আওয়ামী লীগের কাউন্সিল, চমক ও চ্যালেঞ্জ



ড.  মাহফুজ পারভেজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

 

দশম বারের মতো শেখ হাসিনাকে দলীয় প্রধান এবং টানা তিন বার ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনঃনির্বাচিত করে গত ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হলো ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বহুল আলোচিত ২২তম সম্মেলন।

আওয়ামী লীগের সন্মেলনে নতুন কমিটি করার ক্ষেত্রে অন্যান্য পদগুলোতেও উল্লেখযোগ্য হেরফের হয় নি। সামান্য ব্যতিক্রম বাদে পুরনো নেতৃত্বই পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন আগামী তিন বছরের জন্য। ফলে কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্বের আগমন না হয়ে পুরনো নেতৃত্বের নবায়ন হয়েছে বলা চলে। সোজা কথায় বলা যায়, শেখ হাসিনার বিকল্প সভাপতি প্রার্থী আওয়ামী লীগের নেই। আর তিনি যে আস্থাভাজন টিম নিয়ে কাজ করছেন, তারাও দলের জন্য অপরিহার্য।

সন্মেলনের আগে ও পরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা স্পষ্টতই বলেছেন যে, “শেখ হাসিনার কোনও বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার একমাত্র বিকল্প শেখ হাসিনা।” এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। বরং এটাই বাস্তবতা।

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল দৃষ্টিগ্রাহ্য চমক সৃষ্টি না করলেও দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থায় ‘ব্যক্তি’, ‘পরিবার’, ‘গোষ্ঠী’ প্রাধান্যের ধারাবাহিকতাকে অক্ষুণ্ন রেখেছে। আওয়ামী লীগের (১৯৪৯) চেয়ে বয়সে প্রাচীন, জীবন্ত ও সক্রিয় রাজনৈতিক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (১৮৮৫), মুসলিম লীগ (১৯০৬), এমনকি কমিউনিস্ট পার্টিতেও (১৯২৫) গবেষকরা এরকম প্রবণতা দেখতে পেয়েছেন, যা তীব্র সমালোচনার পরেও উপমহাদেশীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবিভাজ্য অংশে পরিণত হয়েছে। তাবৎ বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় তা অভিনব এবং ‘চমক’ বিশেষ। বাংলাদেশের রাজনীতিও এরূপ ধারার বাইরে নয়।

ফলে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতৃত্ব চয়নের ক্ষেত্রে চলমান ও গতানুগতিক যে ধারা, তার বাইরে যায় নি। অতএব সদ্য সমাপ্ত কাউন্সিলে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে নি। হয়তো দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেছেন যে, নির্বাচনের ঠিক এক বছর আগে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে তাদের পক্ষে আগামী নির্বাচনের মতো স্পর্শকাতর ও চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সঠিকভাবে সামাল দেয়া কিছুটা হলেও কঠিন হতে পারতো। সম্ভবত এসব বিষয় বিবেচনা করেই কাউন্সিলে দলীয় নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আদৌ বিশেষ পরিবর্তন আনা হয় নি এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর আস্থাভাজনরাই দলের নেতৃত্বে পুনরায় আসীন হয়েছেন।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সভানেত্রী এবং সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও অন্যান্য পদে তেমন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে। যে ৪ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তারা প্রত্যেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবেই রয়েছেন নতুন কমিটিতে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা যে পদে ছিলেন তারা সেখানে রয়েছেন। যদিও সাংগঠনিক সম্পাদক ও অন্যান্য পদে এমন নতুন মুখ দেখা গেছে, যারা আওয়ামী রাজনীতিতে পুরনো ও পরীক্ষিত।

এই প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে যে, এতো আলোচিত কাউন্সিলের পরেও আওয়ামী লীগ প্রায় একই কমিটি বহাল রেখেছে কেন? একটি প্রধান কারণ আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। আর তা হলো আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার বাস্তবতা। নেতৃত্বের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হলে দলে বিভিন্ন ধরনের অসন্তুষ্টি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকত। বিগত দিনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে দলীয় শৃঙ্খলা ও ঐক্য সাধিত হয়েছে, তাতেও নাড়া পড়তে পারতো। নির্বাচনের আগে তেমন ঝুঁকি আওয়ামী লীগ নিতে চাইছে না।

