ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি : দুই বাঙালি শহীদের গল্প



যাকওয়ান সাঈদ, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি

ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯০৮ সালে মাত্র আঠার বছর বয়সে যে কিশোর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে আরোহণ করেছিল, তাঁর নাম ক্ষুদিরাম বসু। ক্ষুদিরাম বসুর সহযোগী ছিল প্রফুল্ল চাকি, ক্ষুদিরামের ফাঁসির মাস তিনেক আগেই যে পুলিশের হাতে ধরা দেবে না—তাই রিভলবারের গুলি নিজের দিকে তাক করে করেছিল আত্মহত্যা। প্রফুল্ল চাকির আত্মহত্যার দিনটি ছিল ২ মে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দ, আর ক্ষুদিরাম বসুকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল একই বছরের ১১ আগস্ট। এ দুই বিপ্লবীরই মৃত্যু হয়ে হয়েছিল একটি বিশেষ ঘটনা বা অপারেশনকে কেন্দ্র করে।

এ লেখাটি ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকি আর তাঁদের সেই অপারেশনটিকে কেন্দ্র করে। কয়েকটি উপ-শিরোনামের মধ্যদিয়ে আমরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সেইসব দিনের গৌরবান্বিত ইতিহাসে কিছুক্ষণের জন্য বিচরণ করে আসতে পারি।

ক্ষুদিরামের জন্ম এবং বাল্যকাল

ক্ষুদিরামের জন্ম ১৮৮৯ সালের ডিসেম্বর মাসের এক বিকেলে, মেদেনীপুরের হবিবপুরে। বাবা ত্রৈলক্ষণাথ বসু জমিদারদের কাছারিতে কাজ করত। মায়ের নাম লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী।

পরপর দুই পুত্রসন্তানকে অল্প বয়সে হারিয়ে ত্রৈলক্ষণাথ বসু ও লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর সংসার-জীবনে একটি গভীর কষ্টের জায়গা তৈরি হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই, ক্ষুদিরামের যখন জন্ম হলো তখন তাকে নিয়ে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে। যদি না এই সন্তানটিও আবার মারা যায়! এমন অবস্থায়, তৎকালীন একটি সংস্কার, যা শিশুর প্রাণরক্ষার ক্ষেত্রে প্রচলিত ছিল, সেটিই প্রয়োগ করতে হলো ক্ষুদিরামের ওপর। উপাচার অনুযায়ী অল্প কিছু খুদ বা কড়ির বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল ক্ষুদিরামকে। অবশ্য কিনে নিয়েছিল তাঁরই সদ্যবিবাহিত বড়বোন। যেহেতু খুদের বিনিময়ে প্রাণরক্ষা হয়েছিল তাই তাঁর নামকরণ করা হয়েছিল ক্ষুদিরাম বসু।

দুঃখজনক বিষয় এই যে, ক্ষুদিরামের আর মা-বাবার কাছে ফেরা হয়নি, বা তাদের সান্নিধ্য পাওয়াও সম্ভব হয়নি। ক্ষুদিরামের সাত বছর বয়সে, ছয় মাসের অল্প ব্যবধানে তাঁর বাবা-মা মারা গিয়েছিলেন। বড় বোনের সংসারেই বেড়ে উঠেছিলেন ক্ষুদিরাম।

শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল হাটগাছিয়ার গিরিশ মুখার্জী পাঠশালায়। বোনের স্বামী চাকরিসূত্রে হাটগাছিয়ায় থাকতেন। পরবর্তী সময়ে চাকরি বদলি হলে তারা তমলুকে স্থানান্তরিত হয়। সেখানে ক্ষুদিরাম বসুকে হ্যামিল্টন স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। তাঁর বয়স যখন বারো, তখন তমলুকে দেখা দিয়েছিল কলেরা। ক্ষুদিরাম সেই কলেরা-রোধে নেমে পড়েছিল বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে। স্বভাবচরিত্রে ছিল ডানপিটে ধরনের, আর এই ডানপিটে স্বভাব বদলাতে না-বদলাতেই ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলে পড়তে হয়েছিল তাঁকে।

ক্ষুদিরামের বিপ্লবীজীবনের সূত্রপাত

১৯০৪ সালে বয়স যখন চৌদ্দ, ক্ষুদিরামের চিন্তা-চেতনায় বিপুল পরিবর্তন আসে। এসময় পুনরায় বোনের স্বামীর বদলির কারণে তাঁদের মেদেনীপুর চলে আসতে হয়। ক্ষুদিরামকে ভর্তি করে দেওয়া হয় মেদেনীপুর কলিজিয়েট স্কুলের অষ্টম শ্রেণীতে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ঋষি রাজনারায়ণ বসু—তিনিই ক্ষুদিরামসহ আরো অনেক স্কুলছাত্রের মনে স্বাধীনতার চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন।

একই স্কুলের ইতিহাস শিক্ষক—জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু, ক্ষুদিরামকে দেখেই টের পান এই ছেলের মধ্যে স্বদেশচেতনা অত্যন্ত গভীরভাবে প্রোথিত আছে। এবার শুধু ছেলেটিকে জাগিয়ে তোলাই কাজ। কাজটি জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু নিজ দায়িত্বে করলেন। ক্ষুদিরামকে তিনি নিজের একজন কাছের ছাত্র করে তুললেন।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ছিল মেদেনীপুর। জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসুর সান্নিধ্যে আসার অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষুদিরাম একটি বিপ্লবী দলে যোগদান করে। এরই মধ্যদিয়ে কিছু রণকৌশলও রপ্ত হয়ে যায় তাঁর। এখানেই লাঠি খেলা, তলোয়ার চালানো, বন্দুক অথবা রিভলবারের ব্যবহার শিখে নেয় ক্ষুদিরাম। যুদ্ধাহত ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যাপারেও এখান থেকেই ধারণা নেওয়া। বন্যাকবলিত মানুষের আশ্রয়স্থল তৈরিতে এসময় দলের সঙ্গে থেকে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করে ক্ষুদিরাম।

প্রথম জেলে যাওয়া

মেদেনীপুরের বিপ্লবীদের দলপতি ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তাঁর সঙ্গে ক্ষুদিরাম বসুর প্রথম জেলে যাবার ঘটনায় একটি প্রাসঙ্গিকতা আছে। ১৯০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস, ক্ষুদিরামের বয়স তখন ১৬ বছর।

