স্বামীর মৃত্যু ও বিচ্ছেদের পর নারীর করণীয়



মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম
স্বামীর মৃত্যু ও বিচ্ছেদের পর নারীর করণীয়, ছবি: প্রতীকী

স্বামীর মৃত্যু ও বিচ্ছেদের পর নারীর করণীয়, ছবি: প্রতীকী

  • Font increase
  • Font Decrease

ইদ্দত শব্দের আভিধানিক অর্থ সময় গণনা করা। পরিভাষায় ইদ্দত বলা হয়- স্বামীর মৃত্যুর পর বা তালাকের পর নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত পরবর্তী বিয়ে থেকে বাধ্যতামূলকভাবে নিজেকে বিরত রাখা।

নারীর অবস্থার ভিন্নতায় ইদ্দতের সময়সীমায় কিছুটা ভিন্নতা আছে। আবার ইদ্দতকালীন সময়ের জন্য রয়েছে বিশেষ কিছু বিধি-বিধান।

প্রথমে আলোচনা করা যাক ইদ্দতের সময়সীমা নিয়ে। এ ক্ষেত্রে স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দত ও তালাকের ইদ্দত কিছুটা ভিন্ন।

স্বামী মৃত্যুর ইদ্দত
যে নারীর স্বামী মারা গেছে সে যদি গর্ভবতী হয় তাহলে তার ইদ্দত সন্তান প্রসব পর্যন্ত। কেননা, এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘গর্ভবতীদের সময়কাল হলো- সন্তান প্রসব করা।’ -সূরা তালাক: ৪

আর সে যদি গর্ভবতী না হয়- তাহলে তার ইদ্দত চার মাস দশ দিন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা গেছে তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশ দিন পর্যন্ত নিজেদের বিরত রাখবে।’ -সূরা বাকারা: ২৩৪

তালাকের ইদ্দত
যে নারীকে তার স্বামী তালাক দিয়েছে অথবা সে নিজেই তালাক গ্রহণ করেছে সে যদি গর্ভবতী হয়- তাহলে তার ইদ্দত সন্তান প্রসব পর্যন্ত। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘গর্ভবতীদের সময়কাল হলো- সন্তান প্রসব করা।’ -সূরা তালাক: ৪

আর সে যদি গর্ভবতী না হয় এবং তার ঋতুস্রাব আসে তাহলে তার ইদ্দত পরিপূর্ণ তিন ঋতুস্রাব শেষ হওয়া পর্যন্ত। যদি ঋতুস্রাবকালে তালাক সংঘটিত হয় তাহলে ওই ঋতুস্রাব বাদ দিয়ে পরবর্তী ঋতুস্রাব থেকে তার ইদ্দত গণনা করতে হবে।

এ বিষয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তালাকপ্রাপ্ত নারী তিন ঋতুস্রাব পর্যন্ত নিজেদের বিরত রাখবে।’ -সূরা বাকারা: ২২৮

আর সে যদি গর্ভবতীও না হয় এবং তার ঋতুস্রাবও না আসে তাহলে তার ইদ্দত তিন মাস। কেননা, পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের যে সকল স্ত্রীর ঋতুবতী হওয়ার আশা নাই তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমারা সন্দেহ করলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস এবং যাদের এখনও ঋতুস্রাব শুরু হয়নি তাদেরও।’ -সূরা তালাক: ৪

ইদ্দত যাপনকালীন নারীর জন্য বিশেষ তিনটি বিধান রয়েছে। সেগুলো হলো-

সাজগোজ না করা
এ প্রসঙ্গে হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য স্বামী ব্যতীত অন্য কারও মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি সাজগোজ বর্জন করা জায়েজ নয়। স্বামীর মৃত্যুতে সে চার মাস দশ দিন সাজগোজ বর্জন করবে।’ –সহিহ বোখারি: ১২৮০ ও –সহিহ মুসলিম: ৩৮০৮

