পার্বত্য চট্টগ্রামের কোটা সুবিধা অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ মানুষের প্রাপ্য



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পার্বত্য চট্টগ্রামের কোটা সুবিধা অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ মানুষের প্রাপ্য

পার্বত্য চট্টগ্রামের কোটা সুবিধা অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ মানুষের প্রাপ্য

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণের মতোই পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলো উচ্চশিক্ষা এবং চাকরি ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার সুবিধা পেয়ে জীবনমান ও আর্থ-সামাজিক সূচকে অভূতপূর্ব অগ্রগতি করেছে। তবে সব নৃগোষ্ঠী সমভাবে কোটার সুবিধা পেয়ে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারছে না এবং কিছু সম্প্রদায়ের দ্বারা একচ্ছত্রভাবে কোটা সুবিধা ব্যবহার করার মতো পরিস্থিতি চলছে। এতে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বৈষম্য ও ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে বঞ্চিত উপজাতি গোষ্ঠীগুলো ও পার্বত্য বাঙালিদের মধ্যে ক্ষোভ, অসাম্য ও বঞ্চনা।

কয়েকটি গবেষণায় প্রাপ্ত্য তথ্যে জানা যায়, প্রধান কিছু উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আরও শক্তিশালী হয়ে অপরাপর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে পশ্চাৎপদ ও প্রান্তিক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিচ্ছে, যা সুষম উন্নয়ন ও সব নাগরিকের সম-অধিকারের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সামাজিক ও গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব ও বিভেদের অন্যতম মূল কারণ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সংবিধানের ২৯-এর ৩ (ক) অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলোকে অনগ্রসর শ্রেণি হিসেবে বিবেচনা করে ১৯৮৫ সালে সরকারি চাকরিতে তাদের জন্য শতকরা পাঁচ ভাগ কোটা সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়। এ ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে উপজাতি কোটা রাখা হয়। ২০১৫ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বিধি-১ শাখা কর্তৃক সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সার্কুলারে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসে নিয়োগের ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত কোটার ক্ষেত্রে ‘উপজাতীয়’ শব্দ ব্যবহারের পরিবর্তে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ হিসেবে প্রতিস্থাপন করা হয়। উপরন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি চাকরি এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা বিদ্যমান থাকার পাশাপাশি ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সদস্যগণ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়ে থাকেন।

কিন্তু তথ্য-পরিসংখ্যানগত বাস্তবতা এই যে, উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য চাকরি ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত কোটা সুবিধার দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামের সব নৃগোষ্ঠী সমভাবে উপকৃত হচ্ছে না। কোটার সিংহভাগ সুবিধা এককভাবে চাকমা ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মারমা ও ত্রিপুরা উপজাতিরা পেয়ে থাকে আর বাকি ১০-১১টি উপজাতি বলতে গেলে বঞ্চিত হচ্ছে। সবচেয়ে বৈষম্যমূলক চিত্র এটাই যে, একই পাহাড়ের দুর্গম ও বিরূপ পরিস্থিতিতে বসবাস করলেও পার্বত্য বাঙালি জনগোষ্ঠী কোটা সুবিধাবঞ্চিত হয়ে শিক্ষা, চাকরি, আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদায় চরমভাবে পিছিয়ে পড়ছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে জনসংখ্যার অর্ধেক হয়েও পরিসংখ্যানগত বাস্তবতায় তারাই অবহেলিত, প্রান্তিক ও দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে।

