মুজিবের মুক্তি: ময়দানের সেই সভা



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

(পূর্ব প্রকাশের পর...)

এতো গেল সদ্য স্বাধীন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের আগমনের খবর। কিন্তু আমরা যদি আরও পেছনে ফিরে তাকাই..দেখবো বাংলাদেশের মুক্তির জন্য অখণ্ড স্বদেশের ভাবাবেগ যেন দুর্দমনীয় আবেগে সব ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। বলছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনে ৬ আগস্ট ১৯৭১ এ কলকাতার ময়দানে পাকিস্তানের অন্ধ কারাপ্রকোষ্ঠে বন্দি মুজিবের মুক্তির জন্য এক বিরাট সভা আহ্বানের বিজ্ঞপ্তির কথা।

বৃহত্তর বাঙালি তথা ভারতের শীর্ষ পর্যায়ে শিল্প-সাহিত্যের পুরোধা ব্যক্তিরা সেদিন বিবৃতি দিয়ে সভা আহ্বান করেছিলেন মুক্তির দিশারী মুজিবের মুক্তির জন্য জনগণকে ময়দানে সমবেত হতে। এবার আমরা দেখবো সেই দীর্ঘ তালিকা, কারা ছিলেন বিবৃতিদাতাদের মধ্যে?


‘মুজিবের মুক্তির দাবিতে শনিবার ময়দানে সভা’ শীর্ষক খবরে লেখা হয়েছে, ‘শেখ মুজিবর রহমান চেয়েছেন মানুষের মুক্তি। তিনি চেয়েছেন নতুন বাংলাদেশ গড়তে। তাঁকে শাস্তি দেওয়ার প্রস্তাব মানব সভ্যতার জন্য কলংক। কলকাতার লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবীরা এই ঘৃণ্য প্রয়াসকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ধিক্কার জানাচ্ছে। আমরা শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি চাই।’

‘শনিবার বেলা আড়াইটের সময় ময়দানে (টাটা বিল্ডিংয়ের বিপরীত দিকে) কলকাতার লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, গায়ক, অভিনেতা এবং অন্যান্য সৃষ্টিকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা সমবেত হয়ে এই উপলক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করবেন। শ্রেণী মতো নির্বিশেষে সকলকে যোগ দেবার জন্য আহ্বান জানাই।’


আরও পড়ুন: ‘বাঙালি দেখিয়েছে, তারা মানুষ’


বিবৃতির নিবেদকরা হলেন, ‘তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়, অন্নদাশংকর রায়, বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সত্যজিৎ রায়, শান্তিদেব ঘোষ, আবু সায়ীদ আইয়ুব, কানন দেবী, সুচিত্রা মিত্র, মনোজ বসু, বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়, বিষ্ণু দে, প্রতিভা দেবী, সন্তোষকুমার ঘোষ, দক্ষিণারঞ্জন বসু, নন্দগোপাল সেনগুপ্ত, মণীন্দ্র রায়, সাগরময় ঘোষ, নীরেন্দ্র চক্রবর্তী। গৌরী আইয়ুব, গৌরী কিশোর ঘোষ, রমাপদ চৌধুরী, বিমল কর, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায়, সিদ্বেশ্বর সেন, তরুণ স্যানাল, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত, চিন্তামনি কর, আমিনা কর, প্রকাশ কর্মকার, পূর্ণেন্দু পত্রী, নরেন্দ্রনাথ মিত্র, আশাপূর্ণা দেবী, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, গোপাল হালদার, সমরেশ বসু, গোলাম কুদ্দুস, শঙ্খ ঘোষ, অরুণ সরকার, চিন্মোহন সিহানবীশ, দেবী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, কামাঙ্খীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, বিমল চন্দ্র ঘোষ, শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র, সবিতাব্রত দত্ত, উৎপল দত্ত, শোভা সেন, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, বাদল সরকার, তিমিরবরণ, অমলাশঙ্কও, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, কাজী সব্যসাচী, কালী ব্যানার্জি, দেবব্রত বিশ্বাস, মণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখ্যোপাধ্যায়, সুখেন্দু গোস্বামী, নির্মলেন্দু চৌধুরী, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় কর, হরিসাধন দাশগুপ্ত, অপর্ণা সেন, মাধবী চক্রবর্তী, অসিত চৌধুরী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, তরুণ মজুমদার, অরুন্ধতী দেবী, জহীর রায়হান, হাসান ইমাম, আলমগীর কবির, সুপ্রিয়া দেবী, নির্মল কুমার, দীপান্বিতা রায়, অজিত বসু, হরিদাস ভট্টাচার্য, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, উৎপলা সেন, তরুণ মজুমদার, সন্ধ্যা রায়, বসন্ত চৌধুরী, আশা দেবী, অমিতাভ চৌধুরী, মহাশ্বেতা দেবী, গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লীলা মজুমদার, সুবোধ ঘোষ, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ, মতি নন্দী, গণেশ বসু, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখ্যোপাধ্যায়, দিব্যেন্দু পালিত, বারণ গঙ্গ্যোপাধ্যায় এবং আরও অনেকে।’