মেদেনীপুরের পুরনো জেলে একটি কৃষি ও শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যেমন, এসেছিল অনেক সাধারণ মানুষও। হঠাৎ সেই প্রদর্শনীতে দেখা গেল এক কিশোর লিফলেট বিলি করছে। কর্তাব্যক্তিদের নজরে এলে দেখা গেল লিফলেটটি মূলত ‘সোনার বাংলা’ নামক একটি পুস্তিকা যা ব্রিটিশবিরোধী প্রচারপত্রগুলোরই একটি। তাৎক্ষণিক ক্ষুদিরামকে গ্রেফতার করে তার নামে রাজদ্রোহের মামলা দিয়ে দেওয়া হয়। কাঠগড়ায় উঠিয়ে তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, ‘কে তোমাকে এই পুস্তিকা বিলি করবার দায়িত্ব দিয়েছে?’ উত্তরে ক্ষুদিরাম বসু যেন কিছুই জানে না, এরকম ভাব করে। বলে, ‘তার নাম বলতে পারি না।’ তারপর তাকে আদালতের পুরো কক্ষ ইঙ্গিত করে বলা হলো, ‘দেখো তো এই কক্ষে সেই ব্যক্তিটি আছে কিনা?’ সত্যেন্দ্রনাথ বসু কক্ষেই ছিলেন, মানে তিনিই তাকে পুস্তিকা বিলির কাজটা দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষুদিরাম বসু কম বয়সসুলভ অভিব্যক্তি দিয়েই সত্যেন্দ্রনাথকে সারা আদালত ঘরের কোথাও খুঁজে পেল না। বলল, ‘নাহ, এই ঘরে তো সেই লোককে দেখতে পাচ্ছি না।’ আদালত ভাবল, ছেলেটি হয়তো আসলেও এতটা ভুলমনা, বা বিশেষ ‘ঘাওড়া’ প্রকৃতির, সুতরাং তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো।

তবে হ্যাঁ, এ ঘটনার মধ্যদিয়ে ক্ষুদিরাম কিছুটা হলেও সন্দেহজনক চরিত্র হয়ে উঠল। চিন্তিত হয়ে পড়লেন ক্ষুদিরামের বোনের স্বামী, কেননা পুলিশ যে কোনো সময়ই ঘরে হানা দিতে পারে। যদিও ঘটনার পরপর ক্ষুদিরামকে অন্য এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু তবুও ক্ষুদিরামকে কেন্দ্র করে নিজের চাকরিটি হঠাৎ হাতছাড়া হবার আশঙ্কা কাটল না। এমন পরিস্থিতিতে যদিও বোনের স্বামী ক্ষুদিরামকে সরাসরি কিছু বললেন না, কিন্তু কিশোর ক্ষুদিরাম নিজেই যা বোঝার বুঝে নিল আর একদিন না বলে-কয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।

এরপর ক্ষুদিরাম বসু যার কাছে আশ্রয় পেল ইতিহাসে তার পরিচয় হিসেবে উল্লেখ আছে, তিনি আবদুল ওয়াহেদ সাহেবের স্ত্রী। এ মহিলা ছোটভাইয়ের মতো স্নেহ ভালোবাসায় ক্ষুদিরামকে গ্রহণ করেছিলেন।

যাই হোক, একটি আঠার বছরের জীবনে আর কতই বা ঘটনা থাকবে! তাই ছোট ছোট এসব বাঁকবদল বাদে ফাঁসির ঘটনাই মূলত ক্ষুদিরাম বসুর জীবনকে অধিকার করে রেখেছে। কেন ও কী কারণে ক্ষুদিরামের ফাঁসি হলো, বরং সেই আলাপেই প্রবেশ করা যাক।

প্রফুল্ল চাকি, ক্ষুদিরামের সহযোদ্ধা

এই পর্বে ক্ষুদিরামের সহযোদ্ধা প্রফুল্ল চাকিকেও পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। আমরা আগেও উল্লেখ করেছিলাম প্রফুল্ল চাকির কথা, পুলিশের কাছে ধরা না পড়ে যে আত্মহত্যাকেই বেছে নিয়েছিল।

অপারেশনকে কেন্দ্র করেই প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে ক্ষুদিরামের প্রথম সাক্ষাত হয়। মানিকতলা আখড়ার এই সাক্ষাতের দিনই অপারেশনের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ক্ষুদিরামকে। আর ক্ষুদিরামের সহযোগী হিসেবে উত্তরবঙ্গ থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল প্রফুল্ল চাকিকে। অপারেশনটির স্বার্থে দুজনকেই দেওয়া হয়েছিল ছদ্মনাম—ক্ষুদিরামের নাম হয়েছিল দুর্গাদাস সেন, আর প্রফুল্ল চাকির নাম দীনেশচন্দ্র রায়।

তাহলে কী ছিল সেই অপারেশন?

তাহলে কী ছিল সেই অপারেশন? আঠার বছর বয়সী ক্ষুদিরামকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, এবার সেই প্রসঙ্গে আসা যাক।

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যখন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তুমুল আকার ধারণ করেছিল, ঠিক সেই সময় ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ‘বন্দে মাতরম’ বলা নিষিদ্ধ করে দেয়। আর যখন ‘বন্দে মাতরম’ নিষিদ্ধ হলো, সেসময় কলকাতার প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ছিল মি. কিংসফোর্ড। এমনকি অন্য অনেক ব্রিটিশদের চেয়েও কিংসফোর্ড ছিল একটু বেশি মাত্রারই বেপরোয়া। ‘বন্দে মাতরম’ আইনকে কেন্দ্র করে তখন তার জেলখানায় তিল ধারণেরও ঠাঁই ছিল না।

ইংরেজ-শাসনের নির্যাতন তো ছিলই, সঙ্গে কিংসফোর্ডের বাড়তি নিষ্ঠুরতা যুক্ত হয়ে তৈরি হয়েছিল এক অতিশয় নির্দয় পরিস্থিতির। ফলশ্রুতিতে মেদেনীপুরের বিপ্লবীদের বৈঠকে একদিন সিদ্ধান্ত হলো, মি. কিংসফোর্ডকে শাস্তি দিতে হবে। আর সেই উপযুক্ত শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু এই মৃত্যুদণ্ড বাস্তবায়নে এমন কাউকেই খুঁজে পেতে হবে যে একই সঙ্গে বুদ্ধিদ্বীপ্ত এবং তেজি। সম্ভবত ১৯০৮ সালের মেদেনীপুরে অবস্থানকারী সব বিপ্লবী নেতাদেরই ক্ষুদিরামকে কাজটির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে হয়েছিল।

