থাইল্যান্ডে সন্তান জন্মদানের অভিজ্ঞতা



মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পর্যটন এলাকাগুলো ছাড়লে থাই জনগোষ্ঠীর ইংরেজি ভীতি উল্লেখযোগ্য। বরং কখনো ঔপনিবেশিক শাসনে না থাকায় ইংরেজিকে গ্রহণ করতে হয়নি বলে গর্বও করেন অনেকে। ফলে গত ১০ জুন যখন আমার স্ত্রী থাই পিবিএস টিভির সাংবাদিক কানালাওয়াই ওয়াক্লেহংকে ট্রাট হাসপাতালে ভর্তি করা হলো, আমার মৌখিক যোগাযোগেরও প্রায় সব পথ বন্ধ হয়ে গেলো। কম্বোডিয়া সীমান্ত ঘেষা ট্রাট থাইল্যান্ডের একটি বিভাগীয় শহর। বাংলাদেশে আমার অভিজ্ঞতায় ৫ম শ্রেণি পড়ুয়া হলেই ইংরেজিতে মৌলিক শব্দ নাগরিকরা বলতে পারেন। অথচ এখানে বিরাট সব ডিগ্রিধারী চিকিৎসক বা আইনজীবীর পেট চেপে ধরলেও অন্য ভাষা বের হবে না। এদিকে আমার শ্বশুরবাড়িতেও স্ত্রী ছাড়া কারো পক্ষে ইংরেজিতে যোগাযোগ অসম্ভব। আর আমার থাই ভাষার জ্ঞানও হাটু ভাঙ্গা। তাই আধুনিক সময়ে গুগল ট্রান্সলেটেই ভরসা করতে হয়।

ট্রাট হাসপাতালে এর আগে ৩১ মে এবং ৭ জুন এসেছিলাম স্ত্রীকে গর্ভাবস্থার পরীক্ষা করাতে। আমার স্ত্রী যখন সন্তান সম্ভবা হয় তখন আমরা বাংলাদেশে। আমার দেখামতে থাইরা পরিচ্ছন্নতার ওপর বেশ গুরুত্ব দেয়। তাই বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা সর্ম্পকে একটা পরিষ্কার ধারনা দেওয়ার জন্য তাকে পরীক্ষা করাতে ইউনাইটেড এবং ডাক্তার দেখাতে পরবর্তীতে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। দুটো হাসপাতালেরই আঙ্গিনা দেখে স্ত্রী আমাকে বলেছিলো, ‘এতো নোংরা কেন তোমাদের হাসপাতালগুলো!’ এখানে মানুষ সুস্থ হয়ে আসলেও তো অসুস্থ হয়ে যাবে! আর ইউনাইটেডে ২ হাজার ১০০ টাকা ভিজিট দিয়ে যখন ৫ মিনিটের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিলাম, সেটা শুনে ও বললো, এমন জানলে থাইল্যান্ডের সব চিকিৎসকরাইতো বাংলাদেশে চলে আসবে!

ইউনাইটেড বা এভারকেয়ারকে নোংরা বলার কারণ খুঁজে পেলাম এখানে একটি বিভাগীয় হাসপাতালে এসে। সব মিলিয়ে মাত্র আড়াই লাখ মানুষের বাস ট্রাট বিভাগে। তবে প্রতিবেশী দেশের প্রতি দায়িত্ব হিসেবে এই সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে পারেন কম্বোডিয়ার সাধারণ জনগণও। যদিও এক্ষেত্রে তাদের স্থানীয়দের তুলনায় বাড়তি খরচ গুণতে হয়। তবে ট্রাট হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা দেখে আমি মনে মনে ভাবি, ভাগ্য ভাল স্ত্রীকে দেশের সরকারি হাসপাতালে নেইনি। নিলে হয়তো মূর্ছা যেতো!

২০০২ সালেই ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ গ্রহণ করে থাইল্যান্ড। এর ফলে স্থানীয়রা সরকারি হাসপাতালগুলোতে মাত্র ৩০ বাথ বা ৮০ টাকায় বাচ্চা জন্ম দেওয়া থেকে শুরু করে ক্যান্সারের চিকিৎসা পর্যন্ত হয়। শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ খরচ নয়, এই খরচে ওষুধ, পরীক্ষা এবং ডায়াগোনসিসের খরচও বহন হয়।

আমার স্ত্রী চাকরি সূত্রে থাকেন ব্যাংককে। এর আগে গত ডিসেম্বরে সেখানে চুলাবরন ক্যান্সার হাসপাতালে তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম গর্ভাবস্থার নিয়মিত চেক-আপে।

