উপমহাদেশ ভাগাভাগির ৭৫ বছর



ড. মাহফুজ পারভেজ
উপমহাদেশ ভাগাভাগির ৭৫ বছর

উপমহাদেশ ভাগাভাগির ৭৫ বছর

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৪৭ সালের বাটোয়ারা শুধু সিরিল র‌্যাডক্লিফের তৈরি সীমারেখা নয়, ছিন্নমূল মানুষের মনেরও দ্বিধাদীর্ণ বিভাজন, দেশভাগ এবং ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা। মধ্য আগস্টে এতোগুলো রাজনৈতিক ঘটনার রক্তাক্ত ধারায় সংগঠিত হয়েছিল 'পার্টিশান', 'দেশভাগ' কিংবা 'বাটোয়ারা, যা দক্ষিণ এশিয়ার হাজার বছরের সভ্যতা ও মানববসতি তছনছ  করে এনেছিল এমন এক স্বাধীনতা, যাকে বিতর্কিত লেখক সালমান রুশদির ভাষায় বলা যায় 'মিডনাইট'স চিলড্রেন' বা 'মধ্যরাতের সন্তান'।

আক্ষরিক অর্থেই দেশভাগের পটভূমিতে মধ্যরাতের স্বাধীনতা প্রাপ্তিকালে সমগ্র উপমহাদেশ  জুড়ে এক অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। হিন্দুদের জন্য ভারত আর মুসলিমদের জন্য পাকিস্তান- এমন ধারণা ও সিদ্ধান্ত রক্তারক্তির উপসংহারে বদলে দিয়েছিল ভূমি ও মানুষের ভাগ্য। গান্ধী তখন আশাহত। নেহেরু ও জিন্নাহ যথাক্রমে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের পুরো শক্তিতে দেশভাগ ও বাটোয়ারায় মত্ত। কংগ্রেসের হাইকমান্ডের মধ্যে দুইজন মাত্র দেশভাগের বিরোধিতা করেছিলেন। একজন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং অন্যজন সীমান্ত প্রদেশের খান আবদুল গাফফার খান। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার আবেগে উন্মত্ত বৃহত্তর নেতৃত্বের কাছে তাঁদের মত ছিল সংখ্যালঘু।

তারপরের ঘটনা সবারই জানা। কয়েক কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হলেন। দাঙ্গা ও হানাহানিতে নিহত হতে হয়েছিল হাজার হাজার অসহায় মানুষকে। নারী ও শিশুকে। যে কোনো যুদ্ধ ও দাঙ্গায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারীরা। ১৯৪৭-এর দেশভাগের সময়েও প্রচুর নারীকে নির্যাতিত হতে হয়েছিল প্রতিপক্ষের হাতে। শত শত বছর একই সাথে বসবাস করা মানুষগুলো রাতারাতি কীভাবে হিংস্র দানবে রূপান্তরিত হয়েছিল তা দেখে শুধু শান্তিপ্রিয় উপমহাদেশবাসী নয়, সদ্য ভারতত্যাগী ঔপনিবেশিক ব্রিটিশরাও দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিল।

ভাগাভাগি ও বাটোয়ারার সবচেয়ে বেশি দাম দিতে হয়েছে পাঞ্জাব, বাংলাকে। কারণ এ দুইটি প্রদেশও বিভক্ত অর্থাৎ ভাগ হয়ে পড়েছিল দুই দেশে। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে এপার থেকে ওপারে, ওপার থেকে এপারে পাড়ি জমাতে হয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। এদের অনেকেই হয়ে পড়েছিলেন ঠিকানাহীন। এক কোটিরও বেশি  মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়েছিল। লাখ লাখ মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে গিয়েছিল। অনেকে রাতারাতি রাজা থেকে ভিক্ষুকে পরিণত হয়েছিলেন। সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল মানবতা। সে মৃত্যু, দেশত্যাগ, লাঞ্ছনা, অত্যাচার আর ভয়াবহ নির্যাতনের ক্ষত উপমহাদেশের রাজনীতি থেকে এখনো শুকায়নি। সেই অসভ্যতা, বন্যতা চিরস্থায়ী ক্ষত রেখেই ক্ষান্ত হয়নি, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে প্রায়শই দূষিত ও রক্তাক্ত করছে পুরো উপমহাদেশে এবং উপমহাদেশের বিভাজিত দুই জনপদ, ভারত ও পাকিস্তানকে।