ইংরেজ শাসকগোষ্ঠীও টের পেয়েছিল, যে কোনো সময় কিংসফোর্ডের ওপর হামলা হতে পারে। তাই এরইমধ্যে কিংসফোর্ডকে বদলি করে মুজফফরপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ক্ষুদিরাম আর প্রফুল্ল চাকি প্রথমে কলকাতা গিয়ে, তারপর সেখান থেকে মুজফফরপুরে রওনা হবে—এমনই প্ল্যান আগে থেকে ঠিক করা ছিল। সে অনুযায়ী তারা দুজন প্রথমে কলকাতায় এসে বিপ্লবী হেমচন্দ্র কানুনগোর বাসায় অবস্থান নেয়। সেখান থেকে গুলিভর্তি রিভলভার আর টিনের বাক্সে একটি বোমা নিয়ে মুজফফরপুরে চলে গেল। পরিকল্পনামতোই তারা প্রথমে একটি ধর্মশালায় আশ্রয় নেয়।

মি. কিংসফোর্ড ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল, যে কোনো সময় তার ওপর হামলা হতে পারে। সবসময় তাই সাথে বন্দুকধারী নিয়ে চলাফেরা করত। কোর্টে কাজের সময় বাদে প্রায় পুরাটা সময় থাকত বাসায়। মাঝেমধ্যে সন্ধ্যার পরে ক্লাবে গিয়ে তাশ খেলে আসা। বলা চলে বন্দুকধারী-বেষ্টিত দিনাতিপাত করছিল কিংসফোর্ড।

দুই কিশোরের জন্য ব্যাপারটা কঠিনই হয়ে পড়ছিল। একটানা ১৯/২০ দিন সুযোগ-সন্ধানের পরও কোনোভাবেই কিছু ঘটাতে না পেরে ভেতরে ভেতরে কিছুটা অস্থির হয়ে ওঠে তারা। এই অস্থিরতা থেকেই ২৯ তারিখ তারা সিদ্ধান্ত নেয়, পরের দিন অপারেশন বাস্তবায়ন করবেই, যা হবার হবে। ১৯০৮ সালের এপ্রিল মাস।

পরদিন, ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকেই কিংসফোর্ডের বাড়ির আশেপাশে গিয়ে তারা দুজন অবস্থান নেয়। প্রথমে একজন প্রহরী ব্যাপারটি লক্ষ করে তাদের চলে যেতে বলে। তারা সে নির্দেশ অগ্রাহ্য করে আরেকটু গোপনীয়তা যোগ করে একটি গাছের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। কিংসফোর্ড কখন বাসা থেকে বের হয়, সেটাই তাদের দেখার বিষয়। কিংসফোর্ডকে একবার হত্যা করতে পারা গেলে তাদের ভোগ্যে যা হয় হবে।

তবে সবশেষ ক্ষুদিরাম তার হাতের মুঠোয় থাকা বোমাটি ছুড়ে মারলেও সেই বোমায় কিংসফোর্ড নয়, মারা গিয়েছিল দুজন নির্দোষ ব্রিটিশ নাগরিক। এ দুজন ছিল ব্যারিস্টার কেনেডি নামক এক ব্যক্তির স্ত্রী এবং কন্যা।

রাত সাড়ে আটটার দিকে ক্ষুদিরাম আর প্রফুল্ল কিংসফোর্ডের বাসা থেকে একটি গাড়ি বেরিয়ে আসতে দেখেছিল। মূলত, এই দেখার বিষয়টিতেই তাদের আরো পরিপক্বতার, মনোনিবেশের ও অপেক্ষার প্রয়োজন ছিল। তারা গাড়ির মধ্যে কে আছে সে বিষয়ে নিশ্চিত না হয়েই গাড়ি উদ্দেশ্য করে বোমা ছুড়ে মারে।

যদিও কে মারা গেল, কিংবা কিংসফোর্ড যে মারা যায়নি এসব ব্যাপারে জানবার কোনো সুযোগ তাদের রইল না। তারা বোম্বিং করবার সাথে সাথেই সেখান থেকে প্রস্থান করে।

ঘটনার পরে কেউ কেউ বলল এখানে তারা দুজন কিশোরকে দেখেছে। কে কীরকম দেখতে ছিল, সেসবও বলাবলি হলো। ফলত সব জায়গায় ঘোষণা করে দেওয়া হলো, এরকম কাউকে দেখলেই তাকে যেন পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ঘোষণার ফলস্বরূপ সর্বত্র নিরাপত্তা জোরদার করে ক্ষুদিরাম আর প্রফুল্লকে ধরতে সচেষ্ট হলো পুলিশ এবং পরদিন সকালেই ক্ষুদিরাম ধরা পড়ে গেল।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/29/1567077539571.jpg
◤ ক্ষুদিরাম, ধরা পড়ার পরে ◢


প্রফুল্ল চাকির আত্মহত্যা

প্রফুল্ল জামাকাপড় পাল্টে সমস্তিপুর এলাকার দিকে যাচ্ছিল। এসময় একজন তাকে ডেকে জানতে চাইল, ‘কোথায় যাও?’ প্রফুল্ল জানালে রেলস্টেশনে যাচ্ছে, লোকটি বলল, এখন তো কোনো ট্রেন নেই। লোকটি প্রফুল্লকে তার বাসায় বিশ্রাম নেওয়ার আমন্ত্রণ জানায় আর যখন ট্রেন আসবে তখনই স্টেশনের দিকে যেতে বলে। প্রফুল্লও এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।

যে ব্যক্তি প্রফুল্লকে এ সহযোগিতা করেছিল, তার পরিচয় জানা যায়নি। হয়তো তিনি প্রফুল্লের আসন্ন বিপদ বুঝতে পেরেই দয়াপরবশ হয়েছিলেন। এমনকি হয়ে থাকবে, তিনি বুঝতেও পেরেছিলেন এই ছেলে সেই দুজনেরই একজন, যারা গতকাল কেনেডির স্ত্রী আর কন্যাকে হত্যা করেছে। যখন এই ব্যক্তির আশ্রয়স্থল রেখে প্রফুল্লকে ট্রেনে উঠে পড়তে হলো, তখন থেকেই ঘটতে শুরু করে বিপত্তি।