এসব গুণীজনদের নাম নতুন করে উৎকীর্ণ করা এজন্য জরুরি যে, ভারতের সরকারের অনেক পদক্ষেপ মানুষ জানেন যে তারা বাংলাদেশের জন্য ও মুজিব মুক্তির জন্য কতটা করেছেন। কিন্তু নাগরিক সমাজের কথা ও বুদ্ধিজীবীদের কথা কমই উচ্চারিত হয়। সেকারণেই তাদের নাম নতুন প্রজন্মের জানা ও জানানো অবশ্য কর্তব্য।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভারতের জনগণের, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গবাসীর গভীর ভালোবাসার এই প্রকাশ সদ্য স্বাধীন দেশে কারামুক্ত মুজিবের কলকাতা আগমনের সময়েও দেখব। নয় মাস রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে পাশে থাকা ভারতে র জনগণ যেভাবে বঙ্গবন্ধুকে বরণ করেছিল নিয়েছিল তার অনুপুঙ্খ বিবরণ আমরা পাবো সেই সময়কার সংবাদপত্রে। (চলবে...)

   

কবি সুফিয়া কামালের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নারীমুক্তি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের অগ্রদূত জননী সাহসিকাখ্যাত কবি বেগম সুফিয়া কামালের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। 

মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির সমস্ত প্রগতিশীল আন্দেলনে ভূমিকা পালনকারী সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের এই দিন (২০ নভেম্বর) সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার ইচ্ছানুযায়ী তাকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বিকেল ৩টায় বরিশালের শায়েস্তাবাদস্থ রাহাত মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এই আন্দোলনে নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন।

পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করলে এর প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন এবং তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন।

১৯৭০ সালে তিনি মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ কার্ফু উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেন।

সুফিয়া কামালের লেখা কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে- সাঁঝের মায়া, মায়া কাজল, মন ও জীবন, দিওয়ান, অভিযাত্রিক, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী ইত্যাদি। ‘কেয়ার কাঁটা’ নামে একটি গল্পগ্রন্থ ছাড়াও তিনি ভ্রমণ কাহিনী, স্মৃতি কথা, শিশুতোষ এবং আত্মজীবনীমূলক রচনাও লিখেছেন। সোভিয়েতের দিনগুলি এবং একাত্তরের ডায়েরী তার অন্যতম ভ্রমণ ও স্মৃতিগ্রন্থ।

সুফিয়া কামাল দেশ-বিদেশের ৫০টিরও বেশি পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, সোভিয়েত লেনিন পদক, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পদক।

;

গৌরীপুরে হুমায়ুন ভক্তদের পাখির আবাস তৈরি 



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিনে পাখির নিরাপদ আবাসের জন্য গাছে গাছে পাখির বাসা ঝুলিয়েছেন ভক্তরা।

সোমবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে ভক্তদের সংগঠন হুমায়ুন আহমেদ স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফৌজিয়া নাজনীন উপজেলা পরিষদ চত্বরে হাড়ি-কলস ঝুলিয়ে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। পরে বন, বন্য প্রাণী ও পরিবেশ রক্ষায় পৌর শহরে প্রচারাভিযান চালান ভক্তরা। এর আগে সোমবার হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফৌজিয়া নাজনীন বলেন, ‘গাছপালা ও বন-জঙ্গল উজাড় হয়ে যাওয়ায় এখন আগের মতো পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায় না। পাখি আমাদের প্রাণবৈচিত্রের অংশ। পরিবেশে পাখি বেঁচে থাকা খুবই জরুরি। পাখির প্রতি মানুষের ভালোবাসা থাকাও জরুরি। বন, বন্যপ্রাণী ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানের নয়। এ জন্য সাধারণ জনগণকেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।'

