মহররম মাসের আমলসমূহ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মহররম মাসের আমলসমূহ

মহররম মাসের আমলসমূহ

  • Font increase
  • Font Decrease

শুরু হয়েছে মহররম মাস। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ মাস সম্পর্কে যা এসেছে তা হলো- এটা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ সময়। কোরআনে কারিমের ভাষায় ‘আরবাআতুন হুরুম’ অর্থাৎ চার সম্মানিত মাসের অন্যতম এই মাস। এ মাসে রোজা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ সহিহ মুসলিম: ২/৩৬৮; জামে তিরমিজি: ১/১৫৭

এর মধ্যে আশুরার রোজার ফজিলত আরও বেশি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ সহিহ বোখারি: ১/২১৮

হজরত আলী (রা.) কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমজানের পর আর কোন মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তার খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহতায়ালা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’ -জামে তিরমিজি: ১/১৫৭

অন্য হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহতায়ালা অতীতের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ –সহিহমুসলিম: ১/৩৬৭; জামে তিরমিজি: ১/১৫৮

আশুরার রোজা সম্পর্কে এক হাদিসে এসেছে, তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশুরার আগে বা পরে আরও একদিন রোজা রাখ।’ -মুসনাদে আহমদ: ১/২৪১

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ তারিখেও অবশ্যই রোজা রাখব।’ –সহিহ মুসলিম: ১/৩৫৯

তবে মহররম ও আশুরাকেন্দ্রিক নানা কুসংস্কার রয়েছে। আমাদের সেগুলো বর্জন করতে হবে। মাসে পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এসব ঘটনার অন্যতম হলো-

এদিনে আল্লাহতায়ালা তার কুদরত প্রকাশ করেছেন। বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদেরকে ডুবিয়ে মেরেছেন। -সহিহ বোখারি: ১/৪৮১

তবে এ দিনের গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে নানা ভিত্তিহীন কথাও বলে থাকেন। যেমন- এদিন হজরত ইউসুফ (আ.) জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হজরত ইয়াকুব (আ.) চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন। অনেকে বলেন, এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হজরত ইদরিস (আ.) কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়। এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। -আস আসারুল মারফূ: ৬৪-১০০

এ মাসের একটি ঘটনা শাহাদাতে হজরত হোসাইন (রা.)। বলাবাহুল্য যে, উম্মতের জন্য এই শোক সহজ নয়। কিন্তু নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই তো শিক্ষা- ‘নিশ্চয়ই চোখ অশ্রুসজল হয়, হৃদয়ব্যথিত হয়, তবে আমরা মুখে এমন কিছু উচ্চারণ করি না- যা আমাদের রবের কাছে অপছন্দনীয়।’

অন্য হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই যারা মুখ চাপরায়, কাপড় ছিড়ে এবং জাহেলি যুগের কথাবার্তা বলে।’

অতএব শাহাদাতে হুসাইন (রা.) কে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হওয়া এবং সব ধরনের জাহেলি রসম-রেওয়াজ থেকে দূরে থাকা প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য।

এ মাসে যেসব অনৈসলামিক কাজকর্ম ঘটতে দেখা যায় তার মধ্যে তাজিয়া মিছিল, শোকগাঁথা পাঠ, শোক পালন, শোক মিছিল ও র্যা লি বের করা, শোক প্রকাশার্থে শরীরকে রক্তাক্ত করা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এসব রসম-রেওয়াজের কারণে এ মাসটিকেই অশুভ মাস মনে করার একটা প্রবণতা অনেক মুসলমানের মধ্যেও লক্ষ করা যায়। এজন্য অনেকে এ মাসে বিয়ে-শাদী থেকেও বিরত থাকে। বলাবাহুল্য এগুলো অনৈসলামিক ধারণা ও কুসংস্কার।

মোটকথা, এ মাসের করণীয় বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- তওবা-ইস্তেগফার, নফল রোজা এবং অন্যান্য নেক আমল। এসব বিষয়ে যত্নবান হওয়া এবং সব ধরনের কুসংস্কার ও গর্হিত রসম-রেওয়াজ থেকে বেঁচে কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক চলাই মুসলমানের একান্ত কর্তব্য।

   

বিশ্বজুড়ে হালাল বিনিয়োগ কেন বাড়ছে?