প্রফুল্ল চাকি যেই কামরায় ওঠে, একই কামরায় সাদা পোশাকে একজন পুলিশসদস্য উঠেছিল। নাম নন্দলাল ব্যানার্জী। সাদা পোশাকে তাকে দেখেও বোঝার উপায় ছিল না সে একজন পুলিশ। কিন্তু প্রফুল্লকে দেখেই তার সন্দেহ হলে একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করার মধ্যদিয়ে তাঁকে নিজের নজরদারিতে আটকে রাখে ওই পুলিশসদস্য।

ট্রেন যখন স্টেশনে পৌঁছায় তখন ভোর। আশেপাশে কোনো কুলি ছিল না। প্রফুল্লই নন্দলালের ব্যাগপত্র মাথায় নিয়ে কুলির কাজটি করছিল। মাথা থেকে ব্যাগ নামিয়ে রাখতেই প্রফুল্ল টের পেল নন্দলাল ব্যানার্জী সেখানে নেই। এদিক ওদিক তাকাতে একটু পরে দেখা গেল, তিনি পাঁচজন পুলিশসদস্যকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। আর প্রফুল্ল চাকিকে জানানো হচ্ছে—‘আপনাকে আমরা গ্রেফতার করলাম।’

পকেটে থাকা রিভলভারটি বের করে সঙ্গে সঙ্গেই প্রফুল্ল নন্দলালকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ল। উত্তেজনায় গুলিটি লক্ষভ্রষ্ট হয়। পরক্ষণেই, যখন ধরা পড়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই, রিভলবার গলায় ঠেকিয়ে নিজেকেই গুলি করে দিলেন প্রফুল্ল চাকি।

ক্ষুদিরামকে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর ফাঁসির নির্দেশ

ফাঁসির মঞ্চ এবং তার আগে আদালতের জিজ্ঞাসাবাদের সময়ও ক্ষুদিরাম বসু নিতান্ত স্বাভাবিক আচরণ করছিল। এ দেখে তখন কারোরই আশ্চর্যের কোনো সীমা ছিল না। যেহেতু ক্ষুদিরাম জানত না তাঁর সহযোগী প্রফুল্ল আত্মহত্যা করেছে, কাজেই প্রফুল্লকে বাঁচাবার জন্য শেষপর্যন্ত পুরো অপারেশনটির দায়ভারও নিজের কাঁধেই রাখছিল। এর বাইরে কোনো সংগঠন বা ব্যক্তির নাম বলা দূরে থাক।

মামলাটি শুরু হয়েছিল মে মাসের ২১ তারিখ। ক্ষুদিরামকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল জুন মাসের ১৩ তারিখ। ফাঁসির রায় শুনেও ক্ষুদিরাম যথাস্বাভাবিক আচরণেই বহাল থেকেছিল। আদালত কর্তৃক তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘তুমি কি বুঝতে পেরেছো তোমাকে কী শাস্তি দেওয়া হয়েছে?’ ক্ষুদিরাম বসু বলল ‘হ্যাঁ আমি বুঝতে পেরেছি, এবং আমি আবার আসব।’

১৯০৮ সালের আগস্ট মাসের ১১ তারিখ ভোর ছয়টায় ক্ষুদিরামের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল।

   

বিয়ের কার্ডে ভাইরাল বাংলাদেশি দম্পতি



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজকাল বিয়ে নিয়ে মানুষের নানা ধরনের প্রথা/ট্রেন্ড দেখতে পাওয়া যায়। কেউ বাইক নিয়ে বরযাত্রী যাচ্ছে, কেউ কনে সেজে নিজেই বর আনতে যাচ্ছে আবার কেউবা নেচে-গেয়ে ভিডিও আপলোড করছে সামাজিক মাধ্যমে। মূলত এসব কিছুর পেছনে থাকে একটাই উদ্দেশ্য আর তা হলো অন্যের চেয়ে নতুনত্ব কিছু করা। আর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া, আলোচনায় থাকা।

সম্প্রতি নেট দুনিয়ায় এমনই এক বিয়ে নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশি এক দম্পতির বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্র নিয়ে ঝড় উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে। প্রতিবেদন- এনডি টিভি।

সাধারণত বিয়ের কার্ড বা নিমন্ত্রণ পত্রে দামি চকলেট, বাদাম, খেজুর এবং কুকিজসহ বর-কনের ছবি সংযুক্ত থাকে। আর এই কার্ড বিভিন্ন ধরনের ডিজাইনে তৈরি করা হয়ে থাকে।

কিন্তু সানজানা তাবাসসুম স্নেহা ও মাহজিব হোসেন ইমন নামে ওই বাংলাদেশি দম্পতি এক অনন্য ডিজাইনের কার্ড তৈরি করেছেন তাদের বিয়ে উপলক্ষ্যে। যা দেখে অবাক হয়েছেন নেটিজেনরা। গবেষণাপত্রের মতো করে তৈরি করা হয়েছে এই বিয়ের কার্ড। যাতে শিরোনামে বিবাহের স্থানসহ দম্পতির নাম লেখা রয়েছে।

কার্ডটিতে কুরআনের আয়াতের সাথে একটি ভূমিকা রয়েছে যেখানে বিয়ের তাৎপর্য, দম্পতির প্রথম দেখা হয়েছিল তা উল্লেখ করা হয়েছে। তারপর পর্যায়ক্রমে তাদের বিবাহের প্রক্রিয়ার বিবরণ এবং উপসংহারের রূপরেখা দেয়া হয়েছে। উপসংহারে নতুন স্বপ্ন নিয়ে, নতুন জীবনে পা রাখার জন্য দোয়া চাওয়া হয়েছে।

বিয়ের কার্ডটি ওই দম্পতি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করায় রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। এক্স- এ শেয়ার করা ওই পোস্টে ৩.৩ মিলিয়নেরও বেশি ভিউ এবং ৬৯,০০০ লাইক পড়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু মন্তব্যও জমা হয়েছে ওই পোস্টের কমেন্ট বক্সে। নেটিজেনরা বিষয়টাকে খুব পছন্দ করেছেন, তারা এটাকে একটি হাস্যকর মাস্টারপিস বলে অভিহিত করেছেন।

একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, "এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে এটি একটি বিয়ের কার্ড।"

