২০২১ সালে সেরা দশ আবিষ্কার

  সালতামামি


দেবদুলাল মুন্না
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) ‘ডিপ মাইন্ড

২০৩০ সালের মধ্যে ২ কোটি চাকরি চলে যাবে রোবটের দখলে। শুধু  চীনেই রোবটকর্মীর সংখ্যা হবে প্রায় দেড় কোটি। অক্সফোর্ড ইকোনমিকস এর একটি গবেষকদল এ তথ্য জানান ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। আমাদের দেশের  কিশোর-তরুণ রোবট গবেষকেরা ও পিছিয়ে নেই।

এ ডিসেম্বরই আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে ৪টি স্বর্ণসহ মোট ১৫টি পদক জিতেছে দেশের স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের একটি দল।হয়তো চুড়ান্ত ফলাফল আরও পরে আসবে কিন্তু কাজ শুরু হয়েছে।

পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) মানুষের জন্য যেমন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে, তেমনি হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর হুমকি। মানুষ হারাতে পারে চাকরি।   গুগলের সাবেক চেয়ারম্যান এরিক স্মিড ও এমনটি মনে করেন। গুগলের মূল প্রতিষ্ঠানের নাম এখন অ্যালফাবেট। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটি এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে উন্নত গবেষণা করে বলেছে এবছর বলেছে ২০২২ সাল থেকেই শুরু করবে মহড়া ভিত্তিক কাজ।

গুগলের ডিপ মাইন্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রকল্পকে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা নিয়ে যদিও আরও আগে থেকেই কাজ হচ্ছে তবে সাফল্যের ৭০ ভাগ কাজ হয়েছে চলতি বছর। ‘ডিপ মাইন্ড’ এর কাজ হচ্ছে শুধু রোবোটিক কাজই করা না, অন্য কে কি ভাবছে সেটিও শনাক্ত করা। মানে মনকে পড়ে ফেলা।

যুক্তরাষ্ট্রের এনভিডিয়া তৈরি করছে উন্নত চিপসেট। দ্রুত বাড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজার। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউবিএস জানাচ্ছে, রোবট ২০৫০ সালের মধ্যে সমস্ত মানবিক কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম হবে। তবে ডিপফেক নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়ছে। ডিপফেক হচ্ছে, ছবি বা ভিডিওকে বিকৃত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নিখুঁতভাবে তৈরি করে হুবহু আসলের মতো বলে প্রচার করা হচ্ছে।  এতে যে কোনো প্রভাবশালী মহল অন্য মহলকে বা ব্যাক্তিকে বিপদে ফেলতে পারবে। সত্য ও মিথ্যা নির্ধারণ করাও কঠিন হয়ে পড়বে।

বর্তমানে ড্রোনের মতো আধা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রগুলোর যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার অনেক রাষ্ট্রেরই মাথাব্যথার কারণ।

মহাকাশে হচ্ছে পর্যটনস্থল

জেফ বেজোস ও রিচার্ড ব্র্যানসন এরিমেধ্য মহাকাশ ঘুরে এসেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত ১১ জুলাই প্রথমবারের মতো পর্যটক হিসেবে মহাকাশের প্রান্ত ঘুরে এসে ব্রিটিশ ধনকুবের রিচার্ড ব্র্যানসন বলেন, শিগগিরই নিয়মিত মহাকাশ ভ্রমনের ব্যবস্থা করা হবে। এ কাজটি করবে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ভার্জিন গ্রুপের গ্যালাকটিকের নভোযান।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে ভার্জিন গ্যালাকটিকের কাছে যাত্রী হিসেবে ৬০০ ব্যক্তি অগ্রিম টিকিটের ফরমাশ দিয়ে রেখেছেন। এক ঘণ্টার এই অভিজ্ঞতা নিতে খরচ হবে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার বা ২ কোটি ১১ লাখ টাকার বেশি। এ যাত্রায় পাঁচ মিনিটের মতো ওজনহীনতার অভিজ্ঞতা ও পৃথিবীর দিগন্ত দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে।২০২২ সাল থেকে আগ্রহী যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করবেন। নাসার এ তথ্যের বরাতে খবর প্রকাশ করেছে হাফিংটনপোস্ট। 