২০১৬ সালে খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট কর্তৃক পরিচালিত গবেষক সুগত চাকমার গবেষণায় বলা হয়, খাগড়াছড়ি জেলায় বসবাসকারী চাকমা জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা, শিক্ষার হার ও পেশাগত ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কোনো কোনো চাকমা গ্রামের সর্বোচ্চ শতকরা ৮০ থেকে সর্বনিম্ন শতকরা ৪০ ভাগ লোক শিক্ষিত। শিক্ষিত চাকমাদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে চাকরি করছেন। উদাহরণস্বরূপ, খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি কলেজে চাকমা জনগোষ্ঠীর ৭০ জন শিক্ষকতায় নিয়োজিত। জেলায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চাকমা নৃগোষ্ঠীর ৩০ চিকিৎসক কর্মরত। ৯টি ব্যাংকের শাখায় ৬৮ চাকমা কর্মরত, যার মধ্যে ৪৬ জন পুরুষ এবং ২২ জন নারী। স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন আর্থিক সেক্টরেও চাকমারা নেতৃস্থানীয় অবস্থানের অধিকারী। চাকমাদের উল্লেখযোগ্য উন্নতি চাকরি ও উচ্চশিক্ষায় কোটাব্যবস্থার সুফল।

তবে শহরে বসবাসকারী চাকমারা এসব ক্ষেত্রে যত সুবিধা পাচ্ছে, গ্রামের চাকমা সম্প্রদায় তা পাচ্ছে না। অনুরূপভাবে চাকমাদের উন্নতির নিরিখে পার্বত্য বাঙালি সম্প্রদায় এবং বাকি ১২-১৩টি উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অনেক পেছনে। এ কারণে বাঙালিরা কোটা ও চাকরিসহ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সম-অধিকারের দাবি করছে। অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সম্প্রদায়, যেমন, বম, খুমি, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, মং, চাক প্রভৃতি কোটা ও চাকরির সুবিধার ক্ষেত্রে একচ্ছত্র অগ্রাধিকার ও সুবিধার মাধ্যমে অতি অগ্রসর চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গা নৃগোষ্ঠীর সমপর্যায়ে আসার প্রয়োজনে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার ও তাদের অনুকূলে সমন্বয়সাধনের দাবি করেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে বিগত ১০ বছরের (২০১১-২০২১) সময়কালে উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যানে চাকমাসহ কয়েকটি সম্প্রদায়ের একচ্ছত্র প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়, যা থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ‘অভ্যন্তরীণ বঞ্চনা ও আধিপত্য’র বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়।

বিগত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত মোট ৩১০৮টি আসনের অর্ধেকের চেয়ে বেশি (শতকরা ৫৬ ভাগ) এককভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা শিক্ষার্থীরা অধিকার করে। অথচ চাকমারা বাংলাদেশের মোট ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনসংখ্যার শতকরা ২৮ ভাগ। অনুরূপভাবে, মারমা সম্প্রদায় মোট ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শতকরা ১৫ ভাগ এবং তারা মোট সংরক্ষিত কোটা আসনের শতকরা ১৪ ভাগ, ত্রিপুরা সম্প্রদায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনসংখ্যার শতকরা ৮ ভাগ এবং কোটা আসনের শতকরা ৭ ভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ গ্রহণ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে কোটা সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য লক্ষ করা যায়। সাঁওতাল সম্প্রদায় মোট উপজাতি জনসংখ্যার শতকরা ৯ ভাগ হলেও শতকরা ৩ ভাগ এবং মনিপুরী সম্প্রদায় শতকরা ৭ ভাগ হয়েও কোটার শতকরা ২ ভাগ সুবিধা লাভ করতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে আরও অর্ধশত নৃগোষ্ঠী মিলিতভাবে কোটার মাত্র শতকরা ১৮ ভাগ সুবিধা নিতে পেরেছে, যদিও তাদের মিলিত জনসংখ্যা মোট উপজাতি জনসংখ্যার শতকরা ৩৩ ভাগ।

