ডিজিটাল মার্কেটিং-১

ব্র্যান্ডেড স্টোরিটেলিং : ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ



তৌহিদ শরীফ, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ডিজিটাল মার্কেটিং এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং ইফেক্টিভ মার্কেটিং প্লাটফর্ম

ডিজিটাল মার্কেটিং এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং ইফেক্টিভ মার্কেটিং প্লাটফর্ম

  • Font increase
  • Font Decrease

“Future of Future Advertising”
প্রথমে খুব সংক্ষেপে বলে নেব কেন ডিজিটাল মার্কেটিং এখন আর কোনো অপশন বা ফিউচার নয় বরং বর্তমানের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং ইফেক্টিভ মার্কেটিং প্লাটফর্ম। তারপর আসব মূল টপিক্স, “ব্র্যান্ডেড স্টোরিটেলিং—ফিউচার অব অ্যাডভার্টাইজিং”-এ।

বিশ্বজুড়ে চলছে ইন্টারনেটের জোয়ার। দেশে শুধুমাত্র গেল এক বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১ কোটি। তাহলে ভাবুন দেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কত?


জ্বি, প্রায় ১০ কোটির কাছাকাছি। কিভাবে হলো এই বিস্ফোরণ? সহজ চোখে দেখলে— 


আর আরেকটু ঘেঁটে দেখলে হয়তো দেখতে পাবেন এই ইন্টারনেট জোয়ার আর অনুকূল স্রোতের হাওয়া আসছে কোন দিক থেকে।

১। বাংলাদেশকে ডিজিটালি ক্ষমতায়িত সমাজ ও অর্থনীতিতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়।
২। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, সাবমেরিন কেবল, হাই টেক পার্ক ইত্যাদি অবকাঠামো দুনিয়াটাকে আক্ষরিক অর্থে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসছে। ছোট শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা। ভিডিওটি দেখলে অবাক হবেন মাস্ট—

৩। সরকার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে নতুন স্টার্টআপ-আইডিয়া, উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তাদের ওপর। এরাই তৈরি হচ্ছে ফিউচার বিগ জায়ান্ট কোম্পানি হিসেবে। সেখানে দেখা দিচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রয়োজনীয়তা। তারা এমন লোকদের সন্ধান করছেন যারা তাদের প্রয়োজন অনুসারে ডজিটিাল মার্কেটিং কৌশল তৈরি করতে এবং প্রয়োগ করতে পারেন।

৪। ইন্টারনেট অব থিংস—ব্যক্তিগত ব্যবহারযোগ্য ডিভাইস যেমন স্মার্ট গাড়ি, স্মার্ট গৃহস্থালি সরঞ্জামাদি, স্মার্ট হোম ইত্যাদি বাংলাদেশের জন্য তুলনামূলকভাবে নতুন হলেও খুব শীঘ্রই তা প্রচলিত হবে। এ জাতীয় ডিভাইসগুলোর উত্থান ডিজিটাল মার্কেটিংকে আরো আকর্ষণীয় ও চ্যালেঞ্জিং করবে সাথে তৈরি করবে নতুন অনেক সম্ভাবনাময় পথ।

সব মিলিয়ে যদি এক কথায় বলতে চাই— “Digital Bangladesh—Smart Ecosystem for Smart Marketplace”

মানে যেখানে সরকার নিজেই তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সেই সুযোগ কেন হাতছাড়া করব?

এবার বলি ডিজিটাল মার্কেটিং কেন সবচেয়ে বেশি ইফেক্টিভ ও প্রফিটেবল :
১। প্রেস অ্যাড অথবা টেলিভিশনে মার্কেটিংয়ে খরচের তুলনায় ডিজিটাল মার্কেটিং আরো কম ব্যয়বহুল ও সর্বোচ্চ রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট এবং কনভার্সন রেট।
২। এখানে সবকিছুর ওপর নজরদারি করা যায়। যেসব চ্যানেল বা কৌশল অকার্যকর বা কম কার্যকর দেখা দেবে সেখানে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়ে ফলপ্রসূ স্ট্রাটেজিতে বেশি বিনিয়োগ করা সম্ভব একমাত্র ডিজিটালেই।
৩। বিভিন্ন ওয়েবসাইট এনালাইসিস ও নানান ধরনের টেকনোলজির সুবাদে গ্রাহকের কেনাকাটার অভ্যাসগত ধরন অনুযায়ী তাকে তার কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি ক্রয়ের ব্যাপারে মানসিকভাবে খুব সহজে ঠেলে দেওয়া যায়।
৪। গ্রাহকের ধরন অনুযায়ী মাল্টি লেয়ার স্ট্রাটেজি করে এবং ভৌগোলিক অবস্থান ধরে মার্কেটিং সম্ভব।

