রণজিৎ দাশের কবিতা



তানিয়া চক্রবর্তী
গ্রাফিক: বার্তা২৪.কম

গ্রাফিক: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রান্তিকতাকে পেরিয়ে কবিতার মুহূর্তের মধ্যে ঢুকে গেলে, হাঁটা শুরু করলে যে সমস্ত আক্রমণ পুরো গ্রাস করে নেয় সেখানে নতজানু হতে হয়, আসলে সচেতন মানুষের মানবিক স্তর অতিক্রম করেই সে আক্রান্ত হয়, সচেতন পরাবর্তের ওপরে যখন সে চলে যায় তার আর ব্যবচ্ছেদ হয় না। ব্যক্তিসাপেক্ষ অনুভূতিকে ধরেই ভীষণভাবে ভালোলাগার কবি রণজিৎ দাশের কবিতা প্রসঙ্গে আসব। কবি রণজিৎ দাশ প্রসঙ্গে শ্রদ্ধাবনত বা বিনীত হওয়ার প্রাকমুহূর্তে যেটা সত্য তা হলো, তিনি আমার কাছে এমন একজন কবি, যার কবিতা বিছানায় শুয়ে শুয়ে পড়তে পড়তে উঠে বসতে হয়! কবিতা এসে বলে আমার ভেতরে ঢোকো, আমি তোমাদের সংলগ্ন যাপনের শিকড় বুনে দিচ্ছি, আরো ভেতরে ঢোকো, পাখির একনেত্র দৃষ্টির মতো কবিতার ভেতর দিয়ে নিজেকে ভক্ষণ করিয়ে নিতে পারি, তাঁর কবিতা আমার কাছে এভাবেই প্রতিভাত হয়।

কবিতা তার আকাঙ্ক্ষায় সেই মনোযোগকে ভেতরে নিয়ে নেয়। সবচেয়ে বেশি তাঁর কবিতার যে অভিব্যক্তি শরীরে, মনে জার্ক দেয় তা হলো দৃঢ়তা, যে চয়ন বিহ্বল করে তোলে সেই যেন বিহ্বলতাকে থাপ্পড় মেরে সোজা তাকাতে সাহায্য করে। অভয়ারণ্যের ঠিক কোর এরিয়া যেখানে নিষেধ ও আকর্ষণ একমাত্রিক সেখানেই যেন সমস্ত ভ্রমণ বিলাসিতা সত্যের মুখে এসে চেতন থেকে অবচেতন সমস্ত অন্ধকারকে নাড়িয়ে দেয়।

কবি বলছেন, “মানুষ দুর্বোধ্য প্রাণী। কখনো সাপের মুখে/ কখনো ব্যাঙের মুখে চুমু খায়; বেহালা বাজায়।/ —কবিতা দুর্বোধ্য হলে তবু সে কেন যে ক্ষেপে যায়!” (মানুষ দুর্বোধ্য প্রাণী, কাব্যগ্রন্থঃ সমুদ্র সংলাপ)

হ্যাঁ এটি সেই সত্যিকারে জার্ক বা ঝাঁকুনি। ঝাঁকুনির আগে ও পরে মনে হতে পারে দর্শন, দ্রষ্টার ভাব ও গতি, অনুকূলে-প্রতিকূলে ক্রিয়াশীলভাবে বদলায় কিন্তু দৃঢ়তার যদি নিজস্ব নাবিক ভঙ্গিমা থাকে তার দিক তার কাঠামোকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। তাৎক্ষণিকের দর্শন সর্বজনীনের মতো সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। একটি জীবন একটি জোর প্রত্যাশা করে—দর্শনও বদলায় কিন্তু জোর প্রান্তিকতাকেও যুগপোযোগীভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

“আমাদের শরীরে প্রতিটি ফুটোয়/ জেগে আছে ঈশ্বরের চোখ/ ভিতরে চক্রান্ত, চাঁদ, নিহত বন্ধুর রক্ত, ক্রিমি, কীট, উলঙ্গ রাক্ষস/ ভিতরে মুখোশ, জুয়া, নাচ, মদ, বেশ্যাদের হাসি/ তিনি দেখছেন, ঠিক যেভাবে বালক তার/ পিতৃঘাতকের সঙ্গে নিজের মায়ের/ অবৈধ সঙ্গমদৃশ্য দেখে” (ঈশ্বরের চোখ, কাব্যগ্রন্থঃ ঈশ্বরের চোখ)