নারীর যে বাড়তি বেশ-ভূষা তার প্রতি পুরুষকে আকৃষ্ট করে তাকেই সাজগোজ বলে। এটা একটি আপেক্ষিক বিষয়। যুগ, অঞ্চল, পরিবেশ, পরিবার, সমাজ, শ্রেণি প্রভৃতির তারতম্যে তাতে ভিন্নতা থাকে। তাই যেখানে সাজগোজ বলতে যা বুঝায় সেখানে তাই ইদ্দত অবস্থায় হারাম।

লাল বা হলুদ রঙের পোশাক পরিধান করা, মেহেদি লাগানো, যেকোনো সুবাস দেওয়া; কাজল, আইব্রু, লিপিস্টিকসহ বিভিন্ন মেকাপ এবং সুবাসযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করা ইদ্দত অবস্থায় না জায়েজ।

তবে সাজগোজের কোনো বস্তুর ব্যবহার যদি রোগের কারণে একান্তই জরুরি হয় এবং তার কোনো বিকল্প না থাকে, লাল বা হলুদ পোশাক ব্যতীত সতর ঢাকার মতো অন্য কোনেরা বস্ত্র না থাকে তাহলে এমন আবশ্যকীয় প্রয়োজনের সময় শুধুমাত্র প্রয়োজন পরিমাণ ব্যবহার করা যাবে।

ইদ্দত অবস্থায় হালকা রঙের ছাপা কাপড় পড়া, নাকে-কানে-গলায়-হাতে সামান্য পরিমাণের হালকা গহনা ব্যবহার করা নাজায়েজ নয়। কেননা, এগুলোকে সাধারণত সাজগোজের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হয় না।

বিয়ে বর্জন করা
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইদ্দত পালনরত নারীদের কাছে ইঙ্গিতে বিয়ের প্রস্তাব করলে অথবা মনের মধ্যে বিয়ের ইচ্ছা গোপন রাখলে তোমাদের কোনো পাপ নেই। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা তাদের সম্বন্ধে আলোচনা করবে। কিন্তু বিধিমত কথাবার্তা ব্যতীত গোপনে তাদের নিকট কোনো অঙ্গীকার করো না, ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার আগে বিয়ে সম্পন্ন করার সঙ্কল্প করো না।’ -সূরা বাকারা: ২৩৫

এ আয়াত প্রমাণ করে ইদ্দতাধীন নারীকে বিয়ে করা হারাম, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া বা আশ্বাস দেওয়াও হারাম, বিয়ের স্পষ্ট প্রস্তাব পাঠানোও হারাম। তবে বিয়ের ইঙ্গিত দেওয়া হারাম নয়।

নিজ ঘর থেকে বের না হওয়া
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ইদ্দতাধীন নারীদের ঘর থেকে বের করো না এবং তারাও যেন বের না হয়, যদি না তারা স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। এটা আল্লাহর বিধান। যে আল্লাহর বিধান লংঘন করে সে নিজের ওপরই অত্যাচার করে।’ -সূরা তালাক: ১

তালাকের সময় বা স্বামীর মৃত্যুর সময় যে ঘরটি স্ত্রীর ঘর হিসেবে পরিচিত, যে ঘরকে তার ঘর বলা হয় সে ঘরেই ইদ্দত পালন করা স্ত্রীর ওপর ফরজ। সে ঘরের মালিক স্ত্রী হোক অথবা স্বামী। তা ভাড়ায় নেওয়া হোক অথবা ধারে নেওয়া হোক।

অতএব, স্ত্রী যদি বাপের বাড়ি বেড়াতে যায় আর সে সময় তালাক সংঘটিত হয় বা স্বামীর মৃত্যু ঘটে তাহলে স্ত্রীকে বাপের বাড়ি থেকে তার ঘরে ফিরে আসতে হবে এবং নিজ ঘরেই তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে।