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বিশ্বে বেড়েছে শরিয়াসম্মত পদ্ধতিতে বিনিয়োগের আগ্রহ, ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বে বেড়েছে শরিয়াসম্মত পদ্ধতিতে বিনিয়োগের আগ্রহ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বজুড়ে শুরু হওয়া বয়কট আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে বিনিয়োগে। অনেকে অর্থ ব্যয় বা বিনিয়োগের আগে তাদের অর্থ কোথায় যাচ্ছে, সে বিষয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। এ অবস্থায় বেড়েছে ‘শরিয়াসম্মত’ পদ্ধতিতে বিনিয়োগের আগ্রহ, যা বিশ্বব্যাপী গতি এনেছে ‘হালাল’ অর্থনীতিতে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে হালাল অর্থনীতির বাজারমূল্য আগামী বছর ৭ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে। ২০১৫ সালে এই হালাল অর্থনীতির বাজারমূল্য ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার। অর্থাৎ আট বছরে এর আকার দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ২০২১ সালে হালাল অর্থনীতির বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার। এ খাতের বিশ্লেষকেরা বলছেন, চার বছরের মধ্যেই এই বাজার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।

গত বছর প্রকাশিত জেনারেল কাউন্সিল ফর ইসলামিক ব্যাংকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনসের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা বলছে, বিগত এক দশকে বৈশ্বিক ইসলামিক তহবিলের বাজার ৩০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি ডলার এখন বিশ্বব্যাপী ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। এই পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে যে হালাল বিনিয়োগ ও সুযোগ উভয়েরই চাহিদা বেড়েছে।

হালাল বিনিয়োগের একটি উদাহরণ হলো- ইসলামি ব্যবসায় অর্থায়ন। এই ব্যবসা মুনাফা ভাগাভাগি মডেলের ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। আরও আছে শরিয়াসম্মত বিমা এবং সুকুক, যা মালিকানা নির্দেশ করে এমন একটি ইসলামিক আর্থিক সার্টিফিকেট। সুকুক বন্ডধারীরা একটি ব্যবসার আংশিক মালিকানা লাভ করেন, ফলে মুনাফার অংশ পান।

গোল্ডম্যান স্যাকস ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছিল যে, ২০৭৫ সালের মধ্যে বিশ্বের ১০টি বড় অর্থনীতির মধ্যে ৫টি অর্থনীতির দেশে ৮৫ কোটির বেশি মুসলমান জনগোষ্ঠী থাকবে। এই দেশগুলো হলো- ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও মিসর।

যেহেতু জনসংখ্যা বাড়বে, তাই বাড়বে আর্থিক পণ্যের চাহিদা। ২০২৩ সালের স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ইসলামিক ইকোনমি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২–২৩ অর্থবছরে শরিয়াসম্মত বিনিয়োগে ২ হাজার ৫৯০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এক বছরে এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২৮ শতাংশ। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান দিনারস্ট্যান্ডার্ড প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

বিশ্লেষকদের মতে, মানুষ এখন সাবধানী, ফলে তারা নৈতিকতার সঙ্গে বিনিয়োগ করছেন। হালাল বিনিয়োগ এর একটি বড় অংশ। বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এটি বাড়ছে। আগে লোকজন খুঁজত হালাল কোনটি। হারাম না হলেই তারা খুশি হতো। এখন শুধু হালাল নয়, এটি তাদের মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের সঙ্গে যায় কি না, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বিভিন্ন পণ্য বর্জন আন্দোলনের ফলে তারা এখন আরও বেশি সচেতন। কোনো জিনিস হালাল হতে পারে, তবে আপনি হয়তো সেটা ব্যবহার করতে চান না, কিংবা এর সঙ্গে জড়িত হতে বা এতে বিনিয়োগ করতে চান না।

