হলের সিট বন্টনে বৈষম্য নিয়ে বিক্ষুব্ধ শেকৃবি শিক্ষার্থীরা

  • শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

লুৎফর রহমান আবাসিক হল ১

লুৎফর রহমান আবাসিক হল ১

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের সিট বন্টনে বৈষম্যের কারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের হলে সিট দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা দুই বছর এবং তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা তিন বছর গণরুমে থাকলেও ক্যাম্পাসে নবাগত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সিট দিলে এই প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়।

বিজ্ঞাপন

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মন্তব্যের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে উপাচার্যের বাসার সামনেও গিয়েছেন।

শেকৃবিতে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে ছাত্রীদের জন্য শেখ সায়েরা খাতুন হল এবং ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ছাত্রদের জন্য শেখ লুৎফর রহমান হলের কাজ শেষ হয় বহু আগে। তবে লোকবল সংকটের অজুহাতে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল আবাসিক হল দুটি। শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের বিষয়টি তুলে ধরে গত নভেম্বরে বার্তা২৪.কমসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও তাতে কর্ণপাত করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পর সংশ্লিষ্ট হল দুটির জন্য কোনো লোকবল নিয়োগ না হলেও গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক শ্রেণির ওরিয়েন্টেশনের দিনই নবীন শিক্ষার্থীদের নতুন হল দুটিতে কক্ষ বরাদ্দ ও সিঙ্গেল সিট দেয় প্রশাসন।

শেখ লুৎফর রহমান হলে গিয়ে দেখা যায়, ১০তলা হলটির ৬ তলা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা থাকছেন। প্রতিটি কক্ষে ৪ জন করে প্রথমে ৮১ ব্যাচ (নবীন) এবং পরে অন্য হলের গণরুমে থাকা ৮০ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কক্ষ বণ্টন করা হয়। অন্যদিকে ৭৯ ব্যাচের বড় একটি অংশ এবং ৭৮ ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী এখনো অন্য হলগুলোতে ডাবলিং (এক খাটে দুজন) করে থাকছেন। এমনকি একটি কক্ষে ৮-১০ জন করে থাকারও তথ্য মিলেছে। একই চিত্র মেয়েদের হলেও।

এই বিষয়ে নজরুল হলের শিক্ষার্থী রাজিউর রহমান বলেন, ২০১৯ সালে ভর্তি হওয়ার পরে গণরুমেও জায়গা না পেয়ে বেশ কিছুদিন থেকেছি টিএসসিতে। তারপর নজরুল হলের ১১৮ নং গণরুমে সিট পেলেও এক সিটে দুজন থেকেছি ২০২১ পর্যন্ত। পরবর্তীতে ২০২২ সালে ১১৯ নং গণরুমে ছিলাম সেখানেও ডাবলিং। বর্তমানে নজরুল হলের ১০৯ নং গণরুমে জুনিয়রদের সাথে আছি। ৪ বছর ধরে আমাদেরকে গণরুমে রেখেই নতুন ব্যাচকে কিভাবে সিঙ্গেল সিট দিচ্ছে প্রশাসন তা আমরা জানি না । কেন আমাদের সাথে এই বিমাতাসূলভ আচরণ? আমরা কি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয়?

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, আমরা ১৯-২০ সেশনে ভর্তি হয়েছি, এখন ৫ম সেমিস্টার শুরু হতে চলেছে। গত তিন বছর যাবৎ কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের ১১৮ ও ১১৯ নম্বর গণরুমে অস্বাস্থ্যকর ও মানবেতর ছাত্রজীবন পার করছি। সিট সংকট সমাধানে সদ্য চালু হওয়া শেখ লুৎফর রহমান হলে গণরুমে থাকা ছাত্রদের স্থানান্তরের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল প্রশাসন গণরুমে আছি তার সত্যতা যাচাইপূর্বক আমাদের নামের তালিকা প্রকাশ করে। হল প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক নতুন হলে উপস্থিত হলেও নানা নাটকীয়তার মাধ্যমে আমাদের সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। গণরুমের অন্য সবারই নতুন হলে যাওয়ার সুযোগ হলেও আমাদের হয়নি। তবে ছাত্র ছাত্র কিসের বৈষম্য?

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শেখ লুৎফর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনিসুর রহমান বলেন, সমস্যা এক দিনে সৃষ্টি হয়নি, কাজেই সমাধানও এক দিনে হবে না। সবাই সিঙ্গেল সিট পাবে, একটু সময় দিতে হবে।

জ্যেষ্ঠদের রেখে নবীনদের সিঙ্গেল সিট বরাদ্দে অগ্রাধিকার যৌক্তিক কি না- জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি ও কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ কামাল উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে একটু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, এর বেশি কিছু বলতে পারব না।