রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতির মামলায় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম শান্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার তাকে রাজশাহীর কাটাখালি এলাকা থেকে আটকের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে মতিহার থানা পুলিশ।
বুধবার (৩১ মে) দুপুর পৌনে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্যটি জানিয়েছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বিজয় বসাক।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় গ্রেফতারকৃত আসামিদের তথ্যমতে হাসিবুল ইসলাম শান্তকে গতকাল রাজশাহীর কাটাখালি এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর পর তার মোবাইল থেকে জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাবি ও জগন্নাথ (গুচ্ছ) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষারসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার বিপুলসংখ্যক প্রবেশপত্র পাওয়া গেছে। তার বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিতে প্রয়োজনী ব্যবস্থাগ্রহণ করা হচ্ছে।
এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় গ্রেফতারকৃত আসামিদের তথ্যমতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম বাদি হয়ে হাসিবুল ইসলাম শান্তের বিরুদ্ধে নগরীর মতিহার থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি।
‘চতুর্থ নয়,পঞ্চম শিল্প বিপ্লব ছুঁয়ে দেওয়া সম্ভব আমাদের পক্ষে’
ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
‘চতুর্থ নয়,পঞ্চম শিল্প বিপ্লব ছুঁয়ে দেওয়া সম্ভব আমাদের পক্ষে’
ক্যাম্পাস
চতুর্থ নয়,পঞ্চম শিল্প বিপ্লব ছুঁয়ে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দুইদিন ব্যাপী ৬ষ্ঠ বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড - ২০২৩, জাতীয় পর্বের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি ও মানবসম্পদের চাহিদা ব্যাপকহারে বাড়ছে। দ্রুত গতি এবং নির্ভুল হওয়ার জন্য বাংলাদেশেও এখন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। চতুর্থ নয় পঞ্চম শিল্প বিপ্লব ছুঁয়ে দেওয়া সম্ভব আমাদের পক্ষে। আমাদের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। স্কুল পর্যায়ে প্রোগ্রামিং রোবটিং এগুলোর প্রতি যদি হাতেখড়ি দেওয়া হয় তাহলে শিশুদের চিন্তাশক্তি যেভাবে বিকশিত হবে আর তারা যে যৌক্তিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে সেটা আমাদের জন্য খুব দরকার।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বে শিক্ষাক্ষেত্রের অনন্য উদাহরণগুলোকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সারাদেশে ৩০০ টি স্কুলকে স্মার্ট স্কুল হিসেবে গড়ে তুলার লক্ষ্যে শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকি। তার মধ্যে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা অন্যতম।
নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে আমরা ২০১৭-১৮ সালে গবেষণা করেছিলাম সেখানে আমরা ভেবেছলাম আগের যে শিক্ষাক্রম বা এখনো কিছু শ্রেণিতে যে শিক্ষাক্রম চালু আছে সেটা আমাদের জন্য কতটুকু উপযোগী এবং সামনে যে দিন আসছে তার জন্য কতটা উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে আমাদেরকে তৈরি করছে। কিন্তু আমারা দেখেছি যে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করে মুখস্ত বিদ্যা বাদ দেওয়ার চেষ্টা করলেও সেটা খুব ফলপ্রসূ হয়নি। তাই আমাদের মনে হয়েছিলো যে আমাদের অনেক জায়গায় পরিবর্তন আনা দরকার। এবং শুধু পরিবর্তন বা সংস্করণ নয় একটা রূপান্তর প্রয়োজন। সে লক্ষ্যেই ২০১৭-১৮ সালের গবেষণার ফলাফল আর বৈশ্বিক যে পুরো চিন্তা এই সব কিছুকে মিলিয়ে আমরা চিন্তা করলাম শিক্ষায় একটা রূপান্তর ঘটাতে হবে এবং সেই জন্য আমাদের নতুন একটা শিক্ষাক্রমে যেতে হবে। সেই নতুন শিক্ষাক্রমের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময় নিয়ে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত শিক্ষা বিষয়ক কোনো আলোচনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরে যায় না কিন্তু আমরা আমাদের এই পরিকল্পনা আমাদের পেইজে আপলোড দিয়েছি, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এবং আমাদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতেও উত্থাপন করেছি এবং মতামত নিয়েছি। এবং সবশেষে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছে এটি উত্থাপন করেছি। