মহান মুক্তিযুদ্ধ, একজন বাটুল ও রণাঙ্গন থেকে দাবানল



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল

খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল

  • Font increase
  • Font Decrease

 

মহান মুক্তিযুদ্ধের খবর প্রকাশের জন্য প্রকাশিত সাপ্তাহিক রণাঙ্গনের পথধরে আজকের দৈনিক দাবানল। যে কারণে রংপুরের মুক্তিযুদ্ধ, দাবানল ও খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুলকে এক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করা হয়।

আর দশটি পত্রিকা সঙ্গে মেলানো যায় না রংপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক দাবানলকে। দেশ মাতৃকার প্রয়োজনে গোপন স্থান থেকে হতো ছাপানো আর বন্দুকের নল এড়াতে সংগোপনে হতো বিতরণ।  সম্ভবত আর কোনো পত্রিকার জন্ম এমন জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে হয় নি।

১৯৬৫/৬৬ সালে রংপুর সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদের জিএস তখন। ছাত্র অবস্থাতেই জড়িয়ে পড়েন শ্রমিক আন্দোলনে। প্রতিষ্ঠা করেন রংপুর-দিনাজপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন। বিএ পাশের পর উচ্চ শিক্ষায় ব্রতী না হয়ে শ্রমিক সংগঠন সম্প্রসারণে উদ্যোগি হন ক্ষণজন্মা বাটুল। সত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন, যার ফলে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর পুর্বেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন। যুগপথ শ্রমিক মুভমেন্টের কারনে ১৯৭০ সালে মার্শাল ‘ল’ এর সময় ৬ মাসের জেল দেওয়া হয় তাকে। সে সময় রংপুর জেলা সামরিক আইন প্রশাসক ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ রংপুরে অবাঙালিদের গুলিতে কিশোর শংকু সমঝদার ও জেলা জজ আদালতের কর্মচারী ওমর আলী শহীদ হন। বাটুল ছিলেন সেই মিছিলের অন্যতম সিপাহসালার।

খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুলের ভাষায় ‘রংপুরে ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে আলমনগর এলাকায় অরাঙালি নেতা আলম এর বাসভবনে অরাঙালিদের একটি মহাসমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে পাকিস্তান ও রংপুর, সৈয়দপুর, লালমনিরহাট, পার্বতীপুর, ঈশ্বরদি, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন এলাকার অরাঙালি নেতারা জড়ো হয়। সিদ্ধান্ত নেয় রংপুর-দিনাজপুরসহ আরো কিছু সংখ্যক এলাকা নিয়ে বিহারীস্থান প্রতিষ্ঠা করবে। এরপরই শুরু হয় রংপুর অঞ্চলে রাঙালি-অরাঙালিদের মধ্যে বিরোধ। এরই ধারাবাহিকতায় ৩রা মার্চ আওয়ামী লীগের ডাকে যখন সারাদেশে সাধারণ হরতাল পালিত হচ্ছিল। সে সময় আওয়ামীলীগের মিছিল থেকে আলমনগরের সরফরাজ খানের বাড়ীর বৈঠকখানায় ঢুকে আইয়ুব খান ও ইয়াহিয়া খানের ছবি ভাংচুর করার সময় সরফরাজ খানের গুলিতে কিশোর শংকু সমঝদার গুলিবিদ্ধ হয়।

স্মৃতিচারণে প্রয়াত খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল বলেছিলেন, ওই ঘটনায় সারা শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার ছাত্র জনতা রাস্তায় নেমে আসে। আমি কিছু সংখ্যক বিক্ষুদ্ধ ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে কৈলাশ রঞ্জন স্কুলের মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সামনের দিকে এগুতে থাকি।      

শুরুতেই মিছিলে অংশ গ্রহণকারীদের সংখ্যা কম হলেও কিছুক্ষনের মধ্যে মিছিলটি বিশাল আকার ধারণ করে। কিছুদুর অগ্রসর হবার পর মালদহ মিষ্টিমূখ অতিক্রম করে একটু সামনে এগুলেই মিছিলটি সহিংস রূপ নেয়। মিছিলের আশপাশের অরাঙালিদের দোকানপাটে হামলা শুরু হয়। প্রথমেই বিদেশী হোটেল খ্যাত হোটেলটি ভাংচুর করা হয়। এরপর আক্রমণ হয় পায়রা চত্বরের সামনে একটি কাবুলীওয়ালার পুরাতন কম্বল আর কাপড়ের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে পাশের ছাপাখানায় আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়ে যায় সবকিছু। এরপর জাহাজ কোম্পানীর মালিকের মালিকানাধীন কে-টু সিগারেট এর ফ্যাক্টরিতে আগুন দেওয়া হয়। এরপর ধীরে ধীরে মিছিলটি সামনের দিকে এগুতে থাকে। শেষে জাহাজ কোম্পানী মোড়ে এসে মিছিলটি থমকে দাড়ায়।

