অভিনেত্রীর যৌন হেনস্তার অভিযোগে বহিষ্কৃত অরিন্দমের ক্ষমা প্রার্থনা

  • বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি ও নির্মাতা অরিন্দম শীল

অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি ও নির্মাতা অরিন্দম শীল

অভিনেত্রীদের সঙ্গে হওয়া যৌন হেনস্তা দমনে ‘সুরক্ষা কমিটি’ খুলেছে টলি ফেডারেশন। এ কমিটিতে অভিযোগ জানানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সুপরিচিত চলচ্চিত্র পরিচালক অরিন্দম শীলের বিরুদ্ধে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সেখানকার পরিচালকদের সংগঠন ‘ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’।

বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, ই-মেইল মারফত অরিন্দম শীলকে এই বরখাস্তের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। মেইলে জানানো হয়েছে, পরিচালকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠেছে। যার প্রাথমিক প্রমাণ রয়েছে এবং তা অত্যন্ত উদ্বেগের। এমন অভিযোগ সংগঠনের পক্ষে ক্ষতিকর। সে কারণেই ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিচালককে সাসপেন্ড করা হচ্ছে, অথবা যত দিন না পর্যন্ত পরিচালকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে, তত দিন এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

বিজ্ঞাপন

দিনকয়েক আগে পশ্চিমবঙ্গের এক অভিনেত্রী (পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে) অভিযুক্ত পরিচালকের বিরুদ্ধে অশালীন আচরণের অভিযোগ এনে নারী কমিশনের দ্বারস্থ হন। এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে ‘ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র সভাপতি সুব্রত সেন বলেছেন, ‘‘নারী কমিশনের থেকে অভিযোগ আসার পরই আমরা বিষয়টি নিয়ে সবাই আলোচনায় বসি। সবার সম্মতিতে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’ সেই অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিচালকের বিরুদ্ধে এই বিশেষ নির্দেশ কার্যকর হবে। যে দিন তিনি ‘নির্দোষ’ হিসেবে লিখিত বার্তা পাবেন, সে দিন থেকে আবার আগের মতো কাজ শুরু করতে পারবেন, জানিয়েছেন সুব্রত। অরিন্দমের নাম উল্লেখ না করে এ-ও জানিয়েছেন, ‘এরপরও পরিচালক যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান বা তার সঙ্গে যদি কোনো প্রযোজক কাজ করেন, সে ক্ষেত্রে কোনো বক্তব্য থাকবে না সমিতির।’’

জয়া আহসানকে কলকাতার ছবিতে প্রথম সুযোগ দেন এই অরিন্দম শীল

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমে কথা বলেছেন অরিন্দম শীল। দৃশ্য বোঝাতে গিয়ে অভিনেত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করার অভিযোগে তিনি দাবি করেন, বিষয়টি ‘একটি খুনির সন্ধানে’ সিনেমার সেটে হয়েছে। অভিনেতা সাহেব ও অভিযোগকারী অভিনেত্রীকে তিনি একটি ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তা একটি ‘চিট শট’ ছিল। তার ভাষায়, সেই সময় অনিচ্ছাকৃতভাবেই একটা ঘটনা ঘটে। তখনো এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি। সেই সময়ে চিত্রগ্রাহক থেকে শুরু করে সেটের বাকি সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অভিনেতা সাহেব চট্টোপাধ্যায়ও ছিলেন।

অরিন্দম আরও জানান, ‘তিনি শুক্রবার নারী কমিশনে গিয়ে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, তার অনিচ্ছাকৃত কোনো আচরণের জন্য অভিনেত্রী যদি অপমানিত হয়ে থাকেন, তার জন্য তিনি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। আমার সহকারী পরিচালক ও ক্যামেরাম্যান এবং সুরিন্দর ফিল্মসের সদস্যরা সাক্ষী হিসেবে আছেন। কিন্তু ডিরেক্টরস গিল্ড আমার সঙ্গে কথা না বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

অরিন্দম শীল

এই পরিচালক আরও জানান, অনিচ্ছাকৃতভাবেই যে ঘটনা ঘটেছে, তা তিনি লিখিতভাবেই দিতে যাচ্ছিলেন। তাতে অভিনেত্রী রাজি ছিলেন না। তখন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের অনুরোধে তিনি অনিচ্ছাকৃত শব্দটি বাদ দেন। সেটিই এখন তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিচালক জানান, বিষয়টি আইনজীবীদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন। তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন।

এ ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকজন শিল্পী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ফেসবুকে নন্দিত অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি লিখেছেন, ‘পাপের ঘড়া উল্টায়। ভেবেছিলাম বোধ হয় নিজের জীবনে দেখে যেতে পারব না। ভগবান, তুমি এই কথাটুকু যে রেখেছ, এ-ই অনেক। ২০ বছর সময় লাগল, সে লাগুক। আমাদের জগতের সমস্ত মেয়েদের বলছি, সময় এসেছে সম্মান দখল করার। আর ভয় নয়। গলা তুলে, আঙুল তুলে চিৎকার করে নোংরা লোকগুলোর মুখোশ টেনে ছিঁড়তে হবে। সবাই বেরিয়ে এসো। হাত ধরে একসঙ্গে সোচ্চার হই। এটা আমাদের মৌলিক অধিকার।’

স্বস্তিকা মুখার্জি

স্বস্তিকার স্ট্যাটাস দেখে বোঝা যাচ্ছে, এই পরিচালকের সঙ্গে তারও তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। যদিও সেই ঘটনার কথা কোনদিন উল্লেখ করেনি এই অভিনেত্রী।

প্রসঙ্গত, অরিন্দম শীল একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা ও প্রযোজক। তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো ‘আবর্ত’, ‘এবার শবর’, ‘হর হর ব্যোমকেশ’, ‘ঈগলের চোখ’ ও ‘মিতিন মাসী’।