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন এবং অনুমোদন দেওয়ার পরেই আমরা কয়েকটি শ্রেণিতে এই নতুন শিক্ষাক্রম চালু করেছি।
আইসিটি বিভাগের সচিব সামসুল আরেফিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৩১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠিত হবে। আজ যারা রোবট অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করেছে আমরা আশা করি তাদের হাত ধরেই স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়তে পারবো।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মতো জনবহুল দেশের বড় সম্পদ হলো তরুণ। তরুণদের হাত ধরেই কিন্তু একটা দেশ এগোতে পারে। আজকে যারা এই রোবট অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করেছে আমরা আশা করি তাদের হাত ধরেই আমরা এই জনবহুল দেশকেও আমরা এগিয়ে নিতে পারবো।
পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে একাধিক শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্রোঞ্জ,সিলভার এবং গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়। বক্তৃতা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি রোবট অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে আইসিটি বিভাগের মহাপরিচালক মোস্তফা কামালসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের উদ্যোগে 'বাংলাদেশ ও ইরানের শিশু-কিশোর সাহিত্য' শীর্ষক দু'দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এই সম্মেলনের আহ্বায়ক ও বিভাগের প্রবীন অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইরানি দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর সৈয়দ রেজা মিরমোহাম্মাদি এবং ঢাকাস্থ আল-মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়ালমুসলেমিন শাহাবুদ্দিন মাশায়েখী রাদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক ড. আবদুস সবুর খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন স্বাগত বক্তব্য রাখেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ইরানের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. বাহাদুর বাঘেরি।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ এই সম্মেলনের সফলতা কামনা করে বলেন, শিশু ও কিশোরদের মানসিক বিকাশ এবং সুন্দর জীবন-যাপনে শিশু সাহিত্যের গুরুত্ব অপরিসীম। শিশু-কিশোরদের মাতৃভাষা শিখতে, নিজের দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জাতির ভাষা এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে শিশু-কিশোর সাহিত্য চর্চা আরও বৃদ্ধি হওয়া উচিত। শিশু-কিশোরদের সংস্কৃতিমনা, সুশিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে তিনি পারিবারিক শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি বাংলাদেশে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য প্রসারে অনন্য ভূমিকা রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, শিশুদের সুচরিত্র গঠনে, চিন্তাশীল করে গড়ে তুলতে, অপরকে শ্রদ্ধা করতে এবং সংস্কৃতিমনা করে গড়ে তুলতে শিশু সাহিত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে বিরাজমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে এবং দু'দেশের সাহিত্য অঙ্গন আরও বিকশিত হবে।
উল্লেখ্য, দু'দিনব্যাপী এই সম্মেলনে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে ৪টি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন এবং ৩৪টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে।
অযত্ন-অবহেলায় বেহাল ঢাবির হল অডিটোরিয়াম, থমকে সাংস্কৃতিক চর্চা
