কাজ হয়েছে বলেই গ্যাসের উৎপাদন বেড়েছে: পেট্রোবাংলা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার

  • Font increase
  • Font Decrease

সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৩ সালে দেশীয় ফিল্ডগুলোর গ্যাসের উৎপাদন ১৯০০ এমএমসিএফডিতে (মিলিয়ন ঘনফুট দৈনিক) নেমে আসার কথা ছিল। পেট্রোবাংলা তথা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ কাজ করেছে বলেই প্রায় ২৩০০ এমএমসিএফডি পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) পেট্রোবাংলার বোর্ড রুমে জ্বালানি খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশের (এফইআরবি) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এমন দাবি করেন। গত ২ জানুয়ারি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন অতিরিক্ত সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার। সাংবাদিকদের সঙ্গে এটিই তার প্রথম আনুষ্ঠানিক মতবিনিময়।

এলএনজি আমদানির বিষয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, দেশীয় উৎস থেকে আগামী কয়েক বছরে গ্যাস সরবরাহ খুব বেশি বৃদ্ধির সম্ভাবনা ক্ষীণ। সাগরে বড় কোন রিজার্ভ পেলেও তা সিস্টেমে আনতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৮ বছর সময়ের প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে নতুন নতুন শিল্পকারখানা হচ্ছে বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। তাই চাহিদা পূরণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তিনটি নতুন এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন ও এলএনজি আমদানির উৎস বাড়াতে কাজ করছে সরকার।

তিনি বলেন, এলএনজি আমদানির জন্য দেশে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল আছে মহেশখালীতে। দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানির সক্ষমতা রয়েছে। আবহাওয়া ও অন্যান্য কারণে নিদিষ্ট কোন দিনে হয়তো ৯৯৯ পর্যন্ত সরবরাহ দেওয়া সম্ভব। তবে গড়ে ৮৫ শতাংশের অর্থাৎ ৮৫০ মিলিয়নের বেশি সম্ভব না। এলএনজি আমদানির সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলমান রয়েছে। পায়রায় একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল করার বিষয়ে এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে এক মাসের মধ্যেই একটি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। টার্মিনালটির সক্ষমতা হবে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ও পরে বাড়ানো হবে।

মহেশখালীতে একটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণে সামিট গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিছু বিষয়ে মতানৈক্য দূর হলেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এ টার্মিনাল থেকে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ এলএনজি সরবরাহ করা যাবে। তবে পায়রায় পাইপলাইন না থাকায় গ্যাস সরবরাহ পেতে তিন বছর লাগতে পারে। এর বাইরে মহেশখালীতে স্থলভাগের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। জমির বিষয়ে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির অনাপত্তি পেলেই প্রস্তুতি শুরু হবে। এটি প্রথমে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার করা হবে, পরে দ্বিগুণ করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে কাতার এবং ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। বছরে ৫৬টি এলএনজি কার্গো সরবরাহ করে দেশ দু’টি। চুক্তি অনুসারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে আনুপাতিক হারে এ দাম নির্ধারিত হয়। এতে করে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম চড়া হলেও তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায় এ চুক্তি অনুসারে। দেশ দু’টির সঙ্গে সরবরাহ আরও বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। তারা সরবরাহ বাড়াতে সম্মত হয়েছে, এখন দাম পরিমাণ চূড়ান্ত করা হবে। আমাদের কাছে আরও বেশ কিছু প্রস্তাব রয়েছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করছে আরপিজিসিএল।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, একটি স্বস্তির খবর হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে (খোলা মার্কেটে) এলএনজির দাম কমে এসেছে। সর্বশেষ যে দরটি চূড়ান্ত হচ্ছে তাতে ১৩ ডলারের কাছাকাছি পড়বে। জুন পর্যন্ত ১২টি কার্গো আমদানি করা হবে।

