দাসপ্রথার বিস্তার ও বিলোপের ইতিহাস



শেহজাদ আমান, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
দাসপ্রথার মতো অমানবিক পন্থা বিশ্বজুড়ে টিকে ছিল আঠার শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত

দাসপ্রথার মতো অমানবিক পন্থা বিশ্বজুড়ে টিকে ছিল আঠার শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত

  • Font increase
  • Font Decrease

একসময় গবাদী পশুর মতোই হাটে-বাজারে কেনাবেচা হতো মানুষ। দাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হতো তাদের। ঊনিশ শতকের শেষার্ধ্ব থেকে পুরো দুনিয়ায় দাস ব্যবসা বিলুপ্ত হতে শুরু করলেও, দাসপ্রথার ইতিহাস অতি প্রাচীন। এই বর্বর প্রথাকে উচ্ছেদ করার জন্য আন্দোলন-সংগ্রামও চলে এসেছে অনেকদিন ধরে। সেই আন্দোলন ও সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে, দুনিয়া থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্তি ঘটে দাসপ্রথার। এই অমানবিক প্রথার অবসানকে চিহ্নিত করতে এবং প্রথাটির বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের নায়কদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৪৮ থেকে প্রতিবছর ২৩ আগস্ট পালিত হয় আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবস।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/22/1566479459852.jpg
◤ সম-অধিকার, মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোকে ত্বরান্বিত করেছে দাস প্রথার বিলোপ ◢


আজকের দিনে সারা দুনিয়াজুড়ে যে সম-অধিকার, মানবাধিকারের মতো ব্যাপারগুলো এত আলোচিত বিষয়, সেই পথে বিশ্ববাসীকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছিল দাস প্রথার বিলোপের মতো মহা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি। আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে—মানবপাচার, যৌনদাস, জবরদস্তিমূলক শিশুশ্রম, বলপ্রয়োগে বিয়ে ও যুদ্ধে শিশুদের ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা বাড়ানো। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ১৭৯১ সালে বর্তমান হাইতি ও ডমিনিকান রিপাবলিকান অঞ্চলে প্রথমে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরবর্তীতে ব্রিটেন ১৮০৭ সালে এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৮০৮ সালে তাদের আফ্রিকান দাসদের মুক্তি দেয়। এরপর যুক্তরাজ্য ১৮৩৩ সালে, ফ্রান্স ১৮৪৮ সালে এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৮৬৫ সালে আইন করে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করে। তারপরেও এখনো বিশ্বের এক কোটি ২০ লাখ মানুষ জোরপূর্বক শ্রম, দাসত্ব ও দাসত্ব সংশ্লিষ্ট প্রথার কাছে বন্দী রয়েছে। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/22/1566479489579.jpg
◤ পিরামিডের মতো সুবিশাল স্থাপত্যগুলো গড়ে উঠেছে দাসদের ঘাম, রক্ত ও ত্যাগে ◢


প্রাচীন দাসপ্রথাটি এখনো বিভিন্ন নামে ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীতে এবং বিভিন্ন পরিবারে। মানবসভ্যতার ইতিহাস অনুযায়ী, খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ থেকে ৩০০০ সালে মেসোপটেমিয়ায় প্রথম ক্রীতদাস প্রথা চালু হয়। এর হাজারখানেক বছর পর থেকে এই প্রথা মিসর হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ভারতবর্ষে। মিশরের গ্রেট পিরামিডের মতো সুবিশাল স্থাপত্যও তৈরি করা হয় দাসদের কাজে লাগিয়েই। এর অনেক পরে চীনে এই কু-প্রথাটি জেঁকে বসে। পিরামিডের মতোই চীনের মহাপ্রাচীরও নির্মিত দাসদের ঘাম, রক্ত ও কষ্টের ইতিহাস দিয়েই। ৮০০ হতে ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিস এবং ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমে শুরু হয় ক্রীতদাস প্রথার মারাত্মক বিস্তার। এভাবে প্রায় বিশ্বজুড়েই একসময় ছড়িয়ে পড়ে এই ভয়াবহ কু-প্রথাটি।