অন্য একজন মজা করে লিখেছেন, "তাহলে আপনি আমাকে বলছেন এটা গবেষণাপত্র নয়? আমি তো বিয়েতে উপস্থিত হওয়ার জন্য পিয়ার রিভিউ লিখতে বসেছিলাম।"

তৃতীয় একজন মন্তব্য করেছেন, "২ গবেষক বিয়ে করছেন। বুঝতে পেরেছেন। তারা একটি QR কোড ব্যবহার করতে পারত যা গুগোল ম্যাপস দিয়ে খোলা হতো।"

আরেকজন লিখেছেন, "এটি একটি থিসিসের মতো দেখাচ্ছে।"

;

বাংলাদেশের আবাসিক পাখি



অধ্যাপক ড. আ ন ম আমিনুর রহমান. পাখি ও বন্যপ্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল। ছবি: লেখক।

বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল। ছবি: লেখক।

  • Font increase
  • Font Decrease

মহান সৃষ্টিকর্তার তিন সুন্দর সৃষ্টি হলো ফুল, প্রজাপতি ও পাখি। ফুল দেখে আমরা যেমন মুগ্ধ হই তেমনি মুগ্ধ হই উড়ন্ত প্রজাপতি ও পাখি দেখে। তবে পাখির সৌন্দর্য্য ও ওড়াউড়িই যে শুধু আমাদের মুগ্ধ করে, তা কিন্তু নয়। বরং পাখির গানও দেয় অনাবিল আনন্দ। তবে, এর পাশাপাশি ওরা আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ব্যাপক অবদান রাখে। সত্যিই বর্নিল পাখিগুলোর মতো এমন সুন্দর প্রাণী পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। নানা আকার, রং ও ঢঙের পাখিগুলো যখন ওদের ডানায় ভর করে নীল আকাশে উড়ে বেড়ায় তখন দেখতে কতই না ভালো লাগে? পুরো পৃথিবী জুড়ে প্রায় ১০,০০০ প্রজাতির (Species) পাখির বাস। আর অনুমান করা হয়, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিগুলোর মোট সংখ্যা ২০ থেকে ৪০ হাজার কোটি। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় ১২শ প্রজাতির কিছু বেশি পাখি বাস করে। জানামতে, বাংলাদেশের পাখির তালিকায় এ পর্যন্ত কম-বেশি ৭২২টি প্রজাতি রেকর্ড করা হয়েছে। 

চাঁপাইনবাগঞ্জের রহনপুরে দেশের বৃহত্তম পাখি মদনটাক। ছবি: লেখক

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, বিগত কয়েক শতকে দু’শতাধিক প্রজাতির পাখি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে এবং বর্তমানে প্রায় ১২শ প্রজাতির পাখি নানা কারণে হুমকির মুখোমুখি অবস্থান করছে। অদূর বা দূর ভবিষ্যতের যে কোনো সময় এরা হয়তো পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। 

এবার আসা যাক পাখি কি সে কথায়। পাখি হলো বিভিন্ন আকার, ওজন ও আকৃতির উষ্ণ-রক্তবিশিষ্ট মেরুদণ্ডি প্রাণী যাদের দেহ পালকে আচ্ছাদিত, চোয়ালের উপর রয়েছে দাঁতবিহীন শক্ত ঠোঁট বা চঞ্চু (Beak), হৃৎপি- চার প্রকোষ্ঠে বিভক্ত, যাদের স্ত্রীরা শক্ত খোসাযুক্ত ডিম পাড়ে, দেহের বিপাকীয় হার উচ্চ, হাড় ফাঁপা ও কঙ্কাল হালকা এবং যারা সাধারণত উড়তে পারে।

জীবাস্ম বা ফসিল (Fossil) রেকর্ড থেকে জানা যায় পাখিরা থেরোপড (Theropod) দলের পালকযুক্ত পূর্বপুরুষ থেকে উৎপত্তিলাভ করেছে যারা প্রথাগতভাবে সরিসিয়ান ডায়নোসরদের (Saurischian dinosaurs) অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু বর্তমানে অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন যে, এরা অরনিথোসেলিডা-এর (Saurischian dinosaurs) অর্ন্তভুক্ত। যদিও একসময় জার্মানিতে প্রাপ্ত মধ্য জুরাসিক যুগের (Mid Jurassic Era - প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন বছর আগের) আর্কিওপটেরিক্স লিথোগ্রাফিকা (Archeopteryx lithographica)-কে পাখির সবচেয়ে পুরনো জীবাশ্ম মনে করা হতো- যাদের চঞ্চুর পরিবর্তে ছিল চোখা দাঁতযুক্ত শক্ত চোয়াল, শক্ত হাড়যুক্ত লম্বা লেজ ও যারা ভালোভাবে উড়তে পারত না। এদের মধ্যে সরীসৃপ ও পাখির এক চমৎকার যোগসূত্র ছিল। কিন্তু বর্তমানে নানা গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে, চীনে প্রাপ্ত ক্রিটাসিয়াস যুগের(Cretaceous Era- প্রায় ১২৫ মিলিয়ন বছর আগের) কনফুসিয়াসওরনিস স্যাঙ্ককটাস (Confuciusornis sanctus) হলো সত্যিকারের চঞ্চুযুক্ত পাখির সবচেয়ে পুরনো জীবাশ্ম। আধুনিক কালের পাখিগুলো এসব ডায়নোসর যুগের পাখি (থেরোপড) থেকে যুগ যুগ ধরে বিবর্তিত হয়েছে।

রাজশাহী শহরের একটি বটগাছে দেশের ক্ষুদ্রতম পাখি ফুলঝুরি। ছবি: লেখক

পাখি, প্রজাপতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর বিস্তৃতি অনুযায়ী বাংলাদেশকে সাতটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- ১. উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল - রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ। ২. উত্তরাঞ্চল- ময়মনসিংহ বিভাগ। ৩. উত্তর-পূর্বাঞ্চল - সিলেট বিভাগ। ৪. কেন্দ্রীয় অঞ্চল- বৃহত্তর ঢাকা, কুমিল্লা ও টাঙ্গাইল জেলা। ৫. দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল- বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা। ৬. দক্ষিণাঞ্চল- বৃহত্তর নোয়াখালি জেলা ও বরিশাল বিভাগ। ৭. দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল- খুলনা বিভাগ ও বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা।