কীর্ণধর্ম থেকে প্রেক্ষকের দৃষ্টি, সমস্ত সমাজ বৈষম্যতে একক ধ্রুবকে বসে আছেন ঈশ্বর অপারগ হয়ে, তেমনি সে নিরুপায় বালক তার মায়ের সঙ্গে পিতৃঘাতকের সঙ্গম দৃশ্য দেখছে—এ এক সহ্যাতীত সহ্যের ইতিহাস, সম্মোহনের বাস্তবতাকে চেপে ধরে ছিবড়ে করা। কবির অনুভব বিন্দুর আতিথেয়তা ধরে সম্মোহনকে অতিক্রম করে, কবি জীবনগ্রাহী হয়ে পাঠকের একান্ত হয়ে ওঠেন। একদিকে জল ফুঁসে ওঠে বলে, সে ভাসিয়ে দিতে চাইলে তাকে রহিত করি, অন্যদিকে জল খরা দিলে তাকে আদর আলিঙ্গনে ডাকি। অতএব জলের কোনো ধর্ম থাকলেও, ব্যবহারকারীর আতিশয্যে তার ধর্ম নিরূপিত হতে থাকে, এখানেও সেই দৃঢ়তার অভিমুখ ধরে ধরে সিঁড়ি বেয়ে উঠি।

পিয়ানো কবিতার প্রথম লাইনে কবি বলছেন—
“তোমার শরীর, আমি জানি,এক গভীর পিয়ানো”
শেষ লাইনে কবি বলছেন
“তোমার শরীর, আমি জানি, এক বিলুপ্ত পিয়ানো”

যেখানে নশ্বরকে বিলীন হতে দেখলেন, জানলেন নশ্বর তবু হাতড়ালেন অত্যাশ্চর্যের জন্য, চমকের জন্য, অথচ নশ্বর—এর স্থিতিস্থাপকতায় দাঁড়িয়ে কবি বললেন, “অন্ধঘড়িনির্মাতার ভাই আমি, তুমি কি তা জানো?” কবি/ দ্রষ্টা/ প্রেক্ষক দেখলেন ভঙ্গুর বাস্তব, ফুটিয়ে তুললেন চিত্রবিচিত্রতার দৃঢ়তায়। কবি আবার ‘ইচ্ছা’ কবিতায় বলছেন রাত্রিদিন চুমু খাব, বুকে জাপটে, মুখ থেকে মুখে/ ভরে দেবো অক্সিজেন, মধু, মদ, সিংহীর কামনা/ আমার কঙ্কালটিকে দুহাতে জড়িয়ে রেখে,/ তুমি থাকবে অনন্ত যৌবনা!

প্রেম এইখানে সর্বকালীন মুহূর্তজয়ী হতে চাইছে অর্থাৎ জীবন তার ইচ্ছা ও মুহূর্তমাফিক এক তাৎক্ষণিকের অভিঘাত সহ্য করে বড় হতে থাকে।

‘সামুদ্রিক পরামর্শ’ কবিতায় কবি বলছেন, “সমুদ্রে যেও না তুমি, যদি না সঙ্গে থাকে/ কোনো শক্ত সমর্থ যুবতী”। উপরিউক্ত একই কবিতায় কবি আবার বলছেন, “সমুদ্রে যেও না তুমি, সঙ্গে নিয়ে/ কোনো শক্ত-সমর্থ যুবতী”। আবার শেষে, “তবুও সমুদ্রে যেও, সঙ্গে নিয়ে একটি শক্ত-সমর্থ যুবতী/ সন্ধ্যাবেলা চাঁদ উঠলে বিনীত প্রস্তাব দিও, পেয়ে যাবে/ চুম্বন, সম্মতি!”