ক্যাম্পাস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে রয়েছে বিশাল ও সুপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত অডিটোরিয়াম। কিন্তু অডিটোরিয়াম থেকে টিভি রুম ও স্পোর্টস রুমে রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচর্যার অভাবে বহুবছর যাবৎ পর্দা উঠছে না অডিটোরিয়ামের মঞ্চে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কাঠামো এবং বিলুপ্ত হচ্ছে হলের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক চর্চা। এটাকে ‘সাংস্কৃতিক দৈন্য দশা’ বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ১৯৩১ সালের ১১ আগস্ট উদ্বোধন করা হয়। ১৯৬৬ ও ১৯৬৭ সালে তৎকালীন সর্ববৃহৎ আবাসিক হল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল। হলের অভ্যন্তরে আবাসিক শিক্ষার্থীদের সুস্থ বিনোদন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চর্চার উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয় অডিটোরিয়াম। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের অডিটোরিয়ামটি এখন টিভি রুম হিসেবে পরিচিত, সূর্যসেন হল অডিটোরিয়াম শহীদ এইচ এম ইব্রাহীম সেলিম মিলনায়তন ও মুহসিন হলেরটি মুহসিন হল অডিটোরিয়াম হিসেবেই পরিচিত। এ অডিটোরিয়ামগুলোতে রয়েছে প্রমাণ আকারের মঞ্চ ও বিশাল দর্শকসারির স্থান। মঞ্চের পাশেই রয়েছে মঞ্চ ব্যবহারকারীদের জন্যে প্রয়োজনীয় হল অডিটোরিয়াম কার্যালয়, টয়লেটসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় সুবিধাদি।
তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুহসীন হলের অডিটোরিয়ামে হয় টেবিল টেনিস খেলা এবং বিশাল স্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরণের কারুশিল্প নির্মাণ কাজ। কারুকাজে ব্যবহৃত উপাদান ও ছড়ানো-ছিটানো আবর্জনায় নোংরা পরিবেশ হয়ে আছে পুরো মিলনায়তন। মঞ্চে পর্দা টানিয়ে পেছনে সপরিবারে বসবাস করছেন কিছু মানুষ। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদেরকে হলের কর্মচারীর পরিবার বলে পরিচয় দেন। মঞ্চের পেছনেই দেখা যায় ‘হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল অডিটোরিয়াম কার্যালয়’ যা মুহসীন হল কল্যাণ সমিতি দ্বারা স্থাপিত। এই কার্যালয়টি এখন লোকচক্ষুর অন্তরালে। অডিটোরিয়াম কার্যালয় এর অস্তিত্বের ব্যাপারে হলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী অজ্ঞাত। দু পাশের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলে দেখা যায় কর্মচারীদের আবাসস্থল হিসেবে ব্যাবহার করা হচ্ছে। আবার,বিভিন্ন স্থানে ও ছাদ থেকে খসে পড়েছে সিমেন্ট। অধিকাংশ স্থানে ছাদের লোহা দৃশ্যমান।
এদিকে সূর্য সেন হলের শহীদ এইচ এম ইব্রাহীম সেলিম মিলনায়তনের অবস্থাও ভয়ংকর। এখানে ২টি প্রবেশদ্বারই তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে দীর্ঘদিন। ভেতরে হলের যাবতীয় আসবাবপত্র রাখা আছে। দু পাশের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলে দেখা যায় কর্মচারীদের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাইরে থেকে দেখা যায় উপরের রেলিং খসে গেছে।
এ হলে বহু বছর যাবৎ কর্মরত ব্যক্তিবর্গের সূত্রে জানা যায়, বহু বছর যাবৎ এখানে কোন অনুষ্ঠান হয় না। মিলনায়তনের রেলিং ধসে কয়েক বছর আগে ছাত্র ও কর্মচারীরা আহত ও হয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে মাস্টারদা সূর্যসেন হলের প্রাধ্যাক্ষ অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, মিলনায়তনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে তাই এটি বন্ধ রাখা হয়েছে। আমাদের প্রোগ্রামগুলি টিভিরুম এবং বিভিন্ন বড় রুম আছে সেগুলোতে হয়। অডিটোরিয়ামগুলি সংস্কার যদি আমরা করতে পারি তা করব। আমি যতদূর জানি,এটা ভেঙে ২০ তালা করার কথা, একটা প্ল্যান আছে।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যাক্ষ ড. মাকসুদুর রহমানের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ১৭-১৮ সেশনের আবাসিক ছাত্র মাহিন আহমেদ চান হলের অডিটোরিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো মঞ্চায়িত হোক।