বাংলাদেশের পাখির তালিকায় কমবেশি যে ৭২২ প্রজাতির পাখি রয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ৩৪০ প্রজাতি স্থায়ীভাবে বসবাস করে, অর্থাৎ এরা সারাবছর এদেশে থাকে, ডিম পাড়ে ও ছানা তোলে। এরাই হলো এদেশের আবাসিক পাখি (Resident Bird)। বাদবাকি প্রজাতিগুলো পরিযায়ী (Migratory - অর্থাৎ বছরের কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় এদেশে আসে, বসবাস করে ও সময়মতো মূল আবাসে ফিরে যায়), পন্থ-পরিযায়ী ও ভবঘুরে বা যাযাবর। এসব পাখি এদেশের মানুষের কাছে আগে, এমনকি এখনও, ‘অতিথি পাখি’ নামেই পরিচিত। এদেরই এক বিশাল অংশ এদেশে আসে শীতকালে যারা শীতের পরিযায়ী পাখি (Winter Migrant) নামেও পরিচিত। এরা এদেশে বংশবিস্তার করে না। এছাড়াও কিছু পাখি গ্রীষ্মেও পরিযায়ন করে, যেমন- বিভিন্ন প্রজাতির কোকিল (Cuckoo) ও হালতি বা সুমচা (Pitta)) পাখি। এরা গ্রীষ্মের প্রজনন পরিযায়ী (Summer Breeder) পাখি নামে পরিচিত। এছাড়াও বেশকিছু প্রজাতির পরিযায়ী পাখির উপস্থিতি এদেশে অনিয়মিত। হয়তো এক বছর এল, এরপর আবার ৫ বা ১০ বছর পর এল, অন্যদের মতো প্রতি বছর এল না। এদেরকে তাই যাযাবর বা ভবঘুরে বা অনিয়মিত পরিযায়ী পাখি বলে। আর এদের সংখ্যাও নেহাত কম না, এদেশে আসা সকল পরিযায়ী পাখির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এরা। আবার কোনো কোনো প্রজাতির পাখি অন্য কোনো দেশে পরিযায়নের এক পর্যায়ে এদেশে স্বল্প সময়ের জন্য বিশ্রাম নিতে আসে, যেমন- বাদামি চটক (Asian Brown Flycatcher), বন খঞ্জন (Forest Wagtail)ইত্যাদি। এরা পন্থ-পরিযায়ী (Passage-migrant) পাখি নামে পরিচিত।

শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলের উপর দিয়ে উড়ছে একঝাঁক বালিহাঁস। ছবি: লেখক

আবাসিক, পরিযায়ী, ভবঘুরে ও পন্থ-পরিযায়ী পাখি মিলে এদেশে কমবেশি যে ৭২২ প্রজাতির পাখি রয়েছে সেগুলো ২৩টি বর্গ ও ৯৩টি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। আশ্চর্যের বিষয় হলো এদেশের মোট পাখির অর্ধেকই একটি বর্গ প্যাসারিফরমেস বা শাখাচারী-এর ১৯টি পরিবারের সদস্য। আমাদের আবাসিক পাখিগুলোর মধ্যে আকার, ওজন ও রঙে যেমন ভিন্নতা রয়েছে, তেমনি ভিন্নতা রয়েছে এদের জীবণযাপন, আবাস, খাদ্যাভাস ও আচার-আচরণে। আবাসিক পাখিগুলোর মধ্যে যেমন আছে জলা বা সৈকতের পাখি, তেমনি আছে লোকালয় ও বনজঙ্গলের পাখি। এই পাখিগুলোর সবগুলোকেই যেমন একই জায়গায় বা একই মৌসুমে দেখা যায় না, তেমনি সমান সংখ্যায়ও দেখা মেলে না। তাছাড়া ৯৩টি গোত্রের মধ্যে ১৮টি গোত্রের কোনো পাখিই এদেশের আবাসিক পাখি নয় যার মধ্যে সারস (ক্রেন), বিভিন্ন প্রজাতির চা-পাখি, খোঁয়াজ, রামঠেঙ্গি, বিভিন্ন প্রজাতির ওয়ার্বলার, রোজফিঞ্চ ও বান্টিং উল্লেখযোগ্য।

ঢাকার দিয়াবাড়িতে অতি সুন্দর পুরুষ লাল মুনিয়া। ছবি: লেখক

এদেশের আবাসিক পাখিগুলোর মধ্যে অনেকগুলো প্রজাতিই দেখতে বেশ সুন্দর, যেমন- লালশির ট্রোগন (Red-headed Trogon), দুধরাজ (Paradise Flycatcher), পাতা বুলবুলি (Leafbird), আলতাপরী ((Scarlet Minivet), মৌটুসি (Purple-rumped Sunbird), নীলটুনি (Purple-rumped Sunbird), শ্বেতাক্ষী (Oriental White-eye), লাল মুনিয়া (Red Avadavat) ইত্যাদি। তবে এদের মধ্যে কোনটি বেশি সুন্দর তা হয়ত অনেকেরই জানা নেই। আসলে পাখির রাজ্যে কোনটি সবচেয়ে সুন্দর তা বলা কঠিন। কারণ, একেকটি পাখি একেক দিকে সুন্দর। একেকজনের দৃষ্টিতে একেক পাখিকে সুন্দর মনে হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত সুন্দর পাখিটিকে কারো কাছেই অসুন্দর লাগবে না। সৌন্দর্য বিবেচনায় এদেশের পাখিগুলোর মধ্যে পুরুষ নীলটুনি বা দুর্গাটুনটুনিই শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। যদিও লম্বালেজের পুরুষ ময়ূর (বর্তমানে বিলুপ্ত) এবং দুধরাজও অত্যন্ত সুন্দর। তাছাড়া টকটকে লাল পুরুঘ লাল মুনিয়াও কম সুন্দর নয়।

 

সাভারের জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসের বট গাছে বটকল। ছবি: লেখক