তিনি বলেন, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪ হাজার মিলিয়নের মতো। সরবরাহ করা হচ্ছে ৩ হাজারের মতো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই চাহিদা সংযোগ পাওয়া গ্রাহক বিবেচনায়। সংযোগের জন্য অপেক্ষমান গ্রাহকদের চাহিদা হিসাব করা হয়নি। অপেক্ষমাণ গ্রাহকের চাহিদা নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ গ্যাসের চাহিদা ৫৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট প্রাক্কলন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের স্থলভাগে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনা নেয় পেট্রোবাংলা। এটি এখন ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৬টি কূপের উন্নয়ন প্রকল্প করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২৮টি করতে পারবে দেশীয় কোম্পানি বাপেক্স। বাকি কূপগুলোর কাজ বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে করানো হবে। তবে দরের ভিত্তি হবে পেট্রোবাংলা স্থলভাগে যে দরে কাজ করছে সেই দর। ৪৬টি কূপের মাধ্যমে ৬০০ মিলিয়নের মতো উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভোলার উদ্বৃত্ত গ্যাস সিএনজি আকারে আনার বিষয়টি চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে জুন মাস নাগাদ এই কার্যক্রম শুরু হবে। প্রথমধাপে দৈনিক ৫ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ করা হবে। পরে আরও ২০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে দামের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাপেক্সসহ পেট্রোবাংলার অধীনস্থ কোম্পানিগুলোকে গতিশীল করার বিষয়ে তিনি বলেন, বাপেক্সে দু’টি মামলার কারণে পদোন্নতি ঝুলে ছিল। আমি যোগদানের পর তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সুরাহা করার উদ্যোগ নিয়েছি। তাদের এসিআর নিয়ে একটি জটিলতা ছিল, সেটিও সমাধান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জোড়াতালি দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব না। কোম্পানিগুলো কাজের গতি ফিরে আসবে আশা করি। এইতো কয়েকমাস হলো যোগদান করেছি, আমাকে একটু সময় দেন দেখতে পাবেন কাজের গতি। না হলে তখন প্রশ্ন করবেন।

সিস্টেম লস প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, এখন প্রত্যেকটি কোম্পানির প্রান্তে মিটার বসানো হয়েছে। যে কোম্পানি যতটুকু নেবে তাকে সেই পরিমাণ বিল দিতে হবে। এই কাজটি শুরু হয়েছে, ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।

   

ইসলামী ব্যাংকের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০২৩ সালে ১০% ক্যাশ ডিভিডেন্ড সুপারিশ করেছে। ব্যাংকের ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে এ ডিভিডেন্ড প্রদান করা হবে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসানুল আলম-এর সভাপতিত্বে পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদসহ অন্যান্য পরিচালকবৃন্দ, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা এবং অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও কোম্পানি সেক্রেটারি জে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, এফসিএস উপস্থিত ছিলেন।

আগামী ২৫ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার ব্যাংকের ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। লভ্যাংশ প্রাপ্তি এবং সাধারণ সভায় যোগদানের ক্ষেত্রে রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ মে ২০২৪। এ ছাড়া সভায় অন্যান্য আলোচ্যসূচির সাথে ৩১ মার্চ শেষ হওয়া ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করা হয়।

;

টেন মিনিট স্কুলের কোর্স ফি বিকাশ পেমেন্টে ১৫% ক্যাশব্যাক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিকাশ অ্যাপ থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম টেন মিনিট স্কুল-এর নির্দিষ্ট কোর্স নিয়ে পেমেন্ট করলেই গ্রাহকরা পাচ্ছেন ১৫% ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক, সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত। বিকাশ অ্যাপের হোম স্ক্রিনের সাজেশনস সেকশন থেকে ‘টেন মিনিট স্কুল’ সিলেক্ট করে ৩০ জুন পর্যন্ত অফারটি গ্রহণ করা যাবে।

টেন মিনিট স্কুল-এর লাইভ কোর্স, স্পোকেন ইংলিশ, আইইএলটিএস, ফ্রিল্যান্সিং এর মতো ভাষা শিক্ষা ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স, ইংলিশ মাস্টার্স, কনটেন্ট ক্রিয়েশন, ডিজিটাল মার্কেটিং-এর মতো বান্ডেল কোর্স, বুয়েট, মেডিকেল, ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার কোর্স, এসএসসি-এইচএসসি প্রস্তুতি ও অনলাইন ব্যাচের জন্য একাডেমিক কোর্স, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি সহ নানা ধরনের কোর্স নিতে পারবেন বিকাশ গ্রাহকরা এই অফারের আওতায়।

অফারের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে https://www.bkash.com/campaign/10minuteschool-bkash-offer লিংকটিতে।

 

;