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সহাবস্থান থাকলে প্রশাসনের ওপর একটা চাপ থাকে। চাপ থাকলে প্রশাসন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালু রাখতে এক প্রকার বাধ্য হয়। হলে অন্য কেউ নাই যদি থাকে তাহলে চাপ কারা প্রয়োগ করবে? হল সংসদগুলো অকার্যকর হয়ে আছে। হল সংসদ অকার্যকর থাকলে সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামগুলো নেবে কারা? এদিকে সাংস্কৃতিক ছাত্র সংগঠন নাই, সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুপস্থিতি এই সব কিছু মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগুলো এক প্রকার ব্যবহারহীন হয়ে পরে থাকে। এজন্যই গণতান্ত্রিক সহাবস্থানের প্রয়োজন। নইলে প্রশাসন এখনের মতো দায়মুক্ত হয়ে থাকবে এবং দায় টা অনুভব করানোর জন্যই গণতান্ত্রিক সহাবস্থান দরকার’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানভির নাহিদ খান শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক ও নাট্যচর্চার গুরুত্বের ব্যাপারে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাটকের শীর্ষ স্থান ছিল। ১৯৪৭ সালে যখন দেশভাগ হল তখন এই অঞ্চলের নাট্য চর্চা ঢাবিকে কেন্দ্র করেই হত। সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শহীদুল্লাহ হল জগন্নাথ হল এর অডিটোরিয়াম ছিল নাটকের উপযোগী। ওই সময় আমাদের দুই ধরণের নাট্য চর্চা হত। এক দল প্রগতিশীল নাট্যকারদের যারা ভাষা ও জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক নাট্য চর্চা করত। আরেকটা দল তাত্ত্বিকদের মতে ইসলামী রক্ষণশীল নাট্যচর্চা করত। ঢাবির শিক্ষক যারা ছিলেন, মুনির চৌধুরী, আখতার ইবনে সাঈদ,সাঈদ আহমেদ, সৈয়দ ওয়ালিওল্লাহ এদের নাটক ও ঢাবিতে দারুণ চর্চা ছিল, হল ভিত্তিক এ চর্চা গুলো চমৎকার ছিল। ডাকসুর একটি নাটকের দল ছিল ‘নাট্যচক্র’। এগুলো যে হচ্ছে না তাকে এক ভাবে বলতেই পারেন ‘সাংস্কৃতিক দৈনদশা’।
কয়েকবছর আগেই উদ্যোগ নিয়ে হলে হলে নাটকের উৎব হয়েছে। ডাকসুতে যখন নির্বাচনের পর আয়োজন হল তখনো হলে হলে ডাকসু থেকে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হত। এগুলো হওয়াতো উচিত। না হওয়ার ফলে এখন আর গুণীজন উঠে আসে না। হল ভিত্তিক নাট্য চর্চা হলে অনেকে অভিনয় করত, নাটক লিখতো, নাটকের নির্দেশনা দিত এরাই পরে মেইন স্ট্রিমে বা জাতীয় পর্যায়ে ভূমিকা রাখে। আজকে স্বাধীন বাংলাদেশের বিখ্যাত নাট্যকাররা কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ভিত্তিক চর্চা করেই আসছেন। যেমন রামেন্দ মজুমদার,ম হামিদ, মামুনুর রশীদ এরকম গুরুত্বপূর্ণ নাট্যকাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেই আমাদের জাতীয় পর্যায়ের নাট্যচর্চা কে বেগবান করেছেন।
কিন্তু এখন শিক্ষার্থীরা নাট্যচর্চা না করে মোবাইলে ফেসবুকিং করে সময় কাটাচ্ছে। টিভি রুমেও খেলা ছাড়া শিক্ষার্থী ওইরকম যায় না। তাই নাটকের অডিটোরিয়ামগুলো নাটকের কাজেই ব্যবহার করা উচিত। এর ফলে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা বেগবান হবে।একজন মানুষ যখন নাটকের সাথে যুক্ত হয় তখন সে সুন্দর ভাবে কথা বলা শেখে, থিয়েটারে কাজ করার ফলে সময়ানুবর্তিতা শেখে, দলগত হয়ে কাজ করা শেখে, সৃষ্টিশীল চর্চা হয়, সমাজের সমকালীন ঘটনা গুলো নাটকের লেখায় চলে আসে। এগুলো মানুষ কে মননশীল করে তোলে। কিন্তু এ সুস্থ চর্চা না করে অনেক শিক্ষার্থী মাদকের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে, থিয়েটার করতে হলে পড়াশোনা করতে হয় এগুলো না করার ফলে অনেকে পড়াশোনা থেকে সরে যাচ্ছে।
দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় ।
আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু ও গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ শীর্ষক বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক।