সহজ কথায় আরেকবার বলি। ডিজিটাল মার্কেটিং খুব কম খরচেই করা সম্ভব ব্যাপারটা এরকম না। বরং যে কোনো বাজেট দিয়ে, আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোনো অংকের টাকা দিয়ে আপনি মার্কেটিং করতে পারবেন। মার্কেটিং শুধু বড় বড় দৈত্যদের জন্য নয়, সবার জন্য উন্মুক্ত।

জ্বি, সবকিছু যদি নতুন করে ভাববার প্রয়োজন হয় তবে তাই করেন কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের এই জোয়ারে ব্যবসার অস্তিত্বকে হারিয়ে না ফেলতে চাইলে ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ের পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিংকে সিরিয়াসলি নিন।

এবার আসি মূল টপিক্স “ব্র্যান্ডেড স্টোরিটেলিং—ফিউচার অব অ্যাডভার্টাইজিং”-এ।

এখানে মার্কেটে দুটি ঘটনা পাশাপাশি ঘটেছে। একদিকে রেডিও, প্রিন্ট ও টেলিভিশন মিডিয়ার অভিজ্ঞতা, এর সংস্কৃতি, বিনোদন ধরন ও ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এই সবকিছুর ওপর অবিশ্বাস, অভক্তি ও বিরক্তিকর মনোভাব তৈরি হয়েছে আর এই সুযোগেরই হাত ধরে অপরদিকে ওয়েবসিরিজ, স্ট্রিমিং চ্যানেল, ভিডিও অন ডিমান্ড, ইউটিউব চ্যানেল ও ব্র্যান্ডেড কনটেন্টের মতো নতুন বিনোদন মাধ্যম মার্কেটে জায়গা করে নিয়েছে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে ৮৪% মিলেনিয়াল স্বীকার করেছে তারা ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং পছন্দও করেন না বিশ্বাসও করেন না। এমনকি তারা আর এসব দেখেনও না শোনেনও না। বদলে তারা লাইভ স্ট্রিমিং, নেটফ্লিক্স, অ্যানিমে, ইউটিউব এসবে সময় কাটায়। এমনকি ৮৫% মিলেনিয়াল স্বীকার করেছেন যে তারা নিয়মিত ইউটিউব দেখেন। মিলেনিয়াল বলতে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ জনসংখ্যার কথা বলছি যারা মূলত জেনারেশন এক্স ও জেনারেশন ওয়াই হিসেবেও পরিচিত। এক কথায় ইয়াং জেনারেশন। [সোর্স: জনপ্রিয় পত্রিকা ফোর্বস এর তথ্য অনুযায়ী।]

তাই বলে অ্যাডভারটাইজিংয়ের স্কোপ কমে যাচ্ছে না বরং প্রয়োজন শুধুমাত্র এই পরিবর্তনশীল অভ্যাসের জন্য বিজ্ঞাপনের কৌশলগত পরিবর্তন।

৮৭% ইয়াং জেনারেশনই মনে করে প্রোডাক্ট প্লেসমেন্ট এমন এক স্ট্রাটেজি যেটায় তাদের কোনো আপত্তি নেই।

প্রোডাক্ট প্লেসমেন্টের কিছু উদাহরণ দিই—

এগুলো কিছু স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের অনলাইন ওয়েবসিরিজ থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। পুরো সিরিজের লিংক দেওয়া আছে যা আপনি ইউটিউবে বিনামূল্যেই দেখতে পারবেন।