বিশেষ করে, আওয়ামী লীগের প্রায়-একই কমিটি গত চার বছর ধরে দল পরিচালনা এবং বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবিলা করে আসছে। কমিটির অধিকাংশেরই সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রেও অংশগ্রহণ রয়েছে। ফলে এরকম একটি কমিটিই সামনের দিনগুলোতে বিভিন্ন মাত্রার রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রে অধিকতর অভিজ্ঞ হবে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের পক্ষে মনে করার সঙ্গত কারণ রয়েছে। তাছাড়া গত প্রায় ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি যেভাবে ঠেকিয়ে দিয়েছে, সেভাবেই এই অভিজ্ঞ কমিটির দ্বারা বিরোধী দলের ভবিষ্যত রাজনৈতিক কর্মসূচি সামাল দেওয়া হয়তো সহজ ও সম্ভব হবে তারা মনে করেছেন।

কিন্তু তিয়াত্তর পেরিয়ে চুয়াত্তরে পা রাখা আওয়ামী লীগ কাউন্সিল শেষ করে নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এমন এক জটিল পরিস্থিতিতে, যখন নতুন একটি বছর বিশ্বের জন্য কিছু অস্বস্তিকর চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে, যেগুলো আদৌ নতুন নয়, চলমান। যার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আর্থিক মন্দা, করোনাভাইরাসের উল্লম্ফন, এশিয়ার বিস্তৃর্ণ অঞ্চল এবং প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরকে ঘিরে আন্তর্জাতিক রাজনীতির উত্তেজনাকর মেরুকরণ ইত্যাদি অন্যতম। এসব আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রপঞ্চের প্রভাব দেশের ভেতরকার আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রকেও স্পর্শ করছে, যার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত ঢাকার শাহিনবাগ, যা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সরব মার্কিন ও রুশ রাষ্ট্রদূতগণ।

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা কাউন্সিলে প্রদত্ত ভাষণে বলেছেন, “নির্বাচন ব্যবস্থায় আওয়ামী লীগই শৃঙ্খলা এনেছে, আমরা যুদ্ধ চাই না, স্যাংশন চাই না।” দলীয় প্রধানের এই বক্তব্য আরও অর্থবহ হবে যদি সামনের নির্বাচন সুশৃঙ্খল, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়। বিরোধী দলগুলো এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বাংলাদেশে এমন একটি ইনক্লুসিভ নির্বাচন দেখতে চায়। ফলে কাউন্সিল-পরবর্তী দলীয় নেতৃত্বের সামনে বিরোধী দলকে সামাল দেওয়াই প্রধান কাজ হবে না। তাদেরকে আস্থায় এনে বিশ্বাসযোগ্য, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেওয়ার কাজটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে।  

সরকারে থাকা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মতোই আওয়ামী লীগও চাইবে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে। চাইবে দলীয় নীতি ও আর্দশ বাস্তবায়িত করতে। বিশেষ করে, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে। সদ্য সমাপ্ত কাউন্সিলে মনোনীত নেতৃত্ব এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে দলীয়ভাবে দেশব্যাপী উজ্জীবিত করবে। একই সঙ্গে এই নেতৃত্বকে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক বাতাবরণ বজায় রাখতে, অব্যাহত গণতান্ত্রিক ধারা চলমান রাখতে এবং অংশগ্রহণমূলক-অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতেও কাজ করতে হবে। কাজ করতে হবে দ্বন্দ্ব-সংঘাত এড়িয়ে রাজনৈতিক পরিসরে এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় সকলের অংশগ্রহণ ও আস্থা গড়ার লক্ষ্যে। তৈরি থাকতে হবে রাজনীতির অমীমাংসিত বিষয়ে এবং বিরোধীদের উত্থাপিত দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে অর্থবহ সংলাপ ও সমঝোতার জন্য। দুর্নীতির প্রতিরোধ, মানবাধিকারের সংরক্ষণ, বাক্-ব্যক্তি-মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা, সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, অংশগ্রহণমূলক পরিস্থিতি ও দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে সরকারের অগ্রণী ভূমিকা থাকলেও শাসক দলের নেতৃত্বকে এসব বিষয় মোটেও বিস্মৃত হওয়া চলে না।