চুলাবরন হাসপাতালটি সরকারি হাসপাতাল নয়, বর্তমান রাজার বোন বা ভ্যালেড রাজকন্যার অনুদানে চলা একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। সেখানে ৮ মাস পর্যন্ত নিয়মিত চেকআপ করা হতো পে’র। সেখানে যে চিকিৎসক ছিলেন, ওয়টসিলা, প্রতিবার তার কাছে গেলে তিনি প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট গল্প করতেন। আমার অবস্থা, স্ত্রীর চাকরির অবস্থা, দেশের অবস্থা এসব নিয়ে। কারণ হচ্ছে একটাই, ডাক্তার হিসেবে রোগীকে আরও সহজ করা। চুলাবরনের চিকিৎসকই ৩২ সপ্তাহ হয়ে গেলে স্ত্রীর ফাইল ট্রাট হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় ইমেইলে। আমরা যখন হাসপাতাল থেকে বের হই দেশে, আমাদের হাত ভর্তি যেমন অনেক ফাইল আর টেস্টের ফলাফল থাকে, এখানে আমার স্ত্রী বা সন্তানের এখন পর্যন্ত কোন চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজ চোখে পড়েনি। কারণ সবই আছে হাসপাতালের নির্দিষ্ট সার্ভারে।

ট্রাট থাইল্যান্ডের ধনী প্রদেশগুলোর মধ্যে একটি। এখানে মানুষের মাথাপিছু আয় থাইল্যান্ডের অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় ভাল। তবে সেই অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক নেই। সরকারি হাসপাতালের বাইরে শুধু রয়েছে বেসরকারি ‘ব্যাংকক হাসপাতাল।’ যেহেতু পর্যটন স্থান হিসেবে ট্রাট পশ্চিমাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়, তাই তাদের জরুরি সেবা ও মেডিকেল ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করে এই বেসরকারি হাসপাতালটি। রয়েছে কয়েকটি ক্লিনিকও, সেখানে একজন বা দুজন করে চিকিৎসক রয়েছেন শুধু পরামর্শ দেওয়ার জন্য। তবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালের বাইরে একটিও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চোখে পড়েনি। আর প্রেসক্রাইবড ওষুধ নিতে হলেও শহরের ৫টি ফার্মেসির বাইরে নেওয়ার সুযোগ নেই।

ট্রাট হাসপাতালেও যখন স্ত্রী চেক আপে যেতো, এখানকার চিকিৎসক অনেকক্ষণ সময় দিতেন, গল্প করতেন। এতো সময় পেতেন কিভাবে চিকিৎসক? এখানে কি রোগীর চাপ কম? না, বরং এখানেও রোগীর চাপ রয়েছে। পাশের দেশের রোগীর চাপও অনেক। বিষয়টা হচ্ছে এই চিকিৎসকের হাতে সময় রয়েছে। দুপুর ২টা বা ৩টা বাজলেই নিজের চেম্বার বা বেসরকারি ক্লিনিকে যাওয়ার তাড়া নেই। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিকেও আলাদা করে সময় দিতে হচ্ছে না।

১০ তারিখ রাতে যখন স্ত্রীর গর্ভধারণের ব্যথা উঠলো সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে গেলাম হাসপাতালে। থাইল্যান্ডকে ইউনিফর্মের দেশও বলা যেতে পারে। যেখানে স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে, সরকারি কর্মকর্তা, বাস চালক, সবারই আলাদা আলাদা পোশাক রয়েছে। আর হাসপাতালেতো সেটি আরও কঠোরভাবে মানা হয়। চিকিৎসক, নার্স, আয়া, ট্রলিম্যান, কর্মচারী, কর্মকর্তা সবার আলাদা আলাদা পোশাক রয়েছে। তাই কে কোন কাজে নিয়োজিত সেটি বুঝতে সমস্যা হয় না।

দেশে অনেককে দেখেছিলাম, গর্ভধারণের রুমের সামনে বসে অপেক্ষা করতে। আমিও সেই প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিলাম। তবে আমাকে ফেরত পাঠালেন কর্তব্যরত নার্স, গুগল ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে বললেন, ওকে লেবার রুমে নেওয়া হয়েছে। যখন বাচ্চা হবে, তোমাকে খবর দেওয়া হবে। এখানে বসে থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। আমাকেও সহজভাবে মেনে বাসায় ফিরে আসতে হল।

১১ জুন স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে আমার ছেলে সন্তানের জন্ম হলো। মা ও ছেলে দুজনেই সুস্থ রয়েছেন। আমি আবার তাড়াহুড়ো করে ছুটে চললাম হাসপাতালের দিকে মা ও ছেলেকে বাসায় নিয়ে আসতে। কিন্তু যেয়ে আবারও হতাশ হতে হলো। ছেলে ও মা’কে দেখলাম কয়েক সেকেন্ডের জন্য। বাধ্যগতভাবেই অবস্টেট্রিক ওয়ার্ডে থাকতে হবে দুই দিন।