দেখুন আরো সহজ করে বলি, প্রি-রোল অ্যাড, স্কিপ অ্যাড বা অন্যান্য হাজারও কৌশল যেখানে বন্ধ করে দেওয়া যায়, স্কিপ করা যায় বা শব্দ বন্ধ করে দেওয়া যায় সেখানে একমাত্র প্রোডাক্ট প্লেসমেন্ট হচ্ছে বেস্ট সমাধান। যেখানে ব্র্যান্ড গল্পের অংশ হয়ে উপস্থাপিত হয় এবং দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়।

একটা সুন্দর স্টোরিলাইন যেখানে গল্প বলার ছলে খুবই আলতোভাবে ও তুলনামূলক অনেক কম আক্রমণাত্মকভাবে প্রচারণা করা হয়, এবং ব্র্যান্ডের নৈতিক মূল্যবোধ গল্পে সংযুক্ত করা হয়, এরকম স্টোরিলাইন বা গল্প গ্রাহকের সাথে ব্র্যান্ডের একধরনের সূক্ষ্ম সম্পর্ক তৈরি করে। ওই ব্র্যান্ডের প্রতি নিজের অজান্তেই গ্রাহকের ভালোলাগা তৈরি হতে থাকে। যেটা ধীরে ধীরে সেলস্-এ রূপ নেয়।

একটা ভালো ওয়েব সিরিজ আপনার পণ্যের নতুন ও পুরাতন গ্রাহকের সাথে সম্পর্ক ভালো করবে। একবার গ্রাহক আপনার ওয়েব সিরিজের মজা পেয়ে গেলে, তারা আঠার মতো আপনার ব্র্যান্ডের সাথে লেগে থাকবে পরবর্তীতে কী হবে তা দেখার জন্য। ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, বিহাইন্ড দ্য সিন ইত্যাদি ঘাটিয়ে ওই ব্র্যান্ডেড কনটেন্টের পার্ট হবে। সেই সুবাদে গ্রাহকের ব্র্যান্ডটিকে আরো কাছে থেকে দেখার সুযোগ হবে এবং ধীরে ধীরে তৈরি হতে পারে ভালোলাগা যা আল্টিমেটলি নিয়ে যাবে ক্রমবর্ধমান সেলস্-এর দিকেই।

এভাবেই স্টোরিটেলিং আরো ইন্টারেক্টিভ হবে, দর্শক ব্র্যান্ডের সাথে নিজেকে আরো কাছ থেকে সম্পৃক্ত করতে পারবে। ব্র্যান্ডের প্রতি তৈরি হবে বিশ্বাস, ভালোবাসা ও আস্থা। ভালো মানের গল্প ও বিনোদনের মাধ্যমে জায়গা করে নেবে গ্রাহকের হৃদয়ে।

মাঝে মাঝে কোনো ওয়েব সিরিজ এতটা জনপ্রিয় ও সফল হয় যে এটা ব্র্যান্ডের ফিউচার এসেট হয়ে যায়। এবং চাহিদা তৈরি হয় আরো নতুন সিজনের।

তাছাড়া সবচেয়ে যেটা মজার বিষয় সেটা হচ্ছে মিডিয়া বায়িং বাজেট। ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিংয়ে যেখানে বিজ্ঞাপন প্রচারে লক্ষ কোটি টাকা ঢালা লাগে সেখানে বিনা খরচে সম্প্রচার করছেন আপনার প্রোগ্রাম আর সেটা অনলাইনে থেকে যাবে আজীবন। যুগের পর যুগ, দিন দিন নতুন নতুন গ্রাহক সাক্ষী হবে এই কনটেন্টের। জীবিত থাকবে গল্প সবসময়।

ফিউচার মার্কেটিংয়ের দিকে তাকালে একটা জিনিসই দেখা যায়, সেটা হচ্ছে পরিবর্তন। নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে ডিজিটাল এই পরিবর্তনের সাথে অবশ্যই মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য নিয়ে চলতে হবে।

