। কোটা সুবিধা ও অন্যান্য সাংবিধানিক সম-অধিকার না পাওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের কিছু বেশি হওয়ার পরেও তাদের মধ্যে শিক্ষার হার মাত্র শতকরা ২৩ ভাগ।

এতে শুধু সম্প্রদায় ও জাতিগত বৈষম্যই হচ্ছে না, দেশের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাগরিককে যোগ্য মানবসম্পদে পরিণত করে দেশ ও জাতি গঠনের কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফলে জাতির বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে কোটাব্যবস্থার সামগ্রিক সুফল একতরফাভাবে নেতৃস্থানীয় গোষ্ঠীর কব্জা থেকে জনসংখ্যার অনুপাতে এবং সম্প্রদায়গত পশ্চাৎপদতার নিরিখে সুবিধাবঞ্চিত উপজাতি ও পার্বত্য বাঙালি সম্প্রদায়কে দেওয়ার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠছে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের টেকসই ও সমন্বিত উন্নয়ন হবে এবং সম্প্রদায়গত বৈষম্য ও অসন্তোষ দূর হবে।

উল্লেখ্য, শিক্ষাগত পশ্চাৎপদতার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩-১৪টি নৃগোষ্ঠীর অধিকাংশই উচ্চশিক্ষা ও পেশা গ্রহণের সুযোগের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে নিজেদের দাবি ও বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতির একতরফা সুযোগ নিচ্ছে চাকমা ও আরও দুই-একটি নৃগোষ্ঠী, যারা তাদের গোষ্ঠীগত স্বার্থ এবং নেত্বত্ব-কর্তৃত্বকে ‘সমগ্র নৃগোষ্ঠীর দাবি’র নামে চাপিয়ে দিচ্ছে। যদিও এসব রাজনৈতিক তৎপরতায় অপরাপর নৃগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ও বক্তব্যের কোনো সুযোগ ও স্বীকৃতি নেই। পার্বত্য উপজাতি দলগুলোর সাংগঠনিক কাঠামো ও নেতৃত্বের শতকরা ৯০-৯৫ ভাগই চাকমা নিয়ন্ত্রণাধীন।

ফলে ‘জুম্মু জাতীয়তাবাদ’কে প্রকারান্তরে ‘চাকমা জাতীয়তাবাদ’ বলা হয়। যেমনভাবে অতীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘জাতিগত সংঘাত’কে ‘চাকমাদের সশস্ত্র সংঘাত’ নামে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও নানা গবেষণায় নামকরণ করা হয়। বর্তমানেও উপজাতি তথা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নামে পরিচালিত নানা আন্দোলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ও জনগণের ওপর ‘চাকমা প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক প্রচেষ্টা’ স্পষ্ট, যাকে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ ‘চাকমা গোষ্ঠীগত আধিপত্যবাদ’ নামে চিহ্নিত করে, যার আশু অবসান হওয়া প্রয়োজন এবং পাহাড়ে সব শ্রেণি, পেশা, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য সম-অধিকার ও সমসুযোগ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

গবেষকগণ মনে করেন, এ ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংখ্যা অনুপাতে এবং চাহিদা ও পশ্চাৎপদতার নিরিখে প্রকৃত অবহেলিত ও বঞ্চিতদের শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে এগিয়ে আনার প্রয়োজনে কোটা সুবিধার আইনগত পরিবর্তন করাও আবশ্যক।

একটি বা দুটি গোষ্ঠী কোটা সুবিধার সিংহভাগ পাবে আর অন্যরা বঞ্চিত হবে তা বাংলাদেশের সব নাগরিকের অধিকার রক্ষা, বৈষম্য নিরসন ও সুযোগের সমতা নিশ্চিতের মর্মার্থকে ব্যাহত করার মাধ্যমে বরং নতুন অসন্তোষ ও বৈষম্যের সৃষ্টি করে। ফলে উচ্চশিক্ষা ও চাকরিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটার ভালোমন্দ দিকগুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা দরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে চরমভাবে অবহেলিত, পশ্চাৎপদ ও বঞ্চিত পার্বত্য-বাঙালিদেরও কোটার আওতায় আনা একান্ত প্রয়োজন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গবেষণাকারী ড. মাহের ইসলাম বার্তা২৪.কম'কে বলেন, "সামগ্রিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সব নাগরিকের জন্যই মৌলিক অধিকার, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক সুযোগসহ সাংবিধানিক সব অধিকার সমভাবে ও বৈষম্যহীনভাবে প্রয়োগ করার আইনগত কাঠামো নিশ্চিত করা পাহাড়ের স্থায়ী শান্তি, সামাজিক সম্প্রীতি ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে অতীব জরুরি।"

