ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ও ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশ করছে শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ায় জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, ‘ক্যাম্পাস পলিটিক্স, নো মোর নো মোর’, ‘দলীয় রাজনীতির ঠিকানা, এ ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘হলে হলে খবর দে, ছাত্র রাজনীতির কবর দে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম একটি দফা ছিল ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। কিন্তু সেই কথাটাই অনেকেই এখন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলার চেষ্টা করছেন। যেখানে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেই দখলদারিত্ব, লেজুড়বৃত্তি রাজনীতির রাস্তা বন্ধ হয় সেখানে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলার মানে হয় না। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে কালক্ষেপণ না করে ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে। ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ না করা হলে আমরা ২২ তারিখে ক্লাসে ফিরতে চাই না।
তারা আরো বলেন, হলগুলোতে গেস্টরুম, গণরুমের নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক প্রহসন চালানো হয় শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর ফ্যাসিবাদী স্বার্থ হাসিল করার জন্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই ধরনের নোংরা দলীয় রাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আমরা ক্যাম্পাসে বিরাজনীতিকরণের পক্ষে নয় বরং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক নির্বাচন করার পক্ষে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি।
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও প্রকৃতপক্ষে রাজনীতিমুক্ত শেকৃবি ক্যাম্পাস হতে পারবে কিনা সেই প্রশ্নের সমাধান মেলেনি এখনো। মূলত ক্যাম্পাসে সব ধরনের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার পরে গত ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রদলের ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে শোক পালন, মিছিল এবং রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বহুমুখী প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
আওয়ামী সরকারের পতনের পরে গত ৫ সেপ্টেম্বর সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। যেখানে উল্লেখ করা হয়, ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সব ধরণের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। একই সাথে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও সব ধরণের দলীয় ও লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ) নিষিদ্ধ করা হলো।
রাজনীতি নিষিদ্ধের এই সিদ্ধান্তের একমাস অতিক্রান্ত না হওয়ার মধ্যেই ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য কর্মসূচি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা বাংলাদেশের যেই সময়ের ছাত্ররাজনীতি নিয়ে গর্ববোধ করি সেই সময়ের ছাত্ররা লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি করতো না। তখন ক্যামব্রিজ-অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সংসদভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি বিদ্যামান ছিল এবং তারা ছিল ক্লাসের সেরা ছাত্র। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে ছাত্র রাজনীতি শুরুর পায়তারা দেখতেছি তা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পূর্বের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির অনুরূপ বলেই মনে হচ্ছে। রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস করা যদি অসম্ভবই হয় তাহলে সংসদবিত্তিক রাজনীতি চালু থাকুক কিন্তু লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক তাওহিদ আহমেদ আশিক বলেন, ইতিপূর্বে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে-ধরনের রাজনীতি দেখেছি তা শিক্ষার্থী কিংবা ক্যাম্পাসের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনেনি।ক্যাম্পাসের সামগ্রিক গঠনমূলক পরিবর্তনের থেকে বরং শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ধ্বংসে বেশি ভূমিকা রেখেছে। আমরা আমাদের ক্যাম্পাসকে এই ধরনের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত রাখতে চাই।