ভ্রমণক্লান্ত পরিযায়ী হিমালয়ী গৃধিনী শকুন



বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
পরিযায়ী হিমালয়ী গৃধিনী। ছবি: সীমান্ত দীপু

পরিযায়ী হিমালয়ী গৃধিনী। ছবি: সীমান্ত দীপু

  • Font increase
  • Font Decrease

একপ্রাপ্ত থেকে আরেক প্রান্তে দীর্ঘ পরিযানের পথ। এর ফলেই অনেক শকুন অসুস্থ হয়ে হারায় উড়ার শক্তি। মাটিতে পড়া এই বিশাল আকৃতির পাখিটাকে দেখে ভয় পেয়ে যায় অনেকেই। ঠিক তখনই ভয়ে ভীত মানুষেরা বা অতি উৎসাহী এলাকাবাসীর আঘাতে এসব শকুনদের অসুস্থ হওয়াসহ প্রাণ হারানোর ঘটনাও ঘটে ব্যাপক।

পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দেশগুলো থেকে নিরাপত্তা ও খাদ্যের লোভে যেসব পরিযায়ী পাখিরা পরিযান করে থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম ‘হিমালয়ী গৃধিনী’ (Himalayan Griffon Vulture)। প্রতি বছর শীতকালে এই শকুনগুলো মাইগ্রেট বা পরিযায়ন করে বাংলাদেশের সমতল ভূমিগুলোতে চলে আসে।

কিন্তু দীর্ঘ ভ্রমণক্লান্তিতে তারা আমাদের দেশে এসে অনেক সময় উড়তে পাড়ে না। মাটিতে পড়ে যায়। তখন গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা অনেক সময় অতি উৎসুক হয়ে অথবা ভয়ে সেই হিমালয় গৃধিনী শকুনদের মেরে ফেলে।

শকুন গবেষণা প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সীমান্ত দীপু বলেন, আমরা কয়েক বছর আগে সিলেট অঞ্চলেও পেয়েছিলাম এমন অসুস্থ হিমালয়ী গৃধিনী শকুনদের। আমরা এগারোটা অসুস্থ শকুনদের সুস্থ করে প্রকৃতিতে ছেড়েছি। আমাদের ক্যাপভিট সেন্টারে গড়ে বিশ থেকে ত্রিশটা শকুন খাওয়াই-দাওয়াই, ট্রিটমেন্ট দিই, পরিচর্যা করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেই।

প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে আহত শকুনটিকে। ছবি: সীমান্ত দীপু

তিনি আরও বলেন, গত পাঁচ-ছয় বছরে আমরা প্রায় শতাধিক শুকুন সুস্থ করে ছেড়েছি। আগে যখন আমরা হিমালয়ী গৃধিনী শকুনদের নিয়ে কাজ করতাম না তখন কি পরিমাণ শকুন মারা পড়তো। প্রতি বছর শীত মৌসুমে গড়ে প্রায় ৫০টা শকুন বাংলাদেশের মাটিতে পড়ে।

তাদের খাবারের অভাব সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, এরা সুদূর হিমালয়ের এরিয়া থেকে আসে। এরা অনেক অনেক দূর জার্নি করে এসে খাবার পায় না। খাবারের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ইংরেজিতে একে বলে ‘সর্টেজ অফ ফুড’ অর্থাৎ খাদ্যের সংকট। অনেক দূর জার্নি করার ফলে তাদের খাবারের প্রয়োজন পড়ে; এই জিনিসটা সঙ্গে সঙ্গে ওরা পায় না। তখন খুব দুর্বল হয়ে যায় এবং উড়তে পারে না। গ্রামের উৎসুক মানুষ এমন অবস্থায় শকুনদের বেঁধে রাখে, আহত করে বা পিটিয়ে মেরে ফেলে। কারো কারো পালক ওঠে যায়, কারো কারো পাখা ভাঙে, কারো কারো আবার পা ভাঙে। তখন আমারা এসব অসুস্থ শকুনদের উদ্ধার করে নিয়ে আসি।

শকুন গবেষণা প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, হিমালয়ী গৃধিনী পরিচর্যার জন্য দিনাজপুরের সিংড়াতে একটি রেসকিউ সেন্টার তৈরি করেছে বনবিভাগ ও আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)।

এ জাতের পাখি দেশের যেকোন জায়গায় আটকা পড়লে দ্রুত স্থানীয় বন বিভাগ বা আইইউসিএন দলকে জানান। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করছি এবং সবার সহযোগিতায় পেলে এবছরও হিমালয়ী গৃধিনী শকুনগুলোকে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান শকুন গবেষণা প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সীমান্ত দীপু।

   

৭৪ বছর ছুটিহীন কর্মজীবন!