কুখ্যাত ট্রান্স আটলান্টিক দাস ব্যবসা

দাসপ্রথাকে কেন্দ্র করে সারাবিশ্বে প্রচলিত ছিল দাস ব্যবসা। দাস ব্যবসার খুবই মন্দ রূপটি দেখা গিয়েছে মধ্যযুগে ‘ট্রান্স আটলান্টিক দাস ব্যবসা’য়। ১৪৯২ সালের ১২ অক্টোবর মানবজাতির ইতিহাস বদলে দেওয়া একটা দিন বলা যেতে পারে। ওইদিন ভারতের মাটিতে পৌঁছেছেন মনে করে আমেরিকা মহাদেশের মাটিতে পা রাখেন নাবিক কলম্বাস ও তাঁর সঙ্গীসাথীরা। এরপর থেকেই, ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপালের মতো ইউরোপীয়রা ছুটে আসতে শুরু করল সদ্য আবিষ্কৃত এই মহাদেশে। স্থানীয় আদিবাসীদের একটু একটু করে সরিয়ে দিয়ে দখল করতে লাগল তাদের জমি। ইউরোপে অভাব ছিল প্রচুর পরিমাণে আবাদযোগ্য জমির। তাই, বিপুল পরিমাণে ফাঁকা আবাদী জমি পেয়ে যেন হাটে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেল তারা। শুরু হলো ব্যাপক কৃষিকাজ, কিন্তু বাড়ল স্থানীয়দের ওপর অত্যাচার। কিন্তু সমস্যা হলো উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার মতো বিশাল দুটি মহাদেশের হাজার হাজার মাইল অনাবাদি জমি আবাদ করার মতো জনবল তাদের ছিল না। সেই সমস্যা সমাধানে আফ্রিকা থেকে লাখ লাখ কালো মানুষ ধরে আনা হলো কৃষি জমিতে কাজ করানোর জন্য। আফ্রিকা থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পার হয়ে আমেরিকায় দাস ধরে আনা হতো বলে ইতিহাসে তা পরিচিত ‘ট্রান্স আটলান্টিক স্লেভ ট্রেড’ হিসাবে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/22/1566479521413.jpg
◤ দাস ব্যবসার ঘৃণিত ও ভয়াবহতম রূপ দেখা গিয়েছে ‘ট্রান্স আটলান্টিক স্লেভ ট্রেড’-এ ◢


ইউরোপ থেকে দাসভর্তি প্রথম জাহাজটি আমেরিকায় পৌঁছায় ১৫০২ সালে। সেটি ছিল এক স্প্যানিশ জাহাজ। শুরুর দিকে দাস ব্যবসা পুরোপুরি ছিল পর্তুগিজ এবং স্প্যানিশদের হাতে। সময়ের সাথে সাথে সমানতালে এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড ও ফ্রান্স। ষোড়শ শতকের শুরু থেকে আরম্ভ হওয়া দাস ব্যবসা উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে চলতে থাকে। এই সময়ে দাস বানিয়ে ধরে আনা হয়েছিল আফ্রিকার প্রায় দেড় কোটি থেকে দুই কোটির মতো নারী, পুরুষ ও শিশুকে। যাদের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগই মারা পড়েছিল সমুদ্র পথে নিয়ে আসার সময়, তাদের ওপর করা অত্যাচারে কিংবা ক্ষুৎপিপাসা ও রোগ শোকে। প্রায় ৮০ লক্ষের মতো দাস আনা হয়েছিল শুধু ব্রাজিলেই। ৪০ লক্ষ যুক্তরাষ্ট্রে। বাকিদের পাঠানো হয়েছিল হাইতি ও অন্যান্য ক্যারিবীয় দ্বীপগুলোতে।

মূলত দাস ব্যবসার কেন্দ্রস্থল ছিল পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলীয় অঞ্চল যেটা বিস্তৃত ছিল সেনেগাল থেকে অ্যাঙ্গোলা পর্যন্ত। দাস ব্যবসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো ছিল বেনিন, টোগো এবং নাইজেরিয়ার পশ্চিম উপকূলে। তাই এলাকাগুলোকে স্লেভকোস্ট বা দাসের উপকূল বলা হতো। যুদ্ধবন্দী, অপরাধী, ঋণগ্রস্ত ও বিদ্রোহীদেরকে স্থানীয় আফ্রিকানদের কাছ থেকে দাস হিসেবে কিনে নিত ইউরোপীয় দাস ব্যবসায়ীরা। এছাড়া অনেক সাধারণ মানুষকেও দাস ব্যবসায়ীরা অপহরণ করে দাস হিসাবে বেচে দিত। মোট ৪৫টি ছোট বড় জাতিগোষ্ঠি থেকে দাস ধরে আনা হতো। এদের বেশিরভাগই ছিল আদিবাসী বা আফ্রিকার স্থানীয় সংস্কৃতির অনুসারী।