মূলত রাজনৈতিক প্রভাব, যোগাযোগ, নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাত ও আঞ্চলিকতার মাধ্যমে চাকমা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা কোটার সিংহভাগ সুযোগ গ্রহণ করছে। তাদের মধ্যে শিক্ষার হার বেশি হওয়ায় উচ্চশিক্ষায় বা চাকরিতে চাকমা আবেদনকারীর সংখ্যাও অধিক হয়। দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগে থেকেই বহু চাকমা শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, যারা চাকমা সম্প্রদায়ের ভর্তিচ্ছুদের দিকনির্দেশনা ছাড়াও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে। বিভিন্ন তথ্যও তারা দ্রুত নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে পাঠিয়ে দিতে পারে। কিন্তু অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা এমন সুযোগ না পেয়ে কোটার সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছে। অনেক সময় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা উপজাতিসংক্রান্ত সনদ ও কাগজপত্র পেতে বিপত্তির সম্মুখীন হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন অফিসের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রাধান্য থাকায় তারা নিজ নিজ সম্প্রদায়কে সহযোগিতা ও অন্যান্য সম্প্রদায়কে অসহযোগিতা করে। কখনো কখনো অন্য নৃগোষ্ঠীর সম্ভাবনাময় ভর্তিচ্ছুদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়। ফলে অন্য নৃগোষ্ঠী সদস্য পাওয়া যায় না। তখন তদবিরের মাধ্যমে শূন্য কোটা আসনে চাকমা শিক্ষার্থীরা নিজেদের ভর্তি নিশ্চিত করে।

একটি-দুটি নৃগোষ্ঠীর অতিরিক্ত সুবিধাপ্রাপ্তির কারণে অন্য নৃগোষ্ঠীগুলো পিছিয়ে পড়ছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে বলে গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীগুলো শিক্ষা ও পেশার ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় সরকারের উন্নয়ন নীতি ও পরিকল্পনার সুফল সবার জন্য সমভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলেও তারা মনে করেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের গড় শিক্ষার হার শতকরা ৭২.৯ ভাগ হলেও প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদে বঞ্চিত থাকার অভিযোগ উত্থাপনকারী চাকমাদের শিক্ষার হার শতকরা ৭৩ ভাগ। এই অগ্রগতি বঞ্চনা ও পশ্চাৎপদতার পরিচায়ক নয়। শিক্ষার কারণে পেশা ও কর্মক্ষেত্রে একচ্ছত্রভাবে চাকমা নৃগোষ্ঠীর প্রাধান্য বিরাজমান।

অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্য নৃগোষ্ঠীগুলোর শিক্ষার হার মাত্র শতকরা ৪৫ ভাগ, যা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সুযোগের তারতম্য, ভারসাম্যহীনতা ও অভ্যন্তরীণ বৈষম্যের প্রমাণবহ। যার আরেকটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী পার্বত্য বাঙালি সম্প্রদায়। কোটা সুবিধা ও অন্যান্য সাংবিধানিক সম-অধিকার না পাওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের কিছু বেশি হওয়ার পরেও তাদের মধ্যে শিক্ষার হার মাত্র শতকরা ২৩ ভাগ।

এতে শুধু সম্প্রদায় ও জাতিগত বৈষম্যই হচ্ছে না, দেশের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাগরিককে যোগ্য মানবসম্পদে পরিণত করে দেশ ও জাতি গঠনের কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফলে জাতির বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে কোটাব্যবস্থার সামগ্রিক সুফল একতরফাভাবে নেতৃস্থানীয় গোষ্ঠীর কব্জা থেকে জনসংখ্যার অনুপাতে এবং সম্প্রদায়গত পশ্চাৎপদতার নিরিখে সুবিধাবঞ্চিত উপজাতি ও পার্বত্য বাঙালি সম্প্রদায়কে দেওয়ার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠছে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের টেকসই ও সমন্বিত উন্নয়ন হবে এবং সম্প্রদায়গত বৈষম্য ও অসন্তোষ দূর হবে।

উল্লেখ্য, শিক্ষাগত পশ্চাৎপদতার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩-১৪টি নৃগোষ্ঠীর অধিকাংশই উচ্চশিক্ষা ও পেশা গ্রহণের সুযোগের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে নিজেদের দাবি ও বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতির একতরফা সুযোগ নিচ্ছে চাকমা ও আরও দুই-একটি নৃগোষ্ঠী, যারা তাদের গোষ্ঠীগত স্বার্থ এবং নেত্বত্ব-কর্তৃত্বকে ‘সমগ্র নৃগোষ্ঠীর দাবি’র নামে চাপিয়ে দিচ্ছে। যদিও এসব রাজনৈতিক তৎপরতায় অপরাপর নৃগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ও বক্তব্যের কোনো সুযোগ ও স্বীকৃতি নেই। পার্বত্য উপজাতি দলগুলোর সাংগঠনিক কাঠামো ও নেতৃত্বের শতকরা ৯০-৯৫ ভাগই চাকমা নিয়ন্ত্রণাধীন।