বরং ‘ওয়াচ ডগ’ হয়ে দলীয় নীতি ও সরকারের নীতির মধ্যে ভারসাম্য বজায়ের কাজটিও করতে হয় দলের এই নেতৃত্বকেই। ফলে কাউন্সিল-পরবর্তী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে শুধু্‌ আসন্ন নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করলেই হবে না, দেশের ভেতরের ও বাইরের অনেকগুলো ইস্যুকেও সামাল দিয়েই সতর্কতার সঙ্গে সামনের দিনগুলোতে পথ চলতে হবে।

ড. মাহফুজ পারভেজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক; অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম।

প্রাইভেট এয়ারলাইন্স এগিয়ে যায় নিজের সক্ষমতাকে সঙ্গী করে



মো. কামরুল ইসলাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কিছুদিন যাবত প্রায় শুনে থাকছি এয়ারলাইন্সগুলোর ভাড়া অনেক বেশী। আগে তো এই ভাড়া ছিলো এখন কেনো এতো বেশী? প্রি-কোভিডে অর্ধেক ভাড়ায় বিদেশ যাওয়া যেতো, এখন অনেক বেশী টাকা প্রয়োজন হয়। ইত্যাদি নানাবিধ প্রশ্ন শুনতে হয় এয়ারলাইন্স ও ট্রাভেল এজেন্সির কর্মীদের।

কোভিড এর মাঝপথে বিশেষ করে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে জেট ফুয়েলের প্রাইস ছিলো ৪৬ টাকা প্রতি লিটার। বর্তমানে তা দাড়িয়েছে ১১৮ টাকা প্রতি লিটার। মাস চারেক আগেও ছিলো ১৩০ টাকা লিটার। শতকরা হিসেবে দাম বেড়েছে ১৬০ শতাংশের অধিক। পূর্বে এয়ারলাইন্সগুলোর পরিচালন ব্যয়ের ৪০-৪২ শতাংশ ব্যয় হতো জেট ফুয়েল ক্রয়ে। আর বর্তমানে পরিচালন ব্যয়ের প্রায় ৫০ শতাংশের অধিক ব্যয় হয় জেট ফুয়েল বাবদ।

এয়ারক্রাফট কিংবা এয়ারক্রাফট যন্ত্রাংশ আমদানি বাবদ কাস্টমস ডিউটি বেড়েছে প্রি-কোভিড থেকে প্রায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ। যা সরাসরি ভাড়ার উপর প্রভাব বিস্তার করে।

বাংলাদেশে কোভিড কালীন সময়ে বিমানবন্দর উন্নয়ন চার্জ ও সিকিউরিটি বাবদ দু’টি চার্জ নতুন করে সংযোজিত হয়েছে যা প্রি-কোভিডে ছিলো না। এই চার্জগুলোও ভাড়ার উপর প্রভাব ফেলেছে।

এমআরও সেন্টারগুলোতে এয়ারক্রাফট মেইনট্যানেন্স এর জন্য খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাথে কোভিড পরবর্তীতে মেইনট্যানেন্স সিডিউল না পাওয়ার কারনেও বিশ্বের অধিকাংশ এয়ারলাইন্স তাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট সিডিউল মেইনটেইন করতে পারছে না। ফলে সিট ক্যাপাসিটির চেয়ে যাত্রী চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ভাড়া বৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তার করেছে।

বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ডলারের দামের সাথে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ার কারনে কোভিড-১৯ কিংবা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মারাত্বকভাবে এয়ারলাইন্সগুলোর ভাড়া বৃদ্ধিতে নিয়ামক হিসবে কাজ করেছে। বছরখানেক আগেও ১ ডলারের বিনিময়ে ৮৩/৮৪ টাকা পাওয়া যেত এখন সেখানে ১ ডলারের বিনিময়ে ব্যয় করতে হয় ১১৫-১২০ টাকা। ফলে ভাড়ায় সরাসরি প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশে এয়ারলাইন্সগুলো টিকেট বিক্রয় করছে টাকায় কিন্তু সকল ধরনের খরচগুলো বহন করছে ডলারে। বিশেষ করে ইন্স্যুরেন্স, লিজিংমানি, ব্যাংক ইন্টারেস্ট, ফুয়েল প্রাইস, বিভিন্ন দেশের এ্যারোনোটিক্যাল চার্জ, আইএটিএ পেমেন্টসহ নানাবিধ খরচ সবই ব্যয় করতে হয় ডলারে। ফলে এয়ারলাইন্সগুলো খরচের সাথে আয়ের সমন্নয় করতে ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। বিভিন্ন দেশের সাথে ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি পেলে, ডলারের বিনিময়ে টাকার মান বৃদ্ধি পেলে, জেট ফুয়েলের মূল্য হ্রাস পেলে আনুপাতিক হারে যাত্রী ভাড়া কমার সম্ভাবনাও আছে।

অপরদিকে অর্থনীতির সাধারণ সংজ্ঞা যোগানের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা থাকলে স্বাভাবিকভাবেই দাম বেড়ে থাকে। কোভিড পরবর্তী সব দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর কিংবা ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা কেটে যাবার পর বিমান যাত্রী বেড়েছে কয়েকগুন। সেই তুলনায় আসন সংখ্যা বাড়ানোর কোনো সুযোগ ছিলো না। ফলে বিভিন্ন রুটে যাত্রী চাহিদার কারনেও কিছুটা ভাড়া বেড়েছে।

প্রাইভেট এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশে নিজেদের আয়ের সক্ষমতার উপর ভিত্তি করেই ব্যয় নির্বাহ করে থাকে। বিশ্ব এভিয়েশনে কিংবা বাংলাদেশে ব্যয়ের সূচক যদি উর্ধ্বগামী থাকে তাহলে এয়ারলাইন্সগুলো নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য এবং পূর্ণাঙ্গ যাত্রী সেবাকে নিশ্চিত রাখার জন্য খরচগুলোকে ভাড়ার সাথে সমন্নয় করে থাকে।

এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীদের সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে পারবে যদি নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন না হয়। বাংলাদেশ এভিয়েশন ব্যবসাটা পরিচালিত হচ্ছে ভর্তুকি বিহীন। বিগত দিনে নানাবিধ কারনে বাংলাদেশ এভিয়েশন থেকে হারিয়ে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয়া বিশ্বের আকাশ দাপিয়ে বেড়ানো জিএমজি, ইউনাইটেড কিংবা রিজেন্ট এয়ারওয়েজসহ সাত আটটি এয়ারলাইন্স।

বর্তমানে পরিচালিত জাতীয় বিমান সংস্থাসহ চারটি এয়ারলাইন্স খরচের সাথে অনেকটা যুদ্ধ করে বাংলাদেশ এভিয়েশনে টিকে থাকার চেষ্টা করছে, সাথে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে মার্কেট শেয়ার ধরে রেখে দেশের জিডিপিতে অবদান রাখার চেষ্টা করছে।    

লেখক: মোঃ কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

;

জেনোসাইডের স্বীকৃতি



কবির য়াহমদ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বায়ান্ন বছরেও একাত্তরের পঁচিশে মার্চের কালরাত্রির জেনোসাইডের বৈশ্বিক স্বীকৃতি মেলেনি। বৈরী ভাবাদর্শের রাজনীতি এবং জেনোসাইড নিয়ে অমনোযোগিতা আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে। কালরাত্রির অপারেশন সার্চলাইট নামের যে জেনোসাইড চলে, তার স্বীকৃতির সুযোগ ছিল। কিন্তু সেটাও আমরা আদায় করতে পারিনি। বলা যায়, সময়মতো চেষ্টা করা হয়নি।

পঁচিশে মার্চের জেনোসাইডের স্বীকৃতি আমরা না পেলেও এখনও সুযোগ আছে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক নির্যাতনের স্বীকৃতির।