এক দিনের ব্যবধানে ফের কমল সোনার দাম



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের বাজারে সোনার দামের উত্থান-পতন অব্যাহত আছে। একদিনের ব্যবধানে সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ১০০ টাকা কমছে। তাতে ভালো মানের, অর্থাৎ হল-মার্ক করা ২২ ক্যারেট সোনার দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৯০ টাকায়। নতুন এ দাম আজ বুধবার থেকেই কার্যকর হবে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে। এতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে খাঁটি সোনার দাম কমেছে, সে জন্য সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৯০ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৯ হাজার টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৫ হাজার ২০৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে, ২৩ এপ্রিল সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমিয়ে ভালো মানের, অর্থাৎ হল-মার্ক করা ২২ ক্যারেট সোনার দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১০ হাজার ৯৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৫ হাজার ১৪৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৭৬ হাজার ৫৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

আর গত ২১ এপ্রিল ভরিতে ৬৩০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৭ হাজার ৭০৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৭৮ হাজার ৬৬২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা সেদিন বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট থেকে কার্যকর হয়েছিল।

তার আগে, ২০ এপ্রিল সোনার দাম ক‌মিয়ে‌ছিল বাজুস। যা ওইদিনই কার্যকর হয়। ওই দাম অনুযায়ী রোববার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৮ টাকা, ২১ ক্যারেট সোনার দাম ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৯৭ হাজার ১৯৭ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা।

;

জ্বালানি তেল পরিবহনের খোলনলচে বদলে দিচ্ছে ৩ মেগা প্রকল্প



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তিন মেগা প্রকল্প বাংলাদেশের জ্বালানি তেল পরিবহনের খোলনলচে বদলে দিতে যাচ্ছে। মেগা প্রকল্প তিনটি হলো, এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং), বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্প এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্প।

এর মধ্যে এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) ও বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন ইতোমধ্যেই অপারেশনে এসেছে। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন চলতি বছরেই শেষ হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।

এখন ভোক্তার হাতে জ্বালানি তেল পৌঁছাতে বহুঘাট ঘুরতে হবে না। আবার বৃষ্টি-বাদল কিংবা হরতাল, ধর্মঘটেও জ্বালানি তেল সরবরাহ থাকবে নির্ভার। শুধু কী নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চয়তা, তাও নয়, এক এসপিএম বছরে সাশ্রয় করবে কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকা! কমে যাবে জ্বালানি তেলের সিস্টেম লসও।

জ্বালানি তেল পরিবহনের খোলনলচে পাল্টে দিচ্ছে মেগা তিন প্রকল্প

এজন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে স্থাপন করা হয়েছে, এসপিএম উইথ ডাবল পাইপলাইন। এতদিন আমদানি করা জ্বালানি তেলের জাহাজ গভীর সমুদ্রে নোঙর করতো। সেখান থেকে লাইটার জাহাজে করে রিফাইনারি ট্যাংকে পৌঁছাতে সময় লাগত ১১, ১২ দিন। এসপিএম হওয়ায় সমপরিমাণ তেল পরিবহনে সময় লাগবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। এতে করে মাদার ভেসেলের ওয়েটিং চার্জ এবং লাইটারেজ জাহাজের পরিবহন খরচ আর থাকছে না।

মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে গভীর সমুদ্রে স্থাপন করা হয়েছে, ভাসমান বয়া। সেই বয়া থেকে সাগরের তলদেশ দিয়ে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের পৃথক দুটি পাইপলাইন পৌঁছে গেছে স্টোরেজ ট্যাংক টার্মিনালে। একটি ক্রড অয়েল সঞ্চালনের জন্য। আরেকটি দিয়ে সফলভাবে ডিজেল পরিবহন কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

গভীর সমুদ্রে বয়াতে এসে নোঙর করবে মাদার ভেসেল। সেখান থেকে পাাইপলাইনের মাধ্যমে কয়েক ঘণ্টায় তেল পৌঁছে যাবে চট্টগ্রামের জ্বালানি তেলের প্রধান স্থাপনায়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জ্বালানি তেল ব্যবস্থাপনা সাশ্রয়ী ও টেকসই করতে এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) কার্যকরী অবদান রাখবে। প্রকল্পটি চালু হলে বছরে ১ হাজার কোটি টাকা খরচ সাশ্রয় হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় ২শ ২০ কিলোমিটার পাইপলাইনে পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে ৬টি বিশালাকৃতির স্টোরেজ ট্যাঙ্ক; যার মাধ্যমে বাংলাদেশের তেল মজুত সক্ষমতা পৌঁছে গেছে নতুন এক উচ্চতায়।

