কঠোর অবস্থানে র্যাব, ২৩ মে’র আগে পাকা আমে ‘না’
বাংলা জৈষ্ঠ্য মাস ‘মধুমাস’ হিসেবে পরিচিত। কারণ এ মাসেই পাকে আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, লিচুসহ নানা জাতের রসালো, শাঁসালো মিষ্টি ফল। কিন্তু জৈষ্ঠ্য মাসের মধু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে ক্রেতাদের কাছে বিষে পরিণত হচ্ছে। বিশেষ করে আমের ক্ষেত্রে মধুর স্বাদের জায়গায় বিষের স্বাদ নিতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
কেননা এক শ্রেণির অসাধু ফল ব্যবসায়ী ও বাগান মালিক বেশি দামে বিক্রি করার আশায় অপরিপক্ব আম বাজারে আনছে কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে। যা মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই আম খাওয়ার কারণে নানা রকম রোগেরও সৃষ্টি হচ্ছে।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো ও সংরক্ষণের অভিযোগে টনের টন আম নষ্ট করতে হয়েছে। তবে এসব অভিযানে বিষাক্ত আম থেকে বাজার সম্পূর্ণ রূপে মুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
তবে এবার আম বাজারে আসার অপেক্ষা করছে না র্যাব। বাজারের যেন কোনো ধরণের কেমিক্যাল যুক্ত আম না আসে সেই লক্ষ্যে সংস্থাটি নড়েচড়ে বসেছে। র্যাবের পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরও মাঠে কাজ করছে এ ব্যাপারে। কাওরানবাজারের আম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সচেতনতামূলক আলোচনায়ও বসেছে র্যাব।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে হিমসাগরসহ বেশ কয়েকটি প্রজাতির পাকা আম বাজারে এসেছে। কিন্তু এই মৌসুমে দেশের কোনো অঞ্চলের আমই পাকার কথা না কৃষি অফিসের হিসেব অনুযায়ী। তবে বৃষ্টি আগে পিছনে হওয়া সাতক্ষীরা অঞ্চলের কিছু প্রজাতির আম পাকলেও সেগুলোর রং বাজারে আসা আমগুলোর মতো হওয়ার কথা না। এছাড়া বাজারে যে রংয়ের আম এসেছে দেশের কোনো অঞ্চলের আমই এমনভাবে পাকে না।
আম পাকার সরকারি হিসেব অনুযায়ী, সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ ১২ মের দিকে, গোপালভোগ ১৫ মের দিকে, যা ঢাকায় আসার কথা ২২-২৩ মের দিকে। রাজশাহীর গুটি আম ১৫ মের দিকে, যা আসার কথা ২৩ মের দিকে, সাতক্ষীরার হিমসাগর পাকার কথা ২২ মে, রাজশাহীর হিমসাগর ২৮ মে, সাতক্ষীরার ল্যাংড়া আম ২০ মের দিকে পাকার কথা, রাজশাহীর ল্যাংড়া পাকার কথা ৫ জুন, লক্ষণ ভোগ ২৯ মে ও আম রুপালী ৮ জুন থেকে ১৬ জুনের মধ্যে পাকার কথা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মতে, যেহেতু কৃষি অফিস ও সরকারি হিসেবে এখনো ঢাকায় হলুদ রংয়ের আম আসার কথা নয়। এখন যে পাকা আম পাওয়া যাচ্ছে, বুঝতে হবে এগুলো অপরিপক্ব, কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হয়েছে।
এদিকে র্যাব সূত্রে জানা গেছে, বাজারে ভেজাল আম আসার খবর পাওয়া মাত্রই সংস্থাটির পক্ষ হতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) কাওরানবাজারের আম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে র্যাব। এই সভায় সিদ্ধান্ত হয় ২৩ মের আগে রাজধানী ঢাকায় কোনো ধরণের পাকা আম ঢুকবে না এবং বেচাকেনাও করা যাবে না।
তবে সাতক্ষীরার গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ ও রাজশাহীর গুটি আম ১৬ মে থেকে আনা যাবে। তবে তা গাছে থেকে পারার পর যে অবস্থায় থাকে সেই অবস্থায় বিক্রি করতে হবে। এ সিদ্ধান্ত অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘২৩ তারিখের আগে ঢাকায় কোনো পাকা আম ঢুকবেও না কেনাবেচাও করা যাবে না। সাতক্ষিরার গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ ও রাজশাহীর গুটি আম বিক্রি করা যাবে ২৩ তারিখের আগে, তবে তা কেমিক্যালমুক্ত হতে হবে। আর এসব আমের ট্রাকে করে যদি অন্য প্রজাতির একটি আমও ঢাকায় ঢোকানোর চেষ্টা কর হয়, তাহলে ট্রাকের সকল আম জব্দ করা হবে। এছাড়া এর সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীও বাগান মালিককে জেলে যেতে হবে।‘
কারওয়ান বাজারের ফল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি সুরুজ আলম সুরুজ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ভেজাল আম বিক্রি করে নিজেদের মান সম্মান নষ্ট করতে চাই না। কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী আছেন, যারা কেমিক্যালযুক্ত আম বিক্রি করেন।’