আমাদের প্রত্যাশা সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ক্যাম্পাসের সামগ্রিক পরিবেশ ঠিক রাখতে এবং গঠনমূলক পরিবর্তনের স্বার্থে সব ধরনের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়নে বর্তমান প্রশাসন দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আল রাকিব বলেন, একক আধিপত্যের ছাত্র রাজনীতি ক্যাম্পাসে চাই না। ছাত্র রাজনীতি থাকবে মুক্ত। যেখানে ছাত্র সংগঠনগুলোর মাঝে ভালো কাজের, দেশ গঠনের প্রতিযোগিতা থাকবে। বিগত দিনগুলোর মতো লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির পুনরাবৃত্তি না হোক সেটাই কাম্য।
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের পরে রাজনৈতিক ব্যানারে প্রোগ্রাম করার কারণ জানতে চাইলে শেকৃবির ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, আমাদের প্রোগ্রামটি মূলত রাজনৈতিক প্রোগ্রাম ছিল না। এটি মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফরহাদের স্মরণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত একটি প্রোগ্রাম ছিল। তিনি আরও বলেন, আমরা শেকৃবিতে রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের কোনো লিখিত চিঠি পাইনি। নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা মৌখিক ও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহীত কোনো সিদ্ধান্ত নয়। আমরা মনে করি রাজনীতি বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার।
স্বল্পমূল্যে গবাদিপশুর রোগ ব্রুসেলোসিসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের দাবি করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম এবং তার গবেষকদল।
ড. মো. আরিফুল ইসলামের গবেষক দলে রয়েছেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মোছা. মিনারা খাতুন, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. জামিনুর রহমান বাকৃবির স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মো. রাইসুল ইসলাম, স্নাতকের শিক্ষার্থী নাহিদুজ্জামান এবং অর্ণব সাহা।
বাংলাদেশ একাডেমি অফ সাইন্সেস - ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার ( বিএএস - ইউএসডিএ) এর অর্থায়নে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে। ২০২০-২৩ সাল পর্যন্ত এই গবেষণাটি করা হয়।
ব্রুসেলোসিস রোগ সম্পর্কে অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ব্রুসেলোসিসে আক্রান্ত গরু, ছাগল, ভেড়া যদি গর্ভধারণ করে তখন তাদের গর্ভপাত হতে পারে। গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন ৬ মাস পর সাধারণত গর্ভপাতটি হয়ে থাকে। ফলে খামারি একইসাথে বাছুরটি ও হারায় এবং গাভীর দুধের উৎপাদনও কমে যায়। অর্থাৎ খামারে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও ব্রুসেলোসিস অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি রোগ, যা ব্রুসেলা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে। দেশের প্রায় ৫-৬ শতাংশ গবাদিপশু এ রোগে আক্রান্ত। এতে পশু মারা না গেলেও প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়।
ব্রুসেলোসিস এর ভ্যাকসিন তৈরির উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল হক বলেন, ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিমেল হেলথের (ডব্লিউওএএইচ) নির্দেশনা মোতাবেক ব্রুসেলোসিসে আক্রান্ত প্রাণীকে হত্যা করে তাকে পুঁতে ফেলতে হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই নির্দেশনা মানা হলেও বাংলাদেশে তা মানা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। কেননা অন্যান্য দেশে ক্ষতিপূরণ দেয়া হলেও বাংলাদেশে এর ব্যবস্থা থাকলেও প্রয়োগ বললেই চলে। বিদেশি অনেক ভ্যাকসিন থাকতেও এ ভ্যাকসিন টি তৈরির উদ্দেশ্য হলো প্রতিটি অণুজীবের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় অনেক পার্থক্য দেখা যায়, এর উপর ভিত্তি করে ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা। তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্থানীয় জীবাণু নিয়ে গবেষণা করে ভ্যাকসিন টি তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ কমমূল্যে খামারিদের ভ্যাকসিন সরবরাহ ও জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করেই আমাদের এ ভ্যাকসিনের উদ্ভাবন।
গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে অধ্যাপক বলেন, ক্লিনিক্যাল ও ফিল্ড ট্রায়ালের মাধ্যমে আমরা ভ্যাকসিন টি তৈরি করেছি। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আমরা ল্যাব প্রাণী সাদা ইঁদুরে ভ্যাকসিন টি প্রয়োগ করে দেখেছি। ইঁদুরগুলোকে দুই দলে ভাগ করা হয়েছে। একটি ভ্যাকসিন গ্রুপ আরেকটি কন্ট্রোল গ্রুপ। ভ্যাকসিন গ্রুপে ইঁদুরগুলোকে ভ্যাকসিন দেয়া ছিল কন্ট্রোলে ছিল না, এরপর আমাদের নিজের শনাক্ত করা ব্রুসেলা জীবাণু দিয়ে এদের নিয়মিত সংক্রমিত করা হয় এবং পরবর্তীতে বুস্টার ডোজ দিয়ে আবার সংক্রমিত করে দেখতে পাওয়া যায় ভ্যাকসিন গ্রুপে রোগের লক্ষণ তৈরি হয় নি কিন্তু কন্ট্রোল গ্রুপে হয়েছে। অর্থাৎ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। তারপর আমরা ফিল্ড ট্রায়ালের জন্য ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের প্রায় ৪০০ গাভীর দেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করি এবং পরবর্তীতে ওই গাভীগুলোর এন্টিবডি টেস্ট এর মাধ্যমে নির্ণয় করতে পারি ব্রুসেলোসিসের বিরুদ্ধে উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন টি যথেষ্ট কার্যকর। প্রায় ১ বছর ভ্যাকসিনটির ফিল্ড ট্রায়াল চলে।
ভ্যাকসিন সম্পর্কে অধ্যাপক আরিফুল জানান, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ব্রুসেলা অ্যাবোরটাস’ (Brucella abortus) এর আধিক্য বেশি দেখা যায়। ব্রুসেলা অ্যাবোরটাস’র বায়োভার-৩ এর বিরুদ্ধে উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর। তবে অন্যান্য বায়োভারের বিরুদ্ধেও এটি প্রতিরক্ষা দিবে অ্যান্টিজেনিক মিল থাকার কল্যাণে। আমাদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনটি মৃত ভ্যাকসিনের অন্তর্গত। প্রতি ছয়মাস অন্তর অন্তর ভ্যাকসিনটির বুস্টার ডোজ দিতে হবে।
জীবিত ভ্যাকসিন না নিয়ে কেন মৃত ভ্যাকসিন নেয়া হলো এবং ভ্যাকসিনটির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক আরিফুল জানান, ভ্যাকসিন দুইধরণের: জীবিত ভ্যাকসিন, মৃত ভ্যাকসিন। জীবিত ভ্যাকসিনে অনুজীবটি জীবিত ও দুর্বল থাকে কিন্তু মৃত ভ্যাকসিনে অণুজীবটি মৃত থাকে কিন্তু এন্টিবডি বিদ্যমান থাকে। জীবিত ভ্যাকসিনের অসংখ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, যেমন: ভ্যাকসিন দেয়ার সময় ইনজেকশনের সুঁচ ঠিকমতো না ফুটলে ওই জীবিত ব্যাকটেরিয়া মানুষ ও অন্য পশুর সংস্পর্শে এসে রোগ সৃষ্টি করতে পারে, গর্ভপাত করতে পারে, জীবিত ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য কোল্ড চেইন দরকার পরে এজন্যই আমরা মৃত ভ্যাকসিন নিয়েছি। আমাদের তৈরি ভ্যাকসিনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি।
খরচের বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ভ্যাকসিনের ফর্মুলা তৈরি আছে তবে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন করা হয়নি। তবে পর্যাপ্ত ফান্ডিং এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো এর বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব। এছাড়াও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি চায় তাহলে আমরা ভ্যাকসিনটি তৈরি করে তাদের সরবরাহ করতে পারবো। ভ্যাকসিনটির জন্য গবাদিপশু প্রতি খরচ পড়বে মাত্র ৫০ থেকে ১০০ টাকা। বুস্টার ডোজের জন্যও একই খরচ পড়বে। উৎপাদন খরচ, সস্তা কাঁচামাল ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে খরচ কম হওয়ায় এতো অল্প মূল্যে ভ্যাকসিনটি সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল হক ও তার গবেষকদল ২০১৬ সালে সর্বপ্রথম দেশে গবাদিপশুর দেহে ব্রুসেলার উপস্থিতি নির্ণয় করেছিলেন।
গণ-অভ্যুত্থানের সৈনিক ছাত্র-জনতার ওপরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আক্রমণ এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে সরকারের দীর্ঘসূত্রতার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা৷
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বেলা ১টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সম্মুখে (ডেইরি গেট) এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়৷
