বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে-কমতে পারে

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন তাতে যেমন বাড়তে পারে অনেক পণ্যের দাম, তেমনি কমতেও পারে অনেক পণ্যের মূল্য।

যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে-

বিজ্ঞাপন

কৃষি যন্ত্রপাতি

বাজেটে শুল্ক ছাড়ের কারণে কমতে পারে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রপাতি তৈরির সরঞ্জামের দাম।

এলইডি বাল্ব

এছাড়া কমতে পারে দেশীয় বৈদ্যুতিক এলইডি বাল্ব ও সুইস-সকেটের দাম। দেশীয় উৎপাদনকে আরও উৎসাহিত করতে আমদানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক ২০-২৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। আসন্ন বাজেটে ওই শুল্ক ১০-৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব আসছে বাজেটে। সে হিসাবে দেশীয় এলইডি বাল্ব ও সুইস-সকেট মিলতে পারে তুলনামূলক কম দামে।

মাংস ও মাংসজাত পণ্য

এবারের বাজেটে মাংস ও মাংসজাত পণ্যকে নিত্যপণ্যের ক্যাটাগরিতে আনার প্রস্তাব আসতে পারে। এর উদ্দেশ্য নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাওয়া পণ্যটির দাম কমিয়ে আনা। এ পণ্যের উৎসে অগ্রিম আয়কর ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হতে পারে। অগ্রিম আয়কর কমালে মাংসের দাম কমতে পারে।

মিষ্টি

দাম কমার তালিকায় আরও রয়েছে মিষ্টি। কারণ মিষ্টির ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে মিষ্টি জাতীয় আরও কিছু প্যাকেটজাত পণ্যেও ভ্যাট কমানো হচ্ছে।

বিদেশি পোশাক

আসন্ন বাজেটে অভিজাত বিদেশি কাপড় আমদানির ওপর শুল্ক কমানো বা অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, এসব পণ্যে শুল্ক কর ২০-২৫ কমিয়ে ৫ থেকে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। এর ফলে বিলাসবহুল কাপড়ের শুল্ক যদি কমানো হয়, তাহলে কম দামে পাওয়া এসব পোশাক।

ই-কমার্সের খরচ

বর্তমানে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বিক্রয়ের ওপর ৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক), ডেলিভারি চার্জের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট, বাড়ি ভাড়ার ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান করতে হয়। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি মেনে নিয়ে বিক্রির ওপরে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। এর ফলে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো ভ্যাট অব্যাহতি পেলে কমবে ডেলিভারি চার্জ।

ওষুধ ও মেডিকেল সরঞ্জাম

বাজেটে আরও ওষুধ ও মেডিক্যাল সরঞ্জাম উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক রেয়াত দিতে পারে সরকার। অ্যান্টি-ক্যানসার এবং অ্যান্টি-ডায়াবেটিস ওষুধের কাঁচামাল আমদানিকে শুল্ক মওকুফের আওতায় আনা হবে।

স্যানিটারি ন্যাপকিন

একইসঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী হিসেবে স্যানিটারি ন্যাপকিন, ডায়াপার ও টয়লেট্রিজের কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদও একবছর বাড়তে পারে। এসব কিছুই জনস্বাস্থ্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য অপরিহার্য।

সাবান ও শ্যাম্পু

সাবান ও শ্যাম্পুর কাঁচামাল লাবসা ও এসএলইস- এর উৎপাদন পর্যায়ে বর্তমানের হ্রাসকৃত ৫ শতাংশ ভ্যাট সুবিধা আরও একবছর বাড়ানো হতে পারে।

যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে-

ফ্রিজ

রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে অব্যাহতি প্রত্যাহার করে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এতে ফ্রিজের দাম বাড়তে পারে।

অবশ্য ফ্রিজ তৈরির উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানি এবং স্থানীয় ক্রয়ের ক্ষেত্রে কর ছাড় সুবিধা রয়েছে। তা ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

রেলের টিকিট

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত/তাপানুকুল সার্ভিসের পাশাপাশি প্রথম শ্রেণির রেলওয়ে সেবার ওপর ১৫ শতাংশ মূসক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে টিকিটের দাম বাড়বে।

মোবাইল ফোন

মোবাইল ফোন সেটের ব্যবসায়ী পর্যায়ে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে।

পনির

বাটার ও চিজ বা পনির পণ্য দুটি সমজাতীয় উল্লেখ করে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাটার আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান থাকলেও চিজ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক আরোপিত নেই। তাই বাটারের মতো চিজ আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

কফি

প্রক্রিয়াজাত ও রেডি টু কনজিউম কফি আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

মোবাইল ফোনের বিদেশি চার্জার

দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আরও বিকশিত করার লক্ষ্যে বিদেশি চার্জারের আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

দেশলাই

বর্তমানে দেশে গ্যাস লাইটার বা দেশলাই উৎপাদিত হচ্ছে। তাই দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার জন্য পণ্যটি আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই বিবেচনায় লাইটারের যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র

বাসাবাড়িতে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত ওয়াটার পিউরিফায়ারের আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

ক্যাশ রেজিস্ট্রার

ব্যবসার ক্যাশ রেজিস্ট্রার আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ। অপরদিকে টিকিট ক্যালকুলেটিং যন্ত্রের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ। মেশিন দুটি প্রায় একই ধরনের হওয়ায় শুল্কহার সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। তাই ক্যাশ রেজিস্ট্রারের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

বিদেশি পাখি

বর্তমানে দেশে পাখি আমদানি হচ্ছে। উক্ত পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রযোজ্য রয়েছে। পাখিগুলো বিলাসবহুল বিধায় আলোচ্য ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ল্যাপটপ

ল্যাপটপ কম্পিউটার আমদানিতে মূসক অব্যাহতি রয়েছে। ফলে দেশীয় কম্পিউটার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই ল্যাপটপ কম্পিউটার আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পণ্যটি আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মোট করভার হবে ৩১ শতাংশ।

গাড়ি

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পূরক শুল্ক অনেকটা বাড়ানো হয়েছে। এতে করে এবার গাড়ির দাম বাড়তে পারে।

বিড়ি-সিগারেট

কম বা বেশি দামি—সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বিড়ির দামও। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেট ও বিড়ির শুল্ক কর বাড়ানো হয়েছে। আর তাতেই বিড়ি-সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। সিগারেট ও বিড়ির পাশাপাশি ধোয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধিরও প্রস্তাব করা হয়েছে।

অন্যান্য

আরও কিছু পণ্যে কর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে ওই সব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এর মধ্য রয়েছে প্রিন্টিং প্লেট, লিফট, সোলার প্যানেল, মিটার, কাগজের কাপ–প্লেট, জিআই ফিটিংস, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, কম্পিউটার প্রিন্টার, ল্যাপটপ, টোনার, চেয়ারের পণ্য।

অন্যদিকে ধনীদের ছাড় দিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষকে করজালের মধ্যে আনার ছক থাকছে বাজেটে। কারণ শূন্য আয় (করযোগ্য সীমার নিচে বার্ষিক আয়) দেখিয়ে আগে রিটার্ন জমা দেওয়া গেলেও আগামী দিনে স্লিপ (প্রাপ্তিস্বীকারপত্র) পেতে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। আর রিটার্ন জমার স্লিপ না নিলে সঞ্চয়পত্র কেনা এবং ব্যাংক ঋণ নেওয়া যাবে না। ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস নবায়ন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ, বাড়ির নকশা অনুমোদনসহ সব মিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি ৪৪ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে না।