দাসদের ধরে আনা হতো জোর করে। তাই তাদের বাধ্য করার জন্য বিভিন্ন রকম অত্যাচার করা ছিল দাস ব্যবসায়ীদের কাছে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তার ওপর বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা পড়ত সমুদ্র পথে আটলান্টিক পাড়ি দেওয়ার সময়। জাহাজগুলোতে খরচ বাঁচানোর জন্য গাদাগাদি করে মানুষ ওঠানো হতো। থাকত না স্যানিটেশনের ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত খাবার। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিত হতো আমেরিকায় নিয়ে আসার পর। সেখানকার সিজনিং ক্যাম্পগুলোতে মারা পড়ত ডায়রিয়া ও আমাশয়ে প্রায় এক তৃতীয়াংশ দাস। অনেকে এই অপমানের গ্লানি থেকে বাঁচতে পালানোর সময় মারা পড়ত, কেউবা করত আত্মহত্যা। দাসরা বিবেচিত হতো প্রভুর সম্পত্তি হিসাবে। যদিও সুদূর অতীত থেকেই দাসপ্রথা চলে আসছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে, তবে কোথাও এর অমানবিকতা আমেরিকান দাসপ্রথাকে অতিক্রম করতে পারেনি। আমেরিকান ভূমি মালিকদের কাছে দাসরা ছিল কেবল কৃষি কাজের মাংসল যন্ত্র।

শিল্প বিপ্লবের আগ পর্যন্ত ইউরোপীয় উপনিবেশগুলোর অর্থনীতি ছিল দাস নির্ভর। উত্তর আমেরিকার তুলা এবং ব্রাজিল ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের চিনি ছিল ইউরোপের বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রধান অর্থকড়ি ফসল। ভারত থেকে আনা চা পান করার জন্য ক্যারিবীয় অঞ্চলের চিনির কদর তখন সারা ইউরোপ জুড়ে। চিনির বৈশ্বিক বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য তখন ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা। বলা হয়ে থেকে আমেরিকার কার্পাস তুলা থেকেই নাকি সূচনা হয়েছিল ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের। আর সেই তুলা থেকে বানানো সাদা কাপড়ের নীল জোগান দেওয়া হতো আমাদের দেশ থেকেই। সে আরেক নিষ্ঠুরতার ইতিহাস। তবে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে দাস ব্যবসার অর্থনৈতিক আবেদন কমে যেতে থাকে। তাই উনবিংশ শতক থেকে বিভিন্ন জায়গায় দাবি উঠতে থাকে দাস প্রথা বিলোপ করার।

দাসপ্রথা উচ্ছেদে আব্রাহাম লিংকনের ভূমিকা

রাষ্ট্রীয়ভাবে দাস প্রথা সর্বপ্রথম বিলুপ্ত ঘোষণা করে ইংল্যন্ড ১৮০৭ সালে। তারপর একে একে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতেও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হতে থাকে দাস ব্যবসা। সর্বশেষ দেশ হিসাবে দাস ব্যবসা নিষিদ্ধ করেছিল ব্রাজিল ১৮৩০ সালে। তবে অবৈধ দাস ব্যবসা বন্ধ হতে ১৮৬০ এর দশক পর্যন্ত সময় লাগে। আমেরিকার গৃহযুদ্ধ ও দাসপ্রথা গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। ১৮৬১ সালে, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন পরই আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে, দাসপ্রথাকে কেন্দ্র করে আমেরিকার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে চলমান বিরোধের চূড়ান্ত পরিণতি ছিল এই গৃহযুদ্ধ। লিংকনের জন্য তখন চ্যালেঞ্জ—এই যুদ্ধ যত দ্রুত সম্ভব নিষ্পত্তি করা, কিন্তু প্রধান সমস্যাটি ছিল চাইলেই দাসপ্রথা দূর করতে পারতেন না তিনি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/22/1566479550757.jpg
◤ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা উচ্ছেদে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ভূমিকা হয়ে আছে চির-স্মরণীয় ◢


শত শত বছর ধরে চলে আসা দাসপ্রথা আমেরিকার সংবিধান প্রণয়ণের সময় পৃষ্ঠপোষকতা পায় এবং লিংকনের আগে কোনো প্রেসিডেন্টই সংবিধান সংশোধনের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেননি। অন্যদিকে আমেরিকার প্রতিটি রাজ্যের যেহেতু স্বাধীনতা রয়েছে নিজস্ব আইন প্রণয়নের, তাই ধীরে ধীরে উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি রাজ্য থেকে দাসপ্রথার বিলুপ্তি ঘটে। কিন্তু কট্টর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে উগ্র শ্বেতাঙ্গবাদ এত বেশি ছিল যে তারা দাসপ্রথা বিলুপ্তিতে কোনো ভূমিকা নেয়নি, যা এই গৃহযুদ্ধ সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা রাখে।

