হ্বিটগেনস্টাইনের দিকে যাওয়া



হামীম কামরুল হক
অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

  • Font increase
  • Font Decrease

“ভাষা, বোঝাপড়া ও জ্ঞান—সবই অতল গহ্বরের ওপর পেতে দেওয়া পাতলা এক জাল।”—তিনি আমাদের অনুভব করিয়েছিলেন, তিনি ল্যুডভিগ হ্বিটগেনস্টাইন। জন্ম ও মৃত্যু দুটোই এই মাসে। জন্ম ২৬ এপ্রিল ১৮৮৯ এবং মৃত্যু ২৯ এপ্রিল ১৯৫১। ভাষা মানুষের শরীর কি মানুষের নানান যন্ত্রপ্রকৌশলের চেয়ে কম জটিল বিষয় নয়। ভাষা দিয়েই এফোঁড় ওফোঁড় করে দেওয়া যেতে পারে পরাতত্ত্ব, নৈতিকতা, ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি। মানুষ লুকিয়ে থাকে ভাষার পেছনে, এমনকি ঈশ্বর বা স্রষ্টাকেও খুঁজে পাওয়া যায় ভাষায়ই। ফলে ভাষা বিষয়টা মোটেও নিরীহ কোনো বিষয় নয়। এর রাজনীতি অর্থনীতিও ভয়ংকর, গূঢ় ও গভীর। ‘ট্র্যাকটেটাস’ ও ‘ফিলোসফিকাল ইনভেস্টিগেশনস’ তার মহান দুইটি কীর্তি হলেও তিনি আরো অনেক দুর্ধর্ষ বইপত্র লিখেছেন। ল্যুডভিগ হ্বিটগেনস্টাইনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তার জন্ম এবং মৃত্যুদিন স্মরণে রেখে এই লেখা।

হ্বিটগেনস্টাইনকে এককথায় বলা যায় ‘ফ্রি স্পিরিট’—এক অন্তহীন স্বাধীনচেতনাসম্পন্ন মানবসত্তা—অন্তত আমি যতটুকু তাঁকে পাঠ করে ও তাঁর লেখা পড়ে বুঝতে পারি। বিচিত্র জীবনযাপন করেছেন। এক পরিস্থিতি থেকে আরেক পরিস্থিতিতে অনায়াসে যেন যেতে পারতেন। অস্ট্রিয়া থেকে ইংল্যান্ড, কখনো আমেরিকা, রাশিয়াতেও আরেকটু হলে ডেরা বেঁধে ফেলেছিলেন, নিজে কুটির বানিয়ে নির্জনে চলে গেছেন নরওয়েতে। বিচিত্র জীবন—বিচিত্র জীবিকার বহর—অধ্যাপনা থেকে বাগানের মালি, হাসপাতালের আরদালি থেকে ফের অধ্যাপক, আরো কত কী। পিতার সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন। হয়ে গেছেন কখনো পথের মানুষ, কখনো প্রাসাদের। তিনি যেন হারমেন হেসের আরেক সিদ্ধার্থ। জীবন যেন ঠিক খেলা নয়, লীলার মতো এসেছে ধরা দিয়েছে ছুটে গেছে। ভিয়েনা সার্কেলের সঙ্গে মিশে রবীন্দ্রনাথের ‘রাজা’ নাটক পড়ে মুগ্ধ। পরে হয়ে গেছেন রবীন্দ্রভক্ত। আবার কোনো বৃত্তে থাকতে চাননি। মনে করতেন, দার্শনিক কোনো গোষ্ঠীর ভেতরে বেড়ে উঠতে পারে না। দার্শনিকতা কোনো দলবদ্ধ বিষয় নয়। আর তিনি তো দার্শনিক না হয়ে হতে যাচ্ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু সেদিকে যাওয়ার আগে রাসেলের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন, “উইল ইয়ু প্লিজ টেল মি হোয়েদার আই অ্যাম এ কমপ্লিট ইডিয়ট অর নট?” রাসেল যদি বলতেন হ্বিটগেনস্টাইন একজন মাথামোটা নির্বোধ কেউ, তাহলে তিনি সোজা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ায় ফিরে যাবেন, আর যদি তা না হন তো দর্শনচর্চায় রত হবেন। বাঙালির মধ্যবিত্তের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় সেকালে কি একালেও একথা কজন ভাবতে পারে যে, ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া বাদ দিয়ে কেউ দর্শন পড়তে চাইবে?

তিনি অস্ট্রিয়ার মানুষ, গুরুত্বপূর্ণ লেখাপত্র অনেকটাই মূলত জার্মান ভাষায়। দিয়েছেন ভাষণ, বলেছেন নানান কথাবার্তা। সেসব নিয়েও আলাদা আলাদা বই আছে। তবে তাঁকে যে তকমাটি দেওয়া হয় সেটি হলো ‘লিঙ্গুয়েস্টিক ফিলোসফি’র সবচেয়ে প্রখর ব্যক্তিদের একজন তিনি। তিনি এমন এক দর্শনের নির্দেশনাকারী যেখানে দর্শন ভাষা ও যুক্তি ছাড়িয়ে যায় না। ভাষার সীমানা ও যুক্তির সীমানা যতদূর তত দূর দর্শন। সক্রেটিস-প্লেটো শুরু করেছিলেন সংলাপে, পরে অনেকেই দর্শনকে নিয়ে গেছেন বচনে বা প্রবচনে। যেমন নিৎসে, যেমন হ্বিটগেনস্টাইনও। তবে ছকে ফেলে দেওয়ার লোক কি তিনি? তিনি তো উড়ালপঙ্খি।

বাংলাদেশে হ্বিটগেনস্টাইনকে প্রথম পাই ২০০০ সালে, মঈন চৌধুরীর লেখা ‘হ্বিটগেনেস্টাইনের দর্শন: ভাষা, চিন্তা, বিশ্ব ও বাস্তবতার স্বরূপ’ নামের একেবারে ছোট্ট একটি বইতে। বইটি মাত্র ২৪ পৃষ্ঠার। প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। মঈন চৌধুরী একেবারেই একটি উপক্রমণিকামূলক কাজ করেছিলেন, মানে ‘ইন্ট্রোডিউসিং হ্বিটগেনস্টাইন’। এতে একেবারে তার সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু ধারণা তিনি হাজির করেছিলেন, তবে বইটির মূল অংশজুড়ে ছিল ‘ট্রাকটেটাস’ থেকে অনুবাদ। বিচ্ছিন্নভাবে করা ওই অনুবাদঅংশটি পড়ে যেটুকু বোঝা গিয়েছিল, তাতে মনে হয়েছিল বস্তু, বাস্তবতা, জগৎ ভাষায় আসলে কতটুকু ধারণ করা যায়। আর সেজন্য যুক্তিকাঠামো কতটুকু কার্যকর হতে পারে। এছাড়া ভাষার সীমা, চিত্রের ভূমিকা ও ভাষার স্ফটিকীকরণ, সবমিলিয়ে স্পষ্টকরণ।