এ সময় হুমায়ুন আহমেদ স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পদক প্রভাষক স্বপন কুমার ঘোষের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন শ্যামগঞ্জ উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি হারুন আলী বারী, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য এইচএম খায়রুল বাসার, বোকাইনগর ইউপি চেয়ারম্যান আল মুক্তাদির শাহীন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু কাউছার চৌধুরী রন্টি, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুর রহিম, মোঃ শেখ সাদী সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পীযুশ রায় গণেশ, প্রচার সম্পাদক হারুন মিয়া প্রমুখ।

;

‘খ্যাতির প্রতি নিরাসক্ত ছিলেন আবুল হাসনাত’



ডেস্ক রিপোর্ট, বার্তা২৪.কম
‘বিদ্যাসাগর, জীবনানন্দ, নেরুদা ও অন্যান্য’ গ্রন্থের পাঠ উন্মোচনে বিশিষ্টজনরা

‘বিদ্যাসাগর, জীবনানন্দ, নেরুদা ও অন্যান্য’ গ্রন্থের পাঠ উন্মোচনে বিশিষ্টজনরা

  • Font increase
  • Font Decrease

কবি, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক আবুল হাসনাত ছিলেন খ্যাতির প্রতি নিরাসক্ত এবং সাহিত্য ও শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশে নিরলস একজন মানুষ। প্রয়াত আবুল হাসনাতের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর অগ্রন্থিত প্রবন্ধ সংকলন 'বিদ্যাসাগর, জীবনানন্দ, নেরুদা ও অন্যান্য' এর প্রকাশনা উৎসব ও স্মরণ আলোচনায় যোগ দিয়ে বিশিষ্টজনরা তাকে নিয়ে এই মূল্যায়ন তুলে ধরেন।

রোববার (১২ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে অনুষ্ঠিত হয় এই মোড়ক উন্মোচন ও স্মরণ আলোচনা অনুষ্ঠান। গ্রন্থটি ছিলো আবুল হাসনাতের সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ। তবে বইটি তিনি দেখে যেতে পারেননি। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে জার্নিম্যান বুকস। বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী।

আবুল হাসনাত ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। সঞ্চালক প্রজ্ঞা লাবণীর কণ্ঠে তার কবিতা ‘স্বপ্নের কাছে ফিরে যাওয়া সহজ নয়’ আবৃত্তির মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এর পর গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন পর্বে অংশ নেন- প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী ও আবুল হাসনাতের স্ত্রী সাংবাদিক নাসিমুন আরা হক।  

আবুল হাসনাতের অগ্রন্থিত এই সংকলনে রয়েছে ১৫টি প্রবন্ধ এবং গ্রন্থ-সমালোচনা। এই বইয়ের প্রবন্ধ অংশে- বিদ্যাসাগর, জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে, শামসুর রাহমান, আনিসুজ্জামান, মুর্তজা বশীরকে নিয়ে যে প্রবন্ধাবলি রয়েছে, তাতে মূর্ত হয়েছে বাঙালি ও বাংলা সাহিত্য নিয়ে তার ভাবনার স্বরূপ। আর পাবলো নেরুদা ও ফয়েজ আহমদ ফয়েজকে নিয়ে লেখা প্রবন্ধ দুটিতে ফুটে উঠেছে তার আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি। বইটি পাঠককে আবুল হাসনাতকে বুঝতেও সাহায্য করবে।

গ্রন্থটির ওপর আলোচনা ও লেখকের স্মরণে বক্তারা তার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা এবং স্মৃতিচারণা করেন। আলোচনায় অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, 'আবুল হাসনাত ছিলেন অনেক গুণের অধিকারী। তিনি মানুষের ভেতরে সততা ও সংস্কৃতি বিকাশের স্বপ্ন দেখতেন। জাতির সাহিত্য–সংস্কৃতির বিকাশে যারা নীরবে কাজ করে গেছেন, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম।

সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে আবুল হাসনাতের ভূমিকা উল্লেখ করে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, কার ভেতরে কোন ধরনের মেধা ও সৃজনশীলতা আছে, তা তিনি চট করেই বুঝতে পারতেন। তাদের দিয়ে সেই ধরনের কাজ করিয়েছেন। তিনি বহু লেখককে প্রতিষ্ঠিত হতেও সাহায্য করেছেন। অন্যদিকে নিজেও ছিলেন উঁচু মানের কবি, প্রাবন্ধিক ও শিল্প সমালোচক। তার বিভিন্ন রচনায় নান্দনিক ভাবনা, পরিশীলিত মেজাজ, পরিমিতিবোধ ও পাণ্ডিত্যের পরিচয় পাওয়া যায়।'

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, 'আবুল হাসনাতের সঙ্গে পুরান ঢাকার নবাবপুর স্কুল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়ালেখা করেছি। এছাড়া ক্রিকেট খেলা, কবিতা লেখা, সাহিত্যচর্চা, ষাটের দশকে প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন করেছি। আবুল হাসনাত নেই, এটা বিশ্বাস করতে মন চায় না। পরবর্তী জীবনে আবুল হাসনাত দেশের সব লেখক, শিল্পীর ঘনিষ্ঠ মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তার নিজের লেখালেখিও অনেক। ২১টি মৌলিক গ্রন্থ, এককভাবে সম্পাদিত গ্রন্থ ২১টি আর যৌথভাবে সম্পাদিত গ্রন্থ ২২টি। তার লেখায় শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন, ভাবনা উপস্থাপনা উচ্চ মানের। মৃত্যুর পর নির্মোহ মানুষটিকে আমরা যেনো আরও গভীরভাবে জানতে পারছি।  

লেখা ছাপানোর ক্ষেত্রে তিনি লেখক নন, বরং লেখার গুণমানকেই প্রাধান্য দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান। এ প্রসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'চট্টগ্রাম থেকে তিনি ডাকে সংবাদের সাহিত্য পাতার জন্য লেখা পাঠাতেন। লেখাগুলো সাময়িকীতে গুরুত্বের সঙ্গেই ছাপা হতো। কিন্তু তখন আবুল হাসনাতের সঙ্গে তার সরাসরি পরিচয়ই ছিল না। আবুল হাসনাত স্বল্পভাষী, নেপথ্যচারী লাজুক স্বভাবের মানুষ ছিলেন। কিন্তু তাঁর মন ছিল খোলামেলা। গুণীর কদর করতে কার্পণ্য করেননি।'

আবুল হাসনাতের সঙ্গে কাজ করার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, 'এটি আবুল হাসনাতের সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ। তবে বইটি তিনি দেখে যেতে পারেননি। সাহিত্য ও শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশে তিনি সারা জীবন নিরলস কাজ করেছেন। খ্যাতির প্রতি নিরাসক্ত এই মানুষটি ছিলেন অত্যন্ত প্রচারবিমুখ। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এই মানুষটি মৃত্যুর আগেও কালি ও কলমের বিদ্যাসাগর সংখ্যা নিয়ে কাজ করে গেছেন। বারবার সেটি সম্পন্ন করার কথাই বলেছেন। নতুন প্রজন্মের প্রতি তার ছিলো গভীর আস্থা। তিনি মনে করতেন দেশের নতুন প্রজন্মই সব সংকটে জাতিকে উত্তরণের সঠিক পথ দেখাবে।

সভাপতির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, এতে ১৫টি প্রবন্ধ এবং গ্রন্থ সমালোচনা রয়েছে ৬টি। প্রতিটি লেখা সুলিখিত, প্রাণবন্ত। গভীর পাণ্ডিত্য আর বিষয়গুলোতে লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রকাশ রয়েছে। লেখা দুর্বোধ্য নয়। সব শ্রেণির পাঠকই লেখাগুলো পড়ে যেমন অনেক বিষয়ে জানতে পারবেন, তেমনি আনন্দও পাবেন। স্কুলজীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, তিনি নিজেও ছিলেন নবাবপুর স্কুলের ছাত্র। তবে আবুল হাসনাতের চেয়ে পাঁচ বছরের জ্যেষ্ঠ ছিলেন।প্রচারবিমুখ আবুল হাসনাতের লেখা ভালোভাবে সংরক্ষণ এবং সেগুলো পরের প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে তার প্রতি যথার্থ সম্মান জানানো হবে- এমনটাই জানান তিনি।