এবার এদেশের বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম আবাসিক পাখি প্রসঙ্গে আসছি। উচ্চতা-দৈর্ঘ্য-ওজনের ভিত্তিতে বর্তমানে এদেশের বৃহত্তম আবাসিক পাখির নাম মদনটাক (Lesser Adjutant Stork) যার উচ্চতা ১১৫-১২০ সেমি, দৈর্ঘ্য ৮৭-৯৩ সেমি ও ওজন ৪.৫ কেজি। আর ক্ষুদ্রতম পাখির নাম ছোট ফুলঝুরি (Pale-billed Flower-pecker) যার দৈর্ঘ্য মাত্র ৮ সেমি ও ওজন মাত্র ৬.৩ গ্রাম। অন্যদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম পাখির নাম উটপাখি (Ostrich- দৈর্ঘ্য ২৭৫ সেমি ও ওজন ১০০-১১৫ কেজি) ও ক্ষুদ্রতম পাখির নাম মৌগুঞ্জন পাখি (Bee Hummingbird- দৈর্ঘ্য মাত্র ৫-৬ সেমি ও ওজন মাত্র ১.৯৫-২.৬০ গ্রাম)। 

এদেশের আবাসিক পাখিগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে নদী, জলা ও সৈকতের পাখি, তেমনি রয়েছে লোকালয়, বনজঙ্গল, মাঠ, ঘাসবন, নলবন ও ঝোপঝাড়ের পাখি। কোনো কোনো পাখিদের কেবল বনেই দেখা যায়, যেমন- বনমোরগ (Red Jungle Fowl), মথুরা (Kalij Pheasant), কাঠময়ূর (Grey Peacock Pheasant), ধনেশ (Hornbill), কালো বাজ (Black Baza), পাহাড়ি নীলকন্ঠ (Oriental Dollarbird), মদনা টিয়া (Red-breasted Parakeet) ইত্যাদি আরও কত কী? কিছু কিছু পাখি শুধু মানুষের আবাস এলাকা বা আশেপাশে থাকে, যেমন- চড়ুই (Houuse Sparrow), টুনটুনি (Tailor Bird), ভাত শালিক (Common Myna), কাক (House Crow) ইত্যাদি।

সুন্দরবনের কটকায় ওড়ার মুহূর্তে একটি বড় সাদা বক। ছবি: লেখক

আবার কোনো কোনো পাখিদের শুধু খাল-বিল, নদী-নালা ও বিভিন্ন ধরনের জলাশয়েই দেখা যায়, যেমন- বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস (Ducks), বক (Heron), সারস (Stork), কাস্তেচরা (Black-headed Ibis), ডুবালু বা ডুবুরি (Grebe)ইত্যাদি। কিছু পাখি আছে যারা শুধু সুন্দরবনেই বাস করে, অন্য কোথাও না, যেমন- সুন্দরী হাঁস (Masked Finfoot), সুন্দরী সুমচা (Mangrove Pitta), লাল মাছরাঙা ((Ruddy Kingfisher), সিন্ধু ঈগল (White-bellied Sea Eagle)  ইত্যাদি।

কিছু কিছু পাখিকে বনজঙ্গল, লোকালয় বা বাদা বন (Mangrove Forest) প্রভৃতি সব পরিবেশেই দেখা যায়, যেমন- বিভিন্ন প্রজাতির হরিয়াল (Green Pigeon), তিলা ঘুঘু (Spotted Dove), দোয়েল (Magpie Robin), বুলবুলি (Bulbul), নীলটুনি, ফুলঝুরি (Flowerpeckers)  ইত্যাদি। মাঠের বা ক্ষেতখামারের পাখিদের মধ্যে রয়েছে হট্টিটি (Lapwings), খরমা (Indian Thick-knee), নীলকন্ঠ ((Roller), কসাই (Shrike), ফিঙে (Drongo), ভরত (Lark), ইত্যাদি।

ঘাসবনের পাখিদের মধ্যে রয়েছে নাগরবাটই (Barred Buttonquail), টেকটেকি (Striated Grassbird), মুনিয়া, ধানটুনি (Zitting Cisticola), কালোবুক বাবুই (Black-breasted Weaver) ইত্যাদি। ঝোপঝাড়ের পাখির মধ্যে রয়েছে কানাকুক্কা (Coucal), টুনটুনি ইত্যাদি। একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, সব প্রজাতির পাখি যেমন একই জায়গায় বা একই মৌসুমে দেখা যায় না, তেমনি সমান সংখ্যায়ও দেখা মেলে না।

বাইক্কা বিলে বালিহাঁসের ছবি তোলায় ব্যস্ত লেখক। ছবি: ড. জীবন চন্দ্র দাস

E-mail:[email protected], [email protected]

;

পিকনিক মৌসুমে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো



বর্ণালী জামান ,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

শীত সমাগমে দর্শনার্থীদের মাঝে বিনোদন স্পটগুলোতে ভ্রমণের আগ্রহ বাড়ে। সাধারণত শীত এলেই ভ্রমণপিপাসু মানুষের বিনোদন আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায় অনেকাংশেই। 

বিশেষ করে শীত মানেই পিকনিক উৎসব। শীতের ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে স্থানীয় বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে থাকেন সৌখিন মানুষেরা।

শীত মৌসুমে পিকনিকে অংশ নিয়ে দেহমনে প্রফুল্ল আনতে আগ্রহী ব্যক্তির সংখ্যা নিহায়েত কম নয়। এই সময় তাই পিকনিক স্পট গুলোতেও থাকে ভেজায় ভিড়। এ মৌসুমকে ঘিরে রংপুরের পিকনিক স্পটগুলো এখন প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত। অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, স্থাপনার সুরক্ষা ও সৌন্দর্যের জন্য রঙ করা, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাসহ দর্শনার্থীদের আনন্দদানের নানাবিধ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা গ্রহণের চেষ্টাও চলছে।

রংপুর এলাকায় যে সকল পিকনিক স্পট বা বিনোদন পার্ক রয়েছে তার মধ্যে রংপুর পাগলাপীর এলাকার ভিন্নজগৎ, পীরগঞ্জের আনন্দনগর, মাহিগঞ্জ এলাকার তাজহাট জমিদার বাড়ি, রংপুর চিড়িয়াখানা অন্যতম। এছাড়াও শহরের চিকলি ওয়াটার পার্ক, মিঠাপুকুরের ইকোপার্কসহ আরও কিছু স্থান রয়েছে, যে জায়গাগুলোতেও বিনোদন প্রত্যাশী মানুষের উপস্থিতিতে ব্যাপক সমাগম ঘটে।

এ নিয়ে ভিন্ন জগতের দায়িত্বরত সুপারভাইজার শরিফুল ইসলাম জানান, বিনোদন পার্কগুলোতে সারা বছরের ব্যবসায়িক সফলতা সাধারণত মৌসুমের ব্যবসার উপর অনেকটা নির্ভর করে। সেই লক্ষ্যে ভিন্নজগৎ কর্তৃপক্ষ নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও এগিয়ে চলছে। প্রতিবছরের মতো এ বছর শীত মৌসুমেও ব্যবসায় লাভের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি। 

পীরগঞ্জের আনন্দনগরেও বিনোদনপ্রেমীদের অধিক হারে আকর্ষণ করার নানাবিধ প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। যুক্ত করা হচ্ছে বেশকিছু নতুন নতুন রাইডসহ নির্দশন। 

সব মিলিয়ে নির্মল আনন্দদানে বিনোদন পার্কগুলো আরও বেশি আন্তরিক হবে- এই প্রত্যাশা বিনোদন প্রেমীদের। 

 

;

চা বরং আভিজাত্য, কি বলেন!



মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সাউথ-ইস্ট এশিয়া, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দুবাই, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, বেইজিং, সিউল, টোকিও বা ব্যাংককের মতো বড় শহরগুলোর সবচেয়ে অভিজাত বা সিগনেচার শপিং মলে ঢুকে আশপাশে খোঁজ করলেই চোখে পড়বে একটা চায়ের দোকান। সেটা হচ্ছে টিডব্লিউজি ১৮৩৭ (TWG 1837)।

প্রথম টিডব্লিউজি’র চা পান করা হয় বছর সাতেক আগে মালয়েশিয়ার অভিজাত মল প্যাভিলিয়ানে। সম্প্রতি ব্যাংককের এম্পোরিয়াম শপিং মলে আবারও টিডব্লিউজি’র চায়ের স্বাদ নেয়া হলো। না, এই চায়ের স্বাদ বিশেষ কিছু নয়। বরং বাঙালি জিভে এই চা সবসময় পর্যাপ্ত গরম মনে হবে না। বলা যায় কুসুম কুসুম গরম। তাহলে টিডব্লিউজি চায়ের বিশেষত্ব কি?

এক কথায় বলা যায় ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা। পরিবেশনে, আভিজাত্যে নিজের ব্র্যান্ডের একটা আলাদা স্বকীয়তা তৈরি করেছে সিঙ্গাপুরের এই চায়ের ব্র্যান্ড। তাই ব্যাংককের মতো শহরে যেখানে কফি মানুষের প্রধান পানীয়, সেখানে নিজ পরিচয়ে নিজেকে বিক্রি করে যাচ্ছে টিডব্লিউজি’র চা।


এখানে চায়ের যে কত শত প্রকার রয়েছে সেটা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। সিঙ্গাপুর নিজেরা চা উৎপাদন না করেও এমন একটি চায়ের ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠা তাদের ব্যবসায়িক সফলতার আর ইমেজের বহিঃপ্রকাশ।

টিডব্লিউজি নিজেদের চা’কে প্রিমিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং চা খাওয়ার এক ভিন্ন সংস্কৃতি তৈরি করেছে। এখানে এক কাপ চা নয় বরং এক কেটলি চা পরিবেশন করা হয়। সবমিলিয়ে ৫০০ মিলিলিটার ইংলিশ চায়ের মূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ হাজার টাকা। এক কেটলি চা ২০ হাজার টাকা, এমন মূল্যও রয়েছে এখানে।

টিডব্লিউজি ১৮৩৭ খচিত সিরামিকের কেটলিতে পরিবেশন করা হয় চা। চায়ের চামচ, কাপ, পিরিচ সবকিছুতে ব্র্যান্ডে নাম খচিত রয়েছে। চিনি আলাদাভাবে দেওয়া হয়। এই চা ফু দিয়ে গরম কমানোর প্রয়োজন হয় না। চাইলে এক চুমুকেই ১০০ গ্রামের পেয়ালা খালি করে ফেলা যায়। তবে এখানকার গ্রাহকরা সেটা করেন না। বরং ধীরে ধীরে ঘণ্টার ওপর সময় নিয়ে এক কেটলি চা পান করা হয়। ব্যবসায়িক আলাপ, কাজের চুক্তি সম্পাদনা, এসব বৈঠকে এক আভিজাত্যের ছোঁয়া আনে এই টিডব্লিউজি’র চা।


‘দ্যা ওয়েলবিয়িং গ্রুপ’কেই সংক্ষেপে বলা হয় টিডব্লিউজি। পৃথিবীজুড়ে চায়ের প্রথম চমৎকার স্বাদ ও অভিজাত ব্র্যান্ড বলা হয় একে। ১৮৩৭ সালের দিকে যখন সিঙ্গাপুর এশিয়ার প্রধান বন্দর হয়ে উঠছিল, মশলা, চা ছাড়াও নানান পণ্যের বাজার হয়ে উঠে, তখন প্রতিষ্ঠিত হয় এই চায়ের ব্র্যান্ড। তবে ২০০৮ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজেদের ফ্রাঞ্চাইজ এবং চা বার চালু করে প্রতিষ্ঠানটি।

ব্যাংককের এম্পোরিয়াম বা কুয়ালালামপুরের প্যাভিলিয়ান, সবখানেই টিডব্লিউজি’র আউটলেটের একটা সাধারণ বৈশিষ্ট হলো বুটিক নকশা। সেখানে অভিজাত ঝাড়বাতির সজ্জা থাকে এবং হাইওয়ে আলো ব্যবহৃত হয়। বদ্ধ রেস্টুরেন্ট নয়, বরং খোলামেলা জায়গায় থাকে টি বার। ঢুকলে চোখে পড়বে শত শত চায়ের ফ্লেবার সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

দুনিয়ার প্রায় এক হাজার চা বাগান থেকে সেরা চা পাতার কুড়ি থেকে চা উৎপাদন করে টিডব্লিউজি। আর রয়েছে প্রায় ৮০০ ফ্লেভার। উৎসব উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত এডিশনের চা উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি। চা বাগানগুলোর সঙ্গে সরাসরি বিশেষ এই চা উৎপাদনে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি।


চায়ের আনুষঙ্গিক পাত্রও বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। একটি কেটলির মূল্য সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেখলাম এম্পোরিয়ামে। এছাড়াও নিজেদের ব্র্যান্ডের চা চামচ, পেয়ালা, চিনির পাত্র, দুধের পাত্র, পিরিচও রয়েছে। এছাড়াও সুভিনিয়রতো রয়েছেই৷

;