জেফ বেজোস ও মহাকাশ খ্রমণ শেষ করেছেন। তার প্রতিষ্ঠান আমাজনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পৃথিবীর আবহাওয়ামণ্ডল ও মহাকাশের কাল্পনিক সীমা কারমান লাইন নামে যেটি পরিচিত সেখানে বেজোস গিয়েছিলেন।বেজোসের মহাকাশ সংস্থা ব্লু অরিজিন ও মহাকাশে যাত্রী আনা নেওয়ার কথা ভাবছে। 

মহাকাশ পর্যটন শুরু করতে তোড়জোড় করে বানানো হচ্ছে বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশন। এতে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা।

নাসা এর জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতারও আয়োজন করছে। একটি আয়োজনের নাম, স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ। এ প্রতিযোগিতাতেও একাধিকবার অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছর ‘বেস্ট মিশন কনসেপ্ট’ ক্যাটাগরিতে এসেছে চ্যাম্পিয়নের স্বীকৃতি। ও হ্যাঁ, মে মাসেও এসেছিল সুখবর। মার্স সোসাইটি সাউথ এশিয়া আয়োজিত আইপিএএস চ্যালেঞ্জে উদ্ভাবনে সেরার স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ‘টিম ইন্টারপ্ল্যানেটার’। ফলে বাংলাদেশও মহাকাশ নিয়ে পিছিয়ে নেই। সঙ্গে রয়েছে।

ফোনে আড়ি পাতার জন্য নতুন সফটওয়্যার

ফোনে আড়িপাতার প্রযুক্তি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ চলতি বছর বেশ কয়েকবার আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশ নিয়ে বহুল আলোচিত আলজাজিরার একটি রিপোর্টেও ফোনে আড়ি পাতার প্রসঙ্গ এসেছে।

এনএসও গ্রুপের পেগাসাস সফটওয়্যার নিয়ে বিতর্ক কয়েক বছর ধরে চলছে। গত নভেম্বর নাগাদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এনএসওকে কালো তালিকাভুক্ত করে মার্কিন সরকার। কারণ এটি যে কোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত স্বার্থবিরোধী।

এরপরও থেমে নেই এনএসও গ্রুপ। গত ডিসেম্বরে আড়িপাতার প্রযুক্তি বিষয়ক আরেকটি সফটওয়ার বানানো হয়েছে। এনএসও গ্রুপ নিয়ে চলতি সপ্তাহে আরেকটি তথ্য সামনে আসে। ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, কানাডার টরন্টোভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিটিজেনল্যাবের ফরেনসিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, খাসোগিকে হত্যার মাত্র এক মাস আগে তাঁর এক ঘনিষ্ঠজনের মুঠোফোন হ্যাক করা হয়েছিল। এরকম  নতুন সফটওয়্যার ‘ পিংকস’ দিয়ে যে কারো ফোন হ্যাক করা যাবে ও অডিও ভিডিও ডামি বানানো যাবে।

বাংলাদেশে ইতোমধ্যে পেগাসাস সফটওয়্যার (স্পাইওয়্যারের) ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তায় উদ্ভূত হুমকি অনুসন্ধানে নিষ্ক্রিয়তা কেন সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সাকারা নেক্রোপলিসের মমি উদ্ধারে ‘ট্রিমো ব্যবহার

