দুর্নীতির তদন্তের দাবিতে আলোচনায় আন্দোলনকারী-জাবি প্রশাসন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ থেকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা কমিশন দেয়ার অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে মোবাইল ফোনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ এনে সভা বর্জন করেছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেন।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনে পূর্ব নির্ধারিত আলোচনা শুরু হয়।
এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেনের ফোনালাপ এবং শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতার স্বীকারোক্তিতে দুর্নীতির বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট বলে দাবি করছেন আন্দোলনকারীরা শিক্ষার্থীরা।
আলোচনায় অংশ নেওয়ার আগে আন্দোলনকারী নেতা জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, 'উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রায় সত্যের দ্বারপ্রান্তে। অনেকেই প্রকাশ্যে স্বীকার করছেন, তারা টাকার ভাগ পেয়েছেন। আমরা চাই, এ বিষয়ে রাষ্ট্র তদন্ত করুক। আর তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিধিতে বিচার হোক। আর তদন্ত চলাকালীন সময়ে উপাচার্যকে পদ থেকে অব্যাহতি নিতে হবে।'
এছাড়া বিস্তারিত বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির ও অপরিকল্পনার অভিযোগ এনে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন চলা অবস্থায় চাপের মুখে গত ১২ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আলোচনায় তোপের মুখে দুটি দাবি মেনে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিটি অমীমাংসিত রেখেই শেষ হয় সেদিনের আলোচনা সভা।
এছাড়া দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার পর্যন্ত (তিন কার্য দিবস) সময় নেয় প্রশাসন। সে অনুযায়ী পূর্ব নির্ধারিত সময়ে আজ আলোচনা শুরু হচ্ছে।
আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন এবং নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) আহসান হাবিব অংশ নিচ্ছেন।
অন্যদিকে 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর' ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খবির উদ্দিন, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, রায়হান রাইন, এ এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, তারেক রেজা প্রমুখ।
আলোচনায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন- জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম পাপ্পু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মারুফ মোজাম্মেল, ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয়, কার্যকরী সদস্য রাকিবুল রনি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার, সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দে এবং বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখার মুখপাত্র খান মুনতাসির আরমান, আহ্বায়ক শাকিল উজ্জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির ও আরিফুল ইসলাম।
এদিকে গতকাল দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বিরোধী বলে পরিচিত একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। যার পিছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মোবাইল ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেন।
তিনি বলেন, 'আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছি। কিন্তু গতকাল রাতে আমার মোবাইল ফোনে সংযোগ প্রায় সাড়ে চারঘণ্টা সময় বন্ধ রাখা হয়। আমি মনে করছি, এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এর প্রতিবাদে আমি আজকের সভা বর্জন করেছি।'
গতকাল মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া তালিকায় উপ উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেন সহ আরও ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরিফ এনামুল কবীর, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামিমা সুলতানা, অধ্যাপক তারেক রেজা, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রনু।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের তালিকায় ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন, সহ-সভাপতি নিয়ামুল হোসেন তাজ ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম মোল্ল্যা।
এ মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারণে কণ্ঠরোধ করার রাষ্ট্রীয় চেষ্টা বলে মনে করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস। তিনি বলেন, 'যাদের মোবাইল ফোনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে তারা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একগুয়েমিতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে। এই অপরাধে রাষ্ট্র কখনো নাগরিকের কণ্ঠরোধ করতে পারে না। রাষ্ট্র তখনই কণ্ঠরোধ করতে পারে যখন সেটা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। আমার জানা মতে, যাদের মোবাইল ফোনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে তারা কেউই এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত না।'