ফিচার ডেস্ক বার্তা২৪.কম
মেলবা মেবানের বিদায়ী অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

মেলবা মেবানের বিদায়ী অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ছুটি ছাড়া আপনি কতদিন চাকরি করতে পারবেন? এমন প্রশ্নের উত্তর একেক জনের কাছে একেক রকম হলেও, কেউই দীর্ঘ সময় ছুটিহীন চাকরি করবেন এমন উত্তর আশা করা যায় না। কিন্তু, অসুস্থ হলে যে সবারই ছুটি প্রয়োজন হবে সেটা নিশ্চিত। তবে এই কথাটি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের মেলবা মেবানের (৯০) জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ, এই নারী তাঁর ৭৪ বছরের কর্মজীবনে কখনও ছুটি কাটাননি আরও অবাক করার বিষয় হচ্ছে অসুস্থ হলেও সে হাসিমুখে তাঁর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে গেছেন। মার্কিন গনমাধ্যম ফক্স নিউজের বরাত দিয়ে এমন খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ডেইলি মেইল।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, মেলবা মেবানে ১৯৪৯ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে মেয়ার এন্ড স্মিথ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ‘লিফট গার্ল’ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে এটি অধিগ্রহণ করে নেয় ডিলার্ড। মেয়ার পরবর্তী বছরগুলোতে পুরুষদের পোশাক এবং কসমেটোলজিতে কাজ শুরু করেন ধরে তিনি এখানেই কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘ ৭৪ বছর কর্মজীবনে তিনি কখনও ছুটি নেননি এমনকি অসুস্থ হলেও না। 

মেলবার সম্পর্কে টাইলারের ডিলার্ডের স্টোর ম্যানেজার জেমস সায়েঞ্জ ফক্স নিউজকে বলেন, তিনি শুধু একজন বিক্রয়কর্মী নন। তিনি একজন মা। তিনি গাইড করেন। তিনি জীবন সম্পর্কে উপদেশ দেন। তিনি বহু গুণের অধিকারী। 

তিনি আরও জানান, মেলবা তাঁর মুখে হাসি নিয়ে প্রতিদিন কাজ শুরু করতেন।

তিনি বিক্রয়ে পারদর্শী ছিলেন এবং এমন কোন গ্রাহক বা সহকর্মী ছিল না যে তাকে ভালোবাসে না। তার পরে যারা এখানে কাজ শুরু করেছে তাদের সবাইকে খুব সুন্দরভাবে প্রশিক্ষন দিয়েছেন এবং শিখিয়েছেন। 

মেবানে জানান, কর্মস্থলে কখনো বিরক্ত হতেন না তিনি। সেখানকার সবাইকে ভালোবাসতেন এবং প্রতিদিন কাজে যেতে পছন্দ করতেন। অবসর নেওয়ার পর এখন বিশ্রাম, ভ্রমণ এবং ভালো খাবার খেয়ে দিনযাপন করতে চান তিনি। 

মেবানের কয়েক দশকের কাজ এবং নিষ্ঠার প্রতি সম্মান জানাতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে তাঁকে স্টোরের দীর্ঘতম কর্মক্ষম কর্মচারী হওয়ার জন্য ‘সার্টিফিকেট অব এক্সিলেন্স’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। 

;

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল 'ব্ল্যাকি', সম্পদ ৩ কোটি ডলার