ঘরে ইদ্দত পালন করার অর্থ হলো- দিনরাত ঘরে থাকা। এটা ফরজ। কোনো গুরুতর সমস্যা ব্যতীত দিনের বেলা ঘর ছেড়ে অন্যত্র যাওয়া অথবা অন্য কোথাও রাতযাপন করা ইদ্দতাধীন স্ত্রীর জন্য হারাম। তার ঘর যদি বসবাস অযোগ্য হয়ে যায়, ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, ঘরের ভাড়া পরিশোধে অসামর্থ্যবান হয়ে পড়ে, স্বামী বা তার স্বজনরা তার অবস্থানকে অনিরাপদ ও হুমকির সম্মুখীন করে ফেলে তাহলে সে সেই ঘর ত্যাগ করতে পারবে। যদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয় অথবা ব্যয় নির্বাহের কেউ না থাকায় উপার্জনের প্রয়োজন হয় তাহলে প্রয়োজন পরিমাণ বের হওয়া জায়েজ।

ইদ্দত শেষ হওয়ার আগে স্ত্রীকে তার বসবাসের ঘর থেকে বের করে দেওয়া স্বামী ও তার স্বজনদের জন্য হারাম। তবে সে যদি ব্যভিচার ও অশ্লীলতায় লিপ্ত হয় তাহলে তাকে বের করে দেওয়া জায়েজ হবে। তালাকের ইদ্দতকালীন স্ত্রীর নাফাকাহ্ অর্থাৎ খাদ্য ও বস্ত্র সরবরাহ করাও স্বামীর ওপর ফরজ।

যেহেতু আবশ্যিক প্রয়োজন ব্যতীত দিনে ইদ্দতের ঘর থেকে বের হওয়া স্ত্রীর জন্য জায়েজ নেই, সেহেতু স্বামীকে যদি গ্রামের বাড়িতে কবর দেওয়া হয় তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রীকে স্বামীর লাশের সাথে শহর থেকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া জায়েজ হবে না। যারা গ্রামের বাড়ি রেখে সপরিবারে শহরে বসবাস করে তাদের অনেকই না জানার কারণে বা গুরুত্যপূর্ণ মনে না করার কারণে বিধবা মহিলাকে এ হারামে লিপ্ত করে ফেলে।

ইদ্দতের বিধান আমাদের দেশে দু’ধরণের প্রান্তিকতার শিকার। কেউ কেউ না জানার করণে অথবা গুরুত্বপূর্ণ মনে না করার কারণে ইদ্দতের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ করে না। ইদ্দত অবস্থায় বিভিন্ন উপলক্ষে কড়া সাজগোজ করে, বেড়াতে চলে যায়। এমনকি বিয়ে পর্যন্ত সংগঠিত হতে শোনা যায়। আবার কেউ কেউ সাধারণ হালকা রঙের পোশাক পরিহার করে নিছক সাদা রঙের পোশাককে বাধ্যতামূলক মনে করে। নাক-কানের হালকা, সামান্য গহনা যা বাড়তি কোনো আকর্ষণ সৃষ্টি করে না সেগুলোকেও নিষিদ্ধ মনে করে। এ ধরণের বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি উভয় প্রান্তিকতাই বর্জনীয়।

   

মসজিদের নগরী এখন মসজিদের দেশে পরিণত হয়েছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ আয়োজিত আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত অতিথি, ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ আয়োজিত আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত অতিথি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমাজের অনাচার দূর করা সম্ভব। বিশেষ করে দুর্নীতি, মাদকাসক্তিসহ সব সমস্যা দূরীকরণে সামাজিক সংঠনগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে সামাজিক সংগঠনগুলোকে নিষ্ঠার সঙ্গে আরও ব্যাপকভাবে কাজ করা দরকার।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর কাকরাইলস্থ ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ আয়োজিত আলোচনা সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা আরও বলেন, উগ্রবাদীদের টার্গেটে যখন বাংলাদেশ, তখন এগিয়ে এসেছেন আলেম-উলামা এবং সংগঠনসমূহ। একসময় ঢাকা শহরকে মসজিদের নগরী বলা হতো। এখন সেটা ছাপিয়ে পুরো বাংলাদেশ মসজিদের দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর কারণে।

ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান উপদেষ্টা ধর্মবিষক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপিকে পূর্ণ মন্ত্রী, প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন মূখ্যসচিব মো. আবুল কালাম আজাদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এবং আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপিকে পরপর তিনবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ায় সংগঠনের বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মুফতি আবুল বাশার নুমানি, মাওলানা মুজিবুর রহমান, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল হামিদ জমাদ্দার, ডি আইজি নাফিউর রহমান, মুফতি মুনিরুল ইসলাম এবং মুফতি রেজাউল হক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশন একটি অরাজনৈতিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এর প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজের মধ্য দিয়ে এটি আলোচনায় আসে।

২০২২ সালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বিশ্বজয়ী হাফেজদের সংবর্ধনা ও জাতীয় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগীতা’ আয়োজনের মধ্য দিয়ে ফাউন্ডেশনটি ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করে।

২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম দেশসেরা হাফেজদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।

কাজের ধারাবাহিকতায় ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতিতে ত্রাণ সহায়তা প্রদান, ঢাকার মিরপুরে পুলিশ কনভেনশন হলে ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে সচেতনতামূলক সেমিনার, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ‘এডিস মশা ও ডেঙ্গু বিস্তাররোধে করণীয়’ সম্পর্কে ইমাম-খতিবদের নিয়ে সেমিনারের আয়োজন ছাড়াও সারাদেশে ধর্মীয় ও সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

;

রমজানে উমরাকারীর সংখ্যা ২ কোটি ছাড়িয়ে যাবে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কাবা তওয়াফ করছেন উমরাকারীরা, ২৮ মার্চ সকালের দৃশ্য, ছবি : হারামাইন পেইজ

কাবা তওয়াফ করছেন উমরাকারীরা, ২৮ মার্চ সকালের দৃশ্য, ছবি : হারামাইন পেইজ

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা ও মদিনায় এখন শুধু মানুষ আর মানুষ। দৃষ্টি যতদূর যায় শুধুই মানুষের ভিড়। তাদের কেউ ইহরাম পরিহিত, কেউ স্বাভাবিক পোষাকে। তবে সবার লক্ষ্য এক জায়গা- মসজিদে হারাম।

সোমবার (২৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়া জানিয়েছে, সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পবিত্র এই মাস শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৮২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৮০ জন মুসল্লি উমরা পালন করেছেন।

সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, এর আগে এত বিপুল সংখ্যক মুসল্লি এভাবে ভিড় করেননি। তাদের আশা আগামী ১৫ দিনে এই সংখ্যা ২ কোটি পার হয়ে যাবে।

প্রতিবেদন অনুসারে রমজান মাস শুরুর পর থেকে ৭২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৪ জন উমরা সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে দেশটিতে ৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৬ জন অবস্থান করছেন।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, স্থলপথে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক উমরাযাত্রী সৌদি আরব এসেছেন। এরপর যথাক্রমে আকাশপথ ও সমুদ্রপথে এসেছেন। স্থলপথে ৯ লাখ ৮০ হাজার ৫৫৬ জন আগমন করেছেন। আর আকাশপথে সাত লাখ ৯৮৩ জন এবং সমুদ্রপথে ৫৪ হাজার ১৪১ জন এসেছেন। রমজান মাসে পবিত্র মসজিদে হারামে ভিড় নিয়ন্ত্রণে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে উমরা পালন নিশ্চিত করতে নানা বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে সৌদি আরব।