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গ্রন্থকার ও গবেষক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ বলেন, "বাংলাদেশের সব নাগরিকের অধিকার রক্ষা, বৈষম্য নিরসন ও সুযোগের সমতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে নারীসমাজ, অনগ্রসর নাগরিক গোষ্ঠী, দুর্গম এলাকার জনগণের জন্য শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে নির্ধারিত যোগ্যতার মাপকাঠি কিছুটা শিথিল করে এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরক্ষিত রেখে বিশেষ বিধান তথা কোটাব্যবস্থা চালু রয়েছে। ১৯৭২ সালে জাতির সূর্যসন্তান, বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে সর্বপ্রথম কোটাব্যবস্থা চালু করা হলেও ক্রমান্বয়ে দেশের অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে উন্নত ও অগ্রসর করার প্রয়োজনে কোটার পরিধি বৃদ্ধি করা হয়, যার আওতায় রয়েছে উপজাতি তথা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সদস্যরা। কোটাব্যবস্থার সুবিধা অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ মানুষের প্রাপ্য, তা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা জরুরি।"

   

আইভোরিয়ান কৃষকদের ‘আশীর্বাদ’ বন্য শামুক



সানজিদা খান, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: আল জাজিরা

ছবি: আল জাজিরা

  • Font increase
  • Font Decrease

গ্যাস্ট্রোপড বা বন্য শামুক যা আইভরি কোস্টের কৃষিকদের জন্য এক আশীর্বাদ স্বরূপ। শামুকের মাংস আইভরি কোস্ট ও এর আশেপাশের প্রতিবেশী গিনি উপসাগরীয় দেশগুলোতে খুব জনপ্রিয়। সাধারণত এটি ভেজে মশলাদার সস দিয়ে খাওয়া হয়।

একটি শামুক সাধারণত সর্বোচ্চ ৫০০ গ্রাম (এক পাউন্ড) ওজনের হতে পারে এবং মাত্র ১০ সেন্টিমিটার (চার ইঞ্চি) পর্যন্ত বাড়তে পারে। কিন্তু আইভরি কোস্টে এমন এক দৈত্যাকার শামুক চাষ করা হয় যা দেশটিতে একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবেদন- আল জাজিরা।

শামুকের সুস্বাদু মাংস এসব দেশের একটি উপাদেয় খাদ্য হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। এছাড়া দৈত্যাকার এই শামুকগুলোর স্লাইম এবং শাঁস থেকে তৈরি প্রসাধনীও খুব জনপ্রিয় এখানে।

ছবি: আল জাজিরা

কিন্তু গত ৬০ বছরে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে বন্য শামুকের প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে  প্রায় ৯০ শতাংশ বন বিলীন হয়ে গেছে।

প্রাকৃতিকভাবে গরম আবহাওয়ার কারণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোকো উৎপাদনকারী দেশে কৃষি উৎপাদনের জন্য বেশিরভাগ বন হারিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আর্দ্র পরিবেশে বেড়ে ওঠা প্রাণীদের ক্ষতি হচ্ছে। বন উজাড় হওয়ার ফলে জীব বৈচিত্রও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই ভয়ংকর পরিস্থিতির শিকার আফ্রিকার বন্য শামুকও।