ফিচার ডেস্ক বার্তা২৪.কম
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল 'ব্ল্যাকি'। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল 'ব্ল্যাকি'। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাধারণত যখন কেউ মারা যায় তখন তাঁর সম্পদের অংশ পরিবারের সদস্যদের কাছে রেখে যান। কেউ কেউ আবার বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায়ও দান করে থাকেন। তবে, যুক্তরাজ্যের বাকিংহ্যামশায়ারের বাসিন্দা বেন রিয়া যা করেছেন তা বিরল! স্রেফ ভালোবাসা থেকেই তাঁর সম্পদের বড় একটি অংশ প্রিয় পোষা বিড়াল ‘ব্ল্যাকির’ জন্য দিয়ে যান। আর এতেই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল হয়ে উঠে ‘ব্ল্যাকি’। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইট থেকে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

রেকর্ড সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ১৯৮৮ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ব্ল্যাকির নাম উঠেছে। সেই নাম ৩৫ বছর ধরে এখনো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল হিসেবে গিনেসের পাতায় বিড়ালটির এই স্বীকৃতি অক্ষুণ্ন রয়েছে। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সবচেয়ে ধনী বিড়ালটির সম্পদের পরিমাণ আসলে কত?

গিনেস ওয়ার্ল্ড বলছে, যখন ব্ল্যাকি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়ালের স্বীকৃতি পেয়েছিল, তখন সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ডলার। বর্তমানে যা ৩ কোটি ২০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

গিনেস ওয়ার্ল্ডের তথ্য মতে, ‘ব্ল্যাকির’ মালিক বেন রিয়া প্রাচীন জিনিসপত্র ক্রয় এবং বিক্রি করে কোটি ডলারের মালিক হন। ১৯৮৮ সালে এই ধনকুব মারা গেলে সম্পদের বিশাল একটি অংশ বিড়ালের নামে দিয়ে যান। তবে বেনের পরিবার ছিল কিন্তু সে একাই বসবাস করতো।  

তার বেশিরভাগ অর্থই তিনটি দাতব্য সংস্থার মধ্যে উইল করে যান। যেই সংস্থাগুলো পোষা প্রাণীদের দেখভাল ও সুরক্ষা দিয়ে থাকে। উইলে তিনি উল্লেখ করেন, যতদিন ব্ল্যাকি বেঁচে থাকবে ততদিন প্রাণীটির দেখভাল করতে হবে। 

তবে বেনের প্রিয় ব্ল্যাকি কত দিন বেঁচে ছিল কিংবা বেনের মৃত্যুর পর ব্ল্যাকির ভাগ্যে কী জুটেছিল, সেই বিষয়ে গিনেসের ওয়েবসাইটে কিছু না জানালেও এই রেকর্ড এখন পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেনি সেটি নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি ।

;

১৬০০ মিটার উচ্চতায় কম সময়ে দড়ি পার হয়ে বিশ্ব রেকর্ড!



ফিচার ডেস্ক বার্তা২৪.কম
শি হ্যালিন। ছবি: সংগৃহীত

শি হ্যালিন। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার (১.৬ কিলোমিটার) উচ্চতায় চীনের শি হ্যালিন (৩১) নামে এক ব্যক্তি খুব দ্রুত সময়ে ১০০ মিটারের স্ল্যাকলাইন (দড়ির উপর দিয়ে হাঁটা) পার হয়ে বিশ্বরেকর্ড করেছেন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইট থেকে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

রেকর্ড সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানটি জানায়, চীনা নাগরিক শি হ্যালিন সবচেয়ে কম সময়ে মাত্র ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডে ১০০ মিটার লম্বা দড়ি পার হয়ে বিশ্ব রেকর্ড করেছেন। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার উঁচুতে ছিল। 

শি হ্যালিন জানান, আমি পিংজিয়াংয়ের মাউন্ট উগং-এর গুয়ানিইন্ডাং ক্যাম্পে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার উপরে স্টান্ট করেছি। সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে এই রেকর্ডটি করতে পেরে নিজেকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এটি বিশাল এক চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশেষ করে এতো উচ্চতায় বাতাসের চাপ বেড়ে যায় এবং তাপমাত্রা হ্রাস পেতে থাকে। এর মধ্যে আবার দিনটি ছিল খুব কুয়াশাচ্ছন্ন। ফলে ভালো করে দেখতেও সমস্যা হচ্ছিল। 