কাউন্টার স্ট্রেনের মতো ক্রিসক্রস খেলছে সময় তাঁর কবিতায় অথচ জীবনের গঠন তাই দাবি করছে এইভাবে ক্রমশ কবিতা এত দৃঢ় হচ্ছে যে সে পাঠকের স্থিতিহীন সময় আয়নার সামনে প্রগাঢ় হয়ে উঠছে, তাকিয়ে দেখছে এই তো আমি, আমিই আমার অর্ন্তযামী! এখানে প্রতি সময়, যাপনের নিয়মাবলী, উপাদান, সারবত্তা, প্রেম ও যা কিছু মুখর ও অনুভূতিশীল তারা সূত্র প্রতিষ্ঠা করে, সমস্ত সূত্রের মতোই সূত্র সূত্রকে ভাঙ্গে—কবি এই সময়ের মূর্ছনাকে দক্ষভাবে তুলে ধরেছেন, আমার কাছে কবি রণজিৎ দাশের কবিতা চূড়ান্ত ব্যাপ্তিময় অথচ তাঁর কবিতার কাঠামো একটি যারপরনাই সংসক্তি ও আসঞ্জনের পূর্ণ গঠনে গঠিত।

ক্রোমোজোম থেকে প্রাণবিন্দু, রস থেকে রসাতল সব কিছুর মধ্যে লুকিয়ে আছে ক্রিসক্রস, এই ক্রিসক্রস না থাকলে জীবনের অতৃপ্তি হারিয়ে যায়, আর জীবন শেষ হতে থাকে, পাওয়া আর না পাওয়া, বোঝা আর না বোঝা, ত্বরণ ও মন্দন মিলনকে, সম্পর্ককে, প্রাপ্তিকে ত্বরান্বিত করে—এই অনুভবের দৃঢ়তা থেকে কবি রণজিৎ দাশ।

“দেখেছি শিল্পের ভিক্ষা, ফুটপাতে, গুমোট সন্ধ্যায়/ রঙিন খড়িতে আঁকা কালীর বিশাল স্তনে ছড়ানো মুদ্রায়।/ দেখেছি সে শিল্পীকেও, উদাসী, ভ্রূক্ষেপহীন,হাতে নীল চক/ পথের কুকুর আর আকাশের সন্ধ্যাতারা—এই তার নীরব দর্শক।” (ভিক্ষা,কাব্যগ্রন্থঃ ঈশ্বরের চোখ)

কবি রণজিৎ দাশ

প্রতিটি ভিক্ষার মধ্যে লুকিয়ে থাকে চরম ব্যর্থতার হাসাহাসি। একটা দীর্ঘ না পাওয়া ক্ষুদ্র পাওয়ার দিকে যেন সর্বস্ব দিয়ে ডাকতে চায়, শ্রোতারা বেশিরভাগ বধির, যারা প্রকৃত শ্রোতা তারা অপারগ, দু-একটা ব্যতিক্রমের আশায় ভিক্ষা/ শিল্প চলতেই থাকে—উপরিউক্ত কবিতাটির প্রতিটা সংশ্লেষ যেন গলায় আটকে থাকা যন্ত্রণার দৃঢ়তাকে বোঝায়, একটি মুহূর্তজয়ী মুহূর্ত থেকে অনন্তের দিকে ধাবিত হচ্ছে কবির বার্তা। কবি লিখছেন, ‘মেট্রো রেল’ কবিতায়—

“স্নানরত যুবতীর/ অবচেতনের মতো/ সুন্দর এই সুড়ঙ্গ”
“সূর্য ও সংযমহীন/ বাসস্টপের বিষণ্ন প্রতীক্ষা হীন/ এই পাতালপথ, তেত্রিশ মিনিটে/ লজ্জা থেকে লিবিডো-অব্দি যাবে।”—লজ্জা থেকে লিবিডো, তেত্রিশ মিনিট, বাসস্টপের প্রতীক্ষাহীন, অবচেতনের মতো সুড়ঙ্গ কী তীব্র ব্যঞ্জনায় মাধ্যমহীন মাধ্যমের পথ, সংহারের পূর্ব পথ—লজ্জা থেকে লিবিডো অবধি, শুরু থেকে গন্তব্য অবধি কী দ্রুত অপেক্ষাহীন পর্যায়বৃত্তি। গমন আর অবগাহনের মধ্যসময়—যান্ত্রিক রূপকময় শরীরী প্রেম, যেখানে সময়ের দূরত্ব এত গরীব যে কিছুই সম্পূর্ণ হয় না! এ কি কেবলই দর্শন! এটি একটি ঘর্ষণ, একটি ঝাঁকুনি, সিদ্ধান্তে পৌঁছোনোর গেঁড়ি-গুঁগলি আবেদন নয়, এখানে দৃঢ়তা স্থায়িত্ব একপ্রকারেই আদর ও অপমান করে কম্পিত করে দিয়ে, চমকিয়ে অস্তিত্বসচেতন করে। শিল্পী, কবি এঁদের দৃঢ়তার কাছে হেঁট হয়ে যাওয়া মানে আত্মসমর্পণ এবং সেটাই জাগরণের সত্যি।