‘ট্রাকটেটাসে’র নানান মন্তব্যসমূহ থেকে নানান সময় চমকে চমকে ওঠা আর ভাবা সাহিত্যের ক্ষেত্রে হ্বিটগেনস্টাইন আসলে কিভাবে কাজে লাগে, সবচেয়ে বড় কথা উপন্যাস লিখতে। ‘বিশ্বই সব, এই হচ্ছে ঘটনা।’ বা বিশ্ব হলো সত্য ঘটনার সমষ্টি, বস্তুর সমষ্টি নয়।’—এ পর্যন্ত মগজ সহজভাবে নিতে পারে। ‘মগজে’র সঙ্গে ‘সহজে’র একটা সম্পর্ক আছে, মগজ কঠিন বিষয়কে সহজ করে নিতে পারে যদি মগজের সেই সক্ষমতা থাকে; কিন্তু দ্রুতই বুঝে নিতে হয় এই সহজ সূত্রে হ্বিটগেনস্টাইন টান দিলেন অনেক গভীরে। এতই গভীরে যে তা আমার মতো মানুষের জন্য অতল হয়ে ওঠে।

এর ভেতরে তার দিকে আরো আগ্রহ জাগে। পুরোনো বইয়ের দোকানে ‘দ্য ব্লু অ্যান্ড দ্যা ব্রাউন বুক’ পাই; ২০০৬ সাল তখন। এরপর বাংলা একাডেমি থেকে পাওয়া যায়, আফজালুল বাসারের অনুবাদে ‘ট্রাকটেটাস’। এটি ২০০১ সালে প্রকাশিত হলেও আমি পেয়েছি ২০১১ সালে। আর টের পাই হ্বিটগেনস্টাইনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে শুরু হয়ে যায় ভাষার খেলা। ভাষার খেলা অবশ্য সেই অ্যারিস্টটলের পোয়েটিক্স থেকে শুরু, পরে জানি, যে-কারণে জেমস জয়েস বারবার অ্যারিস্টটলের পোয়েটিক্স পড়তেন। জীবনকে ভাষার খেলায় নিতে পারার কাজটি যেভাবে দার্শনিক করেন, সেভাবে লেখক করেন না—এটিই হ্বিটগেনস্টাইন থেকে অনুভূত হতে থাকে। এরপর ২০১৩ সালে পেয়ে যাই তার ‘ফিলোসফিক্যাল ইনভেস্টিগেশান’। বিপুল অর্থমূল্যের সেই বই। কিন্তু পেয়ে হাত ছাড়া করার কথা চিন্তাও করিনি। কারণ হ্বিটগেনস্টাইনের মূল যে দুটো বই ‘ট্রাকটেটাস’ ও এই ‘ফিলোসফিক্যাল ইনভেস্টিগেশান’—এছাড়া তো তাঁকে জানা বোঝার উপায় এই বাংলাদেশে বসে তখন আর ছিল না। যদিও পরে জানি, তার আরো কতকগুলি বই আছে—যার প্রায় সবই এখন ইন্টারনেটে পিডিএফে পাওয়া যায়। এছাড়াও তার সম্পর্কে ছোটবড় নানান বইপত্র একে একে জোগাড় হতে থাকে। অক্সফোর্ডের কিছু, আইকন বুকস থেকে প্রকাশিত তাঁকে নিয়ে বই পাই, পাওয়া হয় কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনার তুষার কান্তি সরকার, শেফালী মৈত্র ও ইন্দ্রাণী সান্যাল সম্পাদিত ‘হ্বিটগেনস্টাইন: জগৎ, ভাষা ও চিন্তন’ বইটি। এটি পাওয়ার ভেতর দিয়ে বাংলায় তাঁকে চর্চার একটি কার্যকর বই পাওয়া গেল। উল্লিখিত বইপত্র থেকে তাঁকে যতটুকু ধরতে পারা গেল, তাই বর্তমানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

আমরা জানি, দর্শনচর্চাকারীর লক্ষ্য হলো জগৎটাকে বোঝা, জীবনকে বোঝা। একজন ঔপন্যাসিকের কাজও জগৎ ও এর মানুষকে বোঝা। আরো আগে জেনেছিলাম, দর্শনের কাজ হলো অস্তিত্বের স্বরূপ সন্ধান ও জীবনের সম্ভাবনাগুলি দেখানো। অল্পস্বল্প দর্শন বিষয়ক বইপত্র পড়ে এইটুকুই আমার মগজ নিতে পেরেছিল। এর ভেতরে হ্বিটগেনস্টাইন করেছেন কী, ভাষার কাজের জায়গাটির সন্ধান দিয়ে চিন্তার স্পষ্টতা ও জীবনের সম্ভবনাগুলি দেখাতে লাগলেন আমাকে।