মিশরীয় সভ্যতার অনেক নিদর্শনই এখনো চাপা পড়ে আছে মরুভূমির বালির নিচে। ২০২০ সালে  প্রত্নতাত্ত্বিকরা কায়রোর দক্ষিণে সাকারা যেটি মূলত একটি নেক্রোপলিস যেখানে যান ও গবেষণা শুরু করেন। সেসময়  ১০০টি প্রাচীন কফিন উদ্ধার করেছেন মিশরীয় প্রত্নতাত্ত্বিক কর্মকর্তারা। কফিনগুলোর কয়েকটির মধ্যে সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় কিছু মমিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া, ৪০টি সোনার ভাস্কর্য-মূর্তি এবং প্রতিমা আবিষ্কৃত হয়েছে। কাঠের কফিন এবং অন্যান্য জিনিসপত্র সমাহিত করা হয়েছিল টলেমাইক পিরিয়ডে, যা ৬৬৪ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪ শতাব্দী পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ২০২১  সালে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ‘ট্রিমো’ নামের একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে নতুন মমি উদ্ধার করেছেন ১২১টি। ট্রিমো যন্ত্রটি তৈরি করেছেন জোসেফ গল। ট্রিমো মাটিতে স্পর্শ করলেই বোঝা যায় মাটির নিচে মমি রয়েছে কি না।

টাইমমেশিনে মহাবিশ্বের প্রাণের মুহূর্ত দেখা

এটি দেখা যাবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে। এই টাইম মেশিনে আমাদের মহাবিশ্বের প্রাণের মুহূর্তটি দেখতে পাওয়া যাবে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ হল কিংবদন্তি হাবল স্পেস টেলিস্কোপের উত্তরসূরি।

এই টেলিস্কোপের পরিচালক যখন উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করেছিলেন, তখন সারা বিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তাকিয়ে ছিলেন আরিয়ান-৫ রকেটের যাত্রার দিকে।মহাকাশে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ নিক্ষেপ করতে রকেট উৎক্ষেপণের সঙ্গে সঙ্গে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মহাকাশে একটি টেলিস্কোপ পাঠানোর ২৫ বছরের দীর্ঘ স্বপ্নপূরণ হল, যা আমাদের প্রাণের উৎসের উত্তর খুঁজে এনে দিতে পারে।

ইউরোপের ফ্রেঞ্চ গায়ানা স্পেসপোর্ট থেকে শক্তিশালী আরিয়ান-৫ রকেটে তার নিজ গ্রহ থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে একটি গন্তব্যে যাত্রা করা হয়েছিল। সূর্য থেকে দূরে পৃথিবীর অন্ধকার দিকে মুখ করে টেলিস্কোপটি মহাবিশ্বকে পর্যবেক্ষণ করবে।

গত ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাসের দিনে উৎক্ষেপণ হয় আরিয়ান রকেটে করে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের। উচ্চ বাতাসের কারণে লিফট-অফ এক দিন আগে স্থগিত রাখা হয়েছিল। যাইহোক একদিন পরে হলেও আরিয়ান টেলিস্কোপটিকে দ্বিতীয় ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টে যাওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। যেখানে এটি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পৌঁছবে। টেলিস্কোপটি মহাবিশ্বের ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায় অধ্যয়ন করবে- বিগ ব্যাং-এর পরে প্রথম আলোকিত দীপ্তি থেকে শুরু করে পৃথিবীর মতো গ্রহগুলিতে প্রাণের মুহূর্ত দর্শন, সৌরজগতের গঠন, মহাবিশ্বের অন্যান্য গ্রহসমূহ।

ভারতে মাটির মধ্যে চিত্রকর্ম

একটি বিশাল জিওগ্লিফ, সম্ভবত বিশ্বের বৃহত্তম, ভারতের থর মরুভূমিতে পাওয়া গেছে, যা পাকিস্তানের সাথে ভারতের সীমান্তের কাছে প্রায় ৫১ একর এলাকা জুড়ে রয়েছে। জিওগ্লিফ হচ্ছে মাটির মধ্যে  বেশ কয়েকটি সর্পিল এবং একটি স্নেকিং লাইন নিয়ে গঠিত যা সামনে পিছনে যায়। এরকম জিওগ্লিফ এর আগে পেরু ও মঙ্গোলিয়ায় আবিস্কৃত হয়েছিল। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা এই জিওগ্লিফের সন্ধান চলতিবছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বিশ্ব প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্থা (ডবিলউএএ) কে জানালে সংস্থাটি ডিসেম্বরে এটির চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