হালাল বিনিয়োগে দখলদার ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধের প্রভাব দেখা গেছে। যেসব পণ্য-ব্র্যান্ড ইসরায়েল ও গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে সমর্থন করছে বলে ভোক্তারা মনে করছেন, সেসব ব্র্যান্ড বর্জন করার একটি প্রচারণা এখন চলছে। হালাল বিনিয়োগের চাহিদা বাড়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে কাজ করছে।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হালাল বিনিয়োগ অনেক দিন ধরেই বাড়ছে। তবে এ ধরনের বিনিয়োগ আরও জোরেশোরে বেড়েছে গত ছয় মাসে।

;

উমরা ভিসার মেয়াদ নিয়ে নতুন ঘোষণা সৌদির



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র উমরা ভিসার মেয়াদ নিয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির হজ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগে উমরা ভিসার ৯০ দিন মেয়াদ গণনা শুরু হতো সৌদিতে প্রবেশের পর। বর্তমানে এ নিয়ম পরিবর্তন করে ভিসা ইস্যুর দিন থেকে ৯০ দিন সৌদিতে অবস্থানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে উমরা ভিসায় যারা সৌদি আরবে অবস্থান করছেন তাদের আগামী ১৫ জিলকদ তথা ২৩ মে এর আগেই সৌদি আরব ত্যাগ করতে হবে। সৌদিতে আসার পর ৯০ দিন পূর্ণ হোক বা না হোক।

এ সময়ের পরেও যারা ৯০ দিন পূর্ণ হয়নি বলে রয়ে যাবেন তারা আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন বলে সতর্ক করেছে হজ মন্ত্রণালয়।

সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ১৫ জিলকদের পর এ বছর হজের আগে আর কাউকে উমরা পালনের অনুমতি দেওয়া হবে না।

গালফ নিউজের প্রতিবেদেনে বলা হয়েছে, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এ বছর সৌদি আরবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হতে পারে আগামী ২৭ জুন। তার আগে পালিত হবে পবিত্র হজ। আর হজের কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে এবং হজযাত্রীদের স্বাগত জানাতেই আর উমরা পালন করতে দেওয়া হবে না।

সৌদি মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, যাদের উমরা ভিসা ও অনুমতি দেওয়া হবে, তারা ওই ভিসা দিয়ে হজপালন করতে পারবেন না। অর্থাৎ হজের জন্য আলাদাভাবে অনুমতি নিতে হবে। যাদের কাছে উমরাপালনের অনুমতিপত্র আছে, আগামী ২০ জিলকদের মধ্যে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে মক্কা নগরী ছাড়তে হবে।

গত কয়েক বছর ধরে উমরা ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করায় পবিত্র উমরাপালনকারীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এ বছর পবিত্র রমজানে তিন কোটি মুসলমান উমরা পালন করেছেন।

প্রসঙ্গত, আগামী জুনের শুরুতে পালিত হবে এবারের হজ। অস্বাভাবিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় হজযাত্রীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। অনেকে হজের পরিবর্তে উমরায় যাচ্ছেন। এ কারণেও আগের তুলনায় উমরাযাত্রীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

;

রেকর্ড ছাড়িয়েছে মুসলিমবিদ্বেষ, নানা সমীকরণে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমরা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
নানা সমীকরণে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমরা, ছবি : সংগৃহীত

নানা সমীকরণে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমরা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শুধু গাজা ইস্যুতেই যে মুসলমানরা বাইডেন প্রশাসনের ওপর ক্ষুব্ধ তা নয়, বর্ণবাদ, বৈষম্য ও বিশ্বাসহীনতা থেকে শুরু করে নানা ইস্যুতে ধীরে ধীরে ওয়াশিংটনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে আমেরিকার মুসলমান থেকে শুরু করে মুসলিম বিশ্ব। দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর।