বস্তু ও বাস্তবতা কী করে জীবন গড়ে দেয়, বা মেটেরিয়াল ও রিয়ালের সংযোগ কোথায়—এ নিয়ে মার্কসবাদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে, কিন্তু আমি যদ্দূর বুঝতে পারি হ্বিটগেনস্টাইন তার জগতের ব্যাখ্যার জন্য ভিন্ন খুঁটিতে বোধের দড়িটা বাঁধতে চেয়েছেন। তার খুব চালু উক্তি হলো, যা ট্রাকটেটাসেই আছে, যা দিয়ে তিনি মূলত ‘ট্রাকটেটাসে’র আপাত ইতি টেনেছেন। তিনি ১, ১.২, ১.২৩...৪, ৪.১ এভাবে (এর মন্তব্যগুলি দিয়ে তো ‘ট্রাকটেটাস’ গড়া, যেগুলিকে আমরা আয়াতও বলতে পারি) বিন্যাস করেছেন, এর শেষ আয়াত হলো ৭, যেখানে বলছেন, “আমরা যে বিষয়ে আদৌ বলতে পারি না, অবশ্যই সে বিষয়ে নীরব থাকতে হবে।” কিন্তু এ দিয়েই কি ‘ট্রাকটেটাস’ শেষ হয়ে যায়? কত না বিষয় এসেছে তার এই বইতে। বলাবাহুল্য, জীবদ্দশায় তিনি এই একটি মাত্র বইয়ের প্রকাশনা দেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা যায় পরবর্তীকালে তার প্রকাশিত আরো কিছু বইতে যেমন এর ভেতরে সবচেয়ে বিখ্যাত যেটি যে ‘ফিলোসফিক্যাল ইনভেস্টিগেশান’, তাতে ঠিক ‘ট্রাকটেটাসে’র জায়গায় পড়ে থাকেননি। তবে দর্শনের সাহায্য মানে ভাষার সাহায্যে যে জগৎকে পুরো ব্যাখ্যা করা যায় না—সেটিরও তো আভাস দিয়ে গেছেন তিনি। যে-তিনি ভাষার ভেতরে এত স্পষ্টতার অভিমুখে আমাদের নিয়ে যান, তিনিই বলেন যে, “জগতের মানে জগতের বাইরে বিরাজ করে।” তখন ফের চমকে উঠতে হয়। (একসময় কানে এসেছিল যে বৈজ্ঞানিক আবদুস সালামের চেষ্টা ছিল প্রাণ জগতের বাইরে থেকে এসেছে এটা বের করার, কিন্তু সেটি প্রমাণ করার আগে তিনি গত হলেন।) হ্বিটগেনস্টাইনের কথায় তাই ধাক্কা লাগে। প্রাণ তো প্রাণ, এর তো একটা বস্তুগত দিক আছে; কিন্তু জগতের ‘মানে’ জগতের বাইরে বিরাজ করে—এটা একটা বিরাট গোলকধাঁধায় আমাদের ফেলে দেয় না কি? তাহলে ভাষা দিয়ে জগতের আর কতটুকু ধরা যাবে, যেখানে মানেটাই জগতের বাইরে? আর জীবন? আর মানুষকে, যে মানুষকে নিয়ে লেখকের কাজ, একজন গল্পকার ও ঔপন্যাসিকের কাজ? এখানে থমকে যেতে হয়, তাহলে মনে হয় জীবনের ক্ষেত্রে জীবিকার ক্ষেত্রে হ্বিটগেনস্টাইন যেমন এক মুক্ত স্বাধীন ছিলেন, কোথাও আটকে পড়তে চাইতেন না, সেরকম করে তিনি তার ভাবনাকে মুক্ত করে দিলেন, তার ভাবনাকে বেঁধে দিতে চাইলেন না? কারণ তিনি দর্শনকে (দেকার্তীয় ও তার সমকালের চল অনুযায়ী যা অনেক দিন রাজত্ব করেছিল দর্শনের জগতে) ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা মুক্ত করেছিলেন, ‘আমি’-র প্রাধান্যহীন করে কান্ট ও হেগেলের অসমাপ্ত কাজকে সম্পূর্ণতা দিলেন বলে উল্লেখ করা হয়, সেই তিনিই তো একটি বস্তু ও বাস্তবতা, যুক্তি, চিন্তা পেরিয়ে জগৎকে আমাদের সামনে রেখে গেছেন আরো অনুসন্ধানের জন্য। বিষয়টি যেন এমন, আমার দ্বারা এটুকু করার ছিল, বাকিটুকু তোমরা তোমাদের মতো করে করে নিও, তাই কি?

আরো প্রশ্ন তো হাজির হয়। আসলে প্রাচীন কাল ছিল প্রশ্নহীন বিশ্বাসের, আধুনিক কাল হলো প্রশ্ন ও উত্তরের, আর উত্তরাধুনিককাল হলো প্রশ্নই হয়ে ওঠে প্রশ্নের জবাব—এমন একটা জায়গায় আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরা যারা অবস্থান করছি, সেখানে হ্বিটগেনস্টাইন তো কিছু বিষয় আমাদের কাছে হাজির করেছেন। বা উস্কে দিয়েছেন এমন কিছু যেখানে তাঁকে চর্চার যৌক্তিকতা তৈরি হয়। আমরা যেমন ফার্দিনান্দ দ্যা স্যোসুরের ক্ষেত্রে জানি তিনি শব্দকে তার পরিপ্রেক্ষিত থেকে বুঝে নেওয়ার জন্য বলেছেন, ঠিক তেমন হ্বিটগেনস্টাইন বলেছেন কোনো কিছুকে বুঝতে হলে ‘যাপনের প্রেক্ষাপটে’ বুঝতে হবে। তিনি সহজ একটি দিক হাজির করেছিলেন এভাবে যে, যদি সিংহ কথা বলতে পারত তাহলে কি আমরা তার ভাষা বুঝতে পারতাম? সিংহের ভাষা বুঝতে হবে সিংহের যাপনের পরিপ্রেক্ষিতে। এখানে এসে ফের মনে হলো হ্বিটগেনস্টাইন তো তাহলে যে কথাগুলি আসলে জগৎকে বোঝার মূল কথা সেই কথাগুলিই নিজের মতো করে বলে গিয়েছেন। ফলে তার সঙ্গে অনেকের তফাত থাকলেও মিলও বিপুল। জগৎ, চিন্তা ও ভাষা-র পরম্পরায় কোনটা কোনটাকে মেনে চলবে খেলাটা কেবল তিনি যেভাবে যা হাজির করেছেন। তাতে আমরা আমাদের মতো টের পাই যে জগৎ থেকে চিন্তা তৈরি হবে, তারপর চিন্তা থেকে ভাষা? নাকি উল্টোটা ভাষা তৈরি হলে তবে চিন্তা আর চিন্তা তৈরি হলে পরে জগৎকে বোঝা যায়। আমরা শিশুর ভাষা দিয়ে তো বিষয়টি দেখে নিতে পারি। তার ভাষা শেখা থেকে তার করা নানান প্রশ্নের ভিত্তিতে আমরা জগতের আরেকটি চেহারা পাই। একটি শিশু বা প্রতিটি শিশু তার মতো করে তার আশপাশকে চিনতে চেষ্টা করে, তার চিন্তা শক্তি যতটুকু সেসময় সে ধারণ করে। যদিও হ্বিটগেনস্টাইন দেখান তিনটিই সংযুক্ত।

