রিশার কথা উঠলেই কেঁদে ওঠেন বাবা-মা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
সুরাইয়া আক্তার রিশা, ছবি: সংগৃহীত

সুরাইয়া আক্তার রিশা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘রিশা (১৪) অনেক লক্ষ্মী মেয়ে ছিল আমার। লেখাপড়ায়ও খুব ভালো ছিল। তার হাতের লেখা ও ড্রইং খুব সুন্দর ছিল। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করত। মেয়ে আমার বড় হয়ে ডাক্তার হতে চেয়েছিল। কিন্তু খুনি আমার মেয়েকে বাঁচতে দিল না। আমার মেয়েতো আর ফিরে পাব না। কিন্তু খুনির ফাঁসি চাই। যাতে আর কারও মাকে-বাবাকে সন্তান হারাতে না হয়।’

বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন রিশার মা তানিয়া হোসেন। মেয়ে রিশা হত্যা মামলার বাদী তিনি।

তানিয়া হোসেন বলেন, ‘যে দোকানে আমরা জামাকাপড় বানাতাম, সে দোকানে কাজ করত ওবায়দুল। দোকানের মানি রিসিট থেকে মোবাইল ফোন নম্বর নিয়ে একদিন ফোন দেয় ওবায়দুল। আমার মেয়ে ফোন ধরলে তাকে সে ভালোবাসার কথা বলে। আমার মেয়ে তা সরাসরি প্রত্যাখান করে। এরপরই সে আমার মেয়েকে খুনের পরিকল্পনা করে। আমি ওই খুনি ওবায়দুলের ফাঁসি চাই।’

রিশার বাবা রমজান হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘প্রতিদিন কাজ শেষে বাসায় ফিরলে রিশা এখন আর বাবা বলে দৌড়ে আসে না। তার কথা মনে হলে বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়। আমার মেয়ের হত্যাকারীর ফাঁসি চাই। তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।’

তিনিও বার্তাটোয়েন্টিফোরের সঙ্গে আলাপচারিতায় কেঁদে ফেলেন।

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সুরাইয়া আক্তার রিশা। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিল সে। তার ছোট বোনের নাম রোদেলা আক্তার তিশা। সে বর্তমানে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। আর ভাইটি তৌহিদুল হোসেন রনি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।

২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট দুপুর সোয়া ১২টায় কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে ফুট ওভারব্রিজের ওপর পেটে ছুরিকাঘাত করা হয় রিশাকে। ২৮ আগস্ট সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে ঢাকা মেডিক্যেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।

ছুরিকাঘাতের দিনই রিশার মা তানিয়া হোসেন বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা থানায় ওবায়দুল হককে আসামি করে হত্যা চেষ্টার মামলা করেন। ১ সেপ্টেম্বর আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।

মামলায় যা আছে:

তানিয়া হোসেন মামলায় উল্লেখ করেন, হত্যাকাণ্ডের পাঁচ/ছয় মাস আগে ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটের বৈশাখী টেইলার্সে আমার মেয়ের পোশাক বানাতে দেই। সেখান থেকে ফোন নম্বর নিয়ে ওবায়দুল আমার মেয়েকে বিরক্ত করত। আমার মেয়ের স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করত। আমার মেয়ে প্রেমে রাজি না হওয়ায় স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পথে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনের ‍ফুট ওভারব্রিজের ওপর আমার মেয়েকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে ওবায়দুল।

প্রথমে মামলাটি হত্যা চেষ্টার মামলা হিসাবে রেকর্ড হয়। কিন্তু রিশা ২৮ আগস্ট মারা গেলে তা হত্যা মামলায় রূপ নেয়।

মারা যাবার আগে রিশা ২৫ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের চিকিৎসকের কাছে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি (Dying Declaration) দিয়েছিল।

তদন্ত:

মামলার পরপরই ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় রমনা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোশারফ হোসেনকে। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি মামলার আলামত হিসেবে ভিকটিমের রক্তমাখা কাপড়-চোপড় সংগ্রহ করেন, মামলার বাদী ও একজন সাক্ষির জবানবন্দি নেন এবং রিশার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি সংগ্রহ করেন। এছাড়া আসামির কর্মস্থল বৈশাখী টেইলার্স থেকে তার জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন এবং স্থায়ী ঠিকানা মোতাবেক অভিযান চালিয়ে আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা করেন। এরপর ২৮ আগস্ট রিশা হাসপাতালে মারা গেলে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন।