একাত্তরের আট মাস বাইশ দিনে ত্রিশ লাখ মানুষকে হত্যা থেকে শুরু করে দুই লাখের অধিক নারী-শিশুর ওপর যৌনসহিংসতা চালিয়েছিল পাকিস্তান এবং তাদের এদেশীয় দোসরেরা। নির্যাতনের ধরনগুলো জাতিসংঘ ঘোষিত জেনোসাইডের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মেলে। জাতিসংঘের ‘কনভেনশন অন দ্য প্রিভেনশন এন্ড পানিসমেন্ট অব দ্য ক্রাইম অব জেনোসাইড’-এর আর্টিকেল ২ অংশে জেনোসাইডের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা আছে, যার কোনো একটি সংঘটিত হলে জেনোসাইডে বলা যাবে। ওই আর্টিকেল বলছে— কোনো গোষ্ঠীর মানুষকে হত্যা, তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে চরম ক্ষতিসাধন, জীবনমানের প্রতি আঘাত ও শারীরিক ক্ষতিসাধন, জন্মদান বাধাগ্রস্ত করা এবং শিশুদের অন্য গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া। এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রথম চারটি বৈশিষ্ট্যই পাকিস্তান বাহিনীর দীর্ঘ নয় মাসের নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যে রয়েছে।

একাত্তরের নয় মাস পাকিস্তানিদের নির্যাতনের সঙ্গে জেনোসাইডের জাতিসংঘ ঘোষিত সংজ্ঞার মধ্যে পড়লেও ২৫ মার্চের জেনোসাইডের বৈশ্বিক স্বীকৃতি নেই। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করার পর ওই বছর থেকেই দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত হচ্ছে। এছাড়া দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়ার জন্য একটি বিলও পাস হয় সংসদে। বাংলাদেশ যখন রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ পালন শুরু করে তার দুই বছর আগে থেকেই বিশ্বব্যাপী ‘গণহত্যা দিবস’ নামে একটি দিবস পালন হয়। ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করে। এর ফলে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতির আর সুযোগ থাকছে না। তবে ২৫ মার্চকে জেনোসাইড দিবস হিসেবে পালনের বৈশ্বিক সুযোগ না থাকলেও বাংলাদেশের এখনও সুযোগ রয়েছে একাত্তরের নয় মাসের পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির। কিন্তু এই স্বীকৃতি আদায়ে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম কত দূর, এ সম্পর্কেও আমরা নিশ্চিত নই। মার্চ এলেই কেবল জেনোসাইড নিয়ে কথা হয়, তবে এই কথাগুলো এতটা ক্ষীণ স্বরে যে, একদিনের আলোচনাতেই তা সীমাবদ্ধ।

পঁচিশে মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের দাবি নতুন নয়। নব্বইয়ের দশক থেকে এই দাবি জানিয়ে আসছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। ১৯৯৩ সালে ওঠা ওই দাবিকে পাত্তা দেয়নি তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার। ২০০১ সালে জাতিসংঘের ইউনেস্কোর কাছে বাংলাদেশের জেনোসাইডের স্বীকৃতি আদায়ের বিষয়টি তুলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের গবেষক এবং ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রধান ডা. এম এ হাসান। জবাবে ইউনেস্কো জানিয়েছিল, স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশকে জাতিসংঘে তা তুলে ধরতে হবে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতিক্রমে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে পাস করতে হবে। ২০০৬ সালে নির্মূল কমিটি আন্তর্জাতিকভাবে চেষ্টা শুরু করে। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ইউনেস্কো এবং জেনোসাইডের ভিকটিম বিভিন্ন দেশে চিঠি লিখে, আইন প্রণেতাদের সঙ্গে কথা বলে জেনোসাইড দিবস পালন প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে নির্মূল কমিটি। ২০১৫ সালের মার্চে আর্মেনিয়া থেকে পাল্টা চিঠি দিয়ে বাংলাদেশে দিবসটি কীভাবে পালন করা হয় এবং এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত পাঠানোর জন্য বলা হলে, নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে তখন জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়।বাংলাদেশে এখনো দিবসটি ঘোষণা হয়নি। তবে এই দিনে বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ জেনোসাইডের শহিদদের স্মরণে নানা কর্মসূচি পালন করে থাকেন। দেশেই রাষ্ট্রীয়ভাবে যে দিবসের স্বীকৃতি নেই, বিশ্বব্যাপী হবে কীভাবে? হয়ওনি। ফলে ২৫ মার্চ নয়, ৯ ডিসেম্বরকেই বেছে নেয় জাতিসংঘ। এর ফলে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা ২৫ মার্চের জেনোসাইডের স্বীকৃতি আদায়ের সুযোগ হারাই। এটা নিশ্চিতভাবেই আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা।