আমরা জানি, হ্বিটগেনস্টাইন ‘মন’ নিয়েও গভীরভাবে ভেবেছেন। ফ্রয়েড ও তিনি প্রায় সমসাময়িক, আর দুজনেই অস্ট্রিয়ার মানুষ। ফ্রয়েড সাইকোঅ্যানালিসিস দিয়ে যেভাবে মানুষকে বুঝতে চেয়েছেন, হ্বিটগেনস্টাইন সেখানে তার ভাষা-দর্শন দিয়ে জগৎ-জীবন বোঝার জন্য বস্তু ও বাস্তবতার বিন্যাসকে লক্ষ্য করতেই তো বললেন। দুজনের তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যায়, যে হ্বিটগেনস্টাইন আমাদের উপলব্ধি করান যে, ভাষা, বোঝাপড়া ও জানা বা জ্ঞান এক অতল গহ্বরের ওপরে পাতা পাতলা জাল ছাড়া আর কিছুই না। সেই জালটি সরিয়ে নিলে আমরা কোন যে অতলে তলিয়ে যেতে পারি—ফলে ভাষা, বোঝাপড়া ও জানার সীমানা আমাদের নির্ধারণ করে নিতে হয়। নইলে সমূহ সর্বনাশ ঘটে যেতে পারে।

একটি মানুষের বেঁচে থাকাকে, তার আবেগ-অনুভূতি, তার মমতা-নির্মমতাকে বোঝার ক্ষেত্রে এভাবে হ্বিটগেনস্টাইন আমাদের সহায়তা করেন বোধ করি। সেদিক থেকে ভাষার খেলা মানে জীবনের খেলা। কথার পেছনে যে মানুষ লুকিয়ে থাকে, লুকিয়ে থাকে তার অতল বা নির্জ্ঞান, সেদিকেও নিয়ে যান হ্বিটগেনস্টাইন। জীবন থেকে বিজ্ঞানে, বিজ্ঞান থেকে অভিজ্ঞতায়, বিশ্লেষণ, প্রয়োগ, ভাষা ও চিন্তার সীমা সসীম ও অসীম—কত দিকে ঘুরিয়ে আনেন তিনি। ‘ট্রাকটেটাস’ ও ‘ফিলোসফিক্যাল ইনভেস্টিগেশান’ বই দুটোকে ধারাবাহিক পড়ায় যেমন এক ধরনের পাঠ, তেমন হলো, এর নির্ঘণ্টে গিয়ে নানান বিষয় সম্পর্কে কোথায় কী বলেছেন, সেভাবেও আবার পড়া যায়, মানে জীবন, জীবিকা, অভিজ্ঞতা, দৈনন্দিন ভাষা ব্যবহার, সত্য, বিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব ইত্যাদি কত কত বিষয়ই না আছে।

ফলে হ্বিটগেনস্টাইনের কাছে যাওয়া ও তাঁকে চর্চা করার মানে এক ভ্রাম্যমাণ মন ও মস্তিস্কের সন্ধান পাওয়া। কারণ তাঁকেও তো বুঝতে হবে তার যাপনের পরিপ্রেক্ষিতে, যেখান থেকে তিনি তার পথনির্দেশক গটলব ফ্রেগে ও শিক্ষক বার্ট্রান্ড রাসেলকে পেরিয়ে হয়ে উঠলেন এক ও অনন্য হ্বিটগেনস্টাইন।

ইতিহাসবেত্তা রূপ কুমার বর্মনের বীক্ষণে দলিত, তপশিলি, নিম্নশ্রেণির ইতিহাস



সাৰ্থক লাহা
ইতিহাসবেত্তা রূপ কুমার বর্মন

ইতিহাসবেত্তা রূপ কুমার বর্মন

  • Font increase
  • Font Decrease

ইতিহাস চর্চা দীর্ঘকাল ধরে মূলত রাজনীতি, রাজনৈতিক চিন্তা, রাজবংশ, রাজা-রাজত্বের মধ্যে সীমায়িত ছিল। আবার একইসাথে ইতিহাসের সংজ্ঞায়নে কেউ কেউ বলেছেন মহান মহান মানুষের জীবন অবতারনা বা আলোচনার নামই হল ইতিহাস। থমাস কার্লাইলের ভাষায়, 'ইতিহাস হল অসংখ্য মহান মানুষের আত্মজীবনির সারবস্তু’।

মূলত একটা সময় ইতিহাস মানে নেপোলিয়ান, আলেকজান্ডার, অশোক, সমুদ্রগুপ্ত, আকবর প্রমুখ মানুষদের জীবনীগাঁথা ও তাঁদের সময়কালকেই বোঝা হতো। কিন্তু ইতিহাসের যে অন্য অনুষঙ্গ আছে বা ইতিহাস যে সমস্ত শ্রেণির মানুষের ইতিবৃত্ত সেটা বুঝতে বেশ কয়েক শতাব্দী অপেক্ষা করতে হয়।

মূলত গত শতাব্দীর ৮০’র দশক থেকে নিম্নবর্গের কথা ঐতিহাসিক কলমে উন্মোচিত হয়। তা সত্ত্বেও প্রশ্ন উঠেছে ‘নিম্নবর্গের মানুষ কি সত্যিই কথা বলতে পারে?’- এই প্রশ্নের উত্তরে সজ্জিত উপাত্ত নিয়ে ইতিহাসে যে দলিত শ্রেনি, তপশিলি জাতির উচ্চারনও সমানভাবে প্রতীয়মান, সেই জায়গাটি বাংলা ভাষায় ইতিহাসচর্চার আলোকে যিনি সম্মুখে আনেন তিনি হলেন অন্যতম ইতিহাসবেত্তা রূপ কুমার বর্মন। যার কলমে বিভিন্ন গ্রন্থে দলিত শ্রেনি, তপশিলি শ্রেণির তথা নিম্নশ্রেনির ইতিহাস, আত্মকথন, স্বকীয় রচনাগুলি পরিস্ফুটিত হয়েছে। লেখকের ‘সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ জাতপাত জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ’ গ্রন্থটিও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়।

ইতিহাসচর্চা বস্তুনিষ্ঠতা, বিজ্ঞানবাদিতা, নিরপেক্ষতা সহ নানা নতুন অনুষঙ্গ নিয়ে ক্রমশই অগ্রবর্তী হচ্ছে। ইতিহাসবেত্তাদের কলমে ক্রমশই পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, মহামারি, বিজ্ঞান, ক্রীড়াসহ নানাবিধ চর্চা বিশ শতকে নানা আবর্ত আলোচিত হতে দেখা যায়।