১৯৪৭ সালে রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার ফলে সৃষ্ট চরম নির্মমতা, নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিলেন উপমহাদেশের মানবিক ও মুক্তমনা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা। এসব ঘটনা নিয়ে রচিত হয় অনেক কবিতা, গল্প ও উপন্যাস। সে ভয়াবহ দাঙ্গার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন উর্দু সাহিত্যের কিংবদন্তিতুল্য লেখক কৃষণ চন্দর, খাজা আহমদ আব্বাস, সাদত হাসান মান্টো, রাজেন্দ্র সিং বেদী, আহমদ নাদিম কাসমী, ইসমত চুগতাই, রায়নাল কুদরউল্লাহ, অমৃতা প্রীতম প্রমুখ। বাংলা ভাষার পাঠকরা এই লেখকদের অধিকাংশের লেখার সঙ্গে পরিচিত।

১৯৪৭ সালের নির্মম,  নিষ্ঠুর পরিস্থিতি নিয়ে ভারতে কয়েকটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। এরমধ্যে সম্প্রতি নির্মিত 'পার্টিশান ১৯৪৭' একটি উল্লেখযোগ্য ছবি। ১৯৪৯ সালে মুম্বাইয়ে পরিচালক এম এন আনন্দ তৈরি করেন 'লাহোর' ছবিটি। এরপর বিজয় রায়ের পরিচালনায় মুক্তি পায় 'ক্যায়া দিল্লি ক্যায়া লাহোর'। এরপর সলিল সেনের 'নতুন ইহুদি' (১৯৫৩)  শান্তিপ্রিয় চট্টোপাধ্যায়ের 'রিফিউজি' (১৯৫৪)।  ঋত্বিক ঘটকই এই বিষয়টাকে তার তিন-তিনটি ছবিতে অত্যন্ত শিল্পসম্মত ভাবে ফুটিয়ে তোলেন। ছবি তিনটি, 'কোমল গান্ধার', 'মেঘে ঢাকা তারা' এবং 'সুবর্ণরেখা'। 

ঋত্বিকের পরে বেশ কিছু ছবি তৈরি হয়েছে দেশভাগকে কেন্দ্র করে। 'বিপাশা', 'আলো আমার আলো' ইত্যাদি ছবিতে দেশভাগ প্রসঙ্গ এসেছে। রাজেন তরফদার তার 'পালঙ্ক' ছবিতে দেশভাগের প্রসঙ্গটিকে চমৎকারভাবে নিয়ে আসেন।

তবে ইদানিংকালে নতুন করে দেশভাগকে কেন্দ্র করে ছবি তৈরির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গৌতম ঘোষের 'শঙ্খচিল', বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কাঁটাতার', বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের 'তাহাদের কথা', সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'রাজকাহিনি' কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের 'বিসর্জন',  'বিজয়া' দেশভাগের ছবি।

১৯৪৭ সালের সেই অন্ধকার অধ্যায় ৭৫ বছর পেরিয়ে এলেও কিছুকাল আগে পর্যন্তও তথ্যনিষ্ঠ, লেখ্যাগার-নির্ভর/ আর্কাইভনির্ভর, তথাকথিত উচ্চমার্গীয় ইতিহাস দেশভাগজনিত ব্যথা, বেদনাবোধ এবং সর্বোপরি মানসিকতার ইতিহাস রচনার কলাকৌশল ঠিক আয়ত্ত করতে সমর্থ ছিল না। সুখের কথা, মহাফেজখানার দলিল-দস্তাবেজের বাইরে অন্য ধরনের তথ্যসূত্রের সাহায্যে এই মানবিক ট্র্যাজেডিকে ধরার প্রয়াসও শুরু হয়েছে ক্রমশ।

গবেষণার ধারায় ভাগাভাগি বা দেশভাগের গল্প বলতে গিয়ে কান্তি পাকড়াশির দ্য আপরুটেড (১৯৭১) উদ্বাস্তু মানুষের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেয়। ভারত ও পাকিস্তানে দুই পাঞ্জাবের উদ্বাস্তু মহিলাদের অভিজ্ঞতাকে উলটেপালটে দেখে সেই প্রয়াসে এক নতুন মাত্রা যোগ করেন উর্বশী বুটালিয়া, রিতু মেনন, কমলা ভাসিনরা, আর প্রায় একই সময়ে জ্ঞানেন্দ্র পান্ডেও তার লেখায় বলেন যে, "দেশভাগের আগুনে দগ্ধ হয়েছেন এমন মানুষদের দৃষ্টিকোণ থেকেই খুঁজে পেতে হবে দেশভাগের অন্যতর মানবিক ইতিহাস।"