গৃহযুদ্ধের শুরুর দিকে লিংকনের প্রাধান্য ছিল বিদ্রোহ দমন করা। তার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে এমনটিই প্রতীয়মান হয়। ৬ আগস্ট, ১৮৬১ সালে তিনি একটি আইন পাশ করেন যা পরিচিত ‘কনফিসকেশন অ্যাক্ট’ নামে। এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্রোহে যারা সমর্থন জুগিয়েছিল তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। যেহেতু দাসদেরকেও সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হতো, তাই এই আইন পাশের এক বছরের মধ্যে দশ হাজারেরও বেশি দাস ছাড়া পায়। কিন্তু এসব দাসেরা তাদের মালিকের কাছ থেকে ছাড়া পেলেও তারা আদৌ মুক্ত ছিল কিনা এবং পরবর্তীতে অন্য কোনো মালিকের দাসে পরিণত হতে পারত কিনা তা এই আইন ব্যাখ্যা করতে পারেনি। তাই এই আইন তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। কিন্তু দাসপ্রথা বিলুপ্তিতে যে রাজনৈতিক সমর্থনের দরকার ছিল তা এটি আদায় করতে সক্ষম হয়।

তাই বলা যায় যে, যুদ্ধ যত গড়িয়েছে, ততই বেড়েছিল আব্রাহাম লিংকনের প্রভাব। প্রথমে তিনি শুধুমাত্র আমেরিকাকে একত্র করতে চাইলেও যখন তার কাছে সুযোগ এসেছে দাসদের মুক্ত করে এতদিনের ইচ্ছার বাস্তবায়ন করার, তিনি কাজে লাগিয়েছেন সেই সুযোগ। এই রাজনৈতিক দূরদর্শিতাই তাকে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে সফল এবং জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে। এভাবে, ১৮৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করা হয় দাসপ্রথা।

উপমহাদেশে দাসপ্রথা

দাসপ্রথা বেশ জাঁকিয়ে বসেছিল এই বাংলা তথা উপমহাদেশেও। ১৮৬২ সালের হিসাবে আসামে ছিল ২৭,০০০ ও চট্টগ্রামে ছিল ১,২৫,০০০ দাস। দাম ছিল গড়ে কুড়ি টাকা। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ দাস ছিল এখানকারই নিজস্ব অধিবাসী। কিছু বিদেশি ক্রীতদাসও আসত। কলকাতাতে প্রতিবছর আসত প্রায় ১০০ ভিনদেশি দাস। ১৮৩০ সালের এক সংবাদপত্রের প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, অযোধ্যার নবাব চড়া দামে কিনেছিলেন ৫ জন সুন্দরী বিদেশি মেয়ে আর ৭ জন ভিনদেশী পুরুষ। দাম পড়েছিল কুড়ি হাজার টাকা। পলাতক ক্রীতদাস ধরে দেবার জন্য পুরস্কার ঘোষণারও নজির রয়েছে অনেক। ব্রিটিশ ওয়ারেন হেস্টিংস তো রীতিমতো নিয়ম করে দিয়েছিলেন কোনো দাস কেনার সময় আদালতে রেজিস্ট্রি করাতে হবে। কলকাতায় এই ফি ছিল দাসপ্রতি ৪ টাকা ৪ আনা। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ দাসই হয় দুর্ভিক্ষের কারণে নিজেদের বিক্রি করে দিয়েছিল অথবা ছিল নিচু শ্রেণীর মানুষ, কিংবা ছেলে ধরার হাতে ধরা পড়া বাচ্চারা। বাংলার সুলতানেরা অবশ্য আফ্রিকা, তুর্কিস্তান, পারস্য আর চীন থেকেও কিনে আনাতেন দাস। ১৮৩০-এর শতকের শেষভাগে আফ্রিকা থেকে আনা ‘হাবসী’ আর ‘কাফ্রি’ ক্রীতদাসদের দাম ছিল সবচেয়ে বেশি। হিন্দু সমাজে টাকা দিয়ে কেনা দাসদের ডাকা হতো ‘ক্রীতদাস’ বা ‘দাস’ নামে আর মেয়ে ক্রীতদাসের নাম ছিল ‘দাসী’। মুসলিম সমাজে পুরুষ ক্রীতদাসদের নাম ছিল ‘গোলাম’ বা ‘নফর’ আর মেয়ে ক্রীতদাসের পরিচয় ছিল ‘বাঁদী’ নামে। তাছাড়া সুন্দরী বাঁদীদের দাম আর চাহিদাও বেশি। মহাজনদের দেনা শোধ করতে না পেরেও অসংখ্য মানুষ নিজেদের বিক্রি করে দিত দাস হিসেবে। সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম আর ঢাকা অঞ্চলে ১৮৩৯ সালের আইন কমিশনের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ওখানকার এক-পঞ্চমাংশ মানুষই ছিল ক্রীতদাস। অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে এসে ক্রীতদাস প্রথা বন্ধ হতে থাকে। আমাদের এই অঞ্চলে ১৮৪৩ সালের পাঁচ নম্বর অ্যাক্টের মধ্য দিয়ে ক্রীতদাস প্রথা বন্ধের পথটি সুগম হয়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/22/1566479583055.jpg
◤ দাসপ্রথা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হলেও বাস্তবে এখনো বিভিন্নরুপে মানুষকে ক্রীতদাস হিসেবে ব্যবহৃত হতে করা হচ্ছে বাধ্য ◢