বন্য শামুকের সংখ্যা ক্রমাগত কমে যাওয়ায় তাদের প্রজনন বৃদ্ধির প্রয়াসে বিশেষজ্ঞরা খামারে বাণিজ্যিকভাবে শামুকের চাষ শুরু করেছেন। এসব খামারে ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়ে উঠছে দৈত্যাকার শামুক গ্যাস্ট্রোপড । শুধুমাত্র দেশটির দক্ষিণে আর্দ্র শহরেই প্রায় ১৫,০০ টি খামার রয়েছে।

আইভরি কোস্টের বাণিজ্যিক রাজধানী আবিদজান থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) উত্তরে আজাগুই শহরের অনেকগুলো খামারে শামুকের প্রজনন করা হয়।

ছবি: আল জাজিরা 

এসব খামারে প্রায় ১০ টি ইট এবং সিমেন্টের পাত্রের ভিতরে জালের ঢাকনা দিয়ে উপরে মাটির একটি স্তর দেয়া হয়। এই পাত্রগুলোর মধ্যে হাজার হাজার শামুক, কিশোর এবং প্রজননকারী শামুক বেড়ে ওঠে। ইউরোপের কিছু জায়গায় এই শামুকের আকার তুলনামূলকভাবে অনেক বড় হয়ে থাকে।

ছোট সাইজের গ্যাস্ট্রোপডগুলোকে প্রতি দুই দিন অন্তর পানি দেওয়া হয় এবং খাওয়ানো হয়। এভাবেই নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে খামারে শামুকগুলো উৎপাদন করা হয়।

দৈত্যাকার গ্যাস্ট্রোপড উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিপণনকারী বৃহত্তম সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম আইভরি কোস্ট স্নেইল এক্সপার্টাইজ (সিআইইই) এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক বার্নাস ব্লু বলেন, 'বন্য শামুক আর খামারে চাষকৃত শামুকের স্বাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। দুটোই সমান সুস্বাদু।' 

খামারগুলোতে চাষিরা রেইন ফরেস্টে পাওয়া শামুকের প্রাকৃতিক পরিবেশে পুনরুৎপাদন করে। এখানে শামুকগুলোকে পাতা, ফল, সবজি, ভুট্টা এবং সয়া খাওয়ানো হয়। (সিআইইই) এর প্রযুক্তিগত সমন্বয়কারী অ্যালেক্সিস ফ্যামি বলেন, 'এখানে কোন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। এটি সম্পূর্ণরূপে জৈব।' 

ছবি: আল জাজিরা 

ছয় বছর আগে প্রতিষ্ঠা হওয়া (সিআইইই) এর ৫০ টি খামার এবং প্রকৃয়াকরণ ইউনিট রয়েছে। ৭৫ জন কর্মী রয়েছেন এবং মাসে প্রায় ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ কোম্পানীর আওতায় বেশিরভাগ প্রশিক্ষণার্থী নিজেদের খামার তৈরি করার জন্যে সমবায়ে যুক্ত হন। বর্তাম্নে প্রায় ২৫ হাজার খামার থেকে আগামি কয়েক বছরে কোম্পানিটি ১,০০,০০০ উৎপাদকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বার্নাস ব্লু।

তিনি আরও বলেন, 'শামুকের কিছুই ফেলে দেয়া হয় না। শামুকের স্লাইম থেকে সাবান, শাওয়ার জেল এবং মলম তৈরি হয়। এছাড়াও এর শাঁসের গুঁড়া বিভিন্ন প্রসাধনী এবং পশুখাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।' 

ছবি: আল জাজিরা 

আজাগুই শহরের (সিআইইই) এর খামারের নারীরা শামুকের স্লাইমের সাথে নারকেল তেল, সবুজ রঙ এবং সুগন্ধি মিশিয়ে সাবান ও শাওয়ার জেল তৈরি করেন । এসব ওয়ার্কশপ থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ৫ হাজার সাবান ও ৫ হাজার বোতল শাওয়ার জেল উৎপাদন হয়ে থাকে।

ওয়ার্কশপের সুপারভাইজার নেলি ব্লন বলেন, 'শামুক স্লাইম ত্বককে হাইড্রেট করে, উজ্জ্বল করে ও বার্ধক্য প্রতিরোধ করে।' 

;

কবে পাবো শীতের দেখা?