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী মেহরাব সিফাতের সঞ্চালনায় বক্তারা গতকাল আশুলিয়ার শ্রীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) শিক্ষার্থী রবিউস সানী শিপুর ওপর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীদের হামলার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে সাপেক্ষে বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান৷
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জাবি শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, রবিউস সানী শিপু আন্দোলনের প্রথম সারির একজন নেতৃত্বদানকারী ছাত্র৷ সে আন্দোলনে থেকে গুলি খেয়েছে৷ কিছুদিন আগে তার অপারেশন হয়েছে, এখনো তার পেটে সেই গুলির দাগ রয়ে গেছে৷ আমরা দেখেছি আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীরা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ২ মাস পরে তার ওপর আক্রমণের সাহস দেখিয়েছে৷ তার গুলিবিদ্ধ পেটে আঘাত করতে করতে রক্তপাত ঘটিয়েছে, যেটা সুস্পষ্ট হত্যা চেষ্টা৷
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের আগে আমরা বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর বিচারের দাবিতে দাঁড়িয়েছি৷ আওয়ামী ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলায়নের প্রায় ২ মাস পর আমাদেরকে আবারো দাঁড়াতে হচ্ছে৷ কিন্তু বর্তমান সরকার যদি তার দায়িত্ব পালনে বারবার এভাবে ব্যর্থ হতে থাকে, দীর্ঘসূত্রিতায় জড়াতে থাকে, তাহলে এই ফ্যাসিবাদ গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এবং সফল হবে৷ দুই মাস পর তারা এখন আমাদেরকে হত্যার চেষ্টা করছে, অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের এবং তাদের সাংগঠনিক কাঠামো যা ব্যবহার করে তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায় সেই সাংগঠনিক কাঠামো নিষিদ্ধ করতে হবে৷
শিপুর ওপর আক্রমণকারী সন্ত্রাসীদের মামলা দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার আলটিমেটাম দিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের সুস্পষ্ট দাবি রবিউস সানী শিপুর ওপর আক্রমণকারী সন্ত্রাসীদের যথাযথ মামলা দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে এবং বিচারের মুখোমুখি করতে হবে৷ এছাড়াও সাভার আশুলিয়া অঞ্চল ও সারাদেশে আওয়ামী ছাত্রলীগ যুবলীগের সন্ত্রাসী যারা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার হত্যাকারী ও হামলাকারীদের চিহ্নিত করে যথাযথ তদন্তপূর্বক গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে৷ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও নীতিকে শক্তিশালী করতে পারলে নিজেরা টিকে থাকতে পারবে এবং রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠন কার্যক্রম সফল করতে পারে৷
মানববন্ধনে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের প্রথম কাজ নিয়ে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, যে কোনো গণঅভ্যুত্থানের বিপ্লব পরবর্তীতে যে সরকার গঠিত হয় তারা প্রথমেই আত্মত্যাগকারী বা গণঅভ্যুত্থানের সৈনিকদের ক্ষমতাশালী করে তাদেরকে ক্ষমতায়িত করে৷ এবং ফ্যাসিবাদী রেজিমের অত্যাচার এবং শোষণমূলক কাঠামোর সাথে যারা জড়িত সে সকল চক্রকে আটক করে এবং বিচারের মুখোমুখি করে৷ এটা গণঅভ্যুত্থান বিপ্লব পরবর্তী সরকারের প্রথম কাজ৷ অথচ এই দুটি কাজে তাদের সুস্পষ্ট কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি৷ তাদের কাজ দেখে মনে হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনা করা একটা অফিসিয়াল কাজ মাত্র৷
মানববন্ধনে আহত শিফুর মা স্কুল শিক্ষিকা নাদিয়া আফরোজ শিউলি বলেন, এই যে আমরা ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনার নেতৃত্বে ছিলাম বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না৷ ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদেরকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, কিন্তু আমরা এই সরকারের তেমন কোনো উন্নতি দেখতে পাইনি গত দুই মাসে৷ বিভিন্ন মেডিকেলে ভর্তি আন্দোলনে আহত ও শহীদ পরিবারের পাশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেভাবে দাঁড়ানোর কথা ছিল, সেভাবে তাদের অবস্থান দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না৷