এই রেকর্ডের পর সে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে এরকম প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করতে আগ্রহী বলেও জানান তিনি। 

তবে, এর আগেও তিনি এশিয়াতে বেশ কয়েকটি স্ল্যাকলাইন রেকর্ড জিতেছেন। ২০১৬ সালে তিনি ২ মিনিটে এই রেকর্ডটি করেছিলেন কিন্তু, সেটি পরের বছরই ফ্রান্সের নাগরিক লুকাস মিলিয়ার্ডের কাছে হারাতে হয়। 

;

মেডেলিনে তাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ‘গ্রিন করিডোর’



ফিচার ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি: বিবিসি

ছবি: বিবিসি

  • Font increase
  • Font Decrease

কলম্বিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী মেডেলিনে ‘গ্রিন করিডোর’ প্রকল্প শহরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশগত সুবিধার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছে। এ প্রকল্পের অধীনে পুরো শহর জুড়ে গাছের শীতল ছায়ার ব্যবস্থা করেছে দেশটি।

মেডেলিনকে ‘বসন্তের শহর’ বলা হয়। মেডিলিনের নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু সারা বছরই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। নতুন নির্মিত ভবন ও রাস্তাগুলো তাপ শোষণ করে ধরে রাখে। তবে স্থানীয় সরকারী তথ্য অনুসারে, নতুন গ্রিন করিডোরগুলো শহর জুড়ে ২ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হ্রাস করেছে।

কলম্বিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মেডেলিনে বায়ু দূষণ ও ক্রমবর্ধমান তাপ নিয়ে উদ্বেগের কারণে ২০১৬ সালে "গ্রিন করিডোর" প্রোগ্রাম শুরু হয়। ৩০ টিরও বেশি সবুজ করিডোর রয়েছে এ শহরে। করিডোরগুলো নতুন রাস্তার প্রান্ত, উদ্যান, পার্ক এবং নিকটবর্তী পাহাড়গুলোকে সংযুক্ত করেছে। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পে শহর জুড়ে প্রায় ১ লক্ষ ২০হাজার গাছ লাগানো হয়। ১২ হাজার ৫০০ টি গাছ রাস্তা ও পার্কে রোপন করা হয়। এছাড়া আরো ২৫ লক্ষ ছোট গাছের চারা রোপন করা হয়। ২০২১ সালের মধ্যে শহর জুড়ে ৮ লক্ষাধিক বড় গাছ রোপন করা হয়।

স্থানীয় সরকারের মতে, প্রকল্পটি জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ১৬.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২ সালে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৬ লক্ষ২৫ হাজার মার্কিন ডলার।

ওইসিস কাস্ত্রো যিনি ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে শহরের ওরিয়েন্টাল অ্যাভিনিউয়ের একটি স্ট্যান্ডে ফল বিক্রি করেন। কয়েক দশক আগের কথা মনে করে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার একটি ট্রাফিক প্রকল্পের কাজের সময় রাস্তার সারিবদ্ধ গাছগুলো উপড়ে ফেলেছিল।

কাস্ত্রো বলেন, বর্তমানেও ওরিয়েন্টাল অ্যাভিনিউ রাস্তাটি ট্রাফিক ও বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখন রাস্তার দুপাশে বড় বড় ফল গাছ, ফুল গাছ ও ঝোপঝাড়ে সবুজ এলাকায় পরিণত হয়েছে।

এখানকার তাপমাত্রা সারা বছরই উপভোগ্য মনে হয়। শহরের যেসব অঞ্চলে বেশি গাছপালা নেই সেসব জায়গার তুলনায় অনেক সতেজ থাকে এই এলাকা। সাইকেল লেনের দুপাশে সারিবদ্ধ গাছের পাশে বেঞ্চগুলোতে পথচারীরা বিশ্রাম নিতে পারেন।

শহরের তাপমাত্রা কমিয়ে শীতল করার জন্য প্রকল্পটি এখন বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বায়ুর গুণগত মান উন্নয়নে ভালো কাজ করছে। এটি শহরে বন্যপ্রাণী ফিরিয়ে এনেছে।

একটা সময় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উচ্চ তাপপ্রবাহ নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে শহরগুলোতে।

সবুজ করিডোরের প্রতি মেডেলিনের দৃষ্টিভঙ্গি একটি কম খরচে, জনপ্রিয় সমাধান দেয় যা অন্যান্য শহরগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে প্রতিলিপি করতে চাইছে। এটি কি ভবিষ্যতের একটি জলবায়ু-স্থিতিশীল শহরের জন্য একটি মডেল হতে পারে?