আবুল হাসনাতের স্ত্রী সাংবাদিক নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, আবুল হাসনাতের স্মৃতিরক্ষা ও তার কাজ সংরক্ষণের জন্য আবুল হাসনাত ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। গত ১ নভেম্বর ছিল আবুল হাসনাতের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। সে উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। জানান, পর্যায়ক্রমে তার সব রচনা ও সম্পাদিত গ্রন্থ নিয়ে রচনাসমগ্র প্রকাশের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।

আবুল হাসনাত কবিতা লিখতেন মাহমুদ আল জামান ছদ্মনামে। কবিতা, উপন্যাস, চিত্র-সমালোচনাসহ সাহিত্যের নানা বিভাগে তিনি পদচ্ছাপ রেখেছেন। দেড় দশকের বেশি সময় সাহিত্য ও শিল্প–সংস্কৃতিবিষয়ক পত্রিকা কালি ও কলম এর সম্পাদক ছিলেন আবুল হাসনাত। এর আগে তিনি দুই যুগের বেশি সময় দৈনিক সংবাদ–এর ‘সাহিত্য সাময়িকী’ সম্পাদনা করেন। ২০২০ সালের ১ নভেম্বর সাহিত্যিক ও শিল্প সমালোচক আবুল হাসনাত রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে মারা যান। একজন বিচক্ষণ ও সংবেদনশীল সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন আবুল হাসনাত। দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকী দীর্ঘদিন তার তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ছিলেন ছায়ানটের অন্যতম সংগঠক ও সদস্য ছিলেন। ছায়ানটের কার্যকরী সংসদের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন সাংবাদিক আবুল হাসনাত।

;

মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৬ তম জন্মবার্ষিকী আজ



সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী ও বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ কারবালার যুদ্ধকে উপজীব্য করে রচিত কালজয়ী উপন্যাস ‘বিষাদ-সিন্ধু’র রচয়িতা সাহিত্য সম্রাট মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৬ তম জন্মবার্ষিকী আজ।
১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর গৌরী নদীর তীরে লাহিনীপাড়ায় বাবা সৈয়দ মীর মুয়াজ্জম হোসেন ও মা দৌলতন নেছার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির পদমদী গ্রামে মৃত্যুবরণ করলে এখানেই সমাহিত করা হয় মহান এই মনীষীকে।

ছবি: সংগৃহীত

মীর মশাররফ হোসেনের জন্মবার্ষিকী ঘিরে প্রতি বছর বাংলা একাডেমি মীরের সমাধীস্থল পদমদীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকলেও এ বছর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি তাঁরা। এদিকে মীর মশাররফ হোসেনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র, মীর মশাররফ হোসেন ডিগ্রী কলেজ, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদসহ স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শ্রদ্ধাঞ্জলি ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে বলে জানান ইউএনও রফিকুল ইসলাম।

তবে বাংলা একাডেমির পক্ষে মীর মশাররফ হোসেনের সমাধীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং সুবিধামতো সময়ে রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির পরিচালক (প্রশাসন, মানবসম্পদ ও পরিকল্পনা বিভাগ) ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।

বাংলার মুসলিম সমাজের দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দীর জড়তা দূর করে আধুনিক ধারায় ও রীতিতে সাহিত্য চর্চার সূত্রপাত ঘটে তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমে। তাঁর লেখা উপন্যাস ‘উদাসী পথিকের মনের কথা’ (১৮৯০), ‘গাজী মিয়ার বস্তানী’, ‘জমিদার দর্পণ’ (১৮৭৩), আত্মকাহিনীমূলক রচনাবলী ‘আমার জীবনী’, ‘বিবি কুলসুম’ (১৯১০), সহ বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, প্রবন্ধ ও ধর্মবিষয়ক ৩৭টি বই বাংলা সাহিত্যের অমর সৃষ্টি হয়ে রয়েছে।

;