মেঘপাহাড়ের ডাক-৭

মেঘালয়-স্কটল্যান্ড অব দ্য ইস্ট



মাহমুদ হাফিজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর
লেখক, মাহমুদ হাফিজ

লেখক, মাহমুদ হাফিজ

  • Font increase
  • Font Decrease

মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের সকালটি বড় মনোরম হয়ে ধরা দিলো। সচরাচর মেঘলা দিন আজ ঝলমলে রোদের ঝিলিক। তবে ভ্রাম্যমাণ মেঘের ভেলায় তা আবার মাঝে মাঝে ছায়াময় হয়ে ওঠে। বিগত সন্ধ্যায় শিলং পৌঁছে এর রাত্রির রূপটা দেখেছি মাত্র। আসল চিত্রটি চোখের সামনে এলো সকালে। সাতসকালে শৈলকন্যা শিলংয়ের রাস্তায় রাস্তায় ইউনিফর্ম পরা স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের কলতান।

হেঁটে বা গাড়িতে ছুটেছে শিক্ষালয়ে। অফিসগামীরা ছুটছে ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্যাক্সি বা পাবলিক বাসে। পাহাড়ি সরু রাস্তার পাশে, আবাসিক পাড়াগুলোতে দোকানের ছড়াছড়ি। নাক বোঁচা, ছোট চোখের খাসি- গারো মেয়েরাই সেগুলো চালাচ্ছে। পথে পথে বাঁধভাঙা মানুষের জোয়ার। রাস্তাঘাট ছেলেদের তুলনায় কর্মমুখর লাস্যময়ী মেয়েদের কলহাস্যে মুখর। দেখেই বোঝা যায় মেঘের মেয়ে মেঘালয় কন্যাশাসিত সমাজের আওতাভূক্ত। মাতৃতান্ত্রিক সমাজের ধারায় চলছে এই শহর। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/15/1560596620638.jpg

পাহাড়ি উপত্যকার শহরটিতে এশিয়ার বৃহত্তম গলফ কোর্স, ক্যান্টনমেন্ট, মন্দির, মসজিদ, গির্জার ছড়াছড়ি। আছে স্টেডিয়াম। সিএম হাউজ, গভর্ণর হাউজ, হাইকোর্ট, বিধানসভা, সেক্রেটারিয়েট নানা সরকারি দফতর। শিক্ষার জন্য রয়েছে সেন্ট এডমন্ড, সেন্ট এ্যান্থনি, সেন্ট মেরি স্কুল ও কলেজসহ অসংখ্য স্কুল কলেজ। শিক্ষার পঁচাত্তর শতাংশ। উচ্চশিক্ষার জন্য রয়েছে নর্থ ইস্টার্ণ হিল ইউনিভার্সিটি-নেহুসহ বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও টেকনিক্যাল কলেজ। বিশ্ব পরিব্রাজকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকায় শহরের পাড়ায় পাড়ায় হোটেল-রেস্তোরা। আছে পুলিশ বাজার নামে সিটি সেন্টার। শহরের আনাচে কানাচে বাজার, শপিং মল। পাহাড়ি খাদ, আঁকাবাকা রাস্তা, লেক, গার্ডেন, পাইনগাছের ঘনবন শৈলশহরটিকে দিয়েছে আলাদা বৈচিত্র্য। এর আকাশে সারাক্ষণ মেঘরোদ্রের লুকোচুরি। কখনো মেঘ, কখনো রোদ্দুর, কখনো ঝুমবৃষ্টি এর জলহাওয়ায়। প্রাকৃতিক এসি শহরটিকে প্রকৃতিগত দিক থেকে নাতিশীতোষ্ণ করে রেখেছে। আঁকাবাঁকা রাস্তায় চলতে গিয়ে কখনো ওপর থেকে নিচে শহরের দালানকোঠা দেখা যায়। আবার একই রাস্তা নিচের দিকে নেমে গেলে চোখের তারায় শহরকে দেখা যায় ওপরের পাহাড়ি ঢালে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/15/1560596639582.jpg

মেঘালয় ও শিলংকে স্কটল্যান্ড অব দ্য ইস্ট নামে খাতি দিয়েছে বৃটিশরা। এর দৃষ্টিনন্দন উপত্যকা, পাহাড়ি রাস্তা, নয়নাভিরাম মেঘ, নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া, অগুণতি জলপ্রপাত, ঘন পাইনবন এসব একমাত্র স্কটিশ হাইল্যান্ডের সঙ্গেই তুল্য। এখানে যে ১৮ হোল গল্ফকোর্স আছে, তাও এডিনবরা সংলগ্ন ডালকিত এর গল্ফকোর্স এর সঙ্গে তুলনা করা যায়। গারো, খাসি, জৈন্তিয়া পাহাড়ে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণে মোট ১১ টি জেলা নিয়ে মেঘালয় রাজ্য। ভারতের লোকসভার দুটি আসন শিলং ও তুরা। গারো, খাসি, জৈন্তিয়া জাতিসত্তাপ্রধান মেঘালয়ের আদিবাসীদের বেশিরভাগ খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত। শিলং শহরসহ দূর্গম পাহাড়ি গ্রাম পর্যন্ত চার্চ রয়েছে। হিন্দু,মুসলিম, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন এবং প্রাচীন ধর্মাবলম্বীও রয়েছে। এখানকার জাতিসত্তা খ্রীষ্ট ধর্মের যে শাখাটিতে ধর্মান্তরিত হয়েছে তাকে প্রেসবাইটেরিয়ান্স বলা হয়। যা বৃটেন বিশেষ করে স্কটিশ হাইল্যান্ডে অনুসরণ করা হয়।