‘দাসত্ব’ বলতে বোঝায় কোনো মানুষকে জোর করে শ্রম দিতে বাধ্য করা এবং এক্ষেত্রে কোনো মানুষকে অন্য মানুষের ‘অস্থাবর সম্পত্তি’ হিসেবে গণ্য করা। এই দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ ব্যক্তিদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই স্থান বা মালিকানা পরিবর্তন হয়ে যায়। তাদের শ্রমের কোনো মজুরীও নেই। অতীতে কোনো কোনো সমাজে নিজের দাসকে হত্যা করাও আইনসঙ্গত ছিল। সেইসব বর্বরতা থেকে মানবজাতি বেরিয়ে এসেছে। তবে ক্রীতদাস প্রথার যে আধুনিক রূপান্তর, দরকার তার থেকে মুক্তির উপায় বের করা। মানব-সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সুসভ্য জাতিগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোও সেই অগ্রযাত্রায় পিছিয়ে নেই। এই প্রেক্ষাপটে যে কোনো ধরনের দাসপ্রথাই যাতে জাতির সেই অগ্রযাত্রার পথকে কলঙ্কিত না করতে পারে, প্রত্যাশা হোক এমনটাই।

   

আন্দিজ পর্বতমালার আলু বাঁচানোর চেষ্টা গবেষকদের



ফিচার ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জনপ্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে আলু অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর আন্দিজ পর্বতমালা আলু উৎপাদন বেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পরিবর্তিত আবহাওয়ায় আলু চাষে ঝুঁকি মোকাবিলা করে কিভাবে এ জাতের আলু চাষ করা যায় তা নিয়ে গবেষণা করছে আলু বীজ গবেষকরা।

স্থানীয় স্টার্চ জাতীয় খাদ্য সমূহের প্রধান উৎস হলো এ পর্বতমালার আলু। পেরুর একটি অলাভজনক সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অব আন্দাজের নির্বাহী সহকারী ট্যামি স্টেনার বলেছেন, আন্দিজ পর্বত মালার আলু অনেকটা গোলাপের মতো। দেখতেও অনেক সুন্দর।

তিনি বলেন, মায়েরা যখন ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে যায় তখন তাকে এ আলুর খোসা ছাড়িয়ে দিতে বলেন। এ সময় খুব যত্নসহকারে আলুর খোসা ছাড়াতে হয় যাতে তার আকৃতি নষ্ট না হয়। 

সমুদ্রপৃষ্ঠের ৩২০০ মিটার থেকে৫০০০ মিটার উপরে আন্দিজ পর্বতমালায় ১৩০০ টিরও বেশি জাতের আলু জন্মায়। এগুলো ফ্যাকাশে নয় যা ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুপারমার্কেট গুলোতে পাওয়া যায়। এ পর্বতের আলু সাধারণত বেগুনি, গোলাপী, লাল এবং কালো, সেইসাথে সাদা এবং হলুদ হয়ে থাকে।

এ আলু প্রক্রিয়াজাত করতে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। কিছু আছে ফ্রিজে শুকিয়ে নিতে হয়। কিছু যা শুধুমাত্র পুরো রান্না করা যায়, যেগুলি রান্নার জন্য খোসা ছাড়িয়ে কাটা যায়।

স্বতন্ত্র আলুর জাতগুলোর প্রায়শই বর্ণনামূলক নাম থাকে যা তাদের আকৃতি বর্ণনা করে। জাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হল পুমার পাঞ্জা, লামার নাক।