মেডেলিন কম খরচে ‘গ্রিন করিডোর’ প্রকল্পের মাধ্যমে তাপ প্রবাহ কমানোর একটা জনপ্রিয় সমাধান দেয়। বিশ্বের অনেক দেশ তাদের তাপপ্রবাহ কমাতে মেডেলিনকে অনুসরণ করছে। মেডেলিনকে ভবিষ্যতের জলবায়ু-স্থিতিশীল শহরের জন্য একটি মডেল ভাবা হয়।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার মতে, মেডেলিনের বায়ুদূষণের মাত্রা পিএম ২.৫। বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা ডব্লিউএইচও জানায়, পিএম২.৫ নামে পরিচিত ছোট ও বিপজ্জনক বায়ুবাহিত কণার গড় বার্ষিক ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়।

যাইহোক, শুষ্ক মৌসুমে যখন শহরটিতে বৃষ্টিপাত হ্রাসের কারণে বায়ুর অবস্থার সবচেয়ে খারাপ সময়ের মুখোমুখি হয় তখন মেডেলিন বায়ুর গুণমান সূচক (একিউআই) পিএম২.৫ এর ৫৫ µg/m3-এ পৌঁছাতে পারে। যখন দূষণ ৩৮ µg/m3-এর বেশি হয়ে যায়, তখন উপত্যকার প্রারম্ভিক সতর্কতা ব্যবস্থা স্বরুপ গাড়ি ব্যবহারে বিধিনিষেধ দিতে পারে।

২০১৫-১৬ সালে আমরা বায়ু দূষণের শীর্ষে পৌঁছেছিলাম বলে জানিয়েছেন সে সময়কার মেডেলিনের স্থানীয় অবকাঠামো সচিব পাওলা প্যালাসিও। তিনি বলেন, পরিবেশগত সমস্যায় এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল।

২০২০ সালে মেডেলিনের অ্যান্টিওকিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৬ সালে আবুরা উপত্যকা অঞ্চলে দূষণের কারণে ১হাজার ৯৭১ জনের অকালমৃত্যু ঘটেছে। যানবাহন থেকে ধোয়া নির্গমনের উপর নিয়ন্ত্রণের অভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে দূষণের কারণে মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

গবেষকরা বলছেন, গ্রিন করিডোরে ব্যবহৃত গাছগুলো এই বিপজ্জনক কণার বিরুদ্ধে বাধা হিসাবে কাজ করে, উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দূষণ শোষণ করে নেয়।
মেডেলিন প্রকল্পে ব্যবহৃত কিছু প্রজাতির গাছ দূষণ শোষণে বিশেষভাবে দক্ষ বলে পরিচিত।

গ্রিন করিডর প্রকল্প বায়ু দূষণ কতটা কমিয়েছে তা নিয়ে কোনো সামগ্রিক সমীক্ষা বা পর্যালোচনা এখনও দেখা যায়নি। তবে গবেষকরা বলছেন, এর প্রভাব অধ্যয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, গবেষণা ফলাফল ২০২৪ সালের প্রথম দিকে প্রকাশিত হবে।

৩০টি গ্রিন করিডোরের পাশাপাশি, প্রায় ১২৪ টি পার্কও প্রকল্পের অংশ হিসেবে করিডোর দ্বারা সংযুক্ত হয়েছে। শহর জুড়ে সবুজের এই বৃদ্ধি জলবায়ুর ওপর একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অ্যান্টিওকিয়ার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, এই পার্কগুলোর মধ্যে মাত্র দুটি, নুটিবারা এবং ভোলাডোর পাহাড় বায়ুমণ্ডল থেকে প্রতি বছর ৪০ টন কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) অপসারণ করে থাকে।

;