ফলে ‘জুম্মু জাতীয়তাবাদ’কে প্রকারান্তরে ‘চাকমা জাতীয়তাবাদ’ বলা হয়। যেমনভাবে অতীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘জাতিগত সংঘাত’কে ‘চাকমাদের সশস্ত্র সংঘাত’ নামে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও নানা গবেষণায় নামকরণ করা হয়। বর্তমানেও উপজাতি তথা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নামে পরিচালিত নানা আন্দোলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ও জনগণের ওপর ‘চাকমা প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক প্রচেষ্টা’ স্পষ্ট, যাকে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ ‘চাকমা গোষ্ঠীগত আধিপত্যবাদ’ নামে চিহ্নিত করে, যার আশু অবসান হওয়া প্রয়োজন এবং পাহাড়ে সব শ্রেণি, পেশা, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য সম-অধিকার ও সমসুযোগ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

গবেষকগণ মনে করেন, এ ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংখ্যা অনুপাতে এবং চাহিদা ও পশ্চাৎপদতার নিরিখে প্রকৃত অবহেলিত ও বঞ্চিতদের শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে এগিয়ে আনার প্রয়োজনে কোটা সুবিধার আইনগত পরিবর্তন করাও আবশ্যক।

একটি বা দুটি গোষ্ঠী কোটা সুবিধার সিংহভাগ পাবে আর অন্যরা বঞ্চিত হবে তা বাংলাদেশের সব নাগরিকের অধিকার রক্ষা, বৈষম্য নিরসন ও সুযোগের সমতা নিশ্চিতের মর্মার্থকে ব্যাহত করার মাধ্যমে বরং নতুন অসন্তোষ ও বৈষম্যের সৃষ্টি করে। ফলে উচ্চশিক্ষা ও চাকরিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটার ভালোমন্দ দিকগুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা দরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে চরমভাবে অবহেলিত, পশ্চাৎপদ ও বঞ্চিত পার্বত্য-বাঙালিদেরও কোটার আওতায় আনা একান্ত প্রয়োজন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গবেষণাকারী ড. মাহের ইসলাম বার্তা২৪.কম'কে বলেন, "সামগ্রিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সব নাগরিকের জন্যই মৌলিক অধিকার, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক সুযোগসহ সাংবিধানিক সব অধিকার সমভাবে ও বৈষম্যহীনভাবে প্রয়োগ করার আইনগত কাঠামো নিশ্চিত করা পাহাড়ের স্থায়ী শান্তি, সামাজিক সম্প্রীতি ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে অতীব জরুরি।"

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গ্রন্থকার ও গবেষক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ বলেন, "বাংলাদেশের সব নাগরিকের অধিকার রক্ষা, বৈষম্য নিরসন ও সুযোগের সমতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে নারীসমাজ, অনগ্রসর নাগরিক গোষ্ঠী, দুর্গম এলাকার জনগণের জন্য শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে নির্ধারিত যোগ্যতার মাপকাঠি কিছুটা শিথিল করে এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরক্ষিত রেখে বিশেষ বিধান তথা কোটাব্যবস্থা চালু রয়েছে। ১৯৭২ সালে জাতির সূর্যসন্তান, বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে সর্বপ্রথম কোটাব্যবস্থা চালু করা হলেও ক্রমান্বয়ে দেশের অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে উন্নত ও অগ্রসর করার প্রয়োজনে কোটার পরিধি বৃদ্ধি করা হয়, যার আওতায় রয়েছে উপজাতি তথা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সদস্যরা। কোটাব্যবস্থার সুবিধা অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ মানুষের প্রাপ্য, তা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা জরুরি।"

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;