বিশেষ করে নুসুক অ্যাপের মাধ্যমে চলতি রমজানে উমরা পালনের কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয়বারের মতো অনুমতি পাননি। অ্যাপে আবেদন করলে একটি বার্তা ভেসে ওঠে। তাতে লেখা থাকে, ‘অনুমতি প্রদান ব্যর্থ হয়েছে। সবাইকে সুযোগ দিতে রমজানে দ্বিতীয়বার কেউ উমরা করতে পারবেন না।’

অন্য আরেক নির্দেশনায় পবিত্র কাবাঘরের প্রাঙ্গণ তথা মাতাফে নামাজ না পড়ে মসজিদে হারামে নামাজ পড়তে বলা হয়েছে। যেন ওই সময় উমরাযাত্রীরা তওয়াফ করতে পারেন। এ ছাড়া রমজান মাসে একবারের বেশি উমরা পালনে বারণ করাসহ মক্কার বাসিন্দাদের মসজিদে হারামে ভিড় না করে আশপাশের মসজিদে নামাজ পড়তে উৎসাহিত করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে এক কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মুসলিম উমরা পালন করেছে, যা ছিল সৌদি আরবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যা।

;

শিক্ষাদানের শর্তে যে যুদ্ধের বন্দিরা মুক্তি পায়



মাওলানা সাইফুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
বদর যুদ্ধে মুসলমানদের সহযোগিতায় আসমান থেকে ফেরেশতা এই পাহাড়ে অবতীর্ণ হয়, বর্তমান নাম জাবালে মালাইকা, ছবি : সংগৃহীত

বদর যুদ্ধে মুসলমানদের সহযোগিতায় আসমান থেকে ফেরেশতা এই পাহাড়ে অবতীর্ণ হয়, বর্তমান নাম জাবালে মালাইকা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বদর যুদ্ধে বিপুলবৈভব কুরাইশদের বিরুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর অভাবনীয় বিজয় অর্জিত হয়। এই যুদ্ধে ৭০ জন কুরাইশ যোদ্ধা নিহত হয় এবং সমপরিমাণ ব্যক্তি বন্দি হয়। যুদ্ধ শেষে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় পৌঁছার পর সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে যুদ্ধবন্দিদের ব্যাপারে পরামর্শ করলেন। হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, ওরা তো চাচাতো ভাই এবং আমাদের আত্মীয়-স্বজন। আমার মত হলো, ওদের কাছ থেকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হোক। এতে অর্জিত সম্পদ অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের শক্তিতে পরিণত হবে। আর এমনও হতে পারে, আল্লাহতায়ালা তাদের হেদায়েত দেবেন এবং তারা একসময় আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে।

হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) ভিন্ন মত দিলেন। তিনি বললেন, কুরাইশ যোদ্ধাদের হত্যা করা হোক, যেন ইসলামের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণের সাহস কেউ না পায়। এ ছাড়া এ যুদ্ধবন্দিরা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। তাদের অনুপস্থিতি অবিশ্বাসী শিবিরকে দুর্বল করে দেবে।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আবুবকরের পরামর্শ গ্রহণ করলেন। কিন্তু আল্লাহতায়ালা হজরত ওমরের সিদ্ধান্তটিই অধিক সঠিক ছিল বলে জানিয়ে দেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিকটবর্তী একটি গাছের প্রতি ইশারা করে বললেন, আমার কাছে ওদের আজাব এই গাছের চেয়ে নিকটতর করে উপস্থাপন করা হয়েছে। -তারিখে ওমর ইবনে খাত্তাব, ইবনে জওজি, পৃষ্ঠা ৩৬

তবে আল্লাহতায়ালা ফিদইয়া গ্রহণের সিদ্ধান্তের বৈধতা দেন এবং প্রদেয় মুক্তিপণকে মুসলিমদের জন্য হালাল ঘোষণা করেন। তবে আল্লাহতায়ালা এ জন্য করেছেন যে তারা শুধু যুদ্ধবন্দি ছিল না; বরং তারা ইসলাম, মুসলমান ও মানবতার বিরোধী অনেক অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল।