বিভিন্ন গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর প্রাথমিকভাবে এর পেছনে রয়েছে অভিবাসন এবং অন্য ধর্মের তুলনায় মুসলমানদের মধ্যে উচ্চ জন্মহার। জনসংখ্যার এমন বাড়-বাড়ন্ত সত্ত্বেও, যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানরা বৈষম্য এবং তাদের নিয়ে অনেকের নেতিবাচক ধারণাসহ বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য বলছে, অনেক আমেরিকান মুসলিম সন্দেহ থেকে শুরু করে শারীরিক আক্রমণ পর্যন্ত নানা বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছে এবং গেল কয়েক বছর ধরেই তাদের এ ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে যেতে হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের বৈষম্য বিচ্ছিন্নতা এবং অবিশ্বাসের অনুভূতি বাড়িয়ে দিতে পারে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনেকের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করছে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কি আদৌ এসব বিষয় বোঝার চেষ্টা করছে? নাকি বুঝেও বুঝতে চাইছে না তারা? এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কিছুটা জটিল হলেও, একটি খবর সবাইকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড হারে মুসলিমবিদ্বেষ বেড়ে যাওয়া।

গত বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমবিদ্বেষী ঘটনা রেকর্ড হারে বেড়েছে। এর পেছনে ছিল মূলত ইসলামভীতি (ইসলামোফোবিয়া) এবং বছরের শেষ দিকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ঘিরে সৃষ্ট পক্ষপাত। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (অ্যাডভোকেসি গ্রুপ) কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) এ তথ্য জানিয়েছে।

সিএআইআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামবিদ্বেষ সংক্রান্ত মোট ৮ হাজার ৬১টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৫৬ শতাংশ বেশি। এমনকি সংগঠনটির ৩০ বছরের ইতিহাসে এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৬০০টি ঘটনা ঘটেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও একই ধরনের ধারণা দিয়েছে। এসব সংগঠন বলছে, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ঘিরে ইসলামোফোবিয়া, ফিলিস্তিনবিরোধী জনমত ও ইহুদিবিদ্বেষ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক হারে বেড়েছে।

সিএআইআর জানায়, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইসলামবিদ্বেষের ঘটনা কমেছিল। তবে ২০২৩ সালেই তা আবারও বাড়তে থাকে। গত বছরের প্রথম ৯ মাসের প্রতি মাসে গড়ে ৫শ’র মতো এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে শেষের তিন মাসে তা অনেক বেড়ে যায়। এ সময় প্রতি মাসে ১২শটি করে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলামোফোবিয়ার এ বৃদ্ধির কারণ হলো- ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত। ওই বছর অভিবাসন ও আশ্রয়, কর্মসংস্থান বৈষম্য, ঘৃণামূলক অপরাধ ও শিক্ষাবৈষম্য নিয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে।

এমতাবস্থায় বসে নেই যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নেতারা। দেশটিতে নিজেদের শক্তি ও ঐক্য দেখিয়েছেন। বাইডেন প্রশাসন থেকে দেওয়া ইফতারের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা। এর মাধ্যমে গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতাকে সমর্থন দিয়ে আসা মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মার্কিন মুসলমানরা। বাধ্য হয়ে ইফতার আয়োজন বাতিল করে বাইডেন প্রশাসন।

গত বছরও রমজান ও ঈদে হোয়াইট হাউসে বড় আকারে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল। অনেক মুসলমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেসময় সবাই বাইডেনের প্রতি নিজেদের ভালোবাসা আর সমর্থনের কথাও জানিয়েছিলেন।

রীতি অনুযায়ী এবারও বাইডেন প্রশাসন থেকে ইফতার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং অনেককে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর মাধ্যমে মুসলিম কমিউনিটির নেতারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এর আগে বাইডেনের দলের ন্যাশনাল মুসলিম ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিল শাখার নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, ‘ইসরায়েলে গণহত্যা বন্ধ না করলে ২০২৪-এ আমাদের ভোট ও কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার আশা রাখবেন না।’

বিশেষজ্ঞদের দাবি, আগামী বছরের ভোটে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে গেলে মুসলিম ভোট বাইডেনের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মিশিগান, ওহিয়ো ও পেনসিলভানিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে ভালো প্রভাব রয়েছে ন্যাশনাল মুসলিম ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিল শাখার।