দেওয়ান বাড়ি রোডে জেলা জজ আদালতের কর্মচারী ওমর আলী গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ খবরে সারা শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে রংপুর ক্যান্টমেন্ট থেকে সেনাবাহীনির একটি দল বের হয়। শহরে কারফিউ জারি করে এবং জনগনকে শহর ছেড়ে যেতে বলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শহর জনশূন্য হয়ে যায়। ’

পরের দিন ৪ মার্চ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বাঙালি বিহারীদের যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে ৩ মার্চ এর ঘটনার নিন্দা জানানো হয়। দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করা হয়। বৈঠক শেষে রাঙালি বিহারীদের একটি যৌথ মিছিল বের করে। ‘রাঙালি-বিহারী ভাই ভাই, একসাথে বাস করতে চাই’ শ্লোগান দিয়ে মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে।

১৯৭১ সালের ১২ মার্চ মজদুর ফেডারেশনের ব্যানারে এবং ডা. সোবহানের সভাপতিত্বে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী ময়দানে শ্রমিক জনসভায় আনুষ্ঠনিকভাবে পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে সেখানে মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করার দীপ্ত শপথ গ্রহণ করেন বাটুল।

এরই মধ্যে সারাদেশে স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন মূখর হয়ে উঠে মানুষ। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী অবস্থা বেগতিক দেখে ঢাকায় খাদ্যশস্য মজুদের পরিকল্পনা নিয়ে উত্তরাঞ্চল থেকে খাদ্যশস্য নিয়ে ঢাকায় মজুদ করতে থাকে। এই অবৈধ কর্মকান্ড প্রতিহত করার ডাক দেন তৎকালীন রংপুর দিনজাপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল। ২৩ মার্চ স্থানীয় তেঁতুলতলায় (বর্তমানে শাপলা চত্বর) এক শ্রমিক সভায় শ্রমিকদের খাদ্যশস্য পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন বাটুল। ফলে পরদিন থেকে খাদ্যশস্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। এতে শাসকগোষ্ঠী বাটুলের ওপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হন।

এ অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতার কথা চিন্তা করে ২৬ মার্চ রাতে গঙ্গাচড়ার মহিপুর হয়ে তিস্তা পাড়ি দিয়ে লালমনিরহাটের কালিগঞ্জে যান। পরে সেখান থেকে ২৭ মার্চ ভারতের কুচবিহারের দিনহাটার সিতাই বন্দরে চলে যান ।

 ওই এলাকার ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা কমল গুহ বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক নেতা অলি আহাদের শিক্ষা জীবনে সহপাঠি ছিলেন। বাটুল কমল গুহের সাথে সাক্ষাৎ করে সহযোগিতা কামনা করেন। বাটুলের ভাষায় ‘কমল গুহ তাকে জানালেন, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে; তাই মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ করতে হবে। তার কথা মত শিতাই বন্দরে ফিরে এসে উৎসাহী যুবক টিপু, জোসনা, পিন্টুসহ ১০ থেকে ১২ জন যুবক যুবতীকে কমল গুহের নিকট প্রশিক্ষণের জন্য পাঠান। তিনি বেসরকারীভাবে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে ব্যাপকভাবে লোকজন ভারতে যেতে থাকে। তাদের মধ্য থেকে আরো কিছু লোককে সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠান।

১৭ই এপ্রিল কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকার গঠনের পর তারা ভারতে চলে যায়। কিছুদিনের মধ্যেই তারা মুক্তিযুদ্ধের সকল দায়দায়িত্ব গ্রহণ করে। ফলে তারা বেকার হয়ে পড়েন। এসময় কমল গুহ মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য বাটুলকে পত্রিকা প্রকাশের পরামর্শ দেন।

তার পরামর্শ ও সাহসে মুক্তিযুদ্ধের জন্য বাটুল ‘মুস্তফা করিম’ ছদ্মনামে সাপ্তাহিক ‘রণাঙ্গন’ পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করেন। হয়ে উঠলেন মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক, প্রকাশক ও সম্পাদক । বাটুল ও তার ১০/১২ জন সহযোগী উদ্যোগি ভারত সরকার থেকে পাওয়া রিলিফের অর্ধেক বিক্রি করা অর্থ দিয়ে পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত রাখেন।

