ডায়রিয়ায় আতঙ্ক নয় চাই বিশেষ সতর্কতা



সেলিনা আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। আমরা সাধারণত ‘ডায়রিয়া’ও ‘পাতলা পায়খানা’ শব্দ দুটি একই অর্থে ব্যবহার করি। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় পায়খানা নরম বা পাতলা হওয়া মানেই যে ডায়রিয়া হয়েছে, এমনটি নয়। সারাদিনে তিনবার বা তার বেশি নরম বা পাতলা পায়খানা হলে তাকেই সাধারণত ডায়রিয়া বলা হয়। এছাড়া কারও যদি স্বাভাবিকের তুলনায় ঘনঘন পাতলা পায়খানা হয় সেটাকেও ডায়রিয়া হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। যে শিশুরা বুকের দুধ পান করে, তাদের পায়খানা স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা নরম আর আঠালো হয়। সেটা ডায়রিয়া নয়।

যে-কোনো সময় মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। সব বয়সের মানুষের ডায়রিয়া হতে পারে, গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুরাও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুরা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দিজ্বরের মতো মৌসুমি রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিবছরই গরমকালে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এই বছর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে এবং মার্চের মাঝামাঝি থেকে বেশ ব্যাপকহারে তা বাড়তে শুরু করেছে। সাধারণত প্রতিবছর এর প্রকোপ শুরু হয় এপ্রিলের শুরু থেকে এবং ছয় থেকে আট সপ্তাহ তা চলতে থাকে। কিন্তু এই বছর ডায়রিয়া যে শুধু আগেভাগেই শুরু হয়েছে তাই নয়, রোগীর সংখ্যাও আগের যেকোনো বছরের চাইতে অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে ডায়রিয়া এখন কিছুটা কমে আসছে।

ডায়রিয়া সাধারণত ৫-৭ দিনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে ভালো হয়ে যায় তবে ডায়রিয়া থেকে যদি মারাত্মক পানিশূন্যতা হয়, তবে তা মৃত্যুর কারণও হতে পারে।  ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও প্রয়োজনীয় বিভিন্ন লবণ বেরিয়ে যায়। যখন এই ঘাটতি পূরণ করা হয় না, তখনই পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই ডায়রিয়ার প্রথম চিকিৎসা হলো পানিশূন্যতা পূরণ করা। পানিশূন্যতার প্রধান লক্ষণগুলো হচ্ছে—মুখ শুকিয়ে আসা; পিপাসা লাগা ;চোখ শুকনো লাগা বা খচখচ করা ;গাঢ়, তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হওয়া ও প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া। ডায়রিয়ার কারণে সৃষ্ট পানিশূন্যতার দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে ডায়রিয়ার কিছু গুরুতর লক্ষণ প্রকাশ পেলে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে দ্রুত যেতে হবে। লক্ষণগুলো হলো পায়খানার সাথে রক্ত বা আঠালো মিউকাস যাওয়া;প্রচণ্ড পেটব্যথা; ডায়রিয়ার অবস্থার উন্নতি না হওয়া; পানিশূন্যতা পূরণ না হওয়া; ডায়রিয়ার সাথে ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে জ্বর, অর্থাৎ শরীরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি থাকা এগুলো গুরুতর অবস্থা নির্দেশ করে, তাই ঘরোয়া চিকিৎসার সাথে সাথে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

ডায়রিয়া হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়িতে বসেই চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যেমন — খাবার স্যালাইন: সাধারণত প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর এক প্যাকেট বা আধা লিটার করে খাবার স্যালাইন খেতে হবে। এছাড়া চিড়ার পানি, ভাতের মাড় কিংবা ডাবের পানিও খাওয়া যেতে পারে। ডায়রিয়ার ওষুধের সাথে পুষ্টিকর খাবারও খেতে হবে। পুষ্টিহীনতা থেকে ডায়রিয়া হয়। আবার ডায়রিয়ার কারণে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তাই ছয় মাসের কম বয়সি শিশুদের বুকের দুধ এবং বয়স্কদের স্বাভাবিক খাবার খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, মারাত্মক পানিশূন্যতা হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দেশে ৪ লাখ ৬১ হাজার ৬১১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঢাকা বিভাগে গত তিন মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৪৭ জন। এ ছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগে ৩২ হাজার ১৮৬, চট্টগ্রামে ৫১ হাজার ৫৯৬, রাজশাহীতে ৩৭ হাজার ৬০৩, রংপুরে ৩৪ হাজার ৮১৯, খুলনায় ১ লাখ ১ হাজার ৮১৯, বরিশালে ১১ হাজার ৪০৩ এবং সিলেট বিভাগে ৩২ হাজার ৯৩৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