কবির ‘কবন্ধ মিথুন’ কবিতাটি পড়ে কবিতার চোরাবালিতে ঢুকে যাচ্ছিলাম—
“যে স্ত্রী-পতঙ্গ তার সঙ্গী পুং-পতঙ্গের/ মুণ্ডচ্ছেদ করে নেয়, অতর্কিতে, সঙ্গমের আগে—/ এবং মিলিত হয় মগজের রাশমুক্ত শুদ্ধ দেহটির সঙ্গে,/ কবন্ধের উন্মুক্ত আগুনে;/ উদ্গীর্ণ মৃত্যুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সম্ভোগের, বীজনিক্ষেপের/ চূড়ান্ত কম্পনগুলি উপভোগ করে,/ ছিন্নমস্তা উল্লাসের প্রত্যক্ষ বিস্ময় সেই/ পতঙ্গের তৃপ্তি, তার গর্ভ, অবসাদ/ জীবনের ক্ষুদ্র সত্য; কল্পনার অন্তিম প্রবাদ।” (কবন্ধ মিথুন, কাব্যগ্রন্থ- সময়,সবুজ ডাইনি)

একটি তীব্র সত্য ও দৃঢ় শিখনের কবিতা এটি, অশ্রুতপূর্ব এক লেখনী। এক প্রজাতির পতঙ্গের আক্ষরিকই এপ্রকার সঙ্গমরীতি আছে কিন্তু বিষয় হলো এই যে রীতি যাই হোক না কেন এটিই শাশ্বত সত্যি নারী-পুরুষ সৃষ্টি-সঙ্গমে, এক বিন্দুতে সমাহিত দুটি বিপরীত অনুভবের সীমান্ত। প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি দুটি ভিন্ন বিন্দু ধরে উঠতে উঠতে যেন গ্রাফের একটি বিন্দুতে মিলিত হলো সেখানেই সৃষ্টি ও বিনাশ যুগপৎ হলো, তৃপ্তি, গর্ভ, অবসাদ—
“গৌতম বুদ্ধকে আমি আর্শীবাদ করি—, জোড়া রাজহাঁস—এই কোমল শিল্পের চাপে যেন তাঁর নির্বাণের মোহ ভেঙে যায়।”(জোড়া রাজহাঁস, কাব্যগ্রন্থ-আমাদের লাজুক কবিতা)

শিল্প, কামনা, লিপ্সা, উৎপাদন ও জন্মরং, সবুজ এগুলো সৃষ্টিপথের মূল কারক, যে সৃষ্টিকে রক্ষার জন্যই কোনো পুরুষ সৃষ্টিপন্থা ত্যাগ করেছেন, কবি তাকে এই বার্তা দিয়ে সমস্ত মহাত্মা কে জুড়ে দিয়েছেন সৃষ্টির কাজে—নারী, মোহ, স্তন সকলের দ্বারা নির্বাণ পরাজিত হোক, সবুজের আরো উৎকৃষ্ট, কচি জন্ম, সৃষ্টিকে স্বপ্নসান্নিধ্যে ভরে দিয়েছেন কবি তাঁর আর্শীবাদের নেপথ্যে। এটি কোনো ভাঙন নয়, সার্বিককে সার্বিক সারবত্তার দিকে মুখ ঘুরিয়ে দেওয়া যেন সৃষ্টির আগমনী ধ্বনিকে জন্মের প্রকৃত সত্য দেখিয়ে দৃঢ় করছেন অধিক ও অনধিকের ফাঁকে গড়ে ওঠা সাযুজ্যকে।