আশার কথা, একাত্তরের নয় মাসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের পথ এখনই বন্ধ হচ্ছে না আমাদের। আর্মেনিয়া, রুয়ান্ডা ও যুগোস্লাভিয়ার জেনোসাইডের জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আদালতের স্বীকৃতি আছে। আর্মেনিয়ানদের এজন্যে শত বছর চেষ্টা ও অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমাদের অপেক্ষা করতে আপত্তি নেই, কিন্তু এজন্যে রাষ্ট্রীয় চেষ্টা-তদবির তো থাকতে হবে! এটা কতখানি রয়েছে, এ নিয়ে আশ্বস্ত হওয়া যাচ্ছে না এখনও।

একাত্তরের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় আমাদের গৌরবের স্মারক। এই গৌরবকে উঁচুতে তোলে ধরতে আমাদের ওপর চালিত পাকিস্তানিদের জেনোসাইডকে অস্বীকার কিংবা অবমূল্যায়ন করা যাবে না। গৌরবের যে অর্জন, তার সঙ্গে জড়িয়ে যতখানি রক্ত আর সম্ভ্রম তার স্বীকৃতি দরকার; রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে!

কবির য়াহমদ: সাংবাদিক, কলাম লেখক।

;

স্মৃতিতে একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর শামীম শিকদার



সামিয়া মহসীন
একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর শিল্পী শামীম শিকদার

একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর শিল্পী শামীম শিকদার

  • Font increase
  • Font Decrease

গত ২১ মার্চ রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিশিষ্ট ভাস্কর শামীম শিকদার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মহান এই গুণী শিল্পী ২০০০ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ৭০ বছর বয়সী এই ভাস্কর কার্ডিওভাসকুলার, শ্বাসতন্ত্র এবং কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে শামীম শিকদার ২ সন্তান রেখে গেছেন। চারুকলা প্রাঙ্গণে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর ঢাকার মোহাম্মদপুর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়েছে ।

অসম্পূর্ণ কিছু কাজ শেষ করার উদ্দেশ্যেই কয়েক মাস আগে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। ঢাবির চারুকলা অনুষদে জয়নুল আবেদিনের ভাস্কর্যটি আবার নতুন করে গড়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুয়ের্নিকা ভাস্কর্যও নতুন করে করার পরিকল্পনা ছিল শামীম শিকদারের।


ঢাবির চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক শামীম শিকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে 'স্বোপার্জিত স্বাধীনতা' এবং ফুলার রোডে 'স্বাধীনতা সংগ্রাম' নির্মাণ করেন। এর আগে ১৯৭৪ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়েই উনাকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ শিরোনামের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ভাস্কর্যটির মূল বেদীতে আছে একাত্তরের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র। ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ এটি স্থাপন করা হয়। এই ভাস্কর্য টি যখন তৈরি করা হয়েছিল, তখন খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। তিনি সিমেন্ট, ব্রোঞ্জ, কাঠ, প্লাস্টার অব প্যারিস, কাদা, কাগজ স্টিল ও গ্লাস ফাইভার মাধ্যমে কাজ করেছেন। প্রখ্যাত কম্যুনিস্ট বিপ্লবী নেতা সিরাজ শিকদার শামীম শিকদারের আপন বড় ভাই।