আহসান জোবায়ের, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বাঙালির জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটে শীতকালে

বাঙালির জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটে শীতকালে

  • Font increase
  • Font Decrease

‘গুড়ি গুড়ি বায়, হিমের কাঁথা গায়, দাঁড়িয়ে কুয়াশায়, পাতা ঝরা শীতের ছোঁয়া, কাঁপিয়ে দিয়ে যায়’- আবহমান বাংলার প্রকৃতিতে শীতকে ব্যাখ্যা করতে এর চেয়ে সুন্দর অভিব্যক্তি আর কী হতে পারে! সবুজ ঘাসের ডগায় জমা হয় শিশির বিন্দু। সকালবেলা সূর্যের সোনালি আলো যখন জমে থাকা শিশির বিন্দুর উপর এসে পড়ে, তখন তাতে সোনালি আবহ তৈরি হয়। মৌমাছিরা ব্যস্ত হয়ে যায় ফুলের মধু সংগ্রহ করতে। শীতের কুয়াশা ভেজা সকালে মায়ের হাতের পিঠাপুলি, বন্ধুদের সাথে খোলা মাঠে দাঁড়িয়াবান্ধা কিংবা গোল্লাছুট, উঠোন ভর্তি ধান মাড়ানো; এ যেন তীব্র আকাঙ্ক্ষা গ্রামীণ শৈশবের স্মৃতিচারণ। 

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছে গাছি 

বাঙালির জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটে শীতকালে। কুয়াশার চাদরে আবৃত থাকে চারপাশ। বাঙালি মেয়েরা আয়োজন করে চড়ুইভাতি আর শহরের মানুষেরা মাতে বারবিকিউতে। গ্রামে-শহরে চলে ব্যাডমিন্টন খেলার আসর। কৃষকের জমিতে ফলে নানান শীতকালীন সবজি। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে আগুন পোহানো যেন এক শীত-সংস্কৃতি। গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস পেড়ে গুড় বানায়। 

বাংলার প্রকৃতিতে পৌষ-মাঘ মাসে শীত ঋতু হলেও অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকেই রাতে ও ভোরে কুয়াশার সাথে শীত অনুভূত হয়। কিন্তু এ বছর অগ্রহায়ণ মাসের অর্ধেক শেষ হয়ে গেলেও দেখা নেই শীতের। রাতে ফ্যান চালিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় রাত ও ভোরের দিকে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও পুরোদমে শীত অনুভূত হচ্ছে না। সকালে সূর্য ওঠার পরপরই বাড়ছে তাপমাত্রা। আগে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শীত পড়তে শুরু করত। অথচ ডিসেম্বর এসে গেলেও মিলছে না শীতের দেখা। কোথায় সেই সময়, কোথায় সে অনুভূতি? তবে কি হারিয়ে গেলো শীতকাল!

শীতে কুয়াশার চাদরে আবৃত থাকে চারপাশ 

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর শীতকাল শুরু হবে কিছুটা দেরিতে। পাশাপাশি শীতের প্রকোপও থাকবে কম। কবে থেকে শীত নামবে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে বলেননি।

দ্য ওয়েদার চ্যানেলের তাপমাত্রা সূচক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি মাসের প্রথম থেকেই ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই তাপমাত্রা চলমান থাকবে। তবে সমুদ্র সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে ৬ ও ৭ ডিসেম্বর হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মোঃ বজলুর রশিদ বার্তা২৪.কম'কে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের ফলে আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এই বৃষ্টির পরই শীত নামবে। মধ্যদিন পর্যন্ত শীতের দেখা মিলবে। রাত ও ভোরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রার চেয়ে ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা কমবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিগার সুলতানা বার্তা২৪.কম'কে বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে একদিকে যেমন বেড়ে চলেছে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের (বন্যা, ঘন ঘন নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধস) তীব্রতা, অন্যদিকে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, স্বল্প বৃষ্টিপাত, অনাবৃষ্টি, অসময়ে ভারী বর্ষণ, আকস্মিক বন্যা এবং সর্বোপরি মৌসুমি বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার ফলে মানুষের জীবনযাত্রা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। অন্যদিকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ঋতুচক্রের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যথাসময়ে শীত না আসা, শরৎ-এ বর্ষার রূপ, বর্ষায় কম বৃষ্টিপাত ইত্যাদির ফলে ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে দিন দিন ঋতু হারিয়ে যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে দেশের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১৪ বছরের তুলনায় শুধু নভেম্বর মাসেই এই তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