সেই সময় সাপ্তাহিক রণাঙ্গন এ ‘ডিসেম্বরে বাংলা মুক্ত’ শীর্ষক খবর প্রকাশ করে হলুস্থল তুলে দেন পুরো উপমহাদেশে। ওই খবর নিয়ে শুরু হয় হৈহৈ রৈরৈ। শুরু হয় নানান আলোচনা, সমালোচনা। সরকার এবং নানা ব্যক্তির নানা প্রশ্নের সম্মুখিন হয় হন বাটুল ও সাপ্তাহিক রণাঙ্গন। কিন্তু ১৬ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে ‘বাটুল ও রণাঙ্গন’ ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। ‘সাপ্তাহিক রণাঙ্গণ’ এর ওই সংখ্যাটি এখনও জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

যুদ্ধের দিনগুলোতে গোপনে পত্রিকা বিতরণ করতেন জীবনের ঝঁকি নিয়ে। নানা চড়াই উৎরাই এর মধ্যদিয়ে এ পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যহত রাখতে সক্ষম হন। এভাবে কয়েক মাস চলার পর আমরা ৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা গিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করে ঐতিহাসিক এক দূলর্ভ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন গোলাম মোস্তফা বাটুল। অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ রণাঙ্গনের দুঃখ দূদর্শার কথা শুনে নগদ দুই হাজার টাকা প্রদান করে। ওই সাক্ষাতকারে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল, ‘আমরা কতদিন পর বাংলাদেশে ফিরে যাব ? তার জবাব ছিল, ‘যুদ্ধ হচ্ছে; কতদিনে দেশ স্বাধীন হবে বলা মুশকিল। ভিয়েতনাম কম্বোডিয়ায় দীর্ঘদিন থেকে যুদ্ধ চলছে এখনো তারা স্বাধীনতা পায়নি। আমাদের যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র ৬ মাস অতিবাহিত হচ্ছে। আমাদেরও স্বাধীনতা পেতে সময় লাগবে। সম্পুরক প্রশ্ন ছিল, ‘আমাদের নিকট তথ্য আছে আপনাদের সাথে পাকিস্তান সরকারের একটি আপোষ আলোচনা চলছে এবং খুব শিগগিরই সমাধান হতে পারে। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন- ‘আই হ্যাভ নো কমেন্ট’। বাটুল তার স্মৃতিচারণে লিখেছেন এরপর আমরা ফিরে এসে নিশ্চিত হই খুব শিগগিরই আমরা দেশে ফিরে যেতে পারব। যার ফলশ্রুতিতে আমরা ‘ডিসেম্বরে বাঙলা মুক্ত’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করি। ফলে আমাদেরকে নানাভাবে বিভিন্ন মহল থেকে নিগৃহীত হতে হয়। শেষ পর্যন্ত ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে, আমরা বীরোচিত সংবর্ধনা পাই।

দেশ স্বাধীনের পর তড়িঘড়ি করে দেশে ফিরেন। শুরু হয় রণাঙ্গনের সাহসী পথচলা। পরে রণাঙ্গন বাজেয়াপ্ত করে সরকার। পরবর্তীতে বিভাগীয় কমিশনার অফিসে আপিল করে ছাপাখানাটি ফেরত পেলেও রণাঙ্গণের ডিক্লারেশন ফেরত পাননি । এরপর প্রতিষ্ঠা করেন ‘সাপ্তাহিক মহাকাল’। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত প্রকাশনা অব্যাহত থাকে ‘সাপ্তাহিক মহাকাল’ এর। এরপর ১৯৮১ সালের ২৭শে মে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সাংবাদিকতার ঐতিহ্যের মনুমেন্ট ‘দৈনিক দাবানল’। বাটুল প্রতিষ্ঠিত এই তিনটি পত্রিকার কাজ করেছেন দেশে বিদেশের প্রথিতষশা সব সাংবাদিক। চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন, আমেরিকা থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক ঠিকানা’র সাংবাদিক আব্দুল মালেক, দৈনিক প্রথম আলোর সহ-সম্পাদক আনিসুল হক, দৈনিক জনকণ্ঠের খ্যাতিমান সাংবাদিক আমান উদ দৌলা, অপরাধ জগতের সফিক রহমান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের আনিস রহমান, তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি) এর সাবেক কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বকসী সবুজ, দৈনিক বিজলীর সম্পাদক মোজাফফর হোসেন, দৈনিক মায়াবাজার সম্পাদক মোনাব্বর হোসেন মনাসহ অনেকেই।