‘আমাদের প্রেম’ কবিতার শেষ দুই পঙক্তি এক ভুক্ত সত্যের সামনে এসে দাঁড় করায়, তবে কি এই খেলুড়ে গাঠনিক মহিমা ধরে ধরে এত গম্ভীর যাপন করছি নাকি করছি না! একটি জাতীয় ঘোরে গিয়ে মিশে যাচ্ছি না তো সেই ‘পারফিউম’ ছবির শেষদৃশ্যের মতো—
“কখনো ভেবেছো, কেন প্রকৃতির সত্যগুলি
দৃশ্যত ভৌতিক, কিন্তু আসলে স্বয়ংসিদ্ধ, আবেগবর্জিত?”
‘বন্দরে কথ্যভাষা’ কাব্যগ্রন্থের ‘রজনীগন্ধা’ কবিতাটি একটি মাধ্যমের উচ্চ বিকিরণ যেন—
“মৃত্যুর পর একটা অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটে যায়। শরীর পচতে শুরু করে, বেরুতে
থাকে দুর্গন্ধ। ....
তাহলে প্রাণ মূলত এক গোপন সুগন্ধ, যা আজীবন শরীরের ভিতর বাসা বেঁধে
থাকে, এবং মৃত্যুর পর মুহূর্তে শরীরকে ছেড়ে চলে যায়?”

কবিতা কি একটি সূত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইল! হ্যাঁ চাইল, একে দর্শন তো বলতেই পারি, তার চেয়েও যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো সমস্ত জীবন কোন এককের সামনে এসে বসছে বা কবি তাঁকে এনে বসিয়েছেন! এককের সঙ্গে লেগে থাকে রাশি, এখানে গন্ধ রাশি আর একক যেন শরীর, কবি উন্মুক্ত বাস্তবকে আরো খুলে দিচ্ছেন, খুলে দিচ্ছেন নশ্বরতাকে—যেখানে চূড়ান্তরা পরিবর্তনের সামনে এসে হোঁচট খাচ্ছে না কারণ রূপান্তরই সর্বজনীন ও গ্রাহ্য।

‘ছেলেকে বলা রূপকথা’ কবিতায় অতিপ্রাকৃত ভঙ্গিমায় বাস্তবকে রচনা করায় ,কবি ছেলেকে রূপকথা বলার ভঙ্গিমাতে নিজেই আস্ত রূপকথা হয়ে যান যার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে সম্মোহনী নিরুপায় বাস্তবতার ছায়া...
“নার্সকে পছন্দ হলে অর্ধেক অসুখ সেরে যায়
শূন্যতা, ডেটলগন্ধ , ভাতে মাছি—সব ভালো লাগে

পুরোপুরি সেরে উঠলে ডিসচার্জড—
সেই ভয়ে ভয়ে
বাকিটা জীবন তাই
অর্ধেক অসুখ নিয়ে হাসপাতালে থেকে যেতে হয়” (নার্স, কাব্যগ্রন্থঃ জিপসীদের তাঁবু)

একটা গোটা জীবন অনুভূতির দ্বৈত রূপ নিয়ে ভেতরে ক্ষয়ে যায় কেবল আকাঙ্ক্ষার আহ্লাদে। ‘অর্ধেক অসুখ’ এখন দৃঢ়তা, যা সেরে যেতে পারে অর্ধেক মাত্রায় যার জন্য, তারই জন্য অর্ধেক অসুখ নিরাময়হীনভাবে থেকে যায়, উৎস থেকে সমাপ্তি অবধি কবিতাটি মূল সিদ্ধান্তে অটুট, কেবল মাধ্যমে ধাক্কা খেয়ে নিল পাঠকের অস্থিরতায়, জীবনের জৈব বাহুল্যে ও বাস্তবে। এইখানে কবি চূড়ান্তের হয়ে ওঠেন।

কবি জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যে গোপন আকাঙ্ক্ষাগুলি যেন সত্যিই নিঃশব্দে বহন করছেন, তার গঠন এত মজবুত যে তার আওয়াজ হয় না, গতির দৃঢ়তায় বাস্তবের বশবর্তী হতে থাকে, কবি রণজিৎ দাশ আমার কাছে দৃঢ়তার কবি, যার মূর্ছনা থমকাতে সাহায্য করে, ভুক্ত মুহূর্তকে জার্ক দেয়, কারণ এটি পূর্বে ঘটেছে বা ক্রমে ঘটছে অথচ প্রকাশভঙ্গি জানে না সেই অবয়বকে ব্যপ্তি দেন কবি, গতিকে গতির মধ্যে বড় হতে দেন সেখানে ঘটে যায় পর্যায়বৃত্তি , আমার স্বল্প মুহূর্তের কবিতা যাপন যা কেবল ব্যাক্তিগত উপলব্ধি দিয়ে তাই তুলে ধরার চেষ্টা মাত্র... তাঁকে নিয়ে এ আলোচনা অবশ্যই সম্পূর্ণ নয়! কবিকে আমার শ্রদ্ধা, প্রণাম ও শুভেচ্ছা। তাঁর এই প্রগাঢ় সৃষ্টির ত্বরার প্রতি আরো তাকিয়ে থাকলাম, তাকিয়ে থাকতে বাধ্য, কেবল সে কারণেই...