;

শীতের শুরুতে তিস্তার চরে দাগি রাজহাঁস



বর্ণালী জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শীতের শুরুতেই ভিড় জমায় রকমারি অতিথি পাখি। তারমধ্যে দাগি রাজহাঁস একটি। মনের সুখে সহজেই হিমালয় পারি দিয়ে অতিথি পাখির আনাগোনা দেখা যায় রংপুরের তিস্তা চরে। এই সুশ্রীর চেহারার রাজহাঁস পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ, মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। শীতকালে এরা মধ্য এশিয়া থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অতিথি হয়ে আসে। শীতের শেষে আবার সেখানে চলে যায়। এরা খুব সহজেই হিমালয়ের মত উঁচু পর্বতমালা পাড়ি দিতে পারে। সেই ধারাবাহিকতায় শীতের শুরুতে এই পাখিটি রংপুরের তিস্তার চরে দেখা মেলে।

জানা গেছে, শীতের সময় এই পাখিগুলো মধ্য এশিয়া থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অতিথি হয়ে আসে। বসন্ত কালে আবার নিজ গন্তব্যে চলে যায়। সেখানকার পার্বত্য অঞ্চলে ও জলাশয়ে বিচরণ ও প্রজনন করে। এ জন্য তাদের সাত হাজার মিটার উঁচু হিমালয় অতিক্রম করতে হয়। আট ঘণ্টায় বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত হিমালয় পার হতে পারে তারা অনায়াসে। প্রায় ২০ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এদের আবাস হলেও বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। 

আট ঘণ্টায় পর্বত হিমালয় পার হতে পারে এই পাখি 

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত। দাগি রাজহাঁসের অন্য কোনো উপপ্রজাতি নেই। অনেক উঁচু দিয়ে এরা উড়তে পারে। প্রকৃতপক্ষে দাগি রাজহাঁস পৃথিবীর সর্বোচ্চ উড্ডয়নকারী পাখিদের মধ্যে একটি।

দাগি রাজহাঁস বড় আকারের জলচর পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৭৩ সেন্টিমিটার ডানা ৪৫ সেন্টি মিটার, ঠোঁট ৫ দশমিক ৫ সেন্টি মিটার, লেজ ১৪ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার, পা ৭ দশমিক ১ সেন্টি মিটার এবং ওজন দেড় কেজি থেকে সাড়ে ৩ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

প্রাপ্তবয়স্ক পাখিগুলো দেখতে ধূসর। সাদা মাথা থেকে সাদা একটি লাইন ধূসর গলার নীচ পর্যন্ত চলে গেছে। মাথায় দুটি স্পষ্ট কালো ডোরা থাকে। ওড়ার সময় এদের সাদা মাথা, ফিকে দেহও ডানার কালো আগা স্পষ্ট চোখে পড়ে। এদের চোখ বাদামি। ঠোঁট হলুদ এবং ঠোঁটের আগা ও নাক কালো। পা ও পায়ের পাতা গাঢ় হলুদ। স্ত্রী ও পুরুষ হাঁসের চেহারা প্রায় একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথায় ডোরা নেই। কপাল, গাল ও গলা ভারী। মাথায় ধূসর-বাদামি। পিঠ ও পেটের রং একই রকম। কাক, দাঁড়কাক, শিয়াল, গাঙচিল, ঈগল এদের প্রধান শত্রু।