রিশা মারা যাবার পর হত্যা চেষ্টা মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নিলে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় রমনা থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. আলী হোসেনকে।

তিনি মামলার সাক্ষিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আসামি ওবায়দুলকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেন। আসামির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি জব্দ করেন। দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিতে আসামিকে আদালতে পাঠান। এরপর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করে ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর ওবায়দুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

আসামি স্বীকারোক্তিতে যা বলেছিলেন:

২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আসামি ওবায়দুল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. আহসান হাবীবের কাছে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দির সার সংক্ষেপ এ রকম-

‘দোকানের টাকার রশিদ থেকে নম্বর নিয়ে রিশাকে প্রেমের প্রস্তাব দেই। এরপর রিশা আমার ফোন ধরা বন্ধ করে দেয়। রিশাকে ফোন দিলে তার আম্মা ফোন ধরে। রিশাকে ভালোবাসার কথা তাকে আমি বলি। তিনি আমাকে গালিগালাজ করেন। এরপর তারা আমার মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেন।’

ওবায়দুল বলেন, ‘রিশার সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে বেশ কয়েকবার তার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে যাই। কিন্তু কথা বলতে ব্যর্থ হই। এর মধ্যে একদিন তার সঙ্গে জোর করে কথা বলতে চাইলে রিশা আমাকে প্রত্যাখান করে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি যে অন্য একটি ছেলের সঙ্গে রিশার সম্পর্ক আছে। এ কথা জানার পর আমার ক্ষোভ হয়।’

তার না হলে রিশাকে কারও হতে দেবে না এমন পরিকল্পনায় তাকে খুনের পরিকল্পনা করেন ওবায়দুল।

ওবায়দুল জবানবন্দিতে বলেন, ‘রিশা যাতে অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক করতে না পারে, সেজন্য আমি তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করি। গত ২২ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় আমি বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার অ্যান্ড পেইন্ট সাপ্লাই নামক দোকান থেকে ১২০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি কিনি। রিশাকে মারার জন্য গত ২৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার সময় আমি ছুরিসহ কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি। বেলা আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে রিশা কয়েকজন সহপাঠীসহ স্কুল থেকে বের হয়ে ফুটওভার ব্রিজের ওপর উঠলে আমিও উঠি।’

আক্রমণের বর্ণনা দিয়ে ওবায়দুল বলেন, ‘এরপর আমি রিশার কাছে গিয়ে আমার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে রিশার পেটের বাম পাশে সজোরে আঘাত করে ছুরিসহ ফুটওভার ব্রিজের নিচে নেমে দৌড়ে ব্যাটারি গলি দিয়ে সেগুনবাগিচা রাজস্ব ভবনের সামনে যাই। রাজস্ব ভবনের সামনে রাস্তার ফুটপাতে ইট-সুরকি ও ময়লার মধ্যে ছুরিটি ফেলে দিয়ে পল্টন হয়ে গুলিস্তান যাই। সেখান থেকে সদরঘাট গিয়ে নদী পার হয়ে কেরানীগঞ্জে চাচাতো ভাই জসিমের কাছে যাই। ওই দিন বিকেলে কেরাণীগঞ্জ থেকে কোনাপাড়ায় আমার পরিচিত টেইলার মাস্টার সুনীল ও গৌর হরিদের কাছে গিয়ে এক হাজার টাকা নেই। তারপর আমি শ্যামলী গিয়ে হানিফ পরিবহনে করে বাড়িতে যাই। এরপর টিভিতে রিশা মারা যাবার খবর শুনে আমি নীলফামারীতে আমার বেয়াই খুশবুলের কাছে যাই। পরে রমনা থানা পুলিশ গিয়ে আমাকে গ্রেফতার করে রমনা থানায় নিয়ে আসে।’

আইনজীবীর বক্তব্য:

মামলাটি বর্তমানে কোন অবস্থায় আছে জানতে চাইলে বাদীপক্ষের আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়েছে। চার্জশিটের ২৬ জন সাক্ষির মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক শুনবেন আদালত। এরপর রায়ের জন্য দিন ঠিক করবেন। আমরা বাদিপক্ষ মনে করি আসামির বিরুদ্ধে মামলাটি আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আদালতের রায়ে আমরা ন্যায় বিচার পাব।’