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;

বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্বে শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ও মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ও কিশোরগঞ্জ নিউজ'র নিয়মিত লেখক।

বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি,শিল্প, সংগীত, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার বহুল কার্যক্রম নিয়ে দেশের প্রাচীনতম ও অগ্রণী প্রতিষ্ঠা নবঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র এক সভা এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শনিবার (১১মার্চ ২০২৩) বিকেল ৪-৩০ টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় নাট্যশালার কনফারেন্স হলের ভিআইপি সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের বরেণ্য শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্হিতিতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা
কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ। এতে সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সঞ্চালনা করেন।

সভায় বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সদস্য বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর লেখক, কমামিস্ট ও গীতিকার শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ’র কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা গঠনের দায়িত্ব আরোপ করে তার হাতে বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র ইশতেহার তুলে দেন বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এবং অন্যান্য নেতৃবর্গ ।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গীয়'র জার্মানির সভাপতি কবি নাজমুন নেসা পিয়ারী, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক আমিনুর রহমান বেদু, রবীন্দ্র একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবিশ, ইউনেস্কোর ব্রান্ড এম্বাসেডর নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাত, বঙ্গীয়'র সভাপতি পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, বঙ্গীয়'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আলী নিয়ামত, কবি নাঈম আহমেদ, বঙ্গীয়'র কেন্দ্রীয় সদস্য কবি মীনা মাশরাফী, কবি পারভিন আক্তার সহ প্রমুখ।

সভার প্রথম পর্বে আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র সম্মিলন উদযাপন বিষয়ক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কবি আজিজুর রহমান আজিজকে আহবায়ক এবং সংগীতশিল্পী শামা রহমানকে সদস্য সচিব করে উদযাপন কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে বঙ্গীয়র সভাপতি পর্ষদের সকল সদস্য, রবীন্দ্র একাডেমির নির্বাহী শাখার সকল সদস্য, বঙ্গীয়র যুগ্ম সম্পাদকবৃন্দসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশিষ্টজনকে নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।

দ্বিতীয় পর্বে অযুত তারুণ্যের বঙ্গবন্ধু সম্মিলন, দ্বিশতজন্মবর্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মরণ, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থ নিয়ে লেখক কবির আলোচনা সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ইউনাইটেড নেশন্সের ব্রান্ড এম্বাসেডর জনাব নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাতকে সভাপতি পর্ষদের সদস্য, শিশু সাহিত্যিক হুমায়ূন কবির ঢালীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক , সংস্কৃতি সেবক রোকনউদ্দীন পাঠানকে সাংগঠনিক সম্পাদক, কবি আনোয়ার কামালকে লিটল ম্যাগ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সাংবাদিক শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে নির্বাহী সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক, কবি মীনা মাশরাফীকে নীলফামারী জেলার সমন্বয়ক, জনাব এ এইচ এম সালেহ বেলালকে গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা লেখক কবি আবদুল হালিম খান, বীরমুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, কবি মানিক চন্দ্র দে, কবি অর্ণব আশিক, কবি বাবুল আনোয়ার, দৈনিক বঙ্গজননীর সম্পাদক কামরুজ্জামান জিয়া, কবি শাহানা জেসমিন, কবি গবেষক আবু সাঈদ তুলু, চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. বিশ্ব রায় (কলকাতা), বঙ্গীয় চট্রগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফ্যাশন ডিজাইনার আমিনা রহমান লিপি, শিল্পী শাহরিয়ার পিউ, কবি সোহরাব সুমন, কবি সরকার পল্লব, কবি রহিমা আক্তার মৌ, কবি লিলি হক, কবি আকমল হোসেন খোকন, শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, হিরা পারভেজ, ড. দিপু সিদ্দিকী, শিক্ষক ও কবি রওশন ই ফেরদৌস, কবি পারভীন আক্তার, কবি শিল্পী মাহমুদা, পূর্বধলার মো. জাকির হোসেন তালুকদার, কবি আনারকলি, কবি অপরাজিতা অর্পিতা, ডা. নূরুল ইসলাম আকন্দ, আবৃত্তিশিল্পী যথাক্রমে রূপশ্রী চক্রবর্তী, রবিউল আলম রবি সরকার, জেবুন্নেছা মুনিয়া, চন্দনা সেনাগুপ্তা, কবি সংগঠক রাজিয়া রহমান, কবি শামীমা আক্তার, শিল্পী সাদিয়া শারমিন, কবি কনক চৌধুরী, কবি তাসলিমা জামালসহ প্রমুখ।