যুদ্ধবন্দিদের কাছ থেকে নেওয়া মুক্তিপণের পরিমাণ ছিল এক হাজার থেকে চার হাজার দিরহাম পর্যন্ত। যাদের মুক্তিপণ দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না, তাদের পেশা দক্ষতার বিনিময়ে মুক্তি লাভের সুযোগ দেওয়া হয়। যেমন- মক্কাবাসী লেখাপড়া জানত। পক্ষান্তরে মদিনায় লেখাপড়া জানা লোকের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। ফলে যাদের মুক্তিপণ প্রদানের সামর্থ্য নেই এবং লেখাপড়া জানে, তাদের সুযোগ দেওয়া হলো যে তারা মদিনায় ১০টি করে শিশুকে লেখাপড়া শেখাবে। শিশুরা ভালোভাবে লেখাপড়া শেখার পর শিক্ষক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কয়েকজন বন্দিকে বিশেষ দয়া করায় তাদের কাছ থেকে ফিদইয়া গ্রহণ করা হয়নি, এমনিতেই মুক্তি দেওয়া হয়। তারা ছিল মোত্তালিব ইবনে হানতাব, সাঈফি ইবনে আবু রেফায়া ও আবু আযযা জুমাহি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জামাতা আবুল আসকে এই শর্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন যে তিনি নবীনন্দিনী হজরত জয়নব (রা.)-র পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না।

এর কারণ ছিল যে হজরত জয়নব (রা.) আবুল ইবনে আসের ফিদইয়া হিসেবে কিছু সম্পদ পাঠিয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি হারও ছিল। হারটি হজরত খাদিজা (রা.) হজরত জয়নব (রা.)-কে আবুল আসের ঘরে পাঠানোর সময় উপহারস্বরূপ দিয়েছিলেন। মহানবী (সা.) তা দেখে অশ্রুসজল হয়ে ওঠেন এবং আবেগে তার কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে আসে। তিনি আবুল আসকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে সাহাবাদের মতামত চান। সাহাবারা প্রিয় নবী (সা.)-এর এই প্রস্তাব সশ্রদ্ধভাবে অনুমোদন করেন। অতঃপর মহানবী (সা.) তার জামাতা আবুল আসকে এই শর্তে ছেড়ে দেন যে তিনি হজরত জয়নব (রা.)-কে মদিনায় আসার সুযোগ করে দেবেন। স্বামীর অনুমতি পেয়ে জয়নব (রা.) মদিনায় হিজরত করেন।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত জায়েদ ইবনে হারেসা এবং অন্য একজন আনসারি সাহাবিকে মক্কায় প্রেরণ করেন। তাদের বলা হয়, তোমরা মক্কার উপকণ্ঠ অথবা জাজ নামক জায়গায় থাকবে। হজরত জয়নব (রা.) তোমাদের কাছ দিয়ে যখন যেতে থাকবেন, তখন তাকে সঙ্গে নিয়ে আসবে। এই দুজন সাহাবি মক্কায় গিয়ে হজরত জয়নব (রা.)-কে মদিনায় নিয়ে আসেন। হজরত জয়নব (রা.)-এর হিজরতের ঘটনা অনেক দীর্ঘ এবং মর্মস্পর্শী।

;

ইতিহাস বদলে দেওয়া বদর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট



মাওলানা আবদুল জাব্বার, অতিথি লেখক, ইসলাম
বদর যুদ্ধে যেখানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তাঁবু ছিল সেখানে পরে এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছে, নাম মসজিদে আরিশ, ছবি : সংগৃহীত