পেরুর শহর পিসাকের কাছে ছয়টি আদিবাসী সম্প্রদায় ২০০২ সালে আলু পার্ক গড়ে তোলে। এই অঞ্চলে জন্মানো আলুর জিনগত বৈচিত্র্য এবং সেইসাথে তাদের চাষ করা লোকেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

অন্যান্য স্থানীয় আন্দিয়ান ফসল ভুট্টা থেকে কুইনোয়াও এখানে জন্মায়। পার্কে ব্যবহৃত কৃষি পদ্ধতিগুলো হাজার বছর ধরে বিকশিত হয়েছে। কৃষকরা প্রায় ১০,০০০ হেক্টর (৩৮ বর্গ মাইল) জমিতে সারা বছরই একাধিকবার ফসল উৎপন্ন হয়।

অনেক জাতের আলুর মধ্যে যেগুলো হারিয়ে যেতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খায়িতে নিতে পারবে স্থানীয় কৃষক ও গবেষকরা সেগুলো সংরক্ষণ করেছে।

স্টেনার বলেন, আলুগুলো প্রায় ৮ হাজার বছর আগে থেকে আন্দিজ পর্বতমালায় জন্মানো শুরু করে। তাই আলু কীভাবে চাষ করা হয় সে সম্পর্কে অনেক ইতিহাস ও পরীক্ষালব্ধ জ্ঞান রয়েছে। আলু পার্কে যে কাজটি চলছে তা বিশ্বজুড়ে মূল্যবান খাদ্য গাছপালা সংরক্ষণ এবং পরিবর্তিত জলবায়ুতে খাদ্য অভিযোজনের উপায় খুঁজে বের করার একটি বড় প্রচেষ্টার অংশ।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বীজ সংরক্ষক সংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। স্বালবার্ড গ্লোবাল সিড ভল্ট ২০১৭ সালে পটেটো পার্কের প্রতিনিধিসহ সারা বিশ্ব থেকে আলু বীজে সংস্করণ করে।

এই ধরনের সংস্থাগুলো মূল্যবান ফসল হারানোর বিরুদ্ধে একটি অত্যাবশ্যক রক্ষাকবচ হতে পারে। এগুলো বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কের একটি অংশে পরিণত হলে কৃষকর খাদ্যের জিনগত বৈচিত্র্য রক্ষা করতে পারবে।

ছোট চাষীরা হাজার হাজার বিরল এবং অস্বাভাবিক ফসলের জাতগুলো বাগানে, খামারে চাষ করে বীজ সংরক্ষণের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখে। প্রকৃতপক্ষে, গবেষণায় দেখা গেছে যে বৈশ্বিক বীজ বৈচিত্র্যের সিংহভাগই জিন ব্যাঙ্কের পরিবর্তে বিশ্বের ২.৫ বিলিয়ন ক্ষুদ্র ধারকদের হাতে রয়েছে।

পূর্বে কৃষিতে একটি নির্দিষ্ট ফসলের বৈচিত্র্যময় পরিসর বৃদ্ধি করা হত। যখন বিজ্ঞানীরা ভুট্টা এবং গমের মতো প্রধান ফসলের "উন্নত" জাতের প্রজনন শুরু করে তখন অনেক কৃষক এগুলোকে গ্রহণ করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া টেকের প্রযুক্তির ইতিহাসের অধ্যাপক হেলেন অ্যান কারি বলেছেন, "কৃষিতে গভীর রূপান্তর ঘটেছে, অনেক ফসল স্থানান্তর হয়েছে। এতে নতুন ফসল চাষ হচ্ছে।

বীজ ব্যাংক যা জিনব্যাঙ্ক নামেও পরিচিত। তারা কয়েক দশক ধরে বীজ এবং অন্যান্য উদ্ভিদ সামগ্রী সঞ্চয়ে রাখে। কিন্তু যেখানে জমিতে চাষের মাধ্যমে ফসল সংরক্ষণ করতে হয় সেটা করতে পারছে না তারা। প্রকৃতপক্ষে, বীজ সংরক্ষণ করতে এবং ভবিষ্যতের জন্য বিভিন্ন ধরণের ফসলের স্টুয়ার্ড করার জন্য একজন কৃষক না হয়েও তা সংরক্ষন করা যায়।

বীজ সংরক্ষণের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অলাভজনক সংস্থা সিড সেভারস এক্সচেঞ্জ আইওয়া, তাদের জিন ব্যাঙ্কে বীজের দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণ এবং কৃষকদের সাথে তাদের বীজ ভাগ করে নিয়ে জমিতে চাষের মাধ্যমে সংরক্ষণ করছে।