আসামি ওবায়দুলের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আসামির সঙ্গে রিশার সম্পর্ক থাকার কথা বাদীপক্ষ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে। মামলায় জব্দ করা আসামির মোবাইল ফোন আমরা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি দেননি। যুক্তিতর্কের দিন আমরা ফৌজদারি কার্যবিধির ৯৪ ধারায় বাংলাদেশ টেলিফোন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) মাধ্যমে আসামির সঙ্গে ভিকটিমের এসএমএস যোগাযোগের কপি চাইব। আশা করছি, এতে আসামির ন্যায় বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করবে।’

   

বাবুলকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় খুন হন মিতু



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

স্ত্রী মাহমুদা খানম ওরফে মিতুকে নিয়ে কক্সবাজারের একটি হোটেলে ওঠেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। পাশেই আরেকটি রুমে ওঠেন ভারতীয় এক নারী। সেই নারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় পরপর দুবার বাবুলকে দেখে ফেলেন মিতু। আর এজন্যই মানসিক অত্যাচার এবং পরবর্তীতে পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করা হয়।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে এসব তথ্য দেন মিতুর মা শাহেদা মোশাররফ।

শাহেদা মোশাররফ বলেন, ২০০২ সালের ২৬ এপ্রিল বাবুল আক্তারের সঙ্গে আমার বড় মেয়ে মাহমুদা খানম মিতুর বিয়ে হয়। তখন বাবুল আক্তার বেকার ছিল। বিবাহের পর একেবারে শুরু থেকে তাদের সম্পর্ক তেমন ভালো ছিল না, মোটামুটি ছিল। পরে পুলিশে যোগদান করেন। এরপর কক্সবাজারে এসপি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) হিসেবে বদলি হয়। সেখানে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক নারীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন বাবুল।

তিনি আরও বলেন, একদিন বাবুল আক্তার মিতুকে নিয়ে কক্সবাজারের একটি হোটেলে ওঠে। পাশের রুমে ওই নারীও ওঠে। ওই নারীর রুমে বাবুল আক্তারকে আপত্তিকর অবস্থায় মিতু দেখে ফেলে। তখন মিতু তাকে জিজ্ঞেস করে, সে এখানে কি করছে? বাবুল মিতুকে বলে বিদেশে যাবার জন্য ল্যাপটপে কাজ করছে। তাদের দুজনকে এ অবস্থায় দেখে মিতুর খুব খারাপ লাগলো। সে কিছুক্ষণ ওখানে ছিল। বাচ্চারা একা থাকায় মিতু তাদের রুমে চলে আসে। বাচ্চারা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সেও ঘুমিয়ে পড়ে।

গভীর রাতে আবারও আপত্তিকর অবস্থায় দেখার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, রাত ৩টার দিকে মিতুর ঘুম ভেঙে যায়। তখনও বাবুল আক্তার মিতুর রুমে ছিলেন না। মিতু আবার ওই নারীর রুমে গেলে তাদের দুজনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পায়। মিতু রুমে এসে কেঁদে কেঁদে আমাকে ফোন দেয়। তখন আমি তাকে বলি, তুই চলে আয়। মিতু তখন বলে, আমার ছেলে-মেয়েরা আমাকে খারাপ মনে করবে। তাই আমি আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি।

সাক্ষ্য দেওয়ার সময় শাহেদা মোশাররফ বলেন, বাবুল আক্তার বিদেশে (মিশনে) থাকার সময় তিন-চারবার বাংলাদেশে আসেন। তবে দেশে ফিরলেও তিনি বাসায় অর্থাৎ মিতু কিংবা ছেলেমেয়েদের কাছে যাননি। মিশন শেষ করে তিনি চীনে চলে যান। সেখানে বসেই বাবুল মিতুকে মারার পরিকল্পনা করেন।

মিতুর একটি ব্যবসা ছিল। ব্যবসার তিন লাখ টাকা দিয়ে মিতুকে খুন করে। মিতু মারা যাওয়ার পর বাবুল আক্তার আমাদের বাসায় ওঠে। ছয়মাস আমাদের বাসায় ছিল সে। সেখানে বসে সে আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ২৪ জুন (২০১৬) বাবুল আক্তারকে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর বাবুল সেখান থেকে চাকরি ছেড়ে আসে। আমি তখন তাকে জিজ্ঞেস করি, চাকরি ছাড়লে কেন? তখন সে বলে, মিতু খুন হওয়ার কারণে আমাকে চাকরি ছাড়তে হয়েছে। আমি তাকে বলি, তোমার চাকরি ছাড়ার বিষয় কি মিতুর খুনের বিচারের জন্য?, বলেন তিনি।