মুখ্যত বাংলা ভাষায় জাতপাত, জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ বিষয়ক আলোচনার আবর্ত দীর্ঘকাল যাবৎ ইতিহাসচর্চাকারীদের কলমে অপাংক্তেয় অবস্থাতেই থেকে গিয়েছিল। ঔপনিবেশিক কালপর্বে এবং সাম্প্রতিকে কিছুক্ষেত্রে জাতিচেতনা, দলিত আন্দোলন নিয়ে লেখালেখি হলেও মূলত তা ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যেই সীমায়িত। কাজেই কলকাতার গাঙচিল প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত রূপ কুমার বর্মনের ‘সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ জাতপাত জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ’ এই গ্রন্থটি জাতপাতের ও আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিকনির্দেশক গ্রন্থ তা বলাই যায়।

লেখক মূলত সমকালীন পশ্চিমবঙ্গকে এক্ষেত্রে অনুধাবন করেছেন। অসংখ্য সাক্ষাৎকার ও ক্ষেত্রসমীক্ষা সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযোজন এবং অসংখ্য প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্তিকরনের প্রয়াসের ফসল এই গবেষণা গ্রন্থটি। শিরোনামেই ধরা পড়েছে গ্রন্থের মূল নির্যাস। যার মধ্যে সমকালীন পশ্চিমবঙ্গের জাতপাত, জাতি-হিংসা, তপশিলিদের সামাজিক স্তরীকরণে কী অবস্থা, অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা, নারীদের বৈষম্যকরনের পাশাপাশি ডান-বাম রাজনীতির আবহে এই তপশিলি জাতির চিত্রপটের স্বরূপ অনুধাবন, জাতিকেন্দ্রিক রচনা, কিছু ব্যক্তিত্বের বর্ননের সাথেও সরকারী নীতি, বিভাগ স্থাপন, প্রতিস্থান নির্মান ও নামকরন প্রভৃতি নানাবিধ বিষয়ের সংযুক্তকরুন বইটিকে এক অনন্য মাত্রা দান করেছে।

রুপ কুমার বর্মনের গ্রন্থটিতে ভূমিকা, অধ্যায়ীকরন, উপসংহার, সুদীর্ঘ গ্রন্থ তালিকা সহ বিভিন্ন সাক্ষাৎকারের সন্নিবিষ্টকরন পরিলক্ষিত করতে পারি। গ্রন্থ তালিকায় প্রাথমিক তথ্যাদি সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক রচনা, অফিসিয়াল ও লেখ্যাগারের তথ্যাদি ও বৈদেশিক গ্রন্থের প্রয়োগ গ্রন্থটির প্রামাণ্যতাকে নির্দেশ করে। অতিরিক্ত তথ্যাদির এই ব্যবহার গ্রন্থটিকে আরো প্রাঞ্জল করেছে।

গ্রন্থটির ভূমিকাংশে জাতপাত এবং জাতি, বর্ণবাদের উৎপত্তির ব্যাখ্যা থেকে শুরু করে প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগের বর্ণবাদের বিকাশ এবং ক্রমশই যে জাতপাতের ভারতীয় সমাজে নিম্নবর্ণীয়দের প্রান্তিকায়িত করার আভাস তার ব্যাখ্যা দেখতে পায়। লেখক ইসলামিক এবং ঔপনিবেশিক সময়কালেও গ্রন্থগুলি অবলোকন করে ভারতীয় সমাজের নিম্নবর্ণীয়দের কি অবস্থান, তারা কিভাবে জাতি বৈষম্যের শিকার সেই ব্যাখ্যা করেছেন এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন আইন এবং প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা মধ্য দিয়ে নিম্নবর্ণীয়দের অবস্থা যে ক্রমিক প্রভু-দাস সম্পর্কের (patron-client Relationship) বন্ধনে নিমজ্জিত হয়েছে। এবং প্রান্তিকিকরন হয়ে যাওয়ার যে ব্যাখ্যা সেটা আমরা দেখতে পাই এবং স্বাধীনতার সময়কালে ভারতের নিম্ন বর্ণের জাতি জাতি হিংসা অবসানের যে প্রচেষ্টা এবং সেই প্রচেষ্টায় তপশিলি জাতি এবং জনজাতীয় অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতির স্বরূপ কতটা বিকাশমূলক হয়েছে তার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এবং খুব সুস্পষ্টভাবে ভারতীয় প্রেক্ষিতে পরিবর্তনের অনুধাবন করার চেষ্টা করেছেন এবং সমকালীন পশ্চিমবঙ্গেও জাতপাতের যে ধারাবাহিকতা সেটির আলোচনা করেছেন।

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে তপশিলি জাতি ক্রমিক কিভাবে মৌখিক তথা বাহ্যিক এবং মানসিক জাতপাতের শিকার হচ্ছে সেই নব ব্যাখ্যাও এক্ষেত্রে সুস্পষ্ট।

গ্রন্থটির বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে এই জাতপাত, জাতি-রাজনীতি, জাতি-হিংসা, জাতি-বৈষম্য এই বিষয়গুলি পরিস্ফুটিত হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে পশ্চিমবঙ্গে জাতপাত, জাতি হিংসা এবং সামাজিক সংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক স্তরীকরণের ক্ষেত্রে জাতপাতের যে গুরুত্বপূর্ণ সেই ব্যাখ্যা যেমন আলোচিত হয়েছে তেমনি অন্য মেরুতে পশ্চিমবঙ্গের শহরাঞ্চলে চলতে থাকা বাচিক, মানসিক, ব্যবহারগত জাতপাতের যে অন্ধকার দিক সেটি লেখক তুলে ধরেছেন।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে স্বাধীনতার পর্বে পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তনকালীন রাজনীতি জাতপাত বা জাতি রাজনীতি কে কতটা ত্বরান্বিত করেছে এবং তপশিলি জাতির বিকাশ তথা উন্নয়ন নাকি তপশিলিরা রাজনীতির শিকার হয়েছে সেই ব্যাখ্যায় আমরা মূলত সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত পর্যবেক্ষিত হতে দেখি।