এসপিএম প্রকল্পের পরিচালক শরীফ হাসনাত বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বড় জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে অন্তত ১১ দিন সময় লাগে। কখনো কখনো এই তেল খালাস করতে আরো সময় লেগে যায়। বিশেষ করে সমুদ্র উত্তাল হয়ে পড়লে তখন খালাস করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। জাহাজ মালিকদের সঙ্গে চুক্তির চেয়ে বেশি সময় লাগায় কখনো কখনো জরিমানা গুণতে হতো। এসপিএম প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় ২৮ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় ডিজেল ও ক্রুড অয়েল খালাস করা সম্ভব হবে। এতে একদিকে যেমন জাহাজ ভাড়া কমে আসবে, অন্যদিকে তেল পরিবহনে সিস্টেম লস ও নানান ধরনের চুরিও প্রতিরোধ সম্ভবপর হবে।

বাংলাদেশ জ্বালানি তেল উৎপাদন করে না। গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে প্রাপ্ত কনডেনসেট থেকে পেট্রোল এবং ৪০ শতাংশের মতো অকটেন জোগান আসে। বিপুল পরিমাণ ডিজেলসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করে জোগান দেওয়া হয়। বিপুল পরিমাণ জ্বালানি আমদানি করা হয়, নদীপথে। কিন্তু নদী বন্দরগুলোতে নাব্যতার অভাবে বড় বড় জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারে না। সে কারণে নির্ভর করতে হয় লাইটারেজ জাহাজের ওপর।

মেগা প্রকল্প বদলে দিচ্ছে জ্বালানি তেল পরিবহনের ব্যবস্থা

মাদারভেসেল থেকে লাইটার বা ছোট জাহাজে করে তেল আনা হয়, বিপিসি’র (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) ডিপোতে।

বিপিসি থেকে আবার জাহাজে করে তেল দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়। ক্ষেত্র বিশেষে রেলের ওয়াগন এবং ট্যাংকলরিতে করেও তেল পৌঁছাতে নানান রকম ঝাক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। বিষয়টি ছিল সময়সাপেক্ষ ও অনেক কিছুর ওপর নির্ভরশীল। সেখানেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগতে শুরু করেছে।

অবশেষে, ঢাকা-চট্টগ্রাম তেলের পাইপলাইন করার কাজও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। ২০১৭ সালে প্রাক-সমীক্ষা শেষ হলেও নানা কারণে নির্ধারিত গতিতে চলতে পারেনি প্রকল্পটি।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অর্থায়নে গৃহীত এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ২শ ৩৭ কিলোমিটার, কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার, ফতুল্লা থেকে থেকে গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। পাইপলাইনটি চালু হলে বছরে ৬৫ কোটি টাকা পরিবহন খরচ সাশ্রয় হবে বলে আশা করছে বিপিসি।

প্রকল্পের আওতায় ২শ ৩৭ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন চট্টগ্রাম ডেচপার্স টার্মিনাল ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় রিসিভিং পয়েন্টের ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। ডিসেম্বরের আগেই পাইপলাইনটি চালু করার বিষয়ে আশাবাদী জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ।

অন্যদিকে, দেশের শস্যভাণ্ডার খ্যাত উত্তরাঞ্চলের জ্বালানি পরিবহন ব্যবস্থা ছিল খুবই জটিল ও বহুঘাট, হাত ঘুরে। লাইটারেজে করে তেল নেওয়া হতো। এছাড়াও ট্যাংকলরি, আরেকটি রুট হচ্ছে রেলওয়ের মাধ্যমে পৌঁছানো। এখন সেখানেও পরিবর্তন এনেছে, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন।

দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় নিরবচ্ছিন্ন, দ্রুত ও সাশ্রয়ীভাবে জ্বালানি সরবরাহের জন্য ২০১৮ সালে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ৩ হাজার ৬শ ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১শ ৩১.৫০ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণের সময়কাল ছিল ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের আগেই পাইপলাইনটি চালু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ভারতের নুমালীগড় থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত বিস্তৃত এই পাইপলাইনের কারণে উত্তরাঞ্চলের দৈনিক অতিরিক্ত ২৯ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি মজুত সক্ষমতা বৃদ্ধি হবে। সহজে বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ করা, উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় কম খরচে এবং দ্রুততম উপায়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে এই পাইপ লাইনের কারণে।

;