;

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব



মাহমুদ হাফিজ
কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতায় শুরু হয়েছে রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসব। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতি সভাগৃহে বিকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এবারের উৎসবে বাংলাদেশের কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, পরিব্রাজক ও ভ্রমণগদ্য সম্পাদক মাহমুদ হাফিজ, স.ম. শামসুল আলম, নাহার আহমেদ, ড. নাঈমা খানম প্রমুখকে সম্মানিত করা হয়।

বিকালে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক নলিনী বেরা। বিশিষ্ট নাট্যকার চন্দন সেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ও কবি সব্যসাচী দেব। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাধারণ সম্পাদক কবি সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য। এতে সমাপণী বক্তৃতা করেন সংগঠনের সভাপতি কবি স্বপন ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য।

আজ ও আগামীকাল ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি হলে বিকাল থেকে কবিতা ও গল্পপাঠ, আলোচনা, শ্রুতিনাটক, সঙ্গীত অনুষ্ঠিত হবে। রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, নেপাল, আসাম, ত্রিপুরার কয়েশ’ কবি লেখক অংশগ্রহণ করছেন।

;

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাকালে বন্ধ থাকার পর আবারো 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কার্যক্রমে ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ রচিত 'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের একশত কপি শুভেচ্ছামূলক প্রদান করা হবে। 

উল্লেখ্য, আগেও ইংরেজি নববর্ষে এবং ভাষার মাসে শত বিশিষ্টজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রন্থ উপহার দিয়েছিল ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ. এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প-সাহিত্য-সমাজ উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আনসার বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার নামে গঠিত 'শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশন'। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল স্থানীয় নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে জানানো হয়েছে যে, বরকতময়, নেয়ামতপূর্ণ মাহে রমজানের সঙ্গে অন্য কোনো মাসের তুলনা চলে না। রোজা হলো মাহে রমজানে অবশ্য পালনীয় ফরজ আমল, যার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা নিজে দেবেন। মানবজীবনে রোজা একজন বান্দার আত্মীক ও শারীরিক কল্যাণের ও উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। তদুপরি, রমজান মাসকে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা তাঁর অপার ক্ষমা, দয়া আর অপরিসীম করুণা দিয়ে বান্দাদেরকে উপহার দিয়েছেন। রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত রোজা সঠিকভাবে পালন করলে রোজাদার নবজাতক শিশু মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রোজা রাখবে তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানব জীবনে ও সামাজিক ব্যবস্থায় রমজান মাস ও রোজার গুরুত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে ফাউন্ডেশন প্রদত্ত গ্রন্থে। এ গ্রন্থ রমজান মাসের তাৎপর্য এবং রোজার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পাঠকদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে ৩০টি সংক্ষিপ্ত অধ্যায়ের মাধ্যমে।