বদর যুদ্ধে যেখানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তাঁবু ছিল সেখানে পরে এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছে, নাম মসজিদে আরিশ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুসলিম ইতিহাসের প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ বদর। দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান মদিনার উপকণ্ঠে বদর নামক স্থানে মুখোমুখি হয় মুসলিম ও কুরাইশ বাহিনী। ঐতিহাসিক এ যুদ্ধ ছিল অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই। ইসলাম ও মুসলিমদের অস্তিত্বের সংগ্রাম। বদর যুদ্ধে আল্লাহতায়ালা অসম প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মুসলিম বাহিনীকে বিজয় দান করেন। অস্তিত্বের সংকট থেকে মুসলিম উম্মাহকে মুক্তি দিয়ে অমিত সম্ভাবনার দুয়ারে পৌঁছে দেন।

৬২৪ খ্রিস্টাব্দ তথা দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান সংঘটিত হয়েছিল ইসলামে চিরস্মরণীয় ও গৌরবময় অধ্যায় বদর যুদ্ধ। এটি ছিল সত্য ও মিথ্যার, হক ও বাতিলের, মুসলিম ও কাফেরদের মধ্যকার ঐতিহাসিক যুদ্ধ, ইসলামের প্রথম যুদ্ধ। মদিনার অদূরে অবস্থিত একটি কূপের নাম ছিল বদর। সেই সূত্রে এই কূপের নিকটবর্তী আঙিনাকে বলা হতো বদর প্রান্তর। এই বদর প্রান্তরেই মহান আল্লাহ তার প্রিয় হাবিব নিরস্ত্র মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তার সঙ্গীদের বিজয়ী করেছিলেন হাজার সশস্ত্র যোদ্ধার মোকাবেলায়।

ঘটনার সূত্রপাত
মদিনায় বইতে থাকা ইসলামের বসন্তের হাওয়া মক্কার কাফেরদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল। না জানি কখন এই হাওয়া দমকা হাওয়ায় রূপ নিয়ে তাদের উড়িয়ে নিয়ে যায়, কিংবা তাদের ব্যবসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই মুসলমানদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার জন্য অর্থ জোগান ও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ক্রয় করার উদ্দেশ্যে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে মক্কার একটি বিশাল বাণিজ্য কাফেলা শামে গিয়েছিল। মক্কার প্রতিটি ঘর থেকে প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ দিয়ে গঠন করা হয়েছিল ৪০ জন সশস্ত্র অশ্বারোহী যোদ্ধার পাহারায় এক হাজার মালবাহী উটের একটি বাণিজ্যিক বহর।

বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিল মুসলমানরাও। তাই যখন তারা শাম থেকে ব্যবসা শেষে অস্ত্র নিয়ে ঘরে ফিরছিল, তখন তাদের ওপর হামলা করার সিদ্ধান্ত হলো। মুসলমানদের আত্মরক্ষার্থে হামলা করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না। বিষয়টি আবু সুফিয়ান টের পেয়ে দ্রুত সাহায্যের জন্য মক্কায় খবর পাঠায়। তবে খবরটি ছিল, মুসলমানরা আবু সুফিয়ানের কাফেলার ওপর হামলা করেছে। খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ আবু জাহেলের নেতৃত্বে এক হাজার সশস্ত্র যোদ্ধার এক বিশাল বাহিনী মদিনা আক্রমণের জন্য বের হয়। অথচ মুসলমানরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে আসেনি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল শুধু আবু সুফিয়ানকে আটকানো।

এই যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে যেসব বিষয় প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছিল তা ছিল নাখলার খণ্ডযুদ্ধ, কাফেরদের রণপ্রস্তুতি, আবু সুফিয়ানের অপপ্রচার, যুদ্ধপ্রস্তুতির জন্য অহি লাভ ও মক্কাবাসীর ক্ষোভ ইত্যাদি। আর পরোক্ষ কারণ হিসেবে দেখা হয়, মদিনা শরিফে সাফল্যজনকভাবে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কুরাইশদের হিংসা, আবদুল্লাহ বিন উবাই ও ইহুদিদের ষড়যন্ত্র, কুরাইশদের যুদ্ধের হুমকি, তাদের বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা, কাফেরদের আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা, ইসলামের ক্রমবর্ধমান শক্তির ধ্বংসসাধন এবং রাসুল (সা.)-কে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার কাফেরদের অশুভ বাসনা।