টেলিভিশন যেখানে ট্র্যাডিশনের কথা বলে ওয়েব সিরিজ সেখানে পরিবর্তনের কথা বলে। সবাই আজকাল অনলাইনে। সবাই টেলিভিশনের চেয়ে অনলাইনে বেশি সময় কাটায়। টেলিভিশন থেকে দিন দিন চোখ সরে চলে যাচ্ছে অনলাইনে। বিজ্ঞাপন প্রণেতারা প্রতিটি মানুষকে একজোড়া আইবল হিসেবে গণনা করে। এবং আইবল ধরে রাখার জন্য প্রয়াজন নিত্য নতুন কৌশল।

মিলেনিয়ালদের ধরে রাখার জন্য ব্র্যান্ডিং খুবই জরুরি। যদিও বেশি দাম কিছুটা তারতম্য তৈরি করে তবে ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা ও বিশ্বস্ততা থাকলে অতিরিক্ত দাম খুব বেশি ব্যবধান তৈরি করতে পারে না।

সর্বশেষ কথা টাইটেল স্পনসরশিপের মাধ্যমে আপনি হয়তো প্রত্যক্ষভাবে ওয়েব সিরিজের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেন কিন্তু আসল সম্পৃক্ততা তৈরি হয় যখন গল্পে বা স্ক্রিপ্টে সরাসরি ব্র্যান্ডকে সম্পৃক্ত করা যায়। অন্যথা সব জোরপূর্বক প্রোডাক্ট প্লেসমেন্টের মতোই দেখাবে। আরেকটি জিনিস, আপনার গল্পের ধরন যেই ধরণারই হোক না কেন, দর্শক বা মিলেনিয়ালদের জীবনে সেটার ইতিবাচক ভূমিকা থাকতে হবে। এমন গল্প, মতাদর্শ বা ট্রিটমেন্ট থাকতে হবে যা সচরাচর টেলিভিশনে দেখা যায় না।

অনেক লেখা হয়েছে কিন্তু মূল আকর্ষণ এখনো রয়ে গেছে। কথা বলব ব্র্যান্ডেড স্টোরিটেলিং-এর আপাদমস্তক নিয়ে। এর সফলতার মূলমন্ত্র, কেইস স্টাডি, এক্সপার্টদের মতামত ইত্যাদি নিয়ে। বলব আরেকদিন আরেকটি পর্বে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, বার্তা২৪-এর সাথেই থাকুন।

   

ব্যাঙের চিৎকার যে কারণে শুনতে পায় না মানুষ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যাঙ অন্য প্রাণীদের মতো চিৎকার করলেও শ্রবণ শক্তির চেয়ে ফ্রিকোয়েন্সি বেশি হওয়ার কারণে মানুষ তা শুনতে পায় না।

ব্রাজিলের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্পিনাসের এক দল গবেষকের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

আমাজন জঙ্গলে ব্যাঙ নিয়ে গবেষণা করার সময় তারা অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করেছিলেন। তারা দেখেন যে, স্মল লিফ লিটার ব্যাঙগুলি তাদের মাথা পিছনে ফেলে তাদের মুখ প্রশস্ত করে রেখেছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল, তারা চিৎকার করছে। কিন্তু তারা কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না।

যখন বিজ্ঞানীরা উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি অডিও রেকর্ডার ব্যবহার করে রেকর্ড করেছিল, তখন তারা উভচর প্রাণীদের ‘প্রতিরক্ষামূলক আল্ট্রাসাউন্ড’ রেকর্ড করতে সক্ষম হন। 

যখন তারা বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে শব্দ বিশ্লেষণ করেন, তখন তারা দেখতে পান যে, এটির ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ ছিল ৭ কিলোহার্টজ থেকে ৪৪  কিলোহার্টজ। মানুষ ২০ কিলোহার্টজ এর বেশি ফ্রিকোয়েন্সি শুনতে পারে না।

এ গবেষক দলের মতে, ব্যাঙের চিৎকারটি শিকারিদের প্রতিক্রিয়া। শিকারিকে আক্রমণ করার জন্য বা অন্য প্রাণীকে আকৃষ্ট করার জন্য এটি তাদের কৌশল হতে পারে।