মৌলিক গবেষণার বাইরে স্মৃতিকথাকে ভিত্তি করে উদ্বাস্তুদের ইতিহাস লিখলেন নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, যশোধরা বাগচি, শুভরঞ্জন দাশগুপ্ত, প্রফুল্ল চক্রবর্তী, দীপেশ চক্রবর্তী প্রমুখ। জয়া চ্যাটার্জি রচনা করেছেন দেশভাগ ও সাম্প্রদায়িকতার রাজনৈতিক ইতিবৃত্ত।

এভাবেই তৈরি হওয়া দেশভাগের বিভিন্ন প্রান্ত ও পর্বের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে স্মৃতিকথনের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কসূত্রের ধারায় আনাম জাকারিয়া নামের এক তরুণী হারপার-কলিন্স থেকে প্রকাশ করেছেন একটি গবেষণাগ্রন্থ, যার নাম দ্য ফুটপ্রিন্ট অব পার্টিশান, যাতে ১৯৪৭ সালের পর চার প্রজন্মের স্মৃতি-সত্তা-অভিজ্ঞতায় বিভাজনের নানা দাগ ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আন্তরিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।

১৯৪৭ সালে বাটোয়ারা ও ভাগাভাগিতে প্রাপ্ত ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্তি অবশ্যই সেসব দেশে উদ্‌যাপন করার মুহূর্ত, কিন্তু একই সঙ্গে দু’দণ্ড থমকে দাঁড়িয়ে এটাও ভাবা প্রয়োজন যে, এতটা পথ পেরিয়ে আসতে গিয়ে কোন কাজগুলো ঠিক, আর কোনগুলো ভুল হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আজ উপমহাদেশ একটা পথসন্ধিতে দাঁড়িয়ে— রাজনীতির মেরুকরণ সম্পূর্ণ, সাম্প্রদায়িকতার বাড়বাড়ন্ত।  সমাজে তার ছাপ প্রকট, অর্থব্যবস্থা গতি হারিয়েছে এবং একই সঙ্গে চড়া বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি চলছে।

উপমহাদেশের এই সর্বব্যাপী অস্থিরতা কি নতুন উচ্চতায় পৌঁছনোর জন্য যাত্রা শুরু করার প্রাক্‌মুহূর্ত, না কি এ এক পতনের সূচনালগ্ন? পঁচাত্তর বছরের অভিজ্ঞতার প্রান্তে দাঁড়িয়ে এই কথাগুলো নিয়ে স্ব স্ব দেশের নেতৃত্ব ও নীতিপ্রণেতারা  নিশ্চয় ভাববেন। স্বীয় ইতিহাস বিশ্লেষণ করে অতীতের সূত্র ধরে বর্তমানের চ্যালেঞ্জগুলোকেও বোঝার চেষ্টা করবেন। তাতে ভবিষ্যতের পথটি আবার কালো, রক্তাক্ত, বিভাজিত অন্ধ-গহ্বরের বদলে আলোর দিশা পেতে পারবে।

যখন নেতৃত্বের লালসা, বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, ক্ষমতার মোহ, ধর্মীয় মেরুকরণ, সাম্প্রাদায়িকতার রণহুংকার উপমহাদেশের উদার, বহুমাত্রিক, ধর্ম ও সমাজের মানবিক যাত্রাকে গতিরোধ করে দাঁড়াচ্ছে; বাক্‌স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার, আইনের শাসন ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে; সংখ্যালঘু-দলিত-ভিন্নমত প্রতিনিয়ত আক্রান্ত, কোণঠাসা ও প্রান্তিক অবস্থানে চলে যাচ্ছে; তখন গণতন্ত্র, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, আইনের শাসন ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ সমুন্নত রাখা এবং জাত-পাত ও ধর্মীয় বিভাজন, জাতিভেদ প্রথা দূর করার আন্তরিক ও সম্মিলিত প্রচেষ্টাই অপরিহার্য। ১৯৪৭ সালের ভাগাভাগি, বাটোয়ারা ও সহিংস বিভাজনের প্রতিধ্বনি প্রগতি, মানবিকতা ও মনুষ্যত্বের জন্য মোটেও সহায়ক ও কল্যাণকর হয় নি এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের কখনোই হতে পারে না, ৭৫ বছরের ইতিহাস এই সত্যেকেই সত্যায়িত করছে।

ড. মাহফুজ পারভেজ, প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম। 

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;