দেশে হঠাৎ ডায়রিয়া ও কলেরার প্রাদুর্ভাব বাড়ার পেছনে পানিদূষণকে দায়ী হরা হচ্ছে পাশাপাশি পরিবেশদূষণও দায়ী। তাই স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে দেশের পানি, বায়ু ও মাটিকে ভালো রাখতে হবে। বাংলাদেশে ৯৮.৩ শতাংশেরও বেশি মানুষ সুপেয় পানি পান করে এবং ৮১.৫ শতাংশ মানুষ নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবহার করে। তারপরও ডায়রিয়ার প্রকোপ রয়েই গেছে।

ঢাকা মহানগরে যাত্রাবাড়ী, গেন্ডারিয়া, বাড্ডা, মোহাম্মদপুরের বসিলা ও টঙ্গী এলাকাকে ডায়রিয়ার হটস্পট হিসেবে চিহৃত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব এলাকায় সাধারণত নিম্নবিত্তের সংখ্যা বেশি। হটস্পটগুলোতে ওয়াসার নজরদারি রাখতে হবে বিশেষ করে বর্ষার আগে এবং পরে পানি দূষণ বাড়ছে কিনা। দূষণ যদি বাড়ে তাহলে এসব স্থানে আপদকালীন পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

-২-

ডায়রিয়া থেকে বাঁচার জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, বাইরের খোলা পানি খাওয়া যাবে না অবশ্যই সম্পূর্ণ নিরাপদ ও ফুটানো পানি পান করতে হবে। বাইরের খাবারের ব্যাপারেও খুব‌ই সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিবেশন করা হয় এমন খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। রাস্তার পাশে এই সময় অনেক খোলা পরিবেশে লেবুর শরবত, আখের রস, জুস বা ফল কেটে বিক্রি করা হয় এগুলো কোনোভাবে পান করা যাবে না। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়া হলে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে।  প্রথমে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে দিনে আট থেকে ১০ গ্লাস তরল খাবেন। প্রতিবার টয়লেটে যাওয়ার পর এক কাপ পরিমাণে তরল খাবার খাওয়া উচিত। ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন’-এর তথ্যানুযায়ী ডায়রিয়া হলে উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত খাবার যেমন–কলা, আলু ও ফলের রস খাওয়া যাবে। পিনাট বাটার, চমড়াছাড়া মুরগি বা টার্কিও ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণকরে। পায়খানার সঙ্গে রক্ত যায়, প্রসাবের পরিমাণ কমে যায়, অতিরিক্ত পানি পিপাসা লাগে, মুখ শুকিয়ে যায় এবং শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়লে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

 সরকার প্রতিটি মানুষের স্বাস্হ্যসেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যালাইন, আইভিফ্লুইড স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণের সরবরাহ রয়েছে।

পরিবারে ডায়রিয়ার বিস্তার রোধে যা যা করতে হবে তা হলো-পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে রোগীর পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। এটি একদিকে রোগীকে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করে, অন্যদিকে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডায়রিয়া সেরে যাওয়ার পরেও কমপক্ষে দুই দিন কর্মক্ষেত্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো যাবে না । তানাহলে অন্যদের মাঝেও ডায়রিয়া ছড়িয়ে যেতে পারে। এছাড়াও বারবার সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। পায়খানা কিংবা বমির সংস্পর্শে এসেছে এমন কাপড় বা বিছানার চাদর গরম পানি দিয়ে আলাদাভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। পানির কল, দরজার হাতল, টয়লেট সিট, ফ্লাশের হাতল, জীবাণুর সংস্পর্শে আসতে পারে এমন জায়গা প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সুস্থ এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ। তাই ডায়রিয়া প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা আবশ্যিক। আর এক্ষেত্রে আতঙ্কিত না হয়ে নিজে সচেতন হোন আশে পাশের লোকজনকে সচেতন করুন।

   

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;