গ্রন্থটির তৃতীয় অধ্যায় মূলত বাংলার নিম্নবর্ণীয়দের নিজস্ব স্বকীয় লেখনীর মাধ্যমে তাদের অবস্থা নির্ণয়ের বা নির্মাণের আলোকে উঠে এসেছে। খুব সুন্দর ভাবেই লেখক বিভিন্ন জীবনী সাহিত্য, সৃজনধর্মী সাহিত্য অবলোকন এবং ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গে নিম্নবর্ণের উত্থানের প্রশ্নটিই উত্থাপন করেছেন। গ্রন্থটির চতুর্থ অধ্যায়ে বাংলার তপশিলি সমাজের থেকে রাজনীতিতে প্রতিনিধিত্বকরণ এবং বেশ কিছু নিম্নবর্ণীয় মানুষের বিস্মৃত স্মৃতির নতুন করে চর্চা এবং চর্যার জগতে আনার আলোকে রচিত হয়েছে।

জাতপাত, জাতি-বৈষম্য, জাতি রাজনীতি এই শব্দবন্ধগুলি ভারতীয় সমাজের আদি থেকে বর্তমান পর্যন্ত সমানভাবেই বহমান হয়ে রয়েছে। সমাজে অন্যকে দেখার মানসিকতা, প্রভু-দাসত্বের সম্পর্ক উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণের রূপক বর্তমান বিশ্বায়ন এবং প্রযুক্তির যুগেও সমভাবেই জাজ্বল্যমান সেটি পরিস্ফুটিত হয়েছে। গ্রন্থটি অনুধাবন করলে আমরা এই বিষয়টির সুস্পষ্ট বর্ণনা ফুটে উঠতে দেখতে পারি। কাজেই শুধুমাত্র ইতিহাস চর্চার আলোকে বা ইতিহাস পাঠকদের কাছেই নয়, সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে এই বইটির এক অন্যকথনের গল্প বলে যে গল্প জাতপাত, জাতি হিংসা, বৈষম্য প্রভৃতি বিষয়ের সংযোজনে জাতপাতের ইতিহাসে এই গ্রন্থটির গুরুত্বকে বর্নিত করে।

অনেক প্রশ্নের জবাব রূপ কুমার বর্মনের সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ জাতপাত জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ’ গ্রন্থটি সজ্জা, জাতি ইতিহাসের নানা আঙ্গিকে বর্ননা, নির্ভরযোগ্য গ্রন্থতালিকা এবং সার্বিক-সুস্পষ্ট বর্ননা গ্রন্থটিকে অনন্য মাত্রা দান করে। হাল আমলে দাঁড়িয়ে জাতপাতের বর্ননা, আঞ্চলিক প্রেক্ষিত, জাতি-হিংসার নানা দিকের উন্মোচন এবং বিভিন্ন তথ্যাদির প্রয়োগে সার্বিকভাবে সমকালীন বাংলার জাতপাতের ইতিহাস নির্মানের ক্ষেত্রে এক দিকনির্দেশক পাঠ হয়ে উঠেছে রূপ কুমার বর্মনের ‘সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ জাতপাত জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ’ গ্রন্থটি।

গ্ৰন্থ আলোচনা
সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ: জাতপাত, জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ
রূপ কুমার বর্মণ
গাঙচিল প্রকাশনী, কলকাতা, ২০২২, দাম- ৪০০ টাকা
.....

সাৰ্থক লাহা, গবেষক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

;

নজরুল পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর শেষ ইচ্ছা



সোমঋতা মল্লিক
নজরুল পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর শেষ ইচ্ছা

নজরুল পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর শেষ ইচ্ছা

  • Font increase
  • Font Decrease

“তোমার মহাবিশ্বে কিছু হারায় না তো কভু।

আমরা অবোধ, অন্ধ মায়ায় তাই তো কাঁদি প্রভু।।"

১৪ মে, সকাল। কলকাতার রবীন্দ্র সদনে সমবেত কণ্ঠে ধ্বনিত হল এই নজরুল সঙ্গীত। বহুল প্রচলিত গানটি এই বিশেষ দিনে আমার কাছে ধরা দেয় অন্যরূপে। সমুখে শায়িত রয়েছেন সদ্য প্রয়াত কাজী নজরুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ শ্রীমতী কল্যাণী কাজী। নিথর দেহে পুষ্পের অঞ্জলি। তাঁকে ঘিরে তাঁর আপনজনদের এই মর্মস্পর্শী উচ্চারণ মনকে ব্যাকুল করে।

তাঁর সঙ্গে আমার দীর্ঘ ১২-১৩ বছরের আত্মিক সম্পর্ক। ছায়ানট (কলকাতা)-এর হাত ধরেই যদিও এই সম্পর্ক শুরু হয়, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন আমাদের পরিবারের একজন। তাঁর কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি তা অবর্ণনীয়। আমার জীবনে এই প্রথম নজরুল জন্মজয়ন্তী যেদিন কল্যাণী কাজী আর সশরীরে আমাদের মধ্যে নেই। একথা ভাবলেই চোখ ভরে ওঠে জলে। বছরের এই বিশেষ দিনগুলিতে তাঁর সাথে দেখা হলে মনে হত, কি অসীম ভালোবাসায় তিনি আমাদের প্রাণের কবিকে অন্তরে ধারণ করেন। আর পাঁচজন শিশুর মতো তিনিও নজরুলকে ভালোবেসেছেন শৈশবেই।


'অন্তরঙ্গ অনিরুদ্ধ' বইয়ের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, "ছেলেবেলা থেকেই আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। 'প্রভাতী', ‘লিচুচোর’ থেকে শুরু করে ‘বিদ্রোহী', 'আমার কৈফিয়ৎ’ ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’, ‘ইন্দ্রপতন’ প্রভৃতি কবিতা বিভিন্ন বয়সে মনে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। ছবিতে তাঁর ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল আর বড় বড় ভাবালু চোখ দুটোর দিকে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতাম। খুব কাছ থেকে তাঁকে দেখার ইচ্ছা হত। মনে পড়ছে, একবার গৃহশিক্ষককে অনুরোধ করেছিলাম তাঁকে দেখতে নিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু কেন জানি না শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়ে ওঠেনি। নিয়তি সেদিন অলক্ষ্যে নিশ্চয় হেসেছিলেন। নয়ত যে মানুষটাকে শুধু মাত্র চোখের দেখা দেখবার জন্য সেদিন ব্যাকুল হয়েছিলাম - পরবর্তী জীবনে তাঁরই পরিবারের একজন হয়ে তাঁর কাছে থেকে তাঁকে সেবা করার সুযোগ পেলাম কি করে? একেই বোধহয় বলে ‘বিধিলিপি’!