জিওগ্লিফের লাইন ধরে একটি হাইক ৩০ মাইল ভ্রমণের জন্য তৈরি করবে। জিওগ্লিফটি প্রায় ১৫০ বছর আগের অনুমান করা হয়, তবে এর উদ্দেশ্য অস্পষ্ট। জিওগ্লিফটি মাটি থেকে দেখা কঠিন, এবং এটি প্রথম গবেষকদেরএকটি দল যারা সনাক্ত করা করেছিল তারা গুগল আর্থ ব্যবহার করে ল্যান্ডস্কেপ বিশ্লেষণ করছিলেন।

হারানো সোনার শহর

প্রত্নতাত্ত্বিকরা মিশরের লুক্সর (প্রাচীন থিবস) কাছে একটি হারানো সোনার শহর আবিষ্কার করেছেন। শহরটি "দ্য রাইজ অফ আটেন" নামে পরিচিত ছিল এবং ফারাও আমেনহোটেপ তৃতীয় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যিনি ১৩৯১ এবং ১৩৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে শাসন করেছিলেন। শহরটিতে রয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, প্রশাসনিক ভবন, একটি বড় বেকারি, মাটির ইট তৈরির ক্ষেত্র এবং বেশ কিছু কবরস্থান। ঐতিহাসিক নথি থেকে জানা যায় যে আমেনহোটেপ III-এর শহরে তিনটি রাজকীয় প্রাসাদ ছিল ও বেশির ভাগ এলাকার মাটির নিচেই সোনা রয়েছে।  এখন শহরটিতে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ চলছে।

ঐতিহাসিক নথি থেকে শহরের অস্তিত্ব জানা ছিল কিন্তু এ বছরের আগে পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। এর আগে অনেক বিদেশী দল এ হারানো শহরটির সন্ধান করলেও খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানান দেশটির প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জাহি হাওয়াস।

নতুনরূপে সামুদ্রিক দানব

চলতিবছর নেভাদায় ৫৫ ফুট লম্বা ট্রায়াসিক সামুদ্রিক দানব আবিষ্কৃত হয়েছে।

প্রারম্ভিক ডাইনোসর যুগে বসবাসকারী একটি সামুদ্রিক দানব এতটাই অপ্রত্যাশিতভাবে বিশাল, এটি প্রকাশ করে যে এটির ধরণটি খুব দ্রুত বিশাল আকারে বেড়েছে, অন্তত বিবর্তনীয়ভাবে বলতে গেলে। আবিষ্কারটি পরামর্শ দেয় যে এই ধরনের ichthyosours - মাছের আকৃতির সামুদ্রিক সরীসৃপদের একটি দল যা ডাইনোসর-যুগের সমুদ্রে বাস করে- মাত্র ২.৫ মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে বিশাল আকারে বেড়েছে, নতুন গবেষণায় দেখা গেছে। এই প্রসঙ্গে বলতে গেলে, তিমিদের তাদের ৫৫ মিলিয়ন বছরের ইতিহাসের প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ সময় লেগেছে বিশাল আকারে পৌঁছতে যা ইচথিওসররা তাদের ১৫০ মিলিয়ন বছরের ইতিহাসের প্রথম শতকরা ১ ভাগ  বিবর্তিত হয়েছিল। গবেষকরা বলছেন, "আমরা আবিষ্কার করেছি যে ichthyosours তিমিদের তুলনায় অনেক দ্রুত বিকশিত হয়েছে, এমন এক সময়ে যেখানে পৃথিবী ধ্বংসাত্মক বিলুপ্তি থেকে পুনরুদ্ধার করছিল পারমিয়ান যুগের শেষের দিকে। "  সিনিয়র গবেষক লার্স স্মিটজ, স্ক্রিপস কলেজের জীববিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক। ক্লারমন্ট, ক্যালিফোর্নিয়া, একটি ইমেলে লাইভ সায়েন্সকে জানান, "এটি আশার একটি সুন্দর ঝলক এবং জীবনের স্থিতিস্থাপকতার একটি চিহ্ন - যদি পরিবেশগত পরিস্থিতি সঠিক হয়, তবে বিবর্তন খুব দ্রুত ঘটতে পারে এবং জীবন ফিরে আসতে পারে।"  গবেষকরা প্রথম ১৯৯৮ সালে প্রাচীন ইচথায়োসরের জীবাশ্মগুলি লক্ষ্য করেছিলেন।