দলের একজন গবেষক মারিয়ানা রেতুসি পন্টেস বলেছেন, তিনি ভিন্ন গবেষণা ট্রিপে ব্যাঙকে একই আচরণ প্রদর্শন করতে দেখেছেন, কিন্তু তার কাছে এ শব্দ রেকর্ড করার জন্য সঠিক প্রযুক্তি ছিল না।

বাদুড়, তিমি, গন্ডার, কুকুর, কবুতর, কাটলফিশসহ সব ধরনের প্রাণী যোগাযোগের জন্য ইনফ্রাসোনিক এবং আল্ট্রা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে এবং মানুষ এর কিছুই শুনতে পায় না।

আপনি যখন একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হাঁটা উপভোগ করছেন, তখন হয়তো আপনার চারপাশে একটি কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ থাকতে পারে, যা আপনি শুনছেন না।

;

মাটির নিচে প্রাচীন দুর্গের সন্ধান, অর্থের অভাবে বন্ধ কাজ



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকে ফিরে: গাজীপুরের কাপাসিয়ায় লাল মাটি ও ঝোপ-ঝাড়ের ভেতর ঐতিহাসিক এক একডালা দুর্গের সন্ধান মিলেছে। এর পর নিজস্ব অর্থায়নে শুরু হয় খনন কাজ। কিছুটা দৃশ্যমান হয় দুর্গ। তবে সরকারি অর্থায়ন না পাওয়ায় বন্ধ রয়েছে খনন কাজ। মাটির নিচে চাপা পড়া ইতিহাস খনন করে সামনে আসলে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, রানি ভবানী বানিয়া রাজাদের শেষ বংশধর ছিলেন। তার দরদরিয়া দুর্গ ছিল গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে, বানার নদের পারে। দুই দশক আগেও সেখানে দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ভালোভাবে দৃশ্যমান ছিল। ক্রমান্বয়ে দৃশ্যমান ধ্বংসাবশেষ সব বিলীন হয়ে যায়।

দরদরিয়া দুর্গের ইতিহাসের গল্পগুলো মানুষের মুখে মুখে। তবে সেই ইতিহাসের অস্তিত্ব ছুঁয়ে দেখতে সেখানে শুরু হয় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান খননকাজ শুরু করেন। তার সঙ্গে কাজ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। সামনে আরও অনেকেই এই কাজে যুক্ত হবেন। নিজস্ব অর্থায়নে এই খননকাজ শুরু করেছেন সুফি মোস্তাফিজুর রহমান।

এক সময় লোকমুখে গল্প শোনা যেত, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে রয়েছে ‘রানির বাড়ি’। সেই মধ্যযুগের ইতিহাস এতদিন মানুষের মুখে মুখে ছিল। বাস্তবে তার অস্তিত্বের খোঁজ পাওয়া গেছে। বহুদিনের চেষ্টায় একদল গবেষক ‘রানির বাড়ি’ বা দরদরিয়া দুর্গ আবিষ্কার করেছেন। তাদের এ আবিষ্কার মধ্যযুগের ইতিহাস মানুষের বাস্তবে দেখার বাসনা পূরণ হবে। আংশিক খনন করা দুর্গটি দেখতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজনের ভিড় করেছেন। তবে বর্তমানে অনুদানের অভাবে দুর্গটির খনন কাজ বন্ধ রয়েছে।

‘রানির বাড়ি’ বা দরদরিয়ায় সরজমিনে দেখা যায়, বালির বস্তা দিয়ে দুর্গের দুই পাস ঘিরে রাখা হয়েছে। পূর্ব দিকের অংশে খোলা রয়েছে। দুর্গের চারপাশে মলি বাঁশ দিয়ে বেষ্টনী দিয়ে রাখা রয়েছে। পাশের কৃষি জমিতে সেচের পানি দুর্গের ভেতর প্রবেশ করেছে।

পাশের কৃষি জমিতে সেচের পানি দুর্গের ভেতর প্রবেশ করেছে

কয়েকজন এলাকাবাসী জানায়, অনেক দিন ধরে খননকাজ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় রেখে তারা চলে গেছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন দেখতে এসে দুর্গ থেকে ইটের গাঁথুনি থেকে ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় থাকলে দুর্গের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি জরুরি ভিত্তিতে দুর্গের খননের অংশটুকুর নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।