দেশ থেকে যারা ফোন দিচ্ছিলেন, তারা অনেকেই জানতে চাচ্ছিল, কেন দুই দিন থাকতে হবে? আসলে কি সাধারণ নিয়মে প্রসব হয়েছে সন্তান? নাকি সার্জারি প্রয়োজন হয়েছিল? আবার অনেকেই বললেন, দেখো দুই দিন কি বেশি টাকার জন্য রাখছে নাকি হাসপাতাল? আসলে বাংলাদেশের প্রচলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এই ধরনের প্রশ্ন আসে আমাদের। আমারও এসেছিল। অবস্টেট্রিক ওয়ার্ডে শুধু মা ও সন্তানরা থাকে এখানে। আর কোন এটেনডেন্টকে থাকতে দেওয়া হয়নি। কেন? উত্তরে জানা যায়, এতে মা ও সন্তানের বাঁধনটা শক্ত হয়। আর বেশি মানুষ আসলে রোগ জীবাণু প্রবেশের সম্ভাবনাও বাড়ে। আর করোনার মধ্যেতো সেটা আরও বেশি কঠোরভাবে মানা হয়। তাই অগত্যা আরও দুইদিন অপেক্ষা করতে হলো মা ও ছেলেকে দেখতে।

তবে মা ও সন্তানকে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ার সময় দেখলাম এই দুইদিন বাধ্যতামূলক থাকার কারণে আমাকে কোন বাড়তি খরচ বহন করতে হয়নি। প্রসবের জন্য যে ৮০ টাকা খরচ করেছিলাম, সেটি সর্বসাকুল্যে খরচ। আর মা ও সন্তানকে বিভিন্ন হাইজিন সামগ্রী উপহার দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল থেকে। এরও তিন দিন পরে যখন আবার আমরা সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করাতে গেলাম এবার সন্তানের মাকে দেওয়া হলো ৩৪৫ বাথ, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার টাকার সমান। এটা সরকারি হাসপাতালে জন্ম নেওয়া সকল সন্তানদের দেওয়া হয় প্রাথমিক খরচ হিসেবে।

এছাড়াও যেসব মা ও বাবার আয় বছরে ১ লাখ বাথ বা প্রায় ৩ লাখ টাকার নিচে তাদেরকে প্রতি মাসে দেওয়া হয় ১ হাজার ৮০০ বাথ বা প্রায় ৫ হাজার ৪০০ টাকা। এই ক্যাটাগরিতে আমার স্ত্রী না পড়ায় সে এই অর্থ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

১৭ জুন সকাল থেকে স্ত্রী বলছিলেন, তার মনে হচ্ছে ছেলের চেহারা হলুদ হয়ে রয়েছে। আমরা আবারও দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, সেখানে তার বিলুরুবিন পরীক্ষা করা হলো এবং চিকিৎসক জানালেন ভয়ের কারণ নেই। সন্তান সুস্থ আছে। এবং এবার আমি জানতে পারলাম, এই শহরে আগামী ৬ মাস সন্তানকে চিকিৎসা করাতে এবং কোন পরীক্ষা নিরীক্ষাতে আমাদের আর কোন খরচ বহন করতে হবে না।

ট্রাট ছোট শহর। সবাই প্রায় সবাইকে চেনেন। এখানে ডাক্তার যাযারিকপাতি সিনথু’র অধীনে আমার সন্তান জন্ম নিয়েছে, তার সঙ্গে এক বিকেলে দেখা হলো পার্কে। দৌড়াতে গিয়েছিলেন তিনিও। বললাম, আপনারা রোগীদের অনেক সময় দেন। এই পেশাটাকে আসলেই মহৎ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন আপনারা। উত্তরে তিনি বললেন, আমি যখন এই পেশায় আসি, তখন আমি সেবা করার জন্য এসেছি। এখানে আলাদা কোন মহত্ব নেই। শিক্ষক, সাংবাদিকের মতো পেশাই এই চিকিৎসা। তবে অতি অর্থের পেছনে দৌড়ালে কোন পেশাই আর মহৎ থাকে না।

ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজকে ২০০২ সালেই গ্রহণ করেছে থাইল্যান্ড। এর কারণ হিসেবে দেখা গিয়েছে, জনগণকে যদি স্বাস্থ্য সুবিধা কম মূল্যে দেওয়া যায়, এতে সরকারেরই ব্যয় কমে। সাধারণ মানুষ যদি স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় বহন করতেই জীবন অতিবাহিত করে দেয়, এতে রাষ্ট্রেরই অগ্রগতি থেমে থাকে।

বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন বড় সংখ্যক রোগী ভারতের পরই ব্যাংককে আসে চিকিৎসা করাতে। এখানে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কয়েকগুণ বেশি খরচে চিকিৎসা করান। কিন্তু এই রোগীরা বিদেশে আসছে, তার কারণ কিন্তু স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদেরই বের করতে হবে। আমি শুধু একটি কেস স্টাডি উল্লেখ করেছি।

   

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;