প্রথম 'কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলড' প্রাণী

টার্ডিগ্রেডস।এদের বলা হচ্ছে  কোয়ান্টাম প্রাণী। তারণ এ প্রাণী সব পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এ প্রাণীর আবিষ্কার করা হয়েছে চলতি বছরের নভেম্বরে। এদের "মস পিগলেট" বলা হচ্ছে।  আশ্চর্যজনকভাবে টেকসই প্রাণীগুলিকে বন্দুক থেকে গুলি করা হয়েছে, ফুটন্ত-গরম পানিতে অনেকক্ষণ রাখা হয়েছে, তীব্র অতিবেগুনি বিকিরণের সংস্পর্শে এসেছে এবং এমনকি (দুর্ঘটনাক্রমে) চাঁদে অবতরণ করা হয়েছে, সবই তাদের চরিত্র বোঝার জন্য যে কোন অবস্থায় তারা কিরকম থাকে সেটির জন্যে। কিন্তু এই কোয়ান্টাম প্রাণীগুলি সবচেয়ে ঠান্ডা তাপমাত্রা এবং সর্বোচ্চ চাপে স্বাভাবিক আচরণ করেছে।

রোমুলাসের সমাধিতে দুইভাইকে দেখা গেল

৭৫৩ সালে, অর্থাৎ ৮ম শতকে রোমুলাসের হাতেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল রোম শহর।কিন্তু অভাবের তাড়নায় রোমুলাস এবং রেমুস- দুই ভাইকে শিশু অবস্থায় নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছিল। তখন দুই শিশু একটি এক মায়া নেকড়ের কাছে বড়ো হয় বলে লোকপুরাণে চালু রয়েছে।কিন্তু বড়ো হবার পর কে হবে ওই অঞ্চলের রাজা কিংবা কতোটুকু হবে সীমানা এ নিয়ে বিতর্কে দুই ভাই জড়িয়ে পড়লে এক রাতে রোমুলাস হত্যা করেন নিজের ভাই রেমুসকে এবং নিজেকে রোমের সম্রাট বলে ঘোষণা করেন। মূলত, রোমুলাস থেকেই রোম শব্দের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হয়।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে একদল প্রত্নতাত্ত্বিক ঘোষণা দেন, তারা রোমান ফোরামের সিনেট হাউজের নিচে কিংবদন্তি রোমুলাসের সমাধির সন্ধান পেয়েছেন। সিএনএন এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, ওই সমাধিস্থলে এবার ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাসের আগের রাতে দুটি গাছ দেখতে পান কিউরেটর। গাছ দুটির বয়স দুইদিনের হলেও একটি গাছ উচ্চতায় একটু লম্বা অন্যটি একটু বেটে। শুধু তাই নয়, বড়ো গাছটির মগপাতায় রোমুলাসের মুখায়ব ভাসছে আর অন্যটিতে রেমুসের। এরপর অনেক বিশ্বাসীরা প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন। তবে গাছে রোমুলাস বা রেমুসের মুখায়বের কোনো অস্তিত্ব নেই বলেই জানিয়েছেসায়েন্স জার্নাল এসোসিয়শন। তবে গবেষকদলের প্রধান টিটল বোলস নেচার ম্যাগাজিনকে বলেন, তিনি শুনেছেন এবং সত্যই মনে হচ্ছে। কারণ তাদের জীবন বেশ রহস্যাবৃত, নাহলে মায়া নেকড়ের কাছে বড়ো হবে কেন আর আমরাই বা এতোবছর পর সমাধি খুঁজে পাবো কেন আর গাছ দুটিই  ‘শুভ বড়দিন’ এর আগে হঠাৎ জন্ম নিবে কেন?

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

  সালতামামি

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

  সালতামামি

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

  সালতামামি

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

  সালতামামি

;