স্থানীয় বাসিন্দা মঈনুদ্দিন (৬০) বলেন, ছোট থেকে শুনে আসছি এই রানির ভিটার কথা৷ কিন্তু এটার সঠিক ইতিহাস জানতাম না। সবটুকু খনন করা হলে ইতিহাস উন্মোচন হবে।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র টোক নগর ভেংগুরদী গ্রামের আশিক রব্বানী জিহান বলেন, এটি আমাদের কাপাসিয়ার জন্য বিশাল এক সম্পদ৷ এটি খনন করা হলে আগে কি ছিলো বা এখন কি আছে সেটা জানা যাবে৷ এটি দৃশ্যমান হলে গাজীপুর তথা বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক এক স্থাপনা হতে পারে৷ পর্যটন কেন্দ্র হলে এলাকার উন্নয়ন হবে।

 লাল মাটি ও ঝোপ-ঝাড়ের ভেতর ঐতিহাসিক একডালা দুর্গের সন্ধান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান নিজ খরচে খননকাজ শুরু করেছেন। এই কাজে যুক্ত আছেন তার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ঐতিহ্য অন্বেষণ’ এর বেশ কয়েকজন প্রত্নতাত্ত্বিক।

অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কাপাসিয়ার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে বানার নদের পূর্ব পাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রানি ভবানীর দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। তিনি ছিলেন বেনীয়া রাজার শেষ বংশধর। তার দুর্গের সবচেয়ে বেশি অবস্থান দরদরিয়া গ্রামের উত্তর অংশে। এই কৃষি জমির পাশে উঁচু অংশ খননের পর বর্তমানে দুর্গের কিছু অংশের নিদর্শন দৃশ্যমান হয়েছে। এখনো পর্যন্ত যতটুকু খনন করা হয়েছে তা নিজস্ব অর্থায়নে করা হয়েছে। ফান্ড পেলে খননকাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

 

;

বৈশাখের প্রথম বৃষ্টিতে সিক্ত রাজধানী



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রুদ্র বৈশাখ তার নিয়ম অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই সূর্যের পূর্ণ তাপে জ্বলছিল। ভরদুপুরে ঘরের বাইর হওয়াই দায়! মাথার উপর প্রচণ্ড উত্তাপ যেন ঘামের জলপ্রপাত সৃষ্টি করে।

‘দুপুরের ভেপসা গরম, ঘেমে শরীর তীর-ঘাম/তবু ধানকাটায় ব্যস্ত কৃষক, নেই কারো বিশ্রাম/এমন ক্ষণে ঈশান কোণে মেঘ-বিজলীর গর্জন/অতঃপর স্বস্তির নিঃশ্বাস নামলো প্রতিক্ষার বর্ষণ।’ অবশেষে মঙ্গলবার দিনভর তীব্র তাপদাহের পর কবিতার এই লাইনগুলোর মতোই দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই রাজধানীর বুকে নামল ঝুম বৃষ্টি। শান্তির বৃষ্টিফোঁটায় সিক্ত হলো রাজধানীর মাটি।     


আর সেই সঙ্গে ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দের প্রথম বৃষ্টিতে উল্লাসে মেতে উঠল নগরবাসী। 

বৃষ্টির ঝুম ঝুম ফোঁটায় যেন এক অনন্য নূপুরধ্বনির তরঙ্গ তুলেছে প্রকৃতি। ঘাম, গরম, অস্বস্তি যে খরায় পুড়ছিল মানুষের মন, তাতে শান্তির অমৃতধারা নেমেছে সূদুর আকাশ থেকে। তবে শুধু বৃষ্টি নয়, সঙ্গে জোড় বেঁধেছে দমকা হাওয়া। বৈশাখের এক অনস্বীকার্য অংশ হলো কাল বৈশাখী ঝড়। বৈশাখে আসন্ন সেই ঝড়ের ইঙ্গিতই বয়ে আনলো পাগলাটে বাতাস।