শামীম শিকদার যখন ভাস্কর্য নির্মাণ করতেন কখনো তাঁর পরণে থাকতো জিন্স আর সাদা টি শার্ট। আবার কখনো সাদা শার্ট প্যান্ট । সাদা রঙ; তাঁর প্রিয় রঙ ছিল বলেই মনে হত। কপালে কখনো কখনো  ব্যান্ডানা বাঁধতেন। সেই আশির দশকে এমন একজন ভাস্কর শিল্পীর পোশাক সেই সময়ের মানুষকে ভীষণভাবে অবাক করতো। দু’হাতে যতো  কাজই করুন না কেন, ঠোঁটের কোণে সিগারেট ধরাই থাকতো। তখন তো এখনকার মতো মোবাইল ফোন ছিল না। থাকলে উনার কাজ করার মুহূর্তগুলোর স্মৃতি ধরে রাখা যেত। তাঁর সেই কাজগুলো যেগুলো তিল তিল করে ভালোবাসা আর শ্রম দিয়ে তিনি করেছিলেন সেই ভাস্কর্যগুলো ঠাঁই পেয়েছে ফুলার রোডের সড়ক দ্বীপে। ফুলার রোড এলাকায় ‘স্বাধীনতাসংগ্রাম’-এ  তাঁর করা ১১৬টি ভাস্কর্য ঠাঁই পেয়েছে। এই ভাস্কর্য পার্ক টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে অলঙ্করণ করেছে। এখানে তিনি আরও ১৩৪টি ভাস্কর্য তৈরির কাজের উদ্দেশ্য নিয়েই দেশে আসেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল।


শামীম শিকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ১৯৯৪ সালে স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়েই উনার স্টাইল এবং কাজের সাথে পরিচিত হয়ে উঠেছিলাম। আমার তো মনে হয় আশির দশক থেকে আজ অবধি কেউ তাঁকে ছুঁতে পেরেছে বলে মনে হয় না। একজন নারী স্রোতের বিপরীতে চলেও তাঁর রুচি, শিক্ষা ও কর্ম দিয়ে কিভাবে স্বাক্ষর রেখে যেতে পারেন। শামীম শিকদার তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। নারী বিদ্বেষীরা সেদিনও ছিলো, আজও আছে। তবে তাঁর মতো সাহসী নারী শত বছরে হয়তো একবারই জন্মে। বেশিরভাগ সময়েই মোটরবাইক চালিয়ে চলাচল করতেন। সেই সত্তর আশির দশকে এমনটা ঘটনা আসলেই বিরল ছিল। শখের বশে জুডো শিখেছিলেন।

এমন দেশপ্রেমী শামীম শিকদারদের কখনোই মৃত্যু হয়না। তিনি আজীবন বেঁচে থাকবেন বাঙালির হৃদয়ে, বাঙালির মননে, বাঙালির চেতনায়। এই কিংবদন্তীর প্রতি রইল শত সহস্র সালাম।

সামিয়া মহসীন‚ লেখক,নাট্যশিল্পী, তে কথামালা সাহিত্য-সংস্কৃতি আন্দোলন নেতা।

;

যাত্রীরাই ইউএস-বাংলার এক একজন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর



মো. কামরুল ইসলাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

এশিয়ার আকাশ দাপিয়ে বেড়ানো বাংলার গর্ব ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে শুনতে হয় না ‘নয়টার প্লেন কয়টায় যাবে’। শুনতে হয় না যাত্রীদের কাছ থেকে ‘ফ্লাইট কি অন-টাইম’? শুনতে হয় না ‘আপনাদের প্লেন পৌছানোর পর লাগেজ পেতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়’? এই প্রশ্নগুলো না শুনতে পারাই ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনার স্বার্থকতা।

সুনামের সাথে দশ বছর ধরে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে ইউএস-বাংলা। ঢাকা থেকে যশোর রুটে ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই যাত্রা শুরু করার পর আজ অবধি শতকরা ৯০ ভাগের অধিক ফ্লাইটই অন-টাইম। আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালুর পর থেকেই ফ্লাইট গন্তব্যে পৌঁছানোর ১৫ মিনিটের মধ্যে লাগেজ ডেলিভারী এক অনন্য উদাহরন। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে প্রথমবারের মতো ইউএস-বাংলা ব্র্যান্ডনিউ এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

