কে এই নিপুণ রায়

বিএনপি নেত্রী অ্যাড. নিপুন রায় চৌধুরী (লাঠি হাতে) / ছবি: সংগৃহীত
এক হাতে বাঁশের লাঠি, অপর হাতে মোবাইল, কপালে লাল টিপ, পিছনে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। স্লোগান তুলে এগিয়ে চলেছেন সামনের দিকে। যেন এক যোদ্ধা! বেশ কিছু নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শোডাউনের। বাহু উঁচিয়ে, সালোয়ার কামিজ পরা নারীর ছবিটি আলোড়ন তুলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু কে এই নারী?
গত বুধবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মনোনয়ন ফরম কিনতে আসা নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় নেতাকর্মীদের।
এর কিছুক্ষণ পর পুলিশকে পিছু হটিয়ে রাজপথ দখলে নেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। জড়ো হতে থাকে কার্যালয়ের সামনে। এরই মধ্যে ঘটে পুলিশের পিকআপ ভ্যান আর জিপে অগ্নি সংযোগের ঘটনা।
তখনও পুরো সড়ক দখলে বিএনপির নেতাকর্মীদের। এরই মধ্যে দেখা গেল, বেশ কিছু নেতাকর্মী নিয়ে শোডাউন করছেন এক নারী। বাঁশের লাঠি উঁচিয়ে দিচ্ছেন স্লোগান। উপস্থিত নেতাকর্মী, উৎসুক জনতা ও গণমাধ্যম কর্মীদেরকেও দেখা গেছে সেই দৃশ্য ফ্রেমে ধারণ করতে।
মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ছবিটি। সবার মনে প্রশ্ন, কে এই নারী? ফেসবুক পেজেও শেয়ার করেছেন অনেক নেতাকর্মী।
হ্যাঁ ইনিই হলেন নিপুণ রায় চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) রাতে যাকে রাজধানীর নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। নয়াপল্টন থানায় নাশকতা মামলার এজহারের ১২ নম্বর আসামি তিনি।
নিপুণ রায় চৌধুরী, পেশায় আইনজীবী। রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ ও বিয়ে হওয়ায় তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে সক্রিয়। ইডেন কলেজের সাবেক এই ছাত্রী রাজনীতিতে সক্রিয় হন ছাত্রজীবন থেকেই।
পরিবার থেকেই নিপুনের রাজনীতির হাতে খঁড়ি এমনটা বার্তা২৪কে বলছিলেন তার বাবা নিতাই রায় চৌধুরী। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায়। একই সঙ্গে তিনি কেরানিগঞ্জ দক্ষিণ শাখা বিএনপির সভাপতি।
নিপুণের শ্বশুর সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। স্বামী অমিতাভ রায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। স্ত্রী, বাবা ও শ্বশুর রাজনীতিতে থাকলেও তা থেকে দুরে রয়েছেন অমিতাভ রায়।
এদিকে নিপুণের বাবা অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, যিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী। নিপুনের দুই ভাই ব্যারিস্টার।
বাবা ও শ্বশুর রাজনীতিতে থাকায় অনেক সহজেই তিনি উঠে এসেছেন এমন ধারণা দলের অনেক নেতাকর্মীদের। তবে মাঠের রাজনীতিতেও তার অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই বলে মানছেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা।
মিছিল মিটিং কিংবা সভা সমাবেশ সর্বত্রই তার সমান উপস্থিতি। দিন কি রাত, সকাল কি সন্ধা দলের সকল কর্মসূচিতে দেখা গেছে নিপুণ রায়কে। তার এই কর্মচঞ্চলতা রাজনীতিতে এগিয়ে নিয়েছে অনেকটা পথ।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত হয় কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি। সেখানে দেখা যায় নিপুণকে। গরম জলে ভিজেও যেন ক্ষান্ত হননি তিনি। কিছুক্ষণ পর অসুস্থ হয়ে পড়লে নেওয়া হয় হাসপাতালে।
এরপরও বহু মিছিল মিটিং সভা সমাবেশে সক্রিয় ভুমিকা রেখেই চলেছেন নিপুণ। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বেশ কিছু ঝঁটিকা মিছিল ও বিক্ষোভ মিছিলেও দেখা গেছে তাকে।
সর্বশেষ নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম কিনতে আসা নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হলে সেখানে সক্রিয়ভাব দেখা যায় নিপুণ রায়কে। নেতাকর্মীদের নিয়ে সামনে থেকে রাজপথে শোডাউন করেন তিনি।
এর দুইদিন পর বৃহস্পতিবার রাতে বিজয়নগর (নাইটিঙ্গেল) মোড়ে বাসায় ফেরার পথে আটক হওয়ার পর থেকে আলোচনায় রয়েছেন এই বিএনপি নেত্রী। শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) নিপুন রায়সহ বিএনপির সাত নেতাকে আদালতে হাজির করা হলে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।