এই বিরল ব্যক্তিত্বের খুব কাছের মানুষ হয়েও, দুর্ভাগ্যবশত আমি সুস্থ অবস্থায় তাঁকে পাইনি। আমি এ বাড়ীর ছোট বউ হয়ে আসার বেশ কয়েক বছর আগেই বিস্মৃতি তাঁর চেতনার ওপর কালো পর্দা টেনে দিয়েছিল। তবুও আমাদের সবার প্রিয় ‘মামনি’ প্রমীলার স্নেহচ্ছায়ায় থেকে, তাঁর যতটুকু সেবা করার সুযোগ পেয়েছি তাতেই আমি ধন্য।"


এভাবেই কাজী অনিরুদ্ধর সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হওয়ার সুবাদে নজরুল পরিবারের একজন হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বহু অন্তরঙ্গ আড্ডায় তিনি পরিবারিক স্মৃতিচারণা করতেন।

প্রথমবার তাঁর শ্বশুরবাবা কে সামনে থেকে দেখার অনুভূতির বর্ণনা যখনই দিতেন, মনে হত আমরাও সেই সময়ে উপস্থিত হয়েছি। তাঁর কথা বলার ভঙ্গি ছিল অসাধারণ। অতি সামান্য ঘটনাও তাঁর বাচনভঙ্গিতে হয়ে উঠত অসাধারণ।

তাঁকে ঘিরেই জমে উঠত আড্ডা। কখনও কথা, আবার কখনও গেয়ে উঠতেন একের পর এক নজরুল সঙ্গীত। নিয়মিত দূরদর্শনে নজর রাখতেন কোন্ শিল্পী কিভাবে নজরুলের গান গাইছেন। বিভিন্ন চ্যানেলের প্রভাতী অনুষ্ঠান দেখতে খুবই ভালোবাসতেন। পরিচিত শিল্পী হলে অনুষ্ঠানের পরেই চলভাষের মাধ্যমে অভিনন্দন জানাতেন। এভাবেই তিনি ভালোবাসায় আবদ্ধ করে রাখতেন সকলকে।

নজরুল চর্চার সঙ্গে যুক্ত যে কোন ব্যক্তি/সংগঠনকে তিনি আপন করে নিতেন। তাঁর পূর্ণদাস রোডের বাড়িতে ছিল নজরুল প্রেমীদের নিত্য যাতায়াত। নজরুল বিষয়ক আলোচনায় তাঁর ক্লান্তি ছিলনা। যে কোন সময়, যে কোন পরিস্থিতে তিনি পাশে থেকেছেন। ২০১৭ সালে কলকাতার বুকে প্রথম নজরুল মেলার আয়োজন করে ছায়ানট (কলকাতা), উদ্বোধক কল্যাণী কাজী। শিশুদের জন্য নজরুলের লেখা ২৫টি ছড়া ও কবিতা নিয়ে ২০২১ সালে ছায়ানটের উদ্যোগে কল্যাণী কাজীর কণ্ঠে ‘শিশু কিশোরদের নজরুল’ শিরোনামে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। পরম যত্নে তাঁর হাতে গড়া দল 'বিষের বাঁশী' ছায়ানট (কলকাতা) - এর বহু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে।


নজরুল সঙ্গীতের শিক্ষা তিনি কিভাবে পেয়েছিলেন সেই বিষয়ে কল্যাণী কাজী স্মৃতিচারণা করেছেন, "সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিল্পী শ্রী ধীরেন্দ্র চন্দ্র মিত্রের কাছে গান শেখার সুযোগ পাই। কিন্তু আজ আমার মনে হচ্ছে আমি সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারিনি। বাংলা গানের সাথে সাথে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেও যাতে ব্যুৎপত্তি লাভ করতে পারি,  তিনি তার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। কিন্তু আমার তখন চটুল গানের দিকেই ঝোঁক বেশি, তাই রাগ সঙ্গীতের জটিল পথে চলতে মন চাইত না। যতদিন যাচ্ছে ততই বুঝতে পারছি গলাকে স্ববশে রেখে গান গাইতে হলে, বিশেষ করে নজরুল গীতিকে প্রাণবন্ত করতে রাগ সঙ্গীত চর্চা খুবই দরকার।

আজ সঙ্গীতের শিক্ষকতা করতে গিয়ে নজরুল গীতির সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের সব রকমের বাংলা গানের চাহিদা যে মেটাতে পারি, তারজন্য আমি আমার গুরু শ্রদ্ধেয় শ্রী ধীরেন্দ্র চন্দ্র মিত্রের কাছে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ। সেদিন যদি তিনি জোর করে খেয়াল, ঠুংরী, দাদরা, গীত, গজল এর সাথে সাথে কীর্তন, পুরাতনী, রাগপ্রধান প্রভৃতি গান না শেখাতেন, তবে গানের অনেক ধারাই আমার অজানা থেকে যেত। কাজী নজরুলের গানের সঙ্গে প্রকৃত পক্ষে তিনিই আমায় প্রথম পরিচয় করান। প্রথম যে নজরুল গীতিটা শিখিয়েছিলেন সেটা হল হাম্বির রাগে নিবদ্ধ 'আজো কাঁদে কাননে কোয়েলিয়া'। এরপর তিনি শেখালেন 'ভোরের ঝিলের জলে', 'প্রথম প্রদীপ জ্বালো', 'শাওন আসিল ফিরে', 'ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি' প্রভৃতি নজরুলের রাগভিত্তিক গানগুলো।


আমার স্বামী অনিরুদ্ধ যখন নজরুল গীতির স্বরলিপির বই 'রাগবিচিত্রা'-র প্রস্তুতি নেন, তখন আমিই হাম্বির রাগের গানটির স্বরলিপির কাজে সাহায্য করেছিলাম। তিনি গানটা জানতেন না। অপ্রচলিত গানটা পরে খুবই জনপ্রিয় হয়েছে।" 

তিনি অসুস্থ ছিলেন বেশ কয়েকমাস, কিন্তু তাঁর জীবনীশক্তি ছিল প্রবল। জীবনের বহু দুঃসময়কে তিনি জয় করেছিলেন অবলীলায়। ১২ মে ভোরে নজরুল অনুরাগীদের চোখের জলে ভাসিয়ে অনন্তলোকে পাড়ি দিলেন তিনি।

তাঁর কন্যা অনিন্দিতা কাজী বলেছেন মায়ের শেষ ইচ্ছের কথা। শোকবার্তায় অনিন্দিতা লিখেছেন - "মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল তাঁর নিজের বাড়িতে (৭৪ এইচ, পূর্ণদাস রোড, ট্রায়াঙ্গুলার পার্ক) দাদু ও ঠাকুমার স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটা আর্কাইভ হবে।"