আলু পার্কে কৃষকদের গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিভিন্ন আলুর জাতগুলোর জন্য গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে তারা পাহাড়ের অনেক উচ্চতায় চলে যাচ্ছে।

স্টেনার বলেছেন, "তারা ইতিমধ্যেই অনেক উঁচুতে রয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরো উঁচুতে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ সম্প্রদায়ের একজন প্রবীণ কৃষক বলেছেন: "আপনি আকাশে আলু চাষ করতে পারবেন না। তাই, কৃষকরা পরিবর্তে কম উচ্চতায় পুনরায় আলু চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

;

৭৪ বছর ছুটিহীন কর্মজীবন!



ফিচার ডেস্ক বার্তা২৪.কম
মেলবা মেবানের বিদায়ী অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

মেলবা মেবানের বিদায়ী অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ছুটি ছাড়া আপনি কতদিন চাকরি করতে পারবেন? এমন প্রশ্নের উত্তর একেক জনের কাছে একেক রকম হলেও, কেউই দীর্ঘ সময় ছুটিহীন চাকরি করবেন এমন উত্তর আশা করা যায় না। কিন্তু, অসুস্থ হলে যে সবারই ছুটি প্রয়োজন হবে সেটা নিশ্চিত। তবে এই কথাটি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের মেলবা মেবানের (৯০) জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ, এই নারী তাঁর ৭৪ বছরের কর্মজীবনে কখনও ছুটি কাটাননি আরও অবাক করার বিষয় হচ্ছে অসুস্থ হলেও সে হাসিমুখে তাঁর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে গেছেন। মার্কিন গনমাধ্যম ফক্স নিউজের বরাত দিয়ে এমন খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ডেইলি মেইল।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, মেলবা মেবানে ১৯৪৯ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে মেয়ার এন্ড স্মিথ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ‘লিফট গার্ল’ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে এটি অধিগ্রহণ করে নেয় ডিলার্ড। মেয়ার পরবর্তী বছরগুলোতে পুরুষদের পোশাক এবং কসমেটোলজিতে কাজ শুরু করেন ধরে তিনি এখানেই কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘ ৭৪ বছর কর্মজীবনে তিনি কখনও ছুটি নেননি এমনকি অসুস্থ হলেও না। 

মেলবার সম্পর্কে টাইলারের ডিলার্ডের স্টোর ম্যানেজার জেমস সায়েঞ্জ ফক্স নিউজকে বলেন, তিনি শুধু একজন বিক্রয়কর্মী নন। তিনি একজন মা। তিনি গাইড করেন। তিনি জীবন সম্পর্কে উপদেশ দেন। তিনি বহু গুণের অধিকারী। 

তিনি আরও জানান, মেলবা তাঁর মুখে হাসি নিয়ে প্রতিদিন কাজ শুরু করতেন।

তিনি বিক্রয়ে পারদর্শী ছিলেন এবং এমন কোন গ্রাহক বা সহকর্মী ছিল না যে তাকে ভালোবাসে না। তার পরে যারা এখানে কাজ শুরু করেছে তাদের সবাইকে খুব সুন্দরভাবে প্রশিক্ষন দিয়েছেন এবং শিখিয়েছেন। 

মেবানে জানান, কর্মস্থলে কখনো বিরক্ত হতেন না তিনি। সেখানকার সবাইকে ভালোবাসতেন এবং প্রতিদিন কাজে যেতে পছন্দ করতেন। অবসর নেওয়ার পর এখন বিশ্রাম, ভ্রমণ এবং ভালো খাবার খেয়ে দিনযাপন করতে চান তিনি। 

মেবানের কয়েক দশকের কাজ এবং নিষ্ঠার প্রতি সম্মান জানাতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে তাঁকে স্টোরের দীর্ঘতম কর্মক্ষম কর্মচারী হওয়ার জন্য ‘সার্টিফিকেট অব এক্সিলেন্স’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। 

;

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল 'ব্ল্যাকি', সম্পদ ৩ কোটি ডলার