রাবি রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবদুস সালামের সঞ্চালনায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে ড. বিনায়ক সেন বলেন, শেখ হাসিনা যে সাহসী তাতে কারো সন্দেহ করার অবকাশ নেই। শেখ হাসিনার কাছ থেকে আরও অনেক কিছু পাওয়ার আছে বাংলাদেশের। আমি যখন বাংলাদেশের আগামী দশ বছরের কথা চিন্তা করি তখন আমি দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিয়ে ভাবি না। এটা আমার ব্যক্তিগত দুর্বলতা। ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে তখন আমার চিন্তা আবর্তিত হতে থাকে। সেই ব্যক্তিটি এই মুহূর্তে আমি শেখ হাসিনা ছাড়া আর কাউকে পাই না। বাংলাদেশ আজ যে জায়গায় এসে পৌঁছেছে তিনি ছাড়া সেখানে পৌঁছাতে পারত না।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। পাশাপাশি কিছু বৈষম্যও বাড়ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো অর্থনৈতিক বৈষম্য। মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বৈষম্য হচ্ছে। এমনকি আঞ্চলিক বৈষম্যও বাড়ছে। সেই বৈষম্য মাঝে একটু কমে আসলেও এখন আবার বেড়েছে। পশ্চিমাঞ্চল-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য আছে। এসব বৈষম্য ছাড়াও সুশাসনের প্রতি, স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তোরনের জন্য আমার কাছে মনে হয় বঙ্গবন্ধু ও গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র বিষয়ক এ আলোচনা।
তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাদ থেকে একসময় একচেটিয়া পুঁজিবাদ গড়ে ওঠে। কিন্তু পুঁজিবাদ এবং একচেটিয়া পুঁজিবাদ গ্রহণ করা দুটি ভিন্ন বিষয়। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিলো একচেটিয়া পুঁজিবাদ গ্রহণে সম্মতি না দেওয়া। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু কোনো ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না। কারণ পাকিস্তান আমলের ২২ পরিবার গড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা তাঁর মনে দগ্ধভাবে গেঁথে ছিল। বঙ্গবন্ধু একচেটিয়া পুঁজিবাদ গড়ে উঠতে দিলে তার মালিকরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হয়ে উঠতো এবং ছোট, বড়, মাঝারি কোনো পুঁজিরই বিকাশ ঘটত না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাবি উপাচার্য বলেন, শেখ হাসিনা মানেই উন্নয়ন, শেখ হাসিনা মানেই আমাদের বেঁচে থাকার যে আলো, সে আলোর উজ্বল রশ্মি। তিনি ৪২ বছর ধরে কি দিয়েছেন তা বলতে হয় না। কারণ সূর্য উঠলে ঢোল পিটিয়ে বলতে হয়না সূর্য উঠেছে। এখানে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার সূর্যটাকে কীভাবে দেখছি। উনি না থাকলে দেশ কোথায় যেত তা বলা মুশকিল। ১৯৮১ সালের পর এসে উনি দেশের কল্যাণের জন্যে কী করেছেন সেটিও আপনি বলবেন। উনার আগামী যে পরিকল্পনা সেখানে একটা আগামীর দিশা আছে, সেটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। এখন শুধু আমাদের অপেক্ষা, তার সেই স্পর্ধিত বিষয়টি স্পর্শ করা। আমরা তার খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। ২০৪১ এর আগেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই আমরা একটি আলোকিত বাংলাদেশে চলে যাব।
অনুষ্ঠানের সভাপতি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে আমরা বিভিন্নভাবে বলি উনি মানবতার মা, উনি আপোষহীন নেত্রী, উনি দেশরত্ন, উনি গণতন্ত্রের মানসকন্যা অনেক সময় অনেক কথা বলি। আমরা ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের ঘটনা জানি। ৩ নভেম্বর জেল হত্যার ঘটনা আমরা জানি। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টার কথা জানি। সেসব ঘটনা সবচেয়ে বেশি যাকে আঘাত দিয়েছে, কষ্ট দিয়েছে তিনি আমাদের মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এত দুঃখ কষ্ট বুকে নিয়েও বাংলার মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য, আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সনৎকুমার সাহাও বক্তৃতা দেন। এসময় জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সাউদসহ প্রায় তিন শত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষক উপস্থিত ছিলেন।