তিনি বলেন, আমি গত ২৫ বছর ধরে শ্রীপুরের এই এলাকায় আছি৷ এখানে এতোবছর যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল তারাই গতকাল আমার ছেলের ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে৷ তার এক বন্ধুর মাধ্যমে আমাদের বাসার পিছনের দিকে স্কুল মাঠে রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিয়ে গিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি মারধর করে৷ পরে আমি খবর পেয়ে সেখানে গাড়ি নিয়ে উপস্থিত হয়ে আমার ছেলেকে উদ্ধার করে হসপিটালে ভর্তি করি৷ আমরা এ দেশের কোথাও আর এই বিগত ফ্যাসিবাদ সরকারের কর্মকাণ্ড দেখতে চাই নাই৷
এসময় কাঁদতে কাঁদতে আহত শিফুর হতবিহ্বল মা অনেকটা আকুতি জানিয়ে বলেন, শিফু আমার একমাত্র ছেলে৷ সে দেশে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গিয়ে রাজপথে গুলি খেয়েছে৷ কিন্তু সে তার এতো ত্যাগ স্বীকার করেছে এর বিনিময়ে সে কোনো যথাযথ সম্মান বা মর্যাদা পায়নি৷ আমি আমার ছেলেকে নিয়ে এতোদিন ধরে বাড়িতে ছিলাম, পরে এক মাস পর গতকাল ঢাকায় নিয়ে আসছি৷ আসার দুই ঘণ্টা পরেই তাকে হত্যা চেষ্টার উদ্দেশ্যে এমন ঘটনা ঘটে৷ সরকারের কাছে আমার ছেলের ওপর হামলার সুষ্ঠু বিচারের জোর দাবি জানাচ্ছি৷ আমি আর কোথাও ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর কোনো কর্মকাণ্ড দেখতে চাই না৷
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে কুষ্টিয়া শহর থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে লাইন বাসে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ঝিনাইদহ জেলার আরাপপুরের মৃত মোঃ সিরাজুল ইসলামের ছেলে জুয়েল আহমেদ রাজু (৪৫)। অভিযুক্তকে শিক্ষার্থীরা আটক করে থানায় সোপর্দ করলে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) অভিযুক্ত রাজুর চাচা ঝন্টু মিয়া এসে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেন তাকে। এর আগে গতকাল রাতে কুষ্টিয়া থেকে খুলনাগামী রূপসা বাসে ঘটনাটি ঘটে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মানবিক দৃষ্টিতে ক্ষমা করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ছাত্রী রূপসা বাসে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় পাশের সিটে অভিযুক্ত ব্যক্তি বসা ছিলো। ঐ ছাত্রীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা-সহ মুখের মাস্ক খুলতে বলা, টিকিট দেখাতে বলা, হাতের আন্টি (রিং) ধরতে চাওয়া এবং ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে নেমে মেয়েটিকে অনুসরণ করে উত্ত্যক্ত করছিল অভিযুক্ত ব্যক্তি রাজু। পরে ভুক্তভোগীর কয়েকজন বন্ধু ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তকে মারতে উদ্যত হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারির উপক্রমায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা গিয়ে অভিযুক্তকে উদ্ধার করে থানায় হস্তান্তর করে।
অভিযুক্ত রাজু বলেন, আমার টিকিটটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না, মেয়ের হাতের টিকিটটা আমার মনে হয়েছিল তাই টিকিট দেখাতে বলছি। মেয়েটা যখন বাস থেকে নেমেছে তখন জিনিসপত্রের ব্যাগটা খুব ভারী হওয়ায় সন্দেহ লাগছিল তাই জিজ্ঞেস করছি। মেইনগেইটে নামলে কয়েকজন এসে মারে। এতে নো প্রবলেম।
টিকিট চেক করা কিংবা সন্দেহ করার ক্ষমতা রাখেন কিনা জিজ্ঞেস করলে বলেন, এটাই আমার ভুল হয়েছে। আল্লাহকে বিচার দিলাম। আমি সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি- আর এরকম করব না এবং এখানেও আসব না।
ইবি থানা থেকে জিম্মায় নিতে আসা অভিযুক্ত ব্যক্তির চাচা ঝন্টু জানান, মা-বাবা স্ত্রী হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গেছে। বছরে ১৫ থেকে ২০ দিন মাতাল হয়ে যায়। বেঁধে রাখতে হয়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব বেঁধে রেখে কিংবা ভালো মানের চিকিৎসা করাতে।
ইবি থানার এসআই মেহেদী হাসান জানান, শিক্ষার্থীরা তাকে থানায় হস্তান্তর করলে বিস্তারিত ঘটনা জেনেছি। ভুক্তভোগী কোনো লিখিত অভিযোগ না দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে মুচলেকা নিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, মেয়ে যেহেতু অভিযোগ দেয়নি, সুতরাং ক্ষমা করে দিয়েছে। থানায় বিষয়টা অবহিত করে তাদের আইনি নিয়মানুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে বলছিলাম। থানা থেকে যখন বললো ‘অভিযোগ না পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যায় না, বরং মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিতে হয়’। তাই বললাম যে তাহলে অভিভাবক ডেকে মুচলেকা নিতে।