ফিচার ডেস্ক বার্তা২৪.কম
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল 'ব্ল্যাকি'। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল 'ব্ল্যাকি'। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাধারণত যখন কেউ মারা যায় তখন তাঁর সম্পদের অংশ পরিবারের সদস্যদের কাছে রেখে যান। কেউ কেউ আবার বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায়ও দান করে থাকেন। তবে, যুক্তরাজ্যের বাকিংহ্যামশায়ারের বাসিন্দা বেন রিয়া যা করেছেন তা বিরল! স্রেফ ভালোবাসা থেকেই তাঁর সম্পদের বড় একটি অংশ প্রিয় পোষা বিড়াল ‘ব্ল্যাকির’ জন্য দিয়ে যান। আর এতেই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল হয়ে উঠে ‘ব্ল্যাকি’। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইট থেকে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

রেকর্ড সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ১৯৮৮ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ব্ল্যাকির নাম উঠেছে। সেই নাম ৩৫ বছর ধরে এখনো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল হিসেবে গিনেসের পাতায় বিড়ালটির এই স্বীকৃতি অক্ষুণ্ন রয়েছে। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সবচেয়ে ধনী বিড়ালটির সম্পদের পরিমাণ আসলে কত?

গিনেস ওয়ার্ল্ড বলছে, যখন ব্ল্যাকি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়ালের স্বীকৃতি পেয়েছিল, তখন সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ডলার। বর্তমানে যা ৩ কোটি ২০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

গিনেস ওয়ার্ল্ডের তথ্য মতে, ‘ব্ল্যাকির’ মালিক বেন রিয়া প্রাচীন জিনিসপত্র ক্রয় এবং বিক্রি করে কোটি ডলারের মালিক হন। ১৯৮৮ সালে এই ধনকুব মারা গেলে সম্পদের বিশাল একটি অংশ বিড়ালের নামে দিয়ে যান। তবে বেনের পরিবার ছিল কিন্তু সে একাই বসবাস করতো।  

তার বেশিরভাগ অর্থই তিনটি দাতব্য সংস্থার মধ্যে উইল করে যান। যেই সংস্থাগুলো পোষা প্রাণীদের দেখভাল ও সুরক্ষা দিয়ে থাকে। উইলে তিনি উল্লেখ করেন, যতদিন ব্ল্যাকি বেঁচে থাকবে ততদিন প্রাণীটির দেখভাল করতে হবে। 

তবে বেনের প্রিয় ব্ল্যাকি কত দিন বেঁচে ছিল কিংবা বেনের মৃত্যুর পর ব্ল্যাকির ভাগ্যে কী জুটেছিল, সেই বিষয়ে গিনেসের ওয়েবসাইটে কিছু না জানালেও এই রেকর্ড এখন পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেনি সেটি নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি ।

;

১৬০০ মিটার উচ্চতায় কম সময়ে দড়ি পার হয়ে বিশ্ব রেকর্ড!



ফিচার ডেস্ক বার্তা২৪.কম
শি হ্যালিন। ছবি: সংগৃহীত

শি হ্যালিন। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার (১.৬ কিলোমিটার) উচ্চতায় চীনের শি হ্যালিন (৩১) নামে এক ব্যক্তি খুব দ্রুত সময়ে ১০০ মিটারের স্ল্যাকলাইন (দড়ির উপর দিয়ে হাঁটা) পার হয়ে বিশ্বরেকর্ড করেছেন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইট থেকে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

রেকর্ড সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানটি জানায়, চীনা নাগরিক শি হ্যালিন সবচেয়ে কম সময়ে মাত্র ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডে ১০০ মিটার লম্বা দড়ি পার হয়ে বিশ্ব রেকর্ড করেছেন। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার উঁচুতে ছিল। 

শি হ্যালিন জানান, আমি পিংজিয়াংয়ের মাউন্ট উগং-এর গুয়ানিইন্ডাং ক্যাম্পে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার উপরে স্টান্ট করেছি। সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে এই রেকর্ডটি করতে পেরে নিজেকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এটি বিশাল এক চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশেষ করে এতো উচ্চতায় বাতাসের চাপ বেড়ে যায় এবং তাপমাত্রা হ্রাস পেতে থাকে। এর মধ্যে আবার দিনটি ছিল খুব কুয়াশাচ্ছন্ন। ফলে ভালো করে দেখতেও সমস্যা হচ্ছিল। 

এই রেকর্ডের পর সে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে এরকম প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করতে আগ্রহী বলেও জানান তিনি। 

তবে, এর আগেও তিনি এশিয়াতে বেশ কয়েকটি স্ল্যাকলাইন রেকর্ড জিতেছেন। ২০১৬ সালে তিনি ২ মিনিটে এই রেকর্ডটি করেছিলেন কিন্তু, সেটি পরের বছরই ফ্রান্সের নাগরিক লুকাস মিলিয়ার্ডের কাছে হারাতে হয়। 

;