স্কটল্যান্ড অব দ্য ইস্ট-মেঘালয়ের প্রধান প্রধান শহরের মধ্যে রাজধানী শিলং ছাড়াও রয়েছে নংপোহ, তোরা, উইলিয়ামনগর, রসুবেলপাড়া, নংসতৈন, নংকসেহ, আমপাতি, জোয়াই, বাঘমারা, সোহরা (চেরাপুঞ্জি), ডাউকি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/15/1560596786134.jpg

মেঘালয় উত্তরপূর্ব ভারতের পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র। সব ঋতুতেই প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে লাখ লাখ পর্যটক ছুটে আসছে। ছুটে যাচ্ছে মেঘালয়ের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। এই রাজ্যের সোহরা বা চেরাপুঞ্জি বৃষ্টির বৃষ্টি রাজধানী। মেঘালয় নামটির হিন্দী অর্থ মেঘের আলয়। বাংলা ভাষায়ও তাই। রাজ্যের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক জলপ্রপাত, লেক, শেকড় সেতু, পরিচ্ছন্ন গ্রাম, পাথুরে নদী, রোমাঞ্চকর ট্রেক, গ্রান্ড ক্যানিয়ন বা মহাগিরিখাদ, মেঘ-কুয়াশাময় পাহাড়ি ভিউপয়েন্ট এবং দূর্গম আদিবাসী গ্রাম অন্যতম। চেরাপুঞ্জির মেঘদল, বৃষ্টি, সেভেন সিস্টার ফলস, ওয়াই সো ডং ফলস, থাংখারাং পার্ক, মাসমাই কেভ, কোহ রামহাহ বা জায়ান্ট রক, বাংলাদেশ ভিউপয়েন্ট, ডাউকির উমগট নদী, মাওলিন্নং ভিলেজ, সোনংপেডেং, উমক্রেন ফলস, বরহিল ফলস, লিভিং রুট ব্রিজ বা জীবন্ত শেকড়সেতু, ওয়াহ রিম্বেন ফলস পর্যটকদের আকর্ষণ করে। শিলংয়ের ওয়ার্ডস লেক, পাশ্ববর্তী নমপোহ’র উমিয়াম লেক, লাবানের গ্রান্ড মদীনা মসজিদ, ব্রুকসাইডের রবীন্দ্রস্মৃতিবিজড়িত বাংলো, স্মিথ ভিলেজ, লেইটলাম গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, রাসোং ভিলেজ পর্যটকদের টেনে আনে মেঘালয়ে।

আমরা হাঁটতে থাকি মেঘের বাড়ি মেঘালয়ের রাস্তায়। নাকবোঁচা, ক্ষুদ্রচোখের পাহাড়ি কন্যার ঢল দেখি। দোকানপাটেও তাদের আধিপত্য চোখে পড়ে। ঘোমটা টানা পর্দানশীন, সিঁদুরপরা হিন্দুবধু, টুপিওলা মুসলিম বা পাগিড়ধারি শিখদের দেখে এখানকার ধর্মীয় সম্প্রীতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। গারো, খাসি, জৈন্তিয়া জাতিসত্তার কথা মনে উঠলে যে পাহাড়ি মানুষের চিত্র মনে ভাসে, মেঘালয়ের পাহাড়িরা এর উল্টো। এখানকার পাহাড়ি জাতিসত্তায় শিক্ষিত, আধুনিক ও মার্জিতসম্পন্ন এবং চমৎকার ইংরেজীতে কথা বলে। রাজ্যের সরকারি ভাষাও ইংরেজি। খাসি, গারো ও জৈন্তিয়ারা মাতৃভাষাও ব্যবহার করে। কদাচিৎ শিলংয়ের রাস্তায় পাহাড়ি আদিবাসীর পোশাকে বাঁশের ঝুড়ি পিঠে দুয়েকজন পাহাড়িকে দেখা যায়। তারা হয়তো দূর্গম গ্রাম থেকে রাজধানী শহরে আসা মানুষ। কিন্তু তাদের সংখ্যা নিতান্ত নগণ্য।

আমাদের ছোট্ট পর্যটকদলটি ছোট পাহাড়ি শহরটির এ গলি ও গলি হাঁটি আর প্রতিটি কোণ উপভোগ করি। শহরের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া মেঘমালা, বৃষ্টি, মেঘভেঙে ঠিকরে বের হয়ে আসা রোদ্দুর, এর ঠান্ডা বাতাস আমাদের মন প্রশান্ত করে দেয়।

 

   

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;