পাখিটির ছবি তোলার কারিগর বেগম রোকেয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন এই পাখিটির ছবি চারদিন আগে রংপুরের তিস্তা নদী থেকে তুলেছি। দুর্লভ এই প্রজাতির পাখিটি সহজে বাংলাদেশে দেখা যায় না। এই পাখি হিমালয় পর্বতের মতো উচ্চতা সহজেই পাড়ি দিতে পারে। তিনি বলেন, গবেষকদের মতে এই পাখির রক্তের লোহিতকণিকা কিছুটা ভিন্ন ধরনের। অক্সিজেন শক্ত করে ধরে রাখতে পারে। ফলে অনেক উঁচুতে এরা সহজেই উড়তে পারে।

;

২য় বিশ্ব যুদ্ধের ৫০০ পাউন্ডের বোমা উদ্ধার



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
২য় বিশ্ব যুদ্ধের ৫০০ পাউন্ডের বোমা উদ্ধার

২য় বিশ্ব যুদ্ধের ৫০০ পাউন্ডের বোমা উদ্ধার

  • Font increase
  • Font Decrease

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে সবাই জানে। সে সময়কার ক্ষয়ক্ষতি পুরো বিশ্বকে প্রভাবিত করেছিল। তার রেশ কাটেনি যুদ্ধ পরবর্তী কয়েক বছরেও। জাপান তো তার প্রত্যক্ষ উদাহরণ। এখনো প্রায়শই তৎকালীন বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিস্ফোরক জিনিসপত্র। আবারও ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে পুতে রাখা বোমা উদ্ধার হলো। এবার গ্রিক সৈনিকরা এক উন্নয়নের খননকালে একটি বোমা খুঁজে পায়। তারা দ্রুত বোমাটি ধ্বংসের কাজ শুরু করে সফলও হয়েছে।

এই ঘটনা গত ৩০ নভেম্বর, বৃহস্পতিবারের। গ্রীসের দক্ষিণে সমুদ্রতীরবর্তী গ্লাইফাদা এলাকার কাছে গ্রীক সেনা বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। এথেন্সের দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় একটি বিলাসবহুল প্রকল্পে কাজ করেন্ তারা। নগর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের সময় তারা আবিষ্কার করে এই বোমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এই অবিস্ফোরিত বোমা অবশেষে তারা ডিস্পোজ করতে সক্ষম হয়। ৫০০ পাউন্ডের বোমাটি কোনো ক্ষতি ছাড়াই ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে।

এজন্য দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। এলাকাবাসীর নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত সতর্কতাও অবলম্বন করা হয়। আশেপাশের বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক দ্রুত খালি করিয়ে নেওয়া হয়।

নগর উন্নয়ন প্রকল্পে একটি পার্ক, শপিং মল, হোটেল, একটি ক্যাসিনো এবং রাজধানীর দক্ষিণে একাধিক অবসর সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কাজটি গত বছর শুরু হয়েছিল এবং২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা।

"সবকিছু ঠিকঠাক হয়েছে, এবং আমরা জড়িত সমস্ত সংস্থাকে ধন্যবাদ জানাই: বিশেষায়িত সেনা ইউনিট, ফায়ার বিভাগ এবং ট্রাফিক পুলিশ," গ্লাইফাডা মেয়র জিওরগোস পাপানিকোলাউ সাইটের কাছাকাছি সাংবাদিকদের বলেছেন।

"খননকার্যের অগ্রগতির সাথে সাথে আরও অবিস্ফোরিত অস্ত্র আবিষ্কৃত হতে পারে।"

উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০০১ সালে বন্ধ হওয়ার আগে এবং একটি নতুন স্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার আগে এথেন্সের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জায়গাটি ব্যবহার করবে। সাইটটি ২০০৪ সালে এথেন্স অলিম্পিকের সময় বেশ কয়েকটি ক্রীড়া স্থানের আয়োজন করেছিল এবং ২০১৫-১৬ সালের শরণার্থী সংকটের সময় আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্তভাবে একটি শিবির স্থাপন করেছিল।

১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি সমর্থন করার জন্য কয়েক দশক ধরে এয়ারফিল্ড ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং গ্রিসের নাৎসি-নেতৃত্বাধীন দখলের সময়, মিত্রদের দ্বারা বিমানঘাঁটি বোমাবর্ষণ করা হয়েছিল।

;