'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের লেখক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ। তাঁর পিতা: ডা. এ.এ, মাজহারুল হক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মাতা: নূরজাহান বেগম, সমাজসেবী। ড. মাহফুজ পারভেজের জন্ম: ৮ মার্চ ১৯৬৬, কিশোরগঞ্জ শহরে। পড়াশোনা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচ,ডি)। পেশা: অধ্যাপনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। লেখালেখি, গবেষণা ও সাহিত্য সাধনায় ব্রতী। প্রকাশিত গ্রন্থ কুড়িটি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- গবেষণা-প্রবন্ধ: বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি, দারাশিকোহ: মুঘল ইতিহাসের ট্র্যাজিক হিরো। দ্বিশত জন্মবর্ষে বিদ্যাসাগর। উপন্যাস: পার্টিশনস, নীল উড়াল। ভ্রমণ: রক্তাক্ত নৈসর্গিক নেপালে। গল্প: ইতিহাসবিদ, ন্যানো ভালোবাসা ও অন্যান্য গল্প। কবিতা: মানব বংশের অলংকার, আমার সামনে নেই মহুয়ার বন, গন্ধর্বের অভিশাপ। অধ্যাপনা ও গবেষণা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের শীর্ষতম মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর এবং কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা কিশোরগঞ্জ নিউজ'র উপদেষ্টা সম্পাদক রূপে সংযুক্ত রয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের  'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজিত হবে রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ কার্যক্রম সমন্বয় করবেন কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক, ইতিহাসবিদ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ। সমন্বয় কমিটিতে আরো রয়েছেন কিশোরগঞ্জ নিউজ'র প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ ইসকান্দার আলী স্বপন, সাংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু ও চিকিৎসক নেতা ডা. গোলাম হোসেন।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে আরো জানানো হয় যে, ইতিপূর্বে ঘোষিত ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর সম্মাননা বক্তৃতা ২০২০ এবং ২০২১ করোনাকালের বিরূপ পরিস্থিতিতে স্থগিত থাকায় তা যৌথভাবে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হবে। ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. এএ মাজহারুল হক এবং সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' কর্তৃক কিশোরগঞ্জের জীবিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জীবনব্যাপী বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ও ঐতিহাসিক মূল্যায়ন করতে ২০১৫ সাল থেকে এ সম্মাননা বক্তৃতা আয়োজন করা হচ্ছে, যা বক্তৃতা ও লিখিত আকারে প্রদান করেন মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' গতানুগতিক সম্মাননার বদলে ব্যক্তির কর্ম ও কীর্তির বিশ্লেষণমূলক-মূল্যায়নভিত্তিক সম্মাননা বক্তৃতার মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত স্বরূপ চিহ্নিত করে এবং এরই ভিত্তিতে জ্ঞাপন করা হয় যথাযথ সম্মান। সম্মাননা স্মারকের পাশাপাশি লিখিত আকারে বক্তৃতা-পুস্তিকায় চিত্রিত হন সম্মাননা প্রাপ্তগণ। মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এই বুদ্ধিবৃত্তিক-একাডেমিক আবহে ধারাবাহিকভাবে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে, যা কিশোরগঞ্জে তো বটেই, বাংলাদেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। শুরু থেকে সম্মাননা বক্তৃতা প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. মাহফুজ পারভেজ, যিনি কিশোরগঞ্জে পাবলিক লেকচার সিরিজের মাধ্যমে গণবুদ্ধিবৃত্তিক পরিসর তৈরির পথিকৃৎ।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্রথম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান শিক্ষাবিদ প্রাণেশ কুমার চৌধুরী, ২০১৬ সালে দ্বিতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান দীপ্তিমান শিক্ষকদম্পতি: অধ্যক্ষ মুহ. নূরুল ইসলাম ও বেগম খালেদা ইসলাম, ২০১৭ সালে তৃতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘প্রজ্ঞার দ্যুতি ও আভিজাত্যের প্রতীক: প্রফেসর রফিকুর রহমান চৌধুরী’ এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘ঋদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র: শাহ্ মাহতাব আলী’। ২০১৯ সালে পঞ্চম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা দেয়া হয় 'স্বাস্থ্যসেবা-শিক্ষায় পথিকৃৎ চিকিৎসক-দম্পতি' প্রফেসর ডা. আ ন ম নৌশাদ খান ও প্রফেসর ডা. সুফিয়া খাতুনকে। ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ প্রদান করা হয় নাসিরউদ্দিন ফারুকী, ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হককে। এ উপলক্ষে ‘কিশোরগঞ্জে আইন পেশার নান্দনিক বিন্যাস’ শীর্ষক সম্মাননা বক্তৃতা বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ প্রদান করা হয়েছে ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু.আ. লতিফ,  মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ ঊষা দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরীকে, যারা কিশোরগঞ্জের সামাজিক ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিন্যাসে স্বকীয় কৃতিত্বের প্রভায় উজ্জ্বল। জীবনব্যাপী কিশোরগঞ্জের মাটি ও মানুষের জন্য শৈল্পিক দ্যোতনায় নান্দনিক বর্ণালী সৃজন করেছেন এই তিন গুণান্বিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ জানান, ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২০ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২১ একসাথে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা মার্চ মাসের শেষ দিকে আয়োজিত হবে।

;