শাহেদা মোশাররফ বলেন, বাবুল আক্তার মিতুকে খুন করার জন্য মুসাকে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে অস্ত্র কিনে দেয়। একথা বলেছে মুসার স্ত্রী। মুসার স্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি মিতুকে খুন করেছ? তখন মুসা তার স্ত্রীকে বলে, আমি খুন না করলে বাবুল আক্তার আমাকে ক্রসফায়ার দেবে। বাবুল আক্তার আমাদের বলেছিল, মিতুর খুনের আসামিরা গ্রেফতার হয়েছে। আমি ক্রসফায়ার দিতে বলেছি।

শাহেদা আরও বলেন, আসামি ওয়াসিম, আনোয়ার গ্রেফতার হয়েছিল। এর কিছুদিন পরেই ভোলা ধরা পড়ে। গ্রেফতার হওয়ার পর সে আদালতে জবানবন্দি দেয়- বাবুল আক্তারের নির্দেশেই মিতুকে খুন করেছে মুসা। মিতু মারা যাওয়ার দেড় মাস পর সে যে বাসায় ছিল ওখানে মিলাদ পড়ানোর জন্য আমরা চট্টগ্রাম আসি। এর কিছুদিন পর আসামি কালু ও শাহজাহান গ্রেফতার হয়। আমরা চট্টগ্রাম আসার পরে অবস্থা দেখে মনে হয়েছে পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাবুল আক্তার মিতুকে খুন করেছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে ও নিজেই মিতু হত্যার মামলা করল। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমার স্বামীকে বলে, আপনারা বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০২১ সালের ১২ মে মিতুর বাবা বাবুল আক্তারকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করলেন।’

মারা যাওয়ার ১৫ দিন আগে (২০১৭ সালে) মিতুর মা শাহেদাকে ফোন করেন বাবুল আক্তারের মা। ফোন করে তিনি বলেন, বেয়াইন, মিতুকে আমার ছেলে (বাবুল) খুন করেছে। তাকে আপনি মাফ করে দেন। তখন আমি তাকে (বাবুলের মা) বলি, বাবুল মরলে কি এ কথা আপনি বলতেন? এসব আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে বলেছি।

এদিন দুপুর ১২টায় চাঞ্চল্যকর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পর প্রথমে সাক্ষ্য দেন অবসরে যাওয়া পুলিশ পরিদর্শক মহিউদ্দিন মাহমুদ। যিনি ঘটনার সময় নগরের পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে ছিলেন। এরপর সাক্ষ্য দিতে কাঠগড়ায় দাঁড়ান শাহেদা মোশাররফ।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসপি বাবুল ওই ঘটনার কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম থেকে বদলি হন। তিনি ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে যাওয়ার পরপরই চট্টগ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

সাড়ে তিন বছর তদন্ত করেও ডিবি পুলিশ কোন কূলকিনারা করতে না পারায় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এরপর ২০২১ সালের মে মাসে পিবিআই জানায়, স্ত্রী মিতুকে হত্যা করা হয়েছিল বাবুল আক্তারের ‘পরিকল্পনায়’। এজন্য খুনিদের ‘লোক মারফত তিন লাখ টাকাও দিয়েছিলেন’ বাবুল।

পরে বাবুলের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর মিতুর বাবা আরেকটি মামলা করেন। তবে সেই মামলা আদালতে না টেকার পর বাবুলের মামলাটিই পুনরুজ্জীবিত হয়। ২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সেই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই। তাতে বাবুলসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। ওই বছরের ১০ অক্টোবর সেই অভিযোগপত্র গ্রহণ করে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত। ২০২৩ সালের ১৩ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ওই বছরের ৯ এপ্রিল থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী হিসেবে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন সাক্ষ্য দেন।

;

কেএনএফ'র সাথে সম্পৃক্ততা, রুমা ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ৭ জন কারাগারে