বৈশ্বিক এভিয়েশনের মানচিত্রে উপরোক্ত প্রশ্নগুলো শুনলে মনে হয় দেশের এভিয়েশনের কি করুন দশাই না ছিলো এয়ারলাইন্সগুলোর। প্রশ্নগুলোর সত্যতা কতটুকু বাস্তব হলেই স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও দিনের পর দিন যাত্রীদের মনে বাসা বেঁধে আছে। প্রশ্নগুলোর সত্যতা প্রমান করার প্রয়োজনীয়তাবোধ করেনি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। একটি যাত্রীবান্ধব এয়ারলাইন্স হিসেবে নানা পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে ইউএস-বাংলা।

বাংলাদেশের প্রাইভেট এয়ারলাইন্সকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় নানাবিধ সমস্যাকে সঙ্গী করেই বাংলাদেশ এভিয়েশনে অগ্রসর হতে চেয়েছে। অবকাঠামোগত সমস্যা, আর্থিক অস্বচ্ছলতা, পরিবহননীতির অস্বামঞ্জস্যতা, জাতীয় বিমান সংস্থার সাথে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকা, বিভিন্ন ধরনের অতিরিক্ত অ্যারোনোটিক্যাল ও নন-অ্যারোনোটিক্যাল চার্জ।

এছাড়া বিশ্ব মার্কেটের সাথে জেট ফুয়েল প্রাইসের প্রার্থক্য, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচলের ক্ষেত্রে দ্বিমূখী নীতি, এয়ারক্রাফট কিংবা এয়ারক্রাফট পার্টসের অতিরিক্ত কাস্টমস্ ডিউটি নির্ধারন, যা বাংলাদেশ এভিয়েশনে প্রাইভেট এয়ারলাইন্স এর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় বলেই প্রতীয়মান।

নানাবিধ অস্বামঞ্জস্যতা থাকার পরও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বাংলার আকাশে তথা বিশ্বের আকাশে উদীয়মান সূর্য হয়ে একবিংশ শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়েছে। মাত্র দশ বছর সময়ে বিশাল জনগোষ্টির বাংলাদেশের আকাশ পরিবহনের যাত্রীরা পূর্ণ আস্থা রেখেছে ইউএস-বাংলার উপর। দু’টি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট নিয়ে যাত্রা শুরু করা ইউএস-বাংলায় এখন ৮টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, ৮টি এটিআর৭২-৬০০ এয়ারক্রাফটসহ মোট উনিশটি এয়ারক্রাফট রয়েছে বিমান বহরে।

ইউএস-বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের স্বপ্নযাত্রার স্বপ্ন যেন আকাশ সমান, স্বপ্নের বিস্তৃতি আর বাস্তবায়ন চলছে সমান্তরালে। দেশের এভিয়েশনকে নিয়ে যেতে চান সুউচ্চ মর্যাদায়। আজ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স প্রতিযোগিতা করছে এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স, থাই এয়ারওয়েজ, ওমান এয়ার এর মতো বিশ্ববিখ্যাত এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে।

স্বল্পতম সময়ে ইউএস-বাংলা বাংলাদেশী যাত্রীদের সেবা দেয়ার মানসে দুবাই, শারজাহ, মাস্কাট, দোহা, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক, গুয়াংজু, মালে, চেন্নাই ও কলকাতা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আগামী মে –জুনে ইউএস-বাংলা দু’টি ৪৩৯ সিটের এয়ারবাস ৩৩০ এয়ারক্রাফট বিমান বহরে যোগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। যা দিয়ে এশিয়ার অন্যতম গন্তব্য আর বাংলাদেশী যাত্রীদের আকর্ষণ সৌদি আরবের জেদ্দা রুটে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করছে ইউএস-বাংলা।

ইউএস-বাংলা এয়ারলা্ইন্সে ২৫০০ এর অধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী রয়েছে। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর ব্যবস্থাপনা পরিষদের সুচিন্তিত দিক নির্দেশনা এবং যাত্রীদের আস্থা ইউএস-বাংলাকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করছে।

ইউএস-বাংলা পরিবারের সকল সদস্য আর যাত্রীরাই এক একজন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। যাত্রীদের আস্থাই ইউএস-বাংলার অগ্রযাত্রার মূল পাথেয়।

লেখক: মো. কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

;