যুদ্ধের ফলাফল ও প্রভাব

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। মহান আল্লাহ এই যুদ্ধকে ‘ইয়াওমুল ফুরকান’- সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য স্পষ্টকারী দিন বলে আখ্যা দিয়েছেন। আল্লাহর এই নামকরণ থেকেই বদর যুদ্ধের প্রভাব ও ফলাফল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। মূলত প্রতিষ্ঠিত শক্তি কুরাইশদের বিরুদ্ধে সদ্যঃপ্রসূত মদিনার ইসলামি রাষ্ট্রের জন্য বদর ছিল অস্তিত্বের লড়াই। বদর যুদ্ধের বিজয় ছিল মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রথম রাজনৈতিক স্বীকৃতি। এ যুদ্ধই ইসলামি রাষ্ট্রের পথচলার গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বদর যুদ্ধের পূর্বাপর অবস্থা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, এই যুদ্ধ শুধু মদিনা নয়; বরং সমগ্র আরব উপদ্বীপে মুসলিম উম্মাহর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছিল।

ঐতিহাসিকরা মনে করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হিজরতের পর মদিনায় যে ইসলামি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়েছিল, তার প্রকৃত প্রতিষ্ঠা বদর প্রান্তে বিজয়ের মাধ্যমেই হয়েছিল। এই বিজয়ের আগে মদিনার মুসলিমরা ছিল একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় মাত্র। কিন্তু কুরাইশদের মতো প্রতিষ্ঠিত শক্তির বিরুদ্ধে সামরিক বিজয় এই ধারণা পাল্টে দেয় এবং আরব উপদ্বীপে মদিনার মুসলিমদের একটি রাজনৈতিক পক্ষের মর্যাদা এনে দেয়। শুধু তা-ই নয়, বদর যুদ্ধ আরবের বহু মানুষের হৃদয়ের সংশয় দূর করে দেয় এবং তারা ইসলাম গ্রহণের সৎসাহস খুঁজে পায়। এ ছাড়া অসম শক্তির বিরুদ্ধে এই অসাধারণ বিজয় মুসলিম উম্মাহর জন্য অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস।

আরবের অমুসলিমদের ওপরও বদর যুদ্ধের প্রভাব ছিল অপরিসীম। বদর যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনীর ৭০ জন নিহত হয়। তাদের বেশির ভাগই ছিল শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ও খ্যাতনামা আরব বীর। আবু জাহেল, উতবা ইবনে রাবিয়া, শায়বা ইবনে রাবিয়া, ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা, নদর বিন হারেস ও উমাইয়া বিন খালাফের মতো কুরাইশ নেতাদের করুণ মৃত্যু তাদের হৃদয়াত্মাকে কাঁপিয়ে দেয় এবং তাদের চোখ থেকে অহমিকার পর্দা সরে যায়। কারণ সমকালীন ইতিহাসে কুরাইশ গোত্রের এমন বিপর্যয় আরবরা দেখেনি।

এ ছাড়া বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর বিজয় কুরাইশদের অবাধ বাণিজ্য এবং আরবের অন্যান্য গোত্রের ওপর অন্যায় প্রভাব খাটানোর পথ বন্ধ করে দেয়। মদিনার উপকণ্ঠে ডাকাতি ও লুণ্ঠনের যে ধারা যুগ যুগ ধরে চলে আসছিল- যার পেছনে কুরাইশ নেতাদের সহযোগিতা ও প্রশ্রয় ছিল, তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মুসলিম বাহিনীর এই বিজয়ে স্বস্তি প্রকাশ করে মদিনা ও আশপাশের সর্বস্তরের মানুষ। তারা স্বাগত জানায় সত্যপক্ষের এই মহান বিজয়কে।

;