এছাড়াও রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিদম্যান পত্রিকাগুলোও তারই হাতে গড়া সাংবদিকদের হাত দিয়ে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়ে আসছে। গত পাঁচ দশক থেকে রংপুর স্টেশন রোডের দাবানল অফিস এখনো প্রাণবন্ত। নানা শ্রেণী পেশার মানুষে টইটম্বুর থাকে দৈনিক দাবানল অফিস।

খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল একজন ভিন্নধারার মানুষ ছিলেন। মিঠাপুকুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। তার হাতে গড়া সংগঠন মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন এখন উত্তরাঞ্চলে সব থেকে প্রতিষ্ঠিত শক্তিশালী সংগঠন। প্রতিষ্ঠা করেন ঐতিহ্যবাহী সংগঠন রংপুর খেলাঘর, শিখা সংসদসহ অসংখ্য সংগঠন। সাংবাদিকতায় অনবদ্য অবদান রাখার জন্য রংপুর পৌরসভার সিটিজেন এ্যাওয়ার্ড, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের ‘মোনাজাত উদ্দিন সাংবাদিকতা স্মৃতিপদক’সহ অসংখ্য পদক পেয়েছেন। তার বড় পুত্র খন্দকার মোস্তফা মোর্শেদ ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক দাবানল এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। ছোট ছেলে খন্দকার মোস্তফা সরওয়ার অনু ভারতের মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করেছেন। একমাত্র কণ্যা প্রয়াত সোনিয়া মোস্তফা ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন।

জীবন চলার পথের নানা টানাপোড়েন, রাজনীতি আর দৈনিক দাবানল পরিচালনা করতে গিয়ে দমদমায় তেলের পাম্প, ঠিকাদার পাড়ায় হোটেল সম্রাট বিক্রি করে দেন। আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যদিয়েও পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যহত রেখে গত ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান! পরবর্তিতে তার সুযোগ্য সহধর্মীনি সাঈদা পারভীন ও  তার হাতে গড়া ছোট সন্তান খন্দকার মোস্তফা সরওয়ার অনুর সম্পাদনায় পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যহত রয়েছে। দৈনিক দাবানল ২০২২ সালের ২৭ মে ৫১ বছর অতিক্রম করেছে। প্রতিষ্ঠার একান্ন বর্ষপূতি উপলক্ষে ২০ জুন বের হয়েছে বিশেষ সংখ্যা। সঙ্গে থাকছে গুণীজন সংবর্ধনাসহ নানা আয়োজন।

তার প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করে আসছেন তাদের অনেকেই হয়তো কাংখিত বেতন ভাতা পাননি। তবুও তারা একজন বাটুল এবং সাংবাদিকতার প্রতিবিম্বকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন, এখনো অনেকে আছেন পরম ভালবাসায়। তিনি নেই কিন্তু এখনও তার দাবানল আলো ছড়াচ্ছে স্ব-মহিমায়। এর সব কৃতিত্বই খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুলের। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া এই গুনি সাংবাদিক ও সংগঠক মৃত্যুর কয়েক দিন আগেও ১২ ঘন্টা কাটান তার প্রতিষ্ঠিত দাবানলে। কারণে অকারণে ডাকেন সহকর্মীদের। মনের দিক থেকে তিনি ছিলেন চির তরুণ। দাঁতবিহীন মুখে পান চিবাতে চিবাতে পরামর্শ দিতেন, পরামর্শ নিতেন। হাসতেন ফোকলা দাঁতে। সফেদ সাদা পাঞ্জাবীর আবরণে চলতেন পথ। মনে হয়, ছুটছেন কোন অনুসন্ধাণী রিপোর্টের সন্ধানে। তার উদ্যেম সবাইকে অনুপ্রাণিত করতো। সামনে এগুবার পথ দেখাতো। সাংবাদিকতার মাধ্যমে ভালোভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। একটি পত্রিকাকে ৫০ বছর ধরে প্রকাশনায় রাখা যে কতটা সাধনা, ত্যাগ আর কর্মের ফসল। সেটির বাস্তব উদাহরণ দৈনিক দাবানল। আর সেটি যিনি করেন তিনি যে কতটা সাধক, ত্যাগী আর কর্মঠ সেটিও প্রমানিত। তিনি হলেন খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল। তিনি একজন সাধক সাংবাদিক, সংবাদপত্রের সাধক প্রতিষ্ঠাতা। তিনি হলেন সাংবাদিকদের প্রতিবিম্ব। তার প্রয়াণ পরবর্তী শুন্যতায় দাবানল আজ বায়ান্ন বছরে পদার্পণ অনুষ্ঠান উদযাপন করছে। তিনি শরীরে উপস্থিত না থাকলে আছেন হদয়ে, আছেন শত শত অনুজদের চোখে।

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;