;

সামাজিক সংকট মোকাবিলায় আলেমদের ভূমিকা রাখতে হবে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
নাজিরপুর উলামা পরিষদের বার্ষিক প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত, ছবি : সংগৃহীত

নাজিরপুর উলামা পরিষদের বার্ষিক প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কোরআন-সুন্নাহর খেদমতের পাশাপাশি সমাজসেবা এবং বিভিন্ন সামাজিক সংকট মোকাবিলায় আলেমদের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে মিশে থাকা শিরক-বিদআতের মূলোৎপাটনে আলেমদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

রোববার (১৪ এপ্রিল) পিরোজপুরের নাজিরপুরে অবস্থিত জামিয়া আরাবিয়া সাতকাছেমিয়া মাদরাসা মিলনায়তনে নাজিরপুর উলামা পরিষদের বার্ষিক প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাতকাছেমিয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান মুমতাজি এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি ‘সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ ও খেদমতে খালক’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গঠিত নাজিরপুর উলামা পরিষদেরসার্বিক কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

সংগঠনের সভাপতি মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন কাসেমির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারী জেনারেল মুফতি আবুল হাসান ও সিনিয়র সহ-সভাপতি মুফতি কামরুল ইসলাম আরেফি।

সভাপতির বক্তব্যে মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন কাসেমি বলেন, নাজিরপুর উলামা পরিষদের সার্বিক কার্যক্রম গতিশীল করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সবার সহযোগিতা নিয়ে এটা দেশের একটি রোল মডেল সংগঠনে পরিণত হবে- ইনশাআল্লাহ।

সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবুল হাসান বার্ষিক রিপোর্ট পেশ ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে সংগঠনের মূল প্রতিপাদ্য সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ ও খেদমতে খালক বাস্তবায়নে ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে এক কাতারে শামিল হওয়ার আহবান জানান।

প্রতিনিধি সম্মেলনে ইউনিয়ন প্রতিনিধিরা নিজ নিজ ইউনিয়নের সার্বিক কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সাতকাছেমিয়া মাদরাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন, পিরোজপুর উলামা পরিষদের আমির মুফতি ওয়াহিদুল আলম ও সেক্রেটারী জেনারেল মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমি, মুফতি শেখ মুজিবুর রহমান, মুফতি শরফুদ্দীন আহমাদ, মাওলানা ফেরদাউস আহমাদ, মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মুনীর, মাওলানা ইলিয়াস আহমাদ, মাওলানা ইমদাদুল হক, মাওলানা আতিকুর রহমান, মুফতি হাবিবুল্লাহ মিসবাহ কাসেমি, মুফতি ফরহাদ হোসাইন, মুফতি বেলাল হোসাইন, মুফতি আতাউল্লাহ, মুফতি নাসির উদ্দিন, মাওলানা জামাল উদ্দীন ও মাওলানা শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

সম্মেলনে সাতকাছেমিয়ার প্রবীণ মুরব্বি মাস্টার খালেকুজ্জামান ও শেখমাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান চৌধুরী নান্নু তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন এবং পরিষদের সার্বিক কার্যক্রমে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা আবু সালেহ, মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী, মাওলানা আবুল বাশার পিরোজপুরী, মুফতি ইমরান হোসাইন মুজাহিদী, মাওলানা আবুল খায়ের, মুফতি আসলাম হোসাইন, মুফতি সাইফুল ইসলাম, মাওলানা শামসের আলী, মাওলানা আখতারুজ্জামান, মাওলানা এনামুল হক, মুফতি জহিরুল ইসলাম পিরোজপুরী, মাওলানা জামাল উদ্দিন, মাওলানা আব্দুল জলিলসহ নাজিরপুরের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত প্রতিনিধিবৃন্দ।

সম্মেলন শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয় এবং আগত অতিথিদের সম্মানে দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়।

;