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, বান্দরবান
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বান্দরবানে রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, মসজিদে হামলা, টাকা-অস্ত্র লুটের ঘটনায় কেএনএফ'র সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে রুমা উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ভান মুন নুয়ান বমসহ ৭ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বান্দরবান চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। বান্দরবানের কোর্ট ইন্সপেক্টর একে ফজলুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আসামিরা হলেন, ভান মুন নুয়ান বম (৩৩), লাল নুন নোয়াম (৬৮), লাল দাভিদ বম (৪২), চমলিয়ান বম (৫৬), লাল পেক লিয়ান (৩২), লাল মিন বম (৫৬), ভান বিয়াক লিয়ান বম (২৩)। তারা সবাই রুমার মুনলাই পাড়ার বাসিন্দা।

এরআগে সোমবার (২২ এপ্রিল) রুমার মুনলাই পাড়া থেকে তাদের গ্রেফতার করে যৌথ বাহিনী।

এ পর্যন্ত কেএনএফ সদস্য সন্দেহে মোট ৭৮ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৩ জন নারী রয়েছেন।

এদিকে, বান্দরবানের রুমা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ভান মুন নোয়াম বমকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হ‌য়ে‌ছে। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অং ছাইং উ পুলু ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হো‌সেন মানিকের যৌথ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি পুলু মারমা বলেন, কেএনএফের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে, এজন্য তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

;

পদে থেকেই উপজেলায় প্রার্থী হতে পারবেন ইউপি চেয়ারম্যানরা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পদত্যাগ না করেই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ড. শাহদীন মালিক।

কুষ্টিয়া ও সিলেটের দুটি উপজেলা নির্বাচনের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এমন আদেশ দিয়েছেন আদালত।

;

কুমিল্লায় পারভেজ হত্যা: ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ছাত্রদল নেতা পারভেজ হত্যা মামলায় একই উপজেলার কালিবাজার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সেকান্দার আলীসহ ১৪ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে কুমিল্লার আদালত।

সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক নাসরিন জাহান এ রায় দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন- বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ১১ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন ও ৩ পলাতক রয়েছেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালি থানার ধনুয়াখালী এলাকার মৃত হাজী মো. আব্দুর রহমানের ছেলে মো. সেকান্দর আলী (৬৪), একই এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে মো. শাহীন (৩৯), সৈয়দপুর এলাকার আব্দুস সাত্তার এর ছেলে মো. সাদ্দাম হোসেন (৩২), কমলাপুর এলাকার মো. মোজাম্মেল হকের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (২১), যশপুর এলাকার মৃত আহমেদ আলীর ছেলে মফিজ ভান্ডারী, কমলাপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার মো. জয়নাল মাস্টারের ছেলে মো. কায়সার (৩২), কমলাপুর এলাকার মৃত মনিরের ছেলে মো. রিয়াজ (৩৩), মনশাসন এলাকার শফিক মেম্বার এর ছেলে বিল্লাল, কমলাপুর এলাকার মৃত আব্দুর রহমান এর ছেলে কামাল হোসেন, কালির বাজার ইউনিয়নের আবদুল ওহেদ এর ছেলে মো. ইব্রাহীম খলিল (৪৫), রায়চোঁ এলাকার ইমদাদুল হকের ছেলে মেহেদী হাসান, সৈয়দপুর এলাকার মৃত হাজী সিরাজুল ইসলামের ছেলে জয়নাল আবেদীন, বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের মৃত হারুন অর রশিদের ছেলে আব্দুল কাদের, নারায়নসার এলাকার মৃত আশ্রাব আলীর ছেলে আনোয়ার।

মামলার তথ্যমতে, ২০২০ সালের ১০ জুন কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার কালির বাজার ইউনিয়নের কমলাপুর বাজারের দক্ষিণ পাশে কবরস্থান সংলগ্ন বাগানে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা পারভেজকে নির্মমভাবে হত্যা করে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান সেকান্দর আলী এবং তার বাহিনীর ক্যাডারেরা।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. শরিফুল ইসলাম জানান, এই চাঞ্চল্যকর পারভেজ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে এজাহারে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করে। এই ঘটনায় চারজন আসামির ১৬৪ ধারা জবানবন্দি ও ৩১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর আদালত ১৪ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। রায়ের সময় ১৪ জন আসামির মধ্যে ১১ জন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন বাকী ৩ জন আসামি পলাতক রয়েছেন।

;