আমরা সকলেই চাই তাঁর শেষ ইচ্ছে পূরণ হোক।

সোমঋতা মল্লিক, নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ও গবেষক। সভাপতি, ছায়ানট (কলকাতা)।

;

বাজারে এলো আতিফ ওয়াফিকের বই ‘এটিকেট এনসাইক্লোপিডিয়া’ 



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এইচ এম আতিফ ওয়াফিক, যোগাযোগের ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ, তার সর্বশেষ বই "এটিকেট এনসাইক্লোপিডিয়া" বাজারে এসেছে। এই বইটি আজকের পাঠকদের দ্রুত-গতির বিশ্বে সঠিক আচরণের শিল্প সম্পর্কে একটি সমসাময়িক দৃষ্টিভঙ্গি সরবরাহ করবে বলে লেখক মনে করেন।

একটি সমাজে যেখানে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, "এটিকেট এনসাইক্লোপিডিয়া" সেই ব্যক্তিদের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ হিসাবে কাজ করবে বলে লেখক মনে করেন। বিশেষ করে আজকের স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রী দের এই বই টি অনেক কাজে আসবে। এই বইটি পাঠকদের আধুনিক আচরণের সূক্ষ্মতা আয়ত্ত করতে সাহায্য করার জন্য ব্যবহারিক পরামর্শ এবং কার্যকরী টিপস প্রদান করে৷

"এটিকেট এনসাইক্লোপিডিয়া" যত্ন সহকারে গবেষণা করা হয়েছে, পাঠকদের সমসাময়িক শিষ্টাচারের নিয়ম সম্পর্কে সর্বশেষ অন্তর্দৃষ্টি এবং নির্দেশিকা প্রদান করে। এর সহজ ভাষা এবং উপস্থাপন উদাহরণ সহ, সমস্ত পটভূমির পাঠকদের জন্য উপযুক্ত, তারা তাদের সামাজিক দক্ষতা পোলিশ করতে চাইছে বা তাদের পেশাদার চিত্র উন্নত করতে চাইছে।

এইচ এম আতিফ ওয়াফিক একজন অন্বেষিত যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, তার আকর্ষক কথা বলার ব্যস্ততা এবং অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ পরামর্শের জন্য পরিচিত। বর্তমানে তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স এ ।

রিডিং ক্যাফে, বনানীতে বইটি উন্মোচনের সময়, জনাব ববি হাজ্জাজ (একজন অক্সফোর্ড স্কলার), জনাব সোলায়মান শুকন (একজন বাংলাদেশী যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ), জনাব শাহরিয়ার নাফীস (সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার), জনাব হাসান মাহমুদ (প্রতিষ্ঠাতা, স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ার্স), জনাব বেনজির আবরার (প্রতিষ্ঠাতা, এক্সিলেন্স বাংলাদেশ), মিসেস আফরুজা তানজি (রাষ্ট্রদূত, ওয়ান ইয়াং ওয়ার্ল্ড), মিসেস শারমিন কবির (প্রতিষ্ঠাতা, রিতু), মিসেস ইশরাত নাহের ইরিনা (প্রতিষ্ঠাতা, প্রেসক্রিপশন বাংলাদেশ), জনাব ফাহিন আরাফিন (ক্রিয়েটিভ হেড, স্বপ্ন), জনাব সালেহীন মাহবুব (বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদ), মিসেস ফারহানা শারমিন (ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজিস্ট, রিমার্ক এইচবি), এবং আরও অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী প্রিয় শিক্ষার্থীউপস্থিত ছিলেন।

;

কলকাতা আলীপুর জেল মিউজিয়ামে 'নজরুল কক্ষ'



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কলকাতা আলীপুর জেল মিউজিয়ামে 'নজরুল কক্ষ'

কলকাতা আলীপুর জেল মিউজিয়ামে 'নজরুল কক্ষ'

  • Font increase
  • Font Decrease

আধুনিক বাংলা সাহিত্যে তিনি একক ও অনন্য। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। যার অগ্নিঝরা লেখনি ত্রস্ত করেছে ঔপনিবেশিক শাসকদের। যার বই বার বার বাজেয়াপ্ত হয়েছে। যাকে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে কাটাতে হয়েছে দিনের পর দিন।

নজরুল শতবর্ষ আগে বন্দি ছিলেন কলকাতার আলীপুর সেন্ট্রাল জেলখানায়। নজরুল বিষয়ক সংগঠন ছায়ানট কলকাতা শিল্প, সঙ্গীত, সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা-গবেষণার পাশাপাশি নজরুল স্মৃতিধন্য হেরিটেজ স্থান ও স্থাপনাসমূহ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সক্রিয় রয়েছে। ছায়ানট কলকাতার সভাপতি, বিশিষ্ট শিল্পী, সোমঋতা মল্লিক কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের নজরুলতীর্থগুলো নিজে গিয়ে সেগুলো রক্ষার প্রশাসনিক ও নাগরিক তৎপরতা চালিয়ে ছিলেন। যার ফলে এবছর নজরুল জয়ন্তীতে কলকাতা আলীপুর জেল মিউজিয়ামে স্থাপিত হয়েছে 'নজরুল কক্ষ'।


ছায়ানট কলকাতা সভাপতি সোমঋতা মল্লিক বার্তা২৪.কম'কে জানান, গত ১৪ ডিসেম্বর,২০২২ তারিখে ছায়ানট (কলকাতা) তথ্য সহ WBHIDCO - এর কাছে এই মর্মে আবেদন করে যে, নজরুল স্মৃতি বিজড়িত আলিপুর জেল মিউজিয়ামে কাজী নজরুল ইসলাম যে জায়গায় বন্দি হিসেবে ছিলেন, সেই জায়গাটি চিহ্নিত করা এবং নজরুল মূর্তি স্থাপন করার জন্য।

তিনি বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি,২০২৩ তারিখে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে নজরুলের আগমনের শতবর্ষকে স্মরণ করে ছায়ানট (কলকাতা) এবং আলিপুর মিউজিয়াম যৌথভাবে একটি অনুষ্ঠানও পালন করে।

শনিবার (২৬ মে) আমরা সত্যিই আনন্দিত, আমাদের এই প্রস্তাব তাঁরা বিবেচনা করেছেন এবং আলিপুর মিউজিয়ামে 'নজরুল কক্ষ' তৈরি হয়েছে, জানান সোমঋতা মল্লিক।

;