এর আগে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ২টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া এবং কুমিল্লা অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

;

কুরচি ফুল, দেশি হয়েও আজ ভিনদেশি



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সন্ধ্যার আবছা আলোয় ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তীব্র একটা সুগন্ধে মনটা ভাল হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম এটি একটি ফুলের গন্ধ, যারা রাত্রে সুগন্ধ ছড়ায়। অন্যান্য ফুলের গন্ধের চেয়ে এর গন্ধটা একটু যেন বেশি তীব্র। খুঁজতে লাগলাম গাছটিকে। অবশেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে কোর্টস গার্ডেনে গাছটিকে খুঁজে পেলাম। গাছটিকে চিনে রাখলাম।

পরদিন দিনের আলোয় গাছটিকে ভাল করে লক্ষ্য করলাম। একটু অপরিচিত ঠেকলো। ভাবলাম বিদেশি কোনো ফুল গাছ হবে হয়তো। গাছটি সনাক্ত করতে গাছ, ফুল আর পাতার ছবি তুলে পাঠালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনকে। তিনি দেখে সাথে সাথেই জানালেন গাছটির নাম কুরচি। আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ।

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে কোর্টস গার্ডেনে কুরচি গাছ

উইকিপিডিয়াতে গাছটির আদি বাসস্থান মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ, ইন্দোচীন এবং চীনের কিছু অংশের নাম লেখা রয়েছে।

ড. জসীম বলেন, কুরচি আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। আমরা এটি রিপোর্ট করার আগেই হয়তো আফ্রিকা কিংবা অন্য কোনো স্থান হতে রিপোর্টিং হয়ে গেলে সেটি ওই স্থানের আদি উদ্ভিদ হয়ে যায়। শুধু কুরচি নয় এমনিভাবে আমাদের অনেক দেশীয় উদ্ভিদ বিদেশি হয়ে গেছে। অথচ আমাদের প্রাচীন আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্রে ও সাহিত্যে কুরচির উল্লেখ আছে।

তিনি আরও বলেন, কুরচি গাছের স্বাভাবিক উচ্চতা ১০ থেকে ২০ ফুট। ফুল অনেকটা রঙ্গন ফুলের মতো, নিচের অংশ নলাকৃতি এবং উপরের অংশ মুক্ত পাপড়িতে ছড়ানো। পাঁচটি পাপড়ির মুক্ত অংশ ঈষৎ বাঁকানো, বর্ণ দুধসাদা এবং তীব্র সুগন্ধি কিন্তু মধুর।

ড. জসীম আক্ষেপ করে বলেন, দেখতে সুন্দর ও তীব্র সুগন্ধিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও বাগানীদের কাছে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে তেমন কদর পায়নি। ফলে একসময় এ গাছ যত্রতত্র চোখে পড়লেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মধুপুরের শালবনে প্রচুর কুরচি গাছের দেখা মেলে। ঢাকায় রমনা উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানেও কুরচি গাছ আছে।

সুগন্ধে ভরা কুরচি ফুল গাছ

কুরচির ঔষধিগুণ সমন্ধে তিনি বলেন, পুরো কুরচি গাছটিই ঔষধি গুণে ভরা। কুরচি গাছের বাকল ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানার মহৌষধ। হাঁপানি রোগে শিকড়ের রস দারুণ উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, কৃমি রোগ ও মুখের ঘায়ে এর শিকড়, পাতা ও বাকল খুব কার্যকর। তবে এটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার উপদেশ দেন তিনি।

কুরচি অ্যাপোসাইনেসি পরিবারের একটি ক্ষুদ্র পত্রমোচী মাঝারী বৃক্ষ। পাহাড়-পর্বতে এই গাছ হরহামেশাই দেখা যায় বলে হয়তো এর অন্য নাম গিরিমল্লিকা। এ ছাড়া কুরচি গাছটি কুটজ, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, মহাগন্ধ, কোটিশ্বর নামেও পরিচিত। এর নরম কাঠ থেকে পুতুল ও খেলনা তৈরি হয়।

;